#শঙ্খচিল
#Ruhi_Jahan_Maya
পর্বঃ-৪০
সিগাল টাওয়ারের থার্ড ফ্লোরে বসেছে, জুয়া এবং মদের আসর। এবং প্রথম ফ্লোরে চলছে মানহা -ওয়াহাবের রিসেপশন প্রগ্রাম৷ বদ্ধ থার্ড ফ্লোরে চলছে গান বাজনা পাশে চার-পাঁচ টা মেয়ে ছোট পোশাক পড়ে নানা ভংগিমায় নাচানাচি করছে। জুয়ার আসরে নন্দু ভাই বসে আছে অপেক্ষা করছে, ব্লাক কোবড়ার। হঠাৎ থার্ড ফ্লোর অন্ধকার হয়ে গেলো, নন্দু ভাইয়ের কয়েকজন চেলা বিদ্যুত সংযোগের জন্য তাড়া হুড়ো শুরু করলো ঠিক তখনি বিদ্যুৎ চলে এলো, নন্দু ভাই সামনে তাকিয়ে চমকে উঠলো…
সামনে এক অপরিচিত যুবক বসে আছে, নন্দু ভাই খুঁটিয়ে দেখা শুরু করলো, কালো রঙের শার্ট, কালো কোর্ট ডেমিন জিন্স, কালো শু-জুতো পড়া ছেলেটা পায়ের ওপর পা তুলে বসে আছে, হাতে আধ পোড়া সিগারেট। নন্দু ভাই একটু ঝুকে বসে বললো,
” কে রে তুই? কি চাই তোর? ”
” আমি কে, আমার কি চাই সব বললবো তার আগে, এক ডান খেলা হবে নাকি? ”
নন্দু ভাই আড় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, ” যদি আমি জিতি তো?”
ইলহাম একগাল হেসে বললো, ” যা চাইবি তাই। আর আমি জিতি তো?”
” তো? ”
” তো সেটা খেলা শেষ হলেই বলবো। ”
নন্দু ভাই হাতে থাকা সব গুলো তাস টেবিলে ছুড়ে মারলো। ইলহাম কার্ড গুলো হাতে নিয়ে টাইমার সেট করলো।
এসির বাতাসেও নন্দু ভাই ঘেমেই চললেছে। তৈলাক্ত কপাল টা ডান হাত দিয়ে চুলকালো। হাতে আর মাত্র এক মিনিট নয় সেকেন্ডে বাকি।
মদে ডুবে এতো জুয়া খেলেছে, তাতে কেউ হারাতে পারেনি নন্দু ভাইকে, এই অপরিচিত ছোকরা তাকে হারাবে ভাবতেই, বোতলের সব টুকু মদ ঢক ঢক করে গিলতে শুরু করলো।
ইলহাম হাতে থাকা সব গুলো তাস ফেলে বললো, রানী বাজি মাত। নন্দু ভাই চিৎকার দিয়ে বললো, ” কে তুই? কি চাই আমার কাছে তোর? ”
” ইলহাম কোর্টের কলার ঠিক করে বললো, ব্লাক কোবরা কে চাই আমার। ”
” ব্লেক কোবরা কে কেনো চাই তোর, কি দরকার তাকে?”
” একটা পুরনো হিসাব বাকি আছে। ”
” কোন ব্লাক কোবরার ঠিকানা দিতে পারবো না আমি না না না..”
” খেলায় আমি জিতেছি। আমি যা জানতে চাই তা বলবি তুই..”
” আমার হে”াও কমু না। কি করবি তুই?”
বলেই ইলহামের মুখে ঘুষি দিতে গেলে ইলহাম খপ করে হাত টা ধরে ফেললো, সাথে সাথে কয়েকজন চেলা ইলহাম কে আটেক করলো। নন্দু ভাইয়ের ঘাড়ে সজোরে গুতা মেরে ইলহাম অজ্ঞান করে ফেললো। অতঃপর চ্যালা গুলো কে মাড়তে শুরু করলো৷
————————————————–
মানহা এবং ওয়াহাবের বৌ-ভাতের অনুষ্ঠানে শেষ প্রায়। একে একে সব মেহমান বিদায় নিতে শুরু করেছে৷ তানহা – দাদী এবং কনে পক্ষ হয়ে আসা কয়েকজন প্রতিবেশী গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তানহা আনমনে কিছু একটা ভেবেই চলেছে এবং বার বার কমিনিটি হলের সদর দরজার দিকে তাকাচ্ছে। একে একে সবাই গাড়িতে উঠতে শুরু করেছে,
তানহা জোরে শ্বাস ফেললো, পেছন ঘুরে গাড়িতে উঠতে যাবে,
হঠাৎ শেহতাজ বেগম তানহা কে বললেন,
” মুকুল কোথায়? মুকুল কে দেখতে পারছিনা কেনো রে?”
” বাবা তো আমাদের সাথে বের হয়েছিলো দাদী।”
হঠাৎ গাড়ি ভেতর থেকে ড্রাইভার বললেন, ” মুকুল ভাই একটু পরে আইবো৷ আপনেগো লইয়া আগে যাইতে কইছে।”
” বাবা পরে আসবে কেনো?”
শেহতাজ বেগম গাড়ির ভেতর ভেতরে বসে ক্লান্ত হয়ে বললেন, ” মনে হয় মানহাদের সাথে বের হবে৷ আমরা বরং বাসায় যাই৷” বলেই তানহাকে ভেতরে বসতে বললেন, তানহা ও দাদীর কথা মতো বসলো…
।
।
রিসিপশন শেষে বাড়ি ফেরার পালা, ওয়াহাব-মানহার পাশেই শিহাব বসে আছে, ড্রাইভিং সিটের পাশে একজন কাজিন বসে আছে, গাড়িতে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় বাধ্য হয়েই তানিয়া শাহেদের সাথে শেষের সিটে বসলো। তবে মাঝখানে সাইড ব্যাগ রেখে, গরমে ক্লান্তিতে তানিয়া চোখ বুজে বসে রইলো।
একসময় ঘুমের সাগরে পাড়ি দিলো। ঘুমের ঘোরে ব্যালেন্স হারিয়ে তানিয়া শাহেদের গায়ে এলিয়ে পড়লো।
শাহেদ মনে মনে হাসলো, তানিয়ার মাথা নিজের কাধে রেখে তানিয়ার হাতে হাত রাখলো৷ এই মূহুর্তেটার জন্য সে দৈর্ঘ সাত বছর ধরে অপেক্ষা করছিলো, শাহেদ জোরে শ্বাস নিলো। প্রিয়তমা কে পাশে পেয়ে, তার নিজেকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শুখী মানুষ বলে মনে হচ্ছে৷ শাহেদের মনে মনে গুন গুনিয়ে গাইতে ইচ্ছে করছে, —এই পথ যদি না শেষ হয় তবে কেমন হতো তুমি বলো তো..
ওয়াহাব জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে, মানহা একটু পর পর তার দিকে আড় দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে, জানালার প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে ওয়াহাব খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে, তাই মিটি মিটি হাসছে।
হঠাৎ ওয়াহাবের হাসি দেখে মানহা অবাক হয়ে তাকালো৷ মনে মনে নিজেকে প্রশ্ন করলো, এই পাজিটা আবার বুঝে গেলো না তো, যে সে লুকিয়ে লুকিয়ে তাকেই দেখছিলো৷
ল্যাম্পপোস্টের আলো গাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতেই মানহা দেখতে পেলো, তার প্রতিবিম্ব আয়নার মতোই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ওয়াহাবে বসা সিটের জানালায়। মানহা থ মেরে বসে রইলো, সে ধরা খেয়ে গেছে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতে গিয়ে, লজ্জায় মানহার গাড়ি থেকে লাফ দিতে ইচ্ছে করছে। মানহা ক্ষানিক সময়ের জন্য অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো। ওয়াহাব মানহার কর্মকাণ্ড দেখে খুব কষ্টে নিজের হাসিটা চেপে রেখেছে।
হঠাৎ ট্রাফিক জ্যামে গাড়ি থেমে যেতেই, মানহা ব্যালেন্স হারিয়ে ভুলে ওয়াহাবের হাতের ওপর হাত রাখলো। মানহা চমকে গিয়ে ওয়াহাবের দিকে তাকালো। সেই আগের মতোই হাসির রেখে ফুটে উঠছে ওহাবের চেহারায়, মানহা লাজুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে হাতটা সরিয়ে নিলো।
অস্ফুট স্বরে মানহা সরি, বলতে গিয়েও থেমে গেলো, পরক্ষণেই মনে মনে ভাবলো, সে কেনো সরি বলবে। সে কি এমন ভুল করেছে যে তার সরি বলতে হবে৷ পর পুরুষের হাতে তোর আর হাত রাখেনি সে।
বরং নিজের বৈধ স্বামীর হাতেই হাত রেখেছে। সে কেনো সরি বলবে সরি তো বলবে এই অসভ্য ডাক্তার সাহেব। তাকে মানুষীক কষ্ট দেওয়ার জন্য। ধোকা দিয়ে দিয়ে করার জন্য।
————————————————-
হঠাৎ মুখে কেউ পানি ছুঁড়ে মারতেই নন্দু ভাই চোখ মেলে তাকালেন৷ চোখের সামনে সব কিছু ঘোলাটে মনে হচ্ছে, চারিদিক থেকে বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দ আসছে। কয়েক সেকেন্ড পরে সব কিছু স্বাভাবিক হতেই, ভাংগা ভাংগা কন্ঠে নন্দু ভাই বললো,
” কে তুই? কেনো আমার সাথে এমন করছিস? ”
ইলহাম এতোক্ষণ পায়ের ওপর পা তুলে বসে, সিগারেটের ধোঁয়া ওড়াচ্ছিলো। নন্দু ভাইয়ের কথা শুনে, সিগারেট টেনে ইলহাম বললো, ” আমি কে তা জেনে তোর লাভ নেই। ব্লাক কোবরা কে কোথায় পাবো তুই সেটা বল। না হলে তোর হাত পা বাধা অবস্থায় ছাদ থেকে ফেলে দেবো। ”
পেছন থেকে হারুন রশীদ বললো, ” বারো তলা থেকে পড়লে তোর অস্তিত্ব থাকবে না, হাড্ডি শুদ্ধো লিকুইড হয়ে যাবে৷”
নন্দু ভাই শুকনো ঢোক গিলে বললো, ” ব্লাক কোবরার সাথে কয়েক মাস আগেই লাস্ট ডিল করেছিলাম।”
” ডিল। কিসের ডিল। ড্রাগ নাকি। মেয়ে পাঁচার?”
” মেয়ে পাঁচার। ছাব্বিশ টা মেয়েকে কিনে দুবাই পাঁচার করেছিলাম৷ ”
ইলহাম ক্ষানিকটা চুপ করে রইলো, রাগে মাথাটা টন টন করছে তার। চোখ দুটো নিমেষেই লাল বর্ন ধারন করেছে। ইলহাম জোরে শ্বাস নিয়ে বললো,
” তারপর?”
” তারপর আর ডিল হয় নি। আজ এখনে আসার কথা ছিলো ব্লাক কোবরার। ”
ইলহাম অবাক হয়ে বললো, ” এখানে?”
” হ্যাঁ। ”
ইলহাম চোখ বুজে বললো, ” অহহহ সিট সিট। এতো বড় জ্যাকপট মিস করে গেলাম। ” বলেই সামনের চেয়ারটায় লাথি মারলো।
” ব্লাক কোবরা কখনো বডি গার্ড নিয়ে চলে না। আম জনতার সাথে মিশে বেরায়৷ তোকে দেখে ফেললে সরেও যেতে পারে। ”
ইলহাম চমকে তাকিয়ে রইলো, কিশোর ছেলেটাও একই কথা বলেছিলো, ব্লাক কোবরা আম জনতার সাথে মিশে বেরায় নিজের আসল পরিচয় লুকিয়ে৷
” আমি পানি খাবো?”
হারুন ইলহামের দিকে তাকালো। ইলহাম পেছন ঘুরে পকেট থেকে কিছু বের করে পানির সাথে মিশিয়ে দিলো। পানির বোতলটা নন্দুর হাতে দিতেই ঢক ঢক করে সব পানি পান করে ফেললো। ইলহাম হারুন কে উদ্দেশ্য করে বললো,
” এর চোখ মুখ বাধে নাও হারুন।”
হারুন বেধে নিলো। নন্দু ভাইকে তৃতীয় তলায় রেখে, হারুন এবং ইলহাম বেরিয়ে এলো…
।
।
চলবে
কেমন হয়েছে জানাবেন সবাই।
পেইজ- Story by Ruhi jahan
গ্রুপ- RUHI JAHAN MAYA-রুহি জাহান মায়ার গল্প ঝুড়ি