মশারি পর্ব-১১

0
909

বর বউয়ের রোমান্টিক ঝগড়ার গল্প:

♠♥♠ #মশারি ♠♥♠

♣♣ পর্ব : ১১

গল্পকার :#গল্প বুড়ি তিলোত্তমা
!
!
!
!
হঠাৎ করে কারো জড়িয়ে ধরাতে সকালে ঘুমটা ভেঙ্গে গেল””””
চোখ মেলতেই তো আমি অবাক”””””””’
তনু তুই “””””!
কবে এলি ?
এখানে কখন এলি ?
সত্যি আমি তোকে অনেক miss করছিলাম রে দোস্ত।
বল কেমন আছিস ?
!
!
তনু হচ্ছে আমার লাইফের বেস্ট বন্ধু । ও আমার বোন বলেন বন্ধু বলেন সবি ও। কারন আমার নিজের কোন বোন নেই । আমরা ছোটবেলা থেকেই একসাথে বড় হয়েছি। দুজন মিলেই পাড় করেছি শৈশব,কৈশোরের দিনগুলো । আর পড়াশোনা করেছি একই স্কুল, কলেজ, এখন একই ভার্সিটিতে পড়াশুনা করছি তাও আবার একই সাবজেক্টে । এজন্য আমাদের অনেকে মানিকজোড় বলে।
সত্যি ও আমার লাইফের সুন্দর একটা অধ্যায়।♥♥♥
!
কিন্তু দুঃখের বিষয় ও আমার বিয়েতে থাকতে পারেনি। ও ওর ছোট খালামনির বাসা কুমিল্লাতে বেড়াতে গিয়েছিল। আমাদের দুজন দুজনের বিয়ে নিয়ে কত যে প্লান প্রোগ্রাম ছিল, তা আল্লহ ভাল বলতে পারবে। আমরা সব সময় চাইতাম আমাদের একই বাড়িতে বিয়ে হোক।
কিন্তু সে আশায় তো এখন গুড়ে বালি “”””’
!
!
তনু : ঐ আস্তে আস্তে প্রশ্ন কর । এত প্রশ্নের উত্তর একসাথে কিভাবে দিবো।
আর তুই বল, এটা তুই করতে পারলি আমার সাথে আর কিভাবে করলি ? আমাকে ছেড়ে বিয়ে করতে।
!
!
আমি: ঐ ফাজিল আমি কি জানতাম তুই বেড়াতে গেলে আমার বিয়ে হবে। তবে তো তোকে যেতেই দিতাম না ।
তুই তো আমার প্রশ্নের উত্তর দিলি না।
!
!
তনু : আমি কাল রাত ১০ টায় বাড়ি এসেছি। বিশ্বাস কর রাতটা যে কিভাবে পাড় করেছি। শুধু তোর সাথে সকালে দেখা করবো বলে।
তা তোর দিনকাল কেমন চলছে””” আগে সে টা বল “”
!
!
আমি : আমার আর দিনকাল, এই তো আছি মরা ধরা বাঘের মত ।
!
!
তনু হিহিহি করে হেসে বলছে, তা তো বুঝতেই পারছি। তোকে মশারির ভিতর ঘুমাতে দেখেই মনে হচ্ছে বাঘিনী খাঁচায় আটকে আছে।
!
!
আমি : তুই ঠিক বলেছিস।। আমার জীবন পুরাই শেষ।।
!
!
এর মধ্যে বড় ভাবী এসে লেকচার দেয়া শুরু করলো, ঐ তোর ঘুম হয়নি এখনো। সারারাত কি দুজন মিলে
চোর পুলিশ খেলছিস নাকি””””
বেচারা কখন যে ঘুম থেকে ওঠে একা একা ছাদে ছিল তা আল্লাহ জানে । নতুন জায়গা, ওর কি লাগবে না লাগবে। সে কি আমাদের বলতে পারে। তুই এসব বিষয় খেয়াল করবি না।
তা খেয়াল না করে পরে পরে ঘুমাচ্ছে !
!
!
আমি : এই যে বড় গিন্নী, সকালে একটু না হয় ঘুমিয়েছি। তাতে কি এমন হয়েছে। আর আমি তাকে কি বলছি, আপনি সকালে ওঠে ছাদে যান।
তার সাথে হাত পা সব আছে নিজের যা লাগবে নিজেই নিয়ে নিবে। এখানে আমাকে লাগবে কেন শুনি ।
!
!
তনু : ভাবী ওকে আর কিছু বলো না, বেচারি রাতে ঘুমাতে পারেনি তো। তাই সকালে ঘুমটা পুষিয়ে নিয়েছে। হি হি হি
!
!
আমি :ঐ তনুর বাচ্চা তনু সোফানইজ্জবা, মালেকা হামিরা, কটকটি তুই আমারে নিয়ে মজা করছিস। তোর একদিন আর আমার একদিন।
!
!
ভাবী : তোদের গাল গপ্পো শেষ হলে নাশতা করতে আয়। বেচারা না খেয়ে আছে। আর হ্যা আমাকে যেন দ্বিতীয় বার ডাকতে না হয়।
!
!
আমি : যাও আমরা আসছি।
তনু বিয়ে করিস না রে দোস্ত, বিয়ে করলে নিজের কোন মূল্যায়নি থাকে না। দেখনা আমার বাড়িতে আমার কোন ভ্যালু নেই।
এত বড় দুঃখ আমি কোথায় রাখি বল “””
!
!
তনু : ড্রামাকুইন তুই চুপ কর। নিজে তো বিয়ে করে ঠিকি লাড্ডু খাইতেছো “”””
আর আমারে না করতেছো । শয়তান একটা।
শোন #সাদি হলো দিল কা লাড্ডু , খাইলেও পোস্তায়, আর না খাইলেও পোস্তায়””””
তাই খেয়ে পোস্তানোই টা ই ভালো।
কি বলিস “””‘?
!
!
আমি : হুম । বুঝছি তো তোরে বিয়া দেয়া ফরয হয়ে গিয়েছে। হিহিহি
!
!
দুজনে মিলে বেশ কিছুক্ষন কথা বললাম। কিন্তু কথা তো শেষ হওয়ার নামই নিচ্ছে না। এভাবে বলতে থাকলে মনে হয় ৩ দিনেও কথা ফুড়াবে না।
তাই তাড়াতাড়ি উঠলাম। বলা তো যায় না ভাবী এসে আবার যদি ঝারি দেয়া শুরু করে।
!
তাই তনুকে বসিয়ে রেখে ফ্রেশ হয়ে, কালো পাড়, কমলা রংএর জমিনের টাংগাইলের হাফ সিল্ক জামদানি শাড়ি পড়লাম। শাড়ি পড়তে তনু আমাকে হেল্প করলো। আর বললো, তোর বরের তো চশমার পাওয়া বাড়াতে হবে। তোকে দেখলেই তো ৪৪০ ভোল্টের ঝোটকা খাবে।
হিহিহি”””
!
আমরা ডাইনিং রুমে এলাম। এখানে দেখি প্রায় সবাই ই আছে। এর মাঝে বাবাকে ও দেখলাম, বাবার সাথে কথা বললাম। বাবা আগের থেকে অনেক ভাল আছে। বাবার সাথে কথা বলতে বলতে খেয়াল করলাম, সাহিল আর তনু বেশ হেসে হেসে কথা বলছে।
ওরা এমন ভাবে কথা বলছে যেন, দুজন দুজকে আগে থেকেই চিনে।
কারন তনু অপরিচিত কারো সাথে এভাবে কথা বলে না।
আবার ভাবলাম ামার বর বলেই মনে হয় বলছে।
!
ভাবীরা সবাইকে সরিয়ে দিয়ে, আমাদের টেবিলে বসতে বললো। এর মাঝে দেখছি সায়লা চলে এসেছে।
সায়লা আমার অনেক প্রশংসা করলো। আমিও ওকে thanks জানালাম।
ভাবীরা খাবার পরিবেশন শুরু করেছে । কিন্তু বেচারা সাহিলের মুখে স্পষ্ট ভয়ের রেশ দেখা যাচ্ছে।
বড় ভাবী আসস্থ করলো কোন চিন্তা নেই। তুমি তোমার মত করে খাও।
আমরা সবাই খাবার শেষ করে ছাদে গেলাম।
ছাদে আমার গাছগুলোকে দেখলাম। সায়লার তো আমার বাগান খুব পছন্দ হয়েছে।
বাবা আবার ছাদে আমরুপালি আম লাগিয়েছে। প্রচুর পরিমানে আম হয়েছে। কিন্তু এখনো পাঁকা শুরু করেনি।
!
আমাদের সাথে বিটল দুটোও হাজির হয়েছে, তাজ আর তাহা। দুটো তো সবাইকে জ্বালিয়ে মারছে ।
ছোট ভাইয়া এসে দুটোকে নিয়ে গেল।
!
!
আমি আর বেশিক্ষন ছাদে থাকতে পারছিনা। কারন একে তো গরমের দিন আবার তার মধ্যে শাড়ী পড়ছি।
তাই আমি আর সায়লা রুমে চলে এলাম।
তনু আর সাহিলের আসার কোন খবর ই নেই।
আমি তো গরমে অস্থির হয়ে যাচ্ছি। তাই ফুল স্পিডে ফ্যান ছাড়লাম আর শাড়ীর আচঁলটা কোন রকমে শরীরে রেখে বিছানায় বসলাম।
!
তনু আর সাহিলের আসার শব্দ পেলাম। কি আর করার আবার শাড়ীর আচঁল ঠিক করলাম।
!
দুজনে দেখছি খুব হাসাহাসি করছে। মনে হয় দুজনের কত কালের পরিচয়।
আমার তো তনুর চুল ছিড়তে ইচ্ছে করছে। আমাকে ছেড়ে ঐ লোকটার সাথে এত কিসের কথা।
আমিও বললাম কি রে আমার জন্য কি তোর সময় আছে ?
!
!
তনু : তোর জন্য সময় কি রে? তোর জন্য তো জান হাজির।
!
!
আমি মনে মনে বলি, চুপ থাক শয়তান। তা তো দেখছি, আমার জন্য কত সময় আছে। আর জানের কথা না হয় বাদ দিলাম।
!
!
সাহিল : কেমন যেন পোড়া পোড়া গন্ধ পাচ্ছি। মনে হয় কারো দিল জ্বলছে ।
!
!
আমি : মানে “””” আপনি কি বলতে চাইছেন। আমার এত দিল টিল পোড়ে না। হুম””””মুখ ভেনচি কেটে।
!
!
সাহিল : আমি কি আপনার কথা বলেছি””””’
কথায় বলে না,
#চোরের মন পুলিশ পুলিশ””””””
!
!
আমার রাগে মনে হচ্ছে ঘুষি দিয়ে লোকটার লম্বা নাকটা ভোঁতা করে দেই।
!
!
তনু : থাম তোরা থাম ! বুঝেছি, ইস্ জরি বহোত যাচে গি”””””
সাহিল ভাইয়া তুমি আমার বান্ধুবীকে ক্ষ্যাপাবা না। অনেক সাধ করে ওকে তোমার কাছে দিয়েছি।
যদি তুমি ওকে কষ্ট দাও তবে তোমার কিন্তু খবর আছে বলে দিলাম”””‘
!
!
আমি তো তনুর কথা শুনে মনে হয় আকাশ থেকে পরলাম। তার মানে দুজন দুজনকে খুব ভাল ভাবে চিনে। আর এজন্য আমার সম্পর্কে এত ডিটেলি সাহিল জানে।
আমি ২ এ ২ চার করে ফেললাম।
!
তনু আমার সাথে এটা কি করে করলো। একটা খাটাস মার্কা লোকের গলায় আমায় ঝুলিয়ে দিল।
রাগে আমি জাস্ট চোখে দেখছি না।
!
তনু সাহিল আর সায়লাকে বাহিরে যেতে ইশারা করলো”””
ওরা বাহিরে চলে গেল।
!
!
এরপর শুরু হলো আমার যুদ্ধ।।
ঐ তুই আমার সাথে এটা করলি “””‘
কি করে করলি””””‘
আমি কি তোর কোনদিন কিছুই ছিলাম না””””””‘
তুই দোস্ত না দুশমন””””
ইত্যাদি ইত্যাদি
!
!
তনু : প্লিজ! তুই আমাকে ভুল বুঝিস না দোস্ত।
তুই তো এটা বিশ্বাস করিস আমি কোনদিন তোর খারাপ চাইবো না।
বিশ্বাস কর সাহিল ভাই খুব ভাল ছেলে। আমি তাকে প্রায় ১০ বছর ধরে চিনি।
!
সাহিল ভাই আমার মামাতো ভাই মাহির ভাইয়ার বন্ধু। তাই তাকে আমি খুব ভাল করে চিনি।
!
!
আমি : তুই তাকে কি করে চিনিস সে টা বড় কথা না।
সে আমাকে কি করে চিনে সে টা আগে বল। আর আমাদের বিয়ে কি করে হল।?
!
!
তনু : বলছি সব বলছি! তবে শোন! আমি ৬ মাস আগে মাহির ভাইয়াদের বাসায় গিয়ে ছিলাম। তখন সাহিল ভাই তোর ছবি আমার ফোনে দেখে। তারপর থেকে সে আমাকে বলতো তোর সাথে প্রেম করিয়ে দেওয়ার জন্য। আমি বলেছি আমার বান্ধুবী প্রেম করা পছন্দ করে না।
প্রথমে ভাবতাম আমার সাথে মজা করছে। তারপর দেখলাম সে সিরিয়াসলি বলছে। একদিন সে তোকে দেখতে চাইলো । ঐ যে সেদিন, যে দিন তুই আর আমি শপিং করলাম, তুই একটা পান্জ্ঞাবী পছন্দ করলি। তারপর আমরা ফুচকা আর আইসক্রীম খেলাম। তুই ওজন মাপলি।
তোর মনে পরছে ? সেদিন সাহিল ভাই তোকে চুপিচুপি দেখছিল।
!
!
আমি : ও সব বাদ দে! আগে বল তুই আমার ছবি আর নাম্বার ঐ লোকটাকে দিয়েছিস কেন ?
!
!
তনু : তুই তো জানিস। ভাইয়ার মা বাবা দুজন হজ্বে যাবেন। তারা ছেলের বিয়ের জন্য পাত্রী খুঁজছেন। তাই ভাইয়া তোর ছবি চাইলো তার মা বাবাকে দেখানোর জন্য।
!
!
আমি : ছবি চাইলো বলে তুই দিয়ে দিলি ।
!
!
তনু : তুই চুপ থাক।! আমাকে বলতে দে !
আসলে তোর জন্য তো চাচ্চু ( আমার বাবা) ছেলে খুজঁছিল। আমার আব্বুকে বলছে। তাই আমি আমার আব্বুকে সাহিল ভাইয়ার ফ্যামেলির কথা বললাম। আব্বু সব শুনে তোর আর সাহিল ভাইয়ার ফ্যামেলির সাথে মিট করিয়ে দেয়। আর আমি তো জানি,
তোর কারো সাথে রিলেশন নেই। তাই তোর পরিবার থেকে কোন পাত্র ঠিক করলে তুই অমত করবি না।
!
!
আমি : সব বুঝলাম তুই আমার নাম্বার দিয়েছিস কেন ?
!
!
তনু : ওরে জেবন নে জেবন! আমি কারে কি বলতেছি। গাধী তোর ছবি না দেখলে তোকে পছন্দ করবে কিভাবে আর তোর সাথে কথা বলতে চাইলে নাম্বার ছাড়া কথা বলবে কিভাবে।
!
!
আমি : ঐ কুত্তি এত কিছু ঘটালি। কিন্তু তুই আমারে কিছু বলিস নি কেন ?
!
!
তনু : আমি ভাবছি তোরে বলবো । কিন্তু সব কিছু এত ফাস্ট হল কিছু বলতেই পারলাম না। তুই যে ঝগড়ুটে বললে তুই যদি আমার চুল টেনে ছিড়তি।
আর ভাইয়া বলতে নিষেধ করেছে। তাই বলা হয় নি বিশ্বাস কর !
!
!
আমি : কেন রে এখন বুঝি তোর চুল টেনে ছিড়তে পারবো না। আর তোর কাছে আমার চেয়ে তোর পাতানো ভাই বড় হল।
!
!
কতক্ষন ইচ্ছে মত ওর সাথে ঝগড়া করলাম।। অবশেষে ও আমাকে বুঝাতে ও ক্লান্ত হল । তারপরেও ও ওর মিশন চালিয়ে গেল।
কিন্তু তনুর ওপর আমার রাগটা রয়ে গেল।
কারন হুট করে এত কিছু ঠিক হজম করতে পারছি না।
যাই হোক এ বুঝাপরা হতে সময় লাগবে।
!
!
ছোট ভাবী এসে বলল তাড়াতাড়ি বাবার রুমে আয় । আমি ভয় পেলাম বাবার কিছু হলো না তো “””””””
বাবার রুমে গিয়ে দেখি………..
!
!
!
চলবে””””””‘

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here