শঙ্খচিল পর্বঃ-২৬

0
1511

#শঙ্খচিল
#Ruhi_Jahan_Maya

পর্বঃ-২৬

দিনটা শুক্রবার, সকাল সারে আটটা বাজে। হটাৎ ডোর বেলের শব্দ পেয়ে তানিয়া ছুঁটে দরজা খুলে দিলো, ওয়াহাব এসেছে। চোখে মুখে ক্লান্তি ছাপ নাইট ডিউটির ছাপ খুব ভালো করেই পড়েছে তার চেহারায়৷ মনে হয় রাতের বেলা কিছু খায় ও নি ছেলেটা। তানিয়া দরজা থেকে সরে দাঁড়িয়ে বললো, ” কিছু দিন পর তোর বিয়ে একটু তো নজের যত্ন নে। ”

ওয়াহাব ঠোঁট প্রসারিত করে হেসে বললো, ” খুধা লেগেছে।”

” যা ভেবেছিলাম। তোকে দেখেই আমার মনে হয়েছিলো রাতে কিছু খাস নি। না খেয়ে সারা রাত ডিউটি করলি কেনো?”

” দুটো আপেল একটা কলা খেয়েছি তো৷”

” হয়েছে হয়েছে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আয়। ব্রেকফাস্ট বানানো প্রায় হয়ে গেছে। ”

ওয়াহাব বোতাম খুলেতে খুলতে রুমের দিকে চলে গেলো৷ হঠাৎ ইলহামের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে পড়লো। দরজায় হাত দিতেই দরজা খুলে গেলো, সিগারেটের পটকা গন্ধ ওয়াহাবের নাকে এলো। সিগারেটের গন্ধে ওহাবের বিরক্ত হয়ে রুম থেকে বের হতে যাবে ঠিক তখনি ওয়াহাব খেয়াল করলো, রুম ফাঁকা।
রুমে ইলহাম নেই। ওয়াহাব একবার বাথরুম চেক করলো সে খানেও ইলহাম নেই। তবে কি ইলহাম বাড়ি ফেরে নি?
দরজাটা আগের মতোই ভেজিয়ে ওয়াহাব নিজের রুমে চলে গেলো। ইলহামের বেপরোয়া পনা ওয়াহাব কে মাঝে মাঝে খুব ভাবায়৷

ইলহাম রসায়নে সাবজেক্টে ভার্সিটিতে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট পেয়ে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করেছে। ওয়াহাব চেয়েছিলো ইলহাম দেশের বাইরে পি.এইচ ডি করুক। কিন্তু ইলহাম তা করে নি। সারে তিন বছর আগে কি মনে করে যেনো ইলহাম পুলিশের ইন্সপেক্টর পদে পরিক্ষা দিয়ে পুলিশে যোগ দেয়।। রসায়ন নিয়ে পড়াশোনা করে এতো কিছু থাকতে ছেলেটা পুলিশের চাকরিতে কেনো যোগ দিলো তা ভেবেই পায় না ওয়াহাব।
ইলহামের কখনোই সিগারেটের অভ্যাস ছিলো না। অনার্সের থার্ড ইয়ারে পড়াশোনা কালীন ইলহাম হঠাৎ বদলে যায়, ব্রিলিয়ান্ট ছেলেটা হয়ে যায় নিজের ব্যাক্তি গত জীবন নিয়ে বেপরোয়া, অযত্নশীল। দিনে তিন পেকেট সিগারেট ও সে একাই সাবাড় করে ফেলতো।

নিজের ব্যাক্তি গত বিষয় জানাতো না কাউকে। ওয়াহাব তখন মাত্র ডাক্তারি পাশ করে ইন্টার্নি করছে৷ সিনিয়ার ডাক্তার, সাইক্রাটিস্ট কোন কিছুই বাদ দেয় নি ভাইয়ের জন্য।তবে সব কিছুর অবহেলা করলেও পড়াশোনায় ইলহাম ছিলো সব স্ট্রিক্ট। ইলহামের ফোর্থ ইয়ারের উঠলো, আগের মতোই ডিপার্টমেন্টে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়ে। অনেক চেষ্টা করে সিগারেট ছাড়াতে না পারলেও একটু কন্ট্রোল করাতে পেরেছিলো…
ভাবতে ভাবতেই ওয়াহাব, শাওয়ার টা অফ করে দিলো তাওয়াল পেচিয়ে রুমে চলে এলো৷ চার্জে দেওয়া ফোনটা হাতে নিয়ে ইলহামের ফোনে ডায়েল করলো…

———————————————-

” বস সারা রাত ধরে মারলাম এই শু**বাচ্চার কোন কথা মুখ দিয়ে বের করাতে পারলাম না।”

ইলহাম সিগারেট টেনে খবরের কাগজ টা সরিয়ে বললো,
” শু**টাকে মেরে ফেললেও কোন কথা বের হবে না। ”

হারুন অবাক হয়ে বললো ” এবার উপায়? ”

“, চিন্তা করো না। মাদকের আলামতের ব্যাগটা তো আছেই এবার চাই শুধু ধর্ষণের বয়ান। ব্যস ও ফাঁসি নিশ্চিত। ” বলেই আধ খাওয়া সিগারেট টা টেবিলের মধ্যে চেপে ধরলো। ঠিক তখনি ইলহামের ফোনটা বেজে উঠলো, ইলহাম ফোন রিসিভ করে,” হ্যালো “বলতেই ওপাশ থেকে ওয়াহাব বললো,
” কোথায় আছিস তুই? ”

” থানায় কেনো ভাইয়া? ”

” এমনি। বাসায় আসবি কখন?”

” একটু পরেই আসবো।”

” একটু পরে না আধাঘন্টার মধ্যেই বাসায় আয়। এক সাথে নাস্তা করবো। ”

” আচ্ছা।” বলেই ইলহাম ফোনটা কেটে দিলো। অতঃপর হাটতে হাটতে কারাগারে চলে গেলো। মার খেতে খেতে কিশোর ছেলেটার নাজে হাল অবস্থা, ঠিক মতো বসতেও পারছে না,ইলহাম কে দেখে হাসি দিয়ে বললো,
” এতোক্ষণে তাহলে এস আই সাহেবের ঘুম ভাংলো। ”

ইলহাম ছেলেটার কথায় পাত্তা না দিয়ে বললো, ” সিগারেট টা নিয়ে আসলেই ভালো হতো হারুন। ”

” আমি নিয়ে আসবো বস?”

” উমম…যাও৷ সাথে লাইটার টাও নিয়ে এসো৷ ”

হারুন চলে যেতেই ইলহাম বললো, ” দেখ তুই তো ফেঁসেই গেছিস। মাদক সাপ্লাই দিয়েছিস তার ওপর ধর্ষনের মামলা। স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষন করেছিস। তোর ফাঁসি না হলেও যাবতজ্জীবন জেলে পঁচে মড়তে হবে।”

কিশোর ছেলেটা চুপ করে এক দৃষ্টিতে ইলহামের দিকে তাকিয়ে রইলো। ইলহাম ছেলেটার হাতে পানির গ্লাস টা এগিয়ে দিয়ে ইশারা করে খেতে বললো। ছেলেটা এক টানে গ্লাসের সব পানিয়ে খেয়ে ফেললো, অতঃপর ইলহামের মুখ পানে তাকিয়ে রইলো, ইলহাম আবারও বলতে শুরু করলো,
” তুই কি চাস জেলের চার দেয়ালে সারা জীবন কাটাতে? মৃত্যু ছাড়া এই চার দেয়াল থেকে বের হতে পারবি না। নাকি চাস ব্লাক কোবরা গ্যাংয়ের লিডারের পরিচয় বলে দিয়ে মাত্র ৬ বছর জেল খাটতে? বল তুই বল… ”

ছেলেটা চুপ করে রইলো। ইলহাম কিছুক্ষণ বসে থেকে বললো, ” তুই বলবি নাকি আমি বাসায় যাবো? আমার ভাই আমার জন্য নাস্তার টেবিলে অপেক্ষা করছে… ”

ছেলেটা মাটির দিকে তাকিয়ে বললো, ” আমার একটা ভাই আছে। এই গ্যাংয়ের যোগ দেয়ার পর চাইর বছর ধইরা ভাইটারে দেখি না। ”
বলেই ছেলেটা চুপ করে রইলো। টনিক কাজে দিয়েছে, বুঝতেই ইলহাম পকেটে গ্যাস ম্যাচ বা লাইটার টাতে আলতো করে চাপ দিলো। ছেলেটা আবার বলতে শুরু করলো,
” স্কুলের মাইয়া টারে আই লাভ ইউ কইছিলাম। আমারে সবার সামবে থাবর মারছিলো। আমিও মা*টারে দিছি…

” আর ব্লাক কোবরা? ”

” ব্লাক কোবরারে আমি কখনো দেহি নাই। তবে শুনছি ব্লাক কোবরা মেয়ে মানুষ খুব পছন্দ করে, মেয়ে পাঁচার করার আগে নিজেই খাইয়া দেয়। ওর প্রধান ব্যাবসা মাইয়া পাঁচার করা..”

” আর কি জানিস? ”

” ব্লাক কোবরা সাধারণ মানুষের ভীড়েই লুকিয়ে আছে। আর কিছু জানি না।”

” স্যার আপনার লাইটার তো খুঁজে পেলাম না। ”
ইলহাম হারুন রশীদের দিকে তাকিয়ে স্মিথ হেসে। পকেট থেকে লাইটার বের করে ক্যামেরা রেকর্ডেং অফ করে দিলো।

—————————————————

ইলহাম সেন্টারফ্রুট চিবুতে চিবুতে ধপাস করে খাবার টেবিলের চেয়ারে বসে পড়লো। কুসুম বেগম গম্ভীর কন্ঠে বললেন, ” বাইরে থেকে এসেছো হাত মুখ ধুয়ে এসো আর খালি পেটে চুইংগাম খাচ্ছো কেনো? ”

” এমনি মা। আমি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসি..” বলেই ইলহাম উঠতে যাবে ঠিক তখনি কুসুম বেগম বললেন,
” বসেছো যেহেতু নাস্তা করেই যাও। খালি পেটে চুইংগাম খাবে না। ”

ইলহাম বাধ্য ছেলের মতো বললো, ” ঠিক আছে মা। ” ইলহাম কেনো খালি পেটে চুইংগাম চিবুচ্ছে তা কুসুম বেগম বাদে সবারই জানা, মূলতঃ মুখ থেকে সিগারেটের গন্ধ দূর করার জন্যই ইলহাম চুইংগাম চিবুচ্ছিলো। ওয়াহাব একবার আর দৃষ্টিতে ইলহামের খাওয়ার দিকে তাকালো,অতঃপর নিজের খাবারে মনোযোগ দিলো।

” তোর খাওয়া হলে, রেডি হয়ে নিস। ”

” কেনো? কোথায় যাবে?”

” বিয়ের কেনা কাটা করতে যেতে হবে তো, তুই সাথে গেলে ভালোই হবে৷ ”

” ইলহাম মেয়েদের কেনা-কাটায় গিয়ে কি করবে?” কুসুম বেগম বললেন।

” আহা যাক না। ঘুরে এলে সবার ভালো লাগবে৷ ” মতি সাহেব বললেন।

কুসুম বেগম আর কিছু বললেন না। ওয়াহাব দ্রুত নাস্তা সেরে সকাল দশ টা বাজার আগেই ওয়াহাব পলাশী বাজার মানহা দের বাড়ি গিয়ে উপস্থিত হলো। মিনিট পনেরো অপেক্ষা করার পর কেউ এলো না। ওয়াহাব বাধ্য হয়েই মানহার ফোনে মেসেজে লিখলো,
‘ এখনো কি ঘুমিয়ে আছেন?’

মানহা ওয়াশরুম থেকে বের হতেই মেসেজের টুংটুং শব্দ পেয়ে ফোনের কাছে এলো, ওয়াহাবের মেসেজ দেখে, অবাক হয়ে ক্ষানিক ক্ষন তাকিয়ে বললো, ” কেনো?”

” আজ আপনার বিয়ের কেনাকাটা করতে যাবার কথা।”



চলবে

আমার পেইজ 👉 Story by Ruhi jahan আমার লেখা সব গুলো গল্পের লিংক পেইজে পাবেন 🌹

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here