মুহূর্তে পর্ব-১৭

0
729

#মুহূর্তে
পর্ব-১৭
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা

বিছানার এক কোণে বসে আছে এক কন্যা বধূ সেজে। তার চারপাশে হৈ-হুল্লোড়ে মেতে আছে। গান বাজনা চলছে বাহিরে। অথচ তার চেহেরায় উদাসীনতার ছাপ। ঠোঁটের কোণে নেই কোনো হাসির ঝলক। কেবল নিথর হয়ে রুমের এক কোণায় বসে আছে সে। তার কাজিনরা হাজারো গল্পে মেতে ছিলো। তারা ভাবছে কবিতা বাবার বাড়ি থেকে বিদায় নিবে এ-কারণে তার মন খারাপ। অথচ সে বুকের ভেতর কত বড় পাথর রেখে আজ বউ সেজেছে তার ধারণা কারও নেই। যার সাথে সে তার কষ্ট ভাগ করবে এমনও কেউ নেই। আর দুইজন কাছের মানুষ তাহিরা এবং অনু, তাদেরও আসতে দেয় নি কবির। কবিরের মতে তাদের সায় পেয়েই কবিতা তীর্থের সাথে সম্পর্ক করেছে। এমনকি তাহিরাকে বাড়ির দরজা থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে কবির। অথচ তাহিরাকেও এই বাড়ির মেয়ে বলা হতো একসময়।

বর আসার খবর শুনে সবাই দৌড়ে যায় রুম থেকে। কিন্তু কবিতা এক ইঞ্চিও নড়ে। সেখানেই বসে রয় নিথর পাথরের মতো। কিছু সময় পর রুমে প্রবেশ করে কবিতার মা-বাবা। মা কবিতার গলায় একটি স্বর্ণের হার পরিয়ে দিয়ে বলে, “তোর বাবার পক্ষ থেকে উপহার এইটা। তোর জন্য অনেক আগে কিনে রেখেছিলো।”
কবিতা তখনও কিছু বলে না।
মা আবারও বলে, “তুই আজও মুখ ফুলিয়ে আছিস? দেখ তোর ভাই খারাপ কোনো সিদ্ধান্ত নিবে না তোর জন্য। কবির তোকে অনেক আদর করে।”
“হ্যাঁ, তাইতো আমাকে বিক্রি করতে চাইছে।” কবিতার কথা শুনে রাগ উঠে যায় তার মা’য়ের, “এইসব কী আজেবাজে কথা বলছিস তুই? আমারই দোষ, আমি আদর দিয়ে তোর মুখ বড় করেছি। তাই আজ এই দিন দেখতে হচ্ছে। ভুলেও মেহমানদের সামনে বাজে কিছু বলবি না।”
কবিতা শীতল দৃষ্টিতে তাকায় মা’য়ের দিকে। প্রশ্ন করে, “জয়ের বাবা এই বিয়ের পরিবর্তে তোমার বড় ছেলেকে প্রমোশনের ওয়াদা করে নি?”
কথাটা শুনতেই মা’য়ের মুখের রঙ উড়ে যায়। আঁতকে উঠে কবিতার বাবা, “কবিরের মা কবিতা কী বলছে এইসব? এই কথাটা কী সত্যি?”
“মানে শুধু আত্নীয় হিসেবে বলেছে সাহায্য করবে। বিয়ের পরিবর্তে না।”

কবিতা উঠে দাঁড়ায়। তার গলার হারটা খুলে তার বাবার হাতে দিয়ে বলে, “তোমার কিছু বলার দরকার নেই বাবা। আজ পর্যন্ত যেমন সব কিছুতে রোবটের মতো চুপ থেকে দেখেছ আজও তাই করো। হয়তো শুনতে খারাপ লাগবে বাবা কিন্তু তুমি টাকা দিয়ে আমাদের বড় করা ছাড়া কিছুই করো নি আমার জন্য। আমি তো ছোট থেকে তোমার ভালোবাসাও পেলাম না। আমি হওয়ার পূর্বেই তুমি বিদেশ চলে গেলে। তুমি যখন ফিরে এলে তখন আমি অনেক খুশি ছিলাম কিন্তু পরে যেয়ে মনে হল তুমি থাকাটা এবং না থাকাটা একই। কখনো অনুভব হয় নি তুমি আমার কাছে। তুমি ছোট থেকে ভুল সঠিক কোনো কিছুতে কথা বলো না। এমনকি যখন আমাকে শর্ত দিয়ে বিয়ে করানো হচ্ছিল তখন তুমি কিছু বলতে পারলে না, যখন আমাকে তোমার ছেলে মেরেছিল তখনও কিছু বললে না, যখন আমাকে এমন ছেলের সাথে বিয়ের ঘোষণা করা হল যে চরিত্রহীন তখন কিছু বলো নি। আজ তোমার মুখে প্রতিবাদের সুর মানায় না।”

মা কবিতাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে বললেন, “নিজের বাবার সাথে কেউ এভাবে কথা বলে?”
“সত্য কথা কটুই হয়। যেমন তোমাকে বলছি তুমি তোমার বড় ছেলের ভালোবাসায় অন্ধ। একটা কথা বলো, আমাকে কী পেলে লালন-পালন করেছিলে ছেলের প্রমোশনের জন্য বিক্রি করার জন্য?”
“বেয়াদব মেয়ে।” সজোরে চড় মারে মা কবিতার গালে। আরও কয়টা মারতে নিলেই তার বাবা এসে ধরে নেয় তাকে। মা ক্রোধের সুরে বলে, “তোর মত মেয়েকে জন্ম দেওয়া ভুল হয়েছে আমার। বেয়াদবি ছাড়া কিছু শিখে নি। সারাক্ষণ মুখের উপর উওর দেয়। মেয়ে হয়ে জন্ম নিয়েছিস, মেয়েদের মুখের উপর কথা বলা মানায় না। তোর ওই ছেলের সাথে প্রেম করার আগে পরিণাম মাথায় আসে নাই? আরে সব ওর নাটক ওই ছেলের সাথে বিয়ে করতে পারে নি বলে। ওর আফসোসও নেই যে ওই ছেলে ওর বড় ভাইয়ের জন্য হাত তুলেছে।”
“হ্যাঁ এই নিয়েই তো তোমার মা, ছেলের জেদ। এর পরিবর্তে নিজের মেয়ের জীবন নষ্ট করে দেও কার কি? তীর্থকে হারানোর যত কষ্ট আমার হৃদয়ে ছিলো তা শতগুণ গতরাতে বেড়ে গেল। যখন আমি আমার আপন বড় ভাইকে ফোনে কথা বলতে শুনলাম, যে আমার এই বিয়ের পরিবর্তে উনি প্রমোশন পাচ্ছে। বাহ! মা, আমি তোমাদের উপর এই কারণে রাগ না যে তোমরা আমাকে তীর্থের সাথে বিয়ে দেও নি। তোমরা আমার পরিবার। আমার জীবনের জন্য ভালো খারাপ তোমরা বুঝো। কিন্তু তা বুঝেও কেবল নিজের স্বার্থের জন্য তোমরা আমার জীবন নষ্ট করছ। আমি জানি ভাইয়া তার অপমানের প্রতিশোধ এবং তার লাভের জন্য আমাকে জয়ের মতো এক নেশাখোর এবং মেয়েবাজ ছেলের সাথে বিয়ের বন্ধনে বাঁধছে। কিন্তু আমি বিয়েটা করব।” শক্ত হয়ে বলে কবিতা। তার দৃষ্টি স্থির। অথচ সে চোখে জমে আছে জল। হঠাৎ-ই তার গাল বেয়ে জল পড়তে থাকে। কিছু তার দৃষ্টি নম্র হয় না। সে কঠিন গলায় বলে, “এই বিয়ের সাথে এই পরিবারের সাথে আমার সব সম্পর্ক শেষ। আজকের পর থেকে আমি তোমাদের নিজের চেহেরাও দেখাব না। ভেবে নিও তোমাদের মেয়ে মরে গেছে।”

কথাটায় বড়সড় ধাক্কা লাগে কবিতার মা’য়ের। সে শিউরে ওঠে কথাটা শুনে। অস্থির হয়ে তার স্বামীকে বলে, “এই মেয়ে পাগল হয়ে গেছে। কী বলছে এইসব? তুমি শুনছ ও কী বলছে?”
এতক্ষণে রুমে ঢুকে আবির। আবিরকে দেখে তার মা ছুটে যেয়ে তার হাত ধরে বলে, “আবির দেখ মেয়েটা জেদের চোটে যা তা বলছে। ও না’কি আমাদের জন্য মরে গেছে। এইসব কোনো কথা? কোন মেয়ে এইসব বলে?”
“যে মেয়েকে তোমার ছেলে প্রতিশোধের জন্য অশিষ্ট ছেলের হাতে তুলে দিচ্ছে।” আবির নির্দ্বিধায় বলল। কবিতা মা অবাক হয়ে চাইলেন তার ছেলের দিকে, “তুইও? তুই তো কখনো এমন ছিলি না।”
“দেখে আসো তোমার ঘরের হবু জামাই সম্ভবত গতরাতে নেশা করেছে। বরকে এমন অবস্থায় দেখায় তোমাদের কতটা সুনাম হচ্ছে তাও শুনে এসো। যাও।”
কথাটা শুনতেই কবিতার বাবা দ্রুত যায় হলরুমের দিকে।
মা কিছুক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আবিরের দিকে। তারপর দ্রুত চলে যায়।

আবির কবিতার সামনে এসে দাঁড়ায়। মাথা নিচু করে বলে, “আমি আমার বন্ধুদের দিয়ে তীর্থ ও তার বন্ধুদের জেল থেকে ছাড়িয়ে প্রথমে ডাক্তারের কাছে পাঠিয়েছি ব্যান্ডেজের জন্য। তীর্থের হাতও ভেঙে গেছে, প্লাস্টার করা হয়েছে। অনেক মারা হয়েছে না’কি তাদের। তারপর তাদের বাসে উঠানো হলো। ধ্রুব ও তাহিরা তাদের সাথে আছে। তাহিরা অনেক আসতে চেয়েছিলো ভাইয়া অনেক বাজে ব্যবহার করে তাকে তাড়িয়ে দেয়।”
“ভাইয়া তুমি আমার দিকে তাকাচ্ছো না কেন?”
“কারণ তোর সাথে চোখ মিলানোর সাহস আমার নেই। বড় ভাই হিসেবে তোকে রক্ষা করাটা আমার দায়িত্ব ছিলো কিন্তু আমি….” কবিতা আবিরের কথা কেটে বলল, “তুমি যথেষ্ট করেছ ভাইয়া। আমি জানি। এই ঘরে কেবল তুমিই আমার পাশে দাঁড়িয়েছ। কবির ভাইয়ার বিরুদ্ধে জীবনে প্রথমবার, তাও আমার জন্য। কিন্তু তোমারও হাতে কিছু নেই। ভাইয়া আমি প্লিজ একবার তীর্থের সাথে কথা বলব।”
আবির তাড়াহুড়ো করে তার ফোনটা বের করে কবিতাকে দিলো।

“আমি কখনো ভাবতেও পারি নি কবির ভাইয়া রাগে কবিতার জীবন নষ্ট করে দিবে।” তাহিরা বলল। তাহিরার পাশেই বসা ছিলো ধ্রুব। তার কন্ঠ রাগান্বিত, “ওই ব্যাটা যখন তোমার অপমান করেছে মন চাইছিলো ওর আমের খোঁসার মতো নাকটা ঘুষি মেরে ভেঙে দেই। তুমি কিছু করতে দিলে না।”
তাহিরা, ধ্রুব, তীর্থ ও তার বন্ধুরা বাসে বসে আছে। ঢাকার জন্য রওনা দিচ্ছে তারা। তীর্থ ও লিমনের পিছনের সিটেই বসেছে তাহিরা ও ধ্রুব। তাদের দুইজনের কথোপকথন স্পষ্ট শুনতে পারছিলো তীর্থ। এমনিতেই সে কষ্টে ভুগছে। এর উপর দুইজনের কথোপকথন শুনে বেদনা আরও বাড়ছিলো তার। সে জানালার বাহিরে তাকাল। এক দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো তার বুক চিরে। আজ সকালেই তাদের ছাড়া হয়েছে জেল থেকে। তীর্থ সেখান থেকে সবার আগে গেল কবিতার বাসায়। সেখানে বিয়ে হচ্ছে না। কোথাও হচ্ছে তা কেউ বলছেও না। কেউ জানে না। পাগলের মতো কিছুক্ষণ খুঁজলো কবিতাকে লাভ হলো না। এত বড় জায়গায় কাউকে খোঁজা সম্ভব না। তারপর ধ্রুব তাকে জোর করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেল ব্যান্ডেজ করাতে। সে আজ জানলো কবিতা তার জন্য এই বিয়েতে রাজি হয়েছে। এই কথাটা জানার পর থেকে তার বুকের পীড়ন আরও বাড়লো।

পিছনের সিট থেকে ফোনের রিংটোনের শব্দ পাওয়া গেল। তারপর পাওয়া গেল তাহিরের কণ্ঠ, “হ্যালো আবির ভাইয়া, বলো। বিয়ে কী আসলেই হয়ে গেছে?”
তীর্থ চোখ দুটো চেপে বন্ধ করে নিলো। বুকের ভেতরটা মুচড়ে উঠে তার। কবিতার বিয়েটা আসলেই হয়ে গেছে? কবিতা আসলে অন্যকারো হয়ে গেছে?

তাহিরার কন্ঠ আবারও শোনা গেল, “কবিতা… কবিতা তুই! কেমন আছিস তুই?”
চমকে উঠে তীর্থ। চোখ দিয়ে স্তব্ধ হয়ে রয় মুহূর্তের জন্য। তারপর জলদি করে উঠে তাহিরার হাত থেকে ফোন নিয়ে বলে, “কবিতা… ”
ওপাশ থেকে কবিতার কান্নাভেজা কন্ঠ পেল তীর্থ, “তীর্থ তুমি কী বেশি ব্যাথা পেয়েছ? ভাইয়া বলল তোমার ব্যান্ডেজ করা হয়েছে। তোমার না’কি হাতও ভেঙে গেছে। বেশি ব্যাথা করছে তোমার?”
“হুম, তবে এইটা ভেবে যে আমার কারণে আজ তুমি অন্যকারো হয়ে যাচ্ছ। আমার বুকে প্রচন্ড ব্যাথা হচ্ছে।”
কবিতার কান্নার শব্দ বাড়লো। সে বলে, “তুমি নিজের খেয়াল রেখো তীর্থ। শুনো ভুলেও পাল্টাবে না। আগের মতো কোনো খারাপ জিনিসে জড়াবে না। তুমি আমার থেকে ভালো কাওকে পেয়ে যাবে। চিন্তা করো না।”
“কিন্তু আমার যে কেবল তোমাকেই চাই।”
“আমাদের ভাগ্যে নেই।”
“তুমি আমার কাছে এসে পড় কবিতা। তোমার ভাই আমার সাথে কি করবে আমার কিছু আসে যায় না। তুমি কেবল হ্যাঁ বলেছিলে কারণ তোমার ভাই তোমাকে হুমকি দিয়েছে যদি তুমি বিয়ের জন্য হ্যাঁ না বলো তাহলে আমাকে বড় কোনো কেইসে ফাঁসিয়ে দিবে। আমার এতে কিছু আসে যায় না। আর আমি এখন জেল থেকেও বাহিরে। তুমি আমার কাছে এসে পড়ো।”
“না, তীর্থ এ হয় না।”
“কেন না?”
“কারণ এখন কেবল তোমার আমার বিষয় না। আমি এই মুহূর্তে পালিয়ে যেয়ে আমার বাবা মা’য়ের সম্মানের বিসর্জন দিতে পারব না।”
কিছু সময় চুপ রইলো তীর্থ। তারপর বলল, “আর আমাদের ভালোবাসার? তুমি আমাদের ভালোবাসার বিসর্জন দিতে পারবে?”
“আমি তোমাকে সারাজীবন ভালোবেসে যাব। ভালোবাসা অর্থই তো মিলন নয়, তাই না? ভালোবাসা তো অনুভূতি, কাছে থেকে হোক অথবা দূরে থেকে হোক ভালোবাসা যায়। ভালোবাসার জন্য তোমাকে আমার পেতেই হবে এমনটা নয়।”
তীর্থ অনুভব করলো তার চোখ ভিজে আসছে। এক ফোঁটা জল তার গাল গড়িয়ে পড়লো। সে কী কাঁদছে? গালে হাত ছুঁইয়ে দেখে তীর্থ। এক বয়স শেষে তার মনে হয় না সে কেঁদেছে। দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে সে। সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করলো সে। কবিতা ফোনের ওপাশ থেকে বলল, “তীর্থ আমায় ওয়াদা করো, যদি কখনো কোনো মেয়ে তোমায় খুব ভালোবাসে তাহলে আমার জন্য তুমি নিজের মনের দরজা বন্ধ করে রাখবে না। তাকে আপন করে নিবে। ওয়াদা করো।”
তীর্থ ওয়াদা করে না। প্রশ্ন করে , “কবিতা তোমার বিয়ে কখন?”
“জানি না। বর পক্ষ না’কি এসেছে। ডাক দিবে।” মৃদুস্বরে বলে কবিতা।”
“কবিতা তোমার স্বামীকে বলবে, ও যদি কখনো তোমাকে এক বিন্দুও কষ্ট দেয় তাহলে আমি তার খুন করে ফেলব।কেউ তোমাকে কষ্ট দিতে পারবে না।” তারপর কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবারও তীর্থ আবদারের সুরে বলে, “অন্যকারো স্ত্রী হবার পুর্বে একবার ভালোবাসি বলো না।”
কিছুসময় কোনো কথাই বলে না কবিতা। তারপর সে কাঁপানো গলায় বলে, “ভালোবাসি তীর্থ, খুব ভালোবাসি।”
.
.
পাঁচ বছর পর,
(২০১৮)

বড় একটি কক্ষে একজন পুরুষ প্রবেশ করতেই আশেপাশের সবাই দাঁড়িয়ে যায়। তার হেঁটে সময় যতটা মানুষের পাশ কাটিয়ে যায় সবাই তাকে সম্মানের সাথে ‘গুড মর্নিং’ জানায়।
“তীর্থ স্যার, আজ সাড়ে এগারোটায় মিটিং আছে কিন্তু ধ্রুব স্যার আসে নি এখনো।” তীর্থের পাশে দাঁড়ানো একটি অল্পবয়সী ছেলে কথাটি বলে। তীর্থ শীতল দৃষ্টিতে তাকায় তার দিকে। কিছু না বলে নিজের কেবিনের দিকে রওনা দেয়। ছেলেটিও তার পিছু নেয়।

তীর্থ চেয়ারে বসে গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করে, “ধ্রুব আসে নি তুমি এই কথা আমাকে কেন জানাচ্ছ? ওর সাথে যোগাযোগ করাটা তো তোমার দায়িত্ব তাই না?”
ছেলেটার নাম রাহাত। সে ভয়ে এক ঢোক গিলল। প্রায় তিন বছর ধরে সে তীর্থের সাথে কাজ করছে অথচ এখনো তার থেকে বাঘের মতো ভয় পায় সে। সে আমতা-আমতা করে বলল, “স্যার উনি কল ধরছে না। কন্টেক্ট ফাইনাল করার জন্য আপনাদের দুইজনে স্বাক্ষর লাগবে।”
তীর্থ বিরক্তির দৃষ্টিতে তাকায় রাহাতের দিকে। তারপর ফোনটা বের করে ধ্রুবকে কল করার জন্য। চার বছর হলো এই ব্যবসা শুরু করেছে সে এবং ধ্রুব অংশীদার হিসেবে। আজ তাদের ব্যবসা সফল। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় তাদের কারখানায় তৈরি করা পোশাক ও গহনার দোকান আছে। তাদের কাজের চাপ বাড়লো কিন্তু ধ্রুবর মধ্যে সে অলসতা ভাবটা আজও কমলো না।

ধ্রুব ঘুমাচ্ছিলো। ঘুমের মধ্যেই কারও নরম হাতের স্পর্শ পায় সে। সে হাতটা ধরে কাছে টনে বুকে জড়িয়ে ধরে। তাহিরা বিরক্তি নিয়ে বলে, “উফফ তুই ঘুম থেকে কী উঠবি না।”
“এমন করিস কেন? ঘুমাতে দে না।”
“সকাল এগারোটা বাজে। নবাবেরাও এতক্ষণ ঘুমায় না মনে হয়। তীর্থ কল দিয়েছে তোর না’কি মিটিং আছে সাড়ে এগারোটায়। আমি অফিসের কাজ ছেড়ে তোকে উঠাতে এসেছি। জলদি উঠ।”
ধ্রুব তাহিরার হাত ধরে থাকে একটানে কাছে নিয়ে আসে। তার দিকে তাকিয়ে ঘুম মেশানো মুগ্ধ কন্ঠে বলে, “ঘুম থেকে উঠতেই একটি রূপসীকে নিজের বাহুডোরে পেলে কার অফিসে যেতে মন চাইবে?”
“তো মহারাজ আপনার কী করবার ইচ্ছা?”
ধ্রুব তাহিরার কোমর জড়িয়ে ধরে বলে, “আমার ইচ্ছা তো আগামী মাস থেকে পূরণ হবে। আগামী মাসে বিয়ের পর থেকে তোকে নিজের থেকে দূরই করব না। জাহান্নামে যাক ব্যবসা বাণিজ্য। আমি তো সারাক্ষণ কেবল তোকে আদর করব।”
তাহিরা ধ্রুবকে দূরে সরাতে চাইলো। ধ্রুবও ন্যাছোড়বান্দা। সে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তাহিরাকে। বলে, “আমার বিশ্বাস হচ্ছে না অবশেষে আমাদের বিয়ে হবে। আজ তোর বিয়ের শাড়ি কিনতে যাই চল।”
“দুইটা না কিনলাম। একটা অনুষ্ঠানে কয়টা শাড়ি পড়ব আমি?”
“এইজন্যই তো বললাম হলুদ, মেহেদী, বিয়ে, বৌভাত সব করি কিন্তু তুই একটা অনুষ্ঠানের বেশি তো করবিই না।”
“আমি তো কোর্ট ম্যারেজই করতাম। তুই জেদ করায় একটায় মানলাম। আমার কাছে এই অনুষ্ঠানগুলো বিরক্তকর লাগে। আচ্ছা এইসব কথা তোর দেরি হয়ে যাচ্ছে, উঠে এইবার যা অফিসে।”
আলতো করে তাহিরার মুখে এসে লাগা চুলগুলো সরিয়ে ধ্রুব বলে, “আরেকটু দেখে নেই তোকে।”
“অর্ধেক দিনই তো দেখিস। আর কত দেখবি?”
“তোকে প্রতিমুহূর্ত দেখলেও কম লাগে। না দেখলে মন ভালো লাগে না, তোকে দেখলেও চোখের তৃষ্ণা মিটে না।”

চলবে….

[বিঃদ্রঃ ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। গল্পটা কেমন লাগছে জানাবেন। ধন্যবাদ।]

সকল পর্ব

https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=381227816949915&id=100051880996086

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here