#শঙ্খচিল
#Ruhi_Jahan_Maya
পর্ব-১৩
বাসার নিচে ডালিম গাছের পাতা গুলো নড়ছে। এই ডালিম গাছ টা অতি দ্রুত বড় হলেও তেমন একটা ডালিমের ফলন হয় নি। ডালিম গাছের একটা শাখা, তানহার রুমের জানালা দিয়ে ঘড়ে ঢুকে গেছে ফ্যানের কৃত্রিম বাতাসে দুলছে, পাতলা ফিন ফিনে ডাল পাতা গুলো। তানহা এক মনের সে দিকে তাকিয়ে আছে, ডাক্তার আংকেল তানহার প্রেশার চেক করে বললেন,
” তানহার প্রশার ফল করেছে। গায়ে জ্বর ও আছে। শরির-ও বেশ দূর্বল মনে হচ্ছে। ”
তানহা কি বলবে বুঝতে পারছে না। মানহা ডাক্তার আংকেলের উদ্দেশ্য বললো, ” ইদানীং কোন বিষয়ে ওর কোন খেয়াল নেই আংকেল। ”
ডাক্তার আংকেল প্রেশার মাপার যন্ত্র ভাজ করতে করতে বললেন,” ঠিক মতো তো খাওয়া দাওয়া করতে হবে মামনী। নিজের যত্ন-ও নিতে হবে। ” বলেই কিছু ঔষধের নাম লিখে দিলো। মানহার দিকে এক নজর তাকিয়ে বললো,
” তানহার দিকে খেয়াল রেখো। ”
” আচ্ছা আংকেল। ”
” আজ আসি। ” বলেই ডাক্তার আংকেল রুম থেকে বেড়িয়ে গেলেন। মানহা বোনের পাশে বসে, মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,
” নিজেকে অবহেলা করলে চলে, খালা কে বলছি এক গ্লাস দুধ নিয়ে আসতে। ”
তানহা থামিয়ে দিয়ে বললো, ” আপু এখন ভালো লাগছে না। পড়ে খাবো। ”
” পরে খাবো বললে তো চলবে না৷ তোর শরীরের অনেক প্রোটিন দরকার।”
তানহা কিছু বললো না। ক্ষানিক পরে রহিমা খালা গ্লাসে করে দুধ নিয়ে এলো। তানহার হাতে দুধের গ্লাস দিলো, ইচ্ছা না থাকা শর্তেও কোন মতে পান করলো।
মানহা ঔষধের কাগজ টা দেখছে ঠিক এমন সময় আন নোন নম্বার থেকে কল এলো, প্রথম বার মানহা রিসিভ করলো, ফোন টা কেটে দিয়ে আবারো কাগজের দিকে তাকালো, ঠিক তখনি ফোনে টুং করে শব্দ হলো, মানহা ফোনের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো একটা আন নোন নম্বর থেকে মেসেজ এসেছে, ইনবক্স ওপেন করতেই মানহার বুকের ভেতর ধক করে উঠলো, ওয়াহাবের ছবি। কালো রংয়ের শার্টওপর দিয়ে, সাদা এপ্রোন। মানহার ভাংগা চশমা পড়া, হাতে সলভার ঘড়ি, চুল গুলো এক পাশে গুছালো ভাবে আঁচড়ানো।
মানহার মনে মনে ভীষণ অস্থির লাগছে। এই লোকটা আসলেই পাগল, প্রামান চেয়েছে, বলে সত্যি প্রমান করে দিলো। মানহা হাসতে গিয়েও কোন মতে হাসি টা চেপে রাখলো। কল টা বেক করবে কি না বুঝতে পারছে না। উফফ কেনো যে তখন কল টা কেটে দিলো মানহা।
ভাবতে ভাবতে তানহার রুম থেকে বেরিয়ে এলো মানহা। ক্ষানিকটা পরে মানহার ফোনটা বেজে উঠলো। মানহা তাড়া হুড়ো করে ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ওয়াহাব বললো,
” ফোনের অপেক্ষা করছিলেন মনে হয়। ”
মানহা জ্বিব কাটলো এতো তাড়াতাড়ি তার ফোনটা রিসিভ করা একদম উচিত হয় নি। কয়েক সেকেন্ড পরে রিসিভ করলেই পারতো। মানহা কথার প্রসঙ্গ বদলানোর জন্য বললো,
” আপনি আমার নম্বর কোথায় পেলেন৷ ”
” শিহাবের মিসের নম্বর, খুব একটা কঠিন ব্যাপার না৷”
মানহা স্মিথ হাসলো, হাসির শব্দ টা ওয়াহাবের অগোচর হলো না। ওয়াহাব মনোযোগ দিয়ে মানহার মুভমেন্ট শুনছে। মানহা ওয়াহাবের কথা শোনার জন্য অপেক্ষা করলো, ফোনের ওপাশ থেকে ওয়াহাব বললো,
” মিস, আমার চশমা টা… ”
” আপনার চশমা পেয়ে যাবেন, খুব শীগ্রই। ”
ওয়াহাব প্রতি উত্তরে কিছু বললো না, ফোনের দু পাশ থেকেই নীরবতা বিরাজ করছে। মানহার হৃদ স্পন্দন বেড়েই চলেছে। ওয়াহাব বললো, ” এক মাস কোথায় ছিলেন? ”
মানহা ওয়াহাবের কথা শুনে চমকে গেলো, কি বলবে বুঝতে পারলো না। মনে মনে কথা গোছাতে লাগলো, তারপর বললো ” কারো শেষ দেখা না পেয়ে বিরহে কাতর ছিলাম না অবশ্যই। ”
মানহার খোঁচা দেওয়া কথা শুনে ওয়াহাব দাঁত বের করে হাসলো, সে হাসি মানহা দেখতে পেলো না। মানহা বলতে শুরু করলো,
” আপনি কি নতুন প্রফেসর? ”
” এখনো না, একচুয়ালি প্রফেসর রহমান এখন দেশের বাইরে। তাই আমি জাস্ট প্রপসি দিচ্ছি। বাই দা ওয়ে আপনার দাদী কেমন আছেন? ”
” ভালো আছেন। ”
” বিরহের ঘোরে দাদীকে চেক- আপ করাতে আসেন নি। আপনার বাবাকে পাঠিয়েছেন৷ ”
মানহা কিছু বললো না, মনে ভেতর কেমন অদ্ভুত অনুভূতি তাড়া দিচ্ছে। এতো ভালো লাগছে কেনো তার?
ওয়াহাবের কাঁশির শব্দে মানহার ধ্যান ভাংলো, ” ভালো ভাবে পরিক্ষা দেবেন। ”
” হুম। ” মানহা চমকে উঠলো, এখনি কি ফোনটা কেটে দেবে ডাঃ ওয়াহাব। মানহার যে মনে মনে অনেক কথা জমা হয়ে আছে।
” রাখছি৷ ”
মানহা শ্বাস ফেলে এক শব্দে বললো, ” হুঁ।” ওপাশ থেকে টুট শব্দ হলো। তবুও মানহা ফোনটা কানের কাছে ধরে দাঁড়িয়ে রইলো।
————————————————–
” বস মেয়েটার সাথে এভাবে গেইম খেলা টা কি ঠিক হচ্ছে?”
সিগারেট টানতে টানতে একজন যুবক বললো, ” ঠিক হচ্ছে নাকি ভুল সেটা আমি বুঝবো। খেলাতো মাত্র শুরু৷ ”
” কিছু মনে না করলে একটা কথা বলবো বস?”
সিগারেটের ধোঁয়া উড়িয়ে বললো, ” হুম? ”
” মেয়েটা রে কি আপনার পছন্দ? ”
যুবক ছেলেটা কিছু বললো না, মুচকি হাসলো শুধু৷ ধূসর খয়েরী কালো ঠোঁটে যেনো হাসিটা ফুটে রইলো,
” কি যে বলো! ”
” আপনার হাসি সব কিছু বলে দিচ্ছে বস৷ ”
” সময় হলে দেখা যাবে৷ ”
ছেলেটা চোয়ালের, সব গুলো দাঁত বের করে হাসি দিলো তার মানে বসের মেয়েটারে মনে ধরছে….
হঠাৎ করে একটা প্রশ্ন মনে ঘুর পাক খেতে শুরু করলো, ছেলেটা মাথা চুলকাতে চুলকাতে লাজুক স্বরে বললো,
” একটা জিনিস আমি বুঝলাম না বস? ”
বস নামক যুবক স্ট্রাইকারে সিগারেটের ছাই ফেলে বললো, ” কি?”
” মেয়েটারে সাথে এমন গেম খেলার কারণ? ”
” অসাভাবিক কোন কিছু মেয়ে মানুষ হজম করতে পারে না। বুঝলে? ”
ছেলেটা মাথা দুলিয়ে বললো, ” হ্যাঁ বস। ”
” সেদিন সন্ধ্যায় ইনকাউন্টারের কথা, মেয়েটা বাড়ি গিয়ে পরিবার কে বলতো, তার পর পরিবার পুলিশ কে। পারে কি হতো বাকি টা তুমি জানো… ”
” জ্বি বস। কিন্তু মেয়েটা আপনারে খুনি ভাবলো। ”
“ইনকাউন্টার আর খুন একই জিনিস শুধু শব্দটা আলাদা। খুনিই আমি। ” বলেই তাছিল্যের হাসি দিলো।
ছেলেটা তার বসের হাসির দিকে তাকিয়ে রইলো। শেষ বার সিগারেট টা টান দিয়ে পায়ের তালায় পিষে ফেললো সিগারেটের শেষ অংশ।
———————————————–
কেটে গেলো এক সপ্তাহ, তানহা এখন সুস্থ আগের মতো জ্বর গায়ে নেই। সকাল আট টা কি সারে আটটা বাজে তানহা রেডি হচ্ছে কলেজে যাবার জন্য, সাথে মানহা ও। আজকে মানহার দ্বিতীয় বছরের পরিক্ষাও শেষ। কোন মতে সকালের নাস্তা সেরে বের হতে যাবে ঠিক তখনি মানহা বললো,
” তুই কি খুব তাড়ায় আছিস?”
তানহা জুতো পড়তে পড়তে বললো,” সকাল দশ টায় ক্লাস শুরু হবে, কেনো আপু?”
” আমি তো ধানমণ্ডির দিকে যাবো। তোকে ধানমন্ডি দুইয়ে নামিয়ে দিয়ে আমি না হয় মেডিক্যালে যাবো। ”
তানহা মাথা নাড়িয়ে সায় দিয়ে বললো, ” ঠিক আছে আপু। ”
রকশা চলছে আপন গতিতে, শাহ বাগের মোড়ে আসতেই তনহা হঠাৎ…..
।
।
চলবে