মশারি পর্ব-১২

0
1018

বর বউয়ের রোমান্টিক ঝগড়ার গল্প :

♠♥♠ #মশারি ♠♥♠

♣♣পর্ব :১২

গল্পকার :#গল্প বুড়ি তিলোত্তমা
!
!
!
!
ছোট ভাবী এসে বলল তাড়াতাড়ি বাবার রুমে আয় । আমি ভয় পেলাম বাবার কিছু হলো না তো “””””””
বাবার রুমে গিয়ে দেখি………..
আমার শ্বশুড় আর তার সাথে কয়েকজন লোক এসেছে।
আমি গিয়ে তাদের সালাম আর কুশল বিনিময় করলাম। শরবত চা নাশতা দিলাম।
তারপর কিছুটা সময় ঐখানে থেকে। কিচেনে আম্মু আর ভাবীর কাছে গেলাম।
ওদের সাথে গল্প গুজব করতে করতে যোহরের আযান পড়লো।
আম্মু আমাকে নামায পড়ে নিতে বলল। আর বলল আমার শ্বশুরবাড়ীর মেহমান এসেছে। তাদের যেন যত্নতে কোন কমতি না হয়।
!
আমি আমার রুমেই যাচ্ছিলাম এর মাঝে তনু ডাক দিলো……এই তিলোত্তমা “”””
!
আমি : বল কি বলবি
!
!
তনু : এভাবে বলছিন কেন ? এখনো রাগ করে আছিস আমার ওপর !!!
!
!
আমি : ঐ আমি আবার কিভাবে বললাম । আর শোন তোর ওপর রাগটা আমার না সহজে কমবে না।
!
!
তনু : শোন এত রাগ করিস না । একদিন তুই”””””
!
এই কথাটা বলার আগেই আমি ওকে বললাম””””
!
আমি : একদিন কি রে বলতে চাইলি তুই। আমিই বলছি শোন, প্রথম যেদিন আরমান আলিফের,
!
ও মাইয়্যা ও মাইয়্যা রে তুই অপরাধী রে””””””
!
এই গানটা শুনছিলাম না, সেই দিন আরমান আলিফকে শীল নোড়ায় পিষতে ইচ্ছে করছিল।
আর বলছিলাম, মাইয়্যারা অপরাধী হইলে কি, পোলারা ধোয়া তুলসি পাতা নাকি ?
কিন্তু আজ বুঝছি এই গানের মর্ম। তোর মত অপরাধী মাইয়্যার জন্যই গানটা লিখছে।
!
!
আমার কথা শেষ না করতেই, তনু আমাকে এক গাদা লেকচার শুনালো “””‘
!
!
তনু : শোন তুই না ১ নাম্বারের ড্রামাকুইন। পুরা সিরিয়ালের মাসিদের মত। একবার বলা শুরু করলে থামার রি নাম নিস না। বকবক করতেই থাকিস । বেচারা সাহিল ভাইয়ের কানের পর্দা তো অল্পদিনেই ক্ষয় হয়ে, কানে কালা হয়ে যাবে ।
!
!
আমি : কি””””””?
!
!
তনু: জ্বী””‘”””””
আর শোন তোকে বলে রাখছি, একদিন তুই নিজেই বলবি “আলহামুলিল্লাহ” সাহিল ভাই তোর জন্য বেস্ট চয়েজ ছিল ।
তুই কথাটা মিলিয়ে নিস।
!
!
রাগে তো আমি গজগজ করছি। ফাজিল মেয়েটা বলে কি ? এই #মশারি মার্কা লোকটা নাকি আমার জন্য বেস্ট । শাকচুঁন্নি দোয়া করি তোর কপালেও যেন এমন জামাই পড়ে।
মনে মনে বকলাম ইচ্ছে মত, কুতকুতমুখী, কোদালদাতী,পটলচোখী আর মনে আসছে না।
!
!
তনু : কি রে বোকা কি খুঁজে পাচ্ছিস না নাকি। আমি কি মনে করিয়ে দেবো। আর শোন সাহিল ভাই তোর রুমের দিকে গেল। তাড়াতাড়ি যা, তা না হলে বড় ভাবীকে গিয়ে সব বলে দিবো।
!
!
আমি মুখ ভেনচি দিয়ে রুমে দিকে এলাম। আর বলছি হায় আল্লাহ বিয়ে হতে না হতেই,
দোস্ত হল দুশমন
আর
আপনা হল পরাই
এই কি ছিল আমার নসিবে “”””””
আল্লাহ গো আমারে উঠিয়ে নাও””””
এই বলতেই দেখি আমাকে কেউ উঠিয়ে নিয়েছে কোলে””

!
আমি : এই আপনি করছেন টা কি? আজকাল যখন তখন আমাকে কোলে উঠিয়ে নিচ্ছেন । এত উঠাউঠি করা শখ ট্রেন স্টেশনে কুলিগিরি করলেই পারেন। অযথা আমাকে জ্বালাতে আসবেন না ।
!
!
সাহিল : হা হা হা তাই নাকি?
আমি কুলিগিরি করলে আপনি যে মিসেস কুলি হবেন । আর এই বোঝা আর সেই বোঝার বুঝ টা আপনার থাকতো তবে তো আমি ধন্য হয়ে যেতাম ।
!
!
আমি মনে মনে বলছি, ইস্ আল্লাহর কাছে অন্য কিছু চাইলেও পারতাম। এখন আমার দোয়া কবুলের সময় ছিল। কেন যে উঠিয়ে নেওয়ার কথা টা বলতে গেলাম “””!!!
!
!
সাহিল : এতক্ষন তো কোলে তুলেছি বলে কত কথা শোনালেন। আর এখন তো নামবারি নাম নিচ্ছেন না।
!
!
আমি : কোলে উঠিয়ে রাখতে পারবেন না যে জিনিষ । সে জিনিষ কোলে উঠাতে বলছে কে ? আর আমাকে তাড়াতাড়ি নিচে নামান । দরজা খোলা আছে যখন তখন কেউ আসতে পারে। বড়রা দেখলে তো লজ্জা পেয়ে চলে যাবে।
কিন্তু তাজ আর তাহা যদি, ভুল করেও একবার দেখে তবে কিন্তু আপনার আমার দুজনের ইজ্জতেরি ফালুদা বানিয়ে ছাড়বে।
তাই দয়া করে আমাকে নিচে নামান ।
!
!
সাহিল : হুম নামাচ্ছি ।
কিন্তু ভাবছি বিয়ে হতে না হতেই মনে হয়, ওজনটা ২-৪ কেজি বেড়ে গিয়েছে।
কেমন জানি ভারী ভারী লাগলো “””” লুচু মার্কা একটা হাসি দিয়ে।
!
!
আমি অগ্নিদৃষ্টিতে সাহিলের দিকে তাকালাম “””””
, ব্যাটা ফাজিলকুমার তোর কপালে আটার বস্তার মত বউ পরা দরকার ছিল। তবে আর এত প্রেম গদগদ করতো না। একবার কোলে নিলেই তিন দিন কোমড় সোজা করে দাড়াতে পারতি না।
মনে মনে বলে, নিজের অজান্তেই হি হি হি করে হেসে উঠলাম।
!
!
সাহিল : দুষ্ট বউটা আমার এত খুশি কেন ? আমি কি জানতে পারি। আর হ্যা আপনাকে দেখতে কিন্তু জটিল সুন্দর লাগছে। ামার চোখটা যেন ফিরাতেই পরছিলাম না। মনে মনে শুধু ভাবছিলাম দুষ্ট বউটাকে কখন একটু একা পাবো একটু আদর করবো।
!
!
এই বলে সাহিল আমার দুই বাহুতে ধরে ওর নাকটা আমার নাকের সাথে ঘোষে দিচ্ছে।
আমি নির্বাক মূর্তির মত দাড়িয়ে রয়েছি। দুজনের নিঃশ্বাস ঘন হয়ে আসছে আর দুজনের নিঃশ্বাস দুজনের মুখকে স্পর্শ করে যাচ্ছে।
আমি ওর গরম নিঃশ্বাসে বারবার কেঁপে উঠছি।
ও যখনি আমার ঠোটে ঠোট ছোয়াতে যাবে তখনি “”””
!
!
ছোট ভাইয়ার ডাক দিল।
নামায পড়তে মসজিদে যাবার জন্য। ও তাড়াতাড়ি মাথা চুলকাতে চুলকাতে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল।
!
কিছুক্ষন পর ওযূ করে বাহিরে আসলো। তারপর ওর টি শার্ট খুলে হালকা আকাশী কালারের পান্জ্ঞাবী পড়লো। আর সাদা টুপি মাথায় পড়লো। দেখতে কিন্তু দারুণ লাগছে ।
!
!
আমি গলায় হালকা কাশি দিয়ে বললাম শোনেন, আপনি কিন্তু আমাদের এলাকার জামাই। তাই যেই সামনে পরবে তাকেই সালাম দিবেন।মনে থাকে যেন “”””!
!
!
সাহিল মুচকি হেসে বললো, আপনার বর পর্যন্ত তো ঠিক ছিল। কিন্তু পুরা এলাকার জামাই হলাম কিভাবে ? আর ছোট বড় সবাইকেই দিতে হবে।
!
!
আমি হেসে বললাম, মাথায় তো দেখছি তিল পরিমার বুদ্ধি ও নেই। আমি যদি এলাকার মেয়ে হই তোবে তো আপনি এলাকার জামাই। আর সালাম তো ছোট বড় সবাইকেই দেয়া যায়। তবে অসুবিধা কি?
আমি তো আম্মুকে বলতে শুনেছি। যখন ছোট ভাইয়া নতুন নতুন শ্বশুড়বাড়ি গেল। তখন আম্মু ভাইয়াকে বলছে, শোন শ্বশুড়বাড়ির পথে ছোট বড় যাকে পাবি তাকেই সালাম দিবি। যদি পথে বিড়াল পরে, পারলে তারেও দিবি।
!
এই কথা শুনে আমি আর ভাইয়া হাসতে হাসতে শেষ।
আম্মু ধমক দিয়ে বলেছে, আমি বিড়ালের কথা এজন্য বলছি, যাতে করে কাউকেই যেন সালাম দিতে ভুল না করিস। আর সালাম দেয়ার গুরুত্বটা তুই যেন বুঝিস।
!
সাহিল : ওরে আল্লহ !
বউ নিয়ে শ্বশুড়বাড়ী পা না রাখতেই।দুষ্ট বউ আমার এতটা ম্যাচুয়ের হয়ে গিয়েছে।
কাল নিজে থেকেই #মশারি টানিয়ে দিল। আবার আজ এত জ্ঞান দিচ্ছে আমায়।
ভাল ! ভাল না !
তাহলে শ্বশুরবাড়ীর মসজিদে গিয়ে দোয়া করি যদি আল্লহ কবুল করেন।
আমার দুষ্ট বউটা যেন আমার প্রতি সদয় হয় মিষ্টি আচারণ করেন।
!
!
আমি এই যে আপনি মসজিদে যান। ভাইয়া আপনার জন্য দাড়িয়ে আছে। আর আমিও নামায পড়বো। আল্লহ হাফেজ।
সাহিল সালাম দিয়ে চলে গেল। আমিও ওযূ করে নামায পড়ে নিলাম।
তাহা তাজের সাথে কিছুক্ষন দুষ্টামি করলাম। আমি চলে গেলে দুষ্ট দুটো আমাকে খুব মিস করবে।আর আমি ওদের খুব মিস করবো। আমাদের সাথে সায়লা আর তনু যোগ দিল। ওরা দুজনো ও তাহা আর তাজকে খোচাচ্ছে ।
আর এ দুটো এমন এমন কথা বলছে যে, হাসিতে পেট ফেটে যাচ্ছে।
!
!
ভাইয়ারা নামায শেষ করে বাসায় আসলো। দুপুরের খাবারের সময় হয়েছে।
তারপর সবাই মিলে খাবার শেষ করলাম। কিছুক্ষন সবাই মিলে আড্ডা দিলাম ।
আড্ডা দিতে দিতে প্রায় ৪টা বেজে গেল।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লাম। কারন আমারো বিদায়ের ঘন্টা বেজে আসছে।
ভাবতেই খুব অস্থির লাগছে। যে বাড়ীতে ২০টা বছর কাটালাম আজ কিনা আমি সেই বাড়ীর মেহমান হয়ে গেলাম। চোখ দিয়ে ফোটা ফোটা পানি ঝরছে।

!
আমাকে দেখে ভাইয়া আর ভাবী শান্তনা দিল। আর বললো, পাগলি এভাবে কেউ কাঁদে নাকি। তুই আমাদের কাছে কাল ও যেমন ছিলি, আজো তেমন আছিস আর ভবিষ্যৎ ও এমনি থাকবি।
ওদের এ কথাটা শুনতেই আমি ওদের জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলাম।
পুরা বাসাটা কেমন জানি নিস্তব্ধ হয়ে গেল।
তারপর আসরের নামায পড়ে রেডি হতে শুরু করলাম।
আমি আজ বোরকা পড়েছি। কারন বোরকা ছাড়া চলাচল করা আমার অভ্যাস নেই। তাই বোরকা ছাড়া চলতে uneasy লাগে।
আমি বোরকা পড়তে পড়তেই তনু এসে আমাকে জড়িয়ে অনেক কান্না করলো। আর ওর সাথে যেন রাগ না করে থাকি ফোন দেই যেন। আর যে কত কথা তা শেষ করা যাবে না।
আমরা সবাই গাড়ীর কাছে এলাম।
আব্বু আম্মু আবারো সাহিলের হাতে আমার হাত রেখে বললো, আমাকে যেন দেখে রাখে। আমার কোন আচারনে যেন কিছু মনে না করে। কারন এখনো আমি অনেকটাই ছেলেমানুষ।
!
ভাবীরা এসে আমাকে বুঝালো আমি যেন ছেলেমানুষি না করি। বরের সব কথা মেনে চলি।
সবাই সবার মত করে আমাদের মূল্যবান উপদেশ দিলেন।
!
!
আমরা গাড়ীতে উঠে পরলাম। সবাই কান্নাকাটি করছে। কিন্তু আব্বু আর ভাইয়ার মুখ দেখে বেশি কষ্ট লাগছে।
সবার মত ওরা চোখের জলে কষ্টটা ব্যক্ত না করতে পারলেও ছলছল চোখ দুটো ওদের কষ্টের জানান দিচ্ছে।
!
যে পর্যন্ত ওদের দেখা গেল, সে পর্যন্ত গাড়ীর জানালা দিয়ে পিছনে তাকিয়ে রইলাম। একটা সময় গাড়ী মোড় ঘুরলো।
আর এভাবেই আমার জীবনের মোড়টা ও ঘুরে গেল।
সত্যিই মেয়েদের জীবনটা কতটা পরিবর্তনশীল।
!
!
আমারা যেতে যেতে অনেকটা পথ গেলাম। সায়লা খুব চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আমাকে হাসানোর জন্য। আর আমার বরটা খুব চুপচাপ বাধ্য ছেলের মত বসে আছে। আশে পাশে অন্য সবাই আছে তো তার জন্য মনে হয়।
এজন্যই তো বলি মিনমিনে মিচকে শয়তান।।
!
!
গাড়ি বাসার গেটের ভিতর ঢুকলো। আমার শ্বাশুড়ি মা তাড়াতাড়ি করে এলেন।
আমরা বাসার ভিতরে ঢুকলাম। এসে বাড়িতে ফোন দিয়ে জানালাম আমরা ভাল ভাবে পৌছে গিয়েছি।
তারপর বোরকাটা খুলে ফ্রেশ হলাম।
“!
এরই মধ্যে মাগরিবের আযান পরলো।
সাহিল দেখছি রেডি হয়ে কোথায় যেন যাচ্ছে।
আমাকে বললো, সে বাহিরে যাচ্ছে।
আমার কোন দরকার থাকলে বলতে পারি তাকে।
আমি না করলাম কিছু লাগবে না। আর বললাম নামায পড়ে গেলে ভাল হত না।
সে জানালো সে মসজিদে গিয়ে পড়ে নিবে। এই বলে সে বাইক নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো।
!
!
আমি ও নামায পড়ে মা বাবার রুমে গেলাম। তাদের সাথে কথা বললাম।
সায়লা আর আমি আমাদের রুমে এলাম।
সায়লা আমাকে তার ভাইয়ার সিক্রেটস বললো ।
সে নাকি খুব ভাল গান গাইতে পারে । কিন্তু কাউকে শোনায় না। একাএকা গুনগুন করে গান করে।
তাই তাকে গান গাইতে বললেই সে যেকোন কাজ করে দিবে।
যেমন গান শুনাতে বললেই, শুড়শুড় করে নিজেই #মশারি টানাবে।
ভাবতেই মনটা খুশিতে নাচ্ছে””””””””
!
!
মা চা খেতে ডাকলেন। আমরা চা নাশতা করলাম।
ড্রইং রুমে বসে বাবা টিভিতে খবর দেখছেন। আমরাও তার সাথে বসে টিভি দেখছিলাম “””
!
!
কলিং বেল বেজে উঠলো।
সায়লা দরজা খুলে দিল। আমি তাকিয়ে দেখি আমার বর একটা শপিং ব্যাগ হাতে করে সোজা রুমের ভিতর চলে গেলেন।
!
!
সায়লা আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো, মিষ্টিভাবী তোমার জন্য ভাইয়া কি যেন গিফট্ নিয়ে আসছে।
মনে হয় তোমাকে সারপ্রাইজ দিবে ।
!
!
এখন গরমকাল তাই খুব তাড়াতাড়ি অনেক রাত হয়ে যায়। সবাই এশার নামায পড়ে রাতের খাবার খেয়ে নিলাম।।
সাহিল খাবার খেয়ে রুমে চলে গেল। আমি মাকে একটু হেল্প করলাম। অবশ্য
মা না করছিল।
!
তারপর ঘড়িতে দেখি রাত ১০:৪৫ মিনিট।
আমি রুমে যাবো তখনি সায়লা বললো নিউজ আছে ভাবী””””
আমি বললাম কি””””””””
!
!
!

চলবে””””””‘

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here