যে শ্রাবণে এলে তুমি পর্ব:২৭

0
685

#যে শ্রাবণে এলে তুমি💕💕
পর্ব:27
লেখনিতে:মৌসুমী

নিরার চোখের জ্বালাপোড়া কমে গেছে,সে এখন আরামে পায়ের ওপর পা তুলে বসে আছে সোফার ওপর।টিভির দিকে তাকিয়ে আছে একধ্যানে আর পাপড়ভাজা খাচ্ছে।ফারদিন ঘুম থেকে উঠে এসে ধপ করে বসলো নিরার পাশে।রিমোটটা নিয়ে অন্য চ্যানেলে দিতেই নিরা তেড়ে উঠলো,
-এই যে ,আপনি অন্য চ্যানেলে দিলেন কেনো হ্যাঁ,আমি যেখানে দেখছিলাম সেটাই দেন।
-আমি এখন নিউজ শুনবো।
-না হবেনা।আপনি এখান থেকে যানতো।
-আমি কেনো যাবো?তুমি যাও,রান্না করো যাও।
-পারবোনা,
-জানিতো,শুধু তো খেতে পারো,কোন কাজের না,সকালেই তো দেখলাম,সামান্য কাঁচামরিচ আর পেঁয়াজ কাটা নিয়ে যা করলে ,হাহ।
-দেখেন আমাকে অপমান করবেননা বলে দিলাম।আর ওগুলো কাটা মোটেও সহজ না।
-তাই নাকি,আমি ছেলে হয়েই পারি আর তুমি তো মেয়ে,তোমার আরো আগে শিখা উচিত ছিলো।সে যাই হোক,তুমি কোন কাজের না সেটা আগে থেকেই জানি।বাড়ির সবাই কোথায়?কাউকে দেখছিনা যে,ফারদিন কথাটা বলে নিরার দিকে তাকিয়ে দেখে,নিরা রাগে ফুসছে।
-যা বাবা এতো রাগার কি হলো?
-আপনি একটা ফাজিল,নিজেকে নিয়ে খুব গর্ব তাই না,যেই না বালের ডাক্তার হয়েছে তাতে উনার মাটিতে পা পড়েনা।
-এর ভিতর আমার ডাক্তারির কথা আসলো কেনো?
নিরা কিছু বলছেনা চুপ করে পাপড় খাচ্ছে।সবগুলো পাপড় শেষ করে রুমে চলে গেলো।ফারদিন এতক্ষণ নিউজ না দেখে নিরার পাপড় খাওয়া দেখলো,একেরপর একটা কেমন করে মুখে সিলিয়ে তারপর রুমে চলে গেলো মেয়েটা।



রান্নাঘরে নিহা দুপুরের জন্য চুলায় রান্না বসিয়েছে।ফারদিন পেছন থেকে বললো,
-ভাবি বাড়ির সবাই কোথায়?দেখছিনা যে,
-আম্মা তার ঘরে ঘুমাচ্ছে,আপা গেছে তার ননদের বাড়ি বেড়াতে,তোমার ভাইয়া নাই।আব্বাও কোথায় জানি গেছে।আর তুলতুলো ঘুম।নিরা বাড়িতেই আছে দেখো।

-সে তো আছেই।আচ্ছা রান্না করো আমি যাই।

ফারদিন রুমে এসে দেখে নিরা শুয়ে আছে।বিছানার সাথে হেলান দিয়ে ফারদিন বসলো,ফারদিনকে পাশে দেখে উঠে চলে যাচ্ছিলো নিরা তখন ফারদিন হাত ধরে নিরাকে তার কাছে নিয়ে আসলো,
-কোথায় যাচ্ছো?আমার সাথে থাকতে ইচ্ছে করেনা?
-না,নিরা কোনকিছু না ভেবেই অন্যদিকে তাকিয়েই বলে দিলো না।
-তোমার ইচ্ছে করলেও থাকতে হবে,ইচ্ছা না করলেও থাকতে হবে।এখন আমার চুলগুলো টেনে দাওতো,মাথাটা কেমন করছে।
-পারবোনা,আমাকে ছাড়েন।আর তাছাড়া আমিতো কিছুই পারিনা, তাহলে আমাকে বলছেন কেনো।
-তো কাকে বলবো তোমাকে না বলে?
-জানিনা।
-জানোনা,আচ্ছা আমাদের তো এখুনো কিছুই হলোনা,তোমার কিছু করতে ইচ্ছে করেনা।আমি এত সুন্দর একটা ছেলে তোমার সাথে এক ঘরে বন্ধ দরজার মধ্যে থাকি,তবুও কিছু ইচ্ছে হয়না?
নিরা বড় বড় চোখ করে তাকালো ফারদিনের দিকে,ফারদিন নিরার গলায় একটা চুমু দিলো শব্দ করে।এবার নিরার মুখটা হা হয়ে গেলো,অজানা একটা শিহরণ বয়ে গেলো তার শরীর দিয়ে।ফারদিন শক্ত করে দুই হাত দিয়ে নিরাকে ধরলো তারপর নিরার মুখের কাছে মুখ নিয়ে চোখে চোখ রেখে বললো,আমি আর পারছিনা নিরা ,তোমার মাঝে গভীরভাবে ডুবে যেতে ইচ্ছে করছে।ফারদিন কথা বলার সময় নিরার ঠোঁটের সাথে তার ঠোঁটটা বারি খাচ্ছিলো আর নিরা বার বার কেঁপে কেঁপে উঠছিলো।একটা ছেলে আর একটা মেয়ে একঘরে এক ই বিছানায় কখনোই আলাদা থাকতে পারেনা ,আমি তো তাও অনেক কন্ট্রোল করলাম আর পারবোনা নিরা বলেই ফারদিন একটা বড় করে নিশ্বাস ছাড়লো আর সেই নিশ্বাসে নিরা আরো এলোমেলো হয়ে গেলো।শরীরটা কেমন যেনো অবশ হয়ে যাচ্ছে তার ফারদিনের স্পর্শে।ফারদিন নিরার ঠোঁটের দিকে কামনার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,তা দেখে নিরা চোখ বন্ধ করে নিলো।মনে মনে ভাবছে,একেই হয়তো বলে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক,মনে ভালোবাসা নেই স্বামীটার জন্য অথচ শরীরে শিহরণ বয়ে যাচ্ছে স্বামীটার ছোঁয়ায়।এজন্য একটা কথা আছে,আগুন আর ঘি একসাথে পাশাপাশি রাখতে নেই।
ফারদিন ঘোরের মধ্যে চলে গেছে।নিজেকে তার নিজের কাছে পাগল পাগল মনে হচ্ছে,সামনে থাকা এই নারীর মধ্যে ডুবে যেতে ইচ্ছে করছে তার,আর পারবেনা সে এভাবে থাকতে,ফারদিন নিরার ঠোঁটে ঠোঁট মিলাবে তখনি দরজায় দরাম দরাম শব্দ ।ফারদিন বিরক্ত চোখে দরজার দিকে তাকালো,নিরারো মনে হচ্ছে সে অন্যজগতে চলে গেছিলো,দরজার শব্দে সেও এজগতে আসলো,মনে মনে ভাবছে নিরা,একেই হয়তো বলে পুরুষ মানুষের ছোঁয়া যা নারীকে খুব সহজেই বস করে ফেলে।নিরা ফারদিনের হাতের বাঁধন খুলে দরজার কাছে গেলো,খুলে দেখে তুলতুল,
-খালামণি তুমি আমাকে একা রুমে রেখে চলে এসেছো?
-তুমিতো ঘুমাচ্ছিলে ,তাই চলে এসেছি সোনা।
-চলো আমার সাথে তুমি,আমাদের রুমে চলো বলে হাত ধরে টেনে নিরাকে নিয়ে গেলো তুলতুল।নিরা পেছনে না তাকিয়ে সেও চলে গেলো তুলতুলের সাথে।পেছনে তাকালে দেখতে পেতো ফারদিনের চোখগুলো কিভাবে ছিলো তার দিকে।

সন্ধ্যার আগেই বের হয়ে গেছে ফারদিন বাড়ি থেকে।রাতে ডিউটি আছে তার।মনে মনে নিরার উপর খুব রেগেও আছে তাই যাওয়ার আগে নিরার সাথে একটা কথাও বলেনি এমনকি নিরার দিকে ফিরেও তাকাইনি।নিরা ও ভয়ে ফারদিনের সামনে সেভাবে যাইনি।রুমে ঢুকা তো দূর কি বাত।রুমে গেলেই যদি ফারদিন তাকে চেপে ধরতো তাহলেতো সেও কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলতো,পারতোনা সে কিছুতেই ফারদিনের সাথে।আর নিরা প্রথম থেকেই খেয়াল করছে,ফারদিন তার কাছে আসলে সে বাঁধা দিতে পারেনা।কেমন যেনো বস হয়ে যাই সে।অজানা আবেগে ভেসে যাই।নিরার মনে মনে বুদ্ধি এটেছে,সে ফারদিনের সাথে এক বিছানায় আর শুবেনা।যতদিন ফাহমিদারা আছে ততদিন সে মেঝেতেই বিছানা করেই ঘুমাবে।ফারদিনের সাথে এক বিছানায় শুলে তার এতদিনের সম্পদ বিসর্জন দিতে হবে সে কিছুতেই তার সম্পদ হারাবে ফারদিন নামের ওই ফাজিলের কাছে।আর আজ যে ফারদিন রাতে থাকবেনা এতে নিরা আরো খুশি হয়ে গেছে মনে মনে।গোটা বিছানাটায় আরাম করে ঘুমাবে সে রাতের বেলা।



কিরে কি ভাবছিস,পাশে বসে নিহা বললো নিরাকে।
-কিছুনা আপু।
-কলেজে যাচ্ছিস না কেনো?পড়তেও বসছিসনা।ফারদিনতো বলেছে তোকে পড়াবে।তাহলে?
-আপু মন মেজাজ ভালোনা,ঠিক হোক,দুদিন পর থেকে যাবো কলেজ।
-এখন পড়তে বস যা,আর আজ রাতে তো ফারদিন আসবেনা,অনেকক্ষণ পড়বি,পরিক্ষার সময় নাহলে সমস্যা হবে।
-আপু আজ আর পড়বোনা।আচ্ছা মামনি কি করছে ঘরে একা একা বলোতো?
-কি জানি,আব্বাও তো নেই।কি করছে কে জানে।



কলিংবেলের শব্দ পেয়ে দরজা খুললো উৎস।দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে তিশা আর মাহিন।উৎস ওদের দেখে হেসে বললো,
-আরে আপুরা যে,এসো এসো ভিতরে।
তিশা আর মাহিন ভিতরে প্রবেশ করতে দেখলো,মাহফুজা বেগম বসে আছে।দুজন সামনে এগিয়ে গিয়ে মাহফুজা বেগমকে সালাম দিলো।মাহফুজা বেগম হাসিমুখে সালামের উত্তর দিয়ে ওদের বসতে বললো।তিশা আর মাহিন দুই সিটের একটা সোফায় পাশাপাশি বসলো।

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here