যে শ্রাবণে এলে তুমি পর্ব:৪১

0
2364

#যে_শ্রাবণে_এলে_তুমি💕💕
#পর্ব_41
#লেখনিতে_মৌসুমী

মোমবাতির আলোয় সারাঘর ঝলমল করছে,রজনীগন্ধ্যা ফুলের সুবাসে ম ম করছে চারিদিক।দরজা জানালা সব বন্ধ করা আছে।বাইরে বেশ তুফান চলছে।বৃষ্টি আর বাতাসে আজ যুদ্ধ শুরু করেছে এক সাথে।খাওয়া-দাওয়া করে কিছুক্ষণ টিভি দেখে নিহাকে কাজে সহায়তা করে নিরা এসে দাঁড়িয়েছে তার ঘরের সামনে।দরজাটা বন্ধ ,সে এক হাত দিয়ে হালকা ধাক্কা দিলো দরজাটা,ধাক্কা দিতেই দরজাটা খুলে গেলো।নিরা ভিতরে ঢুকলো,ভিতরে ঢুকেই সে অবাক। মোমের আলোয় অন্যরকম এক সৌন্দর্য ফুটে আছে ঘরটিতে।নাকে এসে বাড়ি খাচ্ছে রজনীগন্ধার মিষ্টি সুবাস।সে যখন এর আগে একবার রুমে এসেছিলো তখন রুমটা এমন ছিলোনা।কোন মোমবাতি জ্বালানো ছিলোনা, রজনীগন্ধা ফুল ও ছিলোনা ঘরে।এসব কে করলো,নিরার মনে প্রশ্ন জাগলো কারণ এসব সে করেনি,আর মোমবাতি,ফুল দিয়ে সে ঘর সাজাতেই বা যাবে কেনো। ফারদিনো নাই,সে হাসপাতালে আছে,আজ নাকি জটিল এক অপারেশন করতে হবে তাকে।আর থাকলেও সে এসব করতোনা।কিসের জন্য করবে,কোনো কারণ তো নেই,তাহলে কে এসব করলো,হঠাৎ নিরার মনে ভয় জেগে বসলো,বিরবির করে বললো,
-তেনারা কি আমার রুমটা দখল করলো নাকি।তারা আর কোথাও জায়গা পেলোনা বাস করার ,শেষে কিনা আমার ঘরেই।আমি এখন থাকবো কি করে এ ঘরে,ও মাগো আমার যে এখন খুব ভয় করছে।আজ আবার ব্যাটা ফারদিনো নাই,সে থাকলে ভয়টা কম লাগতো ।এখন আমার কি হপ্পে।কি করে থাকবো এ ঘরে একা একা।

পর্দার আড়ালে লুকিয়ে আছে ফারদিন,ঠোঁটে তার দুষ্টু হাসি।লুকিয়ে লুকিয়ে সে নিরার বিরবির করা কথা শুনছে আর হাসছে।বিরবির করে কথা বললেও নিরার কথা যে কেউ রুমে থাকলে শুনতে পাবে এমনভাবে বলছে।

নিরা ভয়ে জমে গেছে,থরথর করে কাঁপছে,কাঁপতে কাঁপতেই অনবরত দোয়া পড়ে যাচ্ছে আর বুকে ফুঁ দিচ্ছে।একসময় ভয়ে ভয়ে খাটের দিকে এগিয়ে গেলো নিরা।আস্তে আস্তে হাঁটছে,হাঁটতেও ভয় লাগছে তার,তবুও হেঁটে হেঁটে খাটের পাশে এসে দাঁড়ালো।যেই না খাটের উপরে উঠতে যাবে তার আগেই ফারদিন নিরাকে নিজের দিকে জোরে টান দিয়ে টেনে জড়িয়ে নিলো তার বাহুবন্ধনে।নিরা ভয়ে চোখ বন্ধ করে চিল্লাতে যাবে তার আগেই নিরার ঠোঁটজোরা মুখের ভিতর নিয়ে নিলো ফারদিন।নিরা চোখ বন্ধ করেই ভয়ে ছুটার জন্য জোরাজোরি করছে কিন্তু পারছেনা।এদিকে ফারদিনো তাকে ছাড়ছেনা,কয়েক মিনিট পর ছাড়তেই নিরা ভয়ে ভয়ে বললো,
-আমাকে ছেড়ে দিন ভূতভাই।দয়া করুন। আমি কিছু করিনি,আমাকে মারবেননা।আমি বড় অসহায়।আমার স্বামীও আজ নাই বাসায়,সে থাকলে সে আমাকে রক্ষা করতো,কিন্তু সেও নাই,প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন।আপনি বললে আমি এক্ষুনি এ ঘর থেকে বের হয়ে যাবো।আমাকে ছেড়েদিন।
-তোমার স্বামী তো তোমার কাছেই আছে।তুমি চিনতে পারোনি?
-না নাই তো সে তো,,,,তো,,,,আপনি?ওহ বুঝেছি,ভূত ভাই আপনি তো দেখছি আমার স্বামীর রুপ ধারণ করেছেন।
-কে ভূত আর কে ভাই?
-আপনি ভূত ভাই।
-নিরা খুব সুন্দর ফ্রেশ একটা মুড নিয়ে আছি সেটা নষ্ট করো না।
-ভূত ভা,,,,
-চুপ।আমিই তোমার স্বামী,আমি ফারদিন।
-আপনি কি করে আমার স্বামী হবেন? আমার স্বামী তো আজ নাই।সে গেছে তার কাজে,অপারেশন টপারেশন করছে হয়তো এখন সে আর আপনি বলছেন আপনি আমার স্বামী।
– আমি চলে এসেছি,হাসপাতালে আজ যাইনি।মিথ্যে বলেছিলাম।তবে হ্যা,আজ আমি অন্যরকমের অপারেশনে নামবো দেখি সেটাতে সাকসেসফুল হৈ কিনা।চলো এবার লেগে পড়ি কাজে।
-নাহ,আমি যাবোনা।আমি এখন আপুর কাছে যাবো আমাকে ছেড়ে দিন ভূত ভা,,,,
-এক চড় দিবো আর একবার ভূত ভাই বললে,আমি তোমার একমাত্র স্বামী বুঝেছো।
-আপনি সত্যি বলছেন।নাহ ঠিক আছে,এভাবে চোখ গরম করছেন কেনো,হে হে আমি বুঝেছিতো আপনি আমার স্বামী।ওগো স্বামী এবার চলেন তাহলে ঘুমাই ।
-কে ঘুমাবে?
-আমি,আপনি দুজনেই।
-পাগল,আজ কোন ঘুমঘুমানি নাই আজ হবে শুধু,,,,
-কি?
-কি চলো দেখায় বলেই নিরাকে বিছানার ওপরে ধাক্কা দিলো ফারদিন তারপর নিজেও শুয়ে পড়লো নিরার ওপর।
-ও মাগো কি ভারি,,নামেন,নামেন বলছি।
-উহু ,কোন নামানামি নাই ,আজ শুধু চুমাচুমি হবে সাথে আরো কিছু হবে। নাহ ,নামেন,আমার হাড্ডিগুলো সব কমজোরি হয়ে গেলো।ও আল্লাহ গো ,ফারদিন তার শরীরের সমস্ত ভর ই এবার ছেড়ে দিলো,নিরা এবার আর কথা বলছেনা,বড় বড় চোখে শুধু সে ফারদিনের দিকে তাকিয়ে আছে,আসলে সে কথা বলার শক্তি পাচ্ছেনা।ফারদিন এবার নিরার মুখের ওপর ফু দিলো,সেই ফু য়ে নিরা চোখ বন্ধ করে নিলো,ফারদিন নিরার নাকের ওপর ছোট একটা চুমু একেঁ দিলো,তারপর আস্তে আস্তে নিরার মাঝে ডুব দিতে শুরু করলো গভীরভাবে।নিরাও হারাতে শুরু করলো ফারদিনের ভালোবাসার জগতে।মোমবাতির সোনালী আলোয় দেখে যেতে থাকলো ফারদিন তার নিরাকে সেই সাথে ভালোবাসার চাদরে জড়িয়ে নিলো এই বৃষ্টিভেজা রাতে।



মাম্মাম তুমি আজ বাবাইয়ের গালে কিসি দিয়েছো ,আমাকে দাওনি কেনো?আমাকে তুমি আল ভালোবাসোনা।তুলতুলের কথা শুনে নিহার মুখটা হা হয়ে গেছে।কি বলছে এসব তার ছোট্ট মেয়েটা।রেগে কটমটিয়ে ফয়েজের দিকে তাকালো নিহা,ফয়েজ অসহায়ের মত মুখ করে চেয়ে আছে ওদের দিকে।তুলতুল আবার বললো,
বাবাইও আমাকে আল ভালোবাসেনা।বাবাই তুমিও মাম্মামকে কিসি দিয়েছো আমাকে দাওনি।তোমলা পতা,তোমলা ভালোনা।তোমাদের সাথে আলি।ফয়েজ আর নিহা দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে চোখে চোখে কথা বলছে,কখন দেখলো তুলতুল তাদের চুম্মাচুম্মি।এ মেয়ে যদি সবাইকে এই কথা বলে তাহলে মুখ দেখাতে পারবেনা নিহা ।ছিঃছিঃছিঃ।
মাম্মাম আল বাবাই তোমলা থাকো আমি গেলাম দাদুভাই আল দাদিমার কাছে।তোমলা থাকো একা একা বলেই দৌঁড় দিয়ে চলে গেলো তুলতুল।তুলতুল যেতেই নিহা ফয়েজের ওপর ঝাপিয়ে পড়লো,ফয়েজের চুল ধরে টানতে শুরু করলো,
-তোমার জন্য,তোমার জন্য।সবসময়,সবসময় আমার সাথে চুম্মাচুম্মি,যেখানে সেখানে,এবার হলো তো,দেখলোতো তোমার মেয়ে।
-আরে ছাড়ো লাগছেতো,
-না ছাড়বোনা।
-স্বামীকে মারছোতো,পাপ হবে পাপ তোমার।
নিহা থেমে গেলো ,ফয়েজের থেকে দূরে সড়ে বসলো।ফয়েজ নিহার কোমর ধরে কাছে টেনে নিলো তাকে।
-কি করবো,তোমাকে তো পাই না সবসময়,তাইতো যেখানেই পাই সেখানেই তোমার ওপর হামলা করি।বুঝছোনা কেনো,বিবাহিত পুরুষরা বৌ ছাড়া থাকতে পারে না।
-তাই বলে ,,ধুর তোমার সাথে কথা বলে লাভ নেই,ছাড়ো আমাকে ঘুমাবো।বৃষ্টি হচ্ছে ভালোই ঘুমানো যাবে।
-নো নো ম্যাডাম কোন ঘুম হবেনা।এখন আমরা চুম্মাচুম্মি করবো।
-জ্বি,,না ,সারাক্ষণ এসব বিরক্ত লাগে,যাও সড়ো।
-উহু ,সড়বোনা।এখন আমরা কি করবো বলোতো?
-যাহ দুষ্টু বলে নিহা ফয়েজকে ধাক্কা দিয়ে শুয়ে পড়লো।ফয়েজো নিহার কাছে গিয়ে আবার নিহাকে আষ্টেপিষ্ঠে ধরলো।




রাত তিনটা বাজে।ফারদিন আজ পাগল হয়ে গেছে নিরার নেশাতে।গভীর নেশায় বুদ হয়ে আছে সে।এই পর্যন্ত এক মিনিটের জন্য ও ঘুমাইনি ,নিরাকেও ঘুমাতে দেয়নি।শুয়ে শুয়ে সে এখন নিরার চুল নিয়ে খেলা করছে,মাঝে মাঝে চটাস চটাস করে নিরার নাকে,মুখে,ঠোঁটে,গালে চুমু একে দিচ্ছে।নিরাও ফারদিনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে।যখনি চোখটা লেগে আসছে নিরার ঠিক তখনি ফারদিন তার ভালোবাসার অত্যাচার শুরু করে দিচ্ছে আর তখনি নিরার ঘুমটাও এক ছুটে পাল্লাচ্ছে।নিরা বুঝে গেছে ,আজ রাতে সে ঘুমাতে পারবেনা।শুধু আজ রাতে কেনো ফারদিন বলেছে কোন রাতেই নাকি এখন থেকে আর তাকে ঠিকভাবে ঘুমাতে দিবেনা।ভাবা যাই এসব।ভাবা যাইনা,এসব অত্যাচার।এই অত্যাচার কিভাবে সহ্য করা যাই এখন সেটাই ভাবার বিষয়।




জানো দাদিমা ,বাবাই আর মাম্মাম কাল কি করেছে?কাল না আমি লান্নাঘলে যাছিলাম তখন ,,,উম উম,,,
-কি হলো নিহা,তুলতুলের মুখ চেপে ধরলে কেনো ছাড়ো,
-আম্মা আপনি খান,আমি ওকে ঘরে নিয়ে যাই।
-ও কি বলছিলো শুনতে দাও।
-কি বলবেনা আম্মা বলেই নিহা তুলতুলকে নিয়ে এক ছুট রুমের দিকে।খাবার টেবিলের সবাই নিহাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।কেউই বুঝতে পারছেনা হঠাৎ কি হলো যে নিহা তুলতুলের মুখ চেপে ধরলো।আবার তাকে নিয়েও চলে গেলো এখান থেকে।ফয়েজ অবশ্য বুঝেছে কি জন্য নিহা এমন করলো আর তুলতুলো কি বলতে চাচ্ছিলো,মনে মনে সেও ভয় পেয়ে গেছিলো তখন তুলতুলের কথা শুনে,ভাগ্যিস নিহা থামিয়ে দিয়েছে।

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here