শঙ্খচিল পর্বঃ-২৭

0
1617

#শঙ্খচিল
#Ruhi_Jahan_Maya

পর্বঃ-২৭

মেসেজের টুং টাং শব্দে ফোনটা হাতে নিয়ে ক্ষানিকটা অবাক হয়ে মানহা তাকিয়ে রইলো।
ওয়াহাব একটা মেসেজ পাঠিয়েছে যেটাতে লেখা,
‘ এখনো কি ঘুমিয়ে আছেন? ‘

হঠাৎ এই প্রশ্নে মানহা কি উত্তর দেবে বুঝে উঠতে পারলো না। তাই লিখলো, ‘ কেনো?’

এক মিনিট পরেই উত্তর এলো,’ আজ আপনার বিয়ের শপিংয়ে যাবার কথা সকাল দশটায়। ‘

‘ মনে ছিলো না। সরি৷ ‘ লিখে উত্তর দিলো।

ওয়াহাব স্মিথ হেসে বললো, ‘ আমাকে সরি বললে কি হবে, জলদি রেডি হয়ে গলির মোরে আসুন। ছোট তানহা কেও নিয়ে আসবেন। কুইক। ‘
লিখেই মেসেজ টা সেন্ড করে দিলো ওয়াহাব। অতঃপর মানহার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।
মানহা এলো প্রায় পনেরো মিনিট পরে। সাথে তানহা ও। ওয়াহাব স্মিথ হেসে তানহার উদ্দেশ্য বললো, ” তোমার নাম, তানহা রাইট? ”

তানহা অবাক হয়ে বললো, ” জ্বি। আপনি আমার নাম জানলেন কি ভাবে?”

” ইলহাম আর তানিয়ার মুখে শুনেছি। এখন জলদি গাড়িতে ওঠো বাকি কথা যেতে যেতে বলা যাবে। ”

তানহা গেট খুলে পেছনের সিটে বসলো। ওয়াহাবের পাশে কেউ না বসলে ব্যাপার টা খারাপ দেখায়, মানহা ওয়াহাবের পাশে বসবে কি না ভাবতে ভাবতেই ওয়াহাব নিজেই বললো,
” মিস লেট লতিফা আপনি উঠছেন না কেনো? ”

মানহা চোখে মুখে বিস্ময় নিয়ে বললো, ” কে লেট লতিফা? ”

ওয়াহাব মুচকি হেসে বললো, ” আপনি! ”

মানহা রাগে ফুসে উঠলো। অতঃপর চুপ করে বসে রইলো। ওয়াহাব গাড়ি ড্রাইভ করছে ক্ষানিক পর পর মানহার দিকে দু-এক সেকেন্ডের জন্য তাকাচ্ছে। মানহা বাইরে তাকিয়ে আছে, ওয়াহাবের ওপর ভীষণ ক্ষেপে আছে, তা ওয়াহাব ভালোই বুঝতে পারছে।
গাড়ি শাহাবাগ ছাড়িয়ে নীলক্ষেতের দিকে চলছে উদ্দেশ্য ধানমন্ডি পান্থপথ এ.বি স্কয়ার শপিং মল। যেতে যেতে কম করে হলেও আরো আধা ঘন্টা সময় লাগবে, ভাবতে ভাবতেই তানহা বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলো।
গাড়ি ধানমন্ডি লেক পার হতেই হঠাৎ তানহার সে দিনের কথা মনে পড়ে গেলো। তানহা সাউন্ড মিউট করে মনোযোগ দিয়ে ভিডিও দেখতে শুরু করলো।
তৈল চিটচিটে চুল তৈলাক্ত কালো মুখ মোটা জোড়া ভ্রু এক বখাটে খুনি ছেলে কিশোর ছেলেটাকে ঝিলের মাঝেই মারছে। মারামারি এক পর্যায়ের বখাটে ছেলেটার শার্ট ছিঁড়ে গেলো। উন্মুক্ত হয়ে গেলো ফর্সা চিবুক৷

তানহার মনে একটা প্রশ্ন ঘুর পাক খাচ্ছে। এই বখাটে ছেলেটার চেহারা এমন হলো কি ভাবে অথচ চেহারা বাদে দেহের বাকি অংশ কেনো ফর্সা?
তানহা মনে মনে ভেবে নিলো, হয়তো এই বখাটে খুনি লোকটা কোন রোগ আছে৷ মোটা জোর ভ্রুর মাঝে চোখ দুটো তার খুব চেনা তবে কার সেটা এখনো মনে করতে পারছে তানহা। ভাবতে ভাবতেই শ্বাস ফেললো।

” পানি পান করুন মাথাটা ঠান্ডা লাগবে। ” বলেই বোতলটা ওয়াহাব মানহার দিকে এগিয়ে দিলো।

মানহা ভদ্রতার ক্ষাতিরে, বোতলটা হাতে নিলো। রাগে দুঃখে বোতল টা হাতে নিয়েই বসে রইলো। কিন্তু পানি পান করলো না। আনমনে বাইরের দৃশ্য দেখতে লাগলো, শূন্য চোখ দিয়ে হঠাৎ দু ফোটা নোনা জল বেরিয়ে এলো। গাড়ি থামিয়ে সিট বেল খুলতে খুলতে মানহরার দিকে তাকাতেই ওয়াহাব চমকে উঠলো, মানহার চোখের পানি৷ মানহা হাতের পিঠ দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বললো,

” আমরা কি চলে এসেছি? ”

” হুঁ। ”

ওয়াহাব গাড়ি থেকে নেমে দরজা খুলে দিলো। তানহা এবং মানহা গাড়ি থেকে বের হলো, ওয়াহাবের পিছু পিছু হাটা শুরু করলো। মলের ভেতর মিনিট পাঁচেক হাটার পরেই সবার সাথে দেখা হলো, তানিয়া, শিহাব, ইলহাম দাঁড়িয়ে আছে। তানহার সাথে ইলহামের চোখা চোখি হতেই তানহার সেদিন বিকেল বেলার কথা মনে পড়লো। বিকেল বেলা ইলহাম থানায় থাকে না, কেনো থাকে না তা জানা দরকার।

————————————————

সবাই একটা শো-রুমে বসে আছে। দোকানি একের পর এক শাড়ী দেখিয়েই যাচ্ছেন। মানহা সে দিকে খেয়াল নেই। মানহা আনমনে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। তানিয়া মানহার কাধে স্পর্শ করতেই মানহা চমকে উঠলো, তানিয়া বললো,
” এই শাড়িটা সুন্দর দেখো ”
বলেই তানিয়া মানহার হাতে শাড়িটা দিলো৷ মানহা গায়ে শাড়ি জরিয়ে আয়নার দিকে তাকালো৷

আয়নার প্রতিবিম্বে ওয়াহাব কে দেখা যাচ্ছে, সে কারো সাথে কথা বলতে ব্যাস্ত। কথা বলতে বলতে ওয়াহাব হঠাৎ আয়নার দিকে তাকিয়ে দেখলো মানহা গায়ে শাড়ি জরিয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে আছে। ওয়াহাব হঠাৎ ইশারা করে না করে দিলো। মানহা লাল টকটকে একটা বেনারসি গায়ে জরিয়ে নিলো। অতঃপর আয়নার প্রতিবিম্বের ওয়াহাবের দিকে তাকালো৷ ওয়াহাব মুচকি হেসে ইশারা করে বললো, সুন্দর!
তানিয়া ভাইয়ের কান্ড দেখে মুচকি হাসলো, না বুঝার ভান ধরে বললো,
” এই টা তাহলে নিচ্ছো তো?”

” হুম আপু। ”

” ওকে। রিসেপশনের জন্য লেহাঙ্গা নিলে কেমন হয়? ”

” ভালো, কিন্তু কোনটা নিবো বুঝতে পারছি না.. ”

তানিয়া স্মিথ হেসে বললো, ” কোন ব্যাপার না। ওয়াহাবের চয়েজ খুব ভালো, তুমি ওয়াহাব কে জিজ্ঞেস করতে পারো..”

ওয়াহাব কি বলবে বুঝতে না পেরে চোখের চশমাটা ঠিক করতে লাগলো। তানিয়া আবারও বললো, ” আরে ওয়াহাব বলনা কোন লেহেঙ্গা টা ভালো লাগবে মানহা কে…”

মানহা ওয়াহাবের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো, ওয়াহাব আমতা আমতা করে বললো, ” আই থিংক মিষ্টি গোলাপি কালার লেহাঙ্গা টা মানহাকে ভালো লাগবে। ”

তানিয়া মুচকি হেসে বললো, ” আরে ভাই তোর চয়েজ তো আসলেই জোস। তাই না মানহা?”

” হু! কিন্তু সব সময় না..” বললো মানহা।

ওয়াহাব হা করে মানহার দিকে তাকিয়ে রইলো। কথাটা যে মানহা তাকেই ডেডিকেটেড করে বলেছে, সে খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পেরছে।

—————————————————

ক্ষানিক ক্ষন আগে ইলহামের ফোনটা বাজতেই রিসিভ করার আগে সুইচ অফ হয়ে গেলো। পরক্ষণেই ইলহামের মনে পড়লো, গতকাল সারা দিন ফোনে চার্জ দেওয়া হয় নি। ইলহাম পকেট থেকে দ্রুত পাওয়ার ব্যাংক দিয়ে ফোনটা চার্জে দিলো। ফোন চার্জ হতেই ইলহাম দ্রুত হারুনের ফোনে কল বেক করে বললো,
” হ্যাঁ হারুন বলো। ”

” বস! কোর্টের অর্ডার এসেছে৷ কালকে এই হারামজাদা কে কোর্টে চালান করতে হবে। ”

” এতো তাড়াতাড়ি কিভাবে অর্ডার এলো, কমসে কম একসপ্তাহ তো সময় লাগার কথা। ”

” বস আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে ওপর মহলের কারো সাথে ব্লাক কোবরার যোগাযোগ আছে। ”

ইলহাম আংগুল দিয়ে থুতনি চুলকে বললো, ” হতেই পারে। কিছুই অসম্ভব না। ”
” এখন কি হবে স্যার? আর কোন ইনফর্মেশন ও তো পাবো না.. ”

” যা জানে তা বলে দিয়েছে। আমি ভাবছি অন্য কথা। ”

” কি স্যার?”

” কোর্টের অর্ডার। এবার তো এই শুয়োর টা বের হয়ে যাবে। ব্লাক কোবরা আরো এলার্ট হয়ে যাবে। ধ্যাত।” বলেই বিরক্তিকর শব্দ করলো।

হঠাৎ পেছনে তাকাতেই ইলহাম চমকে উঠলো। তানহা তার পেছনেই দাঁড়িয়ে আছে। ইলহাম তাড়া দিয়ে বললো,
” পরে কথা বলছি হারুন। ” বলেই ফোনটা কেটে দিলো। ইলহাম তানহার উদ্দেশ্য বললো,

” আপনি এখানে? ”

” এসির বাতাসে ভালো লাগছিলো না তাই বাইরে এলাম। ”

” ও আচ্ছা। ” বলেই শ্বাস ফেললো ইলহাম।

হঠাৎ তানহা বললো উঠলো,
” একটা কথা বলবো? ”

ইলহাম চমকে গিয়ে বললো ” বলুন? ”

” আপনি বিকেল বেলা থানায় থাকেন না কেনো? ”

ইলহাম একটু চুপ থেকে বললো, ” বিকেল বেলা ডিউটির জন্য বেশির ভাগ সময় বাইরে থাকি।”

” ও আচ্ছা। আপনাকে একটা প্রমান দেখাবো, ওই খুনি লোকটার। এটা দেখলে আপনি আমার কথা বিশ্বাস করতে বাধ্য.. ”
বলেই ফোনটা বের করে…



চলবে

Story by Ruhi jahan 👈 পেইজটা ঘুরে আসার আমন্ত্রণ রইলো। ভালোলাগলে অবশ্যই পেইজে লাইক দিয়ে রাখবেন! ধন্যবাদ 🌹

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here