যদি বলি ভালোবাসি🍁 পার্ট ৩১

0
1119

#যদি_বলি_ভালোবাসি ♥
#PART_31
#FABIYAH_MOMO🍁

দরজা খুললাম। দেখি আকাশ। চোখ নেশাগ্রস্ত, মাতাল মাতাল। তৎক্ষণাৎ কপাল কুচকে এলো ! ও কেন আসবে???আকাশ এক লাত্থি দিয়ে দরজা খুলে ফেললো।আমি বেসামাল হয়ে একটু পিছিয়ে গেলাম।আকাশ দরজা লাগাচ্ছে। অসৎ উদ্দেশ্য! ওর কর্মে অসৎ উদ্দেশ্য টের পাচ্ছি! হাত পা ক্রমশ কাপতে শুরু করেছে আমি ওড়নাটা এর মধ্যে মাথায় টেনে সমস্ত শরীর ঢেকে পেচিয়ে নিয়েছি। পৈশাচিক বিশ্রী খারাপ হাসি দিচ্ছে আকাশ। চোখগুলো লাল লাল। ওর বাসায় ঢুকাতে ভ্যাপসা গন্ধে মোহিত হলো চারপাশ। মাথা পুরো অকেজো কাজ করছে কিচ্ছু ভাবতে পারছিনা। বুকের ভেতর ধুরুম ধুরুম চাবুক পেটানো শুরু হয়েছে। আকাশ এগিয়ে আসছে, আমি উঠে দাড়িয়ে পিছিয়ে যাচ্ছি। আকাশ পকেটে হাত দিয়ে শিফার দেওয়া রেপারের গিফটটা বের করলো। দেখি উপর অংশটুকু ছেড়াঁ। ও আঙ্গুল দিয়ে দাত ঘষে দৃষ্টিকটু দৃশ্যপট করলো। প্যাকেটটা উপর করে ধরলো। রেপিং পেপারটা ওর আঙ্গুলের জবরদস্ত করে খোলায় ফ্লোরে পড়লো, চোখ মেলে আরেকদফা ভয়ের আক্রোশ ঘিরে ধরলো। ওটা ক***! ছি! শিফা ধোকা দিলো! এত্তো বড় ধোকা! ধোকার চিন্তাভাবনা মাথায় ঘুরতে লাগলো। ফোন রেখে গিয়েছিলাম…ও আমার ছবি নিয়ে আমাকে আকাশের নিকট “শিফা” বুঝিয়েছে!!! শিফা আমার ফোন দ্বারা বাজে কিছু করেছে! আমার হাত গিফট পাঠিয়ে প্রতারণার চক্র রটেছে! ব্যস!

আকাশ অনেকটাই আমার কাছে চলে এসেছে। মদের গন্ধে গা গুলিয়ে যাচ্ছে আমার। কয়েক সেকেন্ডের জন্য মাথা ঠান্ডা করলাম। ” ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়, উড়নচন্ডী মস্তিষ্কে নয়।” দূরত্ব এক কবজি পরিমান। বামহাতটা পিছনে নিয়ে চেক করলাম… দেয়াল নাকি খালি! খালি থাকলে পেছনে রুম। দেয়াল থাকলে আমি খতম! মাথা ঘুরিয়ে দেখার সময় নেই, হাত এসে স্পর্শ করতে পারে!আল্লাহ রক্ষা করলো পিছনে নিয়ে বামহাতের ছোয়ায় কিছু আসেনি, অর্থাৎ খালি..পেছনে রুম! আকাশ ক*** প্যাকেট খুলতে চোখ হেট করলে দেই এক নাক বরাবর ঘুষি! ওমনেই দৌড়ে রুমের ভেতরে গিয়ে দরজার সিটকিটি লাগিয়ে ফোন খুজতে থাকি। নাকে ঘুষি খেয়ে আকাশ কিছুক্ষণের জন্য তাল হারালেও এখন পা দিয়ে দরজায় লাত্থি দেওয়া শুরু করেছে। এভাবেই চলতে থাকলে দরজা ভেঙ্গে নতুবা সিটকিনি খুলে ও ঢুকে যাবে। বিছানায় ফোন! আমার ফোন! হাত থরথর করে কাপছে, গলা চুইয়ে ঘাম গড়াচ্ছে, আকাশ দরজা ধাক্কিয়ে চলছে। কোনোমতে কাপা হাতে সফলকামী হলাম কল করতে।

–পাকনি তুই সার্ডেন কল কেটে দিছিলি কেন? আমি তোর কলের জন্য কতো ওয়েট করে বসে আছি!
–মুমুগ্ধ আআককাশ এখখখানে ওওও বাইররে দদররজা ধধাকাচ্ছে….ওও ববাইররে মুমুগগ্ধ…
–হোয়াট! কি বলছিস! আকাশ কে! হ্যালো! কে বাইরে!
–শশিশিফফা…
গলা আটকে যাচ্ছিলো, ব্যর্থ হচ্ছি বারবার কিছু বলতে। ধাক্কানোর গতি অনেক বেড়ে গেছে, দরজায় তাকিয়ে আমি কেদেঁ দেই। মুগ্ধ হল্লা চেচামেচি শুরু করে দিয়েছেন, আমি উত্তর দিতে পারছিনা। ডুকরে কাদা ছাড়া উপায় দেখছিনা, কেমন ভুল করে ফেললাম! মুগ্ধ চিৎকার করে বললেন-

–কান্না থামা ! এই! আমি কান্না থামাতে বলছিনা! চুপ!

উনার ধমকানো চিৎকারে অশ্রু চোখে কেপে উঠি। কান্নার আওয়াজ ছাড়া কোনো স্পষ্ট বুলি বলতে পারছিনা…গলা ধেয়ে আসছে, আকাশ দরজার সিটকিনি আলগা করে ফেলেছে। খুলে যেতে সময় বাকি নেই। উনি শক্ত কন্ঠে বললেন-

–স্টে কাম! ইউ আর ফেসিং এ্যা ট্রাবেল মম! রেপ করার পূর্ব মূহুর্তে হাল ছাড়বিনা! কান খুলে শোন! গলায় ওড়না আছে? আই নো আছে! ওড়না খোল! ওড়নায় পাক দিয়ে স্ট্যাব্যাল করে নে। ও যেই আসবে গলায় দিবি পেচিয়ে! নিচে নেমে ওর্য়াডেনের রুমে চলে যাবি!

ফ্লোরে বসে কাদছিলাম, উনার কথাতে মাথা থেকে ঘোমটা সরিয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে আমি শূন্যে গোলগোল করে ওড়না ঘুরালাম। ওড়না মজবুত হলো। দরজা আপনাআপনি খুলার চেয়ে আমি নিজে খুলে ওড়না দুহাতে পিছনে লুকিয়ে দাড়ালাম। শ্রুতিকটু শব্দে দরজা খুলে আকাশ নাকানিচুবানি ঘামে চুপসে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। ও আমার দিকে পা বাড়ানোর পূর্বেই পেছনে লুকানো দুইহাতের ওড়না দিয়ে আকাশের গলায় পেচিয়ে দেই। ও দাপাদাপি করছে। ওড়না পেচিয়ে দিয়ে মুগ্ধের বর্ননানুসারে দৌড়ে লাফিয়ে দরজা খুলে সিড়ি ধরে নিচে নামি। পা আমার ট্রেনের মতো ফালফাল করে পড়ছে, আমার যেন নিজস্ব শক্তি নেই। ভয়, বিপদ, ঝন্ঞ্চার লৌকিকতা দেখে মস্তিষ্কের জাগতিক বিক্ষোভ চলছে! তোর ওয়ার্ডেনের কাছে যেতেই হবে! থামবি না! পা থামাবি না! বিপদ এখনো আপদ হয়েই আছে! হন্তদন্তে দৌড়ে নেমে ওয়ার্ডেন মহিলার দরজায় কড়া নাড়ছি! উনি খুলছেন না! মেয়েদের হোস্টেল নিরিবিলি শান্ত প্যাঁচামুখো ছাড়া ভালো স্থানে অবস্থিত। বাইরে মানুষ কম। মানুষ নেই-ই বলতে গেলে তাই বাইরে গিয়ে হৈচৈ করে লাভ হবেনা। দরজা ধাক্কাতেই আমী মাথা খাটাচ্ছি….কি করে বিপদ ট্যারাব্যাঁকা করবো! কিভাবে সম্ভব! রাস্তা, কুল থাকবে তো! থাকবে! দরজায় কান লাগালাম, মনে হচ্ছে বাথরুমের পানির কল ছাড়ার শব্দ হচ্ছে। মহিলা তাহলে বাথরুমে!আবার কানেও কম শুনে, বয়ড়া। বিল্ডিংয়ের মেয়েগুলোকে ডাকলেও শুনবে না অনেকে এখনো বাইরে! কেউ টিউশনিতে, কেউ ব্যাচে, কেউ ঘুরছে, কেউ নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। একমাত্র ওর্য়াডেন মহিলা সব করতে পারবে! বাইরের গেট লাগানো! দৌড়ে মেইনরোড়ে যেতেও পারবো না। চাবি রুমের ড্রয়ারে। সিলভার রঙের তালা ঝুলছে, গেট সুউচ্চ লম্বা টপকে যাওয়ার জো নেই। আরেকবার জোরে ধাক্কিয়ে একটা শ্বাস ছাড়লাম। বুদ্ধি হিসেবে আসলো, মহিলার রুমে জানালা টপকে রুমে ঢুকার। জানালায় গ্রিল দেখিনি তার। দৈর্ঘ্য আহামরি বেশি না। ইটের উপর পা দিয়ে জানালা দিয়ে ভেতরে ঢুকতে পারবো। কানে শব্দ আসছে সিড়ি দিয়ে কেউ নামছে। আকাশ-ই হবে। আমি ছুটে গেলাম। জানালায় উকি দিয়ে দেয়াল ঘেষে দুটো ইট বসিয়ে তাতে ভর করে সোজাসুজি রুমে ঢুকে গেলাম। জানালা আটকে দিয়ে মহিলার ফোন খাবার টেবিলের উপর থেকে নিলাম। বাথরুমে দুই নাম্বার সাড়ছে মহিলা। আমি আর ধাক্কা দিয়ে বিপর্যয় ঘটালাম না। মাথায় যার যার নাম্বার মুখস্ত ছিলো সবাইকে কল করে জানিয়ে দিলাম। আবির ভাইয়াকে কল করতেই ভাইয়া ফোন রিসিভ করে উত্তেজনাকর কন্ঠে বলে উঠেন,

–সিনু! আমি আসছি! তোর হোস্টেলের গেটের কাছাকাছি চলে আসছি। তুই ওর্য়াডেনের রুমেই থাক! বের হবি না!
–আমি ওর্য়াডেনের রুমে তুমি জানো?
–বদমাইশ মাইয়া কোন বলদামি দেখাইয়া তুই দরজা খুলতে গেছোস! বাসায় একা থাকলে দরজা খুলতে হয়না শিখাই নাই!!
–ভাই ইচ্ছামতো বকা দিও তুমি তাড়াতাড়ি আসো!
–এইতো এসে পড়ছি! কিরে দরজায় তালা ! সিনু? দরজায় তালা! চাবি খোঁজ !

ফোন কানেই তন্নতন্ন করে চাবির সন্ধানে আছি। মহিলা মনের সুখে বাথরুমে গেছে তো গেছে বের হওয়ার নাম নেই। মিক্সডশেল্ফের তাকে চাবি ঝোলানো। দেখেই চিনে গেছি।হাতে চাবি নিয়ে ভাইয়াকে বললাম-

–ভাই চাবি হাতে! তোমাকে কিভাবে দিবো!
–তুই কোনখান দিয়ে ভেতরে ঢুকছিস ওইখান দিয়ে চাবি ঢিল দে।
–যদি নিশানা চুকে যায়? ড্রেনের হোলে পড়ে যাবে!
–ভুটকি! ছোটবেলায় ইট পাটকেল ছুড়ে মারোস নাই! ওমনে মার! তাড়াতাড়ি !

বিল্ডিংয়ের চর্তুদিকে বাউন্ডারি দেয়াল দেয়া। জানালা দিয়ে চাবি ছুড়ে দিলে দেয়ালের ওপাশে ড্রেনের গর্তে চাবি পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কাজ করছে। চাবিতে ফু দিয়ে জানালা দিয়ে ছুড়ে মারি। ভাইয়া ফোনে কয়েক মিনিট অতিক্রমের পর বলে উঠলো,

–পেয়ে গেছি সিনু! দাড়া আসতেছি!

ভাইয়া চাবি দিয়ে দরজা খুলতে লাগলে আমিও জানালা খুলে চুপি দেই। এই সাইডে কেউ নেই। কেননা পেছন সাইড। আমি রুম থেকে আগের মতো জানালা দিয়ে বেরিয়ে চুপিচুপি মেইন বড় গেটের ওখানে তাকাই। আকাশ দাড়িয়ে খোজাখুজি করছে। ভাইয়া আকাশকে চিনে না, আমি দূর থেকে দেয়ালের আড়ালে হাত নাড়িয়ে ভাইয়াকে তাকাতে বলছি! বিনা শব্দে চেচাচ্ছি! এইদিকে তাকাও ভাই! আমি এখানে!!! ভাইয়া বিল্ডিংয়ের দরজায় ঢুকতে নিবে আমি চিল্লিয়ে ডাক দেই, “ভাই! আমি!!”। ভাইয়া তাকায়, আকাশও তাকায়। আকাশ আমাকে দেখে ভাইয়ার দিকে চোখাচোখি করলো, ভাইয়া আমার কাছে আসতে নিলে আকাশ গেট খোলা পেয়ে বাইরে দৌড়ে গেল। ভাইয়া ওর পিছু না নিয়ে আমার কাছে চলে আছে।

–শা**** কি এটাই আছিলো? দেখতেই দেখা যায় মেথর! গাজাখোর ! চল।

ভাইয়া হাত ধরে আমাকে নিয়ে যায় চাবিটা জানালা দিয়ে ওর্য়াডেন মহিলার রুমে ছুড়ে দেয়।
–তোর ফ্ল্যাটের চাবি কই রাখছিস?? এদিকে থাকা লাগবো না। তুই তোর বাসায় থাকবি!
–ভাইয়া চাবি টেবিলের ড্রয়ারে। তিন নাম্বার ড্রয়ারের ডান দিকে।
–দাড়া!

ভাইয়া পকেট থেকে মোবাইল বের করে ফোন করলো,
–বন্ধু তোমার বাসার এক্সট্রা চাবি কোথায় রাখা আছে?
–……………………………
–না কিছু হয়নাই। হ….দেখছি! আরে ******একটা গান্জাখোর দেখলেই বোঝা যায়! হ ফেস চিনে গেছি, তুই টেনশন করিস না। আচ্ছা…..আচ্ছা…..আচ্ছা…রাখি।
……………………………………………………

বোঝা শেষ ভাইয়া চাবির ব্যাপারে মুগ্ধকে কল করেছেন। মুগ্ধ আবির ভাইয়াকে কি বলেছে জানি না, ভাইয়া আর ছয়তলায় উঠে চাবি আনতে যাননি। আমাকে নিয়ে ভাইয়ার অফিসের গাড়িতে করে আমায় বাসায় নিয়ে আসলেন। টাওয়ারের ম্যানেজারের কাছ থেকে মুগ্ধের রেখে যাওয়া তিন নং এবং শেষ এক্সট্রা চাবিটা নিয়ে ফ্ল্যাটের দরজা খুলে দিলেন। আমি ভেতরে ঢুকে সোফায় বসলাম। ভাইয়া দরজা আটকে সোফায় বসলো। আমি মাথা হেট করে বসে আছি। ভাইয়া বলে উঠলেন-

–তুই কেমনে পারলি বোকামি করতে সিনু? আমি তোরে শিক্ষা দেইনাই কিভাবে চলা উচিৎ ! তুই আবিরের বোন! তোর ভাইয়ের নাম গঙ্গায় ডুবাইলি?

আমার সেই ভয়াল পরিস্থিতি এখনো কাটেনি। গলা দিয়ে আস্তে আস্তে বাক্য উচ্চারণ হলো,

–পরীক্ষা সামনে ভাইয়া। আমার মাথা সত্যি ঠিক নেই। কোচিংয়ের লেকচার, মুগ্ধের ইচ্ছা, লোকজনের কটুতা, পড়ার চাপ, রাতে ঘুম নেই, সকালে খাওয়া নেই….আমি বোকা হয়ে গেছি। তোমার চালাকচতুর বোন কাজের বেলায় নেই ভাই…

ভাইয়া উঠে টেবিল থেকে জগটা নিয়ে পানিভর্তি করলেন। ফিল্টারে পানি ঢেলে এক গ্লাস পানি এনে আমাকে দিয়ে উনি সোফায় পা উঠিয়ে আসন করে বসলেন।

–তুই মানুষের দুই রূপের ব্যাপারটা জানিস। খুব ভালো করেই জানিস। উদাহরণ – তোর শ্বাশুড়ি। তোকে মাথায় নিয়ে গর্ব করতো, এখন পায়ের নিচে ফেলে দুর্নাম গায়। দেখ, বিয়ে তোদের হয়ে গেছে। আরো কতদিক থেকে কত বাধা বিপদ আসবে তুইও জানিস না, আমিও জানি না, মুগ্ধও জানেনা। তোর চিন্তায় চিন্তায় ছেলেটা দূরে বসেও পাগল হয়ে যাচ্ছে…তোর শুনে ভালো লাগবে??
–না।
–তো? বুদ্ধিমতি মেয়ের মতো জীবনের পথে কাটা না সরালে সফলতা আসবে?
–উহু।
–সবচিন্তা মাথায় নিয়ে ভুলবশত কারনে নিজের বিপদ ডেকে আনলে তোর সাথে আর কার মাথা ঘোলাটে হবে?
–মুগ্ধের।
–তুই পরিস্থিতি জানিস, পরিবর্তন কিভাবে করতে হয় সেটা জানিস, মানুষ কতো খারাপ নির্লজ্জা নির্লিপ্ত হতে পারে বেশ জানিস….তবুও ভুল করে ফেললি? মুগ্ধ কল দিয়ে প্রায় কান্না করে দিতো জানিস! আমি অফিসের মিটিং ফেলে তোর এখানে চলে আসছি! না আসলে কি ক্ষতি হতো ভাবছিস!
–তোমার ফোন টা দেওয়া যাবে ভাই? একটা কল করবো?
–মুগ্ধকে কল করে কি বলবি আমি একটা গাধার মতো কাজ করছি, চিনিনা জানিনা কোথায় থাকে এমন একটা মেয়েকে বিশ্বাস করেছি? এটা বলবি?
–ভাই আমার মাথায় প্রচুর চাপ। আমি নিজের দিকেই তাকাতে পারছিনা ভাই। কোনো কিছু করতে পারছিনা।
–তোর ফোন আমি কখনো ধরেছি? ধরলেও কতক্ষণ রেখেছি?
–তুমি আমার ফোন ধরো না ভাই…
–একলা বাসায় থাকলে দরজায় নক করলে জিজ্ঞেস করতে হয়, জবাব না পেলে দরজা খুলতে হয়না…একটা ছোট্ট পাচঁ বছরের অবুঝ বাচ্চাও জানে! তুই হাতে পায়ে লম্বা একটা চালাকমতি মেয়ে ভুলে গেছিস?
–আর হবেনা, আমার ভুল হয়ে গেছে ভাই। পরবর্তীতে এমন কিছু করবো না।
ভাইয়া পকেট থেকে ফোন বের করে আমার দিকে দিয়ে বললেন,
–নে ফোন। রুমে যেয়ে কথা বলে আয়। আমি বাইরে থেকে খাবার এনে দিচ্ছি, রান্না করার দরকার নেই। ফোন তোর কাছেই রাখ। আমার অফিস থেকে দেওয়া ফোন সঙ্গে আছে।

ভাইয়া উল্কাপিণ্ডের মতো রাগ নিয়ে আছে। আমি জানাশোনা ভুল করলে শাসনের বানী আমাকে এভাবেই শোনায়। এতে ভাইয়ার কোনো দোষ নেই…দোষ আমার। শিফাকে বিশ্বাস করা কাকতলীয় ভাবে আমার জন্যই ক্ষতিকারক হয়ে দাড়ালো। দেয়ালে একশোবার মাথা ঠুকালেও নিজের ভুলের প্রায়শ্চিত্ত আমার হবেনা। আমি অপরাধমূলক কাজ করেছি। অপরাধী। চোখে কান্নার স্রোত টলটল করছে, খুব কাছ থেকে বিপদ দেখেছি। খবরের কাগজে ভয়ঙ্কর ভাবে কালো কালিতে লিখা “ধর্ষন” আমার সাথেই ঘটে যেতো। তবে কথায় আছে …”রাখে আল্লাহ মারে কে”। সমাধানের সকল দরজা বন্ধ হলেও আল্লাহর দরবার থেকে আসা কারিস্মা কখনো বিফলে যায়না। আমি ভাইয়ার ফোন দিয়ে উনাকে কল করার আগেই মুগ্ধ নিজ থেকে কল দিয়ে বসলেন…ফোন বাজছে। কামিজের শেষকোনা দিয়ে মাথা ঝুকিয়ে চোখ মুছে নিচ্ছি। কলটা ধরে কানে নিলাম। অস্থির চৈতন্য গলায় বলে উঠলেন-

–দোস্ত বাসায় নিয়ে গেছিস? দোস্ত ও ঠিক আছে? কান্নাকাটি করতেছে নাতো?

ভাইয়া ভেবে প্রশ্ন করলেও আমি নিজেই উনারকে উত্তর দেই,
–কান্না বন্ধ হয়নি। আমি বাসায় পৌছেছি।

উনি চুপ। একটু থেমে অস্থিতি কন্ঠ প্রসন্ন করে শান্ত সুরে বললেন-
–শিক্ষা হয়েছে মেয়েলি বান্ধুবী পেয়ে! কি সর্বনাশ করে দিতো মেয়েটা!
–আমার ভুল হয়ে গেছে মুগ্ধ,
–আফসোস করা ছাড়া আমার কাছে কোনো উপায় থাকতো? একটা বার বল তো!

চোখে কামিজের কোনা চেপে কেদেঁ চলছি, ওই ছেলে আমার ছাদ থেকে লাফ দেওয়া ছাড়া কোনো কিছু ছাড় দিতো না। মরেই যেতাম।

–আমি কার কানে এলার্ট করে কথাগুলো বলে গেছি গড! তোর জায়গায় রাস্তার একটা কুকুরকে পোষ মানিয়ে কথাগুলো বললে তাও মান্য করতো! তুই??
–আমি আর করবো না,
–কথা বলবি না!
–প্লিজ আমার ভুল গেছে!! আমি আমার ভুলের খেসারত পেয়েছি, আমি আর কাউকে বিশ্বাস করবো না। মনিরাকেও না।
–মুখ ধুয়ে শুয়ে পড়। আমি পরে কথা বলবো।
–……………………
–শক্ডে আছিস ঘুমিয়ে মাথা ঠান্ডা কর। আমি রাগ করিনি, পরে কথা বলবো। তোর সাথে আমারো মাথা হাই হয়ে আছে, আমি চাইনা রাগের বশে কষ্টদায়ক কিছু বলে ফেলি। রাখি।

-চলবে🍁

-Fabiyah_Momo🍁

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here