রহস্যের_কুয়াশা☠️ পর্ব_৮

#রহস্যের_কুয়াশা☠️
পর্ব_৮
#হাফসা_ইরিন_রাথি
ক্লাস ভিত্তিক ৩ জনের মধ্যে মিলি আর ইহানের সাথে আরেকটা মেয়েও নির্বাচিত হলো।মিলি প্রথমের প্রশ্নগুলোর উত্তর না জানলেও পরেরগুলোর উত্তর খুব সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পেরেছিল।
–তোমাদের ৩ জনকে ১ মাস পর প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে হবে।ভালো মতো প্রস্তুতি নিও।

আস্তে আস্তে দিন কেটে যাচ্ছিলো।মিলি ইংরেজিটা ভালো করে আয়ত্বে আনলো যাতে প্রতিযোগিতার দিন সমস্যায় না পড়তে হয়।ওর ইংরেজি বাদে মুটামুটি সব বিষয়েই ভালো অভিজ্ঞতা আছে।আর ইহান? ইহান নিজে তো পড়াশুনো করেই না সারাদিন মিলিকে জ্বালায়।
–হ্যাঁ পড় পড় ভালো করে পড়।দেখলে তো তোমার ঐ কালো গরুটা কিভাবে একটা প্রশ্নের জবাবও দিতে পারলো না?

–তুমি শুধু নাফিদের পেছনে লেগে থাকো কেনো বলোতো?আজাইরা।
এখন প্লিজ আমায় পড়তে দাও।আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকি আছে।

–কই আমি তো পড়ি না।তুমি এতো পড়ে কি করবা?

–আমি তো তোমার মতো ম্যাজিক জানি না যে চুরি করবো।

–এক্সকিউজ মি,আমি চুরি করি না বুঝলে।নিজের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপানো,হুম
মালিহা বেগম চলে আসায় মিলির কথাটা মুখেই রয়ে গেলো। মেয়েকে সারাদিন বই নিয়ে পড়ে থাকতে দেখে উনি ভীষণ খুশি হোন।মিলির জন্য চা করে এনে ওর সামনে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আবার চলে গেলেন।উনার পেছন পেছন মিতুও এসেছে। ইহানকে মিতুকে কাছে ডাকলো।
–আমি মিতুকে নিয়ে ঘুরতে যাচ্ছি। রুশাও যাবে আমার সাথে।তুমি চাইলে আসতে পারো।

–নো,থ্যাঙ্কস।
মিলি এই বলে নিজের পড়া করতে লাগলো। ইহান ভীষণ বিরক্ত হলো ওর কাজে।সেইদিন ক্লাসে সিলেক্ট হবার পর থেকে শুধু বই নিয়েই পড়ে থাকে মিলি। সারাদিনে ইহানকে একটুও সময় দেয় না,ওর সাথে খেলে না,ঘুরতে যায় না। ইহান মন খারাপ করে মিলির দিকে ভেজা চোখে অপলক তাকিয়ে রইলো কতক্ষন।তারপর অদৃশ্য হয়ে গেলো সেখান থেকে।
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
–ইহান তুই এখানে একা মন খারাপ করে বসে আছিস যে?(রিমাদ)

–আমার মনে হয় ও রিদের কোনো ব্যাপারে মন খারাপ করে আছে।(রোজা)

–কেনো কি হয়েছে আবার?
ইহান এইবার মাথা তুলে ওদের দিকে তাকালো।এই দুজন বন্ধুর উপর ও অনেক কৃতজ্ঞ।আপন ভাই বোন ও কারো জন্য এতটা করে না যতটা ওরা করেছে বা করছে।ওদের দিকে তাকিয়ে হাসার একটু ব্যার্থ চেষ্টা করলো ইহান।
–তেমন কিছু না।
(অন্যমনস্ক হয়ে)আমার বারবার কেনো জানি মনে হচ্ছে আমি পারবো না। রিদ হয়তো বা পুরোপুরি মানুষে পরিণত হয়ে যাবে রে।ওকে আমি পারছিনা সব কিছু থেকে দূরে রাখতে।ওর ১৬ বছর হবার আগেই আমায় যা করার করতে হবে।৫ বছর তো পেরিয়েই গেলো।আমার খুব ভয় হয়, পাছে আমি আমার রিদকে হারিয়ে না ফেলি।
ওকে স্বান্তনা দিতে রুশা ওর মাথায় হাত দিয়ে সান্ত্বনার সুরে বললো,
–তুই চিন্তা করিস না দোস্ত।আমাদের সবার এতো চেষ্টা,এতো দোআ আল্লাহ তায়ালা নিশ্চয়ই আমাদের হতাশ করবেন না।

–আর সেদিন আমরা তো ভালোর পথেই ছিলাম, ন্যায়ের পথে।আমরা ঐ শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে আমাদের সমগ্র জ্বীন জাতিকে রক্ষা করেছি। রিদ যদি সেদিন শহীদ না হতো তাহলে আজ নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতো সমগ্র জ্বীন জাতি।তাই আমাদের এতদিনের সবার এতো প্রচেষ্টা কিছুতেই ব্যার্থ হতে পারে না,কিছুতেই না।

–কিন্তু রিদ এই পৃথিবীর দুনিয়াবি জিনিসের উপর এতই নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে যে আমি ওকে এসবের থেকে দূরে রাখতেই পারছি না।ও নিজের ওই প্রতিযোগিতার জন্য সারাদিন বই নিয়েই পড়ে থাকে।এভাবে চলতে থাকলে তো সম্ভব না।আমি কিভাবে পারবো তাহলে।
রিমাদ দৃঢ় ও কঠিন গলায় ইহানকে দোষারোপ করে বললো,
–তোর জন্যই এসব হয়েছে।
ওর কথা শুনে ইহান চোখ বড় বড় করে বললো,
–আমার জন্য!!!

–হ্যাঁ তোর জন্যই।তুই স্কুলের ব্যাপারগুলোতে ওকে যেতে বাধ্য করেছিস।তুই কোন দরকারে ওইদিন ক্লাসে প্রশ্নের জবাব দিতে গেলি?তুই দিছস দেইখাই তো রিদ নিজেও তোর চেয়ে উপরে উঠার জন্য জিদ করেই এখন এতো পড়তেছে।স্কুলের ওই ছেলেদের ব্যাপারে তুই কেনো এতো সিন্সিটিভ?তুই কেনো ওই মোটা করে ছেলেটাকে মারতে গেলি ওইদিন?এসব করে তুই রিদের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছিস,তুই কি বুঝতে পারিস?
ইহান এতক্ষন মন দিয়ে রিমাদের কথাগুলো শুনছিল।ও ভেবে দেখলো রিমাদ ঠিকই বলেছে।ওর বাড়াবাড়ির জন্যই আজ রিদ জেদ ধরে পড়তেছে যাতে ও জিততে পারে। ইহান মনমরা হয়ে বললো,
–আমি কি করবো বল?ওর পাশে কাউকে আমি সহ্য করতে পারি না যে!ওই ছেলেটা ওর পেছনেই ঘুরঘুর করে শুধু।আর আমি তো প্রতিযোগিতার কথা বলেছিলাম যাতে করে রিদের সাথে একটু খুনসুটি করতে পারি কিন্তু ও যে নিজেকে বড় প্রমাণ করতে এমনভাবে বই নিয়ে পড়ে থাকবে আমি তো সেটা বুঝিনি!
রুশা এতক্ষণ চুপ করে শুনছিল ওদের দুজনের কথোপকথন।এইবার কথা না বলে পারলো না।
–রিদ তো বরাবরের জন্যই এমন ছিল।ও নিজেকে ছোটো ভাবতে পারে না।বস্তুত ওর মতো যোগ্যতা কারো ছিলোও না।
ইহান শূন্যে তাকিয়ে একটা অর্থহীন হাসি দিয়ে বললো,
–সব ছাড়লেও এই জিনিসটা রয়েই গেলো তোমার খাদিজাতুল রিদ!
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
আজ ৩ দিন হলো মিলি ইহানকে দেখে না। ইহান সেদিন সেই যে গেছিলো আর আসেনি।এসেছে তবে মিলি দেখেনি।ও দূর থেকে মিলিকে দেখতো।মিলি এখন বই সামনে রেখে অন্যমনস্ক হয়ে ভাবছে ইহানের কথা। ইহান দূর থেকে ওর এই অন্যমনস্ক ভাব দেখে কষ্ট পেলেও ঠিক করেছে ওর সামনে আসবে না।
–আমি তোমার সামনে আসতে পারছি না রিদ।আমায় ক্ষমা করো।তোমায় আমার গুরত্ব বুঝতে হবে।এভাবে যদি তুমি বুঝতে পারো!
স্কুল ২ দিন বন্ধ ছিল আজ খোলা। রুশার মোবাইল নাম্বার না থাকায় রুশাকেও কল দিয়ে জিজ্ঞেস করতে পারছে না ইহানের ব্যাপারে।এই রুশা অসময়ে চলে আসে অথচ এই প্রয়োজনের সময় তিনি লাপাত্তা!আসলে ইহান রুশাকে মানা করে দিয়েছে যাতে সে স্কুলে না যায় বা রিদের সাথে দেখা না করে।
মিলি স্কুলে গেলে কোনো একটা খবর নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে ভেবে আবার পড়ায় মন দিলো। ইহানের গুরত্ব এখনো পুরোপুরি বুঝতে পারে নি ও।আগের মতো যদিও পড়তে পারে না, ইহানের কথা মনে হয়, ইহানকে মিস করে কিন্তু এখনো বই ভালই পড়ে আর সেজন্যই ইহান ওর সামনে আসে না।
রেডী হয়ে স্কুলে চলে গেলো কিন্তু সেখানে গিয়ে হতাশ হলো যখন কাউকেই পেলো না,না ইহানকে না রুশাকে।খুব খারাপ লাগতে লাগলো ওর কারণ এখন ও ঠিকই বুঝতে পারছে যে ইহানের সাথে ওইদিন ঘুরতে যাওয়ার ব্যাপারটা নাকচ করে দেওয়াতেই ইহান রাগ করে আসছে না।
এভাবে আরো ৪ টা দিন কেটে গেলো।মালিহা বেগম খেয়াল করতে লাগলেন মিলি এখন কেমন যেনো একটু মনমরা হয়ে থাকেন।আর আগের মতো বইও পড়ে না।মাঝে মাঝে উনি রুমে গেলে দেখেন বই সামনে নিয়ে কি যেনো ভাবছে অন্যমনস্ক হয়ে।এখন খাবার সামনে নিয়ে বসে আছে খাওয়ার কোনো খবর নেই।
–কি হয়েছে মা?তোমার মন খারাপ কোনো কারণে?
মিলি মাথা নেড়ে না জানালো তারপর খাবার খেতে লাগলো।মালিহা বেগম ওকে ওই শিক্ষা প্রতিযোগিতা সম্পর্কে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করলেন।মিলি কাটা কাটা কিছু উত্তর দিয়ে খাবারটা অর্ধেক শেষ করেই পেট ভরে গেছে বলে রুমে চলে গেলো।মালিহা বেগম বুঝতে পারেন না উনার এই মেয়েটার কোনো ভাবগতিক।মাঝে মাঝে ওকে স্বাভাবিক আর পাঁচটা বাচ্চার মতোই মনে হয় আবার মাঝে মাঝেই মনে হয় খুব অস্বাভাবিক কিছু একটা আছে।মাঝে মাঝেই মিলি কেমন যেনো বড় হয়ে যায়!ওর বয়সের তুলনায় বড় মানুষের মতো আচরণ করে।এসব কিছুই এখন ওর পরিবার স্বাভাবিক বলে ধরে নিয়েছে যদিও,কিন্তু মাঝে মাঝেই খুব ভাবায় ব্যাপারগুলো উনাদের।মিলির আজকের ব্যবহারটা খুব অদ্ভুদ লাগলো ওর মায়ের কাছে।চিন্তিত হয়ে গেলেন উনি মিলিকে নিয়ে।

চলবে””””””
(এই গল্পটা আমার অপশনাল গল্প তাই রেগুলার দেওয়া হয় না।আর এটা একটু ভেবে লিখতে হয় তাই নিয়মিত দেই না।বেশি ভাবলে যদি পাগল হয়ে যাই😶
হ্যাপি রিডিং)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here