যদি বলি ভালোবাসি🍁 পার্ট ৩০

0
1186

#যদি_বলি_ভালোবাসি ♥
#PART_30
#FABIYAH_MOMO🍁

বিছানায় শুয়ে ফিজিক্স পড়ছি, পাশে শিফা বসে ফেসবুকে চ্যাটিং। জানা কথা বফ ছাড়া কেউ হবেনা, তাই জিজ্ঞেস করিনি। মনিরা টিউশনিতে গিয়েছে। দুপুর দুটো’র কাছাকাছি বাসায় ফিরবে।

–মম কিছু জিজ্ঞেস করি?

আমি বইয়ে মনযোগ বসিয়ে বললাম, “হু”।
–তোমাদের বিয়ের কতবছর পূর্তি হলো?
–বছর না মাস। একমাস পূর্তি হয়েছে।
–বেশ তো। ভাই কিন্তু ফাটাফাটি !! যা পেয়েছো পুরোই হিট!!
–হুম। আল্লাহ ভাগ্যে রেখেছেন তাই উনার মতো পেয়েছি।
–তুমি বইয়ে মগ্ন? এতো সিরিয়াস?
–হ্যাঁ। রুলস গুলো ধোলাই না দিলে পরীক্ষা হলে আটকে যাবো।
–চলোনা আমরা একটু নিজেদের নিয়ে গল্প করি??? প্লিজ প্লিজ!!! প্লিজ মম!!

আমি শিফার দিকে ডানে তাকিয়ে বইটা হাসিমুখে বন্ধ করলাম। নাহ্…একটু আড্ডা দেওয়া যাক। মনটা ফুরফুরে থাকলে পড়ায় বেশি মনোযোগ বাড়বে। শুরু করলাম নিজেদের জীবন নিয়ে কথা, অনেক কিছুই শেয়ার করলাম। নিজের পার্সনাল খুটিনাটি সবকিছু নিয়ে। এখন মোর ঘুরলো- বফ ও বর নিয়ে। ও আগ্রহের সাথে জিজ্ঞেস করলো-

–তোমার বরের একচুয়েল নাম কি? না আসলে তোমাদের মধ্যে বন্ডিংটা খুব জোশ লাগে। তাই আর কি জানার ইচ্ছা।
–পুরো নাম রাদিফ আবরার মুগ্ধ। আবরার নামটা পারিবারিক। পরিবারের সবাই রাদিফ বলে ডাকেন। আমি ডাকি মুগ্ধ।
–আপনি? তুমি আপনি বলে ডাকো?? আমি তো আমার বয়ফ্রেন্ডকে ‘তুই’ করেও বলে ফেলি…হা হা হা…
–আমার প্রচুর জড়তা কাজ করে। আমি স্বপেও চাইনা “আপনি” ছাড়া ভিন্ন কোনো ওয়ার্ড উনার জন্য বের হোক। “আপনি” ডাকতেই শান্তি লাগে, অদ্ভুত শান্তি।
–কি যে বলো না মম!! আমি হলে তো তুমি তুমি করে ডাকতাম। আর রাগ উঠলে তুই!
–একচুয়েলি জানো, আমার রাগ উনার থেকে বেশি। কিন্তু উনি চেতলে আমি ভিজাবিড়াল।
–আমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে এখনো মিট করিনি। আসলে, আমরা ডিসাইড করেছি কেউ কাউকে দেখবো না। একটা ডেট ফিক্স করে ওইদিন দেখা সাক্ষাৎ করবো। ভাবছি… এখানে ডেকে আনি??
–তোমার বয়ফ্রেন্ড তুমি জানো। আমি এতে কি বলতে পারি।
–একটু হেল্প দরকার তোমার!! করবে প্লিজ? একটুই লাগবে বেশি না!!

আমি নিঃশর্তভাবে হ্যাঁ বলে দিলাম। কাউকে সাহায্য করলে অবশ্যই উপর আল্লাহ খুশি হন, সবসময় মাথায় রাখি। সাহায্যটা নিয়ে শিফা কিছু বললো না। জানালো পরে বলবে, যখন ওর বফ আসবে। আমি আর জোর দিয়ে কারন হিসেবে জিজ্ঞাসা করিনি। উনি কল করলেন, আমিও চট করে রিসিভ করলাম।

–আপনি পৌছেছেন মুগ্ধ? ঠিকঠাক মতো পৌছেছেন?

উনি হাসলেন কিন্তু হাসির কারন নিয়ে কি বা বললাম সেটাই কিছু আওড়াতে পারলাম না।
–ঘড়িতে কয়টা বাজে পাকনি?
–একটা।
–একটায় কোথায় থাকবো??
সাথেসাথেই জিহবায় দেই এক কামড়! ঠিকই তো…উনি এখন কোথায় থাকবেন ভালো করেই জানি তাও বেক্কলের মতো প্রশ্ন করে হাসির পাত্রী বনলাম। বিকেল চারটায় ফ্লাইট হলে অবশ্যই উনি বাসায় থাকবেন। আমিও না!!
–সরি, মুখ ফসকে ভুলভাল বলে ফেলেছি। বাসার অবস্থা কেমন? মা চুপ হয়েছেন? রাফিয়া! রাফিয়ার কি অবস্থা?
–শোকের মাতম এখনো বিরাজ করছে। আম্মুকে ঘুমের ট্যাবলেট খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছি। রাফিয়াকে ওর বান্ধুবীর সাথে বাইরে ঘুরতে পাঠিয়েছি।
–আপনি শেষের কথাগুলো বুঝিয়ে বলবেন প্লিজ? আমি হিংসার ব্যাপারটা নিয়ে অনেক চেষ্টা করলাম কিন্তু কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না। কি ইঙ্গিত দিয়েছেন মুগ্ধ?

উনি স্বর নামিয়ে ফের একই ভঙ্গিমায় প্রশ্ন ছুড়লেন,
–পাশে কেউ আছে? মনিরা বা শিফা? সরে আয়!
শিফা গোসলে গিয়েছে। আর মনিরা তো বাসায় নেই। তবুও একবার গোসলের ঝর্নায় কান পাতলাম, মনে হচ্ছেনা এক্ষুনি বেরুবে।
–না মুগ্ধ পাশে কেউ নেই। মনিরা বাইরে। শিফা ওয়াশরুমে।
–শিফা মেয়েটাকে নিয়ে আমার খটকা লাগছে। মনিরা বলল মেয়েটা রিলেশনশিপে তাও বয়ফ্রেন্ড কে তা জানে না। তুই ভাবতে পারছিস মেয়েটা কেমন গন্ডগোল করতে পারে? আমার সিক্সথ্ সেন্স বলছে, মেয়েটা সুবিধার না।
–অন্যের লাইফ নিয়ে আপনি কেন জিজ্ঞাসাবাদ করছেন? শিষ্টাচার আমাদের এসব শেখায় না।
–রাখ তোর শিষ্টাচার! সবসময় নীতিতত্ত্ব এ্যাপ্লায় করবি না! আমি একটা ছেলে কম মেয়ে নিয়ে ভয় পাই! আমি বলে দিলাম…শিফা কিংবা মনিরা এই দুইজনের একজন কিছু একটা করবে।
–আবারো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কথা? ধ্যাৎ আমি আপনার সাথে কথাই বলবো না!
–তোর কথা বলা বন্ধ দিয়ে সিচুয়েশন কোনো সলভ হবেনা। লিসেন, তুই আমাদের ফ্ল্যাটে চলে যা। এট লিস্ট তোর চিন্তায় আমি পাগল হবো না।
–আপনি হুশিয়ারী দিয়ে বলছেন কিছু একটা হবে। তারপরও একা রেখে চিটাগাং কেন যাচ্ছেন? আমিও যাই? আমাকে নিতে প্রবলেম কোথায়?
–না। তোর ভর্তি পরীক্ষা সামনে। এক্ষুনি কোথাও বের হওয়ার প্রয়োজন নেই আমি যেটা বলছি সেটা কর, আমাদের ফ্ল্যাটে চলে যা।
–পরশু গেলে কিছু হবে? আমার কোচিং টা এখান থেকে কাছে,
–তুই ড্রাইভিং জানিস?
–নাহ্, কেন?
–গাড়ি দিয়ে যেতাম। আচ্ছা রাখি, পরে কথা বলবো। ব্যাগ গোছাবো।

আমি ফোন কেটে দিলাম। মাথায় শিফা, মনিরার ব্যাপার নিয়ে ভীষন চিন্তা হচ্ছে। শিফা বাইরের মেয়ে হলেও ওর সাথে হাসিখুশি আমার মিল আছে। মনিরা আমার সবচেয়ে কাছের বান্ধবী। কোন বিপদের বিপন্ন আসছে, সময়ের অপেক্ষা….

সারাদিন এই বই ওই বই ঘাটাঘাটি করেই আমার দিনপার হচ্ছে। কঠোর পণ নিয়েছি আমি ইন্জিনিয়ারিং ভার্সিটিতে চান্স পেয়ে দেখাবোই! রাত এখন দশটা । মনিরা ক্লান্ত হয়ে শুয়ে পড়েছে, শিফা আমার ফোন নিয়ে কিছু করছে। আমি গুনগুনিয়ে পড়া রেডি করছি। শিফা বলে উঠলো-
–মম তোমার ফোনটা একটু আমার সাথে রাখি? কিছু জরুরী কাজ করবো, তোমার ফোনে আবার ডাটা আছে, আমার ফোন খালি।
–আচ্ছা রাখো। উনার কল আসলে দিয়ে দিও।

সারারাত ঢুলুঢুলু চোখে আমি ফ্লোরে বসেই বই পড়ছি, শিফা এখনো ফোন নিয়ে ব্যস্ত। ঘুমায়নি। টেবিল ল্যাম্প জ্বালিয়ে আমি ফ্লোরে পড়ছি, রুমের লাইফ নেভানো। মনিরা ফোনের ব্রাইটনেসে সজাগ হয়ে রাগভর্তি মুখ করে শিফাকে বলল-

–শিফা! তুই ফোন রাখবি! বারবার তোর জামাইয়ের মেসেজে টুং টাং ঘন্টায় আমার ঘুম পাতলা হইতাছে!
–মনু, কাল জান্টুসকে এখানে আসতে বলছি!! ও কি পড়বে, আমি কি পড়বো ওটা নিয়ে কথা বলছি।
–আমারতে শুন, তুই একটা লুঙ্গি পড়িস! তোর জানেমানরে কাইল্লা শাড়ি পইড়া ঘোমটা দিতে কইস! বহুত মানাইবো শালা তাড়ছিড়ার দলডিরে! এইডি লইয়া কথা কওয়া লাগে? ফোন রাখ!

শিফা মুখটা পেচার মতো কুজো করে নিলো, মুখে বিরোধী দলীয় নেতার মতো বিরক্তির ছোপ। মনিরার কাচা বুদ্ধি ছুড়ে দেওয়াটা শিফার আত্মগর্বে দাগ কেটেছে বোঝাই যাচ্ছে। ওদের একুল-ওকুল ঝগড়ার আরম্ভে পানি ঢেলে আমি বলে উঠি-

–রাতের বেলা তোমরা ঝগড়া করতেছো? এগুলো ঠিক! ওর্য়াডেন মহিলা চিল্লাচিল্লি শুনলে দরজায় নক করা শুরু করবে..জানো না! ঘুমাও সব!

শিফা ওপাশ ঘুরে ফোন নিয়ে শুয়ে থাকল, মনিরা বিপরীত পাশ ঘুরে চোখ আবদ্ধ করলো।
.
.

সকালে উঠে রেডি হয়ে নাস্তা করে কোচিংয়ে গেলাম। নতুন নতুন কোচিং। অবশ্য আমি খুব লেট করে ভর্তি হয়েছি। কাউকে তেমন চিনি না। দুইঘন্টার টানা কোচিং, মাঝে কোনো বিরতির সময় নেই। বাসায় শিফা রান্নাবান্না করছে, মনিরাও তাতে সাহায্য করছে। বাসায় শিফার বয়ফ্রেন্ড আসবে, দীর্ঘ ছয়মাসের অদেখা রিলেশন করে প্রত্যক্ষ দেখাদেখি হবে তাদের। আমিও বেশ মনোযোগ সহকারে সব কয়টা লেকচার এটেন্ড করলাম। সাইড ব্যাগটা নিয়ে বাসায় ফিরলাম ঠিক দুপুর তিনটার পর। এসেই দেখি শিফা লাল শাড়ি পড়েছে, মুখে সাজ। চুলে গাজরার মালা লাগিয়ে একদম ফিটফাট। মনিরা বাসন্তী রঙের শাড়ী পড়েছে, চুল খোপা, মুখে কোনো বাড়তি সজ্জা করা নেই চোখে হালকা কাজল টানা। শিফা খুব ব্যস্ত রান্নার পদবাহারী সাজাতে, মনিরা আমার হাত টেনে নিয়ে গেল রুমে।

–শালীর হাতে ফোন রাইখা গেছো কেন! ফোন মাইষের গুপ্ত মাল জানো না!
–ফোন নাকি ওর লাগবো এজন্য রেখে গেছি। তুই এইভাবে মিনমিন করে সুর নামিয়ে বলছিস কেন?
–শালার ঘরের শালা! তোর ফোনের মধ্যে পার্সনাল কিচ্ছু নাই? ওর হাতে যে দিয়া গেছোস ভাই তো তোরে কল করছিলো! হেতি কাইট্টা দিসে!
–আচ্ছা আমি কল ব্যাক করছি। তুই হাত ছাড়, গোসল করবো।

মনিরা ঘুরেফিরে শিফার সাথে রেষারেষি ঘটায়। মেয়েটার যে কি সমস্যা আমি ভাই বুঝিনা! সতিনের মতো পিঠ পিছনে লেগে থাকে। ইদুর-বিড়ালের জুটির মতো হামলা- কথা কাটাকাটি! হোস্টেলে এই ফ্ল্যাটে দুইটা রুম, একটা বাথরুম, একটা কিচেন। বাথরুম টা পাশের রুমে, শোয়ার রুমে কোনো বাথরুম নেই। শিফা আমাদের শোয়ার রুমে সব কিছু সাজিয়েছে ওর অদেখা বয়ফ্রেন্ডকে স্বাগত জানাতে। আমি কাপড় নিয়ে পাশের রুমে যেতেই কলিংবেল বেজে উঠার শব্দ পাই। শিফার বয়ফ্রেন্ড হয়তো চলে এসেছে। আমি ওয়াশরুমে ঢুকে যাই।

লালশাড়ির আচল টেনে সুন্দর করে সেজেছে শিফা। তার গায়ের রঙ চাপা, চেহারা গোল, স্বাস্থ্য মোটামুটি। একদিন রং নাম্বার থেকে আসা কলের অজ্ঞাত পরিচয় ধারী ছেলেটি তার প্রেমিক। ছয় মাস আগে পড়ন্ত এক বিকেলে শিফার দুপুরের ঘুম কেড়ে কল বেজে আসে ছেলেটির। ধীরে ধীরে কথাবার্তা গড়িয়ে ফেসবুক একাউন্ট আদান-প্রদানের মাধ্যমে তাদের গভীর পরিচয় ঘটে। একে অপরের প্রতি কন্ঠ সুরেলা শুনে প্রেমের আহ্বান ঘটে। ছেলে দেখতে কেমন, সুন্দর না খারাপ, চরিত্র সম্বন্ধে কিচ্ছু জানা নেই তার। শুধু এক মুঠো ভরসা, তার প্রিয়তম আকাশ দেখতে সুন্দর পুরুষ হবে। মনিরাও শিফার পাশে এসে দাড়ালো দরজার ওপাশে থাকা পুরুষ টি দেখতে কতটা সুন্দর। দরজা খুলল শিফা, সাথেসাথেই মনিরার নজর ছেলের উপর পড়তেই আচল মুচড়ে দাতে দাত চেপে খিচ মেরে রইলো। পেটে হাসির কোন্দল গুটি পাকাচ্ছে। খালি বাসা থাকলে হাসতে হাসতে লুটোপুটি খেত। নাম, আকাশ। বয়স ত্রিশের ঘর পেরিয়ে পয়ত্রিশের মধ্যে। কৃষ্ণবর্ণ, ঝাকড়া চুলের অধিকারী পুরুষ বটে। উচ্চতা ছয় ফুট ছুতে দুই ইন্ঞ্চি বাকি। শিফার মনটা কালো পাহাড় হয়ে গেল। ভেবেছিলো, সুরের কন্ঠ যার এতো মধুর দেখতে তাহলে খুবই সুপুরুষ! কিন্তা না বিধি বাম হয়ে স্বপ্নের পুরুষ টি মন মতো হলো না। দিনরাত মেসেজিং করে মন মাতিয়ে নির্ঘুম করা পুরুষটি সুন্দর না।একটুও সুন্দর না। শিফার এখন চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে, তুই চলে যা! তোর মতো কালাচানকে আমি বাড়ির দরজাতেও দেখতে চাইনা ! বেরিয়ে যা! পারলো না। শিফা মনের দুঃখ ঢেকে তাকে আসতে বলল। আকাশ ভেতরে ঢুকলো। রুমে বসতেই আকাশ হাসি দিয়ে বলল,

–আমাকে এক গ্লাস পানি দেওয়া যাবে? গলা শুকিয়ে গিয়েছে।

শিফা যেন হাফ ছাড়লো, ও খুব করে চাইছিলো কালো চামড়ার বিশ্রী লোকটার কাছ থেকে দূরে দূরে সরে যেতে। তার সুদর্শন ছেলের প্রতি বেশি আর্কষন। শিফা পানি আনতে গেল। মনিরা রুমে ছিলো। মনিরা চাপা হাসিতে বলল,
–আপনি কি সেই আকাশ? শিফার আকাশ?
–হ্যা আকাশ। তোমার নাম….
–মনিরা।
— ও আচ্ছা আচ্ছা… তুমি সেই মনিরা। কথায় ও কাজে থ্রিলার।।
— যেইটা মনে করেন।

আমি গোসল শেষে রুমের মধ্যেই থাকলাম। পাশের রুমে যেয়ে শিফার প্রেমিককে দেখতে যাইনি। আমি ফোন নিয়ে মুগ্ধের নাম্বারে ডায়াল করছি বামহাতে চুল মুছে চলছি। কয়েকবার রিং হতেই ফোন রিসিভ,

–বল..পাকনি ঠিক আছিস? কোচিং শেষ? বাসায়?
–একসাথে এতোগুলা প্রশ্ন না করলে চলে না?
–না চলে না। বউ একা রেখে এসেছি, প্রশ্ন হাজারো করবো না?? কথা বাদ! কোথায় এখন?
–বাসায়। গোসল করে মাত্র স্থির হলাম, এতো প্রেসার ভালো লাগছে না।
–বোরখা পড়ে বের হয়েছিলি তো? মানুষ দেখে চিনেছে? খারাপ কথা শুনিয়েছে?
–বোরখা পড়ে আপনার সামনে নেচেনেচে ঘুরলেও আপনি চিনবেন না…ওরা তো বাইরের মানুষ। কেউ চিনেনি, কিছু বলেনি।
–সাব্বাশ!! ভেরি ভেরি গুড। এখানে প্রচুর বোরিং হ্যাল সিচুয়েশন ! টলারেট করার মতো মাইন্ড স্ট্রং করতে পারছিনা। কবে যে আসবো!
–মেয়ে ডাক্তার দেখে অসুখ অসুখ লাগছে নাকি? সাবধান ! কোনো মেয়ের দিকে বোন ছাড়া অন্য নজরে তাকালে তো! আমি কাটা চামচ দিয়ে খুন করে ফেলবো! আপনি শুধু আমার!
–এরে বোকা…অসুখ লাগবে কেন? অসুখ তো দূরে থেকে লাগছে। কিন্তু চিটাগাং জায়গাটা সুন্দর। আমরা হানিমুনে এখানে আসবো ওকে?
–সিলেট। ওখানে যাবো।
–নো চিটাগাং।
–বললাম না সিলেট!
–চুপ! আমি যেখানে নিয়ে যাবো ওখানেই যাবি। বেশি কথা বলবি না।
……………………
আমি উনার সাথে কথা বলছি হঠাৎ শিফা এসে দাড়ালো। স্তব্ধ হয়ে মুখ কালো করে আছে, কোনো এক অপ্রতিভ মনঃকষ্টে ভুগছে। আমি ফোনটা কেটে দিলাম। শিফার মন খারাপের কারন জিজ্ঞেস করলাম,
–তোমার বফ এসেছে শিফা…তুমি মুখ কালো করে আছো?কি হয়েছে?
–কিছু না। আমার একটা সাহায্যের কথা বলেছিলাম মনে আছে? আমার এখন সাহায্যটা দরকার।
–হ্যা বলো, আমি সাহায্য করবো।
শিফা আমার সহায়তার কথা শুনে শাড়ির আচল থেকে হাত বারিয়ে একটা প্যাকেট দিলো। ছোট একটা প্যাকেট, গিফটের কাগজে মোড়ানো। আমার হাতে দিয়ে বলল,
–এই গিফটটা আকাশের হাতে দিয়ে কোড ওয়ার্ড বলবে “আমি রাজি”। আমার লজ্জাবোধ হচ্ছে মম, আমি প্রথম প্রথম দেখছি তো তাই।
–এতে কি আছে?
–আকাশ আমার কাছে কিছু চেয়েছিলো তার জন্য উপহার। প্লিজ এটা ওর হাতে দিয়ে এসো।
–আচ্ছা,

আমি ভেজা চুলেই আলতো করে খোপা করলাম, ওড়না নিয়ে গা ঢেকে মাথায় ঘোমটা দিয়ে শিফার কাজে পাশের রুমে গেলাম। আকাশ বসে আছে। ট্রে তে মিষ্টান্ন নানা রকম খাবার সাজানো। ও একটা সিগারেট ফুকছে। মনিরা রান্নাঘরে। কটুগন্ধ!! সিগারেটের গন্ধ আমি সহ্য করতে পারিনা। আব্বু আগে সিগারেট খেতো…আমার জিদের বশে সিগারেট খাওয়া ত্যাগ করেছে। আমি নিজেকে দমিত করে আকাশের সামনে যেয়ে গিফট দিয়ে বললাম,

–ভাইয়া আপনার গিফট। আর উত্তর হলো- ‘আমি রাজি’।
আকাশ ঠোটে সিগারেট নিয়ে বাজে হাসি দিলো। আমার কাছে উটকো কিছুর আভাস লাগলো। সিগারেট ফুকে বলে উঠলো-
— থ্যাংকস আপু।
“আপু” ডাক শুনে মনের মধ্যে অমঙ্গলচিহ্ন মিইয়ে গেলো। আপু না ডেকে অন্যকিছু ডাকলে মনে ভেবেই নিতাম, শিফা কোনো বাটপারি করছে চেনাচেনি নিয়ে। কিন্তু ও করেনি। যদি আমাকে নিয়ে উল্টো বুঝিয়ে বলতো আমি শিফা, তাহলে তুফান উঠিয়ে ফেলতাম। আপু ডেকেছে সব রঙ্গভঙ্গ। আমি চলে গেলাম।

আকাশ পাচঁমিনিটের মাথায় চলে গেল। মনিরা হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেতে লাগল। শিফা আয়নার সামনে দাড়িয়ে কিশোরী সদ্য পদ্মফুলের মতো গাজরার মালা খুলছে, টিপ উঠাচ্ছে, চুড়ি খুলছে। নিজের রূপ দেখতে বিভোর খুব। মনিরা বিছানায় শুয়ে হোহো করে হেসেই যাচ্ছে। হাসির কারন এই…আকাশ কালো।বেশি কালো। দেখতে ওতো একটা সুন্দর না। সহজভাষায় “গান্জাখোর”। নামটা মনিরা কিছুক্ষণ আগে ঘোষনা করেছে। আমি পিঠে একটা ঘুষি মেরে বললাম-

–লজ্জা থাকা উচিত মনিরা! মানুষের গায়ের রঙ নিয়ে হাসাহাসি কোনো ভদ্র মেয়ের লক্ষন না। আল্লাহ না করুক, তোর কপালেও এমন কেউ বর হিসেবে আসুক।

মনিরা চুপ। শিফা থম মেরে আছে। মুখে স্ট্যাপলার মেরে চুপচাপ অবস্থা। প্রতিটি মেয়েরই খুব ইচ্ছা থাকে তার ভালোবাসার মানুষ টি যেন খুব নজরকাড়া হোক, তাকে দেখে সবাই প্রশংসা করুক। কিন্তু মনিরা প্রথম দেখাতেই আকাশকে নিয়ে হীনমন্য কথা শুনিয়েছে, শিফার মনটা কাদোকাদো করতে বাধ্য করেছে। শিফা পাথর বনে আছে, আমি মনিরার কাছে বসে ওর কানের কাছে বললাম,

–চুপচাপ সরি বলে দিবি! তোর কেচির মতো মুখ শিফার সেল্ফ রিসপেক্টে হানি করেছে। তুই বুঝতে পারছিস! ও কতটা দুঃখী দুঃখী! সরি বলে দিস!
–তোর দিকে তাকায়া খালি সরিটা বলতাছি! নাইলে ওর জামাইরে ডিটারজেন্ট দিয়া ইজ্জত ফাস করতাম।

মনিরা বাজে কটাক্ষ কথায় আমি চোখ রাঙিয়ে তাকালে ও সভ্য মেয়ের মতো চোখ নামিয়ে শান্ত হয়ে যায়। আয়নার সামনে শিফা চুল আচড়াচ্ছে। ওকে গিফটের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে বললাম-

–শিফা? তোমার ওই ছোট প্যাকেটের গিফট রেপারে কি ছিলো?

শিফা কিছু বলল না। আনমনে চুল আচড়াচ্ছে। বুঝলাম শিফার মন খুব খারাপ। ওর মনটা ভালো করা দরকার। আমি মনিরাকে বলে ওকে নিয়ে বাইরে শপিং করে আসতে পাঠিয়ে দিলাম। শিফা ‘না না’ করলেও মনিরার মতো নাছোড়বান্দা মেয়ের কাছে ওর নত হওয়া ছাড়া উপায় ছিলোনা। শিফা মানলো। শিফাকে নিয়ে মনিরা দরজার বাইরে জুতা পড়তে থাকলে শিফা উৎকন্ঠা বোধ করতে থাকে। হঠাৎ শিফা কিছু বলবে মনিরা ওর হাত টান দিয়ে নিয়ে গেল। মনে হলো শিফা কিছু বলতে চেয়েও মনিরার তাড়াতে ও বলতে পারলো না। আমি ওদের সাথে যাইনি। হাতে সময় কম পড়া বেশি। যত সময় নষ্ট কম করবো তত বেশি ভালো। আমি দরজা লাগিয়ে বিছানায় বসে পড়তে লাগলাম।

সন্ধ্যা ছয়টা বাজে। শিফা মনিরাকে নিয়ে ওর খালামনির বাসায় গিয়েছে একটু দেরি হবে আসতে। রাতে নিজের জন্য আমি ডিম ভাজি করব। তাই চুলোয় কড়াই বসিয়েছি। হঠাৎ কলিংবেল বাজলো। এই সময় কে আসলো? মনিরা শিফা আটটা নয়টার আগে বাসায় আসছেনা! কে আসলো অসময়ে? এখানকার ঠিকানা কেউ জানেও না। রাফিন? নাহ্ রাফিন আরো আগে জানবেনা। মুগ্ধ সব বন্দোবস্ত করে গেছেন। ভাইয়াও আসবেন না, উনি অফিসে। আল্লাহ! কে আসলো? চুলো নিভিয়ে আমি দরজা খুলতে গেলাম। লুকিং মিররে চেক করলাম। কেউ হাত দিয়ে ঢেকে দিয়েছে। দেখা যাচ্ছে না।ওড়না ঠিক করে মাথায় টেনে নিলাম,

–কে? কে ওখানে?কে এসেছেন?
–……….., উত্তর নেই শূণ্য।

সন্ধ্যাবেলা কেউ এসে দরজায় বেল বাজিয়ে লুকিং মিররে হাত দিয়ে ঢেকে আছে!! বুকটা দুমড়ে এলো, ভয় করছে এখন। বাসায় একা আমি , কেউ নেই। কে এসে দাড়িয়ে আছে জবাব নেই। ধরফর ধরফর করছে বুকে। আমি গলায় হাত দিয়ে বুকে ফু দিলাম। আল্লাহ ভরসা! বিপদ আসলে আল্লাহ মাফ করবেন! রক্ষা করবেন! দরজা খুললাম। দেখি আকাশ। চোখ নেশাগ্রস্ত, মাতাল মাতাল। তৎক্ষণাৎ কপাল কুচকে এলো! ও কেন আসবে???
আকাশ এক লাত্থি দিয়ে দরজা খুলে ফেললো। আমি বেসামাল হয়ে একটু পিছিয়ে গেলাম। আকাশ দরজা লাগাচ্ছে। অসৎ উদ্দেশ্য ! ওর কর্মে অসৎ উদ্দেশ্য টের পাচ্ছি!

-চলবে

-Fabiyah_Momo🍁

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here