#শঙ্খচিল
#Ruhi_Jahan_Maya
পর্বঃ৩৭
মানহা বারান্দার এক কোনে বসে আছে, কুসুমতি ভিলায় মানহা অনেক বার এসেছে, শিহাব কে পড়াতে। তাই তার বারান্দা অচেনা নয়, ড্রইংরুম ছাড়া সব রুমের লাইট প্রায় অফ করা। মানহা শাড়ির আঁচল মুখে চেপে হেঁচকি শব্দ আড়াল করার চেষ্টা করছে৷ কিন্তু চোখ কি আর বাধা মানে, হেঁচকি শব্দ লুকাতে পারলেও, চোখের জল তো আর বাধা মানে না।
নতুন বউয়ের কান্না শুনলে মেহমান, বাসার সবাই কি ভাববে তা কল্পনা করেই মানহা শাড়ির আঁচল চেপে কান্না নিবারন করার চেষ্টা করছে।
হঠাৎ কাধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে মানহা চমকে উঠলো। দু হাত দিয়ে চোখ মুছে বললো,
” কে?”
” আমি ওয়াহাব। ”
” কেনো এসেছেন? ”
” ইয়ে মানে চা খাবেন? ” বলেই ওয়াহাব কাপটা এগিয়ে দিলো..
মানহা বিড় বিড় করে বললো, আমার ভালোবাসার অনুভুতি নষ্ট করে এখন আদিখ্যেতা দেখাতে এসেছে, অসহ্যকর।
” না। ”
” আজ আমাদের বিয়ের রাত?”
” তো?”
” বাইরে বসে থাকতে দেখলে, সবাই সমালোচনা করবে। ভেতরে..”
” আপনার সাথে একই রুমে থাকার কোন ইচ্ছে আমার নেই। এক বিছানায় তো নয়ই। ”
” আচ্ছা। এবার চলুন। ”
মানহা শ্বাস ফেলে, রুমের দিকে গেলো। ওয়াহাব ঘরে ঢোকার আগেই মানহা ঠাস করে দরজা আটকে দিলো। ওয়াহাব হতবম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। ক্ষানিক বাদে বললো,
“এটা কি হলো?”
” বললাম না এক ঘরে থাকবো না। ”
ওয়াহাব নরম কন্ঠে বললো, ” তাহলে আমি কোথায় থাকবো?বাসায় আর খালি রুম নেই ”
ওয়াহাবের নরম কন্ঠে মানহা শক্ত জবাবে বললো,
” সেটা আপনি জানেন। ”
” আমার রুম..”
মানহা বিরক্ত হয়ে বললো, ” মশার মতো আর বিন বিন করবেন না তো! অনেক কান্নাকাটি করেছি। এখন ঘুমাবো আমি। ”
ওয়াহাব অবাক হয়ে বললো, ” আমি কখন বিন বিন করলাম? তাও আবার মশার মতো!”
ওয়াহাব ক্ষানিক দাঁড়িয়ে থেকে বারান্দার পাশের বেতের মোড়ায় বসে পড়লো। একেই বলে বিয়ের নাম বেদনা। কাল অব্দি রুমটা তার ছিলো আর আজ রুমটা তার বউয়ের দখলে। ভাবতে ভাবতেই ওয়াহাবের চোখ ঘুমে বুজে এলো, হঠাৎ কিছু একটা কামড় দিতেই ওয়াহাব মৃদু চিৎকার দিয়ে উঠলো। শত শত মশা তাকে ঘিরে ধরেছে। মশার বন বন শব্দে ওয়াহাব না ঘুমাতে পারছে, কামড়ানোর জ্বালায় না বসতে পারছে। ঢাকা শহরের অর্ধেক মশা কি তার রক্ত পান করতে চলে এসেছে, ভেবে পাচ্ছে না ওয়াহাব।
ওয়াহাব এক সময় উঠে দাঁড়ালো, ইলহামের ঘরে যাবার জন্য, ইলহাম জানলে কি ভাববে। যা ইচ্ছা ভাবুক তাতের তার কিছু যায় আসে না। ভাবতে ভাবতেই সে ইলহামের রুমের কাছে চলে গেলো, দরজা খুলতে যাবে ঠিক তখনি তার মনে পড়ে গেলো, গ্রাম থেকে আসা আত্নীয় দের ইলহামের রুমে থাকার ব্যাবস্থা করা হয়েছে, এখন সে গেলে সবাই কি ভাববে? তা ভাবতে ভাবতেই ওয়াহাব দ্রুত সরে এলো।
ওয়াহাবের শেষ আশ্রয় এখন শিহাবের রুম, ওয়াহাব দেরি না করে দ্রুত শিহাবের রুমে চলে এলো, শিহাবের বিছানায় ইলহাম শুয়ে আছে আর নিচে কয়েক জন ছেলে কাজিন বেডিং করে শুয়ে আছে৷
ওয়াহাব মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো, আপাতত তার মশার কামড়ের হাত থেকে বাঁচার জন্য এই রুমেই সে বসে থাকবে।
———————————————-
ওয়াশ রুম থেকে শাড়ি চেঞ্জ করে এলো মানহা, ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে বসে গয়না গুলো একটা একটা করে খুলতে শুরু করলো।
অবশেষে ভালোবাসার মানুষ টাকে সে পেলো ঠিকই, তবে হৃদয় আর অন্ততর দহনের পর। ওয়াহাবের যে নাটক করেছে, তাকে এতো দিন পুড়িয়েছে, মানহা তাকে এতো সহজে ছাড় দেবে না।
ক্ষুধার্ত পেটে মানহা বিছানার এপাশ ওপাশ করছে। পেটের ভেতর যেনো ছুঁচো দৌড় দিচ্ছে, ক্ষুধায় ঘুম ও আসছে না তার।
মানহা মোমের আলোয় চারিদিকে একবার চোখ বুলালো, হঠাৎ বিছানার পাশে ওয়াহাবের ছবির দিকে তার চোখ পড়লো।
মানহা ছবির ফ্রেম টা হাতে নিলো। কালো রঙের শার্ট তার ওপরে সাদা এপ্রোন পড়ে হাতে হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে ওয়াহাব। চোখে সচ্ছ চশমা, আর কাপালে দু -একটা চুল ছড়িয়ে আছে। শ্যামবর্ণ যুবকের ঠোঁটের কোনে অদ্ভুত হাসি।
মানহা একবার ছবিটাতে হাত বুলালো। এই হাসির দিকে বেশিক্ষণ তকালে তার রাগ অতী দ্রুত ভ্যানিশ হয়ে যাবে। তাই মানহা ছবিটা দ্রুত বেড টেবিলে রেখে দিলো।
মানহার খুব দেখতে ইচ্ছে করছে ওয়াহাব এখন বাইরে কি করছে, সে ও কি মানহার মতো না খেয়ে আছে?নাহহ এখন বাইরে যাওয়া যাবে না। ওয়াহাব কে টাইট দিতে হলে তাকে শক্ত হতে হতে হবে।
নিজেকে সংযত রাখতে হবে, ভাবতে ভাবতেই মানহা ঘুমের সাগরে তলিয়ে গেলো।
—————————————————
” কি ভায়া! বউ তাড়িয়ে দিলো নাকি? ”
ওয়াহাব অবাক হয়ে বললো, ” আপনি কি ভাবে জানলেন দুলাভাই? ”
” সব জানি। বাই দা ওয়ে, আমার বউ আমাকে তাড়িয়ে দিয়েছিলো, আমি বের বইনি অবাধ্য প্রমিকের মতো বসে ছিলাম, ঘুমন্ত বউ ছেলেকে কিসি দিয়ে এলাম। ”
” বাহ। আমার তো আর বউ কে চুমু দেয়ার কপাল নেই। দেখলেন বাসার রাতে বউ ঘর থেকে বের করে দিলো। ”
” মেয়েটা ভুল করে নি, তুমি ধোঁকা দিয়েছো বলেই ঘর ছাড়া হয়েছো। ”
” আপনি আমাকে অভিসাপ দিয়েছিলেন। তাই এমন হয়েছে।”
শাহেদ অবাক হয়ে বললো,” আমি আবার কি করলাম ভাই?”
” কালকে আমার রুমে আপনাকে থাকতে দিতে চাই নি। আজ আমি নিজে ঘর ছাড়া। ”
শাহেদ শব্দ করে হেসে দিলো।
” যা বলেছো? একটু উইস্কি খাবে নাকি? ”
” কিহহ! আপনি এগুলো কোথায় পেলেন?”
” সুদূর অস্ট্রেলিয়া থেকে নিয়ে এসেছি, টেস্ট অন্য রকম খেয়েই দেখো। ”
” ডাক্তার কে মদ অফার করছেন? ”
” রাখো মিয়া। বিদেশে এমন অনেক ডাক্তার দেখেছি, বারে বসে মদ গিলতে সকাল বেলা আবার স্বাভাবিক ভাবে হাস্পাতালে যেতে..”
” দুলাভাই আপা দেখলে আপনাকে পার্মানেন্টলি বাড়ি ছাড়া করে দেবে। ”
শাহেদ কথা শুনলোনা। ছোট্ট একটা গ্লাসে একটু মদ ঢাললো, এক ঢোকে সব টুকু গিলে বললো,
” তোমার আপার বিরহে মদ পান করা শুরু করেছিলাম। ভালোবাসার মানুষটার অবহেলা যে কি কষ্টরে ভাই কি বললো৷ আমার সাথে একটু কথাও বলতো না তানিয়া কি কষ্ট হতো..তাই বারে গিয়ে তিন চার পেগ মেরে আসতাম। ”
বলতে বলতেই শাহেদ আরেক গ্লাস মদ গিলে ফেললো নিমেষেই।
ওয়াহাব হাতে হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলো। আর মনে মনে ভাবলো, মানুষ এক বার আঘাত পেলে সে ধাক্কা সহজে সামলাতে পারে না। আজ সে হারে হারে বুঝতে পারছে৷ সে কত বড় ভুল করেছে সে দিন মানহা কে বলে দিলে আজ হয়তো আর পাঁচটা মেয়ের মতোই বুক ভরা স্বপ্ন নিয়ে খুশি মনে শ্বশুর বাড়ি পা রাখতো। ওয়াহাব নিজেই মানহার খুশিটা নষ্ট করে দিয়েছে এক নিমেষেই। ওয়াহাব শ্বাস ফেলে বাইরে তাকিয়ে রইলো।
সকাল নয় টা কি সারে নয়টা বাজে।
ওয়াহাব অনেক ক্ষন যাবৎ দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে মানহার দরজা খোলার অপেক্ষায়, তবে এতো বেলা হয়ে যবার পরো মানহা এখনো দরজা খোলেনি।
মা যদি আবার কাউকে ডাকতে পাঠিয়ে দেখে ওয়াবাব ঘরের বাইরে, কি বলবে তা ভেবে বুঝে উঠতে পারছে না, আর না পারছে দরজা খুলতে।
ওয়াহাব দরজার হাত দিতেই দরজাটা ঠিক তখনি দরজা খুলে গেলো। ওয়াহাব ক্ষানিক টা অবাক হয়ে ভেতরে ঢুকলো। মানহা দু হাত একসাথে মাথার নিচে রেখে গুটি শুটি মেরে শুয়ে আছে৷ এলোমেলো চুল গুলো উড়ে উড়ে মানহাকে জ্বালাতন করছে বার বার।
ওয়াহাব মানহার কাছে যাবে কি না একবার ভাবলো, মানহা জেগে গেলে তাকে দেখলে হতো সিনক্রিয়েট করতে পারে।
ওয়াহাব ফ্রেশ হতে চলে গেলো। মিনিট দশেক পর ওয়াহাব বের হতেই দেখলো, তানিয়া এবং কয়েকজন কাজিন মানহার সাথে কিছু একটা নিয়ে কথা বলছে এবং মিটি মিটি হাসছে৷ ওয়াহাব কে দেখেই সবাই চুপ হয়ে গেলো, তানিয়া মানহার উদ্দেশ্য বললো,
” মানহা তুমি ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে এসো আমরা অপেক্ষা করছি। ”
বলেই সবাই চলে গেলো। মানহা ওয়াহাবের দিকে জিজ্ঞেস্যু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
” আপনি কখন এলেন? ”
ওয়াহাব আমতা আমতা করে বললো, ” কিছুক্ষন আগেই। দরজা খোলা ছিলো,তাই ফ্রেশ হতে এসেছিলাম।”
” ও আচ্ছা। ”
বলেই মানহা পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। ওয়াহাব মানহার যাবার পানে তাকিয়ে রইলো, রাতের বেলা মানহা নিজেই দরজার লক খুলে রেখেছিলো, ভেবে ছিলো হয়তো ওয়াহাব আসবে। তবে ওয়াহাব আসে নি, ওয়াহাব মানহার কথা রেখেছে। ভাবতেই মানহা মুচকি হাসলো…
।
।
চলবে
কেমন হয়েছে জানাবেন সবাই 🌹
আমার পেইজ Story by Ruhi jahan
আমার গ্রুপ RUHI JAHAN MAYA-রুহি জাহান মায়ার গল্প ঝুড়ি