#শঙ্খচিল
#Ruhi_Jahan_Maya
পর্বঃ০২
বাড়িওয়ালার কাছ থেকে বাসার চাবি নিয়ে দরজা খুললো তানহা। কিছুক্ষণ আগে তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা কিছুতেই বুঝতে পারছে না, সে। তার পর দাদীর জন্য ভীষণ চিন্তা হচ্ছে। আচ্ছা মানহা আপু কে ঘটে যাওয়া ঘটনা কি ভাবে বলবে?
তানহা ফোন টা হাতে নিলো, আপু কে জানাতেই হবে। পরক্ষনেই আবার ফোনটা রেখে দিলো, একেই তো মানহা আপু হাসপাতালে আছে, এইসব কথা শুনলে আরো দুঃশ্চিন্তা করবে৷ তার চেয়ে বরং আপু দাদী কে নিয়ে বাসায় ফিরুক তার পর না হয়, সব বলা যাবে।
তানহা খাবারের টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি ঢেলে পান করলো, কিন্তু পুরো গ্লাস শেষ করতে পারলো না। ফোনের রিং টোনের শব্দ শুনে, তানহা পানির গ্লাস টা হাতে নিয়ে ফোন টার কাছে গেলো, ফোনের স্ক্রিনে বাবা নামটা ভেসে উঠেছে। তানহা দ্রুত ফোনটা রিসিভ করলো, ফোনের ওপাশ থেকে মুকুল সাহেব ( মানহা এবং তানহার বাবা) গম্ভীর কন্ঠে বললো, ” তানহা কেমন আছো?”
” ভালো আছি বাবা। তুমি কেমন আছো?”
” আমি ভালো আছি, কিন্তু তোমার দাদীর জন্য চিন্তা হচ্ছে।এদিক দিয়ে অফিসের কাজ শেষ না হওয়া অব্দি ঢাকায়ও ফিরতে পারছিনা। ”
তানহা বাবাকে ভরসা দিয়ে বললো, ” চিন্তা করো না বাবা, দাদী সুস্থ হয়ে যাবে।”
” সাবধানে থেকো। রাতের বেলা কেউ আসলে দরজা খুলো না।”
” ঠিক আছে বাবা।”
এখন রাখছি। ”
” আচ্ছা বাবা। ” ফোনটা ওপাশ থেকে কেটে দিলেন মুকুল সাহেব।
তিনি বরাবর খুব গম্ভীর সভাবের মানুষ।স্ত্রীর মৃত্যুর শোকে যেনো আরো গম্ভীর হয়ে গেছেন। মানহা তানহার মুখের দিকে তাকিয়ে দ্বিতীয় বিয়ের কথা চিন্তা করেন নি। কারন ছাড়া খুব কমই কথা বলেন। বাবার গম্ভিরত্বের কারনে, দুই মেয়ের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়তে পারেন নি। ফলে দুই মেয়ে বাবার
সাথে সংকোচ দ্বিধা নিয়ে কথা বলে, বাবার সাথে কথা বললার আগে কমপক্ষে দুই বার সঠিক বেঠিক কথা বিচার করে কথা বলে।
তানহা হাতে পানির গ্লাস টা নিয়ে, জানালার কাছে গেলো।মাঘ মাসের মতো শীতেও আকাশ থম থমে হয়ে আছে। মেঘে চারিদিক গুম গুম গর্জন করে উঠছে। তানহা পানির গ্লাসের চুমুক দিলো, ঠিক তখনি বিদ্যুৎ চমকানোর আলোতে তানহা দেখতে পেলো সেই খুনি লোকটা হাতে বন্দুক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অন্ধকারে মুখ টা আরো ভয়ংকর লাগছে ঠোঁটের কোনে বাঁকা হাসি৷ লোকটা তানহার জানালার দিকে বন্দুক তাক করলো, ভয়ে তানহার হাত থেকে পানির গ্লাস টা ফ্লোরে পরে গেলো…
____________________________
রাত দশ টা কি সারে দশ টা বাজে, মানহা আগের মতোই ওটির বাইরে বসে আছে। নয় টা নাগাদ দাদীকে বেডে দেওয়ার কথা হলেও এখনো বেডে দেওয়া হয় নি। কাউকে যে প্রশ্ন করবে তার ব্যাবস্থাও নেই। রাত বাড়ার সাথে সাথে হাস্পাতালে মানুষ ও কমতে শুরু করেছে। দু এক জন মানুষ ছাড়া কাউকে দেখতে পারছে না মানহা। ওটি থেকেও কেউ বের হচ্ছে না। দাদী এখন কেমন আছেন তা খুব জানতে ইচ্ছে করছে মানহার!
ক্লান্তিতে চোখ জোড়া বুজে আসছে, এই মূহুর্তে এক কাপ চা অথবা কফি খেতে পারলে খুব ভালো হতো। মানহা ঘুমের রেশ কাটানোর জন্য ওরনা দিয়ে চোখ দুটো ডলা দিলো।
খুব একটা লাভ হলো বলে মনে হলো না, মানহা সামনে তাকাতেই দেখলো সেই ডাক্তার যুবক তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। হাত দুটো এপ্রোনের পকেটের ভেতর ঢুকিয়ে রেখেছে চোখে চশমা। আগের বার চশমা পড়া ছিলো না, তবে চশমা পড়নে আগের থেকে আরো বেশি সুদর্শন লাগছে।
মানহা এই প্রথম বার কোন পুরুষ মানুষ কে এভাবে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করে দেখলো, এই কথাটা ভাবতেই হঠাৎ মানহার লজ্জা লাগতে শুরু করেছে। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ডাক্তার যুবক মানহা কে উদ্দেশ্য করে বললো, ” আপনি এখনো এখানে বসে আছেন যে? আপনার সাথে আর কেউ আসে নি?”
মানহা আমতা আমতা করে বললো, ” না আসলে আমি একাই এসেছি। আমার বাবা ঢাকার বাইরে, ছোট বোন বাসায় আমি আসতে না করেছি। ”
” ও আচ্ছা। ”
” আমার দাদী কে কখন বেডে দেওয়া হবে? ”
” যেহেতু ছোট অপারেশন তাই তিন ঘন্টা পরে দেওয়ার কথা ছিলো বাট ছয় ঘন্টা ওনাকে অবজার্ভেশনে রাখলে ওনার জন্যই মঙ্গলজনক। ”
মানহা চুপ করে শুনলো কিছু বললো না। সে কি বলবে বুঝতে পারছে না। ডাক্তার যুবক একবার হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো, ” চা খাবেন? ”
মানহা অবাক হয়ে বললো, ” এ্যাঁহ…”
” আপনার দাদীকে বেডে দেবে আরো ঘন্টা দু’য়েক পর। চা কফি কিছু খাওয়াই যায়। ”
সেই বিকেল থেকে এখনে বসে আছে। ক্ষুধায় পেটে চোঁ চোঁ করছে, কেন্টিনে গেলে কিছু পেটে তো পরবে চা কফির সাথে। মানহা নিজেকে স্বাভাবিক করে, মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানালো।
” ওই দিকে ক্যান্টিন। ” বলেই ইশারা করে দেখালো।
মানহা এক অপরিচিত যুবকের পিছু পিছু হাটছে৷ অবশ্যই এই লোক যদি এই হাস্পাতালের ডাক্তার না হতো তাহলে কখনো মানহা চা – কফির জন্য রাজি হতো না৷ আফটার অল তার দাদীর কেস হ্যান্ডেল করেছে, তার সাথে এক কাপ চা খাওয়াই যায়, অবশ্যই।
মানহা ডাক্তার যুবকের পিছু পিছু ক্যান্টিনে গেলো, হাস্পতালে রোগীদের সজন রা খাবার খেতে এসেছে, ফলে কেন্টিনে ভালোই ভীর জমেছে।
কেন্টিনের এক কোনে দুজন বসার জন্য একটা টেবিল এবং দুটো চেয়ার খালি।
লোকটা চট করে টেবিলের কাছে চলে গেলো, চেয়ার ঠেলে মানহা কে বসতে বললো। অতঃপর নিজেও বসলো, ” আপনি চা খাবেন নাকি কফি? ”
মানহা ফট করে বললো, ” চা খাবো। কড়া চিনি দিয়ে চা, সাথে টোস্ট বিস্কুট। ”
মানহার সামনে বসা যুবক একটুক্ষানি অবাক হয়ে, পরক্ষনেই নিজেকে সামলে নিলো৷ বেল বাজিয়ে একজন স্টাফ কে ডাক দিলো চা অর্ডার দেওয়ার জন্য।
মানহা ক্যান্টিন টা খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে, ডাক্তার যুবকটা কি বলবে বুঝতে পারছে না৷ ক্ষানিক হাসফাস করে বললো,
” আমি ডক্টর ওয়াহাব। ”
মানহা চারিদিক থেকে চোখ সরিয়ে ওয়াহবের দিকে তাকালো। মানহা ক্ষানিকটা চুপ থেকে বললো, ” আমি মানহা হোসাইন। এই হাস্পাতালের মিডিকেলেই পড়ছি দ্বিতীয় বছর। ”
ওয়াহাব ক্ষানিকটা অবাক হয়ে বললো, ” এই মেডিকেলে? ”
” জ্বি। ”
” আগে বলেন নি কেনো? যেহেতু আপনি মেডিকেলের স্টুডেন্ট আপনাকে অপারেশন থিয়েটারে এলাউ করা যেতো। ”
” আসলে দাদীর অসুস্থতা দেখে ভয় পেয়ে গেছিলাম। বলতে মনেই ছিলো না। ”
ওয়াহাব মনে মনে ভাবলো, আপনজন গুরুতর আহত হলে মনে না থাকাটাই স্বাভাবিক। চারিদিকের টেবিলে, কথা -বার্তা সোরগোল হচ্ছে অথচ তাদের টেবিল টায় পিন পতন নীরবতা। ওয়েটার ছেলেটা টেবিলে চায়ের কাপ এবং বিস্কুটের পিরিজ রেখে টুং টিং শব্দতে নীরবতা ভাংলো। ওয়াহাব দুধ চায়ের কাপ টা মানহার হাতে দিলো, মানহা চিনির বাটি থেকে অর্ধেকের বেশি চিনি কাপে ঢেলে দিলো, তার পর তৃপ্তি সহকারে চায়ের কাপে বিস্কুট ডুবিয়ে খেতে শুরু করলো।
ওয়াহাব প্রথমে ক্ষানিকটা অবাক হলেও এখন তার কাছে স্বাভাবিক লাগছে। ওয়াহাব নিজের কাপে দু চামুচ চিনি মিশিয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে মানহার দিকে তাকিয়ে রইলো। সাধারণ চা বিস্কুট যে এতো তৃপ্তি করে খাওয়া যায় তা মানহা কে না দেখলে, আগে বুঝতে পারতো না ওয়াহাব।
মানহা তৃপ্তি সহকারে চা শেষ করে ব্যাগ থেকে বিশ টাকার একটা নোট বের করে টেবিলে, রাখতে যাবে ঠিক তখনি ওয়াহাব বললো,
” আপনাকে টাকা দিতে হবে না। আমি দিচ্ছি। ”
মানিহা ভ্রু কুচকিয়ে বললো…
.
.
চলবে
[ গল্পের রেস্পন্স এতো কম সত্যি আমি হতাশা হয়েছি। প্রথম পর্বে সারা পাইনি, বাকি পর্ব গুলাতে কি হবে সেটাই ভাবছি ]
সবাই সাপোর্ট করবেন এবং গঠন মূলক কমেন্ট আশা করছি 🖤