যে শহরে এখনো ফুল ফোটে পর্ব-৯

0
707

#যে_শহরে_এখনো_ফুল_ফোটে
#পর্ব৯

কলেজের সারাটা দিন আজ ঘটনাবহুল ছিল। কথা হজম করার পর রৌশন আপা কিন্তু শান্তই ছিলেন। অবশ্য ঝড় আসার আগে প্রকৃতির শান্ত রূপও হতে পারে! রুমি অবশ্য অতশত এখন ভাবতে চায় না। যা বলার বলেছে, কী হবে দেখা যাবে, এমনিতে ভীষণ ক্লান্ত লাগছে। কিন্তু উবার বা সিএনজি করে আজ বাসায় ফেরা সম্ভব ছিল না। মাসের শেষ, হাতে আছে মাত্র এক হাজার টাকা। বিলাসিতা করার সুযোগ এখন নেই। বাসে করে বাসায় ফিরতে ফিরতে তিনটার বেশি বেজে গেল। দূরত্ব বেশি না, কিন্তু একেকটা সিগন্যাল পার হতে পনেরো বিশ মিনিট লেগে যায়। আজ আম্মা নির্ঘাত রেগে থাকবে এত দেরির জন্য, রুমি নিজেকে বারবার বোঝায় কোন কথার বাঁকা উত্তর দেবে না, মাথা ঠান্ডা রাখবে। উত্তর দিলে হক না হক যে কথাই রুমি বলুক, পরিস্থিতি খারাপ হবেই।

“আজ এত দেরি যে? তিনটা বিশ বাজে।”

“আম্মা, বাসে এসেছি, অনেক জ্যাম ছিল।”

“রিকশা ভাড়ার জন্য বাড়তি কিছু টাকা হাতে রাখতে পারিস। এই মাস থেকে পনেরো দিস না আমার হাতে, তিন হাজার আলাদা করে ভাড়া রাখ। এত কষ্ট করার মানে হয় না।”

আজ এতদিন পর আম্মা সহজ স্বাভাবিক কথা বলছে দেখে রুমির মনটা ভালো হয়ে যায়। যা কিছু অভিমান ছিল মনে, সব গলে পানি হয়ে গেল যেন।

“লাগবে না আম্মা। আগামী মাসে নতুন ডিপার্টমেন্টের যাব। প্রাকটিকাল ক্লাস নেব, রোগী দেখব। তাই বেতন বাড়বে ইনশাআল্লাহ।”

“আলহামদুলিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ। আগে বলিস নাই কেন?”

রুমি আর আম্মাকে গতকালের কথা মনে করিয়ে দেয় না। আম্মাকে হাসিখুশি দেখে ভালো লাগছে। এই কথা মনে করিয়ে দিয়ে মান অভিমান টানার দরকার নেই।
তিতলি ঘুমাচ্ছে, রুমি দ্রুত ফ্রেশ হয়ে নেয়, সময় নষ্ট করার সময় নেই।

***
মরিয়ম বাসায় ফিরে দেখে ননদ বাচ্চাদের নিয়ে বাসায় এসেছে। রুমন কাজিনদের পছন্দ করে, ওরা রুমনকে বিরক্ত করে না। সব বাচ্চারা একসাথে ড্রয়িং করছে।

“কখন আসলে? ফোন দিতে, তাহলে আগে বের হতাম।”

“সমস্যা নেই ভাবি। বাসার কাজ শেষ করতে দেরি হলো, এই একটু আগে ঢুকলাম। তোমার জন্য অপেক্ষা করছি, একসাথে ভাত খাব।”

শিহাব আর শৈলী দুই ভাইবোনই চমৎকার মানুষ। মরিয়মের ভালো লাগে, শাশুড়ি দুই ছেলেমেয়েকে এত ভালো শিক্ষা দিয়ে বড়ো করেছেন। গতানুগতিক ননদ ভাবি কোন্দল ওদের মাঝে নেই। তাই শৈলী আসলে মরিয়মের আতংক না বরং ভালো লাগে। মরিয়ম দ্রুত গোসল করে এসে টেবিলে খাবার দিতে থাকে, শৈলীও ভাবির সাথে হাত লাগায়।

“ভাবি আম্মু সহজ হয়েছে এখন?”

“হ্যাঁ, আগের চেয়ে ভালোই মনে হলো।”

“আমি বুঝিয়েছি আম্মুকে। আসলে বড়ো খালা, ছোটো খালা সবাই মিলে এক কথা বারবার বলায় আম্মুরও মাথায় ঢুকেছে যে ছেলের ঘরে আরেকটা নাতি নাতনি দরকার। না হলে আম্মু রুমনকে কম ভালোবাসে না।”

“আম্মাকে তো আমি চিনি শৈলী। টিপিক্যাল শাশুড়ি তিমি নন। আমাকে মেয়ের মতোই আদর দিয়েছে সবসময়। তাই ওনার অভিমান আমি গায়ে মাখি না। তবে ভয় লাগে, আটত্রিশ বছর বয়স চলছে আমার। এই সময় এত গ্যাপে আরেকটা বেবি নেওয়া সহজ না।”

“শরীর সাপোর্ট না দিলে নিও না। তবে আরকটা ভাই বা বোন হলে রুমনও সঙ্গী পাবে। দেখ না আইরিন আর আয়াশ আসলে রুমন খুশি হয়। বাচ্চারা বাচ্চাদের সঙ্গ পছন্দ করে।”

“আইরিন আর আয়াশ তো বড়ো হয়েছে, অনেক কিছু বোঝে। একদম নিউবর্ন বেবি কি রুমন মেনে নিতে পারবে?”

“অবশ্যই পারবে। রুমন কি আর দশটা বাচ্চা থেকে আলাদা ভাবি? বরং স্পেশাল। দেখবা নিজের ভাই বোনকে ও অনেক বেশি ভালোবাসবে। রুমনের অনুভূতি অনেক বেশি তীব্র।”

রুমন কী আসলেই গ্রহণ করতে পারবে কী না মরিয়মের জাবা নেই। রুমনের চাইল্ড স্পেশালিষ্টের সাথে খুব দ্রুত দেখা করবে ঠিক করে মরিয়ম।

****
তিতলির পাশে শুয়ে রুমিরও চোখ লেগে এসেছিল। ঘুম ভাঙে কলিং বেলের শব্দে। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে বিকেল পাঁচটা। রশ্মি দরজা খুলেছে শুনতে পাচ্ছে রুমি। মামীমা এসেছেন। আম্মার হাসিখুশি ভাব আর বেশিক্ষণ থাকবে না ভেবে কষ্ট লাগে রুমির। প্রত্যেকবার মামীমা আসলে তুচ্ছ কিছু না কিছু নিয়ে আম্মা বাসায় তুলকালাম করে ফেলেন, হয় সেদিন, না হয় তার পরেরদিন। আজ কী বিঢয় নিয়ে এসেছে আল্লাহই জানেন।

রুমি উঠে যায় তাড়াতাড়ি। এই অবেলায় ওকে ঘুমাতে দেখলে প্রথম কথাটা এই নিয়ে শুরু হবে। বিছানা থেকে নামার আগেই রুমে চলে আসেন মামী।

“রুমি রে কেমন আছিস?”

“আসসালামু আলাইকুম মামী। আছি মোটামুটি।”

“ঘুমাচ্ছিলি নাকি? ভালো ভালো।”

রুমি প্রমাদ গুনে। কিন্তু আর কিছু বলেন না মামী। রুমির এই একজনই মামী। মামা মামী রুমির আম্মার চেয়ে বয়সে বড়ো। রুমিদের বাসায় মামা মামীর মতামতের বেশ প্রভাব আছে। দুই চাচার সাথে ইদ বা পারিবারিক অনুষ্ঠান ছাড়া তেমন দেখা হয় না, ফুপু নেই। বড়ো খালা আর মামাই তাই পরিবারের বেশি কাছে, নিয়মিত আসা যাওয়া হয়। রুমির আম্মা পরিবারের ছোটো মেয়ে। বড়ো দুই ভাইবোনের মতামত ওনার কাছে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ সব সময়।

রুমি মুখটা ধুয়ে চা বসাতে যায়। মামী আম্মার রুমে বসেছেন। মামা বাবার সাথে ড্রয়িং রুমে কথা বলছে। রশ্মির জন্য এই বিয়ের প্রস্তাব মামা মামীই এনেছেন। মামার কোন এক বন্ধুর ছেলে। বিবিএ এমবিএ করেছে প্রাইভেট ভার্সিটি থেকে, এখন একটি বেসরকারি ব্যাংকের জুনিয়র অফিসার পদে আছে। প্রস্তাব খারাপ না, রশ্মি পড়ালেখায় অতটা ভালো না। ইডেন মহিলা কলেজে অনার্সে পড়ছে, সেটাও যে খুব মন দিয়ে তা নয়। বাবা অবসরে যাওয়ার পর রশ্মির বিয়ের জন্য অস্থির হয়ে গিয়েছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here