মন_পাড়ায় পর্ব_৩৯

মন_পাড়ায়
পর্ব_৩৯
#নিলুফার_ইয়াসমিন_ঊষা

সৈকত ভোর সাড়ে চারটায় বাস থেকে নামে। ঘুরতে থাকে এই নিঝুম শহরের গলিতে। এই নীরবতা তার বুকের ভেতরের কষ্টগুলো আরও গাঢ় করে তুলছে। তার মনে হচ্ছে তার বুকের উপর এক পাথর রাখা হয়েছে। অথচ তার এই নিরবতায় ভালো লাগছে। হোক তার কষ্টগুলো তীব্র ও বিস্তর। হয়তো এই কষ্টগুলোর সাহায্যেই ঝিনুক থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে পারবে সে। তার জীবনটাও আজব। আপন মানুষগুলোকে সে ঠিকই পায় কিন্তু তারা কখনো আপন হয় থাকে না।

সকাল সাতটার দিকে সৈকত ইকবালকে কল দিলো। প্রথমবার সে ধরলো না। দ্বিতীয়বার ধরেই একটা গালি দিয়ে বলল,
“তোর আর কোনো কাম নাই এত সকালে কে উঠায়? শালা এত সকালে তো আমার মাও স্কুলে যাওয়ার জন্য উঠাতো না। দিলি তো ঘুমের চৌদ্দটা বাজিয়ে। তুই জানোস আমি কত ঘুমপ্রিয় মানুষ?”
সৈকত শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “আচ্ছা তাইলে ঘুমা।”
“এক মিনিট দাঁড়া। তুই এত সুন্দর ভাবে কথা বলতেছোস? কী হইছে তোর? আংকেলের সাথে কিছু হইছে না ঝিনুকের সাথে?”
সৈকত এমন মন উদাসের সকালেও হেসে দিলো ইকবালের ছটফটে কথার ধরণ দেখে। ইকবাল আবারও বলল,
“তুই এমনে হাসতেছোছ মানে কিছু হইসে৷ কই তুই আমি আসতেছি।”
“তোর গলির চায়ের টঙের সামনেই আছি।”
“পাঁচ মিনিট দেয়।”

পাঁচ মিনিট বলে এক মিনিটেই হাজির হলো ইকবাল। দৌড়ে আসার কারণে ভীষণ হাঁপাচ্ছে সে। সৈকত তাকে দেখে হেসে বলল,
“সারাজীবন পাঁচ মিনিট বলে পঞ্চাশ মিনিট লাগানো মানুষ আজ এক মিনিটে হাজির। নাইস ইম্প্রুভমেন্ট।”
“তুই এমনে হাসবি না। তওর এমন মলিন হাসি দেখলেই ভয় লাগে। কী কান্ড হইসে তা বল?”
সৈকত কিছু বলল না। ইকবাল সৈকতের সামনের বেঞ্চে বসে আবারও জিজ্ঞেস করল,
“আংকেল আন্টিকে আবার কিছু বলছে?”
সৈকত মাথা ডানে বামে নাড়লো।

সাথে সাথে ইকবাল রাগান্বিত স্বরে বলল, “ঝিনুক ভাবি বড় কিছু বলেছে বা করে ফেলেছে? ওই পরিশের বাচ্চার জন্য না’কি অর্ণবের কথায়? আর তুই আবাল ঝিনুকের কথায় মন খারাপ করে বসে আছিস? ওর মধ্যে ম্যাচুরিটি কম জানিসই তো বাচ্চামি ভাব। তুই ওর কথায় মন খারাপ করতে যাস কেন?”
সৈকত মাথা নিচু করে ছিলো। সে মাথা নিচু রেখে ভেজা কাঁপানো কন্ঠস্বরে উওর দিলো,
“ও শুধু আমাকে উল্টাপাল্টা কথা বলে নি আমার ভালোবাসাকে অপমান করেছে। আমি কীভাবে মানতে পারব যে মেয়ে আমাকে জীবনের সৌন্দর্য দেখিয়েছে আজ সেই মেয়ের জন্য আমার নিজের জীবনটা বিষাক্ত করে তুলেছে।”
সৈকত আবার ইকবালের দিকে তাকিয়ে বলল,
“ও বলেছে আমার ভালোবাসা না’কি ওর দেহ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। ও এই কথাটা বলার আগে একটুও ভাবে নি। আমি মানলাম ওর মধ্যে ম্যাচুরিটি কম আর বোকা একটু কিন্তু মানুষ কথা বলার আগে তো ভাবে। ভাবে সামনের মানুষটারও মন আছে। সে একটা সাধারণ কথাও মানুষের ভেতরটা শূন্য করে দিতে পারে এই কথাটাও ও ভাবে নি। আরে আমার যদি শুধু ওর দেহ ভোগ করতেই হতো তাহলে আমি আমাদের বিয়ের পর ওর সাথে জোর করতে পারতাম না? আমার তো ওর উপর সম্পূর্ণ অধিকার আছে তাই না? আমি শুধু ওকে চেয়েছি। ও দূর যাওয়ার পর কখনো ওর কাছে যায় নি দূর থেকেই ওকে চেয়েছি। ওর অজান্তে ওকে রক্ষা করেছি, ওর সকল আশা পূরণ করার চেষ্টা করেছি, দূর থেকে ওকে যতটা সুখে রাখা যায় ততটা চেষ্টা করেছি। আর ও অবশেষে বলল আমি নিজের লালসা পূরণের জন্য ভালোবাসার নাটক করছি!
কোথাও শুনেছিলাম যে ভালোবাসার মানুষটি যেতে চাইলে তাদের যেতে দিও, যদি তারা ফেরত আসে তাহলে সে তোমার ভাগ্যে লেখা থাকে তাহলে সে অবশ্যই ফেরত আসবে। ঝিনুক তো এসেছিলো রে কিন্তু ও আমার ভাগ্যেই নেই।”
ইকবাল উঠে যেয়ে সৈকতের পাশে বসে তার কাঁধে হাত রেখে বলল, “তুই দেবদাস হতে চাইলে হতে পারোস। কোনো পারু পাইলে তার বান্ধবীর সাথে শুধু আমার সেটিং করায় দিস।”
সৈকত ইকবালের পিঠে এক ঘুষি মেরে বলল, “আমি এইখানে তোর সাথে এত সিরিয়াস কথা বলছি আর তুই মজা নিতাছোস শয়তান?”
ইকবাল হেসে বলল, “আগে বল দেবদাস হওয়ার ট্রিট কবে দিবি। গতবারের মতো একটা বার্গারে ছাড়তেছি না। দশটা লুচি, বিফ চাপ তিন চারটা আর….”
সৈকত ইকবালকে ধাক্কা দিয়ে বলল,
“কুত্তা যা তুই এইখান থেকে।”
ইকবাল হেসে আবার সৈকতে কাঁধে হাত রেখে বলল,
“আচ্ছা রাগ করিস না আমি খাওয়ামু নে। এইবার খুশি।”
সৈকত তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ইকবালের দিকে। ইকবাল সৈকতের গাল টেনে বলল,
“বাবু একটু হেসে দেখাও।”
সৈকত সাথে সাথে আরও কয়টা মারলো ইকবালকে। তারপর নিজেই হেসে দিলো। হেসে রাগী কন্ঠে বলল,
“শালা আমি তোর কাছে একটু কষ্টের কথা কইতে আইসিলাম আর তুই কাহিনী শুধু করসোস। কী বলতাম তাও ভুলে গেছি।”
“যাক স্বাভাবিক হইসোস। এতক্ষণ তোর এই সেন্টিমার্কা সুন্দর কথা শুনে আমি অসুস্থ হইয়া যাইতাছিস যে আমার বন্ধু কোন দেশের এলিয়েন থেকে রিপ্লেস হয়ে গেছে।”
“গাঁধা ওইটা দেশ না গ্রহ হবে।”
“ওই যে লাউ সেই কদু।”

সৈকত দীর্ঘশ্বাস ফেলে স্বাভাবিক গলায় বলল,
“শর্টকাট পরিশ এসেছিলো আবার ঝিনুককে উল্টাপাল্টা কিছু বুঝাইছে আর ও বুঝেও গেছে। গতকাল রাতে অনেক কাহিনী হইসে যা পরে বলব আপাতত আরেক সমস্যা আছে সামনে। ঝিনুক বলল ও আজ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবে না।”
“স্যারদের সাথে কথা বলে নিলেই হবে।”
“সমস্যা স্যার না। সমস্যা হচ্ছে জ্যোতি। জ্যোতি ও ঝিনুকের মধ্যে শর্ত লেগেছে নাচ নিয়ে। যে হারবে সে বিজয়ীর কথানুযায়ী একটা কাজ করবে এবং তুই জানিস জ্যোতি ঝিনুককে একদম পছন্দ করে না। তাই ও ছোট কোনো কাজ দিবে না। এই নিয়ে চিন্তা আছি।”
“আল্লাহ এখন কী করবি?”
“তুই আমাকে মারবি।”
ইকবাল চোখ মুখ কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,
“কী! কিন্তু কেন?”
“যেন জ্যোতিও অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ না করতে পারে। আমি মাথায় নকল ব্যান্ডেজ লাগিয়ে যাব সাথে তোর মারার দাগ থাকবে। ও আমাকে আহত অবস্থায় দেখে অবশ্যই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবে না। আর খুশিও হয়ে যাবে কোনো এক ভাবে হলেও আমার সাথে সময় কাটাচ্ছে।”
“কিন্তু ও তো পরে জানবে যে ঝিনুকও আসে নি তখন তো সন্দেহ হবে যে তুই যা করেছিস ঝিনুকের জন্য করেছিস। ও আগের থেকে তোদের দুইজনের ব্যাপারে জানে। আর হতে পারে ঝিনুক ও তোর বিয়ের ব্যাপারেও আন্দাজ করতে পারছে।”
“আমি যতটুকু জানি বিয়েতে বাবার বিজনেস রিলেটেড কোনো ব্যক্তি আসে নি। আর জ্যোতির আব্বু এখন আমার বাবার সাথে কোনো যোগাযোগ করে না নূহার মৃত্যুর পর থেকে। আর বাবা নিজে বলেছে যে যতদিন আমার চাকরি না হয় ততদিন আমার বিয়ের খবর যেন বাহিরে না যায়। আর রইলো ঝিনুকের ব্যাপার সেটাও আমি ভেবে রেখেছি। জ্যোতির সামনে তোকে ফোন দিয়ে বলব যে কোনো মূল্যেই হোক ঝিনুক যে প্রতিযোগিতায় আসতে না পারে। জ্যোতি উল্টো ভাববে আমি যা করছি ওর জন্য করছি।”

ইকবাল তার ভ্রু কপালে তুলে বলল,
“তোর মাথায় এইসব আসে কোথা থেকে?”
“আয় এবার একটু কাজ কর।”
ইকবাল নিচের থেকে একটা পাথর নিয়ে সামনে যেয়ে দাঁড়ালো সৈকতের আর জিজ্ঞেস করল,
“ঝিনুক তোকে গতরাতে এতটা কষ্ট দিয়েছে অথচ তুই এখনো ওর চিন্তা করছিস? ওর জন্য নিজ ইচ্ছায় আহত হওয়ার দরকার কী? জ্যোতি যদি ঝিনুককে কোনো কষ্ট দেয়ও তবুও ওর এইটা যোগ্য নিজের বোকামিগুলো তো বুঝবে।”
“কারণ আমি যখন ওকে ভালোবেসেছিলাম তখন নিজেকে ওয়াদা করেছিলাম। ওর সব কষ্টগুলো আমি নিজের ভাগে নিব আর সুখটুকু ওকে দিয়ে দিব।”
.
.
জ্যোতি আয়নার সামনে বসে আছে। দুইজন তাকে সাজিয়ে দিচ্ছে। এমনই এক সময় একটা ছেলে তার পিছনে এসে দাঁড়িয়ে বলল,
“মেডাম সৈকত ভাই আসছে।”
জ্যোতি সাথে সাথে উঠে দাঁড়ালো। একগাল হেসে বলল,
“সৈকত এসেছে?”
“জ্বি।
জ্যোতি অনেকটা খুশি হয়ে দৌড়ে যেতে নিলো বাহিরের দিকে। আবার থেমে ছেলেটির দিকে তাকিয়ে কঠিন গলায় বলল,
” একমিনিট ও আমার বয়ফ্রেন্ড তুমি জানো। তোমার সাহস কীভাবে হয় ওকে ভাই টাই বলার। স্যার বলা উচিত এইটা শিখানো হয় নি?”
ছেলেটা আমতা-আমতা করে বলল,
“সৈকত ভাই না মানে স্যারই বলেছিলো।”
“নিজের জায়গা মনে রাখবে এর পর থেকে, নাহয় ভালো হবে না। নতুন এসেছ তাই ছেড়ে দিলাম। আমি রাগ কেমন সেটা বাড়ির সব কাজের লোক থেকে জেনে নিও।”
বলেই একরাশ অহংকার নিয়ে চলে গেল সে।

ড্রইংরুমে যেয়ে দেখে সৈকত বসে আছে সোজায়। তার মাথায় ব্যান্ডেজ করা ও মুখে দাগ। সে দৌড়ে গেল সৈকতের কাছে। তার পাশে বসে ব্যস্ত হয়ে বলল,
“তোমার এই অবস্থা কেন?”
“বাহ তোমাকে দেখি অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে। আজকের অনুষ্ঠানে সবার চোখ তোমার উপরই থাকবে।”
“উফফ এইসব বলার সময় এখন? তোমার এই অবস্থা কেন এবং কে করেছে?”
“সকালে মারামারি হয়েছিল এক ছোট ভাইয়ের মামলায়। বাসায় এই অবস্থায় গেলে বাবা তামাশা করতো তাই তোমার কাছে এসেছি। তোমার এইখানে কিছুক্ষণ থাকলে কী সমস্যা হবে? আসলে শরীর প্রচন্ড খারাপ লাগছে। মাথা তজেকে রক্ত পরেছে প্রচুর।”
“বলো কি তুমি রেস্ট নেও। আমি আছি তোমার সাথে।”
“কিন্তু তোমার নাচ আছে তো। আর আমি চাই না তুই কারো থেকে পরাজিত হও।”
“আমার কাছে তুমি বেশি গুরুত্বপূর্ণ যা হবে পরে দেখা যাবে।”
“একদম না। আমার জন্য তুমি……”
জ্যোতি সৈকতের ঠোঁটের উপর আঙুল রেখে বলল,
“আর কোনো কথা না।”
সৈকত হেসে জ্যোতি হাত সরিয়ে বলল,
“কিন্তু আমি তো তোমাকে কষ্ট পেতে দেখতে পারি না তাই না। আইডিয়া।”
“কী?”
জ্যোতি প্রশ্ন করল। সৈকত বলল,
“তুমি না অংশগ্রহণ করতে পারলে ঝিনুকও পারবে না।”
সৈকত ফোনটা নিয়ে ইকবালকে ফোন দিয়ে তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী বলল। এরপর জ্যোতিকে বের খুশি দেখা গেল। জ্যোতি সবাইকে নিজের রুম থেকে বের করে সৈকতকে নিয়ে গেল। তার সাথে ঘেঁষে বসলো। সৈকত সাধারণত জ্যোতির সাথে পাব্লিকপ্লেস ছাড়া দেখা করে না। একবার এসেছিলো কিন্তু জ্যোতি এমন এক কান্ড করল যা সে কখনো ভাবতেও পারে নি। জ্যোতি তার ড্রেস সৈকতের সামনেই খুলতে শুরু করল। সৈকত হতদম্ব হয়ে ছিলো শুধু। তার অনেক মেয়ে বান্ধবী আছে কিন্তু কখনো কারো এমন ব্যবহার সে দেখে নি। সেদিন কোনো একভাবে সেখান থেকে বের হলো সৈকত আর আজ এলো৷ জ্যোতি কিছু করতে যাবে এর আগেই সে বলল,
“জান আমার সম্পূর্ণ শরীর ভীষণ ব্যাথা করছে প্লিজ ধরো না। ধরলেই ব্যাথা লাগে।”
জ্যোতি চিন্তিত সুরে বলল,
“আচ্ছা তুমি বসো আমি স্যুপ আনতে বলছি কাওকে আর ডাক্তারকে ডাকছি।”
“ডাক্তারকে দেখি এসেছি। এই দেখ ব্যান্ডেজ।”
“আচ্ছা তাহলে স্যুপ আনতে বলি।”
.
.
অর্ক সকাল থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে প্রভাকে খুঁজছে। কোথাও পেল না ঘরে। ঘরে কেউ উঠে নি। বোধহয় আজ জলদিই উঠে গেল সে।

অবশেষে ছাদে যেয়ে দেখা পায় প্রভার। চারপাশে আবছা আলো ছিলো। কেউ ছিলো না এই স্নিগ্ধ প্রভাতটা উপভোগের জন্য।
প্রভার ছোট পুকুরটির সিঁড়িতে বসে ছিলো। তাকে এই সকালটা মতোই দেখাচ্ছে স্নিগ্ধ ও কোমল। প্রভা দরজার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলল,
“আমার মন বলছিল আপনি আসবেন।”
“কীভাবে?”
“মন তো তাই।”
অর্ক প্রভার পাশে যেয়ে বসলো। বলল,
“আমার অপেক্ষা করছিলে?”
প্রভা মৃদু হাসলো। উওর দিলো না। সেখান থেকে দাঁড়ালো যেয়ে পাশের জায়গাতেই। দেখতে থাকল সে বিশাল কমলা আকাশের চিত্রময় দৃশ্যকে।

“তোমার কী মনে হয় কীজন্য খুঁজছিলাম আমি তোমায়?”
অর্কের প্রশ্ন শুনে প্রভা উওর দিলো,
“জানি না তো।”
অর্ক পাশে এসে দাঁড়ালো তার। তার কাঁধ ধরে তাকে নিজের দিকে করে দুইহাত নিজের হাত নিলো। আর দুই হাঁটু গেড়ে বসলো।
প্রভা নির্বাক। কী হচ্ছে তার ধারণাটাও সে করতে পারছে না।

অর্ক বলল,
“আমি জানি আমি জানা অজানায় তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। কখনো কথায় তো কখনো কাজে।”
“এইসব কথা তুলছেন কেন?”
“এখন কথা বলো না প্রভা। শুনো শুধু। কিন্তু আমি সবচেয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করেছি যখন তোমার চরিত্রের উপর প্রশ্ন তুলেছি। আমি জানি অন্য দশটা মেয়ের মতো তোমার মনে শত স্বপ্ন, শত আশা ও হাজারো সুখ ছিলো না। কারণ আমাদের সম্পর্ক কখনো স্বাভাবিক ছিলো না। কিন্তু তোমার প্রতি আমার যতই রাগ থাকুক না কেন কোনো মেয়ের চরিত্রের উপর প্রশ্ন তোলার পূর্বে আমার একশোবার ভাবা উচিত ছিলো। আমাকে ক্ষমা করে দিও প্রভা। আমি তোমাকে তখন না চিনে তোমার চরিত্রে উপর প্রশ্ন করেছি আজ তোমায় চেনার পর আমার নিজের বিবেকের উপর প্রশ্ন তুলতে ইচ্ছে করছে।”
প্রভা অর্কের হাত ধরে তাকে টেনে তুলে বলল,
“আপনার হঠাৎ করে এই সকাল সকাল কী যে হলো। এইসব কথা ভুলে যান।”
বলেই প্রভা মিষ্টি হেসে অর্কের চুল হাত দিয়ে ঠিক করে দিতে শুয়ে করল।
প্রভার সে মিষ্টি হাসিতে সে সকালটা আরও স্নিগ্ধ লাগছিলো। অর্ক মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইলো সে মুখটার দিকে। নিজের চুলে বুলিয়ে দেওয়া প্রভার হাত ধরে নিলো।
হঠাৎ এমনটা হওয়ায় চমকে তাকায় প্রভা৷ অর্কের চোখজোড়ায় তার চোখদুটো আটকায়। মুহূর্তে তার বুকের ভেতর এক তুফান বয়ে যায়।
অর্ক তার হাত ছেড়ে চুলের খোঁপা খুলে দেয়। সে বাঁধা দেয় না। তার চুলে হাত বুলাতে বুলাতে কানের পিছনে হাত রাখে। সে বাঁধা দেয় না।
অর্কের নেশাভরা চাহনি দেখে তার নিশ্বাসটা ভারী হয়ে আসছে যেন। সে বুঝতে পারছে না কী হতে যাচ্ছে।

অর্ক একটু ঝুঁকে চোখ দুটো বন্ধ করে প্রভার ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়াল। আবার উঠে প্রভার মুখটা যাচাই করে নিলো। প্রভার মুখে রাগ নেই। প্রথমে ছিলো বিস্ময় আর এখন আছে লজ্জামাখা হাসি। সে লজ্জা দেখে অর্ক যেন মাতোয়ারা হয়ে গেল। প্রভার দিকে এগোতেই প্রভা তার ঠোঁটের উপর হাত রেখে বলল,
“আমরা ছাদে আছি। কেউ এইসব দেখলে খারাপ ভাববে।”
অর্ক সাথে সাথে তাকে কোলে তুলে নিলো। প্রভা বলল,
“নিচে নামান। কেউ দেখে ফেলবে।”
অর্ক মানলো না। সে প্রভাকে নিয়ে সে পুকুরপাড়ে যেয়ে সিঁড়িতে প্রভাকে বসিয়ে তার কোলে মাথা রাখল।

চলবে……

[আশা করি ভুল ক্রুটি ক্ষমা করবেন ও ভুল হলে দেখিয়ে দিবেন।]

পর্ব-৩৮ঃ
https://www.facebook.com/828382860864628/posts/1244560519246858/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here