#যে শ্রাবণে এলে তুমি💕💕
#পর্ব:28
#লেখনিতে:মৌসুমী
“আন্টি কেমন আছেন?
“এই তো মা আলহামদুলিল্লাহ।তোমাদের সব ঠিকঠাক আছে তো।নতুন পরিবেশ,নতুন মানুষজন কেমন লাগছে তোমার?
“আমার শ্বশুরবাড়ির সবাই খুব ভালো আন্টি,আমার শ্বাশুরীতো এখুনো রান্নাঘরের ধারেই ঘেসতে দিচ্ছে না।আমার শ্বাশুরীর কথা এখন তুমি শুধু পড়াশোনা করবে,ঘুরবে ফিরবে ।এখন রান্নাঘরের কাজ তোমাকে দেখতে হবেনা।হাসি মুখ করে বললো তিশা কথাগুলো।মাহফুজা বেগমো একটু হাসলেন তারপর বললেন,
“তুমিও শ্বশুর-শ্বাশুরীকে সম্মান দিবে ,দেখবে আরো মাথায় তুলে রাখবে।
“অবশ্যয় আন্টি।আন্টি নিরা কোথায়?রুমে আছে নাকি।
“নিরা তো নেই,তোমরা বসো আমি তোমাদের জন্য নাস্তা পানির ব্যবস্থা করি।পাশ থেকে মাহিন বললো,
“আরে না আন্টি আপনি বসেন গল্প করি।
“তাই বললে কি হয় বাবা।তুমি তো আজ প্রথম আসছো আমাদের বাড়িতে।না খাইয়ে তোমাকে যেতে দিই কি করে।
তিশা এদিক ওদিন তাকাতে তাকাতে বললো,
“নিরা কি নিহা আপুদের বাসায় আন্টি?
“হ্যাঁ,ওখানেই আছে।
“ওহ,তো আপনার সাথে কিছু কথা ছিলো,আপনি বসেন তো বলে তিশা মাহফুজা বেগমকে হাত ধরে বসালো।তারপর বললো,
“আন্টি আমার বড় মামার ছেলে,নাম শিশির।সোনালী ব্যাংকে জব করে।নিরাকে আমার বিয়েতে দেখেছে তারপর তার খুব পছন্দ হয়েছে। মামি নাকি আপনার সাথে কথা বলেছিলো,আপনি নাকি বলেছেন নিরার বিয়ে হয়ে গেছে,আসলে তা তো না।আন্টি শিশির ভাইয়া খুব ভালো ছেলে।আপনি বিয়ের ব্যাপারে ভেবে যদি দেখতেন।
“তিশা তুমি একটা বিষয় জানোনা,অবশ্য তুমি না,অনেকেই এখুনো জানেনা যে,একটু থামলো মাহফুজা বেগম।
তিশা আর মাহিন উৎসুক হয়ে মাহফুজা বেগমের দিকে তাকিয়ে আছে।
“তিশা নিরার বিয়ে হয়ে গেছে,এই কথাটা সত্যি।
“কি বলছেন আন্টি।তিশা উত্তেজিত হয়ে গেছে নিরার বিয়ের কথা শুনে।
“চুপচাপ বসো ,শান্ত হৌ।
“আন্টি কবে নিরার বিয়ে হলো,আর আমি জানিনা এ বিষয়ে,কার সাথে বিয়ে হয়েছে নিরার?
“আমরা গ্রামে বেড়াতে গিয়েছিলাম আর সেখানেই নিরার বিয়ে হয়ে যাই ফারদিনের সাথে।
“ফারদিন মানে নিহা আপুর দেবর?
“হ্যাঁ।
তিশা আর মাহিন দুজন দুজনের দিকে তাকালো তারপর আবার মাহফুজা বেগমের দিকে।
“সেজন্য সেদিন কলেজে নিরা আমাকে কিছু একটা বলতে চাচ্ছিলো,এবার আমার মনে পড়েছে।তো নিরাকে কি আর পড়াবেনা?ফোনটাও বন্ধ পাচ্ছি।
“পড়াবে তো,ফারদিন তো ওর বইখাতা সব ই নিয়ে গেছে।কলেজে গেলেই দেখা হলে তখন ওর সাথে কথা বলে নিয়ো,এখন বসো তোমরা।আমি খাবারের আয়োজন করি,রাতে খেয়ে তারপর যাবে।
তিশার মনটাই খারাপ হয়ে গেছে,শিশির ভাইয়া কত আশা করে আছে,মনে মনে ভাবছে তিশা।মাহিন বললো,
“আন্টি আর ঝামেলা করিয়েন না।আজ আমরা উঠি।অন্য একদিন আসবো।নিরা যখন এখানে আসবে।
“না বাবা আমি শুনছিনা সেই কথা ,তোমরা নিরার ঘরে গিয়ে বসো।
”
”
”
হ্যালো,,,শিশির ভাইয়া?
হ্যাঁ তিশা বল,কেমন আছিস?
আলহামদুলিল্লাহ, শোনোনা ভাইয়া তোমাকে একটা খবর দিবো,তুমি কিন্তু মন খারাপ করবানা একদম বুঝেছো।
নিরার বিষয়েই বলবিতো,তোকে বলতে হবেনা ,আমি বুঝে ফেলেছি।নিরার বিয়ে সত্যিই হয়েছে তাইতো।মন মরা ভাবে বললো শিশির।
তুমি কিভাবে জানলে ভাইয়া?
তোর কথা বলাতেই বুঝে ফেলেছি।যাই হোক,বাদ দে।
ভাইয়া মন খারাপ করো না প্লিজ।
আরে না,ধুর,পাগলি,আমি মন খারাপ করিনি,এখন রাখছি কেমন কাজ আছে।
আচ্ছা।আল্লাহ হাফেজ।
আল্লাহ হাফেজ।
”
”
”
নিরা চল খেয়ে নিবি?
“আপু আমি খাবোনা,ঘুম পাচ্ছে খুব।
“না না চল ,ফারদিন যদি শুনে রাতে তুই খাসনি রেগে যাবে।
“সে আছে নাকি যে জানবে?
“আম্মা যদি বলে দেয় তখন?চল চল,খেয়ে এসে ঘুমিয়ে পড়িস।
“ধুর,চলো।
”
”
”
দুই দিন পর….
ফারদিনের সাথে তো দেখা হলোনা আম্মা,আমি চলে যাচ্ছি,পিহুর আব্বু আজ যেতে বলেছে।কবে আবার আসবো তার ও তো ঠিক নাই।কি এমন কাজ করছে যে দু দিন থেকে বাসায় আসছেনা।
“কি জানি?এমন তো করেনা কখনো।হয়তো সত্যিই খুব কাজ।
“নিহা তুই আর নিরা দুজনে যাস কিন্তু,অনেকদিন তো যাসনি আমাদের ওখানে।
“তোমার ভাইয়েরা যেতে দিলেই যাবো আপা।
“আমার ভাইয়েরা আমার বাড়ি যেতে দিবেনা নাকি?
“তা দিবে,কিন্তু একা তো যেতে দিবে না।সাথে নিয়ে যাবে কিন্তু তাদের তো কাজ ই শেষ হয়না।দেখছোনা ফারদিন নতুন বৌ ঘরে রেখে দু দিন ধরে লা পাত্তা।
“কিরে নিরা আমার ছোট ভাই আসছেনা ক্যান বাড়ি?রাগারাগি করেছিস নাকি?বলেই হাসলো ফাহমিদা।
“আমি কেনো তার সাথে রাগ দেখাতে যাবো।সে ব্যস্ত মানুষ তাই আসছেনা।মনে মনে বললো,আসছেনা খুব শান্তিতে আছিগো আপা।তোমার ছোট ভাই তো একটা আস্ত বজ্জাত।সে যেখানে আছে সেখানে থাক।আমিও একটু শান্তিতে থাকি।
“আব্বা আপনি আর রাগ করে থাকবেন না কেমন আমি আসি তাহলে।
জামান সাহেব কিছুই বললেন না চুপ করে থাকলেন।বসে বসে খবরের কাগজের পাতা একটা করে উল্টাচ্ছেন তিনি।নিরা এখুনো ভয়ে জামান সাহেবের সাথে কথা বলেনি।জামান সাহেবের থেকে দূরে দূরেই থাকে।ভয়,লজ্জা দুটোর কারণেই কথা বলতে পারছেনা।
ফাহমিদা সবার সাথে কথাবার্তা বলে বেড়িয়ে পড়লেন শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশ্যে দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে।
রাতেরবেলা বিছানায় শুয়ে শুয়ে গল্পের বই পড়ছে নিরা গভীর মনোযোগের সাথে।ফারদিন রুমে এসে দেখে নিরা একটা বই পড়ছে।নিরার সাথে কোন কথা না বলেই ওয়াশরুমে গেলো।ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে বিছানায় ধপাস করে পড়ে শুয়ে পড়লো।নিরা আচমকা এমন হয়াতে ভয়ে লাফিয়ে উঠলো।ফারদিন যে রুমে এসেছে নিরা এতক্ষণ বুঝতেই পেরেছিলোনা।ধপাস শব্দে চমকে উঠেছে সে।
বুকে ফু দিয়ে ফারদিনের দিকে তাকালো এবার।ফারদিন চিৎ হয়ে শুয়ে আছে খালি গাঁয়ে।পড়নে একটা থ্রি কোয়াটার প্যান্ট শুধু।শুয়ে ফোন টিপছে সে।দেখে মনে হচ্ছে ফারদিনের সমস্ত মনোযোগ ওই ফোনে ,আসলে তা না,তার মনোযোগ পাশে বসে থাকা আকাশী রঙের সালোয়ার কামিজ পড়া মেয়েটার দিকে।নিরা কোন কথায় বললোনা ,ফারদিনের পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার দেখলো,এভাবে ফারদিনকে খালি গাঁয়ে দেখে খুব অস্বস্থি হচ্ছে তার।উজ্জল ফর্সা গায়ের রঙে বুকের কালো কালো লোম গুলো এমনভাবে আছে মনে হচ্ছে নিরার দিকেই লোমগুলো তাকিয়ে আছে।কিছু না বলে চুপচাপ আবার গল্পের বই পড়তে শুরু করলো সে।ফারদিন যে দুদিন বাড়ি আসেনি সে বিষয়ে তার কোন হেল দোল ই নেই।ফারদিন নিরার এমন ব্যবহার দেখে মনে মনে ক্ষেপছে।মনে মনে বলছে,
“আমি এই দু দিন কার ওপর রাগ করে বাড়ি আসিনি?যার জন্য রাগ করেছিলাম সেতো আমাকে ছাড়া দিব্বি ভালো আছে।কেমন নিশ্চিন্তে বই পড়ছে।তার বরটা যে বাইরে থেকে এসেছে,সেদিকে তার কোন নজরি নেই।রাগে ফারদিনের চোখ লাল হয়ে গেছে।সে শুধু ফোসফোস করছে।এবার সে উঠে বসলো তারপর নিরার দিকে তাকালো।হঠাৎ নিরার বইটা একটানে নিরার কাছ থেকে নিয়ে নিলো।নিরা ফারদিনের দিকে তাকিয়ে দেখে ফারদিন রাগে শুধু ফুসছে।নিরা কিছু বলতে যাবে তার আগেই হ্যাচকাটানে নিরাকে কাছে টেনে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় শুয়িয়ে দিলো তারপর নিজেও উঠে পড়লো নিরার ওপর।
“আহ,কি ভারি,নামেন।
“ফারদিন কিছু বলছেনা,রাগে লাল চোখ নিয়ে নিরার চোখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।তারপর হঠাৎ নিরার গলায় খুব জোরে কামড় বসিয়ে দিলো।
নিরা আহ করে শব্দ করে উঠলো,ব্যাথায় তার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।ফারদিন আবার নিরাকে কামড় দিতে শুরু করলো,যেখানেই পাচ্ছে নিরার শরীরে কামড় বসিয়ে যাচ্ছে।এদিকে নিরা কাঁদতে শুরু করেছে,ফারদিনকে থামাতেও পারছেনা।চিৎকারো করতে পারছেনা।এসময় দরজায় খট খট শব্দ।শব্দ কানে যেতেই ফারদিন নিরার শরীরের ওপর তার সব ভর ছেড়ে দিয়ে নিরার গলায় মুখ ডুবালো।নিরা কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,
“কে?
“আমি.
“ওহ আপু,বলো?
” খেতে আয়।ফারদিন কি ঘুম নাকি?ওকেও নিয়ে আয়।
“আচ্ছা আসছি।তুমি যাও,পড়ে খেয়ে নিবো।
নিহা চলে গেলো।
ফারদিন এবার নিরাকে ওর বুকের ওপর তুলে নিলো।কামড় দিয়ে মনে হচ্ছে ওর রাগটা একটু কমেছে।নিরা শুধু কাঁদছে,কিছু বলছেনা।কামড়ের জায়গাগুলো কেমন জ্বলছে।
চলবে।