যে শ্রাবণে এলে তুমি পর্ব:৩৩

0
651

#যে_শ্রাবণে_এলে_তুমি💕💕
#পর্ব:33
#লেখনিতে:মৌসুমী

নাইমা আজ ভিষণ বায়না ধরেছে সে তার বড়মামার বাড়ি যাবে।তার নাকি বেড়াতে যেতে খুব ইচ্ছা করছে।সাহেদা বেগমের এমনিতে হাতে প্রচুর কাজ সে এখন কোথাও যেতে চাচ্ছেনা।কিন্তু মেয়ের অনবরত ঘ্যানঘ্যানানির কাছে পরাজিত হয়ে তিনি এখন বসেছেন ব্যাগ গোছাতে।নাইমা আজ চমৎকার করে সেজেসে।দেখতে তাকে খুব সুন্দর লাগছে।আজ আর কোন উদ্ভট সাজ দেয়নি।সে এখন ইউটিউবে দেখে কিভাবে সুন্দর করে সাজতে হয় সেখান থেকে কিছু শিখেছে,তার আব্বা তাকে একটা স্মার্টফোন কিনে দিয়েছে।অবশ্য নাইমার আবদারেই না হলে এত দামি ফোন নাইমার আব্বা কখনোই কিনে দিতেননা।

তাড়াহুড়ো করে স্টেশনে এসেছে নাইমারা।ট্রেনেই যাবে তারা জামান সাহেবদের বাড়ি।সাথে নাইম ও আছে।নাইম বলছিলো তার মোটরসাইকেলেই যাবে কিন্তু সাহেদা বেগম রাজি হলেননা।তিনি ট্রেনেই যাবেন।ভাইয়ের বাড়ি অনেকদিন পর যাচ্ছেন,খালি হাতে তো আর যাওয়া যাইনা তাই যা পেয়েছেন সব বস্তায় ভোরেছেন ভাইয়ের বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য। ট্রেন এসে কাঁকন স্টেশনে থামতেই তারা ট্রেনে তাড়াহুরো করে উঠে পড়লেন।ট্রেনের মধ্যে ভিড় আছে তবে সামনে যেতে যেতে আরো ভীড় হবে এটা জানে ওরা।সিট পেয়ে তিনজনেই তাড়াতাড়ি বসে পড়লো ।ট্রেন চলতে শুরু করেছে।জানালা দিয়ে হুহু করে বাতাস আসছে।গরমের দিনে ট্রেনে বসা মানে যাইতাই অবস্থা তবে ট্রেন যখন চলতে শুরু করে আর জানালার ধারে বসা যাই তাহলে খুব শান্তি।

রাজশাহী স্টেশনে এসে ট্রেন থেমেছে কিন্তু এমন জায়গায় ট্রেনটা থেমেছে যে প্লার্টফর্মের সাইডে না।নামতে হলে ঝুলে ঝুলে নামা লাগবে।খুব ই কঠিন কাজ সেটা।নাইমা নামার সময় খুব ভয়ে ভয়ে নামলো,মনে হচ্ছিলো সে এখুনি পড়ে যাবে কিন্তু পড়েনি।সবাই এবার স্টেশন থেকে বের হয়ে একটা রিকশা নিলো,রিকশার ওপরে বসলো নাইম আর সিটে বসলো সাহেদা বেগম আর নাইমা।


অনেকক্ষণ থেকে কলিংবেল বাজছে।কেউ দরজা খুলে দিচ্ছেনা।না পেরে উৎস বের হলো তার রুম থেকে।উৎস দরজা খুলে হতভম্ব হয়ে এখন দাঁড়িয়ে আছে।তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে ফারহা মুখটা গোমড়া করে।উৎস ভয়ে আশপাশ দেখেই ফারহার একটা হাত ধরে ছুটলো সিঁড়ির দিকে।ছাদে গিয়ে যা কথা বলার বলবে সে ফারহার সাথে।ছাদে এসেই আগে সিঁড়িঘরের দরজা বন্ধ করলো উৎস।ফারহা আগুন চোখে তাকিয়ে আছে উৎসর দিকে।উৎস ফারহার থেকে দুই হাত দূরে দাঁড়িয়ে থেকে বললো,
-তুমি হঠাৎ চলে আসলে কেনো?আমাকে ফোন দিতে,আমিই ছাদে আসতাম তারপর যেভাবে আমরা কথা বলি সেভাবেই কথা বলতাম।দরজা আমি না খুলে যদি আম্মু খুলতো তাহলে কি হতো বুঝতে পারছো।
-তোমাকে তো ফোন দিয়েছিলাম,তোমার ফোন বন্ধ তাইতো আসতে বাধ্য হলাম।কারণ তোমাকে আমার খুব দেখতে ইচ্ছে করছিলো।
-ইচ্ছে করলেই সব ইচ্ছেকে সবসময় প্রাধান্য দিতে নেই ফারহা।আমাদের এখন গোপনেই সম্পর্কটাকে টিকিয়ে রাখতে হবে।
-গোপন আর কৈ আছে,তোমার আপুরাতো জানেই।
-আপুরা জানলে সমস্যা নাই কিন্তু আমার আম্মা জানলে বিশাল সমস্যা হবে,তারচেয়ে বড় কথা তোমার আব্বু।
-তা ঠিক বলেছো।শোন সামনেই আমি নাইনে উঠবো আর তুমি ভার্সিটিতে ভর্তি হবে তারপর আমরা পালিয়ে বিয়ে করে নিবো।
উৎস এবার একটু হাসলো ফারহার কথা শুনে,মেয়েটা এখুনি খালি বিয়ে বিয়ে করে।
-আমরা অবশ্যয় বিয়ে করবো ফারহা ,আল্লাহ আমাদেরকে নিরাশ করবেনা তবে সেটা আরো কয়েক বছর পর,বুঝেছো পাগলিটা বলেই উৎস ফারহার গাল টিপে দিলো।এখন তুমি বাসায় যাও ফারহা।ফোনে কথা বলবো ওকে,এখানে বেশিক্ষণ থাকা যাবেনা।ফারহা যাবেনা সে আরো কিছুক্ষণ থাকবে এখানে,উৎস অনেক বুঝিয়ে সুজিয়ে ফারহাকে তার বাড়ি পাঠালো।



নাইমা এসে প্রথমেই ফারদিনের কথা ফজিলা বেগমকে জিঙ্গেস করেছে।ফারদিন বাড়ি আছে কিনা,কখন আসবে,এই সেই,ফজিলা বেগম বলেছে রাত হবে কিংবা নাও আসতে পারে,কোন ঠিক নাই।সাহেদা বেগম বস্তায় ভরে এতো কিছু এনেছেন যে ড্রয়িংরুমটাকে ছোট খাট বাজার মনে হচ্ছে,ফজিলা বেগম কথায় একটু রাগি ভাব এনে সাহেদা বেগমকে বললো,
-এতো কিছু তোমাকে কে আনতে বলেছে সাহেদা?ভাইয়ের বাড়ি আসবো তো এমনিই আসবা,নাহলে কম কিছু নিয়ে এসেছো।তোমাদের কত কষ্ট হয়েছে বলোতো?
-আরে ভাবি কি বলো,আনবোনা,এতদিন পর যখন আসনু তখন একটু কিছু না আনলে হয় বলো?তোমরাতো আর এই শহরে টাটকা কিছু পাও না।এগুলো সেজন্যয় এনেছি।তা বৌমারা কৈ।তাদের দেখছিনা।ফারদিনের বৌ কৈ,যেভাবে হঠাৎ বিহ্যা হলো তারপর তো আর দেখায় হয়নি।যেভাবেই হোক মেয়েটা এখন আমার বাপের বংশের বৌ তাই ওর জন্য কিছুই আনতে পারিনি তবে হঠাৎ যখন আস্যাছি সাথে আমার এক জোড়া কানের দুই নিয়্যা আস্যাছি।খালি হাতে তো আর নতুন বৌমার মুখ দেখা যাই না।
-তুমি এসেছো এতেই আমি খুশি সাহেদা।তোমাকে কিছু উপহার দিতে হবে না।
-তা বললে কি হয় ভাবি?ফয়েজের বৌকেও দিয়্যাছি,ফারদিনের বৌকে না দিলে খারাপ দেখায়।
-আচ্ছা দিও,এখন রেস্ট নাও তো,ওতদূর থেকে এসেছো,তাও আবার ট্রেনে।
-বৌমারা নাই নাকি ভাবি?
-আর বলোনা,ওরা গেছে বাপের বাড়ি।তুলতুল আজ কাঁদছিলো তাই ফয়েজ সকালে রেখে গেছে।দুই ভাই ওখান থেকেই কাজে যাচ্ছে,আজ হয়তো আসতে পারে বাড়িতে।বৌমারা এক সপ্তাহের জন্য গেছে তবে তোমরা যখন এসেছো তখন আজকেই ওদের আসতে বলবো।
-ওহ,তাহিলে তো আমরা আসাতে ওহরে সমস্যায় হলো,বাপের বাড়ি গেছে কদিন থাকার লেগ্যা।
-আরে সমস্যা নাই,বিয়ে হৈছে বাপের বাড়ি থাকার জন্যে নাকি,দুদিন তো থাকলো,আর তাছাড়া বাড়িতে তোমরা এতদিন পর এসেছো ওদের না আসলে চলে।
-তারপরো ভাবি,
-তারপরো কিছুনা।যাও এখন একটু রেস্ট করো।



রাগে নিহার মেজাজ এখন এক কোটি ভোল্টেজে।এমনিতেই সকাল থেকে তুলতুলের ওপর রেগে আছে তারপর আবার এখন ফজিলা বেগম ফোন করে বলছে সন্ধ্যার পর ফয়েজের সাথে দুইবোন চলে এসো।এতদিন পর বাপের বাড়ি এসেও শান্তি নাই,মেহমান এসেছে তাই আজ ই যাওয়া লাগবে।সবকিছু বলতেও পারেনা মুখ ফোটে।বড়দের সাথে তাহলে বেয়াদবি করা হবে কিন্তু মাঝেমাঝে ওর খুব রাগ হয়।নিজেকে কন্ট্রোল করতে গিয়ে অনেক সময় কেঁদেও ফেলে যেমন এখনো কাঁদছে,পাশে বসে মাহাফুজা বেগম বোঝাচ্ছে নানাভাবে তাও ওর বুঝ আসছেনা।মনে হচ্ছে ছোট মেয়ে হয়ে গেছে সে।নিরা কিছু বলছেনা,সেও বিরক্ত,বিবাহিত জিবনটা আসলেই কেমন যেনো,নিজের স্বাধীনমত কিছুই করা যাই না,বিবাহিত জিবন হলো একটা পরাধীন জিবন,অন্যের কথাতেই সব,নিজের কোন স্বাধীনতা নাই।

অনেক বুজিয়ে নিহাকে শান্ত করে পাঠিয়েছে মাহফুজা বেগম।নিরা অবশ্য কোন কিছু বলেনি,সে তার ব্যাগ গুছিয়ে নিহাকে নিয়ে ফয়েজের সাথে চলে গেছে।বিয়ে যখন তার হয়েছে তখন সে এখন বাপ-মায়ের কাছে বোঝা ছাড়া কিছুই না,তাই সে কোন অমত করেনি।ফারদিন অবশ্য ফোন করেছিলো মাহফুজা বেগমের ফোনে,নিরাকে বলেছিলো যেনো যাওয়া নিয়ে কোন ঝামেলা না করে।


ও বাড়ি গিয়েই কোমড়ে শাড়ির আঁচল গুজে কাজে লেগে গেছে নিহা।সাহেদা বেগমদের সাথেও মিষ্টিভাবে কথা বলেছে।বাপের বাড়িতে যেই রাগ দেখাচ্ছিলো তার বিন্দুমাত্র ও তার চোখে মুখে এখন নেই।এখন ঠোঁটে হাসি নিয়ে সে রান্না করে যাচ্ছে।নিরা তাকে সবজি কেটে দিয়েছে।সেও হাতে হাতে এখুনো বোনকে সাহায্য করছে।


রান্নাঘরের দরজার সামনে চোখমুখ কুঁচকে দাঁড়ালো নাইমা।তার নজর নিরার দিকে।রাগি কন্ঠে নিরাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-এই মেয়ে আমাখে পানি দাওতো,নাইমার গলার সড় শুনে নিরা,নিহা দুজনি তাকালো দরজার দিকে।নাইমা আবার বললো,
-শুনতে পাওনি?
নিহা বললো,
-কাকে বলছো পানি দিতে?
নিরার দিকে আঙ্গুল তাক করে নাইমা বললো,
-এই মেয়েটাকে ভাবি।
-এই মেয়ে মানে?ওর তো একটা নাম আছে?
-থাকতে পারে,
-শোন ওর নাম নিরা আর সে এখন তোমার ভাবি তাই ভাবি বলে ডাকো,
-কে ভাবি?এই মেয়ে?
-তো কে?
-শোন নাইমা তোমার এই মেয়ে কথাটা শুনতে আমার খুব খারাপ লাগছে তাই ভালোভাবে ডাকো আমার বোনকে।নিরা ওদের দুজনের কথা শুনে যাচ্ছে।নাইমা মেয়েটার কথা শুনে রাগে গাঁ জ্বলছে ওর তবুও চুপ করে আছে কারণ এই মেয়েটার সাথে সে তর্ক করবেনা।বিরক্তিকর মেয়ে একটা,কোন ভদ্রতা জানেনা।
-ভাবি শোন তোমার বোন আমার কোন ভাবি না বুঝেছো,যেই না নষ্টামি করে ফারদিন ভাইকে বিয়ে করেছে সে আবার ,,যাই হোক,পানি দাও,
নিহার এবার পায়ের রক্ত মাথায় উঠে গেছে কিন্তু সে নিরুপায় এই মেয়েকে সে কিছুই করতে পারবেনা নাহলে একে ঠাটিয়ে দু,চারটা থাপ্পর দিতে ইচ্ছে করছে তার।নিরা নাইমাকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই নিহা নাইমার হাত ধরে থামালো।নিরা কঠিন চোখে নাইমার দিকে তাকিয়ে ফোস ফোস করছে।নষ্টামি কথাটা শুনে তার রাগটা এবার আরো বেড়ে গেছে।নিহা নিরাকে চোখ দিয়ে ইশারা করে শান্ত হতে বললো তারপর গ্লাসে পানি ঢেলে নাইমার মুখের সামনে ধরলো।

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here