শঙ্খচিল পর্ব-৯

0
2098

#শঙ্খচিল
#Ruhi_Jahan_Maya

পর্বঃ-০৯

” হাতে ব্যাথা পেয়েছিস কি ভাবে? ”

” পরে গিয়ে, ছিলে গেছে। ”

মানহা আরেক বার বোনের দিকে তাকিয়ে, বোনকে পর্য্যবেক্ষন করার চেষ্টা করলো, চোখের পানি শুকিয়ে গালে দাগ হয়ে গেছে, চোখের কনিকা এখনো আগের মতোই হাল্কা লাল।

তানহা যখন লোকটার কাছে, বাসায় ফেরার আকুতি করছিলো, ঠিক তখনি লোকটা, একটা কাপড় নাকে চেপে ধরে, ক্ষানিকের মধ্যেই তানহা অজ্ঞান হয়ে যায়। বিশ – পচিঁশ মিনিট পর জ্ঞান ফিরতেই তানহা খেয়াল করলো, তার পাশেই লোকটা ড্রাইভা করছে৷ তানহা বেহুশের ভান ধরে পরে রইলো৷ ভেতরে ভেতরে ভয় করলেও সে দেখতে চায় লোকটা কি চায়?

মিনিট পাঁচেক পর গাড়ি থামিয়ে তানহার মুখে পানি ঢেলে দিয়ে বললো, ” তোর বাড়ির গল্লি তে চইল্লা আইছি। তুই নামবি নাকি আবার বেহুশ করমু। ”

তানহা কাচু মাচু মুখ করে তাকিয়ে রইলো। ছেলেটা আবারো বললো, ” এই ছেমরি এডা কি তোর শ্বশুর বাড়ি? যাইতে মন চায় না? কতক্ষণ আগেই তো ভেঁ ভেঁ কইরা কান্তাছিলি।”

তানহা কোন উত্তর না দিয়ে, দরজা খুলে দৌড়ে চলে গেলো। ছিঃ ভাষা শুনে গাঁ ঘিন ঘিন করছে তার৷ দৌড়াতে গিয়ে দেয়ালে ঘষা খেয়ে হাতটা ছুলে গেলো৷ তানহা জ্বালায় কেঁদে দিলো, আর কত যন্ত্রনা পোহাতে হবে তাকে এর শেষ কোথায়?

” ডিনার বাড়ছি খেতে আয়। বাবা যেনো না জানে তুই দেরি করে বাড়ি ফিরেছিস।”

তানহা মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানালো। তোয়ালে টা নিয়ে বাথরুমে চলে গেলো, শাওয়ার টা অন করে, গা ভেজাতে শুরু করলো, সব চিন্তা, যন্ত্রনা ধুয়ে যাক। ধুয়ে যাক! ধুয়ে যাক!
তানহা চোখ বুঝতেই ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো চোখের সামনে স্পষ্ট ভেসে উঠলো তানহা মনে মনে ঠিক করলো এর শেষ সে দেখেই ছাড়বে। কোন না কোন উপায় তোর বের করবেই৷ এই খুনি অপরাধী টা কেও কঠিন সাজা পেতে হবে।

” তানহা..”

মানহার ঢাক শুনে, দ্রুত গোসল সেরে তানহা বেড়িয়ে এলো। খাবার টেবিলে তানহা বসতেই মুকুল সাহেব মেয়ের দিকে এক নজর তাকিয়ে আবার খাওয়ার মন দিলো। শেহতাজ বেগম বললেন, ” তানহা রাতে গোসল করলি কেনো? ঠান্ডা লেগে যাবে তো!”

তানহা আমতা আমতা করে বললো, ” গরম লাগছিলো দাদী।”

তানহা কে সায় দিয়ে মানহা বললো, ” জানোই তো দাদী তানহার গরম বেশি৷ ”

শেহতাজ বেগম বললেন, ” চুল গুলো ভালো করে মুছে, নিস তনহা। ”

তানহা মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো। কোন মতে ডিনার শেষে তানহা বিছানায় ধপাস করে শুয়ে পড়লো, একটা জানোয়ারের হাতে পড়েছে সে। এই জানোয়ারটা তাকে আর পাঁচটা মানুষের মতো বাঁচতে দিবে না। যখন তখন উঠিয়ে নিয়ে যাবে, হুমকি দিবে এভাবে কত দিন?
নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলো তানহা। সাত -পাঁচ ভাবতে ভাবতেই ঘুমে চোখ দুটো তলিয়ে গেলো।

———————————————–

কুসুমতি ভিলা—

মেডিকেল কলেজের চত্ত্বর থেকে কুসুমতি ভিলার দূরত্ব খুব বেশি না৷ হেটে গেলে পনেরো – সতেরো মিনিট সময় লাগে। ক্যাম্পাসের ক্লাস শেষ হতেই মানহা দ্রুত কুসুমতি ভিলায় চলে গেলো, দরজার কলিং বেল বাজাতেই তানিয়া এসে দরজা খুলে দিলো৷ হালকা হেসে বললো,
” এতোক্ষণে তুমি এলে। আমার ছেলে সেই দুপুর বেলা থেকে রেডি হয়ে বসে আছে মিসের সাথে বই কিনতে যাবে।”

মানহা একটু হেসে বললো, ” আমিও তাড়াতাড়ি কলেজ থেকে বের হয়েছি। শিহাব কে বেশি সময় দেওয়ার জন্য। ”

” তুমি বসো আমি শিহাব কে ডাক দিচ্ছি৷ ”

মানহা সোফায় বসলো, ক্ষানিক বাদেই শিহাব চলে এলো৷ মানহা বললো, ” কেমন আছো শিহাব?”

” ভালো মিস। বই কিনতে যাবে না? ”

তানিয়া বললো, ” মিস কেমন আছে তা জিজ্ঞেস না করে, বই কিনতে যাবার কথা বলছো? ”

শিহাব লজ্জায় পড়ে গেলো, ” কেমন আছো মিস?”

মানহা হেসে উত্তর দিলো, ” ভালো আছি। তুমি রেডি?”

” হ্যাঁ। ”

” তাহলে চলো যাওয়া যাক।”

মানহা শিহাব কে নিয়ে বাড়িয়ে গেলো। রিকশা চলছে আপন গতিতে। বিকেলের চওরা রোদে রাস্তা ঘাটে তেমন যানযট নেই। হঠাৎ শিহাব বললো, ” মামু ওখানে আছে। ”

মানহা ক্ষানিকটা অবাক হয়ে তাকালো,এটা তো মেডিকেল কলেজের হাস্পাতাল দাদীর তো এখানেই সার্জারী হয়েছিলো, ডাঃ ওয়াহাবের সাথে পরিচয়। মানহার মনে ভাবনা উঁকি দিচ্ছে, আচ্ছা ডাক্তার ওহাবের কি তার কথা মনে পড়ে?
কেনো মনে পড়বে, কে সে। সে দিন এক পলক দেখার জন্য কতই না ব্যাকুল হয়ে ছিলো মানহা। সে কথা কি ওই পাজি লোকটা জানে। উহু জানে না।

” মিস কিছু বলছো না যে?”

” তোমার মামু কি করে?”

শিহাব কিছু বলার আগেই রিকশা হঠাৎ থেমে গেলো, রিকশা ওয়ালা তাড়া দিয়ে বললো, ” আপা সামনে জ্যাম, আর দুই মিনিটের রাস্তা হাইট্টাই যাইতে পারবেন। ”

মানহা তাকিয়ে দেখলো সত্যি সামনে জ্যাম পড়েছে। মানহা রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে শিহাব কে নিয়ে মার্কেটের দিকে এগিয়ে গেলো। একটা বইয়ের দোকানে,যেতেই শিহাব দু’টো কৌতুকের বই পছন্দ করলো। বইয়ের মলাটে গোপাল ভাড়ের ছবি। শিহাব মানহাকে দেখিয়ে বললো,
” আমি এই বই দুইটা নিবো। ”

” হ্যাঁ। নিবে তো৷ তোমাকে আরেক টা বই দিবো। ”

শিহাবের চোখ মুখে চাকচিক্য ফুটে উঠলো। মানহা শিহাব কে বই টা হাতে দিলো। বইয়ের নাম, ‘ছোটদের গানিতিক সমস্যার সমাধান। ‘ শিহাব চোখ মুখ খিঁচে বললো,
” এটা একটা বই হলো? আমি এই বই পড়ি না। ”

” আমি পড়তে বলি নি শিহাব। ”

শিহাব অবাক হয়ে বললো, ” তাহলে? ”

” আমি জানি গনিত তোমার অপছন্দ আমারো অপছন্দ। বইটা পড়তে মন না চাইলে পৃষ্ঠা ছিঁড়ে নৌকা বানিও, সাথে আমিও বানাবো। ”
বলেই মানহা হেসে দিলো। শিহাব ও হাসলো। বই কেনা শেষে তানহা নিজের জন্য কিছু গাইড বই কিনলো। অল্প কিছু দিন পড়েই দ্বিতীয় বছরের মেডিকেলের এক্সাম। বই কেনা শেষে ‘ কুসুমতি’ ভিলার উদ্দেশ্য রওনা দিলো। আগের মতোই হাস্পাতাল ক্রশ করার সময় মানহার আগের স্মৃতি গুলো চোখের সমনে ভেসে উঠলো। ক্ষানিকের মধ্যেই সব কিছু মিলিয়ে গেলো, রিকশা ও এগিয়ে চললো সামনের দিকে।

_______________________________

শাহবাগ থানার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে তানহা । আদোও সে জানে না, পুলিশের কাছের থেকে কোন নিরাপত্তা পাবে নাকি ঘুষ চেয়ে বসবে, ছোট বেলা থেকেই পুলিশের ব্যাপারে তার একটা ধারণা আছে, পুলিশেরা কাগজে দাগ দিলেও টাকা চায়।

” কাকে চাই? ” হঠাৎ কারো কন্ঠে তানহার ধ্যান ভাংলো। তাকিয়ে দেখলো, পঁচিশ -ছাব্বিশ বছরের একজন পুলিশ যুবক তার দিকে প্রশ্ন ছুরেছে৷
তানহা বললো, ” জিডি করতে এসেছি। ”

” চুরির কেস নাকি? ”

” না। ”

” তাহলে?”

“ব্লেক মেইলের কেস। কোথায় জিডি লেখা হয়? ”

ছেলেটা খানিক অবাক হয়ে তকালো, ক্ষানিকটা বিড় বিড় করে কিছু একটা বললো৷ অতঃপর বললো, ” সামনে গিয়ে বাম পাশে চার নম্বর টেবিলে ডিজি লেখা হয়। ”

তানহা কিছু না বলে হেটে চলে গেলো, এবং লোকটা ওকি টকি নিয়ে কারো সাথে কথা বলতে শুরু করলো। চার নম্বর টেবিলে আসতেই দেখতে পেলো সামনে একজন যুবক বসে আছে, হাতে কলম নিয়ে ঝিমুচ্ছে, তানহা হঠাৎ…



চলবে

আমার পেইজে Story by Ruhi jahan

আমার গ্রুপ- RUHI JAHAN MAYA-রুহি জাহান মায়ার গল্প ঝুড়ি

পেইজে লাইক এবং গ্রুপে জয়েন হবার অনুরোধ রইলো ❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here