শঙ্খচিল পর্ব-১৪

0
1829

#শঙ্খচিল
#Ruhi_Jahan_Maya

পর্ব-১৪

কিছুক্ষন আগে রোদের আভা ছিলো, অথচ এখন ধীরে ধীরে মেঘলা হয়ে যাচ্ছে একেই বলে হয়তো কাল বৈশাখীর পূর্বাভাস। মানহা আকাশের দিকে তাকায়ে চোখ নামিয়ে ফেললো, ওরনা দিয়ে চশমাটা পরিষ্কার করে আবারো পরে নিলো। তানহা এক মনে পথের পানে তাকিয়ে আছে, রিকশা শাহবাগের পথে চলতেই তানহা চমকে উঠলো।
এক নজর থানার দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবলো, কলেজ থেকে ফেরার সময় একবার থানায় যাবে। গত সপ্তাহে যে জিডি সে করেছিলো তা কত দূর এগোলো তা জানা দরকার।

তানহা নেমে গেলো, ধানমন্ডি দুইয়ে, তার কলেজ গেটের সামনে৷ মানহা এখনো রিকশায় বসা তাকে আরেকটু পথ পেরোতে হবে, ধানমন্ডি বারো মিডিক্যাল কলেজের ক্যাম্পাসে।
মানহা রিকশা থেকে নামতেই হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলো। ভাড়া মিটিয়ে তানহা কোনমতে ক্লাসের ছাউনিতে ঢুকলো। চুল গুলো ভিজে গেছে তার৷ জামা ও ভেজা প্রায়৷ হাঁচি দিতে দিতে মানহা ক্লাস রুমে ঢুকলো। নাকে ট্যিসু চেপে কোন মতে পরিক্ষা দিলো।

গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির কারনে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে মানিহা। ঘন ঘন নাক মুছে, এক পানে বাইরে তাকিয়ে আছে সে। বার বার হাঁচি দেওয়ার কারনে নাক চোখ লাল হয়ে গেছে মানহার। বৃষ্টির পানি ছুঁয়ে দেখার তীব্র ইচ্ছে করছে তার, মানহা একবার বৃষ্টির পানিতে হাত পেলো। হাতে জমা পানি নিজের মুখে ছিটালো,
” বৃষ্টির পানি ছেটাতে খুব ভালো লাগে?”

মানহা পেছনে তাকালো, ওয়াহাব হাতে হাত ভাজ করে দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মানহা বৃষ্টির পানিতে হাত ভেজাতে ভেজাতে বললো, ” খুব ভালো লাগে। আপনার ভালো লাগে না? ”

” লাগে আবার লাগে না। ”

মানহা ভ্রু কুচকিয়ে তাকিয়ে বললো, ” মানে?”

” সব সময় বৃষ্টির পানি ছুঁতে ভালো লাগে না। ”

” একটু ছুঁয়ে দেখুন ভালো লাগবে। ” বলেই মানহা হাঁচি দিলো।

” তার পর হাঁচি দেই। ”

” ধুর! ডাক্তারা এতো স্ট্রিক্ট কেনো বলুন তো, কোন শখ নেই নাকি? ”

ওয়াহাব ফিনিক হেসে বললো, ” শখ আল্লাদ সবই আছে, তবে যেটা হার্ম ফুল তা থেকে বিরত থাকারই বেটার৷ এই যে পানি ধরছেন, ভিজে গেছেন শর্দি লেগে গেছে। ”

মানহা ঠোঁট উল্টিয়ে বললো, ” এটা আর নতুন কিছু না।ঠান্ডা শর্দি আমার বারো মাস লেগে থাকে । ”

ওয়াহাব মানহার ঠোঁট উলটানো দেখে আবারো হাসলো। ক্ষানিক পর মানহা আবারো বললো, ” তবে বৃষ্টির পানি ছুঁতে আমার দারুণ লাগে। ”

” আর বৃষ্টিতে নৌকা ভাসাতে..”

মানহার চোখ দুটো চক চক করে উঠলো। প্রফুল্ল স্বর বললো, ” খুব ভালো লাগে আপনি কি ভাবে জানলেন?”

ওয়াহাব স্মিথ হেসে বললো, ” শিহাব কে অংক বই ছিঁড়ে নৌকা বানিয়ে ভাসাতে বলেছিলেন। তাই।”

” ও আচ্ছা। ” বলেই মানহা বাইরে তাকালো। বৃষ্টি প্রায় থেমে গেছে। শুধু বিন্দু বিন্দু পানির কনা ঝড়ছে মানহা ওয়াহাবের দিকে তাকিয়ে বললো, ” বৃষ্টি থেমে গেছে। ”

” হুম। ” বলেই বাইরের দিকে তাকালো। মানহা ভেবেছিলো হয়তো ওয়াহাব আরো কিছু বলবে। ওয়াবাবের কিঞ্চিৎ উত্তরে মনে মনে ব্যাথিত হলো মানহা। শ্বাস ফেলে বললো,
” আমি আসি…”

” দাঁড়ান৷ ” মানহা থামকে দাঁড়ালো ওয়াহাবের দিকে তাকাতেই, ওয়াহাব বললো,
” আমিও বাসায় যাবো। চলুন এক সাথে যাই। ”

” আপনি তো ধানমন্ডি দশে নামবেন। ”

” হ্যাঁ তবে , এই বৃষ্টিতে আপনি ভিজলে আরো শর্দি লেগে যাবে তাই আমি পৌঁছে দেই? ”

মানহা হ্যাঁ না কিছু বললো না। ওয়াহাব তার পরিচিত লোক তার সাথে যেতে আপত্তি নেই, কিন্তু কোন অজানা কারনে মানহার মন যেতে সায় দিচ্ছে না। ওয়াহাব ব্যাপার টা বুঝতে পেরে বললো,
” আপনার কি যেতে আপত্তি আছে? ”

” উহু। আমার বাসা পলাশী আপনার যেতে অসুবিধা…”

” আমার কোন অসুবিধা হবে না। গাড়ির ভেতরেই তো বসে থাকবো। ” ওয়াহাব মানহার দিকে তাকালো। অতঃপর দু তলা থেকে নেমে পার্কিং এড়িয়ায় গাড়ি আনতে গেলো, গাড়ির দরজা খুলে দিলো। মানহা লজ্জা নিয়ে ওয়াহাবের পাশে বসলো। বদ্ধ গাড়িতে ওয়াহাবের গাঁয়ের গন্ধ মানহার নাকে আসছে৷ কি অদ্ভুদ, ইচ্ছে করছে সারাদিন ওয়াবের পাশে বসে তার গাঁয়ের ঘ্রাণ নিতে।
” সিট বেল্ট টা লাগিয়ে নিলে ভালো হয়৷ ”

মানহা সিট বেল্ট টা খুঁজলো কিন্তু পেলো না। অগত্যা ওয়াহাব মানহার কাছে গেলো, মানহার শ্বাস প্রশ্বাস ওয়াহাবের বুকে বাড়ি খাচ্ছে। মানহা চোখ বন্ধ করে রইলো, অদ্ভুত অনুভূতিতে দম বন্ধ হয়ে আসছে। ওয়াহাব সিট বেল্ট টা ঠিক করে বললো, ” এবার ঠিক আছে তো?”

মানহা চোখ বুজে বললো, ” হুঁ।”
ওয়াহাব গাড়ি ড্রাইভ করতে শুরু করলো। আগের থেকে বৃষ্টি একটু বেড়েছে, বাইরের শব্দ শুনেই বুঝতে পারছে মানহা তবুও এক নজর বাইরের দিকে তাকালো। বাইরে বৃষ্টি পানি বদ্ধ জানালা বেয়ে পড়ছে। বাইরের বৃষ্টি দেখতে ভালোই লাগছে মানহার। তার পাশে বসা, মনের মানুষ। যাকে ঘিরে তার প্রথম অনুভূতি গুলো, দিন দিন জরো হয়ে ভালোবাসার স্তুপে পরিণত হচ্ছে। মানহা ভাবতে ভাবতে ওয়াহাবের দিকে তাকালো, তার মনোযোগ সামনের দিকে। মনহার খুব ইচ্ছে কিরছে ওহাবের কাধে মাথা রাখতে।

মানহার নিজের ইচ্ছে টাকে সংযত করতে পারলো না। ঘুমের ভান ধরে ওয়াহাবের কাধে মাথা, আলতো করে মাথা রাখলো।প্রথমে ওয়াহাব একটু অবাক হলেও একজন ঘুমন্ত মানুষ কে জাগাতে ইচ্ছে করলো না। ঘুমাচ্ছে ঘুমাক না, কেনো জানি না ওয়াহাবের ইচ্ছে করছে মানিহাকে এবাভেই নিজের কাধে ঘুম পাড়িয়ে রাখতে। এক জন ঘুমন্ত মানুষ কে নিয়ে অদ্ভুত চিন্তা করাটা তার একদম ঠিক হচ্ছে না, উলটো ওয়াহাবের মনে হচ্ছে সে একজন ঘুমন্ত মেয়ের ফায়দা নিচ্ছে ভাবনার জগতে।

ওহায়াবের গাড়ি শাহবাগ ছাড়াতেই তার মনে পড়লো, সামনেই তো পলাশী মানহার বাসার ঠিকানা-ও সে জানে না। মানহা কে জাগাবে কি না বুঝতে পারছে না।
অন্যদিকে ঘুমের নাটক করতে গিয়ে, ক্লান্ত শরিরে চোখ বুজে হেলান দিয়ে সত্যিই ঘুমিয়ে পড়েছে মানিহা। মৃদু নাক ডাকানি বুঝিয়ে দিচ্ছে ওয়াহাব কে মানহা গভীর ঘুমে মগ্ন। ওয়াহাব মানহা কে ডাক দেবে নাকি দ্বিধায় পড়ে গেলো।

আধা ঘন্টা ধরে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে মানহা, ওয়াহাব ফ্যাল ফ্যাল করে মানহার দিকে তাকিয়ে আছে। গাড়ির শব্দে নাক ডাকানির শব্দ শোনা যাচ্ছিলো না তেমন, গাড়ি থামাতেই নাক ডাকানির শব্দ তিন গুন বেরে গেলো। গাড়িময় শুধু মানহার নাক ডাকানির শব্দ।
মানহার ঘুম ভাংলো ফোন কলের শব্দে। টানা দু বার রিং হবার পর মানহা নড়ে চড়ে উঠলো। চোখ খুলে নিজেকে গাড়ির ভেতরে ওয়াহাবের কাধে মাথা রাখা অবস্থায় নিজেকে আবিষ্কার করলো। সম্পূর্ণ পরিস্থিতি বুঝতে মানিহার এক মিনিট সময় লাগলো। মানহা ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো, রহিমা খালা কল দিয়েছেন। অতঃপর ওয়াহাবের দিকে তাকিয়ে বললো,
” আসলে পড়ার চাপে গত রাতে ঘুমাইনি তো, তাই ঘুমিয়ে গেছিলাম। বৃষ্টির শব্দে ঘুম পায় আমার বেশি। আমরা এখন কোথায়?”

” পলাশী বাজারে। আসলে আপনার বাসা আমি চিনি না তাই এখানেই গাড়ি পার্কিং করেছি। ”

মানহা অবাক হয়ে বললো, ” আমাকে আগে ডাক দেন নি কেনো?”

” আপনার আয়েশ করা ঘুম ভাংগার ইচ্ছে হলো না তাই ডাকি নি। ”

মানহা অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, ” সরি। আপনার টাইম ওয়েশট করার জন্য। ”

ওয়াহাব মুচকি হেসে বললো, ” ঘুমানোর সময় এতো নাক ডাকেন কি ভাবে? আমি ভয় পেয়ে গেছিলাম। ”
মানহা ওয়াহাবের কথা শুনে লজ্জা পেলো। কিছু বলতে পারলো না। লোকটা তো ভারী দুষ্টু কায়দা করে লজ্জা দিতেও জানে।

” আপনার বাসার এড্রেস? ”

” ধন্যবাদ আপনাকে। এখান থেকে নেমে, বাম পাশের গলির তিন বাড়ি পরেই আমাদের বাসা৷ ”
বলেই গাড়ি থেকে নেমে গেলো মানহা। মৃদু গলায় ” আসি। ” বলেই গলির ভেতরে ঢুকে গেলো…



চলবে
কেমন হয়েছে জানাবেন সবাই 🌹

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here