মনের_অন্দরমহলে পর্ব ৪৫

মনের_অন্দরমহলে পর্ব ৪৫
#আনিশা_সাবিহা

কেবিনের বাইরে এক দৃষ্টিতে কেবিনের ভেতরটা দেখছে রুদ্র কাঁচের গ্লাস দিয়ে। আবছা আলোতে ভালোভাবে কিছু দেখা যাচ্ছে না। অস্পষ্ট আনিশা ও আয়াশের মুখ। আয়াশ নিজের আবেশে আনিশাকে জড়িয়ে ধরে নানারকম কথা বলছে আর আনিশাও মাঝে মাঝে কথা বলছে সেটা ভালোভাবে বুঝতে পারছে রুদ্র। তার কাছে এই দৃশ্যটি সবথেকে বেশি যন্ত্রণাদায়ক হলেও সে দেখছে। আচ্ছা, এভাবে লুকিয়ে-চুরিয়ে স্বামী-স্ত্রী এর একান্ত দৃশ্য দেখা কি কোনো অপরাধ? হয়ত হ্যাঁ অপরাধ। রুদ্রের এসব দেখা মোটেও ঠিক নয়। তবে সে তো এই দৃশ্য দেখছে না। সে শুধু দেখছে অস্পষ্ট আনিশাকে। যাকে স্পষ্ট না দেখা গেলেও সে দেখছে। রুদ্র মনে করে, সে লুকিয়ে অন্তত তাকে এতটুকু দেখতে পাচ্ছে সেটাই তার ভাগ্য। তাদের একান্ত দৃশ্যগুলো দেখে রুদ্র ভেতর থেকে যতটাই গুঁড়িয়ে যাচ্ছে আনিশার অবয়ব খানি দেখে সে ততটাই বেহায়ার মতো চেয়ে রয়েছে। এ যেন এক অসহ্য টানাপোড়েন।

রুদ্রের মাঝে মাঝে আয়াশকে বলতে বড্ড ইচ্ছে করে, ‘আমি না জেনেই আনিশার প্রতি এক ভয়ানক অনুভূতি তৈরি করে ফেলেছি। সেটাকে ধ্বংস করতে পারছি না। ভাইরাসের মতো শিরায় শিরায় ছড়িয়ে পড়ছে সেই অনুভূতি। আনিশাকে আমি চাই।’

এসব ভাবতেই থমকে যায় রুদ্র। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম বেয়ে গালের ছোট ছোট করে রাখা দাড়িতে এসে মিশে যায়। হালকা মোটা নাকে চিকচিক করছে ঘামের ছোট ছোট বিন্দু। মোটা ফেমের চশমার আড়ালের চোখজোড়ায় এক ভয়াবহ অনুভূতি স্পষ্ট। সেটা ভালোবাসারই অনুভূতি। আনিশার দিকে নিষ্পলক চোখে তাকায় রুদ্র।

–“লুকিয়ে লুকিয়ে কাউকে এভাবে দেখা অপরাধ রুদ্র! দিনকে দিন চোর হয়ে যাচ্ছো দেখছি।”

এই সময় আর এতো রাতে কাউকে এক্সপেক্ট করেনি রুদ্র। তাকে এভাবে হাতেনাতে কেউ ধরাতে হকচকিয়ে উঠে পিছু ফিরে তাকায় সে। স্মিত হাসি দিয়ে সিয়া দাঁড়িয়ে আছে। তাকে দেখে রুদ্র গাম্ভীর্য বজায় রেখে শান্ত হয়ে বলার চেষ্টা করে,
–“এসব কি বলছো তুমি? আর এতো রাতে এই হসপিটালে তুমি?”

–“আমার হসপিটালের ডিউটি কিছুক্ষণ আগেই শেষ হলো। ফোনে তুমি বলেছিলে কোথায় আছো। তাই ভাবলাম চলে আসি। একবার দেখা করে গেলে ক্ষতি কি! দেখা তো অনেকদিন হয় না।”

–“অনেকদিন? আজই তো সকালে দেখা হয়েছিল আমাদের। তুমি কি ভুলে গেছো?”

বিস্ময়ের সঙ্গে প্রশ্ন করে রুদ্র। সিয়া আরেকটু হেঁসে জবাব দেয়,
–“হতে পারে। এটা তোমার কাছে হতে পারে যে আমাদের দেখা কিছুক্ষণ আগেই হয়েছিল। কিন্তু আমার কাছে তা নয়। আর কেন নয় সেটা তুমি ভালো করে জানো।”

রুদ্র তাড়াতাড়ি প্রসঙ্গ পাল্টাতে বলে,
–“এতো রাতে এতদূর একা আসা তোমার ঠিক হয় নি। এলে সকালে আসতে। এখনই বাড়ি যাও। নাকি আমি দিয়ে আসব?”

–“তার কোনো দরকার নেই। আমি ড্রাইভার নিয়ে এসেছি। তোমার কি মনে আছে রুদ্র? তুমি আজকে নিজের হসপিটালের ডিউটি ছেড়ে এখানে এসেছো। আবার মনে হচ্ছে রাতে থাকবেও।”

–“হ্যাঁ মনে আছে। আমি কয়েকদিনের ব্রেক নিয়েছি ডিউটি থেকে।”

–“ভালোবাসার গভীর খাদে এমনভাবে পড়ে গেলে যে তোমার মতো ডিউটি পাগল মানুষ ছুটি নিচ্ছে?”

থতমত খেয়ে যায় রুদ্র। সিয়া মেয়েটা তাকে অপ্রস্তুত করে দেয়। তবুও নিজেকে ধাতস্ত করে চশমা ঠিক করে বলে,
–“কি বলছো তুমি? মাথা ঠিক আছে তোমার?”

–“চশমা আড়ালে সকলের থেকে অনুভূতি লুকোতে পারলেও আমার কাছে সেটা ধরা পড়েছে।”

চাপা সুরে বলল সিয়া। তার কথায় বিক্ষোভ মিশে রয়েছে। রুদ্র কিছুটা জোরে বলল,
–“আজেবাজে কথা বলছ কেন? আমি তো আমার বেস্টফ্রেন্ডের জন্য আছি। অন্য কোনো কারণ নেই।”

–“আচ্ছা তাই? ভালো। ভালো বাহানা খুঁজেছো। তো কেমন আছে সে? এই কেবিনে আছে?”

বলামাত্র কেবিনে উঁকি দেয় সিয়া। তৎক্ষনাৎ চমকে ওঠে সে। বিস্ফোরিত চোখে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলে,
–“ও…ওর সাথে ওই ছেলেটা কে? ও কি তবে…”

–“হুমম ও বিবাহিত। আর ওই ছেলেটা আমার বেস্টফ্রেন্ড। আয়াশ।”

সিয়া কিছুক্ষণ চুপটি করে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করে। তার বুঝতে সময় লাগে না রুদ্রের চোখেমুখে কেন এতো মলিনতা! যার প্রতি হঠাৎ করেই ভালোবাসা নামক সর্বনাশা অনুভূতি জন্মায় এবং তারপরেই জানা যায় সে অন্যকারো তাও আবার নিজেরই কাছের কারো প্রিয়জন সেটা মনে বড্ড আঘাত দেয়। রুদ্র কিভাবে সহ্য করে এখানে রয়েছে সেটাই ভাবছে সিয়া। রুদ্রের দৃষ্টি স্বাভাবিক। রুদ্র একবার এক বুঁজে আবার খুলে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,

–“বাড়ি যাও। দেখা করার হলে পরে করবে। আমার খিদে পেয়েছে। বাইরে যাব। দেখি কোনো রেস্টুরেন্ট খোলা পাওয়া যায় কিনা! চলো তোমায় গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসি।”

সিয়াকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে রুদ্র তার পাশ কাটিয়ে চলে যায়। তার সাথ ধরার জন্য সিয়াও পা বাড়িয়ে ছুটে যায় একপ্রকার রুদ্রের পাশাপাশি চলার জন্য।

এক সপ্তাহ পর,
আজকে আয়াশকে রিলিজ দেওয়া হবে। সবরকম ফর্মালিটিস পূরণ করে আসে অর্ক ভাইয়া। আমি বেডে পা ঝুলিয়ে বসে আছি। বাঁকা দৃষ্টিতে দেখছি আয়াশকে। রয়েছে মৃধাও। এটাই তার কারণ যে আমি আয়াশের দিকে সরাসরি তাকিয়ে নেই। প্রচন্ড রাগ হচ্ছে আমার। এই এক সপ্তাহে কারণে অকারণে মৃধা ছুটে এসেছে আয়াশের কাছে। কারণ না পেলে কাজের বাহানা দিয়ে এসেছে। তবুও এসেছে। আবার আমার কানে কানে ফিসফিসিয়ে বার বার বলত সে আয়াশকে দেখতে এসেছে। আয়াশ কোনো কাজ নেই জেনেও নির্লিপ্ত ভাবে আমায় ছেড়ে মৃধার সঙ্গে বকর বকর করে গেছেন। মৃধা এলে আমার দিকে তাকানোরও সুযোগ হয় না আয়াশের। আমি দাঁতে দাঁত চেপে ফিকে হাসি দিয়ে চুপ থেকেছি। কেন জানি না মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে হাত-পা ছুঁড়ে কান্না করতে। কারণটা দুঃখের জন্য নয় রাগের জন্য। রাগে প্রচন্ড কান্না পায় আমার। চোখ লাল করে দুজনকে পর্যবেক্ষণ করি। ইভেন আজকাল আমার কান্নাটাও যেন ওই লোকটার চোখে পড়ে না। নিজেকে সব থেকে অসহায় মানবী মনে হয় আমার। আমার মস্তিষ্ক কড়া নাড়িয়ে বলে,

‘হায় হায় আনিশা! তোর সুন্দর জামাইটা হারিয়ে গেল। অন্য মেয়ের বশ হয়ে গেল। আর ফিরে পাবি না।’

এসব ভাবতেই আবারও রাগ চেপে বসে মাথায়। বেডের চাদর খামচে ধরতেই আচমকা মৃদু চিৎকার দিয়ে ওঠেন আয়াশ।
–“আউচ! হোয়াট আর ইউ ডুয়িং?”

আমি কিছুটা চমকে মাথা নিচু করে তাকাই। আয়াশের হাতে খামছি দিয়ে বসে আছি আমি। সঙ্গে সঙ্গে হাত সরিয়ে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে তাকাই। আয়াশ আমার কাঁধে হাত রেখে আমায় নিজের দিকে ফেরানোর চেষ্টা করে বলেন,
–“আর ইউ ওকে আনিশা? এমন উদ্ভট বিহেব করছো কেন?”

–“ইয়েস। আই এম ওকে। আপনাকে এতো ভাবতে হবে না। আপনার না মৃধার সঙ্গে কাজ আছে?”

–“ওহ ইয়েস! আই ফরগেট ইট।”

বলেই আমার থেকে নজর সরিয়ে আবারও ওইদিকে মনোযোগ দেন আয়াশ। তবে মৃধা আমায় পর্যবেক্ষণ করে বলে ওঠে,
–“তুমি কি আসলেই ঠিক আছো আনিশা? তোমায় কেমন যেন দেখাচ্ছে। গাল লাল হয়ে গেছে, ঘামছো বেশি করে আবার চোখও লাল দেখছি। তোমার আবার জ্বর আসেনি তো?”

মৃধার প্রতিটা কথায় রাগের ওপর রাগ বাড়তে লাগল আমার। কেন জানি ওর কথা আমি সহ্য করতে পারছি না। রাগটা আউট ওফ কন্ট্রোল হয়ে তড়িৎ বেগে উঠে দাঁড়িয়ে একপ্রকার চিৎকার দিয়ে বললাম,
–“আমি বললাম না আমি ঠিক আছি? বার বার এক প্রশ্ন করে কেন বিরক্ত করছো আমাকে? আমাকে তোমার অসুস্থ মনে হয় নাকি? নাকি অসুস্থ বানিয়ে রাখতে চাও তোমরা দুজন? এক প্রশ্ব বার বার করবে না আমায়।”

আয়াশ আমার দিকে সরু দৃষ্টিতে অপলক চোখে তাকিয়ে রইলেন। লোকটার কোনো রিয়েকশন নেই। উনি কি বুঝতে পারছেন না আমার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে? ইচ্ছে করছে সব লন্ডভন্ড করে দিতে? মৃধার প্রাণোচ্ছল চেহারা কিছুটা ফ্যাকাশে বর্ণে পরিণত হয়েছে। তাতেও কেন জানি রাগ কমল না আমার। আয়াশ কিছু বলতে উদ্যত হলেই আমি কোনো প্রকার সুযোগ না দিয়ে আমি ঝড়েরবেগে বেরিয়ে আসতে নিই। অর্ক ভাইয়া তখনই কেবিনে ঢুকে পড়ে। আর তাড়াহুড়ো করে বলে,
–“রিলিজ করে দিয়েছে আয়াশকে। এখন বাড়ি নিয়ে পারি আমরা।”

অর্ক ভাইয়া কথায় থামলাম আমি। তিক্ততার সঙ্গে বললাম,
–“সেটা আয়াশ ভাইয়াকে বলো গিয়ে। আমায় বলছো কেন?”

–“আনিশা? হোয়াট ডিড ইউ সে?”

অর্ক ভাইয়া কিছু বলার আগে আয়াশ পেছন থেকে কথাটি আমায় কটাক্ষ করে বললেন। উনার কন্ঠ বেশ দৃঢ়। আমিও নিজের জেদ বজায় রেখে বললাম,
–“কেন? আপনাকে আবার কি বললাম ভাইয়া? ভুল কিছু বলে ফেললাম নাকি?”

–“ভাইয়া বলবে না। খবরদার ভাইয়া বলবে না।”

–“আচ্ছা মৃধা? কাজিনদের ভাইয়াই তো বলে সচরাচর তাই না?”

মৃধা কিছুটা হতভম্ব হয়ে আমাদের ক্ষোভ-বিক্ষভের লড়াই দেখে যাচ্ছিল। হঠাৎ তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করায় ভ্যাবাচেকা খেয়ে সে ক্ষীণ সুরে বলল,
–“হ…হ্যাঁ।”

–“আয়াশ ভাইয়া? আপনি কি কোনো ইউনিক নাক বের করেছেন? করলে বলতে পারেন? ব্রো, ব্রাদার এসবও বলা যেতে পারে। বলব?”

এবার আমার রাগে লাল হয়ে যাওয়ার রোগটি আয়াশের কাছে ট্রান্সফার হতে লাগল। ইশারায় আমায় এখানেই থেমে যেতে বললেন। কিন্তু আমিও থামার পাত্রী নই। অর্ক ভাইয়া আমাদের থামাতে বলল,

–“কি হয়েছে তোমাদের দুজনের? এমন করছো কেন তোমরা? আয়াশ? ড্রেস চেঞ্জ করে নাও। বের হতে হবে আমাদের।”

–“হ্যাঁ ভাইয়া। কুইক!”

আয়াশ এবার ফ্লোরে পা রেখে উঠে দাঁড়ান। এখন মোটামুটি ভালোই হাঁটতে পারেন উনি। একটু একটু করে আমার সামনে এসে দাঁড়ান উনি। অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করেন। আমি বেশ স্বাভাবিক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। এক পর্যায়ে সকলের সামনে আরো এগিয়ে আসতে লাগলেন উনি। অটোমেটিকলি আমার সাহসী মনটি ভীতুর ডিমে পরিণত হলো। হাবভাব একদমই ভালো লাগছে না উনার। সবার সামনে আবার কোন অঘটন ঘটাতে চলেছেন? আমি পিছিয়ে যেতে নিলেই এক হাত আমার পিঠে লাগিয়ে আরো ঠেলে নিজের কাছে নিয়ে আসেন। দুরুদুরু মনটা বলে চলেছ, ‘আজ তোকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না আনিশা। লজ্জায় মরে যাবি তুই। মরার জন্য প্রস্তুত হ। আরো ডাকবি ভাইয়া?’

দুনিয়ার সবচেয়ে অসহায় মানবীর মতো চোখমুখ করে হাত দিয়ে নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করে চোখ বন্ধ করে ফেললাম। এই বুঝি ঘটল কোনো সর্বনাশ!

বেশ কয়েক সেকেন্ড চোখ বুঁজে থেকেও যখন কিছু হলো না তখন ফট করে চোখ মেলতেই দেখি আয়াশ এক ইঞ্চিও সরে যান নি। মুখ আরো একটু এগিয়ে এনে আমার কানের কাছে এনে ফিসফিস করে বললেন,
–“এখনো তেমন কিছুই করিনি যেটা তুমি ভাবছো। কিন্তু করব যদি আর একবার ভাইয়া ডাকটা উচ্চারণ করেছো তো সবার সামনে আমার স্পেশাল পানিশমেন্ট দিয়ে দেব। তুমি জানো কতটা পরিমাণ নির্লজ্জ হবার ক্ষমতা রাখি। দেব?”

–“না!”

অসহায় হয়ে বললাম আমি। উনি বললেন,
–“এনিওয়ে, তোমার চোখমুখ লাল হয়ে থাকার কারণ কিন্তু আমি জানি নিশাপাখি। ইউ লুক লাইক এ স্ট্রবেরি। সুড আই ইট দিস স্ট্রবেরি?”

বলেই সরে গেলেন উনি। আমি পাথরের মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে থাকলাম। রাগে-দুঃখে এবার মাথা নিচু করে রয়েছি। আয়াশ গলা খাঁকারি দিয়ে বলে উঠলেন,
–“আমি ড্রেস চেঞ্জ করব। একা পারব না সো আনিশা কাম হেয়ার। হেল্প মি।”

আঁখিদুটি রসগোল্লার মতো হয়ে গেল। নিজের দিকে ইশারা করে বললাম,
–“আমি?”

–“তো কে? এখানে আর কার নাম আনিশা? আর তোমরা বাইরে যাবে প্লিজ? আর মৃধা ইউ ক্যান গো নাউ। কাল ভিকটিম সম্ভবত সিসিটিভি ফুটেজ দেবে সেটা নিয়ে আসবে। গট ইট?”

মৃধা ভদ্র মেয়ের মতো মাথা নাড়িয়ে আমার দিকে একটু তাকিয়ে ব্যাগ নিয়ে গম্ভীর মুখে হাঁটা দেয়। যেন সে ভীষণই চিন্তিত। সে কি আয়াশের কর্মকান্ডের জন্য চিন্তিত? উনি যে সবার সামনে আমার এতো কাছে এলেন সেই বিষয় নিয়ে চিন্তিত? ভাবতেই মনে পৈশাচিক আনন্দ কাজ করতে লাগল। সব তিক্ততা ভুলে মন গেয়ে উঠল, ‘ আহা আনিশা! তোর অসভ্য, সীমাহীন নির্লজ্জ বরটা তোরই আছে।’

মুখে আপনা-আপনি হাসি ফুটল আমার। আয়াশ আমার সামনে চুটকি বাজিয়ে বললেন,
–“আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে হাসছো? স্বপ্ন সত্যি করার চান্স কিন্তু রয়েছে। আমি তোমার সামনেই আছি।”

আমি মুখ থেকে হাসি সরিয়ে শান্ত হয়ে ফিচেল কন্ঠে বললাম,
–“আপনার কি মনে হয় না আপনি নিজেকে নিয়ে একটু বেশিই কনফিডেন্ট?”

–“ইয়াপ! নিজেকে নিয়ে কনফিডেন্ট হওয়া ভালো জানো না? এখন শার্ট টা খুলে দাও।”

–“আপনার হাত নেই?”

–“এই মূহুর্তে ধরে নাও হাত নেই আমার।”

নাহ! উনার সাথে কোনোমতেই পারা যাবে না। এই ভেবে এগিয়ে এসে শার্টের বোতাম একটা একটা করে খুলতে লাগলাম। আয়াশ আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছেন। মানুষটার হাসি চমৎকার!

অবশেষে বাড়ি আসা হলো। তবে আয়াশ এবার এলেন রায়হান প্যালেসে। এর কারণ আমি জানি না। আমাদের সঙ্গে রুদ্রও এসেছেন। যদিও উনি বার বার মানা করেছেন যে উনি আসবেন না। জোরজবরদস্তি করেই লোকটা রুদ্রকে সাথে আনলেন। আয়াশ হালকা খুঁড়িয়ে এগিয়ে এসে আমায় ঠেলে বললেন,
–“কলিংবেলটা তুমি বাজাও।”

–“আমি?”

আয়াশ মাথা দুলালেন। আমি কাঁপা কাঁপা হাতে কলিংবেল বাজালাম। কিছু মূহুর্তেই দরজা খুলে দেওয়া হলো। দরজাটা খুলেছেন আয়াশের মা। দরজা খুলেই আমায় সর্বপ্রথম দেখে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে গেলেন উনি। এমনভাবে আমায় পর্যবেক্ষণ করছেন যেন আমি কোনো ভূত বা এলিয়েন! একসময় উনি এক আকাশ বিস্ময় নিয়ে বললেন,
–“এই মেয়ে তুমি?”

চলবে…

[বি.দ্র. কাল গল্প নাও দিতে পারি। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবতা খুঁজবেন না।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here