শুকতারা পর্ব-৩৩

0
761

#শুকতারা (পর্ব-৩৩)
#হালিমা রহমান

একটি সুন্দর সন্ধ্যা।শেষ চৈত্রের গরম হাওয়ার এতো ক্ষমতা হতে পারে তা নিজে অনুভব করতে না পারলে বুঝতেই না সূচি।বাড়িতে পা রাখার সাথে সাথেই আধা বেলার তীব্র গরমে আগাগোড়া জড়ানো একটা উষ্ণ হাওয়া ছুঁয়ে দিলো ওকে।বেলাশেষের হরেক রঙে রাঙা আকাশের নিচে হাওয়ার উষ্ণতা ছড়িয়ে গেল হৃদয়ের পরতে পরতে,আঙুল থেকে আঙুলে।প্রিয়জনদেরকে জড়িয়ে ধরেই বুঝলো হাওয়ার উষ্ণতা সংক্রমিত হয়েছে নিজের মাঝে। ভিতরের সকল ক্লান্তি,দুঃখ-কষ্ট, অভিযোগ, দুপুরের মন খারাপ– সব যেন এক লহমায় উড়ে গেছে। এক পশলা উষ্ণ হাওয়া সব কিছুকে গলিয়ে দিয়েছে। সখীদের,জননীর আন্তরিক আলিঙ্গনে বাজে অনুভূতিগুলো শরীর চুয়ে পড়ে গেছে মাটিতে,তলিয়ে গেছে রোদে পোড়া শক্ত মাটির ভিতর। সূচি কাঁদলো আর কাঁদলো।প্রবাসীদের মতো বাড়িতে পা দিয়েই সবাইকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলো। চোখের জলে অন্তরাত্মাকে একবার ধুয়ে-মুছে পাক-সাফ করে নিলো যেন।মনটাকে গোসল করিয়ে নিলো। কান্নাকাটির পালা চুকিয়ে আবার হাসলো। বহুদিন পর মিষ্টি করে হেসে নিজের পুরোনো সত্ত্বাকে পুরে নিলো নিজের ভিতর। বিয়ের সময় এ সত্ত্বাটা ভুল করে এ বাড়িতে ফেলে গিয়েছিলো। আজ এসেই বুঝে নিলো। এ যেন এতোদিন ওর অপেক্ষাতেই ছিল।রক্ত-মাংসের দেহের গন্ধ পেয়েই একছুটে এসে ভিতরে ঢুকে গেছে। মেয়েটা আজ পুরোনো সূচি।

সন্ধ্যার আঁধার নেমেছে কিছুক্ষণ আগে।লোডশেডিং চলছে। স্বস্তিদায়ক বাতাসের দেখা নেই। গরমে ঘাম-টাম ঝরে এক অবস্থা। মনে হচ্ছে আবারো বৃষ্টি হবে।ঝড়ের আগের গুমোট আবহাওয়া চারদিকে।সাহিদা বেগম তসবি টিপছেন নামাজ শেষ করে।মাটির ঘরের মেঝেতে পাটি বিছিয়ে বসেছেন।কোলের উপরে মেয়ের ডাবের মতো গোলগাল মাথাটা।একটু দূরেই হারিকেন জ্বলছে।পুরো ঘরে আধো আলো,আধো অন্ধকার।খোলা জানলা দিয়ে চাঁদের আলো আসছে না। আজ আকাশে চাঁদ নেই, অমাবস্যা চলছে।কালির মতো অন্ধকার চারদিকে। ভূতুড়ে পরিবেশে মা-মেয়ে মাটির কাছাকাছি। এই নিস্তব্ধ পরিবেশেই গমগম করে উঠলো সাহিদা বানুর কন্ঠ।

” হ্যাঁ রে সূচি,জামাই আইলো না ক্যান?”

” আম্মা বাসায় একা।আবার তোমার জামাইয়ের কাজ আছে খামারে।সে কি আর আমাদের মতো বেকার লোক?”

” খামার কি আর খুব দূরে? আমগো বাসার থেকাই তো আসতে-যাইতে পারতো।তাছাড়া,আজকে তোর সাথে আসতো, রাইতে থাকতো।আবার কালকে সকালে যাইতো বিয়াইনের কাছে। বৌভাতের পর এই প্রথম আসছোছ। জামাই ছাড়া আসা উচিত হয় নাই।”

” আমি আসাতে তুমি খুশি হওনি আম্মা?”

” ধুর ছেড়ি,আমি ঐটা কইছি? আমি কইতাছি নিয়মের কথা।বিয়ার পরে নতুন নতুন মেয়েরা আসে না জামাই ছাড়া।দুইজনে মিল্লা-মিশ্যা আসে।সেইখানে তুই তো এই প্রথম আসলি।জামাইসহ আসাই উচিত ছিল।”— বহুক্ষণ যাবৎ এই দিকটাই খচখচ করছিলো মনে। একটা বাজে কাঁটা গুতিয়ে যাচ্ছিলো ভিতরে।মেয়ে-জামাইয়ের এমন ছাড়া ছাড়া ভাব ঠিক হজম হচ্ছে না।আসার পর থেকে দুজনকে একবার কথাও বলতে দেখেননি।বাড়ি পৌঁছানোর খবরটা অন্তত দেওয়ার কথা অথবা ওপাশ থেকে খবর নেওয়ার কথা। এসবের বালাই নেই এখানে। তাছাড়া যতই হাসিখুশি থাকুক না কেন মেয়েটার চোখ-মুখ যেন কেমন হয়ে আছে।একটু উদাসীন, একটু শুকনো। হুট করেই বাড়ি আসার আবদারটা ঠিক ভালো ঠেকছে না সাহিদা বেগমের।
আঠারোটা বছর মেয়েকে লেলে-পুলে বড় করেছেন।মোটে কয়েকটা মাস হলো আরেক ঘরে গেছে মেয়ে। নিজের অংশকে খুব ভালো করেই চিনেন সাহিদা বেগম। কিন্তু আজ সন্ধ্যায় এই চেনা-জানার পাল্লাটাই উল্টে গেল যেন। কয়েক মাস পরের দেখাতেই পৃথিবীটা ঘুরে উঠলো। এই কি সেই সূচি!! বেলাশেষের ফিকে আলোয় মেয়েকে সহসা চিনতেই পারেননি তিনি।
মেয়ে তার আহামরি রূপবতী নয়।বিধাতা তাকে রূপের কলস উপুর করে দেননি।তবে ঘষা-মাজা ছাড়া যেটুকু রূপ শরীরে আছে তাতে খুব একটা খারাপ দেখায় না।সুন্দর চোখ-নাক-ঠোঁট কেটে কেটে বসানো।হাত-পায়ের লম্বা লম্বা আঙুল আর এক গোছা চুলের কদর সবাই করে।একটু সেজে হাসিমুখে ঘুরাঘুরি করলে বেশ ভালোই দেখায়।গায়ের রঙটাই ঐ একটু চাপা। এটুকু একটু উজ্জ্বল হলে সূচিকে অনায়াসে সুন্দরীদের দলে ফেলা যেতো। কিন্তু আজকে বোরকা-হিজাব খোলার পরেই সূচির নাম করে এ যেন অন্য এক মেয়ে বেরিয়েছে।কিচ্ছু নেই শরীরে।না মাংস,না রক্ত।চামড়ার নিচে হাড়গুলো মনে হয় ফেটে-ফুটে বেরিয়ে আসবে।ঠোঁটগুলো ফ্যাকাশে,চোখের অবস্থাও তাই। চোয়াল ভেঙে গর্তে ঢুকে গেছে। মনে হয় যেন সেখানে এক মুঠ চাল জমা রাখা যাবে।চোখ দুটো ঢুকে গেছে গর্তে। চোখের নিচে এক আঙুল ঘন কালি। শুধু কি চোখের নিচে? সারা শরীরে কে যেন কালি লেপে দিয়েছে।সূচির গায়ের রঙ চাপা ছিল ঠিক কিন্তু এতোটাও ছিল না। বিয়ের আগে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য ছিল।কিন্তু এখন? শুকনো পাটকাঠির মতো একটা শরীর।সাহিদা বানু এক হাতে মেয়ের দুটো হাত আটকাতে পারবেন।এমনই শুকিয়ে গেছে মেয়েটা।যত দেখেন ততোই অবাক হন।সন্ধ্যা থেকে মেয়ের মুখের দিকে কতবার তাকিয়েছেন তার হিসাব নেই কোনো।আঁধারে দু-এক ফোটা জলও পড়েছে সবার অগোচরে।লুকিয়ে থাকা মাতৃ সত্ত্বাটা হিংস্র হয়ে বারবার বিদ্রোহ করছে। ভিতর থেকে চাপা গর্জন করছে, ” এ আবার কী? আমার মেয়েটাকে এরকম ভেঙেচুরে নতুন করে গড়ে দিলো কে? কার এতো সাহস? আঠারোটা বছর মেয়ে আমার কাছে ছিল।কই আমার মেয়ে তো এমন সৃষ্টিছাড়া ছিল না।”

সূচিকে যত দেখছেন ততো ভাবছেন।যত ভাবছেন ততোই মন কেমন করছে। একটা সংসারের বউ হয়ে তিনিও এসেছেন।তিনিও নতুন বউ ছিলেন।এতো বছরের সংসারে ঝড়-ঝাপটা কি কম গেছে? এতো কিছুর পরেও তার এই অবস্থা তো কোনোদিন হয়নি।জয়া,মনি,চম্পা এরা তো হাতের উপরেই বউ হয়ে এসেছে।চোখের সামনে ঘর করছে।ওদের অবস্থাও তো এখনো এমন হয়নি।তবে কি মেয়েটা খায় না ঠিকঠাক? নিজের মনে বুঝে নেন সাহিদা বেগম।হ্যাঁ, সেটাই হবে।নিশ্চয়ই খাবার নিয়েই অবহেলা করে।তাই চেহারার এই দশা।এই অবসরে মেয়েকে খাইয়ে মোটাতাজা করবেনই করবেন– মনে মনে বেশ একটা শক্ত-পোক্ত প্রতিজ্ঞা করে ফেললেন।

” সূচি ”

” হুম ”

” কালকে তুই জামাইরে আসতে বলবি।দুপুরের দাওয়াত এই জায়গায়। রাইতে না থাকুক,দুপুরে যেন আসে।দরকার পড়লে আমারে কথা বলায়া দিছ।”

মেজাজ চটে গেল সূচির।সেই আসার পর থেকে সবার এক কথা, জামাই কেন আসেনি? আলেয়া দাদী তো বলেই ফেললো,” জামাই ছাড়া প্রথমবার কেমনে আইলি? জ্ঞান-বুদ্ধি কি তোর কোনোদিন হইব না?”

না,না হবে না।একটা মানুষকে নিয়ে এতো রঙ-ঢংয়ের কী আছে? আজ মন চায়নি তাই আসেনি।যেদিন মন চাইবে সেদিন আসবে।স্বামীকে বগলদাবা করে নিয়ে আসতেই হবে? সবাই আসলে আসুক,সূচি আসবে না। ওর সংসারটা তো আর সবার মতো না যে সবার সাথে তাল মিলাতে হবে।

” কি রে কথা কছ না যে? কী ভাবোছ?”

” ভাবছি আম্মা।আমি সেই ফেব্রুয়ারির পর থেকে এতোদিনে আর একবারও পা রাখলাম না এ বাড়িতে।তোমাদের মাথায়ও আসেনি আমাকে নিয়ে আসার কথা।তোমাকে ফোন করে না বললে হয়তো আজকে আমি ও বাড়িতেই থাকতাম।নতুন বউরা কি এতোদিন বাবার বাড়িতে পা না দিয়ে থাকে? আমি থাকলাম।কিন্তু তা নিয়ে তোমাদের কোনো আফসোস নেই।তোমাদের আফসোস জামাই নিয়ে।সে কেন আসলো না? আমি আসলেই তাকে আসতে হবে? আমরা আলাদা আলাদা ছুটি কাটাতে পারি না?”

” এইগুলি আবার কী কথা?তোর বাপেরে যাইতে কইছিলাম আরো আগে।কিন্তু ওই যে তোগো ঝামেলা হইলো, তোর বাপে বিচার করতে গেল। পরে হেয় ইচ্ছা কইরাই আনে নাই তোরে।ইচ্ছা আছিলো বৈশাখের পরে আনব। তাছাড়া তুই কি ঐখানে কামলা খাটোছ যে ছুটি কাটাইতে আসবি?”

” আমার কাছে এটা ছুটিই।আর একবারও তোমাদের জামাইকে নিয়ে ঘ্যানঘ্যান করবা না।তোমার দাওয়াত দেওয়ার ইচ্ছা থাকলে তুমি দাও।আমারে এগুলার মধ্যে জড়াবা না।তার সুযোগ থাকলে সে আব্বার কথাতেই আসতো। আব্বা যে আসার সময় এতোবার বললো, সেটা হয় নাই? আবার আমার বলতে হবে? যত্তসব।আমি এতো রং-ঢং করতে জানি না। আমাকে একটু একলা শান্তিতে থাকতে দাও আম্মা।আল্লাহর ওয়াস্তে আমি যতোদিন আছি ততোদিন কিছু নিয়ে আমাকে জোরাজোরি করবা না।সবার এতো জোর আমার ভালো লাগে না।”

পরিস্থিতি একদম ঘেটে দিলো সূচি।সবার মুখে ফয়সালের নাম শুনে দুপুরের ঝামেলা,ফয়সালের ভারী মুখ,নির্লিপ্ততা সব একেবারে চোখের সামনে জায়গা করে নিয়েছে।পায়ের রক্ত এক ধাক্কায় মাথায় উঠে গেছে সূচির।তার বয়স আর কত? অল্পবয়সী মন ভালো-খারাপ বোঝে না,নিয়ম-কানুনের ধার ধারে না। ঐ লোককে নিয়ে সবার এতো আদিখ্যেতা দেখে একটা কথাই মাথায় এলো কেবল। কাজী বাড়িতে তো সূচিকে নিয়ে এতো আদিখ্যেতা কেউ করে না।তাহলে এবাড়িতে ফয়সালকে নিয়ে সবাই এতো চিন্তা করবে কেন? মেয়ে ফিরে এসেছে,মেয়েকে নিয়ে খুশি থাক। তা না।সবকিছুতে বাড়াবাড়ি। বৈষম্যটা চোখের উপরে কড়াভাবে ফুটে উঠলো। মনে হলো,মেয়ে হওয়ার চাইতে ছেলে হওয়া ভালো। নিজের বাড়িতেও কদর করবে, শ্বশুরবাড়িতেও আদর করবে সবাই।
মেয়ের মেজাজের হঠাৎ পরিবর্তন দেখে এবার নিশ্চিত হওয়া গেল।ওবাড়িতে নিশ্চয়ই কিছু একটা হয়েছে।নয়তো এক কথায় এতো চেঁচামেচি করার কোনো কারণ তো নেই? মেয়ের শক্ত কথায় ক্ষুব্ধ হননি সাহিদা বেগম।বরং মনটা কেমন করে উঠলো।তসবি পাশে রেখে সূচির শুকনো চুলগুলোতে হাত বুলিয়ে দিলেন। স্বর যথাসম্ভব নরম করে আদুরে গলায় বললেন, ” কী হইছে তোর সূচি?”

” কিছু না।”

” আমারে বলবি না? আমি না তোর আম্মা হই? মায়ের কাছ থেকা কিছু লুকাইতে নাই।তুই বল আমারে।”

” ছাড়ো ওসব। তোমরা আমাকে কোনোদিন বুঝতে চাওনি,আজকেও বুঝবে না। বাদ দাও।”

” ক আমারে।তুই কইতে পারোছ না? যেকোনো সমস্যা পরিবারের কাছে কইতে হয়।তুই বল আমারে।আমি কিছু বলুম না।কী হইছে তোর?”

কতদিন এভাবে কেউ জিজ্ঞেস করে না! সূচির ভিতরটা ভেঙে এলো। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ হারালো না।কঠিন গলায় বললো,” তোমাকে বললেই তো তুমি আব্বার কাছে বলে দিবে।”

” ধুর পাগল।আমগো মা-মাইয়ার কথা তোর বাপেরে ক্যান বলুম? হেয় পুরুষ মানুষ,সে সংসারের কী বুঝে?”

একটুখানি আশ্বস্ত হওয়া গেল। সূচি সবকিছু সাজিয়ে নেয় একে একে।সত্যি তো কাউকে না কাউকে মনের কথাগুলো বলা দরকার।মনের মাঝে কথা চেপে মানুষ কতদিন বেঁচে থাকতে পারে? এই চেপে রাখার চেয়ে বিড়ম্বনা বোধহয় পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টা নেই। হারিকেনের দিকে দৃষ্টি পেতে নিজেকে সামলায় সূচি। না কেঁদে,না বিব্রত হয়ে একটানে কথা বলার প্রস্তুতি নেয় মনে মনে।

” ও বাড়িতে আমি ঠিক মানাতে পারছি না আম্মা।ওদের সাথে তাল মিলিয়ে চলাটা খুব কষ্ট।সারাদিন খাটার পরেও একটু ভালো কথা নেই,আদর-যত্ন নেই,আরো বকাবাজি।দিন-রাত গালাগালি শুনতে শুনতে আমার মাথায় রক্ত উঠে যায়। আমার শ্বাশুড়ির মতো মানুষ আমি আর দুটো দেখিনি।পান থেকে চুন খসলেই হয়েছে,দিন-দুনিয়া অন্ধকার করে চিৎকার করে।আর তার মুখের কথা আমি কী বলব? আমার মনে হয় এক ডজন সাপের বিষ ওনার জ্বিভে জমা করে রাখা।তিনি চাইলে শুধু কথা দিয়েই একজনকে খুন করতে পারবেন।ছিঃ! যা গালিগুলো দেয়।জ্বালা ধরে যায় শরীরে।মাঝে মাঝে তো আমার ইচ্ছা করে ছুটে যেয়ে….

নিজের কথাটুকু টুক করে গিলে ফেললো সূচি।দুঃখের ঘটি উপর করে দেওয়ার চোটে বেফাঁস কথা বেরিয়ে যাচ্ছিলো মুখ দিয়ে।সময়মতো লাগাম টানলো।সব মনের ইচ্ছা সবাইকে বলতে নেই।নিজের উপাখ্যান বলতে যেয়ে খেয়ালই করলো না,শ্রোতার মুখের রক্ত উবে গেছে।রক্তশূন্য চোখ পেতে মেয়ের কথা শুনছেন সাহিদা বেগম।

” আমার শ্বাশুড়ি নাকি এমন ছিলেন না আম্মা।আমার দাদী শ্বাশুড়ি ছিল খাঁটি জল্লাদ।আম্মার উপরে খুব অত্যাচার করেছে।সময়ে সময়ে মেরেছেও ধরে।ওখান থেকেই শিখেছে আম্মা। দাদী শ্বাশুড়ির পথেই হাঁটতে চায়।তাই বলির পাঁঠা এখন আমি। আমার মনে হয় মারামারির দিকটা তোলা আছে।আরেকটু পুরোনো হই,মার দু-চার ঘা আমার পিঠেও পড়বে।হাহ!”

দীর্ঘশ্বাসটা ভবিষ্যতের চিন্তায় বেরিয়ে এলো কি-না তা বোঝা গেল না।সাহিদা বেগম অসার জ্বিভ নেড়ে বহুকষ্টে বললেন, ” ফয়সাল কিছু কয় না?”

” জ্বি না।সে আম্মার মাতৃভক্ত ছেলে।কোনোকিছুতে নাকই গলায় না।অবশ্য তারও খুব একটা সাহস নেই।আম্মার কথা ছাড়া সে এক পা নড়ে না।আমি সারাদিনের কেচ্ছা-কাহিনী তার সাথে বললেই বলে,আমি নাকি আম্মার নামে অভিযোগ করছি।আমি স্বামীকে নিয়ে আলাদা থাকতে চাই, তাই শ্বাশুড়ির নামে কান ভারী করার চেষ্টা করছি।বেকুবের কথা শুনেছো আম্মা? তিনজনের সংসারে আমি কার থেকে আলাদা হব? আমার সংসার তো আলাদাই।বড় ভাবি সাথে থাকে না,কোনো ননদ নেই,শ্বশুর নেই।তাহকে আমি আলাদা হব কী নিয়ে?”

নিজেকেই যেন প্রশ্ন করলো সূচি।মনে পড়লো কয়েক সপ্তাহ আগে প্রথম যেদিন শ্বাশুড়ির গলাবাজির বিরুদ্ধে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিলো,সেদিন প্রথম এই অভিযোগটা করেছিল ফয়সাল। মমিন শেখের কাছে ফোন দিয়ে বলেছিলো, ” আপনার মেয়ে বোধহয় আমাকে নিয়ে আলাদা থাকতে চায়। আমি তো তা পারব না।”

” এর লেগাই কি তুই দিনদিন এমন হইয়া যাইতাছোছ সূচি?”.

” কেমন আম্মা?”

” আয়নার দিকে তাকায়া দেখছ না নিজেরে? সত্যি কইরা বল তো,ওরা কি তোরে খাওন-দাওনে কষ্ট দেয়? তোর গায়ে হাত তুলে?”

মায়ের কন্ঠের কাঁপুনি নাড়িয়ে দিলো সূচিকে।বিকৃত কন্ঠ।কাঁদছে নাকি? চট করে উঠে বসলো সে।সাহিদা বেগমের মুখোমুখি বসে শক্ত গলায় বললো, ” তুমি পাগল আম্মা? তোমার কী মনে হয়? আমার গায়ে ওরা একটা টোকা দিলে আমি সহ্য করব? এতো সাহস ওদের? আল্লাহ না করুক,যদি কখনো এমন হয়; তবে মনে করবে ঐদিনই ও বাড়িতে আমার শেষদিন।মুখে ঝাটা মেরে চলে আসব।”

” ছিঃ! অলক্ষ্মীয়া কথা কইতে নাই।”

” লক্ষ্মী-অলক্ষ্মীর কথা জানি না। আমি শুধু আমার পরিকল্পনা জানালাম।আর তুমি বললে না,ভাত-কাপড়ের কষ্ট? না,শুধু ঐ কষ্টটাই ওবাড়িতে নেই। শরীরের এই অবস্থা বেশিরভাগ হয়েছে পরিশ্রমে।হুট করেই একটা পরিশ্রম পড়ে গেল না? আমি তো আর অভ্যস্ত নই এসবে।তাছাড়া, নিজের প্রতি কিছুটা অবহেলাও আছে।মানসিক অশান্তির অবদানও আছে কিছুটা। আমি কাউকে কিছু বলতেও পারি না।অনেক সময় দেখা যায়,খাওয়ার সময় আমার কোনো ভুল ধরা পড়লে শ্বাশুড়ির মুখ ছুটে।তালে-বেতালে বকে।তখন আর খেতে পারি না।ভাতের থালা ঠেলে উঠে যাই।আবার অনেক সময় রাতের খাবার খেতে ভালো লাগে না।তাছাড়া, ইদানীং কি যেন হয়েছে আম্মা।আমার কিছুই খেতে ভালো লাগে না।খুব দুর্বল লাগে শরীর। কাজ করতেও কেমন জানি লাগে। মনে হয় হাঁটুগুলো ভেঙে আসবে।বেশিক্ষণ কাজ করতেও পারি না। পেটে ক্ষুধা নিয়ে খেতে বসি কিন্তু মুখে রোচে না কিছুই।নিজে রাঁধি বলেই হয়তো এমন হয়। বড় ভাবি যখন ভর্তা-টর্তা বানায় তখন আবার খুব লোভ হয়।চেয়ে খেতে ইচ্ছা করে।নিজে বানালে আর ভালো লাগে না।”

” তাইলে চাইতে পারোছ না?”

” ইশ! আমার ঘাড়ে কয়টা মাথা? বড় ভাবির ছায়াও আমাদের জন্য নিষিদ্ধ।আম্মা তাকে পছন্দ করে না।তাই আমরা সামনাসামনি কথাও বলি না।”

ভিতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো সূচির।মনে চেপে থাকা পাথরটা কি নামলো? একটু বোধহয় নেমেছে।এতোদিন কথাগুলো চেপে রাখতে কষ্ট হচ্ছিলো।আজ নিজেকে একটু হলেও হালকা লাগছে। তবে সব কিন্তু বলেনি।কিছু রেখে-ঢেকে বলেছে।ফয়সালের অপছন্দ,যৌতুকের ইঙ্গিত,স্বামী-স্ত্রীর গোপন লড়াই অথবা বিয়ের প্রথমদিকের নির্লিপ্ততা– এসব লুকিয়ে রেখেছে।এগুলো বলতে বাধে সূচির।জ্বিভটা জড়িয়ে আসে।স্বামী-স্ত্রীর কিছু কথা গোপন থাক।সূচি একাই তার ভার বইতে পারবে।

” শোন মা,তোরে কিছু কথা কই।বুড়া মানুষরা একটু অন্যরকম হয়ই।হেরা নিজেরা যা বুঝে তাই করে।হেগো ভালো-মন্দের লগে এখনকার দিনের ভালো-মন্দ মিলে না।এই যেমন দেখ,তোরে তো কত সময় আমিই বকি। আমার কথার লগে তোর কথা মিলে না।তাই বইলা আমগো সম্পর্ক কি নষ্ট হইছে? হয় নাই।শ্বাশুড়ির লগে মিল্লা থাকার চেষ্টা করবা মা।কয়দিন এমন বকাবাজি করব? বড়জোর এক বছর অথবা দুই বছর।গোশত কামড়ায়া থাক।শ্বশুরবাড়িতে কতকিছু সহ্য করতে হয়! সব সহ্য করতে করতে একসময় দেখবি মানায়া নেওয়ার অভ্যাস হইয়া গেছে।তাছাড়া,তোর শ্বাশুড়ির আর কী দোষ? সে তার শ্বাশুড়ির থেকা সংসার শিখছে।তার উপরে যা আইছে, সে তোর উপরে তাই করব — এটাই স্বাভাবিক।

সূচি খুব মুখরা।একটু-আধটু বেয়াদবও বটে।চুপ করে থাকার মেয়ে সে নয়। গাল বাঁকিয়ে বললো, ” এই স্বাভাবিক বিষয়গুলো কেন আমার সাথেই ঘটে বলো তো আম্মা? বাবার বাড়িতেও একই কাহিনী।আরেকজনের অপরাধের জের টানলাম বারো বছর থেকে।সেই কবে বড় আপা পালিয়ে গেল,তারপর থেকে তোমাদের সব চাপ আমার উপর। আপা পালিয়ে যেয়ে বেঁচে গেল,মাঝখান থেকে কিছু না করেই আমি ফেঁসে গেলাম।তার অপরাধের জের টানতে হলো আমাকে।কিছু থেকে কিছু হলেই সন্দেহ,মারধর,আব্বার এক কথা। বড়টা যেভাবে যায়,ছোটটাও সেভাবে যায়।এই গেল বাবার বাড়ির কাহিনী।এরপর শ্বশুরবাড়িতে আবার একই কেচ্ছা।আমার শাশুড়িকে তার শ্বাশুড়ি শাসন করেছে,যেভাবে চালিয়েছে,সে এখন সেভাবেই আমাকে চালাবে।সেই যুগ যুগ আগে তার উপর অত্যাচার হয়েছে বলে সেও একই কাজ করবে আমার সাথে! তুমি আমার মা হয়ে বলছো,তার কী দোষ? সে সংসার যেভাবে শিখেছে, সেভাবেই এখন আমাকে চালাবে।আচ্ছা আম্মা,তার কি দয়া-মায়া,বুদ্ধি নাই? একজন তার সাথে অন্যায় করেছে বলে তাকেও একইভাবে চলতে হবে?আর সে অত্যাচারিত হয়েছে বলে আমাকেও একই অত্যাচারের সম্মুখীন হতে হবে?মানে আমি বুঝি না শুধু আমার ক্ষেত্রেই এমন হয়? সবসময় কেন আমাকেই আরেকজনের ভাগ্যের জের টানতে হয়? এ সংসারে বড় আপার জের টানলাম,ও সংসারে আম্মার। আশ্চর্য! আমার কপালেই এসব লেখা কেন?”

” এতো যুক্তি-তর্কে সংসার চলে না সূচি।সহ্য কর,সুখ একদিন আসবই। তাছাড়া জামাই হয়তো একটু ভীতু।তাছাড়া তো সব ঠিক আছে।তোর গায়ে হাত তুলে না,ভাত-কাপড়ের কষ্ট দেয় না।একটা বাচ্চা-কাচ্চা হোক,দেখবি আরো বদলায়া যাইব।গাছের চেয়ে গাছের ফলের কদর বেশি করে মাইনষে।”.

মায়ের একটা কথাও পছন্দ হলো না সূচির।শেষের কথাগুলোকে সীসার মতো মনে হলো। মনে হলো পেট থেকে কথা বের করে মা এখন কানে সীসা ঢেলে দিচ্ছে।দপ করে জ্বলে উঠলো সূচির বড় চোখ দুটো।গম্ভীর গলায় বললো,” আম্মা,এ বিষয়ে তুমি আর একটা কথাও বলবে না।আমি বেড়াতে আসিনি,এসেছি একটু শান্তিতে দম ফেলতে।তুমি যদি ফের এরকম কথা বলো তবে কসম আমি আর একটা বেলাও এখানে থাকব না।সব জায়গায় নীতি কথা শুনতে ভালো লাগে না।নীতি কথা যদি শুনতেই হয় তো আমি ও বাড়িতে থাকলেই পারতাম।খামোখা শান্তিতে দম ফেলতে এবাড়িতে আসতাম না।আর তোমার জামাইয়ের কোল একদম টানবে না। বললে না,সে গায়ে হাত তোলে না?তুমি তো প্রশংসা করলে।কিন্তু আমি জানি, সে যদি কখনো এ দুঃসাহস দেখায় তবে সেদিন তার একদিন কি আমার একদিন। গুনে গুনে মুখের উপর তিনটে ঝাঁটা মেরে আমি ও সংসার থেকে বেরিয়ে আসব।এমন সংসারের মুখে আগুন।”

অন্ধকারেও বেশ বোঝা যায় সূচির মুখটা কঠিন।মনে হচ্ছে দৃশ্যটা কল্পনা করছে মনে মনে। সাহিদা বেগম আঁতকে উঠলেন। হারিকেনের আলোতে মেয়েটার মুখ কেমন ভয়ংকর দেখাচ্ছে।এই মেয়েকে তিনি জন্ম দিয়েছেন? তার মতো সাধাসিধা মানুষের ভিতর থেকে এ আগুন এলো কী করে?

” ও সূচি আপা,মুড়ি মাখা খাইবা না? মনি আপা ডাকে তোমারে। তাড়াতাড়ি আসো।”

ঘরের কাছে দাঁড়িয়ে মুখ বাড়িয়ে ডাকছে রনি।রনির কন্ঠ কানে আসতেই চেহারা নরম হয়ে এলো সূচির।টুক করে রাগ গিলে নিলো।চোয়ালের পেশিগুলোতেও নরম ভাব।

” আসছি আম্মা।আপাতত দেড়-দুই ঘন্টায় ঘরে আসব না।তুমি চাইলে আসতে পারো।”

চপল পায়ে চটিজুতো গলিয়ে দৌড়ে ঘর ছাড়লো সূচি।মন খারাপ করে চমৎকার সন্ধ্যাটা নষ্ট করার কোনো মানেই হয় না।

_____________________________

বাড়ি ফিরতে আজ নয়টা বেজে গেল ফয়সালের।আহামরি কাজ ছিল না।ইচ্ছা করেই খামার থেকে বেরিয়ে বাজারে বাজারে হেঁটেছে। মনে কোনো ভয় নেই,বাড়ি ফেরার তাড়া নেই। ভিতর থেকে মনটা বারবার ঘোষণা দিচ্ছে,” আজ তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে কী হবে? আজ শান্তির দিন।কেউ নেই ঘরে।অভিযোগ শুনতে হবে না,নালিশ শুনতে হবে না,দেরি হলে কেউ পথ চেয়ে বসে থাকবে না।আজ তোর স্বাধীনতা দিবস।যখন মন চায় তখন ফিরবি।ঘুরতে থাক চুপচাপ।”

তথাস্তু। মনের কথায় সায় দিয়ে পথে পথে ঘুরলো ফয়সাল। ঘরে ফেরার তাড়া নেই,কেউ অপেক্ষা করছে না— এই সংবাদটুকু তাকে কতোটা শান্তি দিচ্ছে তা আল্লাহ মালুম। তবে আজ বিকাল থেকে একবারও সূচির সাথে কথা হয়নি।ফয়সালও দেয়নি,সূচিও ফোন দেয়নি।কখন বাড়ি পৌঁছে গেছে তাও অজানা।দুপুরের একগাদা অভিযোগের পর থেকে মেয়েটাকে একপ্রকার এড়িয়েই চলছে। ভাবখানা এই,এখন সেধে কথা বললেই দেমাগ বেড়ে যাবে।নরম গলাকে প্রশ্রয় ভাববে। বউ হচ্ছে বাঁদরের মতো। প্রশ্রয় দিয়েছো তো মরেছো। এরা এরপর মাথায় উঠে নাচবে।থামানোর পথ পাবে না তখন।ফয়সাল নিজেকে চালাক মনে করে খুব।অবশ্যই সে এই ভুল করবে না।তাই তো এড়িয়ে চলছে। দেখা যাক একরত্তি মেয়ে কতদিন মুখ ফুলিয়ে থাকতে পারে।

বাড়ি ফেরার পর রোমেলা বানুর মুখোমুখি হতে হলো।সত্যি বলতে মাকেও একপ্রকার এড়িয়েই চলেছে সে। রাত নয়টায় মুখোমুখি হয়ে মায়ের সামনে সহসা সংকুচিত হয়ে গেল।চোখে চোখ মেলাতে পারলো না।মনে হচ্ছে সারাদিনের আচরণগুলো মায়ের চোখে লেগেছে।তাই একটু রেগে আছে হয়তো।

” রাইত কয়টা বাজে?”

” নয়টা আম্মা।”

” তুই খামার থেকা বাইরাইছোছ সাড়ে সাতটায়।আমি আকাশরে ফোন দিছিলাম।তাইলে এতোক্ষণ কই আছিলি?”

রোমেলা বানুর অন্তর্ভেদী দৃষ্টি। ফয়সাল ভয় পেল।মাথা চুলকে বললো,” ঐ আম্মা একটু বাজারে ঘুরছিলাম।”

” বাজারে ঘুরতাছিলি নাকি শ্বশুরবাড়ি গেছিলি? সত্যি কইরা ক।”

” আরে কি যে বলো না। সত্যি আম্মা বাজারে গেছিলাম।শ্বশুরবাড়িতে যাব কেন?”

” কারণ আমার পোলায় বউয়ের ভেড়া তাই।বউরে না দেইখা থাকতে পারে না তাই।”

কান-গাল গরম হয়ে এলো ফয়সালের।থতমত খেয়ে বললো, ” আমি শ্বশুরবাড়িতে গেলে এই জামা-কাপড়ে যাব? আমার একটা সম্মান আছে না?”

” হ,আছে তো। বউয়ে একলা ঘরে ছ্যাচা দেয়,হের আবার সম্মান! যাবি না ঐ বাড়িতে। তোর বউয়ের অনেক দেমাগ বাড়ছে।আমি না থাকলে তোরে নাকে দড়ি দিয়া ঘুরাইব।”

কিছু বলার নেই। অবশ্য ফয়সাল কিছু বলেও না।মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।

” যা ভাত খা।আমি খাইছি।”

” তোমার পা টিপে দেওয়া লাগবে না আম্মা?”

” না, লাগব না।এগুলি কি তোর কাজ? পুরুষ মানুষ পুরুষের মতোন থাকবি।”

রান্নাঘরে দু-একবার ভূতের মতো ঘুরে গেল ফয়সাল।এক পেট ক্ষুধা কিন্তু খেতে ইচ্ছা করছে না মোটেও।মিটসেফে ঢেকে রাখা খাবারের প্লেট,তরকারীর পাতিল,গ্লাস-জগ এমনকি চুলাটাও হাত-পা ছড়িয়ে কাঁদছে যেন।তাদের কর্ত্রী নেই,তাই তাদের মন ভালো নেই।অজানা এক বিষাদে ছুঁয়ে গেল ফয়সালের ভিতরটা।ভাতের প্লেট যেমন ছিল তেমন পড়ে রইলো,সে ছুঁয়েও দেখলো না।লাইট নিভিয়ে চলে এলো নিজের ঘরে।

এখানেও একই অবস্থা। বিছানার চাদর, বালিশ — সব লোভনীয়ভাবে গুছিয়ে রাখা।ক্লান্ত শরীরটা বিছানার মাঝে সঁপে দেওয়ার ইচ্ছা জাগলো না।এখানে সব গোছানো,সব পরিপাটি কিন্তু আসল মানুষটাই নেই এখানে।একঘরে থাকলে ঘরের পোষা মুরগীটার প্রতি যেখানে মায়া জন্মায়,সেখানে সূচি তো জলজ্যান্ত মানুষ।অদৃশ্য বন্ধনটা তো আর মিথ্যা নয়।
চিরুনিতে প্যাঁচানো ছেঁড়া চুল,জানলার রশিতে মেলে রাখা গামছা,ড্রেসিং আয়নার সামনে ফেলে রাখা পুরোনো চুড়ি,ওয়ারড্রবের উপরে রাখা চুলের কাঁটা,পুরোনো শাড়ি— সবকিছু মনে করিয়ে দিচ্ছে সে নেই আজ।ঘরটা যেন পানিতে ডুবে আছে।ভাবের আবেশে ডুবে গিয়ে পকেট থেকে চটপট ফোন বের করলো ফয়সাল।সূচির নম্বরে কল করার আগে আঙুল থমকে গেল।না,আজ থাক।ফোন করলেই এখন পেয়ে বসবে। মাথা নিচু হয়ে যাবে ফয়সালের।বউকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না।আর দুটো দিন যাক।
মনের ইচ্ছা চেপে রেখে বউয়ের বালিশে মুখ গুজে পড়ে রইলো চুপচাপ।তেল-শ্যাম্পুর ঘ্রাণ ভেসে আসছে ভুরভুর করে।তাই প্রাণভরে ভিতরে টেনে নিলো।সূচি নেই তো কী হয়েছে? সে না থাকলে দিন কি কাটবে না?

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here