যে শ্রাবণে এলে তুমি পর্ব:১

0
2834

যে শ্রাবণে এলে তুমি💕💕
পর্ব:1
লেখনিতে : মৌসুমী

আকাশে আজ অনেক মেঘ,কখন জানি টুপ করে কেঁদেই না ফেলে আকাশটা।একদম ভরা বর্ষা,শ্রাবণ মাস।নিরা আজ বাইরে বের হওয়ার সময় ছাতাটা নিয়ে বের হয়নি।আসলে ছাতাটা নিতেই ভূলে গেছিলো।দুপুরে শুয়েই ছিলো সে হঠাৎ তার বান্ধবী তিশা ফোন দিয়ে বলে যে তাকে নাকি বাজারে আসতেই হবে ,তিশার বয়ফ্রেন্ডের জন্মদিন আগামীকাল তাই আজ ই একটা ঘড়ি কিনবে।এদিকে নিরা পড়ে গেলো চিন্তায় কি বলে বাসা থেকে বের হবে এই মেঘলা দিনে মা তো বের হতেই দিবে না তাহলে কি করে বের হবে ,এদিকে তিশাও অনেক অনুরোধ করছে বাজারে যাওয়ার জন্য।অনেক ভেবে চিন্তে বাবাকে মানিয়ে চুপিচুপি বের হয়ে গেছিলো সে বাজারের উদ্দেশ্যে তাই ছাতাটা নিতে একদম মনে ছিলোনা।আর. ডি .এর গেটের সামনে দ্বাড়িয়ে সে এখন ভাবছে কিভাবে সে বাসায় ফিরবে ,একটা রিকশাও যেতে চাচ্ছেনা ওর বাসার রাস্তার দিকে,অটোও পাচ্ছেনা।আকাশ কালো মেঘে একদম ছেঁয়ে গেছে কখন জানি বৃষ্টি শুরু হয়ে যাই তাহলেই বাড়ি যাওয়া আচ্ছাসে মিটবে।ছাতাটা থাকলে কি সুন্দর বাড়ি চলে যেতে পারতো সে হেঁটে হেঁটে।।গভীর ভাবনার মধ্যে পড়ে গেছে নিরামণি। এদিকে সন্ধ্যা হতেও বেশি দেরি নেই।সন্ধ্যার মধ্যে বাসায় যেতে না পারলে কপালে খারাপি আছে নিরা সেটা খুব ভালো করে জানে।তার মা তাকে আস্ত রাখবেনা তাড়াতাড়ি না গেলে।কেনো যে বাজারে এসেছিলো তিশার সাথে সেটাই এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে সে।তিশাটাও পচাঁ ওর বয়ফ্রেন্ডকে দেখে ওমনি লাফাতে লাফাতে বাইকে উঠে চলে গেলো,আমার কথা একটুও ভাবলোনা আমি কিভাবে বাসায় যাবো।এমন বান্ধবী যেনো কারো কপালে না জুটে,নিজে ডেকে এনে নিজেই আগে আগে পালায়। ধূর হাঁটতে শুরু করি ভিজলে ভিজবো ,বাড়ি গিয়ে নাপা খেয়ে নিলেই ঠিক হয়ে যাবে।যেই ভাবনা সেই কাজ নিরা হাঁটতে শুরু করে দিয়েছে এদিকে বৃষ্টিও দু এক ফোঁটা করে পড়তে শুরু করে দিয়েছে।নিরার বাড়ি বাজার থেকে অনেকক্ষাণী দূরেই হেঁটে গেলে ।কিন্তু উপায় নাই হেঁটেই যাওয়া লাগবে ,মাঝ পথে রিকশা বা অটো পেলে টুপ করে উঠে যাওয়া যাবে এই ভেবেই নিরা হাঁটতে শুরু করলো।

এদিকে নিরার মা তো ক্ষেপে গেছে প্রচুর,আজ খালি নিরা আসুক বাসায় তার পা কিভাবে বাড়িতে বেঁধে রাখতে হয় তা সে ভালো করেই জানে।কতবড় সাহস আমাকে না বলে তোমার মেয়ে একা একা বাজার যাই ,তোমাকে বললো আর তুমি যেতে দিলে কেমন বাপ তুমি নিজের মেয়ের ভালোমন্দ বোঝনা।এই মেঘ মেঘালির দিনে বাইরে যেতে দাও।এই যে বাইরে তাকাও দেখো,,,দেখো বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে এখন গাড়ি পাবে সে কিভাবে আসবে বাসায় বলো কিভাবে আসবে বাসায় ,আর দুইটাও তো আছে তারা তো ওইটার মত না আমার সব কথা শুনে আর এইটা হয়েছে যত পাজির পাজি আর তুমি আরো সাহায্য করেছো এমন পাজি বানাতে ওই মেয়েকে।আজ আসুক ওর একদিন কি আমার যতদিন।

আহা নিহার মা এত হাইপার হচ্ছো কেনো ?নিরাতো আর ছোট না তাইনা ,সে এখন বড় হয়েছে একটু একা একা চলাফেরা করা শিখুক।আর আমাদের রাজশাহী শহরটা এখুনো অনেক নিরাপদ আছে তাই তুমি এখন শান্ত হয়ে আমার পাশে বসো।আর তুমি যে নিরাকে শায়েস্তা করতে চাচ্ছো পারবা তুমি শায়েস্তা করতে ?সে এসে যখন পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে আম্মাজান বলে ডাকবে তখন ই তো গলে একদম ওয়াটার হয়ে যাবে.. হা হা হা….

এই একদম হাসবানা..একদম হাসবানা বলেদিলাম,খুব হাসি পাচ্ছেনা নিজের সেয়ানা মেয়েটা এই বৃষ্টির দিনে বাইরে অথচ তোমার কোন হেলদোল নাই।আজ আসুক আজ আমি খুব রেগে আছি আজ তোমার মেয়েকে আমি কি করি তুমি খালি দেখতে থাকো হুহ…

আচ্ছা দেখতে থাকি বলে নিরার বাবা জনাব নেওয়াজ সাহেব হা হা করে হাসতে শুরু করলেন জোরে জোরে।

এই মামা যাবেন সাগরপাড়া?

হ্যা, উঠেন তাড়াতাড়ি পানিতে ভিজ্যা যাছি।আমিও বাড়ির দিকে যাছি তাই আপনাকে লিলাম রেকশায়।

ওহ আপনার বাড়িও সাগরপাড়ার দিকে নাকি?

না ,মিরেরচকে।

ওহ….

রিকশা চলছে তার আপন গতিতে আর চারিদিকে ঝুমঝুম করে বৃষ্টির পানি পড়ছে আর সেই পানিতে নিরার বোরখার নিচটা ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে।কিন্তু নিরার সেদিকে খেয়াল নেই সে বৃষ্টি দেখতে ব্যস্ত ,বৃষ্টি দেখতে আর বৃষ্টিতে ভিজতে নিরার খুব ভালো লাগে কিন্তু তার মায়ের কারণে সে সেভাবে বৃষ্টিতে ভিজতে পারেনা তবে সুযোগ পেলেই ছাদে গিয়ে ভিজতে শুরু করে তারপর কানের কাছে পরে শুনতে থাকে তার মায়ের বকর বকর বৃষ্টিতে ভিজার অপরাধে।আজ ভিজার সুযোগ খুব সহজেই পেয়ে গেছে কিন্তু মনের মধ্যে ভয় ও ঢুকে আছে কারণ বাড়ি গেলে দরজা না ও খোলা পেতে পারে।বৃষ্টির শব্দ আর রিকশার টুং টাং বেলের শব্দ শুনতে শুনতে নিরা আনমনে বসে ছিলো রিকশায় ,এমন সময়…

এই রিকশা দাঁড়াও বলে একজন রেইনকোর্ট পরিহীত চোখে কালো সানগ্লাস লাগানো ব্যক্তি রিকশা দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই সাথে সাথে লাফ দিয়ে রিকশায় উঠে পড়লো ,, নিরার দিকে ঘুরেও তাকালোনা সেই ব্যক্তি।তারপর রেইনকোর্টের টুপিটা মাথা থেকে ফেলে মাথাটা হালকা ঝাঁকানি দিলো তারপর দুই হাতে চুলগুলো ঠিক করে নিলো।তারপর রিকশাওয়ালাকে ইশারা করলো রিকশা চালানোর জন্য।

এদিকে নিরাতো অবাকের সবচেয়ে উঁচু পাহাড়ে ,চোখ বড় করে আর মুখ বিশাল হা করে তাকিয়ে আছে পাশে বসা ব্যক্তিটির দিকে।আর সেই হঠাৎ আসা ব্যক্তিটি মুখটা গম্ভীর করে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে।তারপর অন্যদিকে চোখ রেখেই সে নিরাকে বললো এমন হা করে তাকিয়ে আছেন কেনো আমার দিকে ,,হা টা বন্ধ করুন না হলে গরু ,মহিশ জাতীয় কিছু ঢুকে যাবে মুখে।এই কথা শুনে হা টা বন্ধ করে অবাকের সবচেয়ে উচুঁ পাহাড় থেকে নেমে স্বাভাবিক হয়ে বসলো নিরা তারপর ব্যক্তিটিকে উদ্দেশ্য করে বললো,,আপনি হঠাৎ হঠাৎ কোথ থেকে উঠে পড়েন আমার রিকশায় বলেনতো শুনি ফারদিন ডাক্তার ভাইয়া।

ভাইয়া কথাটা শুনে চোখটা কিড়মিড় করে কিছুক্ষণ নিরার দিকে তাকিয়ে থেকে ফারদিন বললো…আপনার রিকশা মানে?আপনি কবে রিকশা কিনলেন আবার ?আঙ্কেলের কি অনেক টাকা হয়ে গেছে নাকি আজকাল যে তার মেয়েকে রিকশাও কিনে দেয়।

নিরা এবার একটু বিরক্ত হয়ার ভঙ্গিতে ফারদিনকে বললো রিকশা কিনবো কেনো এই রিকশা আমি ভাড়া নিয়েছি ।।

ওহ তাই বলেন ভাড়া নিয়েছেন ,,ভাড়া নিলেই রিকশা নিজের হয়ে যাই বুঝি ,,মামা আপনি রিকশা এই ম্যাডামকে এখন দিয়ে দিয়েছেন তাহলে।রিকশাওয়ালা মামা রিকশা চালাচ্ছে আর নিরা ফারদিনের কথা শুনে মিটিমিটি হাসছে,হাসতে হাসতেই জবাব দিলো …আরে মামারা আপনারা ঝগড়া করেননাতো চুপচাপ যে যেখানে নামবেন নেমে যায়েন।

নিরা চলে এসেছে তার বাসার সামনে।তাই রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে ফারদিনের দিকে একটা রাগি লুক দিয়ে বাসার ভিতর চলে গেলো।আর ফারদিন অন্যদিকে চোখ রেখে রিকশায় বসে থাকলো গম্ভীর হয়ে।

রিকশাওয়ালা মামার কথা শুনে তার দিকে তাকালো ফারদিন তারপর বললো ওহ এসে গেছিতো।হ্যাঁ মামা।এসে গেছেন।আপনাকে চিনতে পারছিলাম তাই রিকশা দাঁড় করেছিলাম না হলে করতাম না।মিরের চকে আপনাদের অনেকদিন থেকেই চিনি।আচ্ছা মামা বাসায় যাই।

ফারদিন ও আচ্ছা বলে তার বাসায় ঢুকে গেলো রিকশাওয়ালার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে।

নিরা বাসার গেটের সামনে দাঁড়িয়েতো অবাক দরজা একদম খোল্লাম খোল্লা।ব্যাপার কি দরজা খোলা কেনো দরজাতো বন্ধ থাকার কথা তাহলে খোলা কেনো ব্যাপারটা কিছুতেই বুঝতে পারছেনা সে।দরজা যখন খোলাই আছে তখন তাড়াতাড়ি রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিবে এই চিন্তা ভাবনা করে দরজার ওপাশে যেতেই এক বিশাল হুংকার শুনতে পেলো নিরামণি।

দাঁড়া বলে জোরে হুংকার দিয়ে নিরার মা নিরার সামনে এসে দাঁড়ালো।এদিকে নিরাতো ওর মায়ের রাগি লুক দেখে কাঁপাকাঁপি শুরু করে দিয়েছে।নিরার দুই হাঁটু থর থর করে কাঁপছে সাথে গলাও শুকিয়ে যাচ্ছে ভয়ে।

এই চুপ করে দাঁড়া এসব হাঁটু কাঁপানো নাটক আমাকে দেখাবিনা,তুই কি মনে করেছিস হাঁটু কাঁপালেই আমি তোকে ছেড়ে দিবো?কখনো না,কার অনুমতি নিয়ে বাইরে গিয়েছিলিস তুই বল কার অনুমতি নিয়ে,আমাকে বলে গেছিস যে বাইরে যাচ্ছিস।বলে যাসনি কেনো বল।

ভয়ে আম…..

কি তুই ভয় পাস ,,তাও আবার আমাকে?তুই তো কাউকেই ভয় পাস না,আজ হঠাৎ ভয় পেতে গেলি যে?

আম্মাজাআ…যেমনি নিরা আম্মাজান বলতে যাবে ওমনি নিরার মায়ের ফোনটা বাজতে শুরু করলো আর ফোনে যখনি হ্যালো বলতে গেলো নিরার মা ওমনি নিরা এক দৌড়ে তার ঘরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো ভিতর থেকে।

আম্মা আমি কাল বিকেলে আসবো তুমি একটু আমার সাথে নিউমার্কেটে যেয়োতো একটা শাড়ি দেখেছি ওটা আমি নিবো তাই।

দেখ নিহা মেজাজটা খারাপ এখন শাড়ি শাড়ি করবিনা ,কয়দিন আগেইতো একটা শাড়ি কিনেছিস একদিনো পড়েছিস বল।

আম্মা এমন করছো কেনো আর মেজাজ খারাপ কেনো ?নিরার জন্য নাকি?নিরা আবার কি করলো?

তোর এত প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবোনা ফোন রাখ এখন বিরক্ত লাগছে বলে নিরার মা ফোনটা কেটে দিলো।আর নিহা ফোন কান থেকে নামিয়ে ফোনের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে হলো কি আম্মার এত রেগে আছে,এমন সময় ফারদিন পাশে এসে বললো নিহাকে যে ভাবি একটু কফি বানিয়ে দাওতো খুব মাথা ব্যাথা করছে।

আচ্ছা দিচ্ছি বলে ফোনটা টি টেবিলের ওপর রেখে রান্নাঘরে গেলো কফি বানাতে নিহা।

ভাবি তোমার বোন এত ঢং ঢং করে ঘুরে বেড়ায় কেনো?বাসায় কিছু বলেনা ওকে,নিহা কফি বানাচ্ছিলো ফারদিনের কথা শুনে পেছনে তাকালো তারপর বললো বলেনা আবার বলতেই থাকে আর সেও শুনতেই থাকে আর অন্যদিক দিয়ে বের করে দেয় কাউকে পাত্তা দেয়না।আজ ও বের হয়েছিলো নাকি সেজন্য আম্মা এতো রেগে আছে আমি ফোন দিলাম আমার সাথে ভালো করে কথাও বললোনা আম্মা তাহলে এই নিরার কারণেই এবার বুঝেছি।

হবে হয়তো,ভাবি আমি রুমে গেলাম বলে নিহার হাত থেকে কফির মগ নিয়ে ফারদিন চলে গেলো।

দুপুরবেলা কলিংবেলের শব্দে হাতের কাজ রেখে দরজা খুলতে গেলো নিহা।দরজা খুলে দেখে তার অতি আদরের ছোটবোন নিরা দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে।

নিরাকে দেখে নিহা বললো কিরে তুই এই সময় ?

চলে এলাম বোনের বাড়ি বলে নিহাকে পাশ কাটিয়ে ভিতরে গিয়ে সোফার ওপর আরাম করে বসলো নিহা।তারপর নিহাকে বললো আপু মামনি কৈ দেখছিনা বলে এদিক সেদিক তাকাতে থাকলো নিরা,তারপর উঠে গিয়ে সোজা ফারদিনের ঘরের সামনে গিয়ে ঘরের ভিতরে টুকি মারলো ফারদিন আছে কিনা তা দেখার জন্য তারপর ভিতরে ঢুকে আয়িসি হয়ে শুয়ে পড়লো সে ফারদিনের বিছানায়।
নিহাও নিরার পিছু পিছু গিয়ে বললো,,,এই তুই বের হ এই রুম থেকে ফারদিন যখন তখন চলে আসবে আর তোকে দেখলে রেগে যাবে তুই তার সাজানো গোছানো বিছানায় শুয়েছিস দেখে।ফারদিন কাউকে আসতে দেয় না রুমে তাড়াতাড়ি বের হ বলছি।

আপু তুমি যাওতো রান্না শেষ করো আমি একটু রেস্ট নিয়ে আসছি বলে বিশাল হাই তুললো নিরা।

তুই আগে এই রুম থেকে বের হ বলে নিরার হাত ধরে টানতে শুরু করলো নিহা কিন্তু তাতে আরো হিতে বিপরিত হয়ে গেলো চাদর এলোমেলো হয়ে গেলো।

এদিকে কলিংবেল বেজে উঠেছে আবার ,,,নিহা নিরাকে রেখেই ছুটলো দরজার কাছে,আর নিরা ফারদিনের গলা শুনতে পেয়ে বিছানাটাকে আরো টেনেটুনে এলোমেলো করে তাড়াতাড়ি বের হয়ে নিহার ঘরে ঢুকে পড়লো।

চলবে

কেমন যে লিখলাম আল্লাহ জানে,ভালো হলে কেউ একটু জানাবেন,খারাপ হলেও জানাবেন কেমন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here