লীলাবালি🌺 পর্ব-৩৭

0
1234

#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৩৭
আফনান লারা
.
অর্ণবের মায়ের ডাক শুনে কুসুম ছুটে চলে গেছে।বাড়ির দিকে যাবার পথে ফোন বেজে উঠলো অর্ণবের।মৃদুলের কল।সেদিন যে গেলো এরপর মেসেও বেশি দেখা হলোনা ওর সাথে।যাক এখন ওর কল পেয়ে মনটা ভালো হয়ে গেলো।
হাসি মুখে রিসিভ করলো সে।ওপাশ থেকে দু লাইন শোনা গেলো “অর্ণব জলদি ঢাকায় ফিরে আয়।মৃন্ময়ীর অবস্থা খারাপ।হাসপাতালে ভর্তি।’

লাইন কাটা গেলো।অর্ণব চিন্তায় পড়ে ওকে আবারও কল করেছে।প্রথম দুবার ধরেনি,পরেরবার ধরে হাঁপাতে হাঁপাতে উত্তর দিচ্ছে।জানালো জুথি নাকি সকাল থেকে চোখ খুলছিলনা দেখে ওর বাবা ওকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন।মদের ওভারডোজের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।জীবন বাঁচানো নিয়ে টানাটানি এখন।
অর্ণব কি করবে ভেবে না পেয়ে বাড়িতে এসে নিজের ব্যাগ গোছানো শুরু করে দিলো।কুসুম চায়ের কাপ আর বিসকুটের বাটি নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।মা এসে জিজ্ঞেস করলেন ব্যাগ গোছায় কেন।

-“মা আমাকে আর্জেন্ট ঢাকায় ফিরতে হবে।আমার একটা ফ্রেন্ড অসুস্থ হয়ে পড়েছে।ওকে দেখতে যেতে হবে’

কুসুম দূর থেকে দেখছিল।কাছে আসেনি।
মা বললেন,’কে?সেদিনের ঐ মেয়েটা?বিষ খেয়েছে বুঝি?’

অর্ণব মাথা তুলে তাকালো মায়ের দিকে।কিছুই বললোনা।ব্যাগটা গুছিয়ে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে সাগর ভাইয়াকে ডেকে বললো সে ফিরে যাচ্ছে।

ভাইয়া এসে বললেন,”কিরে এত জলদি যাস কেন?তোর না কাল সকালে যাবার কথা ছিল?’

-“নাহ।জরুরি একটা কাজ পড়ে গেছে।আমাকে যেতে হবে’

কথাটা বলে কুসুমের দিকে একবার তাকালো সে।সেও এক দৃষ্টিতে দেখছিল ওকে।অর্ণব চলে গেলো।ওর জন্য বানানো চিনি ঠিকঠাকের চা টা হাতেই রয়ে গেলো কুসুমের।
হুট করে মন খারাপ হয়ে যাবে তা সে ভাবেনি।হয়ত কাল সকালে গেলে এত বেশি মন খারাপ হতোনা।যে সময়ে যাবার কথা সেসময়ে না গিয়ে অন্য সময়ে চলে গেছে বলে মনটা খারাপ লাগলো একটু বেশিই।কি মনে করে কাপটা নিয়ে দৌড় লাগিয়েছে কুসুম।অর্ণবপর পাঞ্জাবি আটকে গেছিল একটা ঝাড়ের শুকনো গাছের ঢালের সঙ্গে।কুসুম ছুটে ততদূর এসে ওকে দেখতে পেয়ে মুখে হাসি ফোটালো।ভেবেছিল হয়ত চলে গেছে।পাঞ্জাবিটা ছাড়িয়ে নেবার পর কুসুমকে দেখে অর্ণব পা চালালো না।থেমে থাকলো

-‘চা খেয়ে যান।আমি বানিয়েছিলাম’

-‘এখন সময় নেই।যাচ্ছি’

-“আজ চুমুক দিই নাই।’

অর্ণব ভ্রু কুঁচকে ওর হাত থেকে কাপটা নিয়ে অল্প চা খেয়ে কাপটা আবার ওর হাতে দিয়ে বললো,’বাহিরে বেশি ঘুরঘুর করবেনা। এখন আমি থাকবোনা বাঁচাতে’

অর্ণব চলে যাচ্ছে।
কুসুম গলার জোর বাড়িয়ে বললো,’মিনননয়ি আপুর কি কোনো অসুখ হয়েছে?কেমন আছে এখন?’

অর্ণব পুনরায় থেমে গেছে।পেছনে না তাকিয়েই বললো,’তা জেনে তোমার কাজ নেই’

-“আপনার কাজ আছে?’

অর্ণব চলে গেছে ততক্ষণে।কুসুম চায়ের কাপের বাকি চা টুকু আনন্দের সঙ্গে খেয়ে নিলো।সে জানতো অর্ণব পুরো চা খাবেনা।বাকিটা নিজে খাবে বলেই এতদূর অবধি ছুটে আসা।
“””যে মানুষটার গামছার গন্ধ ভালো লাগে,যে মানুষটার শোয়া বিছানায় শুতে ভালো লাগে, তার অর্ধেক খাওয়া চায়ের বাকি অংশ তো দারুণ লাগার কথা।
এত খারাপ লাগার মাঝে ঐ টুকু চা বিশাল ভালো লাগা মনে ধরিয়ে দিছে।আফসোস তিনি বুঝলেননা!’
—-
ঢাকায় পৌঁছাতে অর্ণবের রাত নয়টা বেজে গেলো।ব্যাগ হাতে সোজা হাসপাতালে এসেছে।মৃদুল বাহিরে করিডোরের একটা সিটে বসেছিল সাথে ছিলেন জুথির বাবা।উনাকে সালাম করার পর উনি কিছু বললেননা।মুখটাকে অন্যদিকে এমন ভাবে ফিরিয়ে নিলেন যেন কোনো কথাই বলতে চাননা।এড়িয়ে গেলেন।
এসবের জন্য তিনি অর্ণবকে দায়ী মনে করছেন।অর্ণব উনার গম্ভীর ভাব দেখে মৃদুলকে প্রশ্ন করলো জুথি কোথায়।সে হাত বাড়িয়ে দেখিয়ে দিলো।
রুমের দরজা খুলে অর্ণব ভেতরে গেছে।জুথি জেগেই ছিল যেন সে জানতো অর্ণব আসবে।ওকে দেখে হেসে দিয়েছে।অর্ণব একটা টুল কাছে টেনে বসে বললো,’মদ কবে থেকে খান?’

-“জেনে কি হবে?এখন তো খারাপ মনে করছেন।কবে থেকে খারাপ সেটা জেনে আর কি লাভ?’

-‘আমি জানতে চাই এই বদঅভ্যাস আমার কারণে হয়েছে নাকি আপনার পুরোনো অভ্যাস এটা’

জুথি অন্যদিকে ফিরে বললো,’আমি মরে গেলে আপনার নাম নিতাম না।টেনসন ফ্রি থাকেন’

-“এসব কেমন কথা?আপনি জানেন আমি আপনার এই ঘটনার কথা শুনে ছুটে চলে এসেছি?সেটার কি দাম নেই?
আমি আর কি করে বোঝালে বুঝবেন?কেমন পাগলামি এগুলো?আপনি যথেষ্ট ম্যাচিউর।তাহলে কেন বাচ্চাদের মতন বিহেভ করছেন?’

-‘ঠিক।আমি ম্যাচিউর।আর তাই মদ খেতে পেরেছি।এটা আমার একান্তই ব্যাক্তিগত বিষয়’

-“তা নাহয় বুঝলাম কিন্তু যে ব্যাক্তিগত বিষয়ে নিজের জান যায় যায় অবস্থা,হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় সেটা আর ব্যাক্তিগত থাকেনা।আমাকে যদি সম্মান করে থাকেন তবে আর কখনও ঐ মদ মুখে তুলবেননা।আপনি জানেন আপনার কিছু হলে সবাই আমায় দোষারোপ করবে??এরপর যদি কিছু করে বসেন তবে ভাববো আমাকে সবার সামনে ছোট করতে এসব করে যাচ্ছেন’

কথাগুলো বলে অর্ণব রাগ করে চলে যাওয়া ধরতেই জুথি ওর হাতটা ধরে ফেললো।

-‘প্লিজ!বসবেন একটু?ছয় মিনিট? ‘

অর্ণব বসলো আবার।জুথি উঠে হেলান দিয়ে বসে তারপর অর্ণবের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,’আমি এই মাসে সিঙ্গাপুর চলে যাচ্ছি।আর কখনও জ্বালাতন করতে আসবোনা।আপনাকেও কেউ দোষ দেবেনা।একটা জিনিস দেওয়ার জন্য আটকালাম।’

কথাটা বলে জুথি পাশের ছোট টেবিল থেকে তার পার্সটা নিয়ে সেটার ভেতর থেকে একটা রিং বের করে বললো,’এটা আমি অনেক আগে কিনে রেখে ছিলাম ব্যাগটাতে।কোনো নির্দিষ্ট মানুষের জন্য না।ভেবে রেখেছিলাম যে আমার প্রথম ভালোবাসা হবে তাকে দেবো।কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস!!প্রথম ভালোবাসা তো হলো তবে সেদিনই ঐ মানুষটা আরেকজনের স্বামী হয়ে গেলো।তারপরেও রিংটার দাবিদার একমাত্র আপনি।
যদি রেখে দেন তবে আমি অনেক খুশি হবো।
কখনও কুসুম জিজ্ঞেস করলে বলে দেবেন আপনি কিনেছেন।আমি চাইনা এই রিং ওর মনে সন্দেহের সৃষ্টি করুক।’

অর্ণব রিংটার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,’তার ছোট মাথায় এখনও সন্দেহ ঢোকেনি।তাকে তার নানি যে কয়েকটা আচার আচরণ শিখিয়েছে শুধু সেসবই এখনও প্রয়োগ করে আসছে।’

জুথির চোখে পানি এসে গেলো।অর্ণব ওর সামনে বসে কুসুমের অভ্যাস বর্ণনা করছে বলে বুকটা আবারও জ্বলে যাচ্ছে।রিংয়ের বক্সটা অর্ণবের হাতে দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে ফেলেছে সে।অর্ণব বুঝতে পেরে কুসুমের কথা বন্ধ করে দিলো।
জুথি চুপ করে আছে বলে অর্ণব বললো,’কয় তারিখে চলে যাবেন?’

-‘তারিখ জেনে কি হবে?পৌঁছে দিতে যাবেন?’

-‘জানিনা।জানতে ইচ্ছে হলো।আচ্ছা কবে ফিরবেন?’

সে মুখটাকে নিচু করে লুকিয়ে ফেলে ধীর গলায় জবাব দিলো,’যেদিন অর্ণব নামের মানুষটাকে মনে পড়লে বুকে জ্বালা করবেনা সেদিন ফিরবো’

অর্ণব উঠে চলে গেছে। রুম থেকে বের হতেই জুথির বাবার মুখোমুখি হলো সে।উনি এখনও কিছু বললেন না।

অর্ণব মৃদুলের সাথে হাঁটা ধরলো করিডোর দিয়ে।
মৃদুল জানালো জুথির ফোন থেকে মৃদুলের নাম্বার পেয়ে ওর বাবা কল করে বললেন যেন সে অর্ণবকে সাথে নিয়ে আসে।অর্ণবকেও কল করেছিলেন কিন্তু ওর ফোন নাকি বন্ধ ছিল।
ওখান থেকে অর্ণব মেসে ফিরে এসেছে।ব্যাগটাকে হাত থেকে রেখে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।

কিছু সময় পরে হঠাৎ করে ব্যাগটার দিকে চোখ পড়তেই সে দেখতে পেলো একটা ঝিনুকের মালা ঝুলছে।সেটা কুসুম কখন লাগিয়েছে অর্ণব জানেনা তবে ঐ মালাটা ওর কথাই মনে করিয়ে দিলো সর্বপ্রথম।সোজা হয়ে বসে মালাটা খুলে হাতে নিলো সে।তারপর ফোনের দিকে তাকালো।হয়ত কুসুম এখন ফোন নিয়ে ঘুরঘুর করছে কল করবে নাকি করবেনা সেটা ভেবে।আচ্ছা নাহয় একদিন আমিই কল করি।
চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here