রহস্যের_কুয়াশা☠️ পর্ব_৯

#রহস্যের_কুয়াশা☠️
পর্ব_৯
#হাফসা_ইরিন_রাথি
–তোমার কি মনে আছে সেলিয়াসের কথা??
নামটা শুনেই ঘৃণাভরে মুখ কুচকালো ইহান।ক্রোধে ঝলমল করে উঠলো ইহানের চোখদুটো।
–তার কথা আমি কিভাবে ভুলতে পারি?আমার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় জিনিসটা কেড়ে নিয়েছে সে।
কিন্তু হঠাৎ তার কথা কেনো বলছো?

–রাজা মশাই জানালেন সে আর তার ছেলে নাকি এখনো বেঁচে আছে। রিদের উপর হুমকি স্বরূপ তারা দুজন।তাই রাজা মশাই বলেছেন যাতে করে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে রাখি আমরা।যেকোনো মুহূর্তে হামলা হওয়া বিচিত্র কিছুই না।
রিদের উপর নজর রাখা প্রয়োজন,এক্সটা কেয়ার নিতে হবে।আমার মনে হয় তুই ওর কাছে ফিরে গেলেই ভালো হয় সবচেয়ে বেশি।

–কিন্তু রিদকে ছাড়া এই যুদ্ধটা কিভাবে কি করবো আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।তুই তো জানিস সেলিয়াস আর ওর ছেলে অলিভাস কতটা শক্তিশালী।ওদের হারানো অনেক বেশি কঠিন হয়ে যাবে।

–আমার মনে হয় না ওরা এখন জ্বীন রাজ্যে আক্রমণ করবে।
ওরা দুজনেই পেছন ফিরে তাকালো। রুশা দাড়িয়ে আছে ওদের দিকে তাকিয়ে। ইহান আর রিমাদ একই সাথে প্রশ্ন করলো।
–কেনো তোর এমনটা মনে হচ্ছে?

–কারণ এখনও রিদের আগের কথা কিছুই মনে নেই।আর এমন অজ্ঞাত রিদের সাথে অলিভাস নিজেকে জড়ালে ওরা কিছুতেই ওদের কাঙ্ক্ষিত সেই জিনিসটা পাবে না। সেটা পেতে হলে রিদের আগের সব মনে পড়তে হবে আর মনে পড়তে হলে ইহানকে ওদের প্রয়োজন।তাহলে এটাই দাড়ায় যে ওরা রাজ্যে এখন না, রিদের সব মনে পড়ার পরেই আক্রমণ করবে।
রুশার কথাগুলো ওরা দুজন ভাবতে লাগলো।ওদের মনে হলো রুশার কথাগুলো খুব সত্য।হঠাৎ ইহান বলে উঠলো,
–আচ্ছা ওদের পক্ষের কেউ আমাদের সবার উপর, রিদের উপর নজর রাখছে নাতো?
আমার কেনো যেনো মনে হচ্ছে ছোটো থেকেই রিদের উপর নজর রাখছে ওরা কেউ!

–হ্যা এটা হবার সম্ভবনা আছে প্রচুর।আমার মনে হয় তোর এখনি রিদের কাছে ফিরে যাওয়া উচিত।
ইহান আর কোনো কথা না বলে চিন্তিত মুখে অদৃশ্য হয়ে গেলো সেখান থেকে।ও জানে অলিভাস রিদের কোনো ক্ষতি করবে না এখন,কিন্তু অন্য কোনো সমস্যার সৃষ্টি করতেই পারে তারা নিজেদের স্বার্থে।ওরা নিজের লাভের জন্য যেকোনো জিনিস করতে প্রস্তুত।
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
মিলি চুপচাপ শুয়ে আছে বিছানায়।ঘুম আসছে না ওর। ইহান মাথায় হাত না বুলিয়ে দিলে যে মিলির ঘুমই আসে না সে আজ একসপ্তাহের বেশি সময় ধরে ইহানকে দেখেই না।চুপচাপ রুমের সিলিং এর দিকে তাকিয়ে আছে মিলি।চোখে অভিমানের জল।
–”আচ্ছা ইহান কি একেবারেই চলে গেলো?আর আসবে না?”
হঠাৎ মনে হলো ওর রুমে কে যেনো আছে। কার যেনো অস্তিত্ব অনুভব করলো ও।কিন্তু কাউকে দেখছে না ড্রিম লাইটের আলোয়।একটা কার যেনো ছায়া দেখলো মিলি,কিন্তু এই ছায়াটা ইহানের না সেটা স্পষ্ট বুঝতে পারলো।তারপরই ওর বিছানায় কাউকে অনুভব করলো।ভীষণ ভয়ে চমকে গিয়ে পাশ ফিরতেই দেখলো ইহান!মিলি ভয় আর এতদিনের বিচ্ছেদে ইহানকে জড়িয়ে ধরে কাদতে লাগলো।
–আরে এতো ভয় পাচ্ছো কেনো?আমি ইহান তো।দেখো,তাকিয়ে দেখো।
মিলি ভয়ে রীতিমতো কাপতে শুরু করেছে। ইহান অনেক কষ্টে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ওকে শান্ত করলো।
–কি হয়েছে রিদ?প্লিজ শান্ত হও।

–ওখানে কে যেনো ছিল ইহান।

–কই ওখানে তো কেউ নেই।দেখো
মিলি তাকিয়ে দেখলো সত্যি কেউ নেই কিন্তু ওর স্পষ্ট মনে আছে এখানে কেউ একজন ছিল।
–না এখানেই ছিল ইহান।

–আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে।এখন শান্ত হও।
ঘুমাও নি কেনো এখনও? কয়টা বাজে সে খেয়াল আছে তোমার?
মিলি এতক্ষণে অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। ইহানের দিকে তাকিয়ে কান্না করতে করতে বললো,
–তুমি কোথায় গিয়েছিলে?আমি তোমায় কত্তো খুঁজেছি। এ্যাঁ……
ইহান অভিমানের সুরে বললো,
–আরে থামো থামো।কান্না করিও না।
তুমি আমার সাথে খেলো না,ঘুরতে যাও না।তাই তো আমি রাগ করে চলে গেছিলাম।

–আমি সত্যি বলছি আমি এখন থেকে তোমার সাথে প্রতিদিন খেলবো,ঘুরতে যাবো।
প্লিজ তুমি আবারো চলে যেও না।

–পাক্কাওয়ালা প্রমিজ তো??

–হুম পাক্কা ওয়ালা প্রমিজ।
ইহান ওর মুখের দিকে তাকিয়ে একটা সুন্দর করে মিষ্টি হাসি দিলো। ইহান এখন অনেক খুশি।মিলিও ওর দিকে তাকিয়ে হাসলো।
–এখন চুপচাপ ঘুমাও তো।অনেক রাত হলো।

–না আমি ঘুরতে যাবো এখন।সেই গাছটায় যাবো।
ইহান মিলির কথা শুনে অবাক ও খুশি হলো কারণ মিলি নিজে থেকে ঘুরতে যাবার কথা বলে না অনেকদিন হলো।অনেকদিন পর যেনো ইহান তার পুরোনো রিদকে খুঁজে গেলো।
–সত্যি!!তুমি সত্যি যাবে??

–হুম যাবোই তো।

–ওকে চোখ বন্ধ করো।
মিলি চোখ বন্ধ করে আবার খুলতেই দেখলো সেই গাছটায় বসে আছে।ও আনন্দে পা দুলাতে লাগলো শূন্যে।এখন চারদিকে হালকা হালকা শিশির পরে তাই গাছের পাতাগুলো ভেজা।মিলি গাছের পাতা থেকে ঝাকিয়ে শিশির বিন্দু ফেলছে।শীত এখনো শুরু হয়নি।শীতের একটা অদ্ভুদ আমেজ বিরাজ করছে চারদিকে।বেশ লাগছে মিলির।অনেকদিন পর এভাবে ইহানের সাথে ঘুরতে এলো।এতদিন এসবের গুরুত্বটা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে ও। ইহান হাসি মুখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।অনেকদিন হলো এতো কাছ থেকে নিজের রিদকে দেখা হয় না ওর।
প্রায় অনেকক্ষন এভাবে বসে থেকে মিলি কি যেনো মনে পড়তেই ইহানের দিকে ফিরে প্রশ্ন করলো,
–আচ্ছা ইহান, রুশা কেনো স্কুলে আসে না?আমি ওকে কতো খুঁজেছি,কিন্তু পাইনি।

–আমি ওকে আসতে মানা করেছিলাম।

–কেনো?

–এমনি।আমরা ঘুরতে গিয়েছিলাম দুজন।অনেক মজা করেছি।তাই ও স্কুলে আসতে পারেনি।
এই প্রথম মিলির কেমন যেনো একটা লাগলো। ইহান আর রুশা ঘুরতে গেছিলো?আমাকে রেখেই ইহান রুশাকে নিয়ে ঘুরতে চলে গেলো?
কিন্তু কিছুই বললো না।বললে যদি আবার চলে যায় ও।আরো কিছুক্ষন কাটানোর পর বাসায় ফিরে এলো দুজনে। ইহান মিলির মুখের দিকে তাকিয়ে বেশ মজা পাচ্ছে কিন্তু মিলি কিছু না বলায় ও নিজেও বলছে না।মিলির মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিতেই সে গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে গেলো।



সকালে উঠে অনেকদিন পর উৎফুল্লতা নিয়ে রেডী হলো মিলি।মালিহা বেগম মেয়েকে হঠাৎ এতো খুশি দেখে কিছুই বুঝতে পারলো না কিন্তু নিজেও অনেক খুশি হলো। সকালের নাস্তা শেষ করে মিলি আর ইহান বেরিয়ে গেলো স্কুলের উদ্দেশ্যে।রাস্তায় দুজন দুষ্টুমি করতে করতে চলে এলো স্কুলে।
–ইহান তুমি একদিনও খাও না কেনো?তোমার কি ক্ষুধা পায় না নাকি?
ইহান মুচকি হেসে বললো,
–আমি খাই আমার বাসায় গিয়ে।তোমার বাসায় কেনো খাবো?

–তোমার বাসা!!!

–হুম আমার বাসা। এতো অবাক হওয়ার কি আছে?

–তোমার বুঝি বাসাও আছে?

–ওমা আপনার বাসা থাকবে না কেনো??অবশ্যই আছে।

–আমায় একদিন নিয়ে যাবে প্লিজ?আমি তোমার বাড়ি দেখতে চাই।
ইহান ওর এমন অনুরোধ করার ভঙ্গি দেখে হাসতে লাগলো।মিলি এইবার অনুরোধ করা রেখে ওর দিকে ব্রু কুচকে তাকিয়ে আছে। ইহান নিজেকে অনেক কষ্টে সামলে নিলো মিলির এমনভাবে তাকানো দেখে।
–আচ্ছা নিয়ে যাবো।এইবার খুশি তো?
মিলি খুশি হয়ে ওর ফোকলা দাঁতে হাসি দিয়ে বললো,
–হুম খুউব।
ক্লাসে গিয়েই দেখা হলো রুশার সাথে।মিলি ওকে পাকড়াও করলো।একটার পর একটা প্রশ্ন করেই যাচ্ছে।
–তুমি কেনো আসো নি এতদিন?কোথায় ছিলে?তোমরা কোথায় ঘুরতে গেছিলা?আমার কেনো নিয়ে যাও নি?
রুশা ওর কথা শুনে কিছুই বলছে না শুধু মুচকি হাসছে ইহানের দিকে তাকিয়ে।এমনসময় শিক্ষক চলে আসায় মিলির প্রশ্নগুলো চাপা পড়ে গেলো।
–তোমাদের আর মাত্র ১০ দিন পর যেতে হবে প্রতিযোগিতায়। ইহান,মিলি আর পিঙ্কি তোমরা আশা করছি ভালো প্রস্তুতিই নিবে।
মিলি তো খুব খুশি কারণ এখন ইহানও আছে আর প্রতিযোগিতাও কাছে।
ক্লাস শেষ করেই বাসায় ফিরে বই নিয়ে বসে পড়লো। ইহান দেখলো মিলি বই নিয়ে পড়তে বসছে।তাই মিলিকে পরীক্ষা করতে বললো,
–চলো খেলবো এখন।
মিলি মুখটা অন্ধকার হয়ে গেলো।মুখটা কালো করে মন খারাপ করে বললো,
–এখন ☹️

–হুম এখন।
মিলি মন খারাপ করে বইটা রেখে বললো,
–চলো।
ইহান ওর মুখের দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বললো,
–থাক থাক আর মুখটা বাংলার পাঁচের মতো করতে হবে না।যাও পড়তে বসো।

চলবে”””””
(লাভ টুইস্ট এখন লিখা শুরু করবো একটু লেট করে পাবেন।আর গঠনমূলক কমেন্ট আশা করছি।
হ্যাপি রিডিং)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here