শঙ্খচিল পর্বঃ-২৫

0
1715

#শঙ্খচিল
#Ruhi_Jahan_Maya

পর্ব-২৫

লেকের ক্ষানিকটা দূরে মেহগনি গাছের পেছনে দাঁড়িয়ে রইলো তানহা৷ উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করলো, নোংরা পানি থেকে কোনো রকমে উঠে এলো লোকটা এক হাতে কালো রঙের একটা ব্যাগ অন্য হাত দিয়ে সেই ছেলেটার ঘার চেপে পারে এলো। খুনি লোকটা এক ধাক্কা দিয়ে কিশোর ছেলেটাকে মাটিতে ফেলে ফিলো। পাশে দাঁড়ানো লোকটা কিশোর ছেলেটাকে হির হির করে টানতে টানতে কোথাও নিয়ে গেলো। আশে পাশে এক বার তাকিয়ে খুনি লোকটা শার্ট খুলতে শুরু করলো, তানহা ক্ষানিক টা লজ্জা পেলেও আগের মতোই তাকিয়ে রইলো। কালো চেহারায় কাঁদা মাটি লেগে আছে অথচ বুকটা কি ফর্সা। ভাবতে ভাবতেই তানহা লজ্জা পেয়ে অন্য দিকে তাকালো। খুনি লোকটা শার্টের বুতাম গুলো খুলে ব্যাগটা হাতে নিয়ে চলে গেলো। তানহা ফিরে তাকিয়ে খুনি লোকটাকে দেখতে পেলো না। মূহুর্তের মধ্যেই লোকটা কোথায় চলে গেলো? অদ্ভুত।

তানহা আনমনে কোচিংয়ের দিকে হাটা দিলো। হাত ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখলো, পাঁচটা বেজে বারো মিনিট৷ অনেক দেরি করে ফেলেছে সে, আজ আর কোচিংয়ে যাওয়া ঠিক হবে না। ভেবে উলটো পথে রওনা দিলো তানহা। রাস্তা দিয়ে আনমনে হাটছে আর কি ভাবে এই খুনি টাকে আইনের আওতায় এনে সাজা দেবে তা ভাবছে৷ হঠাৎ করে তানহার সামনে বাস এসে থামলো বাসের লেখা, গুলিস্তান-শাহবাগ-মিরপুর ২। হঠাৎ শাহবাগ শব্দটা পড়তেই তানহার এস.আই ইলহামের কথা মনে পড়লো৷ তানহা হাত ইশারা করেতেই কন্ট্রাক্টর তানহাকে বাসে তুলে নিলো…

*
*
” এই হারামজাদা টা তো ব্লেক কোবরার দলের লোক, একে কোথায় পেলেন বস? ”

” গতো দু দিন ধরে এই শুয়ো*বাচ্চা টাকে ট্রেস করছিলাম, হারামিটা শুধু মাদক সাপ্লাই -ই দেয় নি৷ চার মাস আগে স্কুলে মেয়ে কে ধর্ষণ করেছিলো৷ ”

” এই হারামজাদা টাকে এখন কি করবো বস? ”

ইলহাম গোসল সেরে এসে, টেবিলে বসতে বসতে বললো, ” কিছু করতে হবে না৷ আমার জন্য খাবারের ব্যাবস্থা করো।”

” ঠিক আছে বস। ” বলেই হারুন রশীদ চলে গেলো…

ব্লাক কোবরা নামটা অন্ধকার জগতের মানুষের জন্য খুব পরিচিত একটা নাম। ঢাকা শহরে এমন কোন অপরাধ নেই যে এরা করে না৷ ইলহামের মূল টার্গেট আসল কোবরা কে ধরা, যে কিনা পুরো গ্যাংটাকে কন্ট্রোল করছে৷ গত এক বছর ধরেই ইলহাম রাত দিন এক করে কোবরার লিডার কে ধরার চেষ্টা করছে, কিন্তু এই চুনোপুঁটি ছাড়া আর কাউকেই ধরতে পারছে না সে৷

” বস আসবো? ”

” এসো হারুন! ”

” বস সন্ধ্যা হয়ে গেছে ম্যাসে আর খাবার ছিলো না, দু-পিস মুরগির মাংস আর ভাতই ছিলো। ”

” কোন সমস্যা নেই, নিয়ে এসো।”

হারুন খাবারের প্লেট টেবিলে রাখতে রাখতে বললো, ” স্যার আরেক টা সমস্যা আছে। ”

” কি? ”

” তানহা নামের মেয়েটা এসেছে?”

” কখন? ”

” আসার সময় দেখলাম৷ থানায় ঢুকছে। ”

ইলহাম ক্ষানিকটা ভেবে বললো, ” ওকে বলো আমি থানায় নেই। থানায় এলে ওর সাথে যোগাযোগ করবো। তার আগে যেনো থানায় না আসে। ”

” ঠিক আছে বস৷ ” বলেই হারুন রশীদ ইলহামের কেবিন থেকে বেড়িয়ে গেলো। ইলহাম দৈর্ঘ শ্বাস ফেললো৷
ইলহাম কোন মতেই চায় না তানহা মিশনে জরিয়ে পরুক। ব্লাক কোবরা দলের কেউ যদি ঘুনাক্ষরে টের পেয়ে যায়, তাহলে হয়তো তানহার মস্ত বড় ক্ষতি করে ফেলবে৷ তাই বাধ্য হয়ে ছন্দ বেশে তানহাকে ভয় দেখিয়ে তাকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে এ কদিন।
এক্ষণ ইলহাম হারে হারে টের পেয়ে গেছে এই মেয়ে ভাংবে তবুও মচকাবে না। যতো ভায় ইলহাম দেখাক না কেনো তানহা বোকা এবং ঘাড়ত্যাড়া মেয়ে মানুষ।
ভাবতে ভাবতেই ইলহাম ভাত খাওয়ার আগে একটা সিগারেট জ্বালিয়ে নিলো ধূমপান করার জন্য।

” এস আই স্যার কোথায়?”

হঠাৎ একটা লোক তানহার দিকে তাকিয়ে বললো, ” কেনো?”

” দরকার আছে। ” ছেলেটা ইশারা করে ভেতরে চলে যেতে বললো। মানহা ভেতরে প্রবেশ করতেই কেউ হঠাৎ বলে, উঠলো,
” আরে মানহা আপনি? ”

” হ্যাঁ। এস.আই ইলহামের সাথে দেখা করতে এসেছি। ”

” আপনাকে না সে দিন বললাম স্যার বিকালে থানায় থাকে না। ”

তানহা অবাক হয়ে বললো, ” কেনো থাকে না? ”

” জানি না। স্যার কে কি দরকার? ”

” দরকার আছে৷ আগে বলুন কেনো বিকেলে থানায় থাকে না?”

” জানি না। কিন্তু আপনি এতো অবাক হচ্ছেন কেনো? আর এতো ঘন ঘন স্যারের সাথে দেখা করতে চান ব্যাপার টা কি? ”

” আপনার স্যারের সাথে দেখা করার কোন ইন্টারেস্ট নেই আমার। একটা ভিডিও দেখাতে এসেছি জাস্ট। ”

” কিসের ভিডিও? ”

” সেটা না হয় ওনাকেই বলবো। ” বলেই তানহা থানা থেকে বেড়িয়ে গেলো৷ ইলহাম সি.সি ক্যামেরায় সব কিছু এতোক্ষণ দেখছিলো, সিগারেটা শেষ বারের মতো টান দিয়ে ধোঁয়া উড়িয়ে দিলো। অতঃপর সিগারেটের শেষ অংশ পায়ের তলায় পিষে ফেললো। কম্পিউটারে মনিটর বন্ধ করে দিয়ে, তানহার কোন ভিডিওর কথা বলছে, মনে মনে ভাবতে লাগলো।

————————————————-

আজ অনেক দিন পরে মানহা ছাদে এসেছে। চারিদিক থেকে দক্ষিণা বাতাস বইছে। আকাশ ময় কমলা রঙের গোধূলি। দোলনার এক পাশে মানহা বসলো,
ঠিক তখনি রহিমা খালা হন্ত দন্ত হয়ে ছাদে প্রবেশ করলেন। ছাদে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে মানহা দরজার দিকে তাকালো। রহিমা খালা এগিয়ে এসে বললেন,
” জামাই বাবাজি কল দিয়েছে। ”

মানহা অবাক হয়ে বললো, ” কোন জামাই বাবাজি খালা?”

রহিমা খালা দুষ্টুমি করে বললো, ” আরে তোমার হবু সোয়ামী। আমি ফোন আনতে আনতে কল কাইট্টা গেছে। তুমি কল বেক করো। ”
মানহা ফোনটা অন করতেই বুকের বা পাশে চিন চিনিয়ে উঠলো। ওয়াহাব কল দিয়েছে। মানহা স্থির দৃষ্টিতে ডায়াল লিস্টে ওয়াহাবের নামের দিকে তাকিয়ে রইলো। হঠাৎ ফোনটা কেঁপে উঠলো, সাথে মানহার হৃদপিণ্ড ও। দ্বিতীয় বারের মতো ওয়াহাবের নাম টা ফোনের স্ক্রিনে ভেসে উঠলো। মানহা হঠাৎ ফোনটা রিসিভ করে চুপ করে রইলো। ওপাশ থেকেও কোন মানুষের শব্দ আসছে না আসছে এসির সো সো শব্দ। এক একটা মূহুর্তে পার হতেই মানুষের মানহার বুকের ভেতর আরো বেশি ঝড় বইতে শুরু করলো। হঠাৎ ওপাশ থেকে পুরুষালী কন্ঠে বললো,

” কেমন আছেন মানহা। ”

মানহার মুখ দিয়ে কোন শব্দ বের হচ্ছে, না গলাটা একদম শুকিয়ে গেছে। কোন মতে ঢোক গিলে, জোরে নিঃশ্বাস ফেলে মানহা বললো, ” ভালো। ”

” ফোনটা কি আপনার হাতেই ছিলো?”

” না – না। কেনো?”

” দ্বিতীয় বার রিং হবার সাথে সাথে ফোন তুললেন যে তাই জিজ্ঞেস করলাম। বাই দা ওয়ে কংগ্রাচুলেশনস। ”

শুকনো ঢোক গিলে, মানহা বললো,” কেনো? ”

” কেনো আবার আপনার বিয়ে তাই। কংগ্রেস জানালাম। ”

মানহা শ্বাস ফেলে বললো, ” আপনার বিয়ের হয়ে গিয়েছে তাই না? ”

” না।”

মানহা অবাক হয়ে বললো, ” তাহলে ছোট ভাই কে কেনো আগে বিয়ে দিচ্ছেন। ”

” এটা ওর ইচ্ছে। একটা জিনিস জানানোর জন্য ফোন দিয়েছি। ”

” কি? ”

” বিয়ের তো খুব বেশি দিন দেরি নেই হাতে মাত্র দশ দিন। বাবা মা চায় আপনার বিয়ের শপিং টা সেরে ফেলতে। ফ্রাইডে সকাল দশটা আপনি এবং আপনার ছোট বোন রেডি থাকবেন। আংকেলের সাথে বাবা মা কথা বলে নেবে..”

” আচ্ছা। ” বলেই মানহা ফোটা কেটে দিলো। ফোনের ওপাশে ওয়াহাব হতবম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
মানহার হঠাৎ প্রচুর কান্না পাচ্ছে, রাগ হচ্ছে ইচ্ছে করছে ওয়াহাবের বুকে দু-চারটে কিল বসিয়ে বলতে,

” আমার আপনাকে চাই আপনাকে। আর কাউকে না। আমি আপনাকে ভালোবাসি… ”



চলবে
আমার ছোট্ট গ্রুপে জয়েন করার অনুরোধ রইলো 👇
RUHI JAHAN MAYA-রুহি জাহান মায়ার গল্প ঝুড়ি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here