শঙ্খচিল পর্বঃ-৩৮

0
1378

#শঙ্খচিল
#Ruhi_Jahan_Maya

পর্বঃ-৩৮


ওয়াহাব টেবিলের এক পাশে বসে নাস্তা করছে। মানহা বসার রুমে আসতেই সবাই তার দিকে এক নজর তাকালো, মানহা মাথা নিচু করে রান্না ঘরের দিকে চলে গেলো৷ মানহার শ্বাশুড়ি মা কাজের সহকারী মহিলার সাথে রান্না করছে, মানহা কুসুম বেগম রক নজর মানহার দিকে তাকিয়ে আবার নিজের কাজে মনোযোগ দিলো, মানহা আমতা-আমতা করে বললো,
” মা আমি একটু হ্যাল্প করবো? ”

কুসুম বেগম তরকারি নাড়তে নাড়তে বললেন, ” সকালের নাস্তার পর্ব তো প্রায় শেষ৷ তুমি আর কি সাহায্য করবে৷ ”

মানহা শ্বাশুড়ি মায়ের কথায় লজ্জা পেয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। কুসুম বেগম বললেন,
” বউ মানুষ কামিজ পড়েছো কেনো? প্রথম কয়েকটা দিন অন্তত শাড়ি পড়তে পারো৷ আজ কালকার মেয়ে রাও বিয়ের রীতি রেওয়াজ ও বুঝে না। ”

মানহা চোখ দুটো ঘোলা হয়ে এলো, ক্ষানিক চুপ থেকে মাথা নিচু করে বললো, ” আমি শাড়ি পড়ে আসি মা। ”

কুসুম বেগম ক্ষানিকটা ধমকের সুরে বললেন ” হ্যাঁ যাও। ”

মানহা মন খারাপ করে রান্না ঘর থেকে বেড়িয়ে এলো। শ্বাশুড়ি মায়ের কথা গুলো বার বার কানের মধ্যে বাজছে তার। আসলে ভুলটা তারই, নতুন বউ তাই তার শাড়ি পড়াই উচিত ছিলো। গরমের কথা ভেবে, সে শাড়ি পড়েনি৷
মানহা লাগেজ থেকে একটা লাল শাড়ি বের করলো। ড্রেস চেঞ্জ করে শাড়ি পড়তে শুরু করলো। মানহা কারো হ্যাল্প ছাড়া ভালো মতো শাড়ি পড়তে পারে না, তাই একা একা শাড়ি পড়তে তার ভীষণ বেগ পেতে হচ্ছে৷
মানহা শাড়ির কুচি দিচ্ছে, ঠিক সেই সময় দরজা খট করে খুললো ওয়াহাব৷ হুট করে মানহার শাড়ি কুচি দেয়া দেখে ওয়াহাব অসস্থিকর পরিস্থিতিতে পড়ে গেলো।
আমতা আমতা করে বললো,
” সরি আমি বুঝতে পারি নি আপনি শাড়ি পরছিলেন। ”

বলেই ওয়াহাব দরজা আটকাতে যাবে ঠিক তখনি মানহা বললো, ” আমি শাড়ির কুচিটা ঠিক করতে পারছি না। একটু হ্যাল্প করবেন! ”

ওয়াহাব মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ বললো, মানহা তাড়া দিয়ে বললো, ” ভেতরে এসে তাড়াতাড়ি ঠিক করে দিন, লেট করলে মা রাগ করবেন। ”

ওয়াহাব স্মিথ হাসে শাড়ির কুচির ভাজ করতে শুরু করলো, মানহা অবাক হয়ে বললো,
” হাসছেন কেনো? ”

” মা আপনাকে শাড়ি পড়তে বলেছে তাই না?”

” হ্যাঁ। আপনি কি ভাবে জানলেন। ”

ওয়াহাব হেসে বললো,” আমি আমার মাকে ভালো ভাবেই চিনি। মা কি একটু রেগে কথা বলেছে?”

মানহা অবাক হয়ে তাকালো উত্তর দিলো না। শাড়ি আঁচল কাধে ফেলে বললো,
” এতো কথা জেনে আপনার কাজ নেই। আর হ্যাঁ এই ঘরে আপনার জায়গা নেই মনে থাকে যেনো। ”
বলেই মানহা ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো। ওয়াহাব বোঁকার মতো দাঁড়িয়ে রইলো। দুলাভাই নামক মহাপুরুষ বলেছে বিয়ে নাকি একটা বেদনা। কথা ভুল নয় বরঙ একশত পারসেন্ট সত্য, আজ রাতেও তাকে মশার বন বন গান শুনতে হবে ভাবতেই ওয়াহাব নিঃ শ্বাস ফেললো।

—–
—–

” মাশাল্লাহ মানহা তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে। ”

মানহা শাড়ি পড়ে বসার রুমে আসতেই চাচি শ্বাশুড়ি মা কথাটা বললেন। মানহা স্মিথ হাসলো। কুসুম বেগম আড় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,
” দাঁড়িয়ে আছো কেনো। বেলা তো কম হলো না নাস্তা করে নাও। ”

মানহা একটা টেবিলে বসতেই, তানিয়া নাস্তা বেড়ে দিলো। মুচকি হেসে বললো,
” এখন তুমি আর শিহাবের মিস নও। এই বাড়ির বউও তাই বলে লজ্জা পেও না। ”

মানহা তানিয়ার কথা শুনে স্মিথ হাসলো। কুসুম বেগম গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
” লজ্জা পাবে না কেনো? আজকাল কার আধুনিক যুগের মেয়ে যেখানে যায় সেখানে মিশে যায় একটু বেছে সয়ে চলতে হয় বুঝলি। শ্বশুর বাড়ি এসে আমরা তো লজ্জায় তাকাতেই পারতাম না। ”

তানিয়া মায়ের কথার প্রতি উত্তরে বললো, ” সবার সাথে মেশা টাকি খারাপ মা? তাছাড়া তোমাদের সময় আর এখন কার সময় অনেক পার্থক্য। ”

কুসুম বেগম রেগে গিয়ে বললেন, ” তর্ক কম করো তানিয়া। এতো বেশি বুঝো এই জন্যেই তোমার সংসার অর্ধেক ভেংগে গেছে৷ ”

তানিয়া রাগটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে বললো, ” সব সময় আমার সংসার নিয়ে খোটা দাও কেনো? আমি নিজের পছন্দে বিয়ে করেছি বলে? তোমাদের পছন্দে বিয়ে করলে যদি এমন টা হতো তখন তো আর এতো কথা শোনাতে না৷ ”
বলেই তরকারির বাটিটা টেবিলে শব্দ করে রেখে চলে গেলো।

মানহা নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। এই পরিস্থিতিতে মানহার গলা দিয়ে খাবার নামলো না৷ তানিয়ার অতীত সম্পর্কে তার খুব জানতে ইচ্ছে
করছে।
কুসুম বেগম মানহার উদ্দেশ্য বললো, ” তোমার নাস্তা শেষ? ”

“জ জ্বি মা। ”

কুসুম বেগম একটা গয়নার বাক্স মানহার দিকে এগিয়ে দিলেন। মানহা বাক্স হাতে নিতেই বললেন,
” খুলে দেখো৷ ”

মানহা বাক্স খুলে কিছু গহনা দেখতে পেলো। কুসুম বেগম বললেন, ” আমাদের পক্ষ থেকে তোমার জন্য৷ বৌভাতের অনুষ্ঠানে এগুলো পড়ো।”
মানহা মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানালো।

—————————————————

রাত আটটা বেজে আঠারো মিনিট।
কনভার্শন হলের সামনে ওয়াহাব তার হাস্পাতালের কলিগ দের সাথে কথা বলছে। অন্যদিকে ইলহামও বৌ-ভাতের অনুষ্ঠানে আসা আত্নীয় স্বজন দের কে আপ্যায়ন, তদারকি করছে। আর ক্ষানিকটা সময় পর পর-ই হাত ঘড়িটার দিকে তাকাচ্ছে। আর চারিদিকে লক্ষ্য করছে ধীরে ধীরে মেহমান দের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

ওয়াহাব ইলহাম কে লক্ষ্য করলো, অতঃপর ইলহামের কাছে গিয়ে বললো,
” আমার বৌ-ভাতে তোর কোনো স্পেশাল গেস্ট আসার কথা ছিলো নাকি?”

ইলহাম অবাক হয়ে বললো, ” না কেনো ভাইয়া?”

” বার বার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছিস আবার চারিপাশে দেখছিস তাই ভাবলাম। ”

ইলহাম স্মিথ হেসে বললো, ” ও কিছু না৷ ওই দেখো ভাবি এসেছে। ”

ওয়াহাব গেটের দিকে তাকালো, মানহা এক হাতে ভাড়ি লেহেঙ্গা সামলিয়ে ধীরে ধীরে ভেতরে আসছে। তার মুখে কৃত্তিম মেক-আপের প্রলেপ। যদিও ওয়াহাব মানহার প্রকৃতিক রূপ দেখে প্রেমে পড়েছিলো, তবে সে আজ পূর্নরায় মানহার প্রেমে পড়তে বাধ্য।
রূপকথার গল্পের রাজকন্যাটা মনে হয় তার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে মিষ্টি রংয়ের বউ সেজে।

” বিয়ের দিন ঠিক মতো ভাবি কে দেখা হয় নি বলে, এভাবে তাকিও না ভাইয়া। ওটা তোমারই বউই। ” বলেই ইলহাম ফিক করে হেসে দিলো।

ওয়াহাব চশমা ঠিক করে বললো, ” আমি কি মানহার দিকে তাকিয়ে ছিলাম নাকি, আমি তো…”

” থাক আর বলতে হবে না। বুঝেছি আমি। যাও ভাবির কাছে.. ”

ওয়াহাব স্টেজে কাছে গেলো, তানিয়া দুষ্টুমি করে বললো,” দূরে দাঁড়িয়ে নিজের বউকে দেখছিস কেনো ? কাছে আয়৷ ” বলতেই সবাই হেসে দিলো। শিহাব ওয়াবাহের হাত ধরে বললো,
” মামু মামীর পাশে বসবে না?”

ওয়াহাব মানহার দিকে তাকালো রইলো, মানহা ফ্যাল ফ্যাল করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। শিহাব ওয়াবের হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো, ওয়াহাব মানহার পাশে বসলো। মানহা আগের মতোই ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে ওয়াহাবের দিকে, এক দিন আগে সে, যার বিরহে কেঁদেছিলো সেই পুরুষ টি এখন তার পাশে বসে আছে। সত্যি সৃষ্টিকর্তা চাইলে কি না করতে পারে৷ ভাবতেই মানহার চোখের কোনে পানি জমে গেলো।

মানহা কোন মতে চোখের পানি মুছার চেষ্টা করলো। তবে তা ওয়াহাবের দৃষ্টির অগোচর হলো না, ওয়াহাব পকেট থেকে ট্যিসু বের করে দিলো, মানহা নিতে না চাইলেও ওয়াহাব কে ইগনোর করতে পারলো না। ওয়াহাবের হাত থেকে ট্যিসু নিয়ে চোখ মুছে নিলো।
কালো শার্ট, কালো ব্লেজারে, হাতে কালো ঘড়ি। সব কিছুই কালো পড়েছে আজ ওয়াহাব। তাকে দেখতে পুরো ডার্ক কিং লাগছে, ডার্ক কিং ই তো মানহার প্রিন্স চার্ম সে।

” এভাবে তাকাবেন না প্লিজ আমার লজ্জা লাগছে। ”

মানহা ভ্যাবাচেকা খেয়ে বললো, ” আমি কখন তাকালাম। ”

ওয়াহাব আড় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, ” তাকান নি?”

মানহা তুতলিয়ে বললো, ” আমি তো শিহাব কে দেখছিলাম। কি কিউট লাগছে বাবু টাকে..” বলেই মানহা মনে মনে হাসলো, বিড় বিড় করে বললো, তোমাকে টাইট দিতে হলে আমাকে শক্ত হতে হবে ডাক্তার সাহেব।

———————————————-

কমিউনিটি হলের এক পাশে, তানহা তার দাদীর সাথে বসে আছে। দাদী মানহা আর ওয়াহাবের খুনশুটি দেখছে। তানহা দাদীর কাধে হাত রেখে বললো…



চলবে
কেমন হয়েছে জানাবেন সবাই। এবং আমার সকল পাঠকদের জানাই ঈদের শুভেচ্ছা।
ঈদ মোবারক 🌹

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here