মন_পাড়ায় পর্ব_২৫

মন_পাড়ায়
পর্ব_২৫
#নিলুফার_ইয়াসমিন_ঊষা

‘কুয়াশাময় সকাল ভোরে
তোমায় দেখেছিলাম নয়ন ভরে,
কোকিলের সুরে, ফুলের সুরভীর ভিড়ে
উপস্থিত হলো প্রিয় বসন্তিকা।’

অর্ক মাথা তুলে তাকালো প্রভার দিকে। ও চুপসে গেছে। অর্কের তাকাতেই সে চোখ নামিয়ে নিলো। অর্ক জিজ্ঞেস করল, “আমি কবি নই তবুও তোমার জন্য কিছু চেষ্টা করলাম, বলবে তো কেমন লেগেছে?”

প্রভা কিছুই বলতে পারলো না। অর্কের নিশ্বাসের ছোঁয়ায় তার নিজের নিশ্বাস যেন বন্ধ হয়ে আসছে।
অর্ক আলতো আঙুলে প্রভার কপাল থেকে গাল পর্যন্ত ছুঁয়ে দিলো। সে চুলগুলো গুঁজে দিলো প্রভার কানের পিছনে।

প্রভা চোখ দুটো বন্ধ করে নিলো। এই অনুভূতি কেন হচ্ছে তার? কেন মনে হচ্ছে তার হৃদয়ের স্পন্দন তার নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে যাচ্ছে? কেন সে অর্কের বশে এসে পরলো? কেন মনে হচ্ছে বসন্তের মাতাল হাওয়া একরাশ সুরভী নিয়ে তাকে ছুঁয়ে যাচ্ছে?
কেন?
এমনটা তো হওয়া বেমানান। না এই সম্পর্ক ভালোবাসার আর না এই মানুষটা। ভালোবাসা শব্দটা এখন ভারী মিথ্যে লাগে। বিনয়কে তো কম ভালোবাসে নি তবুও বিনয় তার সাথে যা করল তার পর ভালোবাসা ও বিশ্বাস তার জীবনের কোনো স্থানে জায়গা দখল করতে পারে না। এই দুটো শব্দ থেকে ভয় লাগে তার, সাংঘাতিক ভয়।

মুহূর্তে প্রভার চোখের সামনে ভেসে উঠলো কিছু দৃশ্য।
প্রথম দৃশ্য, সে আর বিনয় রিকশায় বসেছিলো। হঠাৎ করে বিনয় তার হাতটা ধরে নিলো। সে চমকে গিয়ে তাকালো বিনয়ের দিকে। বিনয় তার দিকে তাকিয়ে ছিলো না। অন্যদিকে তাকিয়ে ছিলো কিন্তু তার ঠোঁটের কোণে ছিলো হাসি। যে হাসি দেখে প্রভা নিজেও হাসল। লজ্জায় মেখে উঠলো।

দ্বিতীয় দৃশ্য, সে রুমের এক কোণায় বসে আছে গুটি মেরে। তার মুখ ভর্তি শুধু জল আর জল। বিনয় আবারও তার উপর হাত তুললো থাপ্পড় মারার জন্য।

তৃতীয় দৃশ্য, আকাশে মেঘ জমেছিল। তাকিয়ে ছিলো প্রভা সেদিকে। হঠাৎ কেউ তার হাত ধরে নিয়ে তাকে কাছে টেনে নিলো। বিনয়কে দেখে সে খিলখিল করে হেসে উঠলো। বিনয় তার গালটা ছুঁয়ে দিতেই সে চোখ দুটো বন্ধ করে নিলো। বিনয় তার কপালে কপাল ঠেকাল। সেদিন সে বৃষ্টিবিলাসী হলো তার ভালোবাসার মানুষটির সাথে।

চতুর্থ দৃশ্য, তার ভালোবাসার মানুষটিই তার দিকে তাকিয়ে ছিলো যখন পর পুরুষ তাকে বেমানান ভাবে ছুঁয়ে দিচ্ছিলো।

পঞ্চম দৃশ্য, কাঁদছিল সে। ভীষণ কাঁদছিল। কেঁদে কেঁদে তার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিলো। বিনয় তাকে টান দিয়ে নিজের বুকে ভরে বলল, ‘এইভাবে কেউ কাঁদে নাকি? আমি আছি, সব সামলে নিব আমি।’

ষষ্ঠ ও শেষ দৃশ্য, বিনয়ের বুকে ছিলো অন্য মেয়ে। প্রভা তাকিয়ে ছিলো সেদিকে। সে কাঁপছিল। তার মনে হচ্ছিলো সে বিনয়ের বুকে অন্যকাউকে দেখার পূর্বে মরে গেল না কেন?

সে অনুভূতি যখন প্রভার বুকে হানা দিলো তখন তার দমটা বন্ধ হয়ে এলো। চোখ ভরে গেল। চোখ খুলতেই দুইকানে হাত রেখে নিচে বসে পরলো। দম বন্ধ হয়ে আসছে তার। এইবার দম বন্ধ হয়ে আসছে তবে ভালোলাগায় বা লজ্জায় না। কষ্টে। নিজের ভালোবাসার মানুষ, নিজের স্বামীর বাহুডোরে অন্য মেয়েকে দেখার মতো যন্ত্রণাদায়ক আর কি হতে পারে? যেখানে একটি মেয়ে তার সব সম্পর্ক পিছনে ছেড়ে একটি অচেনা মানুষের সাথে সারাজীবনের পথ চলার ওয়াদা করে এই বিশ্বাস নিয়ে যে সে তাকে সারাটা জীবন আগলে রাখবে সে মানুষটাই যদি তার বিশ্বাসের আহুতি দেয় তখন মেয়েটা হৃদয়ে বিশ্বাস আর কতটুকু থাকে?

অর্ক তার হাতের উপর হাত রেখে আতঙ্ক নিয়ে জিজ্ঞেস করল, “প্রভা….প্রভা কী হয়েছে তোমার?”

প্রভা কিছু বলতে পারলো না। তার চোখের সামনে দৃশ্যগুলো ভাসছে অনবরত। অর্ক প্রভার দুইগালে হাত রেখে বলল, “প্রভা আমার কথা শুনো, তাকাও আমার দিকে। কিছু হয় নি তোমার সাথে, সব ঠিক আছে। আমরা সবাই আছি তোমার সাথে। তোমার মা, বাবা, ঝিনুক, অদিন, বিনু আর……আমি। আমরা সবাই আছি তোমার সাথে।”

প্রভার চোখের সামনের দৃশ্যগুলো ঘোলাটে হতে শুরু করল। তার ফুঁপিয়ে উঠা কান্না থামলো। নিশ্বাস স্বাভাবিক হতে শুরু হলো। সে ধীরে ধীরে চোখ খুললো।

অর্ক মৃদু হাসি নিয়ে আঙুল দিয়ে প্রভার গালে জমে থাকা জল আলতো করে মুছে দিয়ে বলল, “তোমার প্রিয় বসন্তের আগমনে এইভাবে কান্না তো মানায় না।”

প্রভা বাচ্চাদের মতো মুখটা ছোট করে নিলো। ভীষণ লজ্জিত হলো তার একটু আগের ব্যবহারে। সে সাধারণত কারো সামনে কাঁদে না। কাওকে নিজের কষ্ট দেখানো, তাদের নিজের কষ্টের কথা বলা তার ভীষণ অপছন্দের। আজ পর্যন্ত বিনয়কে ছাড়া কারো সামনে সহজে কাঁদে নি। অথচ এই চেনা কিন্তু অচেনা মানুষটার সামনে সে একাধিকবার নিজের চোখের জল ফেলেছে। অর্ক কী ভাববে তাকে নিয়ে?
মুহূর্তখানিক পর তার মাথায় এলো অর্ক কী ভাবলো এতে তার কী?
.
.
ঝিনুক কলিংবেল দিলে দরজাটা খুলে সৈকত। তার মুখ দেখে মনে হচ্ছে আজ দুপুরের ঘটনার ব্যাখা নিয়ে সে প্রস্তুত। কিন্তু ঝিনুক আর কোনো বাহানা চায় না। সে ক্লান্ত এইসব বাহানা শুনে। তাই বলল, “রাস্তা ছাড় ভিতরে যাব আমি।”

সৈকত গলা পরিষ্কার করে করে অসহায় ভঙ্গিতে বলল, “আই ক্যান এক্সপ্লেইন।”

ঝিনুক ভ্রু কপালে তুলে বলল, “কী এক্সপ্লেইন করবে?”

“আজ দুপুরে যা হয়েছে, জ্যোতির ব্যাপারে আর….” ঝিনুক সৈকতকে থামিয়ে বলল, “প্রয়োজন নেই। আই ডোন্ট ইভেন কেয়ার।” বলেই ঝিনুক দরজার একপাশ দিয়ে ঢুকতে নিলেই সৈকত তার সামনে এসে পরলো। বলল, “ঝিনুক আমি তোমাকে বুঝাতে পারব।”

“আমি বলেছি না তোমার যা ইচ্ছা তা কর। আমার কিছু আসে যায় না। আর কয়েকমাস যাক আমি এমনিতেই তোমার থেকে তালাক নিয়ে নিব। ততোদিনে দয়া করে আমাকে শান্তি দেও। আমি তোমার সাথে কথা বলে নিজের মন মেজাজ খারাপ করতে চাই না। তোমার একটা, দুইটা, হাজারটা গার্লফ্রেন্ড থাকুক আমার কিছু আসে যায় না। আমাদের সম্পর্ক তো আসল না যে আমাকে তোমার ব্যাখা দিতে হবে।”

“আমাদের শরিয়ত অনুযায়ী বিয়ে হয়েছে ঝিনুক। তুমি এইভাবে বলতে পারো না।”

“আমি এই বিয়ে মানি না। তোমার অভিনয় দেখে দেখে আমি ক্লান্ত। আমার সারাটা জীবন নষ্ট করতে পারব না তোমার সাথে থেকে। আমি ক্লান্ত তোমার অভিনয় দেখে। তুমি এত ভালো অভিনেতা যে প্রতিবার আমার বিশ্বাস ভাঙ্গা সত্ত্বেও আমি তোমার অভিনয় দেখে প্রতিবার কোথাও না কোথাও বিশ্বাস করে নেই যে তুমি আমায় ভালোবাসো। আসলে না তোমাকে একটা অস্কার দেওয়া উচিত। রিয়াল লাইভ এক্টিং এর জন্য। এখন যেতে দেও আমাকে।”

সৈকত নিজ পক্ষ থেকে কিছু বলতে নিবে এর আগেই পিকন থেকে কেউ একজন বলল, “সৈকত তুই আসছিস না কেন? আমরা খেলব না আর?”

ঝিনুক পিছনে তাকিয়ে দেখে একটি পুরুষ দাঁড়িয়ে আছে। তার পরনে একটি নীল কালার ডোরেমন প্রিন্টের গেঞ্জি ও সাদা রঙের থ্রি কোয়াটার প্যান্ট। রঙ ফর্সা, চুলগুলো এলোমেলো করা। হাতে একটি হলুদ রঙের বল। ঝিনুককে দেখে সে এগিয়ে এসে উৎসুক গলায় বলল, “এইট কী নতুন ভাবি?”
বাচ্চাদের মতো কথা বলার ধরণ দেখে ঝিনুকের বুঝতে বাকি রইল না লোকটা ভাদ্র। ভাদ্র ভাইয়ার সাথে প্রায় কথা হয়েছে তার যখন তার ও সৈকতের সম্পর্ক ছিলো। কিন্তু কখনো দেখে নি। প্রভা ও অর্কের যখন বিয়ে হয় তখনও কোনো অনুষ্ঠানে ভাদ্রকে আনা হয় নি। ছবি দেখলেও তা অনেক আগে তাই চেনাটা তার পক্ষে কঠিন হয়ে পড়লো। তবে কথা শুনে বুঝা যায় সেই ভাদ্র। ভাদ্র মধ্যম বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। তার স্বভাব ৩-৭ বছরের বাচ্চাদের মতো।

ভাদ্র আবারও বাচ্চাদের মতো জিজ্ঞেস করল, “বলোনা তুমি আমার নতুন ভাবি?”

সৈকত ভাদ্রের দিকে তাকিয়ে একরাশ হাসি ঠোঁটে এঁকে বলল, “ভাইয়া ও আপনার ভাবি হবে না।”

ভাদ্র চোখ দুটো কপালে তুলে ঠোঁট গোল করে জিজ্ঞেস করল, “কেন? কেন? কেন?”

“কারণ আমি আপনার ছোট ভাই তাই আমার স্ত্রী আপনার ভাবি হবে না।”

“ও…তাহলে ছোট ভাবি?”

“না ভাইয়া ওকে নাম ধরে ডাকবেন…..ঝিনুক।”

“ছি-লু-ক?”

“না ভাইয়া ঝিনুক।”

ভাদ্র মুখ ফুলিয়ে বলল, “না ভাবি। ভাবি ডাকবে ভাদ্র।” ঝিনুকের হাত ধরে আবার উৎসুক কন্ঠে জিজ্ঞেস করল, “ছোট ভাবি ছোট ভাবি ভাদ্রের সাথে খেলবে?”

ঝিনুক কিছু বুঝতে পারলো না কী বলবে, একবার তাকালো ভাদ্রের দিকে আবার সৈকতের দিকে। সৈকত ভাদ্রের কাঁধে হাত রেখে বলল, “ভাইয়া ঝিনুক ভার্সিটি থেকে এসেছে তো ও আরাম করুক। আমি আপনার সাথে খেলছি।”

ভাদ্র মুখ ফুলিয়ে তাকাল ঝিনুকের দিকে। ঝিনুক এমন নিষ্পাপ চেহেরা দেখে হেসে বলল, “আমি একটু ফ্রেশ হয়ে এসে আপনার সাথে খেলছি ভাইয়া।”

মুহূর্তে ভাদ্রের মুখে হাসি এঁকে এলো। সে লাফিয়ে উঠে বলল, “ইয়েএ ছোট ভাবি খেলবে….ছোট ভাবি খেলবে….”

ঝিনুক মিষ্টি হেসে ভিতরে ঢুকে নিজের রুমের সামনে যেয়ে আবার ফিরে তাকালো। সে দেখল সৈকত ধৈর্যসহকারে ভাদ্রকে সামলাচ্ছে। তাকে দেখে অবাক হয়ে পারে না ঝিনুক। মানুষটা এমন কেন? মুহূর্তে তাকে ভালোবাসলে তার স্বভাবে পরের মুহূর্তে ঘৃণা করতে ইচ্ছা হয়। আবার মুহূর্তে তার প্রতি ঘৃণা আসলে তার কাজে আবারও তাকে ভালোবাসতে ইচ্ছা হয়। মানুষটা ধাঁধার মতো। যখনই মনে হয় সে ধাঁধার সমাধান হয়ে গেছে তখনই নতুন কোনো রূপ সামনে আসে আর ধাঁধাটা আগের চেয়ে আরও বেশি জটিল হয়ে পরে।
.
.
অর্ণব ও সাবেক চা ও সমুচা খাচ্ছিলো রাস্তার পাড়ের এক দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে। সাবেক বলল, “আজকের কান্ডটা বাজে হয়ে গেছিলো তাই না? ঝিনুক কি কান্নাই না কাঁদল, চোখ মুখ লাল হয়ে গেছিলো।”

অর্ণব বলল, “সব ওই সৈকতের দোষ। কত মেয়ে কাঁদলো ওর কারণে!”

“আচ্ছা একটা কথা বলবি? তুই ঝিনুককে আসলে পছন্দ করিস?”

“এইটা কেমন প্রশ্ন? আমি তো প্রথম দিনই বললাম।”

“এইবার এইটা বল তুই জানলি কীভাবে যে ঝিনুক সৈকতের এক্স গার্লফ্রেন্ড ছিলো?”

অর্ণব চায়ে চুমুক দিতে নিয়েছিলো। সাবেকের কথা শুনে থেমে গেল। মাথা নিচু করে নিলো। সাবেক আবারও বলল, “অঞ্জলি আমাকে আজকে বলেছে সে স্থানে কী হয়েছে, জ্যোতি সবার সামনে বলেছে ঝিনুক সৈকতের এক্স ছিলো কিন্তু তুই এই কথা জানতি না। তুই ছিলি আমার সাথে। মানে তুই আগের থেকে জানতি যে ঝিনুক সৈকতের এক্স গার্লফ্রেন্ড ছিলো আর তুই ইচ্ছা করে সৈকতের সাথে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ওকে ব্যবহার করছিস?”

অর্ণব কথাটা ঘুরানোর জন্য বলল, “তোকে আরেকটা সমুচা দেই।”

“শালা তুই কথা ঘুরানোর লাইগা সমুচার লোভ দেখাস আমাকে। কো জলদি। আমি তোর ছোটকালের বন্ধু তুই আমার থেকে লুকানোর চেষ্টা করছোস। সাহস কত তোর!”

অর্ণব দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “হ্যাঁ আমি মিথ্যা কথা বলেছি। আমি ঝিনুককে পছন্দ করি না। কিন্তু সৈকত আসলে ওকে ভালোবাসে। এমনকি ওই হারামজাদা যদি এই পৃথিবীতে কোনো মেয়েকে আসলে ভালোবাসে তাহলে শুধু ওকে। আর আমি কোনো মতেই ওকে ওর ভালোবাসা পেতে দিব না। যাকে আমি ভালোবাসি ও তার জীবন নষ্ট করে দিয়েছে। আজ ও কোথায় কেউ জানে না। ওকে এত সহজে ছেড়ে দিব আমি? অসম্ভব।” শেষে কথাগুলো বলার সময় অর্ণবের সুর ছিলো রাগান্বিত।

“এতে তো মেয়েটার কোনো দোষ নেই অর্ণব। তুই ঝিনুককে এইভাবে ব্যবহার করতে পারিস না।”

অর্ণব উঠে দাঁড়ালো। বলল, “দেখ সাবেক আমি তোর এইসব কথার জন্যই তোকে বলি নি। আমি সৈকতের মতো না যে ঝিনুকের সাথে উল্টাপাল্টা কিছু করব। আমি শুধু এতটুকু দেখেব যেন কোনো মতে সৈকত ওকে না পায়। প্রয়োজনে আমার ঝিনুককে আপন করতেও সমস্যা নেই। আমি শুধু তোকে ও অঞ্জলিকে ঝিনুককে পছন্দ করার কথা এইজন্য বলেছি যেন তোরা সময় আসলে আমাকে সাহায্য করতে পারিস। আর তুই ভুলেও এইসব কথা কাউকে বললে তোর খবর আছে।”

“ধ্যুর খবর পরে নিস। আমার সমুচা শেষ, তুই বলছিলি না সমুচা দিবি। কই দেস না কে?”

অর্ণবকে বিরক্ত দেখা গেল, এমন কথায় আশ্চর্য নয়। সম্ভবত তার জন্য এইসব স্বাভাবিক।
.
.
রাত ১.৪৬ বাজে। অর্কের অফিসের কিছু জরুরি কাজ থাকায় সে তা সেরে রুমে এলো। রুমে এসে দেখে প্রভা বাতি জ্বালিয়ে, হাঁটু গেড়ে বসে আছে আছে বিছানার এক কোণে। অর্ক তার ল্যাপটপটা টেবিলের উপর রেখে বিস্মিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল, “এখনো ঘুমাও নি যে?”

মুখ তুলে তাকালো প্রভা। লজ্জামাখা মিষ্টি কন্ঠে বলল, “ঘুম আসছে না তাই।”

“ভয় করছে?” অর্ক সুইচবোর্ডের কাছে যেয়ে জিজ্ঞেস করল। প্রভা মাথা ডানে বামে নাড়াতেই অর্ক লাইট বন্ধ করে দিলো। প্রভা সাথে সাথে আতঙ্কিত স্বরে বলল, “প্লিজ লাইট বন্ধ করবেন না। ভয় লাগছে আমার।”

অর্ক বাতি জ্বালালো না আবার। বিছানায় যেয়ে বসতেই প্রভা বলল, “আপনি ঘুমান আমি ডাইনিং রুমে যাচ্ছি।”
তার কন্ঠে কাঁপুনি স্পষ্ট টের পাচ্ছিলো অর্ক। প্রভা উঠতে নিলেই অর্ক তার বাহু ধরে এক টানে তাকে কাছে টেনে নিলো।

জানালা দিয়ে একরাশ জ্যোৎস্না এসে পড়ছিলো। সে জ্যোৎস্নার আলোয় অর্ক দেখলো প্রভা বিস্মিত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
অর্ক প্রভার দিকে ঝুঁকতেই তার ভয় যেন আরও বেড়ে গেল। বেড়ে গেল তার কাঁপুনি। সে চেপে তার চোখদুটো বন্ধ করে নিলো। অর্ক যখন এক ভালোবাসার পরশ এঁকে দিলো প্রভার কপালে তখন তার কাঁপুনি থামলো। তবুও একটা অনুভূতি এই শীতল হাওয়ায় মিশে তাকে ছুঁয়ে গেল।
অর্ক মুখ তুলেই তাকে বুকে ভরে নেয় আর বলে, “আমার বুকে তুমি যত্নে থাকবে, পৃথিবীর কোনো কষ্ট তোমায় ছুঁয়ে যেতে পারবে না।”
প্রভা বিশ্বাস করতে চাইল না কথাটা তবুও কেন যেন করল। হঠাৎ করে তার মনে হলো তার সকল ভয় হাওয়ায় মিশে গেছে। তার শান্তি লাগছে ভীষণ। জাদু আছে হয়তো এই মুহূর্তে, নাহয় অর্কের বুকেতে।

চলবে……

[আশা করি ভুল ক্রুটি ক্ষমা করবেন ও ভুল হলে দেখিয়ে দিবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here