মন_পাড়ায় পর্ব_২৭

মন_পাড়ায়
পর্ব_২৭
#নিলুফার_ইয়াসমিন_ঊষা

ঝিনুকের কথা উঠলে ভাইয়া সব কিছু ভুলে যায়। সব। আমার ভীষণ ভয় হচ্ছে।”

অর্ক প্রভার হাতের উপর হাত রেখে বলল, “ভয় কর না। পরিশ আসলে আমি ওকে বুঝানোর চেষ্টা করব।”

প্রভা অর্কের হাতের দিকে তাকালো। চোখ নিচে নামিয়ে জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বলল, “আরেকটা কথা ছিলো আপনার সাথে।”

“বলো।”

প্রভা একগাল হাসি দিয়ে তার সে হাতটা ধরেই তাকে রুমে নিয়ে যায়। আলমারির সামনে দাঁড় করিয়ে বলে, “চোখ বন্ধ করুন এখন।”

অর্ক কিছুই বুঝল না, হাসলো কেবলমাত্র। জিজ্ঞেস করল,”কেন?”

“করুন তারপর বলব।”

“আগে বলো কেন তারপর চোখ বন্ধ করব।”

প্রভা তার পায়ের পাতার আঙ্গুলে ভর দিয়ে একটু উঁচু হলো। অর্কের চোখের উপর হাত রেখে বলল, “আপনার জন্য উপহার আছে তাই।” বলেই মিটিমিটি হাসলো। আলমারি খুলতে নিলেই আচমকায় অর্ক তার কোমরে হাত দিয়ে তাকে কাছে টেনে নিলো। প্রভা শিউরে ওঠে মুহূর্তের মধ্যে। অর্ক আর কখনোই তাকে এমন ভাবে হাত লাগায় নি। তার দেহে অর্কের স্পর্শ পেতেই প্রভা স্তব্ধ হয়ে গেল। সাথে সাথে অর্কের চোখের উপর থেকে হাত সরিয়ে পিছাতে নিলো। কিন্তু পারলো না। অর্ক তাকে জড়িয়ে রেখেছিলো। তার নিশ্বাস একমুহূর্তে প্রচুর ভারী হয়ে যাচ্ছিলো অন্য মুহূর্তে যেন আটকে আসছিলো।

অর্ক প্রভার দিকে তাকাতেই দেখে প্রভা কাঁপছে রীতিমতো। কাঁপছে তার চোখের পলক, তার ঠোঁট, সে নিজে সম্পূর্ণ কাঁপছে। সে নিজে যেন লজ্জার আভায় ঢেকে যাচ্ছিল। প্রভা কিছু বলতে চাচ্ছিলো বোধহয় পারছিলো না। এই লজ্জার আভায় যেন আরও বেশি নেশা রয়েছে। আর অর্ক সে নেশায় ডুবে যাচ্ছে। অর্ক প্রভার কোমর আরও শক্ত করে জড়িয়ে তাকে ঘুরিয়ে আলমারিতে পিঠ ঠেকায়। চোখে চোখ রেখে বলে, “ভেবে উপহার দিবে কিন্তু। উপহার অপছন্দ হলে আমি নিজ থেকে আমার পছন্দের উপহার আদায় করব।”

প্রভা চেয়েও চোখ সরাতে পারছিলো না অর্কের নেশাভরা চোখজোড়া থেকে তার মনে হচ্ছিলো তার হৃদয়ের স্পন্দন ঠিক এই মুহূর্তেই আটকে যাবে। সে বহু কষ্টে নিজের চোখ নামিয়ে বলল, “আপনি এত….এতটা কাছে থাকলে আমি কীভাবে আপ…আপনাকে উপহার দেখাব?”

“প্রথমে বলো তোমার উপহার আমার পছন্দের না হলে আমি আমার উপহার আদায় করতে পারব?”

প্রভা নিজের শাড়ির আঁচলটা আঁকড়ে ধরে বলল, “কীসের উপহার?”

অর্ক তার হাতের আঙুলগুলো প্রভার কোমর থেকে পেট পর্যন্ত ছুঁয়ে দিতে দিতে বলল, “আমি যা চাইব।”

প্রভা যেন সেখানেই বরফ হয়ে গেল। তার কাঁপুনিও বন্ধ হয়ে গেল। সাথে ভয়ও লাগতে শুরু করল। অর্ক কী চাইবে তার কাছে? সে কিছু বলতে চাইলো, পারলো না।

অর্ক মৃদু হেসে তার কাছ থেকে সরে আলমারি খুলে বলল, “আমি কফির কথা বলছিলাম। তুমি কী ভেবেছ?”

প্রভা আচমকায় অর্কের দিকে তাকিয়ে মাথা নামিয়ে নিলো। সে চোখ বন্ধ করে গভীর নিশ্বাস ফেলল।

অর্ক আলমারি থেকে একটি বাক্স পেল। বাক্সটা খুলে সে হতবাক। প্রভার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “তুমি কোথায় পেয়েছ এইটা?”

প্রভা আড়চোখে তাকালো অর্কের দিকে। আবার চোখ নামিয়ে বহুকষ্টে বলল, “দাদির রুমে বাথরুমের উপরের স্টোর রুমে। ভায়োলিনটা দে….দেখে আপনার কথা মনে পড়লো। এইটা আপনার ছোটবেলার ভায়োলিন ছিলো। আপনার মা……”

প্রভা হঠাৎ করে চুপ হয়ে গেল। অর্ক তার হাতটা ধরে তাকে কাছে টেনে নিলো। জড়িয়ে ধরলো তাকে বুকে। সে আবারও হতবাক। সে অর্ককে সরানোর চেষ্টা করতেই অর্ক বলল, “আজ আমি আমার মা’য়ের দেওয়া সবচেয়ে মূল্যবান উপহারটা ফিরে পেয়েছি শুধু তোমার জন্য। আমি এই ভায়োলিন দেখে মন খারাপ করতাম বলে দাদিমা এইটা আমার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখে। হয়তো আমি অনেক বড় হয়ে গেছি কিন্তু আজও এইটা আমার জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান উপহার।”

প্রভা অর্কের ভেজা কন্ঠ শুনে কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। তারপর অর্কের যে হাতে তার ভায়োলিন ছিলো সে হাতের উপর আলতো করে হাত ছোঁয়াল। মৃদু কন্ঠে বলল, “এক প্রিয় বসন্তে আপনার ভায়োলিনের সুর শুনার ইচ্ছে আছে।।”

“অনেক বছর হয়ে গেছে বাজিয়েছি। এখন আর পারব কি’না জানি না। আর এইটা এখন আমার জন্য অনেক ছোট। তোমার ইচ্ছে পূরণ করাটা কষ্টসাধ্য।”

“অসম্ভব তো নয়। আমি নিশ্চিত আপনার মা তার আদরের ছেলেকে আবারও তার প্রিয় ধ্বনি বাজাতে দেখে খুশি হবে। আর এখনো বসন্তের দেরি আছে।”

অর্কের হাসার শব্দ অস্পষ্ট শোনা গেল। কান্নামাখা হাসির শব্দ বলতে কিছু আছে কী?

অর্ক প্রভার চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, “তোমার প্রিয় বসন্তের অপেক্ষা থাকবে এইবার……”
.
.
ভার্সিটির ছাদ তাদের আড্ডার বিশেষ এক স্থান। এইখানে কারো আসাটা বারণ। কিন্তু তাদের আড্ডাটা বেশিরভাগ এইখানেই বসে। আজও নীরা, ইকবাল ও সৈকত বসেছিলো ছাদের এক কোণে। নীরা পায়চারি করছে তাদের সামনে। রাগান্বিত দেখাচ্ছে তাকে ভীষণ। সে সৈকতকে বলল, “মানে তুই চাচ্ছিস আমি ওকে বলি যে ও ওই জ্যোতির কথায় রিয়াক্ট না করে আর কিছু না বলে জ্যোতির বিরুদ্ধে? তোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি?”

উওরটা সৈকতের জায়গায় ইকবাল দিলো। সে বলল, “তো আর কী বলবে ও? একটু ভেবে দেখ জ্যোতির মতো ডেস্পারেট মেয়ে ঝিনুকের কোনো ক্ষতি করবে না?”

“কিন্তু এমনটা করলে ঝিনুক জ্যোতির কাছে ছোট হয়ে যাবে।”

“ওর জীবন বেশি গুরুত্বপূর্ণ না ইগো? জ্যোতি গতবার সৈকতের জন্য কী করেছিলো তুই ভুলে গেছিস? শী ইজ মেন্টালি সিক ম্যান! আর এমন না করলে যে কারণে সৈকত জ্যোতির সাথে দেড় বছর ধরে আছে তা শেষ হয়ে যাবে।”

“আর ঝিনুকও জেনে যাবে বিনয় ও নূহার কাহিনী। ও সহ্য করতে পারবে না।” সৈকত আকাশের দিকে তাকিয়ে উদাসীন মনে বলল।

“ঝিনুক যথেষ্ট স্ট্রং আছে।” নীরা সৈকতের কথা অমান্য করে বলল। সৈকত বলল, “ও শুধু বাহির থেকে নিজেকে স্ট্রং দেখায় কিন্তু ও মোটেও এতটা স্ট্রং না। কারো কথায় কখনো সে কেমন তা ধরে নিতে নেই। কে আসলে কেমন তা অনেক সময় নিজেও জানে না। তোর কী মনে হয় ওকে কেন জানানো হয় নি যে বিনয় ও নূহা অবৈধ সম্পর্কে ছিল বা প্রভা ভাবি ও বিনয়ের ডিভোর্সের কথা হচ্ছিল। ওর পরিবার নিশ্চয়ই ওর খারাপ চায় নি এইজন্য।”

“কিন্তু এতে জ্যোতির আরও বেশি করতে শুরু করবে।”

“ভুল। ঝিনুক জবাব না দিলে জ্যোতি এক দুইবার চেষ্টা করে থেমে যাবে৷ আমি জ্যোতিকে প্রথমদিন বুঝানোর চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু ও আরও বুঝেছে যে আমি এখনো ঝিনুককে ভালোবাসি এই ভেবে ও ঝিনুকের পিছনে আরও পরেছে। তাই আমি কিছু বলতেও পারছি না।”

“করতে পারছিস না নাকি চাচ্ছিস না?”

ইকবাল চোখে মুখ কুঁচকে ক্ষোভ নিয়ে বলল, “আর ইউ সিরিয়াস নীরা? তুই জানিস না ও যা করছে সব ঝিনুক ও প্রভা ভাবির জন্য করছে? আরও তখন থেকে যখন সে জানতো যে ও ঝিনুককে পাবে না। শুধু ভাগ্যের জোরে ও ঝিনুককে নিজের করে পেয়েছে।”

“আমি সবই জানি কিন্তু এইসব আর ভালো লাগে না। কবে শেষ হবে এইসব?”

সৈকত বলল, “যখন মিঃ অর্ককে প্রমাণ দেখাতে পারব যে দুইটা মানুষের জন্য উনি প্রভা ভাবির জীবনটা নষ্ট করে দিচ্ছে সে দুইটা মানুষই তার বিশ্বাস নিয়ে খেলা করেছে।”

নীরা কিছু বলতে যাবে আর তার ফোনে একটা মেসেজ এলো। সে পকেট থেকে ফোন বের করে দেখে মেসেজটি। সে বলল, “ঝিনুক মেসেজ দিয়েছে।”

“কী লেখা?”

নীরা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “ও নবীন বরণের জন্য নাচে নাম দিয়েছে।”

সৈকত বিরক্তি নিয়ে বলল, “এই মেয়ে সবসময় উল্টা কাজ করে কেন?”

নীরা ফোনটা পকেটে রেখে বলল, “ও ঠিক কাজই করছে। তোরা শুধু উল্টা ভাবছিস। আমি ওর কাছে যাচ্ছি।”

ইকবাল কপালে হাত রেখে বলল, “এই মেয়েগুলোকে বুঝা এত কঠিন কেন? ওদের থেকে তো ম্যাথম্যাটিকসের প্রবলেম সলভ করা হাজারোগুণ বেশি সহজ।”

চলবে……

[আশা করি ভুল ক্রুটি ক্ষমা করবেন ও ভুল হলে দেখিয়ে দিবেন।]

পর্ব-২৬ঃ
https://www.facebook.com/828382860864628/posts/1224272867942290/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here