যে শ্রাবণে এলে তুমি পর্ব:৩০

0
695

#যে শ্রাবণে এলে তুমি💕💕
#পর্ব:30
#লেখনিতে:মৌসুমী

চায়ের কাপে অন্যমনস্ক হয়ে চুমুক দিতে গিয়ে মুখটাই পুড়ে গেলো ফারদিনের।এখন আর কোন স্বাদ ই পাচ্ছেনা সে চা থেকে।ফারদিনের পাশে এসে বসলো তার পুরোনো বন্ধু আসিফ।আসিফকে দেখে ফারদিনের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো।আসিফ ফারদিনের পিঠে চাপড় মেরে বললো,
-কিরে ,তুই এখানে যে?
-আমি এখানে প্রায় সময় পেলেই আসি।
-ওহ ,তাই নাকি।এবার থেকে তাহলে শুক্রবারে একবার করে আসিস।আমিও তো আসি এখানে।সাথে সজল,তামিম,ফাহাদ এরাও আসে।
-আচ্ছা চেষ্টা করবো।
-তুই তো আমাদের সেভাবে মনেই রাখিসনি,সেই যে ইন্টার পাস করে ঢাকা চলে গেলি তারপর ওই মেয়ের দেওয়া ছ্যাকা খেলি তারপরতো আমাদেরো ভূলে গেলি।মেডিকেলে চান্স পাওয়ার পর ও যখনি রাজশাহী আসতি তখনি দিনে একবার হলেও আমাদের সাথে আড্ডায় বসতি।বাইক নিয়ে আমরা এ গলি ও গলি ঘুরে বেরিয়েছি কত।একটা মেয়ের কাছে ধোঁকা খেয়ে পুরোপুরি নিজেকে গুটিয়ে নিলি সাথে আমাদেরকেউ পর করে দিলি।
-বাদ দে সেসব কথা।আমি বিয়ে করেছি।
-কিহ?
-অবাক হওয়ার কিছু নেই,আমি বিয়ে করেছি।
-কাকে?কবে?কখন?
-বিয়েটা হঠাৎ হয়ে গেছে তাই সেভাবে কেউ এখুনো জানেনা।আর বিয়েটা হয়েছে নিরার সাথে।
-নিরা মানে?সেই?ওহ মাই গড,ওহ মাই গড,কি বলিস।
-এত উত্তেজিত হোস না।ওর সাথে বিয়েটা হয়ার ছিলো তাই হয়ে গেছে।কপালে ছিলো বলেই।
-তাহলে তো মামা আমাদের ট্রিট দিতে হবে।তোমার বিয়ে বলে কথা।
-যাহ শালা,ট্রিট তোরাই দিবি।এতবড় একটা খবর শোনালাম ।
-না না হবে না ট্রিট তুই দিবি।আগামী শুক্রবারে।এখন কোন রেস্টোরেন্টে দিবি সেটা তুই ঠিক কর।
-শালা,তোকে বলেই ভূল করলাম আমার বিয়ের কথা।এখন কতগুলো টাকা গচ্ছা যাবে আমার।
ফারদিন আর আসিফ গল্প করতে করতে কখন যে রাত দশটা বেজে গেছে তা তারা বুঝতেই পারেনি।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আসিফ বিদায় দিয়ে চললো শ্বশুরবাড়ি।

ফয়েজ ফারদিনকে দেখেই বললো ,
-কিরে এতক্ষণ কোথায় ছিলি?আমরা কখন থেকে অপেক্ষা করছি তোর।
-আসিফের সাথে দেখা হয়েছিলো,ওর সাথে আড্ডা দিতে গিয়েই দেরি।
মাহফুজা বললেন,খাবার রেডি,তোমরা আসো সবাই,খেয়ে নাও।
তুলতুল সারাবাড়ি দৌঁড়ে বেড়াচ্ছে,পেছন পেছন নিহাও তাকে খাওয়ানোর জন্য ছুটছে।নানির বাড়ি এসে মনে হচ্ছে তুলতুলের আনন্দের শেষ নেই।উৎস গিয়ে তুলতুলকে কোলে নিলো।কিন্তু সে কোলে থাকবেনা তাই নামার জন্য লাফালাফি শুরু করেছে।

খাবার টেবিলে নেওয়াজ সাহেব,ফয়েজ,ফারদিন আর উৎস বসেছে খেতে।মাহফুজা বেগম সেখানে সবার পাতে খাবার তুলে দিচ্ছে।দুই জামাইয়ের প্লেটে গরুর মাংস তুলে দিয়েছে আচ্ছা মতো।আরো বিভিন্ন কিছু রান্না করেছেন মাহফুজা বেগম,সেসবেও প্লেট ভর্তি।এত খাবার দেখে ফারদিন আর ফয়েজের অবস্থা খারাপ।নিহা শুধু দেখছে আর মিটিমিটি হাসছে।

রুম থেকে টলতে টলতে বেড়িয়ে আসলো নিরা।মাহফুজা বেগমকে বললো,আম্মু আমি কিছু খাবোনা।আমাকে ডেকোনা আমি এখন ঘুমাবো।

মাহফুজা বেগম নিরার দিকে তাকিয়ে বললো,
-এরকম রুগি হয়ে আছিস কেনো।জামাইয়েরা আছে আর তুই রুমেই ঢুকে থাকছিস,কোথায় তাদের সেবাযত্ন করবি।
-সেবাযত্ন তো করছো তোমরা,আমি এখানে থেকে কি করবো?
-কি করবি মানে?নিহা যেমন ফয়েজের দেখাশোনা করছে তোর ও দ্বায়িত্ব ফারদিনের দেখভাল করা।এখানে আয়।ফারদিনের কি লাগবে না লাগবে দেখ।
নিরা আর কিছু বললোনা,অনিচ্ছায় ফারদিনের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।ফারদিন খেয়েই যাচ্ছে,নিরার দিকে তাকাচ্ছেনা।তাকালে দেখতে পেতো নিরার চোখমুখ কেমন হয়ে আছে।
নিহা নিরাকে বললো,
এভাবে সকাল থেকে ঘুমটা দিয়ে থাকছিস কেনো সারাক্ষণ,মুখটাও দেখা যাচ্ছেনা।
নিরা শুকনো গলায় বললো,
-এমনি, ইচ্ছা হয়েছে তাই।
ফারদিন খেতে খেতে বললো,
-আমি আর পারবোনা খেতে,অনেক খাওয়া হয়ে গেছে।ফারদিনের দেখাদেখি এবার ফয়েজো তাল মেলালো।
মাহফুজা বেগম আর জোর করলেননা।দু’ভাই উঠে পড়লো চেয়ার থেকে।নেওয়াজ সাহেবের আগেই খাওয়া হয়ে গেছে।উৎস এখুনো বসে আছে খাবারের প্লেট নিয়ে।তার খাওয়া এখুনো শেষ হয়নি।মানুষ ভাববে অনেক বেশিই খায় সে,আসলে তা না।আসতে আসতে ছাড়া জোড়ে খেতে পারেনা সে তাই তার দেরি হয় খেতে।

-নিরা যাও ফারদিনকে তোমার ঘরে নিয়ে যাও।মাহফুজা বেগম বললেন।
-নিরা ফারদিনকে নিয়ে তার ঘরে ঢুকলো।এর আগে কখনোই ফারদিন নিরার ঘরে আসেনি তাই দেখেওনি নিরার ঘরটা।তাই আজ প্রথমে ঢুকেই ঘরের চারদিকে নজর বুলালো।একটা খাট,ডেসিংটেবিল,ওয়ারড্রপ,পড়ার টেবিল,একটা কাঠের চেয়ার টেবিলের সাথে।আর একটা বুকসেল্ফো আছে ঘরটিতে।বুকসেল্ফ ভর্তি গল্পের বই।ফারদিন জানতোই না এতদিন যে নিরা এত বই পড়ুয়া।ওর বই দেখে বুঝতে পারলো এখন।

নিরা ফারদিনকে বললো,
-আপনি ওপরে শুয়ে পড়ুন।
-তুমি শুবেনা?
-আমি নিচে আগে বিছানা করে নিই তারপর শুবো।
-কেনো,উপরে শুলে কি হবে।গাঁয়ে ফোসকা পড়বে আমার সাথে এক বিছানায় থাকলে?
-ফোসকা তো ফেলেই দিয়েছেন কাল রাতে।
-তাই নাকি?আরো দিবো।কামড়িয়ে তোমার পুরো শরীরে আমার দাঁতের চিহৃ বসিয়ে দিবো যাতে তোমার তাসিফ এসে দেখে ঘিন্নায় আর তোমার কাছে আসার চেষ্টা না করে।
-আপনি আবার তাসিফ ভাইয়ার নাম আমাদের মধ্যে আনছেন কেনো?
-তো কার নাম আনবো?তাসিফ ছাড়াও তাহলে আরো অনেকেই আছে তোমার পেয়ারে লাল তাইতো?
-মুখ সামলে কথা বলেন।আপনি আমাকে সস্তা ভাবেন নাকি?
-সস্তাকে সস্তা ভাববো নাতো কি ভাববো,,
নিরা এবার চোখের পানিটা আটকাতে পারলোনা ,ফারদিন ওকে সস্তা মেয়ে ভাবে এটা ভেবে কাঁন্নারা দলা পাকিয়ে তার গলায় এসে আছে।কাঁদো কাঁদো গলায় ফারদিনকে বললো,
-সস্তা যখন ভাবেন তখন বিয়ে করলেন কেনো আমাকে?
-নিজের শান্তির জন্য,কিন্তু সেটা যে বিশাল ভূল করেছি এখন সেটা হাড়েহাড়ে টের পাচ্ছি।
কাঁন্নাভরা ডাগর ডাগর চোখে ফারদিনের দিকে তাকালো নিরা।সেই চোখ দেখে ফারদিনের বুকটা কেঁপে উঠলো।সে এই মেয়ের চোখের দিকে তাকালে সবকিছু ভূলে যাই।ইচ্ছে করে বুকের ভিতর জাপটে ধরতে।নিরা আর কোন কথা বললোনা।নিচে বিছানা করতে শুরু করলো তারপর শুয়ে পড়লো।
ফারদিন নিজেকে আটকানোর অনেক চেষ্টা করেও যখন পাড়লোনা তখন নিচেই নিরার পাশে শুয়ে নিরাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো,আর তখনি টের পেলো,,,,



আর কয়েকদিন পর ই তাসিফ দেশে ফিরবে।নিরাকে ফোনে না পেয়ে সে পাগল হয়ে গেছে।সে তার মাকে জানিয়েছে যে সামনে সপ্তাহেই সে দেশে আসছে।এদিকে তাসিফের মা মাজেদা বেগম ভয়ে কাবু হয়ে আছে।তিনি শুনেছেন নিরার বিয়ে হয়ে গেছে।নিরার মা নিজে তাকে ফোন করে জানিয়েছেন এই সংবাদটি।হঠাৎ বিয়ে হয়াতে কাউকে জানাতে পারেনি বলে মাহফুজা বেগম বোনের কাছে দুঃখ প্রকাশ ও করেছেন।
মাজেদা বেগম জানেন তার ছেলে তাসিফ কতটা পাগল নিরার জন্য।এখন দেশে এসে যখন শুনবে নিরার বিয়ে হয়ে গেছে তখন কি যে করবে তাই ভাবছে মাজেদা বেগম।একটাই ছেলে তার তাসিফ।যদি কোন অঘটন ঘটিয়ে ফেলে তাহলে তিনি পাগল হয়ে যাবে।মাজেদা বেগমের ভাবনার মাঝে তার বড় মেয়ে তিয়াশা কল করেছে তার ফোনে।
মেয়ের সাথে ফোনে কথা বলে এখন একটু শান্তি লাগছে।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here