মনের কিনারে তুই পর্ব : ২৫

0
2620

মনের কিনারে তুই
লেখিকা: Tarin niti
পর্ব:২৫

রিহান এবার সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলল, “হুম,,কি হয়েছে বলো”

“তুমি আরিয়ান ভাইয়া আর ইশার সম্পর্কে জানো?”

রিহার সন্দিহান চোখে বলে, “না তো..আরিয়ানের সাথে আমার কালকে থেকে কথা হয়নি। কেন কিছু হয়েছে?”

রাইমা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। ও জানত যে রিহান কিছু জানেনা। জানলে রিহান ওকে বলতো।রিহান সিরিয়াস মুখ করে বলে,

“কি হয়েছে বলবে?”

তখন ওয়েটার কফি দিতে আসলে ওরা একটু চুপ হয়ে যায়। রিহান কফির মগে চুমুক দিয়ে বলে,
“এবার বলো কি হয়েছে?”

রাইমা রিহানকে সব খুলে বলে,ইশা ওকে যা যা বলেছে।সব শুনে রিহানের কফি খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। অবাক চোখে রাইমার দিকে তাকিয়ে বলে,

“তুমি মজা করছো তাইনা?আমি আরিয়ানের এতো ভালো বন্ধু আর আরিয়ান আমাকে কিছু বলবেনা? আর তাছাড়া আরিয়ান এরকম নয়!”

রাইমা রেগে বলে, “তোমার কি মনে হয় আমি মজা করছি?”

রিহান রাইমার দিকে তাকায়। রাইমা সিরিয়াস ভঙ্গিতে কথা বলছে কিন্তু রিহানের বিশ্বাস হচ্ছেনা আরিয়ান ইশার সাথে এরকম করবে।রাইমা সন্দিহান চোখে রিহানের দিকে তাকিয়ে বলে,
“আচ্ছা সত্যি করে বলতো ওই প্লেন এর মধ্যে কি তুমি ও ছিলে?”

রিহান রেগে বলে, “আর ইড মেড!কিসব ফালতু কথা বলছো?”

“আমার তো মনে হচ্ছে তুৃমি সব জানো,এখন জেনে-বুঝে নাটক করছো!”

রিহান আরো রেগে বলে, ” রাইমা এসব কি বলছো? আমি নাটক করবো কেনো?আমি তো এসব ব্যাপারে কিছুই জানিনা”

রাইমা মাথা নীচু করে ফেলে। হঠাৎ রাইমা রিহানের হাত ধরে বলে,
“তুমিও কি আরিয়ান ভাই এর মতো আমার সাথে নাটক করছো?আচ্ছা আরিয়ান ভাইয়া তো সব বলে দিয়েছে যে ওনি নাটক হয়েছে তা তুমি কবে বলবে?তুমি আমার সাথে কয়দিন ভালোবাসার নাটক করবে!”

রিহান এবার অনেক রেগে যায়।ও রাইমার থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে বলে,
” পাগল হয়ে গিয়েছো? কি যা তা বলছো! আমি তোমাকে ভালবাসি রাইমা। আরিয়ান এরকম একটা কাজ করেছে তাই বলে তুমি আমাকে ভুল বুঝবে?”

রাইমা রিহানের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,
“তুমিতো আরিয়ান ভাইয়ারই বন্ধু!”

“বন্ধু!কিন্তু আমিতো আরিয়ান না।আর তাছাড়া আমি কেনো তোমার সাথে ভালোবাসার নাটক করবো? তোমার সাথে তো আমার কোনো ঝগড়া হয়নি,না তুমি আমাকে চড় মেরেছে।তাহলে…”

রাইমা রিহানের দিকে তাকিয়ে বলে,
“হ্যাঁ সেটাই তো ভাবছি তোমার সাথে তো আমার কোনো ঝগড়া হয়নি তাহলে তুমি কেন আমার সাথে ভালোবাসার নাটক করবে। কিন্তু তবুও আমার মনে হচ্ছে তুমি আমাকে ধোঁকা দিবে!”

রিহান এবার রেগে একটু জোরে বলে, “এই তুমি আমাকে ভালোবাসো?আমাকে বিশ্বাস করো না?”

রিহানের কথায় আশেপাশের টেবিলের অনেকেই ওদের দিকে তাকায়,রাইমাও কেঁপে উঠে তাই রিহান শান্ত কন্ঠে বলে,

“দেখো আমাকে একদম রাগাবা না। আরিয়ান এরকম একটা কাজ কেনো করলো সেটা ওকে আমি জিজ্ঞেস করবো,কিন্তু তার আগে তুমি আমাকে অবিশ্বাস করবে না”

রাইমা এবার একটু সাহস নিয়ে বলে,
“কিন্তু কি করে বিশ্বাস করবো বলো? তোমরা দুজন তো প্রাণের বন্ধু আর সবচেয়ে বড় কথা হলো তোমার বন্ধু আমার বেস্ট ফ্রেন্ডকে এত বড় একটা ধোঁকা দিলো তারপরও তোমার মনে আমি তোমার সাথে কথা বলবো?”

রিহান ভীষণ অবাক হয়ে বলে, ” মানে কি? তুমি কি ব্রেকআপ করতে চাইছো”

রাইমা নিচু কন্ঠে বলে, “ধরে নাও তাই!”

রিহান অবাক হয়ে রাইমার দিকে তাকিয়ে আছে আর রাইমা এদিক-ওদিক তাকিয়ে ওর কান্না লুকানোর চেষ্টা করছে।রাইমার খুব কষ্ট হচ্ছে কারণ ও রিহানকে সত্যি ভালোবাসতো কিন্তু রিহানও যদি আরিয়ানের মতো হয়,ওকে ধোকা দে!তাহলে রাইমা নিজেকে ঠিক রাখতে পারবে না তাই রাইমা আগে থেকে সরে আসতে চায়।এখন কষ্ট হলেও নিজেকে সামলাতে পারবে।
রিহান একবার রাইমার দিকে তাকিয়ে উঠে গটগট করে রেস্টুরেন্ট থেকে বেড়িয়ে যায়।রাইমা রিহানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে,ওর চোখ থেকে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে…

রিহান রাগে বাইক চালাচ্ছে।ওর খুব রাগ লাগছে। রাইমা সামান্য একটা কারণে ব্রেকআপের কথা বলতে পারলো!রাইমা কি ওকে ভালবাসে না?আর আরিয়ান কিভাবে ইশার সাথে এটা করলো?
রিহানের মনে অনেক প্রশ্ন আসছে আর এ সবকিছুর উত্তর আরিয়ানের কাছে আছে। রিহান আরিয়ানকে ফোন দে কিন্তু আরিয়ানের ফোন অফ!

.
শুক্রবার দিন ইশা অনেক কাজ করে।আজকেও তার ব্যতিক্রম নয়। ইশা ভালো করে এসব রুম গুছিয়ে পুরো বাসা ঝাড়ু দে তারপর বাবা-মার রুমে গিয়ে বাবা-মায়ের সব ময়লা কাপড় গুলো একসাথে জমা করে। নিজে ময়লা কাপড় গুলো একসাথে করে কাঁচবে বলে। ইশার বাবা বলে,
“তুই একা সব পারবি না, রাখ এগুলো”

“আরে আব্বু একদিনই তো, অন্য সময় তো সবসময় ভার্সিটিতে থাকি আজকে ছুটির দিনে একটু কাজ করি?”

“কিন্তু এতগুলো কাপড়…”

“কোন সমস্যা হবে না, আমি পারবো”

ইশার মা রান্না করছে আজকে আমেনা আন্টি আসেনি উনার ছেলে নাকি অসুস্থ।ইশা কাপড় গুলো নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।
ইশা কাপড় গুলো ভিজিয়ে সাবান লাগায় তারপর একটা পিঁড়িতে বসে কাপড় কাঁচছে হঠাৎ ওর হাতের দিকে চোখ যায়। ইশার বুকটা ধক করে ওঠে। ওর হাতে “এ” লেটার লেখার ব্রেসলেটটা! এতদিন খেয়াল করেনি প্রায় একমাস ব্রেসলেটটা হাতে ছিল তাই ইশার অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। ইশার মনে হয় ব্রেসলেটটা ওর শরীরের অঙ্গ।
ব্রেসলেটটা দেখে ইশার আরিয়ানের কথা পড়ে যায়।ইশা ব্লেসলেটটার উপর হাত বুলিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে।ও এটা এখনও হাতে রেখে দিয়েছে!ইশা ভাবে ভাগ্যিস ওর মা-বাবা দেখেনি তাহলে ওরা আরো ভুল বুঝতো।
কিন্তু ইশা জানে না ইশার বাবা খেয়াল না করলেও ইশার মা ঠিকই ব্রেসলেটটা দেখেছে কিন্তু উনি চুপ ছিলেন। ইশার মা চেয়েছে ইশা নিজ থেকে এটা খুলে রাখুক,তাই ওনি ইশাকে কিছু বলেনি।
ইশার হাতে সাবানের ফেনা লেগেছিল ও টেপ ছেড়ে হাত ধুয়ে নিজের রুমে চলে যায় তারপর ব্রেসলেটটা খুলে ড্রেসিন টেবিলের সামনে একটি বক্সে রেখে দে।কিছুক্ষণ বক্সটার দিকে তাকিয়ে থেকে জোরপূর্বক হেসে আবার কাপড় ধুতে আসে। ইশার খুব কষ্ট হচ্ছে এই ব্রেসলেটটা ওর অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল এখন কেমন যেন হাত খালি খালি লাগছে!ইশা হাতের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে কাপড় ধোয়া শুরু করে।

.
রিহানের খুব রাগ লাগছে। রাইমা ওর কল ধরছেনা। রিহান বাসায় এসে বুঝতে পারে ওভাবে রেস্টুরেন্ট থেকে চলে আসা ঠিক হয়নি।তারপর রাইমাকে কল দেয় কিন্তু রাইমা কল ধরে না। রিহান বারবার কল দিতে থাকে তাই রাইমা ফোন অফ করে দে।একেতো রাইমা কল ধরছে না আবার ওইদিকে আরিয়ানের ফোন অফ!রিহানের পাগল পাগল লাগছে।

এখন রাত 9:00
রিহান জয়কে কল দে। জয় কল কেটে দে তারপর রিহান আবার কল দে। জয় কল রিসিভ করে বলে,
“হ্যাঁ বল একটু বিজি আছে”

“কি বিজি আছিস সেটা তো জানি।নিশ্চয়ই গার্লফ্রেন্ডের সাথে। আচ্ছা যাই হোক এখন বল আরিয়ান কোথায়?”

“আরিয়ান কোথায় আমি কিভাবে জানবো?”

” ওর ফোন অফ, কিছু জানিস?”

“নাতো আমার ওর সাথে সকালে দেখা হয়েছে। তারপর আর কিছু জানি না”

“আচ্ছা….” বলে জয় কল কেটে দিতে নে তখন জয় বলে,
“এই ওয়েট আরিয়ান নিশ্চয়ই ডিআরপি ক্লাবে আছে, সকালে জারার সাথে ক্লাবটার কথা বলতে শুনেছি”

এটা শুনে রিহার ভ্রু কুঁচকে ফেলে, আরিয়ান এখন জারার সাথে?তাহলে কি রাইমা ঠিকই বলেছে?রিহান আর কিছু না ভেবেই কল কেটে দে।

ইশা আজকে তাড়াতাড়ি ডিনার সেরে ফেলে। সারাদিন কাজ করে একটু ক্লান্ত লাগছে।ইশা রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে শোয়ার জন্য প্রস্তুতির নে। চুল আঁচড়ানোর জন্য আয়নার সামনে যায়।
ড্রেসিন টেবিলের সামনে ওই বক্সটা!ইশা বক্সটা হাতে নে, ওর খুব ইচ্ছে করছে বক্সটা খুলে ব্রেসলেটটা হাতে পরতে,একটু ছুঁয়ে দিতে। কিন্তু নাহ ইশা এটা করবে না!আরিয়ানের প্রতি ইশা দুর্বল হতে চায়না।ইশা একবার বক্সটার দিকে তাকিয়ে তারপর নিয়ে আলামারিতে রেখে দে।ও চাইলে বক্সটা ফেলে দিতে পারতো! কিন্তু যতই নিজেকে শক্ত রাখুক ইশা আরিয়ানকে ভালোবাসে,আরিয়ানের স্মৃতি কি করে ফেলে দেবে!
________

রিহান ক্লাবে গিয়ে দেখে জয় ঠিকই বলেছে আরিয়ান জারার সাথে বসে আছে। আরিয়ানের হাতে মদের গ্লাস, জারা আরিয়ানের খুব কাছে বসে আছে পারলে তো আরিয়ানের কোলে উঠে বসে।রিহানের খুব রাগ উঠে,ও আরিয়ানের কাছে গিয়ে বলে,

“কিরে সকাল থেকে তোর ফোন অফ কেন?এখন তো ফোন অন, এখন কতবার কল দিলাম কল ধরলি না কেন?আর জারার সাথে তুই কি করছিস?”

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here