#শঙ্খচিল
#Ruhi_Jahan_Maya
পর্বঃ-৩০
সকল নয় টা ত্রিশ মিনিট…
হারুন রশীদ এবং ইলহাম কোর্টের পাশে একটা টং দোকানে চা খাচ্ছে। চা টা কোন মতে শেষ করে ইলহাম একটা সিগারেট ধরালো, হারুন রশীদ ফিনিক হেসে বললো,
” চা টা ঠিক মতো শেষ না করেই সিগারেট নিয়ে নিলেন। ”
ইলহাম সিগারেট টা টেনে, ধোঁয়া উড়িয়ে বললো, ” সিগারেটের গন্ধ না নিলে আর কালো ধোঁয়া না উড়ালে মানুষীক শান্তি আসে না হারুন। নেবে নাকি একটা?”
” না স্যার। বউ টের পেলে রক্ষে নেই৷ ”
” টের পাবে না। তোমার বউ কোর্টে কি করতে আসবে?”
” তাহলে শুনুন স্যার তখন নতুন নতুন বিয়ে করেছি এক দিন ট্রাফিক ডিউটিতে ছিলাম, সিগনালের পাশে বটগাছের নিচে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছিলাম, বউ কথা থেকে যেনো, সামনে এসে দাঁড়ালো। পারে না তো আমায় খুন করে না। সে কি রাগ! রাগে সে বাসায় দু দিন কিচ্ছু রান্না করেনি। না খেয়ে ছিলো..
” তা বুঝলাম! কিন্তু পুরুষ মানুষ বউ কে ভয় পাও কেনো?”
হারুন রশীদ লজ্জা লজ্জা হাসি দিয়ে বললো,
” না মানে স্যার। ভয় পাই না। ভালোবাসি তো তাই তার কথা অমান্য করলেই মনের ভেতর গিলটি ফিল হয়। মনে হয় চোখের আড়ালে তাকে ঠকাচ্ছি..”
ইলহাম মনোযোগ দিয়ে হারুনের কথা শুনলো। ভালোবাসা কি অদ্ভুত জিনিস, কি অদ্ভুত অনুভব। যার জন্য একবার ভালোবাসা নামক অনুভূতির আসে তার জন্য ইচ্ছে করে জীবনটাই উৎসর্গ করে দেই।
ইলহাম তার ভালোবাসার জন্যই তো তার জীবন উৎসর্গ করে দিয়েছে। ভালোবাসার মানুষ টা জন্য ছয়টা বছর লাগাতার পরিশ্রম করেই যাচ্ছে…
” স্যার দেখুন মিডিয়ার লোক এদিকে আসছে।”
হারুনের কথায় ধ্যান ভাংতেই ইলহাম সামনে তাকালো, সাত আটজন সাংবাদিক তার দিকেই আসছে। শেষ বারের মতো সিগারেট টেনে ইলহাম সিগারেটের শেষ অংশ পায়ের তলায় পিষে ফেললো। দোকানিকে বিল দিয়ে দ্রুত হাটতে যাবে ঠিক তখনি একজন সাংবাদিক তরুণী ক্যামেরার সামনে বলতে শুরু করলো,
” আপনারা দেখতে পারছেন এই মূহুর্তে আমরা আছি শাহবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ এস আই ইলহামের সাথে, স্যার আমাদের বলবেন কিভাবে এই মাদক পাচারকারী কে ধরেছেন..”
ইলহাম অপ্রস্তুত হয়ে বললো, ” ধানমণ্ডি তিনে লেকের পাশে এই ছেলেটাকে আমরা অহত অবস্থায় পেয়েছি, সবচেয়ে আকস্মিক ব্যাপার হলো এই ছেলেটা শুধু মাধক পাচারকারী নয় একজন রেপিস্ট যাকে আমরা গত তিন মাস ধরে খুঁজছি। ”
” কিভাবে আহত হলো যদি বলতেন। ”
” আসামি বয়ানে যতটা জানা গেছে, তাকে এক অপরিচিত যুবক মারধোর করে ছিলো, যুবক কে আসামি চেনে না। আমাদের এখন যেতে হবে। ধন্যবাদ। ”
বলেই ইলহাম এক প্রকার দৌড় দিলো। হারুন হাপাতে হাপাতে বললো,
” স্যার আপনি পুরোই গ্রেইট, আমার আইডল?”
” কেনো?”
” কেসটা কেমন উলটে দিলেন। সাপ মরলো লাঠিও ভাংলো না, আই মিন আপনার আইডেন্টিটি কেউ জানলো না। ”
ইলহাম বিড় বিড় করে বললো, ” আসল সাপ এখনো মরেনি হারুন। ”
” মানে? ”
” এখনো অনেক গুলো কে ধরা বাকি আছে হারুন। আসামি চলে এসেছে চলো..”
বলতে বলতেই ইলহাম কিশোর ছেলেটার কাছে গেলো। ছেলেটা ইলহামের দিকে তাকিয়ে বললো,
” আমার সাজা কি কমবে?”
” না। কোন অপরাধীর সাজা কমে না। সত্য কথা বের করার জন্য ওটা শান্তনা ছিলো মাত্র। ”
ছেলেটা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। হারুন রশীদ বললো, ” তুই মাদক পাচারকারী র্যাবের হাতে ধরা পরলে সোজা ইনকাউন্টার করে দিতো। তার ওপর ধর্ষন করেছিস। ফাঁসি না হলেও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড তো হবেই৷ ব্লাক কোবরাও তোকে বাঁচাতে আসবে না। ”
” আমি জানি কোবরা আসবে না। তবে..” বলেই ছেলেটা থমকে গেলো।
ইলহাম বললো, ” তবে কি?বল?”
শুকনো ঢোক গিলে ছেলেটা এক দিকে তাকিয়ে রইলো। কিছু বললো না। দশটা বজতেই সবাই কোর্টে হাজির হলো।
কোর্টের রায় হলো দু ঘন্টা পর। হারুন রশীদের কথাই ঠিক। ছেলেটার ফাঁসি হয়নি ঠিকই তবে যাবজ্জীবন কারাবাস হয়েছে।
—————————————————
ঢাকা শহরে তানহাদের কোন আত্নীয় স্বজন নেই। দাদীর কাছে শুনেছিলো, তার দেশের বাড়ি রাজশাহীর কোন এক জায়গায়। মায়ের যখন ব্লাড ক্যান্সার ধরা পড়ে ভিটে মাটি বেঁচে নাকি সবাই শহরে চলে আসে। তানহা ছোট বেলা থেকে জ্ঞান হবার পরে কখনো তা মায়ের বাড়ির কাউকে দেখেনি।
দাদীকে এই প্রশ্ন করলেও সে কখনো উত্তর দেয় নি। আর বাবাকে কখনো বলার সাহস-ই হয়নি তার। তবে তানহা অনুমান তার বাবা মা পারিবারিক ভাবেই বিয়ে হয়েছিলো তবে তার নানু বাড়ির সাথে কেনো যোগাযোগ নেই।
মানহার বিয়ে ঠিক হবার পর থেকে, এই প্রশ্নটা তার মনে প্রায়ই নাড়া দেয়। তানহা মানহার একটা ফুপি ছিলো, ক্লাস সিক্সে পড়া কালিনীন সময়ে ডেঙ্গু জ্বরে মারা যান। কাছের আত্নীয় স্বজন বলতে কেউ নেই, তাদের। ভাবতে ভাবতেই তানহা রহিমা খালার সাথে বাসা গোছগাছ করছে।
মেহমানদের কে নিয়ে কোন তাড়া নেই, প্রতিবেশি ছাড়া কেউ তাদের বাসায় থাকবে না।
” এই রহিমা, স্টোর রুমের পাশের ঘর টা পরিষ্কার করে নিস..”
রহিমা খালা ক্ষানিকটা বিরক্ত হয়ে বললেন, ” কেউ তো থাকতে আইবো না খালাম্মা৷ তাইলে..”
” যেটা বলছি সেটা কর। বিয়ে বাড়ি, রুমের দরকার আছে। বিয়ের দিন মেহমানদের জন্য বসার, রেস্ট নেওয়ার জন্য তো জায়গা লাগবে। ”
রহিমা খালা বালতি হাতে নিয়ে বললো, ” বুঝছি। যাইতাছি ধুইতে৷ ” বলেই চলে গেলেন।
তানহা দাদীর জন্য এক কাপ চা নিয়ে বসার রুমে গেলো, দাদীর হাতে চা দিতে দিতে বললো,
” একটা কথা বলবো দাদী?”
শেহতাজ বেগম চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বললেন, ” হু! বল। ”
” আপুর বিয়েতে কি আমার নানু বাড়ির কেউ আসবে না?”
” না। তাদের ঠিকানা আমার জানা নাই, মুকুলও জানে না। ”
” কেনো জানো না দাদী। কেনো তাদের সাথে কখনো যোগাযোগ করো নি?”
হুট করে তানহার নানা বাড়ির সম্পর্কে জানতে চাইছে, শেহতাজ বেগম অবাক দৃষ্টিতে তাকালেন, তানহা কখনো নানা বাড়ির ব্যাপারে উৎসাহ ছিলো না৷ শেহতাজ বেগম কি বলবেন, কিছু বুঝতে পারছেন না। একটু সময় নিয়ে কয়েক চুমুক চা খেয়ে বললেন,
” তোমার নানা – নানী অনেক আগেই ইন্তেকাল করেছেন। তার পর রেহানা মারা গেলো, এর পর তোমার মামা-রা আর আমাদের সাথে যোগাযোগ করেন নি।মুকুল তাদের সম্পত্তি ভাগ বসাবে, এই ধারণা হয়তো তাদের ছিলো। তাই মুকুল-ও আর ঘাটাঘাটি করে নি। ”
” ও আচ্ছা। ” বলেই তানহা চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। মানুষের ভাবনা চিন্তা কি পরিমানে নিন্ম হতে পারে তা ভেবে পাচ্ছে না তানহা।বাবা ভাগ চাইতে পারে, এই ভেবে তারা কখনো মা হারা দু’টো মেয়ের খোঁজ তারা কখনো নেয় নি। ভাবতেই তানহার ভীষণ ঘ্রিনা জন্মাচ্ছে..
শেহতাজ বেগম তানহার দিকে তাকালেন। তানহা তার বানানো মিথ্যা কথা বিশ্বাস করেছে, তানহার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে। শেহতাজ বেগম কাপটা টেবিলে রেখে বললেন,
” কি ভাবছিস তানহা?”
” ভাবছি মানুষের চিন্তা এতো নিন্ম শ্রেণির হয় কিভাবে। ”
” এসব নিয়ে ভাবিস না। যত ভাব-বি ততই মন খারাপ হবে৷ ”
“ঠিক আছে দাদী। ”
” আমি একটু মানহার ঘর থেকে আসি৷ ” বলেই শেহতাজ বেগম উঠে দাঁড়ালেন, তানহা আগের মতোই কিছু একটা ভেবে চলেছে, হয়তো তানহার নানা বাড়ির নিয়েই। তবে শেহতাজ বেগম নিশ্চিন্ত, তানহা তার মিথ্যে কথা ধরতে পারেনি।
” কি করো তানহা? খাড়াইয়া আছো ক্যা?”
রহিমা খালার কথায়, তানহার ধ্যান ভাংলো। তানহা চায়ের কাপ টা হাতে নিয়ে বললো, ” কিছু না খালা। ”
শেহতাজ বেগম মানহার ঘরে প্রবেশ করলেন। মানহা কে দেখে শেহতাজ বেগম অবাক হলেন। কারন…
।
।
চলবে
ইদানীং একটু ব্যাস্ত থাকার কারনে, পুরো পর্ব লিখে উঠতে পারছিনা, একটা,পর্ব দুদিনে লেখছি৷ তাই দুঃখীত।
কেমন হয়েছে জানাবেন সবাই🌹