শঙ্খচিল পর্ব-১১

0
2001

#শঙ্খচিল
#Ruhi_Jahan_Maya

পর্বঃ-১১
গত রাতে বৃষ্টির কারণে রাস্তা ঘাটে পানি জমেছে৷ রাস্তার পাশ দিয়ে পা টিপে টপে হেটে চলেছে মানহা। বাসা থেকে একবার বের হয়ে আছাড় খেয়ে পড়েছে সে, একই ভুল আর দ্বিতীয় বার করতে চায় না। তাই আপাতত পা টিপে হাটা কেই প্রাধান্য দিচ্ছে সে। মোরের মাথায় আসতেই একটা খালি রিকশা পেয়ে গেলো মানহা।
রাস্তা ঘাটে খুব একটা মানুষ জন নেই, গত কাল রাতে বৃষ্টি হবার কারনে দরকার ছাড়া হয়তো কেউ বাসা থেকে বের হয় নি৷ রিকশা চলছে ধানমন্ডির পথে। তবে কলেজের উদ্দেশ্য না, আগে শিহাবদের বাসায় যেতে চায় সে, অতপর মেডিক্যালে যাবে৷ রাস্তা ঘাটে জ্যাম না থাকার কারনে পঁচিশ মিনিটেই মানহা ধানমন্ডি চলে এসেছে, কুসুমতি ভিলার সামনে রিকশা থামতেই দেখতে পেলো ভেজা মাটিতে কাগজের নৌকা মিশে আছে। খেয়াল করে দেখে বুঝতে আর বাকি রইলো না, এটা শিহাবের কাজ।

অংকের বই ছিঁড়ে নৌকা বানিয়ে ভাসাতে বলেছে বলে, সত্যি ছেলেটা তা ই করেছে৷ শিহাব যখন কাগজের নৌকা ভাসাচ্ছিলো তখন নিশ্চয়ই খুব অনন্দ পাচ্ছিলো। মানহা মনে মনে শিহাবের হাসিটা কল্পনা করলো৷ শিশুদের মস্তিষ্কের একটা পার্ট নিভে যায় না শব্দের কারনে, এটা করো না ওটা করো না শুনতে শুনতে মনের প্রফুল্লতা মিইয়ে যায়।
সবার উচিত শিশুর বিকাশের বয়সে, তাকে উতসাহ দেওয়া। নিষেধ না করা। ওরা করুক, যা ওদের ইচ্ছে।

গেটের কাছে দারোয়ান নেই। মানহা নজেই গেট খুলে দ্বিতীয় তলায় উঠে গেলো। বেল বাজাতেই বুয়া এসে দরজা খুলে দিলো, মানহা ড্রইংরুমে তানিয়া কে দেখতে না পেয়ে জিজ্ঞেস করলো,
” তানিয়া আপু বাসায় নেই?”

” রুমেই আছে। ডেকে দিবো?”

” না থাক। শিহাব কোথায়? ”

” শিহাব ভাই তো মনে হয় ওনার রুমেই। ”

“আচ্ছা। ” বলেই মানহা শিহাবের রুমের দিকে চলে গেলো। শিহাব ফুটবল একবার দেয়ালে বাড়ি দিচ্ছে আবার কেচ করছে আবার বাড়ি দিচ্ছে….
মানহা রুমে ঢুকলো কিন্তু শিহাব টের পেলো না, শিহাবের পাশে বসতেই শিহাব চমকে গিয়ে বললো,
” মিস তুমি কখন এসেছো?”

” কিছুক্ষণ আগে। তুমি বই ছিঁড়ে নৌকা বানিয়ে ছিলে। ”

শিহাব কাচু মাচু মুখ করে বললো, ” হ্যাঁ। সরি। ”

” সরি কেনো? ”

” বইটা ছিঁড়ে ফেলেছি তাই। বই টা ছেঁড়া আমার একদম ঠিক হয় নি। ”

” কোন সমস্যা নেই। আমি আরেক টা কিনে দেবো। চলে পড়তে বসি।”

” মিস আজকে অংক করবো।”

মানহা মুচকি হেসে বললো, ” আচ্ছা। ”

শিহাব বই খাতা মেললো, অংক করার জন্য। মানহা বই টা হাতে নিতেই তার মনে পড়লো তার চশমা গত কাল ক্লাসে হারিয়ে গেছে গেছে, অনেক খোঁজা খুঁজি করেও পায় নি৷ চশমা ছাড়া ছোট অক্ষর স্পষ্ট দেখতে পারে না মানহা। শুকনো ঠোঁট টাকে ভিজিয়ে মানহা বললো,
” শিহাব আমি আমার চশমা হারিয়ে ফেলেছি। এখন কি করি.. ”

শিহাব ক্ষানিকটা ভেবে বললো, ” একটু অপেক্ষা করো মিস, আমি এক্ষুনি আসছি৷ ” বলেই অন্য রুমে চলে গেলো, ক্ষানিক পরে শিহাব হাতে একটা চশমা নিয়ে এলো, চশমাটা কিছুটা ম্যান স্টাইলের। শিহাব চশমা টা মানহার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
” মিস এই চশমা টা পড়ে দেখো।”

মানহা চশমা টা পড়তেই মাথায় একটু ঝিম ধরলো, বইয়ের দিকে তাকাতেই সব পরিষ্কার দেখতে পেলো৷ তবে এই চশমার পাওয়াটা মানহার চশমার থেকে অনেক বেশি, তাই একটু মাথায় ঝিম ধরেছে।
মানহা শিহাব কে অংক করাতে শুরু করলো। ঘন্টা খানেক পর পড়া শেষ করে শিহাব বই গুছাতে শুরু করলো, মানহা টুপ করে চশমা টা ব্যাগে পুরে নিলো।

আগামীকাল তার পরিক্ষা এক দিনে নতুন চশমা বানিয়ে আনাটাও সম্ভব না। এই চশমাটা দিয়েই তাকে পরিক্ষা দিতে হবে।

শিহাব খেয়াল করার আগেই, মানহা শিহাব কে বিদায় জানিয়ে বেড়িয়ে এলো৷ সকাল দশ টা কি পনে দশটা বাজে, মানহা শিহাবের রুম থেকে বের হতে যাবে ঠিক তখনি দেখতে পেলো সোফায় কেউ বসে আছে। পুরুষ অবয়ব দেখে মানহা থামকে দাঁড়ালো, পেছনটা অবিকল ডাক্তার ওয়াহাবের মতো। মানহা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনি তানিয়া বলে উঠলো,
” মানহা যে। আজকে সকালে? ”

তানিয়ার কন্ঠ অনুসরণ করে যুবক ছেলেটা পেছনে তাকালো, ওহাবের মতো আকৃতি হলেও এটা ওয়াহাব না। মানহা নিঃশ্বাস ফেললো বললো,
” কালকে থেকে আমার এক্সাম তাই ভাবলাম শিহাব কে পড়িয়ে যাই। ”

” তুমি এবার মেডিক্যাল থার্ড ইয়ারে উঠবে তাই না?”

মানহা মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ জানালো অতঃপর বললো, ” আমি ছয় দিন আসতে পারবো না আপু। ”

তানিয়া হালকা হেসে বললো, ” আচ্ছা। ” অপরিচিত যুবকটার দিকে মানহা তাকালো, তানিয়া বললো,
” ও আমার ছোট ভাই, ইলহাম৷ ইলহাম ও মানহা, শিহাবের মিস, এবং বন্ধুও বটে। ”

মানহা ভদ্রতার হাসি দিলো। সাথে যুবক টাও। কিন্তু কেউ কোন কথা বললো না, মানহা তানিয়ার উদ্দেশ্য বললো,
” আপু আজ আসি। ”

” চা খেয়ে যাও মানহা। ”

” অন্য একদিন আপু। আজ আসি। ”

” এক্সামের জন্য বেস্ট অফ লাক। ”

” ধন্যবাদ আপু। ” বলেই মানহা চলে এলো।

ধানমন্ডি দশ রোডে একা একা হেটে চলেছে মানহা। কলেজের বিপরীতে পাশের রাস্তা দিয়ে হেটে চলেছে, সে। আজ আর কলেজে যেতে ইচ্ছে করছে না। একা একা হেটে যেতে ইচ্ছা করছে মিটারের পর মিটায়। শিহাবের ছোট মামা ইলহাম কে দেখার পর থেকেই মানহার ভীষণ ওয়াবের কথা মনে পড়ছে।
অদ্ভুত মানুষ একটা। কেনো যে মানহার স্বাভাবিক জীবনে এলো তারপর সব কিছু গোল মেরলে করে দিয়ে, লাপাত্তা হয়ে গেলো।

মানহাও চাইলে, সে মেডিক্যালে যেতে পারতো, কোন এক অজানা অনুভুতি বুকের বাম কিনারায় গেথে, বাধা দিচ্ছে বার বার। হঠাৎ মানহার ভেতর টা মোচড়াতে শুরু করলো।
একেই হয়তো বলে, লাভ এট ফার্স্ট সাইট। অথবা একতরফা ভালোবাসা। যা একে বারেই ভিত্তিহীন, বর্তমান সময়ে।

মানহা বাড়ি ফিরলো, এগারোটার পরে। বিছানার চুপ করে শুয়ে বসে বই নিয়ে পড়তে বসলো। শুধু ভাবলেই তো চলবে না, ভবিষ্যতের দিকেও মনোযোগী হতে হবে, ভাবতেই মানহা দৈর্ঘ্য নিশ্বাস ফেলে পড়ায় মনোযোগ দিলো। ক্ষানিক ক্ষন পরে পেছনে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে মানহা ঘুরে তাকালো, দাদী দাঁড়িয়ে আছে। অপারেশনের পড় থাকে দাদী অনেক টাই সুস্থ, আগে একটা হাটতে কষ্ট হতো তবে এখন লাঠি ভর দিয়ে একাই হাটতে পারে। দাদি মানহার বিছানায় বসলো। মানহা বই থেকে মুখ সরিয়ে বললো,
” কিছু বলবে দাদী? ”

” একা একা ভালো লাগছিলো না। তাই এলাম। ”

” একা একা মানে? তানহা কোথায়। ”

” শাহবাগ গেছে। ”

মানহা অবাক হয়ে বললো, ” শাহবাগ কেনো? ”

” আমাকে কিছু বলে নি। হয়তো বান্ধবীর বাসায় গেছে। ”

মানহা শ্বাস ফেললো, মেয়েটা কি যে করে, কাউ কে কিছু বলার প্র‍য়োজন বোধ মনে করে না। আজকে আসলে আচ্ছাছে বকে দেবে মানহা।
তানহা বাসায় ফিরে এলো বিকেলের পর। থানা থেকে কলেজে গিয়েছে, ক্লাস করতে। ক্লাস শেষে আন মনে হেটে হেটে বাড়ি ফিরেছে। কোচিংয়েও যায় নি, তানহার চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ। রুমে ঢুকে বিছানায় শুয়ে রইলো, ঘুরে ফিরে সেই একই ভাবনা তাকে ভাবায়।
চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে এলো, তানহা দ্রুত চোখের পানি মুছে ফেললো। মানুষ যন্ত্রণা তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে, এভাবে আর কত? প্রানের সংশয় নিয়ে কি বাঁচা যায়…

মানহা কফির মগ হাতে নিয়ে রান্না ঘর থেকে নিজের রুমে যাবে, এমন সময় সে থমকে দাঁড়ালো। তানহার রুমের দিকে তাকাতেই দেখলো, তানহা এক মনে কিছু একটা ভেবে চলেছে। তানহার কাঁধে হাত রাখতেই সে কেঁপে উঠলো। পিট পিট করে মানহার দিকে তাকিয়ে বললো,
” আপু তুমি?”

” হ্যাঁ। চমকে গেলি কেনো?”

তানহা আমতা আমতা করে বললো, ” কই এমনি আপু। আ আ আসলে সামনে এক্সাম তাই একটু টেনশনে আছি। ”

মানহা একবার সন্দেহ দৃষ্টিতে তাকালো, কিছু বললো না। তানহা অস্থিতে পড়ে গেলো..


চলবে
আইডিতে সমস্যার কারনে, ১১ দিন পর গল্প পোস্ট করলাম, কেমন হয়েছে জানাবেন সবাই 🌹

পর্বঃ-১০
https://www.facebook.com/100044280578069/posts/510749163744432/?app=fbl

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here