মনের_অন্দরমহলে পর্ব ৪৩

মনের_অন্দরমহলে পর্ব ৪৩
#আনিশা_সাবিহা

–“অর্ক ভাইয়া? তুমি একটু গিয়ে দেখো আয়াশ কোথায় গেলেন? কি পাগলামি শুরু করেছেন? উনার শরীরের কন্ডিশন একটুও ভালো নয়। প্লিজ গিয়ে দেখো। রুদ্র একা হয়ত সামলাতে পারবেন না উনাকে। যেভাবে ধাক্কা দিয়ে চলে গেলেন!”

ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে কথাটি অর্ক ভাইয়ার উদ্দেশ্যে বলে দিলাম আমি। আমি জানি উনি প্রচন্ড রাগী মানুষ। তাই বলে অসুস্থ অবস্থায় এতো পাগলামি মেনে নেওয়া যায় না। আমার মাথা ঘুরছে। উঠে দাঁড়াতে পারব বলে মনে হয় না। অর্ক ভাইয়া আমার দিকে এক পানে চেয়ে আছেন। হয়ত বুঝতে পারছেন না আমাকে নাকি আয়াশকে সামলাবেন। আমি এবার দৃঢ় কন্ঠে বললাম,
–“ভাইয়া যাও না প্লিজ!”

অর্ক ভাইয় তাড়াতাড়ি করে উঠে দাঁড়াল।
–“আমি দেখছি। তোমাকে নিচে নামতে হবে না। এখানে থাকো। আমি আয়াশকে কোনোভাবে নিয়ে আসছি।”

বলেই বেরিয়ে গেল অর্ক ভাইয়া। আমি চিন্তিত হয়ে বসে রইলাম ওই পাগল লোকটার অপেক্ষায়।

হসপিটালের প্রায় সদর দরজার কাছাকাছি পৌঁছেছে আয়াশ। এতটুকু পথ চলতেই তার কষ্ট হয়েছে। পায়ের দিকে চোখ পড়তেই দেখে আকাশী রঙের প্যান্ট একেবারে রক্তে মাখামাখি হয়ে গেছে। গুলি লাগা স্থান থেকে নিশ্চয় ব্লিডিং শুরু হয়েছে পুনরায়। তবুও তার তোয়াক্কা করে না আয়াশ। বরং নিজের পায়ের ওপর বিরক্ত হয়ে বলে,
–“হোয়াট দ্যা হেল! এতো রক্ত পড়ার কি দরকার? এভাবে বাইরে যাব কি করে?”

–“একি! আপনি তো হসপিটালের পেশেন্ট বলে মনে হচ্ছে। এভাবে বাইরে চলে এসেছেন কেন? পা থেকে তো রক্ত বের হচ্ছে। ও মাই গড! চলুন ভেতরে চলুন।”

একটা মেয়েলি কন্ঠে রেগেমেগে ঘর্মাক্ত চেহারা নিয়ে ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকায় আয়াশ। একটা নার্স অবাক হয়ে তাকে কথাগুলো বলছে। আয়াশ কপাল কুঁচকে শক্ত কন্ঠে বলে,
–“হু ইজ পেশেন্ট? ডোন্ট কল মি পেশেন্ট। আমি পেশেন্ট না। আর আমাকে অর্ডার করার ভুল মোটেও করবে না। আমি এখন এই হসপিটালে তখনই ফিরব যখন আমার রাগের স্বীকার হবে আমার শত্রু!”

নার্স আর কথা বলার সাহস পায় না। যেভাবে আয়াশ কথা বলছিল যেন নার্সের গলা টিপে ধরতে এক মিনিটও নেবে না সে। নার্স চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে সকলকে ডাকতে শুরু করে।
–“ডক্টর? ওয়ার্ড বয়? দেখুন একটা পেশেন্ট বেরিয়ে চলে যাচ্ছে। আর কিসব পাগলামি করছে। ডক্টর প্লিজ আসুন।”

সকলে আসার আগেই ছুটে আসে রুদ্র। আয়াশ ওকে ধাক্কা দেওয়ার ফলে আসতে দেরি হয়ে গেছে। তবুও ভালো যে আয়াশকে পেয়েছে।আয়াশের কাছে এগিয়ে যেতেই আয়াশ হাত দিয়ে ইশারা করে রুদ্রকে সেখানেই থামতে বলে।
–“আমায় আটকানোর চেষ্টা করবি না রুদ্র। তুই বুঝতে পারছিস না আমার কেমন লাগছে। আমার গায়ে কেউ আগুন লাগিয়ে দিয়েছে মনে হচ্ছে। তুই আটকাবি না।”

–“দেখ আয়াশ, তুই নিজেই ভাব তুই এই অবস্থায় কি করতে পারবি? তারা তো তোর ক্ষতি করতে পারে। তার থেকে আমার কথা শোন চলে আয়। তোর রিকভারি হতে বেশি সময় লাগবে না। তারপর তুই যা করবি আমি তোর সাথ দেব আই প্রমিস।”

–“না! আমি যা করব এখনই। তুই সাথ দে আর না দে। কিভাবে খুন করা যায় বল তো? মানে কিভাবে মার্ডার করলে একদম নৃশংস হবে? ওদের আত্মা কিভাবে কেঁপে উঠবে? গিভ মি আইডিয়া!”

রুদ্র তেমন না চমকালেও আশপাশের সকলে চমকে উঠল। ভয়ার্ত চোখে তাকালো সকলে। অনেকে গুটিশুটি মেরে গেছে। রুদ্র সকলের দিকে তাকিয়ে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করল। যেসব ডক্টর ওকে ধরতে এগিয়ে আসছিল সেসব ডক্টর দাঁড়িয়ে গিয়েছে। যেন এগিয়ে যাওয়ার সাহস পাচ্ছে না তারা। তবে রুদ্র এসবে অভ্যস্ত। আয়াশের ভয়ানক রাগ সে আগে অনেকবার দেখেছে। সকলের ভড়কে যাওয়া চেহারা দেখে রুদ্র নিচু সুরে বলল,
–“ভয় পাবেন না। ও রেগে থাকলে অনেক উল্টাপাল্টা কথা বলে। এসব সিরিয়াসলি নেবেন না প্লিজ কেউ।”

রুদ্রকে সঙ্গে সঙ্গে আয়াশ ধমক দিয়ে বলে,
–“আমি সিরিয়াসলি বলছি রুদ্র। খুন করতে চাই আমি। এতদিন যেটা করিনি সেটা করতে চাই। রক্তে নিজের দুইহাত লাল করতে চাইছিস। তুই আমার অবস্থা বুঝতে পারছিস না। তোকে কিছু বলতে হবে না আমি যাচ্ছি।”

–“আনিশা অসুস্থ হয়ে পড়েছে আয়াশ। তুই যদি যাস তাহলে কিন্তু ও আরো অসুস্থ হয়ে পড়বে।”

যাবার আগেই আনিশার প্রসঙ্গ ওঠাতে থমকে যায় আয়াশের দুটো পা। যে এগোতে চেয়েও এগোতে হৃদয়ে কাঁটার মতো বেঁধে যায়। রুদ্র এগিয়ে এসে আয়াশের সামনে দাঁড়ায়।
–“তুই কি চাস? এখন তোর জন্য ও আরো অসুস্থ হয়ে যাক? ওর মেন্টাল প্রেশার পড়ুক তুই কি তাই চাইছিস?”

–“না। আমি তো ওর এমন অবস্থার জন্য যারা দায়ি তাদেরকে… ”

–“আজ তুই যদি উল্টাপাল্টা করিস তাহলে কি মনে হয়? ওর মনের অবস্থা কি হবে? তুই আমাকে একবার ফোনে জানিয়েছিলি তুই নিজের সকল অপকর্ম বাদ দিয়ে এখন যারা অসহায় তাদের জন্য কোর্টে তর্ক বির্তক করিস। তোকে বিপথে থেকে ফিরিয়ে একমাত্র কারণ আনিশা। এখন যদি তুই কাউকে খুন করিস তাহলে কি মনে হয়? আনিশার ভালো লাগবে? ও তোকে ভালোবাসবে?”

শেষ কথাটুকু বলতে গলা ধরে এলো রুদ্রের। ঢক গিলে নিজের কন্ঠস্বরকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করল সে। আয়াশ রুদ্রের পানে চেয়ে বাচ্চাদের মতো করে প্রশ্ন করল,
–“ও আমাকে ভালোবাসবে না?”

–“বাসবে। তুই যদি শান্ত থাকিস। নিজের রাগটুকু যদি দমিয়ে রাখিস।”

আয়াশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে কি যেন একটা ভাবল। তারপর বলল,
–“আমায় কেবিনে নিয়ে চল।”

অর্ক সবটা দেখছিল। রুদ্র সবটা সামলাতে দেখে সে এগোয়নি। কারণ রুদ্রের মতো সে আয়াশের এতটা ক্লোজ নয়। তাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল সে। আয়াশের কথায় দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে রুদ্র। তারপর রুদ্র ওর হাত নিয়ে কাঁধে রেখে বলে,
–“চল।”

এখনো সকলে কিছুটা ভয়ার্ত চোখে ভড়কে তাকিয়ে রয়েছে আয়াশের দিকে। সকলের উদ্দেশ্যে আয়াশ শান্ত কন্ঠে বলে,
–“যা বলেছি সব রাগের মাথায়। এসব নিয়ে সিরিয়াস কিছু নেই। যে যার কাজ করলে খুশি হবো।”
বলেই রুদ্রের কাঁধে ভর দিয়ে হাঁটতে শুরু করে আয়াশ।

–“স্যার? আপনি এই অবস্থায় এখানে?”

আয়াশের কন্ঠটা চেনা মনে হলেও বুঝতে পারল না কন্ঠটা কার। তাই তাকায় পেছন দিকে। সঙ্গে রুদ্রও তাকায়। মৃধা বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে। সে আয়াশকে এভাবে এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখবে আশা করেনি। বিধায় তার চোখে রাজ্যের বিস্ময়। আয়াশ কিছুটা বিরক্ত হলেও প্রকাশ করে না।
–“তুমি? এখানে কি করছ?”

–“ওই স্যার আমার চিন্তা হচ্ছিল তাই আপনার কেয়ার আই মিন আপনার সেবা করতে এসেছি।”

নিচু সুরে বলে মৃধা। আয়াশ এবার গম্ভীর গলায় বলে,
–“যদি আমার খেয়ালের চেয়ে বেশি নিজের কাজটা করো তাহলে বেশি খুশি হবো। সামনে কেসের ফাইনাল ডেট আছে। সো কাজে মনোযোগ দাও। আর রুদ্র আমায় নিয়ে চল।”

রুদ্র মাথা দুলিয়ে ধীরে ধীরে নিয়ে যেতে শুরু করে আয়াশকে। মৃধা এতো কথার পরেও পিছু পিছু আসে আয়াশের। সে পুরোপুরি নিশ্চিন্ত না হয়ে যেতে পারছে না। তবে আয়াশকে সজ্ঞানে পেয়েছে তাই খুব খুশি হয়েছে সে।

মৃধা অর্কের পাশ কাটিয়ে যেতেই নাকে আসে এক সুমিষ্ট ঘ্রাণ। তার চোখজোড়া যদি সবসময় মৃধাকে দেখতে পেতো তবেই যেন শান্ত হতো। এতটুকু দেখে চোখের তৃষ্ণা মেটানো যায় না। আজ মৃধা সাদা রঙের লং ড্রেস পড়েছে। গলায় হলুদ ওড়না পেঁচানো। ছোট ছোট চুলগুলো অবাধ্য হয়ে উড়ছে। দেখে মনে হচ্ছে তাড়াহুড়ো করে চুল বেঁধে এসেছে। চোখের অগোচরে হতেই অর্কের হুঁশ ফিরে। মৃধা বাঁক নিয়ে আয়াশের কেবিনের দিকে গেছে। অর্কও সেদিকে দ্রুত গতিতে চলে যায়।

বেশ কিছুক্ষণ ধরে বসে রয়েছি আমি। বুকে দ্রিমদ্রিম শব্দ বেড়েই চলেছে। উত্তেজনা চড়চড় করে বাড়ছে। অথচ লোকটার পাত্তা নেই। অলরেডি ডক্টর এসেছে রক্তের ব্যাগ নিয়ে। আমার শরীরে রক্তের প্রয়োজন যেটা ইমিডিয়েটলি দিতে হবে।

–“ম্যাম, আপনাকে তো অন্য কেবিনে যেতে হবে এখন। এটা মি. রায়হানের কেবিন। এখানে তো দুটো পেশেন্টকে একসাথে রাখা সম্ভব না।”

আমি জবাব না দিয়ে দরজার দিতে তাকিয়ে আছি। চোখমুখ বিষণ্নতায় ভরা। আমার উত্তর না পেয়ে নার্স এবার আমার কাঁধে হাত রেখে বললেন,
–“ম্যাম? আপনাকে যেতে অন্য কেবিনে।”

আমি কিছু বলতে নেব তখনই যার কন্ঠে আমার বিষণ্ণতা ধুয়েমুছে যায় তার কন্ঠ পেয়ে মনটা নেচে উঠল।
–“ও কোথাও যাচ্ছে না। এখানেই ওকে রক্ত দেওয়ার ব্যবস্থা করুন।”

কিন্তু উনার কথাটা শুনে আমার সুবিধার মনে হলো না। এখানে কি করে করবে এসব? তার ওপর আমি রক্তই দিতে চাইছি না। আশেপাশে যখন তখন রক্ত চোখে পড়াতে একেবারে দুর্বল হয়ে পড়েছি। দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার। আমি চোখমুখ খিঁচে বললাম,
–“আমি রক্ত দেব না। ওটা দেখলেই আমার দম বন্ধ হয়ে আসে।”

–“তোমায় দেখতে কে বলেছে? জাস্ট তোমার শরীরে দেওয়া হবে। তোমাকে রক্তের দিকে চেয়ে থাকতে হবে? আমার মতো একটা সুদর্শন পুরুষ থাকতে তোমার চোখ তো অন্য কোনো দিকে যাবেই না।”

–“সারাদিন যদি চোখের সামনে ঘোরাঘুরি করেন তাহলে তো আপনাকেই দেখতে হবে। জোর করে হলেও আপনাকেই দেখতে হবে।”

আয়াশ অবাক হওয়ার ভঙ্গিমায় বলেন,
–“কি বলো? আমি জোর করে নিজেকে দেখাই? তুমি তো ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকো আমার দিকে। তোমার দৃষ্টি সুবিধার মনে হয় না আমার। আজকাল আমার নিজেরই লজ্জা লাগে।”

আয়াশ এরূপকথায় থতমত খেয়ে গেলাম আমি। অদ্ভুত তো! আমি ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকি? কিছু বলার আগেই আমার দৃষ্টি গেল উনার পায়ের দিকে। রক্তে লাল হয়ে গেছে উনার প্যান্ট। এমন দৃশ্য দেখে চোখ বুঁজে ফেললাম আমি।
–“কি অবস্থা করেছেন নিজের? একদণ্ডও শান্ত হয়ে বসে থাকতে পারেন না?”

–“আই এম সরি। আসলে রাগটা বেড়ে গেছিল।”

অনুতপ্ত সুরে শীতল গলায় বলেন আয়াশ। সরি শুনে রাগটা বেড়ে যায়। কিছু করার পর সরি বলে লাভটা কোথায়? চোখ বন্ধ করে বসে থাকি আমি। একটি চিকন কন্ঠে চোখ আপনাআপনি খুলে যায়।
–“আনিশা তুমি?”

আমি ঠিক চিনতে পারলাম না মেয়েটাকে। গলার আওয়াজ কিছুটা চেনা মনে হলো। মৃধা হয়ত তা বুঝে বলল,
–“আমি মৃধা!”

–“মৃধা? তুমি?”

–“হ্যাঁ আমি। তুমি চোখে দেখতে পাচ্ছো? আই এম সো হ্যাপি। আজকে সবকিছু ভালো হচ্ছে। তুমি চোখে দেখতে পাচ্ছো আর স্যার ঠিক হয়ে গেছেন। খুব খুশি আমি আজ।”

খুশিতে দিশেহারা হয়ে বলে মৃধা। তবে আয়াশকে স্যার ডাকতে শুনে কিছুটা প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকাই আমি। প্রশ্নটা করেই ফেলি।
–“স্যার?”

–“হ্যাঁ স্যার। উনি আমার সিনিয়র হন। আমি উনার এসিস্ট্যান্ট। কিন্তু তুমি স্যারের সাথে? মানে তুমি স্যারকে চেনো? আয়াশ স্যার তোমার কেউ হন?”

একনজরে আয়াশের দিকে তাকাই। আমি কখনোই এমন পরিস্থিতির স্বীকার হইনি। কেউ আমাকে এভাবে প্রশ্ন করেনি। এখন কি বলব? উনি আমার স্বামী? ভাবতেই কান গরম হয়ে এলো। তাই উত্তরটা যেন আয়াশ দেন সেই আশায় বসে আছি। উনার পায়ে ব্যান্ডেজ করে দেওয়া হচ্ছে পুনরায়। আয়াশ আচমকা নির্বিকার হয়ে বলেন,
–“কাজিন। সি ইজ মাই কাজিন।”

আকাশ থেকে পড়লাম সরাসরি। কি রিয়েকশন দেব সেটা ভুলতে বসেছি। মস্তিষ্ক শূন্য হয়ে গেল। আমার কান কি খারাপ হয়ে গেছে? নাকি অতিরিক্ত শরীর দুর্বল থাকায় আমি ভুলভাল শুনছি? কাশি উঠে গেল আমার। তাতে অপ্রস্তুত হয়ে পড়লেন আয়াশ। সকলের আগে নিজেই আগ বাড়িয়ে অস্থিরতা নিয়ে বললেন,
–“পানি! পানি! পানি কোথায়?”

আয়াশের হাতে পানির গ্লাস রুদ্র এগিয়ে দিলে আমার দিকে ধরেন গ্লাসটা আয়াশ। আমি ফিরিয়ে দিই সেটা। ‘কাজিন’ শব্দটা বিষাক্ত বিষের মতো ফুটে গিয়েছে। সেই সঙ্গে অজান্তেই মনে বড়সড় তিক্ততা তৈরি করে ফেললাম। ‘কাজিন’ শব্দটা যেন মানতেই পারছি না। আমি গমগমে আওয়াজ করে বললাম,
–“আমার কাশি থেমে গেছে।”

মৃধা এগিয়ে এসে আমার পিঠে হাত বুলিয়ে দিল। হাসিমুখ নিয়ে বলল,
–“আমি জানতাম না তোমরা কাজিন। জানলে হয়ত…”

বলেই থামল মৃধা। আমি ইশারায় জানতে চাইলাম কি বলতে গিয়ে থামল সে…? আমার কানের কাছে এসে সে ফিসফিসিয়ে বলল,
–“জানলে হয়ত আগেই আমার ক্রাশের সঙ্গে আগেই দেখা হয়ে যেত।”

চোখ বড় বড় করে তাকালাম আমি। এতোগুলো বিস্ময় একসঙ্গে নিতে পারছি না। হয়ত আমিই প্রথম ওয়াইফ যে কিনা অন্য মেয়ের মুখে এভাবে তার হাজবেন্ডের ওপর ক্রাশ খাওয়ার কথা শুনছে! কি সাংঘাতিক!

সবকিছু কেমন জানি এলোমেলো লাগল আমার। মনটার কি হলো জানি না তবে চারিদিকটা বিষাক্ত হয়ে উঠল। মস্তিষ্ক জানান দিয়ে বলল, ‘কেন আয়াশের ওপরেই তাকে ক্রাশ খেতে হবে? কেন আয়াশই বা আমায় কাজিন বলবে? কেন কেন কেন?’

সব মিলিয়ে প্রচন্ড রাগ হলেও তা প্রকাশ করলাম না। কেসের ঝামেলার কারণে দ্রুত বিদায় নিল মৃধা। অর্ক ভাইয়া গেল তাকে হসপিটালের বাইরে অবধি ছেড়ে আসতে। অবশেষে আয়াশের জেদই পূরণ করা হলো। তারই কেবিনে আমায় রক্ত দেওয়া হলো। আমি চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছি। আমার পাশেই আধশোয়া হয়ে আমার সঙ্গে সেঁটে বসে রয়েছেন আয়াশ। উনি কি করছেন জানি না। জানার প্রয়োজনবোধও করছি না। মাত্রাতিরিক্ত রাগ সৃষ্টি হচ্ছে। কেন জানি না!

একসময় পানির পিপাসা পেয়ে চোখ খুললাম। নিজেকে আয়াশের বরাবর থেকে ভড়কে গিয়ে জোরে কিছু বলতে নিলেই আমার মুখের ওপর হাত রাখেন আয়াশ। ঠোঁটজোড়া এগিয়ে আনতে গিলে আমি মুখ ঘুরিয়ে ফেলি। আয়াশ হয়ত তাতে কিছুটা বিরক্ত হন। আরো কিছুটা ঝুঁকে পড়েন আমার দিকে। আমি উনার হাত মুখের ওপর থেকে সরিয়ে বললাম,
–“সরুন। আমি উঠে বসব।”

আয়াশ সরলেন। বাঁকা হাসি দিয়ে বললেন,
–“উঠে বসে রোমান্স করতে চাও? নো প্রবলেম। এতে আরো সুবিধায় হবে। ঝুঁকে রোমান্স করতে গিয়ে পেটে আঘাত লাগা জায়গায় খুব চাপ পড়ছে।”

বলেই আমার বাহু ধরে আস্তে আস্তে উঠে বসালেন উনি। আমি চোখ রাঙিয়ে ঝাঁঝালো কন্ঠে বলার চেষ্টা করলাম,
–“আপনার কি মনে হয়? আমি ওসব করার জন্য উঠে বসতে চাইছি?”

–“বলতে হবে কেন? কিছু কিছু কথা বুঝে নিতে হয় মাই হানি!”

চোখ টিপে বললেন উনি। আমি বড় নিশ্বাস নিয়ে স্বাভাবিক হয়ে বললাম,
–“আয়াশ ভাইয়া? একটু শুনবেন? পানিটা একটু এগিয়ে দেবেন? পিপাসা পেয়েছে।”

কথাটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে বিস্ফোরিত চোখে তাকালেন আয়াশ আমার দিকে। তবে আমার দৃষ্টি অতি স্বাভাবিক। কোনো হেলদোল নেই। আয়াশ কিছুক্ষণ বিস্ময়ের মাঝে থেকে ভ্রুকুটি কুঁচকে বললেন,
–“হোয়াট ডিড ইউ সে?”

–“আয়াশ ভাইয়া পানির গ্লাসটা দিন। আপনার কাছেই পানির গ্লাস। আমি পাচ্ছি না।”

নির্বিকার সুরে বললাম আমি। আয়াশের চোখমুখ আস্তে আস্তে লাল হয়ে এলো। ধবধবে ফর্সা মুখে ছড়িয়ে পড়ল রক্তিম বর্ণটি। চোয়াল শক্ত করে আমার দিকে চাইলেন। আর বললেন,
–“এই মেয়ে আমি তোমার ভাইয়া? কোন এঙ্গেল থেকে? স্বামীকে ভাইয়া বলছো লজ্জা লাগে না? ভাইয়ার সাথে কেউ রোমান্স করে দেখেছো?”

চলবে…

[বি.দ্র. অনেকেই বলেছেন গতকাল গল্প না দেওয়ায় দুটো পার্ট একসঙ্গে দিতে। কিন্তু আমি তা পারছি না। সময়ের বড়ই অভাব। এসাইনমেন্ট + পড়ালেখা লেগে রয়েছে। সামনে নাকি এক্সামও হবে। তাই বুঝতেই পারছেন কতটা চাপে রয়েছি! তবুও এখানে ২০০০+ শব্দ আছে। গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবের সঙ্গে তুলনা করবেন না। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here