মনের_মতো_তুই #পর্বঃ৪ #লেখিকাঃদিশা মনি

#মনের_মতো_তুই
#পর্বঃ৪
#লেখিকাঃদিশা মনি

অন্ধকারে হঠাৎ কেউ আমার হাত চেপে ধরতেই আমি চিৎকার করে উঠি।আহসান ভাই আমার মুখে হাত চেপে বলে,
‘একদম চুপ থাক।বড্ড পাকা হয়েছিস তাইনা? তোর পাকনামি আমি বের করছি।’

আমি তোতলাতে তোতলাতে বলি,
‘কি,,কি পাকনামি করলাম আমি আহসান ভাই?’

‘কি করেছিস মানে? রেস্টুরেন্টে একটা ছেলের সাথে বসে বসে প্রেমনীলা করছিস।’

আহসান ভাইয়ের কথাটা শুনে ঘাবড়ে যাই।আহসান ভাই কি তাহলে আমার আর আদিত্যর ব্যাপারে সব জেনে গেল।না ভয় পেলে চলবে না।

‘এসব তুমি কি বলছ? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।’

‘বুঝতে পারছিস না তাইনা? তাহলে এই ছবিটা দেখ।’

ছবিটা দেখে আমি ভয়ে কাপতে থাকি।আমার আর আদিত্যর একসাথে রেস্টুরেন্টে বসে থাকার ছবি কেউ তুলে নিয়েছে।আমি বুঝতে পারি আজ সত্যিই আমার সাথে ভীষণ খারাপ কিছু হতে চলেছে।আহসান ভাইকে রাগী চোখে তাকাতে দেখে আমি বলি,
‘ও তো আমার বন্ধু।তুমি ভুল ভাবছ।’

‘তুই আজকাল তারমানে ছেলেদের সাথেও বন্ধুত্ব করছিস? ব্যাপারটা সুবিধার লাগছে না।শোন তোকে লাস্ট ওয়ার্নিং দিচ্ছি ইন ফিউচার যদি কোন ছেলের সাথে তোকে দেখি তাহলে কিন্তু ভালো হবে না।এবারের মতো তোকে ছেড়ে দিলাম।তবে এরপর এমন কিছু করলে রিপোর্ট চলে যাবে আঙ্কেলের কাছে।আর আঙ্কেল কি করবে সেটা বুঝতেই পারছিস।’

আমার খুব কাদতে ইচ্ছে করছিল।অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে ‘ঠিক আছে’ বলে আমি বেরিয়ে আসতে থাকি।আহসান ভাই আমার হাত আটকে বলে,
‘তোর মুখ এত শুকনো শুকনো লাগছে কেন? নিশ্চয়ই রাতে কিছু খাসনি।আয় আমি রান্না করেই রেখেছি খেয়ে নে।’

‘না থাক।আমি হোস্টেলে ফিরে খেয়ে নেব।’

‘বেশি কথা না বলে চুপচাপ খেতে চলে আয়।নাহলে কিন্তু এর ফল ভালো হবে না।’

আহসান ভাইয়ের কথায় ভয় পেয়ে আমি চুপচাপ খেয়ে নেই।খাওয়া শেষ করার পর বাইরে আসতেই আহসান ভাইও আমার পিছুপিছু বাইরে আসেন।তিনি আমাকে হোস্টেলে পৌঁছে দিয়ে তারপর ফিরে যান।

৭.
কাল রাতে ভালো করে ঘুম হয়নি।তাই ঘুম থেকে উঠতে উঠতে অনেক দেরি হলো।ঘুম থেকে উঠে আমি কোন কিছু না খেয়েই ভার্সিটির জন্য বেরিয়ে পড়ি।আজ যাতে লেইট না হয় সেই জন্য দ্রুতবেগে চলতে থাকি।কিন্তু আমার দূর্ভাগ্য ২ মিনিট লেইট হয়ে গেল।

আজও প্রথম ক্লাস আহসান ভাইয়ের ছিল।তাই আমি আর অপমানিত হওয়ার জন্য ভার্সিটিতে ঢুকলাম না।ভাবলাম প্রথম ক্লাস শেষ হওয়ার পর যাবো।

আমি পাশেই একটি রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসি।আমার সামনে কেউ একজন এসে বসে।আমি প্রথমে খেয়াল করিনি।আদিত্যই আমার সামনে বসে ছিল।আদিত্য আমাকে দেখে বলে,
‘আপনার কথাই বোধহয় ঠিক।ভাগ্যক্রমে আবার আমাদের দেখা হয়ে গেল।’

আদিত্যর গলাটা শুনে আমার হৃদস্পন্দন বেড়ে গেল।আমি চোখ তুলে ওনার দিকে তাকাতেই ওনার সুইট স্মাইল দেখতে পেলাম।আদিত্যকে দেখে আমার গোমড়া মুখেও মুহুর্তের মধ্যে হাসি ফুটে ওঠে।

আদিত্যঃআপনি ক্লাস না করে এখানে কি করছেন?

আমি বললাম,’আসলে আজ একটু লেইট হয়ে গেছে।আর আমাদের যে লেকচারার সে খুবই ঘাড়ত্যাড়া।তাই আমি আর ক্লাস করতে গেলাম না।’

‘ও তারমানে তো আপনার কাছে এখনো অনেক সময় আছে।তা এই সময় কি বসে বসে নষ্ট করবেন?’

‘হ্যা সেটাই করতে হবে।এছাড়া আর কি করব।’

‘পার্কে ঘুরতে যাবেন?’

‘আপনি নিয়ে গেলে অবশ্যই যাবো।’

আমার কথা শুনে আদিত্য আবার হেসে ফেলে।আমি তাড়াতাড়ি কফি খেয়ে নিয়ে ওনার সাথে পার্কে চলে যাই।

পার্কে এভাবে ওনার পাশাপাশি হাটতে কি যে ভালো লাগছিল বলে বোঝাতে পারব না।যদি সময় এখানে থমকে যেত কি ভালোটাই না হতো।

আদিত্য আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
‘আপনি কি মনে করেন এরপর আবার আমাদের দেখা হবে?’

‘হয়তো।’

‘আপনি তাহলে শিউর না।তাহলে একটা কাজ করুন আপনার ফেসবুক একাউন্টের নাম বলুন।’

‘স্বপ্নের রাজকন্যা।’

‘নামটা তো জটিল।আমি ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে দিয়েছি এক্সসেপ্ট করুন।’

‘আপনার আইডির নাম?’

‘মনের মতো তুই।’

‘সরি?’

‘এটাই আমার আইডির নাম।’

‘ও আচ্ছা।’

ওনার রিকোয়েস্ট এক্সসেপ্ট করে ফেলি।দ্বিতীয় ক্লাস শুরুর টাইম হয়ে এসেছে।তাই আমি আর দেরি না করে ওনাকে বিদায় জানিয়ে চলে আসি।

আদিত্যও ওর মতো চলে যায়।এভাবে আসতে তো আমার একদমই ভালো লাগছিল না।জানি না আদিত্যর কেমন লাগছিল।তবে এখন আমরা ফেসবুকে কথা বলতে পারব।আর ভাগ্যের ভরসায় থাকতে হবে না এটা ভেবে ভালোই লাগল।

ভার্সিটির কাছাকাছি আসতেই আহসান ভাইকে দেখে আমার চোখ কপালে উঠে যায়।আহসান ভাই রাগে কটমট করতে করতে আমার দিকে এগিয়ে আসে।

জোরে আমার হাত চেপে ধরে বলে,
‘ক্লাস মিস করে কার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলি?’

‘আহসান ভাই ছাড়ো আমার লাগছে।’

‘লাগুক তোর লাগাই উচিৎ।তোকে এত বড় সাহস কে দিল আমার ক্লাস মিস করার? আজ আমি আঙ্কেলকে সব জানাবো।তারপর তিনি যা সিদ্ধান্ত নেবেই তাই হবে।’

‘আমার ব্যাপারে তোমাকে কে এত নাক গলাতে বলেছে? মনে রেখো তুমি কিন্তু আমার গার্ডিয়ান নও।তাই আমার ব্যাপারে নাক গলাবে না।’

কথা বলা শেষ করতেই গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে থাকি আমি।আহসান ভাই আমার গায়ে হাত তুলল।অজান্তেই আমার চোখ দিয়ে জল ঝরতে থাকে।

আহসান ভাই প্রচণ্ড রেগে গেছে।
‘খুব সাহস হয়েছে তোর তাইনা হিয়া? তোর সাহস আমি বের করছি।দেখ কি হয়।’

আহসান ভাই রাগে কটমট করতে করতে আমার সামনে দিয়ে চলে গেল।

৮.
আমি মন খারাপ করে ক্লাসে প্রবেশ করি।

লিলিঃকি হয়েছে রে হিয়া? মুখটা এরকম দেখাচ্ছে কেন?

তৃপ্তিঃহ্যাঁ তাইতো আর তুই এতো লেইট করলি কেন।

আমি বললাম,
‘আহসান ভাই বেশি বাড়াবাড়ি করছে।আজ আমার আসতে একটু দেরি হয়েছে জন্য কত কথা শোনালো।এমনকি আমার গায়ে হাতও তুলল।’

লিলিঃকি বললি? না আর সহ্য করবো না।আমরা ভার্সিটির সব মেয়েরা মিলে এর বিরুদ্ধে প্রটেস্ট করব।স্টুডেন্ট দেরি করেছে জন্য টিচারের কোন অধিকার নেই তার গায়ে হাত তোলার।

আমি বললাম,
‘না না থাক।এসব করতে হবে না।আব্বু জানতে পারলে অনেক ঝামেলা হবে।’

তৃপ্তিঃএসব তো আর মেনে নেওয়া যায়না।আমি আগে ভাবতাম আহসান স্যার তোর জন্য বেস্ট মানুষ।কিন্তু এখন মনে হচ্ছে তার থেকে ভালো হবে তুই তোর ঐ রাজপুত্র মানে আদিত্যকেই চুজ কর।

আদিত্যর নামটা শুনে আমার ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে ওঠে।আদিত্যর ব্যাপারে সব ঘটনা ওদেরকে খুলে বলি।

তৃপ্তিঃরুহান স্যারের ছেলে হোক সমস্যা নেই।এই আদিত্যই তোর জন্য বেস্ট।ছেলেটাকে অনেক কেয়ারিং মনে হচ্ছে আর মনে হয় ও তোকে ভালোও বাসে।নাহলে ভেবে দেখ তোকে সাহায্য করবে কেন? আর পার্কেই কেন নিয়ে যাবে।

লিলিঃতৃপ্তি ঠিক বলেছে হিয়া।তুই আদিত্যকে প্রপোজ কর।

আমি বললাম,
‘আমি কিভাবে প্রপোজ করব? আমার তো লজ্জা করে।আর তাছাড়া যদি উনি রিফিউজ করেন তাহলে আমি তা কোনভাবেই সহ্য করতে পারব না।’

লিলিঃতাহলে আর কি হাত গুটিয়ে বসে থাক।অন্য কেউ এসে তোর রাজপুত্রকে নিয়ে চলে যাক।

তৃপ্তিঃতুই চুপ কর ডাইনি।হিয়া কেন প্রপোজ করবে? ছেলেদেরই আগে প্রপোজ করা উচিৎ।হিয়া তুই ছেলেটার সাথে আরো কিছুদিন মেলামেশা কর।দেখবি ওই তোকে প্রপোজ করবে।

আমি তৃপ্তিকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
‘তোর বুদ্ধি গুলোই আমার ভালো লাগে।’

লিলি মুখ বাকিয়ে বলে,
‘এই মুটকির কথাই শোন।যখন আদিত্য তোর সামনে দিয়ে অন্য মেয়ের হাত ধরে চলে যাবে তখন কিন্তু আমার কাছে এসে কাদবি না।’

সব ক্লাস শেষ হওয়ার পর আমরা সবাই যে যার মতো চলে যেতে থাকি।হোস্টেলে পৌছানোর পর আমি দেখতে পাই আহসান ভাই আর আব্বু দাঁড়িয়ে আছেন।

আমাকে আসতে দেখে আব্বু বলেন,
‘এই দিন দেখার জন্যই তোকে ভার্সিটিতে পাঠিয়েছিলাম? আমার মান সম্মান শেষ করে তুই বড়লোকের বিগড়ে যাওয়া ছেলের সাথে প্রেম করছিস।এত লোভ তোর?’

আব্বুর কথা শুনে আমি কিছু বুঝতে পারিনি।আহসান ভাই বলতে শুরু করেন,
‘তুই যেই ছেলেটার সাথে গত দুদিন ধরে ঘুরছিস মানে আদিত্য সে মোটেও ভালো ছেলে নয়।’

‘আদিত্য কেমন তা আমি জানিনা কিন্তু ওর বাবা হলো রুহান স্যার।রুহান স্যারের ছেলে আর যাই হোক খারাপ হতে পারে না।’

‘বাবা! রুহান স্যারতো আদিত্যকে ছেলে হিসেবে স্বীকারই করেন না।গত বছরই তো আদিত্যকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন।’

আহসান ভাইয়ের কথাটা শুনে আমি যতটা না অবাক হই তার থেকেও বেশি কৌতুহলী হয়ে পড়ি।আদিত্যর মতো এত ভালো ছেলেকে কেন রুহান স্যার বাড়ি থেকে বের করে দেবে।আমি কিছু বুঝতে না পেরে চুপ করে থাকি।

আব্বু আমার হাত ধরে বলে,
‘তোর সব জামা-কাপড় গুছিয়ে নে।আর তোকে এখানে থাকতে হবে না।অনেক পড়াশোনা হয়েছে।আমারই ভুল হয়েছিল তোকে এখানে পাঠানো।এখন তোর বিয়ে দিয়ে তবেই আমি শান্তি পাব।’

আহসান ভাই বাবাকে আটকায়।তিনি বলেন তিনি আগামী সপ্তাহে আমাকে বাড়িতে নিয়ে যাবেন।তিনি এটাও বলেন যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তিনি আমাকে বিয়ে করতে চান।

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here