#শঙ্খচিল
#Ruhi_Jahan_Maya
পর্ব-১২
গ্রীষ্মেরর আগমন।শীতের রেশ কেটে গেছে প্রায়। চৈত্র মাসের শুরু, মাথার ওপরে সূর্যের তাপ এখনো তেমন বারে নি। তবে মানহা টিস্যু দিয়ে ঘন ঘন কপালের ঘাম মুছছে। হয় তো দুশ্চিন্তায়, সকাল দশ টা বাজে গেছে অথচ সে এখনো পরিক্ষার হলে যেতে পারে নি। রিকশা ধানমন্ডি দুইয়ে এসে সিগনালে থমকে আছে। প্রতিটি মূহুর্তে সে আরো অস্থির হয়ে উঠছে।
সিগনাল ছাড়তেই ভাড়া মিটিয়ে দৌড়ে হলে ঢুকে গেলো, শুকনো গলায় ঢোক গিলে বললো, ” মে আই কাম ইন স্যার। ”
ক্লাস রুমে উপস্থিত প্রফেসর বললো, ” কাম ইন।”
গলার স্বর শুনে মানহা থমকে গেলো, সামনে তাকাতেই দেখলো ওয়াহাব দাঁড়িয়ে প্রশ্ন দিচ্ছে। ওয়াহাব একবার হাত ঘড়িটার দিকে তাকালো, অতঃপর হঠাৎ দরজার দিকে তাকাতেই দেখলো মানহা দাঁড়িয়ে আছে। ওয়াহাব অবাক হয়ে তাকিয়ে, বললো…
” প্লিজ কাম ইওর সিট মিস মানহা। অলরেডি এগারো মিনিট পার হয়ে গেছে। ”
মানহা দ্রুত নিজের সিটে বসলো। খাতা, প্রশ্ন নিয়ে লিখতে যাবে ঠিক তখনি চশমাটা পড়ে নিলো, ওয়াহাব আরেক দফা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো । মানহা পরিক্ষায় মন দিলো, হঠাৎ ওয়াহাবের দিকে চোখ যেতেই মন টা ছেদ করে উঠলো, ওয়াহাব ইশারা করে মানহা কে লিখতে বললো।
মানহা আবারো পরিক্ষায় মনোযোগ দিলো। তিন ঘন্টা পর মানহা খাতা জমা দিয়ে নিঃশ্বাস ফেললো।
একে একে সবাই ক্লাস রুম থেকে বের হয়ে যাচ্ছে, মানহাও ধীরে ধীরে দরজার কাছে গেলো, আর চোখে ওয়াহাবের দিকে তাকাতেই। ওয়াহাব খাতা গুলো ঠিক করতে করতে বললো, ” মিস মানহা। ”
মানহা থমকে দাঁড়ালো, বুকের ভেতর যেনো ডুগ ডুগি বাজছে তার। মানহা চুপটি করে দাঁড়িয়ে রইলো ক্ষানিক পড়ে ওয়াহাব মানহার কাছে এসে দাঁড়ালো, হালকা হেসে বললো ” কেমন আছেন? ”
” ভালো। আপনি? ”
” কি আমি?”
” আপনি কেমন আছেন? ”
” ভালো। তবে আমার চশমা টা দিলে ভালো হতো। ”
“মানহা অবাক হয়ে বললো, “কার চশমা।”
ওয়াহাব বাঁকা হেসে বললো,
” আপনি যেই চশমাটা পড়ে আছেন ওটা আমার। ”
মানহা গাল ফুলিয়ে বললো, ” এটা আপনার চশমা তার কোন প্রমাণ আছে? হুঁ?”
” না। তবে এটা আমার চশমা। গত কাল থেকে খুঁজে পাচ্ছি না। আমার ভাগ্নে চশমা টা তার মিস কে দিয়ে ছিলো। মিস নিজের চশমা মনে করে বাড়ি নিয়ে গেছে। ”
মানহা অবাক হয়ে তাকিয়ে, রইলো। তার মানে ডাঃ ওয়াহাব শিহাবের মামা। তাই তো শিহাব সে দিন হাস্পাতাল দেখে তার মামার কথা বলেছিলো। মানহা স্থির দৃষ্টিতে ওয়াহাবের দিকে তাকিয়ে আছে, মনে হচ্ছে সে ওহাবের স্পন্দন অনুভব করতে পারছে। ওয়াহাব মানহার কাছে এসে, কানে ফিস ফিস করে বললো, ” আমার চশমা। ” বলেই শ্বাস ফেললো। মানহার ভেতর টা যেনো বার বার গুড়িয়ে যাচ্ছে। উফফফ কি অদ্ভুত অনুভূতি।
মানহা পিট পিট করে চোখ মেলতেই দেখতে পেলো, ওয়াহাব দুই হাত দূরে হাতে হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে। মুখে তার মুচকি হাসি।
মানহা এদিকে সেদিক তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে বললো, ” আপনার চশমা চাই? ”
” হুম৷ ”
মানহা চশমা টা খুলে পট করে ভেংগে ফেললো। চশমাটার এক পার্ট ওহাবের হাতে দিয়ে বললো ” এই নিন আপনার চশমা। প্রমাণ করতে পারলে বাকি পার্ট টাও নিয়ে যাবেন। ” বলেই মুচকি হেসে চলে গেলো। ওয়াহাব হাতে ভাংগা চশমার টুকরো নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
মানহা একবার পেছন ঘুরে ওয়াহাবের দিকে তাকালো, ওয়াহাব ভ্যাবলা কান্তের মতো চশমার দিকে এক নজর তাকিয়ে আবারো মানহার দিকে তাকালো।
—————————————————-
ঘুট ঘুটে অন্ধকার রুমে একটা চেয়ারে বসে আছে তানহা। ভয়ে দর দর করে ঘামছে সে। তার হাত পা কেউ দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখেছে। তানহা নড়তে পর্যন্ত পারছে না হাতে বাধন ছুটানোর চেষ্টা করতেই মাথার ওপরের লাইট টা জ্বেলে উঠলো,
কালো গায়ের বর্ণের খুনি লোকটা, হঠাৎ কর্কশ গলায় বলে উঠলো,
” বলেছিলাম না, সমুদ্রে শামুক খুঁজতে যাস না, চোরাবালিতে ডুবে মড়বি। শুনলি না তো আমার কথা। ”
বলেই বাম হাতে রাখা সিগারেট টা শেষ করে পায়ে নিচে ফেলে দিলো। বাম পা দিয়ে পিষে ফেললো মূহুর্তেই।
তানহার মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে বললো, ” নে এবার মর। ” সেকেন্ডের মধ্যেই তানহার মাথায় গুলি মেরে দিলো….
তানহা কাতরাতে কাতরাতে বললো, ‘আমাকে মেরো না প্লিজ৷ আমাকে মেরো না৷ আমি তোমাদের কি ক্ষতি করেছি, তোমরা কেনো আমার জানের পেছনে পড়ে আছো…’ দাদী তানহার কাধে ঝাকিয়ে বললো,
” তানহা এই তানহা। কান্না করছিস কেনো? ”
বলেই আবার ঝাকি দিতেই তানহা চোখ মেলে নিজেকে তার রুমের বিছানায় আবিষ্কার করলো। তার মানে সে এতোক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলো৷
দাদী তানহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো, ” জ্বরে তোর গাঁ পুড়ে যাচ্ছে৷ ”
তানহা প্রতি উত্তরে কিছু বললো না। ক্ষানিকটা পরে শুকনো ঠোঁট টাকে ভিজিয়ে বললো, ” পানি খাবো। ”
দাদী রহিমা খালাকে উদ্দেশ্য করে বললো, ” রহিমা দ্রুত এক গ্লাস পানি নিয়ে আয়। ”
রহিমা খালা পানি আনতে চলে গেলো। দাদী আবারো তানহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,
” স্বপ্নে কি দেখছিলি তানহা। ”
তানহা আমতা আমতা করে বললো, ” মনে নেই দাদী। ”
” তোকে কেউ মারছিলো? ”
তানহা ছল ছল দৃষ্টিতে দাদীর দিকে তাকিয়ে রইলো। ততক্ষণে রহিমা খালাও এক গ্লাস পানি নিয়ে রুমে হাজির হলো৷ তানহা এক ঢোক পানি গিলে, আর খেতে পারলো না। বমি পাচ্ছে তার সব কেমন জেনো স্বাদহীন তেঁতো মনে হচ্ছে।
তানহা গ্লাস টা রেখে দিলো। দাদী আবারো রাহিমা খালার উদ্দেশ্য বললো, ” রহিমা একটা ম্যাগী স্যুপ বানিয়ে নিয়ে আয়। তানহার জ্বর উঠেছে, খেলে ভালো লাগবে। ”
তানহা চোখ জানালার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো , ” এখন কিছু খাবো না দাদী। ভালো লাগছে না। ”
” একটু স্যুপ খেলে ভালো লাগবে৷ ”
” দাদী প্লিজ। ” বলেই কাতর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো তানহা। শেহতাজ বেগম আর কিছু বললেন না। নাতনীর মাথার কাছে চুপটি করে বসে রইলেন। তানহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন পরম মমতায়৷
তানহা চোখ বন্ধ করতেই সব বিভৎস দৃশ্য চোখের সামনে ফুটে উঠছে৷
মানহা বাড়ি ফিরলো বেলা তিনটায়। গেট খোলা দেখে খানিক অবাক হলো ভেতরে ঢুকে রান্না ঘরে রহিমা খালাকে দেখতে না পেয়ে বাসার ভেতরে চোখ বুলালো৷ জুতে খুলে ঘরে ঢুকে দাদীর রুমে গেলো কিন্তু দাদী কে দেখতে পেলো না।
তানহা রুমে আসতেই দেখতে পেলো তানহা বিছানায় শুয়ে আছে এবং দাদী তানহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। তানহার মুখ খানা জীর্ণ শীর্ণ হয়ে আছে, চোখের নিচে কালো দাগ পড়েছে। মানহা একটু চুপ থেকে বললো, ” কেমন আছিস। ”
তানহা বোনের দিকে তাকিয়ে বললো, ” ভালো। ”
” আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে না ভালো, অন্তত তোর শারিরীক অবস্থা তাই বুঝাচ্ছে৷ ”
তানহা ফিনিক হেসে বললো, ” একটু জ্বর -ই এসেছে চিন্তার কিছু নেই আপু। ”
” বাবা কে ফোন করে বলি ডাক্তার ডাকতে। ”
বলেই ফোনটা হাতে নিতেই, তানহা নিষেধ করে দিলো। তানহা মানা করার পর-ও মানহা শুনলো না। ক্ষানিক বাদে….
.
.
.
চলবে
কেমন হয়েছে জানাবেন সবাই 🌹
পর্বঃ১১
https://www.facebook.com/100044280578069/posts/518762736276408/?app=fbl