মুহূর্তে পর্ব-১৮

0
652

#মুহূর্তে
পর্ব-১৮
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা

“তোকে প্রতিমুহূর্ত দেখলেও কম লাগে। না দেখলে মন ভালো লাগে না, তোকে দেখলেও চোখের তৃষ্ণা মিটে না।”
তাহিরা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তাকায় ধ্রুবর দিকে। তার ঠোঁটের কোণে এঁকে উঠে এক মন ভোলানো হাসি। ধ্রুবর কপালে আলতো করে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিলো সে।
তারপর বলল, “সারাজীবন এভাবেই আমাকে ভালোবাসবি তো?”
“সন্দেহ আছে?”
তাহিরা মাথা নাড়ায়, “না। কিন্তু এখন উঠে তো অফিসে যা, নাহয় তীর্থ আবার আমাকে ফোন দিয়ে বকবে। আর সাথে অফিসে স্যারের কাছেও বকা খাব।”
“সবাই আমার প্রেমের দুশমন। ধ্যুর।”
বিরক্তি নিয়ে ধ্রুব তাহিরাকে ছেড়ে উঠে যায়। তাহিরাও উঠে জলদি করে নাস্তা বানায় ধ্রুবর জন্য।

যদিও ধ্রুব একটু দেরিতে পৌঁছায় অফিসে কিন্তু মিটিং ভালোই গেল। মিটিং শেষে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে ধ্রুব। আর বলে, “ভাই কত ঝামেলা এইসব কাজে!”
তীর্থ ল্যাপটপে কাজ করছিলো। কথাটা শুনে ভ্রু কুঁচকে তাকায় ধ্রুবর দিকে। আর বলে, “সকাল এগারোটা পর্যন্ত ঘুমিয়ে মিটিং এ দেরিতে আসাকে ঝামেলা বলে না।”
বিরক্তি নিয়ে তীর্থ তাকায় ধ্রুবর দিকে। আবার চোখ নামিয়ে নেয়।

ধ্রুব নড়েচড়ে বসে, “আরে ভাই এসে স্বাক্ষর তো সময়ে করলাম তাই না? তুই তো জানিস এইসবে আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই। আমি বলেছিলাম তোকে। সম্পূর্ণ মালিকানা তুই নিয়ে নে।”
“যখন আমার প্রয়োজন ছিলো তখন তুই মূলধন সম্পূর্ণ দিয়েছিলি। আর আজ যখন আমাদের ব্যবহার সফল তখন সব ভুলে যাব? অসম্ভব।”
“তোর যত জীবনের নীতি। আচ্ছা এইসব বাদ দে, আজ পলাশের বোনের বিয়ে। মনে আছে তো? যেতে হবে।”
“তুই যা, আমি যাবনা। আমার কাজ আছে।”
“ভাই তোর কাজ একদিন অপেক্ষা করতে পারব। ওর বোনের বিয়া না। পলাশ অনেক মন খারাপ করবে তুই না গেলে।”
একপ্রকার বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলল তীর্থ। তারপর বলল,
“ঠিকাছে দেখি। আচ্ছা আমি একটু কারখানা থেকে ঘুরে আসি।” তারপর ল্যাপটপ নিয়ে বেরিয়ে গেল সে।

রাহাত গভীর নিশ্বাস ফেলে তীর্থ যেতেই। তার মনে হচ্ছিলো এতক্ষণ ধরে সে নিশ্বাস আটকে রেখেছিলো। সে ধ্রুবকে জিজ্ঞেস করে, “ভাই আপনি এতটা মজার মানুষ তীর্থ স্যার আপনার বন্ধু হলো কীভাবে? উনি কী সারাজীবন এমনই ছিলো?”
“অনেকটা। কিন্তু সেন্টি খেয়ে তারপর আরও মেন্টাল হয়ে গেছে। জোকটা একটুও মজার হয় নাই। আমার নিজেরই হাসি পাচ্ছে না। শুনো রাহাত, ছটফট করে আমার জন্য নাস্তার আয়োজন করো। তারপরে যেয়ে আমার বন্ধুর বোনের জন্য গিফট আনবে। আমি একটা মুভি দেখে নেই এই মাঝে।”
.
.
সন্ধ্যায় বিয়ের অনুষ্ঠানে যায় তীর্থ ও ধ্রুব। তাদের দেখে তো পলাশের পরিবার খুশিতে আত্নহারা। তাদের আপ্পায়ানের কোনো কমতি রাখে না। পলাশ তার সাথেই কাজ করে শুরু থেকে। আগেও ভার্সিটিতে পলাশের পড়াশোনার অনেক খরচ তীর্থ করতো। তার ভীষণ সম্মান করে পলাশের পরিবার।

তীর্থের ভীষণ বিরক্তি লাগছিলো অনুষ্ঠানে। তার এইসব পছন্দ না। চারদিকে গান বাজনার শব্দ। এরই মাঝে ফোন বেজে উঠে তার। ফোনটা উঠানো জরুরী। সে উঠে খুঁজতে থাকে এক নীরব জায়গা, কথা বলার জন্য। বারবার ফোন বাজতে থাকায় চিন্তায় পড়ে যায় সে, ফোনের দিকে তাকিয়ে হাঁটতে থাকে। এমতো সময় কারও সাথে ধাক্কা লাগে তার। ফোন থেকে চোখ সরাতেই দেখতে পায় মেঝেতে বসে আছে একজন যুবতী। যুবতীটি একহাতের তালু দিয়ে অন্য হাতের কনুই ডলে নিলো। সে বিরক্তি নিয়ে উপরে তাকিয়ে বলে, “আপনার কি চোখ নেই? দেখে হাঁটা যায় না?”
উপরে তাকিয়ে এসে থমকে যায়। তীর্থকে দেখে। একবার দৃষ্টি পড়ার পর সে আর চোখ সরাতেই পারে না। তাকিয়েই থাকে অপলক।

তীর্থ জিজ্ঞেস করে, “ঠিক আছেন আপনি?”
মেয়েটির ঘোর ভাঙ্গে। সে অপ্রস্তুত হয়ে তাকায় আশে পাশে। তারপর হাত বাড়িয়ে দেয় তীর্থ তাকে উঠাবে আশায়। কিন্তু তীর্থ হাত বাড়িয়ে মেয়েটির হাত ধরে না। মেয়েটি লজ্জিত হয়। সে উঠে দাঁড়ায়।
তীর্থ তার পকেটে হাত ভরে শীতল গলায় বলে মেয়েটিকে, “আমার তো কাজে মোবাইলের দিকে তাকাতে হলো, কিন্তু আমার সাথে তো আপনিও দেখে হাঁটছিলেন না। দেখ হাঁটলে। নিচে পড়তেন না।”
বলেই সে মেয়েটির পাশ কাটিয়ে চলে যায়। মেয়েটি অবাক হয়ে তাকিয়ে রয় তীর্থের দিকে। এরইমধ্যে তার ডাক পড়ে, “এই মৃণা ছবি তুলব তো, জলদি আয়।”
মৃণা পিছনে তাকায়। দূর থেকে তাও বান্ধবী রূপা তাকে ডাকছে। সে উঁচু স্বরে বলে, “আসছি।”
মৃণা আবারও একপলক তাকায় সুদর্শন পুরুষটির দিকে। তারপর যায় তার বান্ধবীদের কাছে। যেতেই রূপা মৃণার হাত ধরে জিজ্ঞেস করে, “তুই পলাশ ভাইয়ার বসের সাথে কী কথা বলছিলি?”
“উনি পলাশ ভাইয়ার বস?”
“তো কি? দেখছিস না বরপক্ষ থেকে উনাদের বেশি খাতিরযত্ন করা হচ্ছে। বাট দুইজন দেখতেও সেই আসে। একেকটা মাল।”
মৃণা চোখমুখ বানিয়ে বলল, “মাল আবার কী?”
“আরে জানিস না। আচ্ছা শুন…”
“না ভাই শোনা লাগবে না। গত একমাস হলো আমার বন্ধুত্বের এরই মধ্যে তোর মুখ থেকে যা শুনছি তা শুনে আমার কান দিয়ে রক্ত বের হয় নাই এই বেশি। তুই বলতে চাইলে আমি তোর বয়ফ্রেন্ডকে কল দিতে পারি।” মৃণা ফোন বের করতেই রূপা খপ করে তার হাতের থেকে ফোন নিয়ে বলে, “এক লাত্থি মেরে সদরঘাট পাঠায় দিব। বেশি কাহিনী করবি না। যেহেতু প্রিয়ার বিয়ে সেহেতু ওর সাথে দুই চারটা ছবি তুলে নেই। তারপর যেয়ে ওই দুইটা লোকের সাথে কথা বলব।”
“কথা বলব! কেন?”
“কারণ দুইজনই দেখতে জোস।”
“এখানে আরও অনেকে আছে যারা দেখতে জোস।”
“কিন্তু তাদের দিকে তো তুমি হ্যাবলার মতো তাকিয়ে ছিলে না। আর এত ভালো পজিশনে আছে ভবিষ্যতে আমাদের কাজেও আসতে পারে। ইনফ্যাক্ট ভবিষ্যত কেন আমাদের এসাইনমেন্টের কাজেই আসতে পারে।”

রূপা মৃণাকে নিয়ে প্রথমে যেয়ে প্রিয়ার সাথে ছবি তুলে সত্যিই যায় ধ্রুব ও তীর্থের কাছে। যেয়েই ধ্রুবর সাথে কথা বলা শুরু করে। ধ্রুবও কি সুন্দর তার সাথে কথা বলল। মৃণা বারবার আড়চোখে তাকাচ্ছিল তীর্থের দিকে। তার সম্পূর্ণ ধ্যান ফোনে। তীর্থ একবার চোখ তুলতেই দুইজনের চোখে চোখ পড়ল। হলো একমুহূর্তে দৃষ্টিবন্ধন। সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নেয় মৃণা। লজ্জায় সে কুঁকড়ে গেল। মৃণা আবারও তাকায় তীর্থের দিকে। দেখার জন্য যে তীর্থ কী তার দিকে তাকিয়ে আছে কি’না? কিন্তু তীর্থের দিকে তাকিয়ে দেখে সে উঠে চলে গেছে। মৃণা হতবাক। এমন লোক সে আর দেখে নি। তার রঙ একটু চাপা কিন্তু তার সৌন্দর্যের গুণগান সে ছোট থেকে শুনেছে। কোনো পুরুষের দৃষ্টি একবার পড়লে সহজে সরে না। অথচ তীর্থ তার দিকে তাকাচ্ছেই না।
.
.
“বউ…এই বউ আমার চা কই?” জাহানারা বেগম উঁচু স্বরে ডাকলেন কবিতাকে। কবিতা তার ছেলে কাব্যকে খাওয়াচ্ছিলো। শাশুড়ির ডাক শুনে সে বলল, “মা কাব্যকে খাইয়ে দিচ্ছি।”
“কেন তুমি জানো না আমি এই সময় চা খাই? তোমার ছেলেরে আগে পরে খাওয়াইতে পারো নাই? ছেলের চার বছর হইয়া গেছে এখনো হাত দিয়ে খাওয়ানো শিখে নাই। জমিদারের বংশ থেকে আসছে।”
কবিতা বেশ বিরক্ত হয় শাশুড়ির কথা শুনে। সে-ও বলে, “মা এভাবে বংশ তো আপনাদেরই।”
এই হলো। এরপর শুরু হলো তার শাশুড়ির কথা। সে হাই হুতাশ করে নানান কথা বলতে থাকে। তার কথায় কবিতার দুইবছরের মেয়ে কুহুও ঘুম থেকে উঠে কান্না শুরু করে। কবিতা তার ছেলেকে খাবার খাওয়া রেখে দৌড়ে যায় তার রুমে। কুহুকে যেমন তেমন করে সামলে নিয়ে তার শাশুড়ির জন্য চা’য়ের পানি বসায়। ছেলেকে খাইয়ে ঘুম পারিয়ে ঘরের সব কাজ সেরে নেয়। ঘড়ির দিকে একবার তাকায়। অনেক দেরি হয়ে গেছে। সে তার স্বামীকে ফোন দিলো কিন্তু ফোনটা সে ধরলো না।
.
.
দুইদিন পর মৃণা ও রূপা যেয়ে হাজির হয় তীর্থের অফিসে। দুইজনে আসে তাদের ভার্সিটির এসাইনমেন্টের জন্য। তাদের বাংলাদেশের শিল্প উন্নোয়ন নিয়ে একটি এসাইনমেন্ট করতে হবে। ধ্রুব ও তীর্থ দুইজনই শহরের বড় ব্যবসায়ী। এর উপর প্রিয়ার পরিচিত। তারা নিজেরা
দুইজনের সাথে কথা বললে ভালো মতো বুঝতে পারবে। এছাড়া কারখানাতেও কীভাবে কাজ করা হয় তাও নিজের চোখে দেখতে পারবে। রূপা ধ্রুব এবং পলাশের সাথে কথা বলে এসাইনমেন্টের জন্য তাদের রাজি করেছে।

দোতলা বিল্ডিং। অথচ এই দোতলায় উঠতে যেয়েই তার অনেক অস্থির লাগছে। এই দুইদিনে সে তীর্থের কথা অনেকবার চিন্তা করলো। কেন যেন লোকটার কথা বারবার মাথায় ঘুরছিলো। প্রথমে রূপা উপরে যায় ধ্রুবর সাথে কথা বলতে। মৃণা নিচেই দাঁড়ানো ছিলো। রূপার কল পেয়ে সে উপরে উঠার জন্য রওনা দিলো। সিঁড়ি বেয়ে উঠতে নিলেই হঠাৎ সে সামনের থেকে আসা তীর্থকে দেখতে পেল। বোকামি করে পিছাতে নিলেই পড়ে যেতে নিলো সিঁড়ি দিয়ে। ভাগ্যিস তীর্থ তার হাত ধরে নেয়। তীর্থ তার হাত ধরে টান দিতেই মৃণা কাছে চলে আসে তার। চোখে চোখ পড়ে। পরের মুহূর্তেই বুকের ভেতর ধক করে উঠে মৃণার। দৃষ্টি বন্ধনের পরের মুহূর্তেই সে চোখ সরিয়ে মৃণা। লজ্জার লালিমা তার মুখে মেখে যায়। কেমন এক অনুভূতি আঁকড়ে ধরে তাকে।

হঠাৎ-ই রূপার কন্ঠ তার কানে ভাসে, “ও’মা এখানে দেখি অন্য এক কান্ড চলছে।”
রুপা দাঁড়িয়েছিল সিঁড়ির কাছেই। ধ্রুব তার পাশেই দাঁড়ানো। মৃণা তাদের দেখে আরও লজ্জা পায়। আবারও তীর্থের দিকে তাকায় একরাশ লজ্জা নিয়ে। তারপর এক পা পিছিয়ে যায়।
ধ্রুবও মশকরা করে বলল, “বাহ ভালোই তো যাচ্ছিস। আমি তো তোর থেকে এইটা কল্পনাও….”
তীর্থ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ধ্রুবর দিকে তাকাতেই সে চুপ হয়ে গেল। তার জোর করে হেসে বলল, “আমি তো মজা করছিলাম। সবকিছু এত সিরিয়াস নেওয়া ঠিক না ব্রো।”
তীর্থ কিছু না বলে যেতে নিলেই ধ্রুব বলে, “দোস্ত ওদের একটু সাহায্য লাগতো। ভার্সিটিতে এসাইনমেন্ট দিয়েছে ওদের তা নিয়ে। আমাদের ব্যবসা, কীভাবে আমরা সব শুরু করেছি এবং কীভাবে এতটা সাফল্য অর্জন করলাম এইসব নিয়ে।”
“আমার এত ফালতু সময় নেই। তোর আছে, তুই বসে হেল্প কর ওদের।”
“ব্রো প্লিজ। আমি ওয়াদা করেছি ওদের।”
“তুই করেছিস আমি না।” বলেই তীর্থ পাশ কাটিয়ে চলে যায় মৃণার। মৃণা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয় তীর্থের যাওয়ার দিকে।

রূপা তার বুকের বা পাশে হাত রেখে বলে, “উফফ এটাটিউড দেখেই তো আমি ফিদা হয়ে গেলাম। এমন এটাটিউডে আরও দশগুণ বেশি হ্যান্ডসাম লাগে তাকে।”
“আমি তো বুঝেছিলাম তোমার কাছে আমাকে বেশি হ্যান্ডসাম লেগেছে।” ধ্রুবর কথা শুনার সাথে সাথে ভাব পরিবর্তন করে নেয় রূপা। বলে, “আপনাকে একদম নায়ক নায়ক লাগে।”
“এখন তো বলবেই। আচ্ছা আসো, কেবিনে আসো।”
রূপার সাথে মৃণাও গেল ধ্রুবর পিছনে। সে আগ্রহ সহকারে জিজ্ঞেস করে ধ্রুবকে, “আচ্ছা উনার ব্যবহার এমন রুক্ষ কেন?”
“উনি মানে কে? তীর্থ?”
“হুঁ”
ধ্রুব হেসে বলে, “তোমার তো বেশ আগ্রহ দেখছি।”
খানিকটা লজ্জা পেল মৃণা। সে আমতা-আমতা করে বলল, “এমনিতেই। জানতে ইচ্ছা হলো।”
ধ্রুব প্রথমে কিছু বলে না। নিজের কেবিনে যেয়ে বসে উওর দিলো মৃণার প্রশ্নের, “একটা মেয়েকে অনেক ভালোবাসতো। মেয়েটার বিয়ে অন্যকোথাও হয়ে গেছে। তীর্থ তাকে প্রচুর ভালোবাসতো। কেবল তার জন্যই হাসতো।”
হঠাৎ করে মন খারাপ হয়ে গেল মৃণার। অচেনা একজন মানুষের জন্য এতটা খারাপ লাগতে পারে সে জানতো না। ধ্রুব একটু ঝুঁকে ভালোভাবে তাকায় মৃণার দিকে। তারপর চোখ দুটো বড় বড় করে বলে, “তোমাকে অনেকটা ওই মেয়ের মতো দেখা যায়।”
রূপা মিটিমিটি হেসে বলে, “মানে ওর চান্স আছে?”
“থাকতেও পারে। কিন্তু কথা হলো ওর সামনে ভুলেও বলবে না আমি তোমাদের কথাটা জানিয়েছি। আমাকে খুন করে ফেলবে।”
হাসলো রূপা, “এক শর্তে, আপনি তীর্থকে আমাদের এসাইনমেন্টে সাহায্য করতে বলবেন।”
“ওরে বাবা ভালো ফাঁসলাম তো। আচ্ছা ঠিকাছে ডান।”
এরপর ধ্রুব ও রূপার গল্প শুরু হলো। দুইজনের মাঝে বসে মৃণার অস্থির লাগছিলো। মনে হচ্ছিলো এইখানে তার কোনো কাজ নেই। তাই সে উঠে বাহিরে গেল। বাহিরে যেতেই তার চোখ পড়ে সামনে রুমে ঢুকতে যাওয়া তীর্থের দিকে। তার ইচ্ছা করল তীর্থকে ডাক দিয়ে কিছু বলবে কিন্তু কোনো কথাই পেল না সে। তীর্থ তার সামনে দিয়ে কেবিনে ঢুকে গেল কিন্তু সে কিছু বলতে পাড়ল না।
.
.
আজ আকাশটা মেঘাচ্ছন্ন। রাতের আঁধারে বারান্দায় বাতি জ্বালিয়ে দোলনায় বসে আছে মৃণা। বাতাস বইছে তীব্রভাবে। বাতাসে মাখানো প্রকৃতির সুরভী। সে দোলনায় বসে গ্রিলে পা রেখে দুলছে তার কোলে একটা ডায়েরি এবং হাতে একটি কলম। কলমটা সে দুই ঠোঁটের মাঝে নিয়ে ডুবে গেল এক কাল্পনিক জগতে। তার ঠোঁটের কোণে এঁকে উঠে এক চিলতে হাসি। চোখের সামনে ভেসে উঠে এক রাজকুমারের মতো দেখতে পুরুষ। সে রাজকুমারটা দেখতে একদম তীর্থের মতো। নিজে নিজেই লজ্জা পেল মৃণা। তার ডায়েরিতে লিখল এক ছন্দ,

“মুহূর্তখানিকের দেখা,
শুভ দৃষ্টি মিলনের রেখা,
মাতাল হাওয়ায় ছড়াছড়ি
আমার মন তো শুনে না কোনো জোরাজুরি,
কল্পনায় এসো তুমি প্রিয়,
আমার জন্য তুমি যে শ্রেয়।
আচ্ছা আরেকটিবার ভালোবাসার স্বাদ
কী জানতে চাও তুমি?
এক রোদ্দুর ভালোবাসার ছোঁয়ায়
কী জগৎ ভুলতে চাও তুমি? ”

মৃণা কবিতাটি বারবার পড়ে। তার বিশেষ ভালো লাগে না। সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে কৃষাঙ্গ মেঘে ভরা আকাশটার দিকে আবারও তাকায়। সে বুঝে না, তীর্থের মতো ছেলেকে ছাড়ার মতো বোকামি কোন মেয়ে করেছে। সে জীবনে তীর্থের মতো সুদর্শন পুরুষ অনেক কম দেখেছে। এর উপর এত বড় বিজনেস আছে তার। মেয়েটাকে না’কি অনেক ভালোও বাসতো, কেবল তার জন্য হাসতো! ভাবা যায়? তারপরও তীর্থকে ছেড়ে অন্যকাওকে বিয়ে করেছে সে? সে হলে তো কখনোই এমন পুরুষকে ছাড়তো না। তার জন্য সারা দুনিয়াকে ছেড়ে দিতো। আচ্ছা তীর্থ কী দ্বিতীয়বার কাওকে ভালোবাসতে পারে? তার প্রথম প্রেমিকার মতোই আবার কাওকে ভালোবাসবে তীর্থ? অথবা এরচেয়ে গভীর ভাবে? এমন ভালোবাসার অনুভূতিটা ঠিক কেমন?

মৃণার বুকের কোণে কেমন একটা অনুভূতি হলো।মিষ্টি অনুভূতি। ওদিকে মৃণার ফোন বেজেই যাচ্ছে অথচ তার সেদিকে কোনো ধ্যান নেই। সে ডুবে আছে তীর্থের কল্পনায়।

চলবে….

[বিঃদ্রঃ ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। গল্পটা কেমন লাগছে জানাবেন। ধন্যবাদ।]

সকল পর্ব
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=381227816949915&id=100051880996086

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here