মন_গহীনের_গল্প পর্ব-৪৩ রূবাইবা_মেহউইশ

মন_গহীনের_গল্প
পর্ব-৪৩
রূবাইবা_মেহউইশ
💞
রাত আটটায় বাস থেকে নামলো মেহউইশরা। বাস স্ট্যান্ড থেকে খান বাড়িতে যেতে আরো এক ঘন্টা লাগবে। রেহনুমার অবস্থা ভালো ঠেকছে না মেহউইশের । সারাপথ সে রিশাদের কাঁধে মাথা রেখে নিথর পড়েছিলো হঠাৎ হঠাৎ কান্না চাপিয়ে রাখায় চেষ্টায় ফুপিয়ে উঠছিলো। রিশাদ নিষ্প্রাণ সিটে গা এলিয়ে এক হাতে ফুপিকে ধরে রেখেছিলো। রিশাদের অবস্থা এত দূরের পথ ড্রাইভিং করার মত ছিলো না ভেবেই মেহউইশ বলেছিলো হোটেলে আছে এমন কাউকে আনিয়ে নিতে যে ড্রাইভ করে তাদের ঢাকায় পৌছে দেবে৷কিন্তু যে এসেছে সে ড্রাইভিংয়ে নতুন তাই রিশাদ কোন রকম ঝুঁকি না নিয়ে বাসের টিকিট কাটলো। যথাসম্ভব ফুপির সামনে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে দেড়টা পর্যন্ত বসে রইলো বাস কাউন্টারের ছাউনির তলায়। বৃষ্টি ছিলো তখনও তুমুল। ঢাকায় পৌঁছানোর পর মনে হলো এদিকে বৃষ্টি হয়নি। মেহউইশ নির্জনকে পথিমধ্যে কলা আর আপেল খাইয়েছে দুটো বড়রা কিছুই খায়নি । ঢাকায় এসে সিএনজি পেতে অসুবিধা হয়নি খুব একটা৷ সিএনজিতে বসে অব্দি রিশাদ চুপচাপ আর কঠোর মুখে বসেছিলো। বাড়ির গেইটে পা রাখতেই বুকটা ধ্বক করে উঠলো রেহনুমার। ঠিক কত বছর পর পা রাখলো এখানে! তার জন্মস্থান তার শিকড় আটকে আছে এখানে৷ ছলছল চোখে গেইটের দিকে তাকিয়ে দেখলো বাড়িটা নিস্তব্ধ আর অন্ধকার। বাড়ির বাগান,লন সবজায়গায় তো দিনের আলোর মত বাতি জালানো থাকে সবসময়। আজ এত অন্ধকার কেন সব, কেন এমন হাট করে খোলা গেইট? বাড়ির দারোয়ান, কেয়ারটেকার কোথায় গেল! বাড়িটা কেমন ফাঁকা আর খা খা করছে। রেহনুমা থমকে থাকা কান্নাটা আবারও ছিটকে এলো গলা থেকে; রিশাদ বুঝলো ফুপিটা তার এতক্ষণে বুঝেছে যে তার ভাই আর বেঁচে নেই।কান্নারত রেহনুমাকে একহাতে ভালো করে ধরে রাখলো সে।

‘ ভেতরে যাবে না ফুপি? এভাবে ভেঙে পড়লে চলবে কি করে?’ বলেই সে তার ফুপিকে ধরে এগিয়ে গেল বাড়ির ভেতর। সদর দরজায় পৌঁছে কানে এলো রাইমার কান্না। সে কাঁদছে হাউমাউ করে তার কন্ঠস্বর ভাঙা ভাঙা, খুব কেঁদেছে বোধহয় মেয়েটা। কাঁদবেই’বা না কেন, সে যে তার বাবার রাজকুমারী ছিলো। খুব আদরের কলিজার একটা অংশ ছিলো সে।বাবাও তার সবচেয়ে প্রিয়, সবচেয়ে আপনজন ছিলো। মায়ের চেয়েও বেশি ছিলো আর তাই তো বাবার অপরাধগুলো জানতে পেরে সবচেয়ে কষ্ট তারই হয়েছে। রিশাদ, রিহান দুজনেই সুবিধামত মুখ ফিরিয়ে চলে গিয়েছিলো বাবার থেকে দূর। কিন্তু সে তো পারেনি। অভিমানে ফিরে না তাকালেও খোঁজ রেখেছে। শুধু গত তিনটা দিন সে খোঁজ নিতে পারেনি আর শহর ছেড়ে বেরিয়েছিলো তাতেই সে তার এই আপন মানুষটাকে হারিয়ে ফেলল। ফ্লোরে বসে পাগলের মত কেঁদে চলছে সে তার পাশেই বৃদ্ধা মালা। তারও চোখে অবাধ জলের ধারা এছাড়া বাড়ির অন্য কর্মচারীরা বিমর্ষ মুখে দাঁড়িয়ে থেকে সান্ত্বনা দিচ্ছে । দরজায় দাঁড়িয়ে রেহনুমা শুধু একবার রাইমাকে ডাকলো তারপরই ঢলো পড়ে গেল নিচে।

রাত তিনটায় লাশবাহী গাড়ি এসে থেমেছে খানবাড়ীর সামনে। ময়নাতদন্তের জন্যই লাশ নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো। গত পরশু রাতেই লাশ পুলিশ লাশ উদ্ধার ঘরেছে রাশেদ খানের নিজকক্ষ থেকে তখন বাড়িতে কয়েকজন গৃহকর্মী উপস্থিত ছিলেন। সারাদিন রাশেদ খান নিজ ঘর থেকে বের হননি এবং রাতে বাড়ির কাজের লোকরা দুবার করে দরজায় দাঁড়িয়ে ডাকেন। কিন্তু কোন সারা পায় না তারা। এরপরই কোন কারণবশত রাশেদ খানের ব্যবসায়িক কাজের জন্য হায়ার করা উকিল আসেন বাসায়। বাড়িতে এসেই তিনি ফোন করেন কয়েকবার কিন্তু ওপাশ থেকে তোলা হয় না। উকিল সাহেব যখন বাড়ির কাজের লোকদের জিজ্ঞেস করেন স্যার বাড়িতেই কিনা তখন বৃদ্ধা মহিলা এগিয়ে আসেন সামনে৷ তিনি জানান আজ সকাল থেকেই ঘরে আছেন একবারও নামেননি। তারা অনেকবার ডাকাডাকি করলে তিনি বলেন সারাদিন যেন না ডাকা হয়। আজ তিনি একা থাকবেন একেবারে রাতে খাবার খাবেন। এ কথা শুনেই কাজের লোকেরা কেউ আর ডাকতে সাহস পাননি। সব কথা শুনেই উকিল সাহেব ভড়কে যান এবং তৎক্ষনাৎ রাশেদ খানের ঘরের সামনে গিয়ে ডাকেন। অনেকবার ডাকার পরও সাড়া না পেয়ে দারোয়ান আর রাশেদ খানের গাড়ির ড্রাইভারের সাহায্যে দরজা ভাঙেন। ততক্ষণে রাশেদ খান দম ছেড়ে এ দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করেছিলেন। উকিল সাহেব আইনের লোক প্রথমেই পুলিশ এবং তারপরই রিশাদের নাম্বারে কল করেন। পুলিশ যথাসময়ে পৌঁছে গেলেও রিশাদের নাম্বারে কল পৌঁছায়নি। এরপরই রাশেদ খানের ফোনের লক তারই আঙ্গুলের চাপ লাগিয়ে আনলক করে রাইমা এবং রেহনুমার নাম্বারে কল দেওয়া হয়। এখানেও রিশাদের মত রেহনুমার ফোনেও কোন কল ঢোকেনি কিন্তু রাইমাকে তার বাবা এক্সিডেন্টে গুরতর আহত বলে জানানো হয়। তখনি রাইমাকে নিয়ে তানভীর আর বাকি বন্ধু-বান্ধবীরাও ফিরে আসে ঢাকায়। রাইমা আর তানভীর প্লেনে আসায় তারায় রাতেই ঢাকায় পৌঁছায়। তানভীর জোর করেই রাইমাকে বাড়িতে রেখে হাসপাতালে যায়। কিন্তু সে পরিবারের কেউ নয় বলেই লাশ হস্তান্তর করা হয়নি সারাটাদিন। তানভীর অনেক চেষ্টা করেই এগারোটার দিকে রিশাদকে কলে পায় যা মেহউইশ রিসিভ করে আর জানতে পারে এই মৃত্যুসংবাদ।

গাড়ি থেকে লাশের কফিন নামিয়ে রিশাদ ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইলো। বুকের ভেতর খুব ভার ভার লাগছে অথচ তার চোখ ভিজে আসছে না। গলায় আটকে আসা কিছু শব্দ জোর করছপ বের করে দিতে বাবার উদ্দেশ্যে তাও পারছে না। রাতের আঁধার এখনও অনেক গাঢ় সেই গাঢ় অন্ধকার ভেদ করে রিশাদ তার বাবার মুখটাকে মনে করার চেষ্টা করছে। বাড়ি এসে উকিলকে কল করতেই তিনি তাকে হাসপাতালে যেতে বলেছেন । রাতেই রিশাদ সবরকম ফরমালিটি পূরণ করেছে। তারপরই আর দেরি করেনি আর লাশ নিয়ে বাড়ি ফিরেছে৷ তানভীর পাশে দাঁড়িয়ে আছে রিশাদের । তার ইচ্ছে করছে কিছু বলে রিশাদকে সান্ত্বনা দেয় কিন্তু কি বলবে! হঠাৎ থানার ওসি এসে একটা খাম এগিয়ে দিলেন উকিল সাহেবকে এবং বলে গেলেন খামটা যেন তার বাবাকে কবর দেওয়ার পর বাড়ি ফিরলে দেওয়া হয়। রাতটা শেষের দিকে বাড়িটার চারপাশ নিস্তব্ধতা আর বাড়ির মধ্যিখানে দুটো কান্নার সুর সেই নিস্তব্ধতাকে কেটে দিচ্ছে করাতের মত৷ নির্জন ঘুমিয়ে আছে বলে মেহউইশ তাকে ঘরে শুইয়ে দিয়েছে আর তার পাশে একজন এ বাড়ির গৃহকর্মী বসে আছেন। মেহউইশ একবার রেহনুমা আরেকবার রাইমার কাছে বসছে দুজনের কাউকেই থামাতে পারছে না। পরিস্থিতি এমন যে তার মাকে জানানোর কথাও মনে ছিলো না। মা থাকলে হয়তো সামলাতে পারতো তাদের। বাড়িতে নাকি রাতে লাশ থাকলে কোরআন তেলাওয়াত করতে হয় রাতভর অথচ এ বাড়িতে একজনও করছে না তেলাওয়াত। এমন পরিস্থিতিতে সে আগে কখনও পরেনি, এমন শোকাহত আপন কাউকে সে দেখেনি। মরা লাশ এবং সেই মৃতের আত্মীয়দের আহাজারি তো সে কতোই দেখেছিলো হাসপাতালে। কিন্তু নিজেরই আপন যে তারই কাছের কারো মৃত্যু! রিশাদ,রাইমা,রেহনুমা তিনজনকেই সে আপন ভাবে আর রাশেদ খান এই তিনজনেরই আপন।

ফজরের পরপরই দাফনের কথা ঠিক করা হয়েছিলো। কিন্তু জেবুন্নেসা আর রিহানের ফ্লাইট সকাল ছয়টায় থাকায় তারা এসে পৌঁছাতে পারেনি। দাফনের সময় পেছানো হয়েছে শুধুমাত্র রিহানের জন্য কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে একমাত্র রিহানই কোন শোক প্রকাশ করেনি বাবার মৃত্যুতে। তারা যখন বাড়ি ফিরেছে তখন রিশাদ নিজেই রিহানকে ডাকে বাবার খাটিয়া ধরতে। চওড়া আর উঁচু কাঁধ, ঠোঁটের উপর সদ্য বয়ঃসন্ধিতে পরা ছোট ছোট গোঁফে ভরা ছেলেটা তার বড় ভাইয়ের হাত ছাড়িয়ে সরে দাঁড়ায় এবং খুবই সহজ আর শান্ত ভঙ্গিতে বলে, ‘ তোমরা যাও আমি কবরস্থানে যাবো না।’ বাবার সাথে রিশাদের সম্পর্ক বিচ্ছিন্নতার কারণ শুধুমাত্র বাবার টাকার অহংকার এবং তাঁর অর্থের প্রতি লোভ।কিন্তু রিহানের বিচ্ছিন্নতার কারণ তার মায়ের সম্মান,সম্ভ্রম। বাবার অবহেলা তাকে ততোটা কষ্ট দেয়নি যতোটা দিয়েছিলো মায়ের সাথে হওয়া অন্যায়গুলো জানতে পেরে। জেবুন্নেসা কখনোই ভালোবাসতে পারেনি তার স্বামীকে কিন্তু একসাথে অনেকগুলো বছর একই সম্পর্কে বাঁধা ছিলো। তার সন্তানদের বাবা ছিলেন এই লোকটা সে কারণেই বোধহয় এই শেষ মুহূর্তে এসে তার মনের ঘৃণার পাথর সরে গেল। দু চোখ তারও অশ্রু গড়ালো অঝোরে, নিঃশব্দে । ডিভোর্স তাদের কার্যকর হয়েছিলো মাত্রই দু মাস আগে। এ দু মাস আগেও তারা একে অন্যের অধিকারের ক্ষেত্র ছিলো৷ রিশাদ কাল থেকে এখন পর্যন্ত একফোঁটাও জল ফেলেনি। বার কয়েক তার চোখ জ্বালা করেছে, চোখে জল কানায় কানায় পূর্ণ হয়েছে কিন্তু কি আশ্চর্য ব্যাপার জল গড়ায়নি একটিবারও। লাশ দাফনের সময় রিশাদ ভালো করে তাকালো পুরো কবরস্থানে । চারপাশে অসংখ্য নতুন পুরাতন কবরে ভর্তি এ কবরস্থান৷ এখানেই আছে সিমেন্টে,বালুতে বাঁধাই করা তার মায়ের কবর। এ জীবনে সে মাত্র কয়েকবারই এসেছিলো কবরস্থানে সেও কিনা শুধু মায়ের কবর জিয়ারত করতে। বাবার সাথে এসেছে ক’বার ঠিক মনে নেই তবে বাড়ির দারোয়ান আর বৃদ্ধা মালা দাদীর বরের সাথেই এসেছিলো বেশিরভাগ সময়। বাবার লাশ কবরে রাখতে গিয়েই মনে পড়লো এ জীবনে এই প্রথম সে কাউকে দাফন করছে। কাউকে ভাবছে কেন নিজের বাবাকে দাফন করছে৷ জীবন কত বিচিত্র! এখানে একদিন তাকেও আসতে হবে। একজন মুসলিম হিসেবেই তাকে এ মাটির তলায় শুতে হবে সকল ঐশ্বর্য আর অহংকার তখন এই মাটির তলায়ই মিশে যাবে। দাফন শেষ হলেও রিশাদের কান্না পেল না৷ মানুষটা যেমনই ছিলো, ছিলো তো তার বাবা’ই। তার কেন কান্না পায় না! সে কেন কষ্টগুলোকে জল করে ভাসাতে পারছে না? নাকি সে কষ্টই পাচ্ছে না বাবার জন্য!

নভেম্বরের মাঝামাঝি চলছে সময়টা , গরম নেই না আছে শীত। পাহাড়ে যেখানে রাত হলেই কম্বল লাগে, দিনের বেলায় গা জ্বলা গরম। সেখানে এই ঢাকা শহরে এখনও প্রচণ্ড গরম। ঘামে গা ভিজে চুপচুপে হয়ে উঠেছে রিশাদ গা। একটু আগেই সে এসে বসেছে বাড়ির সদর দরজার সামনের সিঁড়িতে। ডুপ্লেক্স বিশাল এই বাড়িটির প্রতিটি ইট,পাথর সৌন্দর্যে ভরপুর৷ এই সৌন্দর্যের পেছনে কোটি টাকা ব্যয় করা মানুষটা একটু আগেই শায়িত হয়েছে মাত্র সাড়ে তিন হাত মাটির নিচে। কোটি টাকার অর্থ সম্পদের এক কণাপরিমাণ কিছুই তাঁর সঙ্গে যায়নি৷ নিজের বলতে নিয়ে গেছে শুধু কাফনের কাপড়টাই।

-‘ রিশাদ, এই নাও এটা তোমার বাবার বিছানায় পাওয়া গিয়েছিলো।’ উকিল সাহেব একটা মোটাসোটা সাদা খাম রিশাদের দিকে এগিয়ে দিলো৷ রিশাদ মাথা উঁচিয়ে খামটা দেখলো কিন্তু কিছু বলল না আর না হাত তুলে খামটা ধরলো! দরজায় দাঁড়িয়ে লক্ষ্য করেছিলো মেহউইশ তাই সে এসে জিজ্ঞেস করলো, ‘ কি আছে এটাতে?’

-‘আপনার পরিচয়?’ উকিল সাহেব কৌতূহলের সাথে প্রশ্ন করলেন৷

-‘আমি মিসেস রিশাদ’ মেহউইশ জবাব দিলো।

উকিল সাহেব কি ভাবলেন কে জানে! কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে খামটা এগিয়ে দিলো মেহউইশের দিকে আর বলল খামটা যেন সাবধানে রাখে। এতে অনেক কিছুই আছে যা রিশাদ এবং তার ভাইবোনের জন্য দরকারী৷ মেহউইশ খামটা রেখে দিলো সযত্নে৷ সকালেই মাইমুনাকে ফোন করে জানিয়েছিলো রিশাদের বাবার মৃত্যুর কথা আর তখনি সে মিহাদকে নিয়ে চলে এসেছে৷

মেহউইশ খামটা রেখে আবার এসেছিলো রিশাদের কাছে। বাড়িটা এখন পুরোপুরি নিস্তব্ধ , রাইমার গলার আওয়াজ এখন আর শোনা যায় না। সে কাঁদলেও আর তার স্বর ঘর ছাপিয়ে বাইরে আসছে না। রেহনুমা পড়ে আছে নিজের ঘরে মাইমুনা জোর করেই তাকে বিছানায় শুইয়ে এসেছে। জেবুন্নেসা বসে আছে রাশেদের ঘরে। ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছে তার প্রতিটা জিনিস ঘরে থাকা প্রত্যেকটা বস্তু৷ লোকটাকে সে ঘৃণা করতো বলেই জীবনের এতগুলো বছর কাটিয়েও সম্পর্কের সমাপ্তি টেনেছিলো। কিন্তু তাই বলে কি সে চেয়েছিলো লোকটা এভাবে ছেড়ে যাক সব! ছেলে মেয়েদের জন্য হলেও সে লোকটার এমন মৃত্যু কখনো চায়নি।

দুপুর এর পর রিশাদ তার নিজের ঘরে এসে খাটের সামনে পা ছড়িয়ে বসে পড়লো ফ্লোরে৷ মেহউইশ ঘরে এসে খামটা আলমারি থেকে বের করে ধরলো রিশাদের সামনে। রিশাদ নিলো খামটা এবং সেটাকে ছিঁড়তেই প্রথমে বের হলো একটা ফটোকপি রেজিস্ট্রি পেপার। সেটাকে রেখে দ্বিতীয় যে কাগজটি বের হলো তা হলো তার ঢাকার ফ্যাক্টরির একটি লিগ্যাল কাগজ তারপর আরো একটি তারপর আরো একটি৷ পরপর যে ক’টি রেজিস্ট্রি পেপার বেরিয়েছে সবগুলো কপি। এবং শেষে যে কাগজটা বের হলো তা একটি চিঠি৷ চিঠিটা তিন কাগজে তিন অংশে লেখা আর প্রতিটা অংশে একটা করে নাম উল্লেখ করা। প্রথম অংশে লেখা নাম রিশাদ, দ্বিতীয়টিতে রাইমা এবং তৃতীয়টিতে নাম রিহানের৷ রিশাদের ঘরের বারান্দায় কোথা থেকে উড়ে একটি কাক এসে বসলো। কাকটি বসেই তার স্বরে কা কা করে ডাকতে লাগলো। হাতের চিঠিটা দু বার এপিঠ ওপিঠ দেখে আবার খামে ভরে রেখে দিলো বিছানায়৷ দৃষ্টি তার বরান্দার সেই কর্কশ গলায় ডাকতে থাকা কাকটার দিকে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here