শুভ বিবাহ পর্ব-১৪

0
815

#শুভ_বিবাহ
লেখা #AbiarMaria

১৪

“We should think over the words before saying,
And say the words which are thought before”

স্টেটাসের জন্য এইটুকু লিখে আমি থামলাম। কণার সাথে একটু আগে কথা বলে ফোন কেটেছি। আমার খুশি হওয়ার কথা ছিল, ভালো লাগার কথা ছিল, কিন্তু লাগছে না। কত বন্ধু এসে তাদের প্রেমিকার সাথে কাটানো রগরগে গোপন অভিসারের কথা বলেছে! তখন চোখের সামনে লোভনীয় সেই অদমনীয় অনুভূতি জেগে উঠেছে। মনে মনে কত শতবার কণাকে নিয়ে এমন আপত্তিকর ভাবনা ভেবেছি তার ইয়ত্তা নেই! অথচ আজ কেন আমার ভালো লাগছে না? কণা রাজী হওয়ার পরও?

একটা সিগারেট নিয়ে ছাদে গেলাম। চুপচাপ এক কোণায় বসে বসে ধোঁয়া টানছি। ঐ ছাদে আজকে কেউ নেই। মাঝে মাঝে দু একটা ছেলে ছাদে ওঠে, তবে তুতুনকে ছাদে দেখি না। মেয়েটা কলেজে পড়ে এখন। আকাশী কামিজ, সাদা সেলোয়ার, ক্রস বেল্ট আর দুই বেণী। বেশিরভাগ সে দুই বেণী করে নাকের উপর চশমা ঠেলতে ঠেলতে রিকশা করে কলেজ যায়। দুই শিং ওয়ালী ডাকার পরও তার দুই বেণী ছাড়া আর কোনো স্টাইল পায় না? আমি মাঝে মাঝে ডাক দেই। আমার ডাক শুনে ও পালিয়ে যায়, একেবারে দৌড় দেয় পারলে। কয়েকদিন আগে দেখলাম আরেকজনের সাথে বিকালের দিকে দরজা থেকে বের হচ্ছে। আমিও তখন একটা কাজে বাহিরে যাচ্ছিলাম। তুতুনের সাথের মেয়েটা ভালোই সুন্দরী, চুলে সোনালী রঙ করা। আমি শিষ দিয়ে ডাকলাম,
❝এই যে তেঁতুল ফুল! কি খবর কোথায় যাওয়া হচ্ছে?❞

তুতুন অন্য সময় হলে পালাতো। কিন্তু সাথের মেয়েটার কারণে পালাতে পারে নি। মেয়েটা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়েছে আমার দিকে। আমি এগিয়ে এসে মেয়েটা জিজ্ঞাসা করলাম,
❝পরিচয়টা জানতে পারি?❞
মেয়েটা আমার দিক থেকে তুতুনের দিকে ফিরল। তুতুন গম্ভীরমুখে আমার পরিচয় দিল,
❝আমাদের পাশের বাসায় থাকে❞
মেয়েটা এবার মিষ্টি করে হেসে বলল,
❝আমার নাম ইসাবেলা, তুতুনের চাচাতো বোন❞
❝হাই, আমি শুভ। তোমার নামটা সুন্দর, বেলা!❞
❝বেলা নয়, ইসাবেলা❞
❝ঐ তো, শর্ট ফর্মে বললাম আর কি। তোমার কাছের মানুষরাও অনেকেই তোমাকে বেলা ডাকে, আমি নিশ্চিত❞
ইসাবেলা হাসলো। তুতুন ওর হাত টেনে বলল,
❝আপু, চলো তো। দেরী হচ্ছে❞

আমি আবার ওদের থামালাম।
❝কোথায় যাচ্ছো তোমরা?❞
ইসাবেলা হাত দিয়ে সামনের দিকে দেখালো।
❝বেপারী টাওয়ারে যাচ্ছি। শপিং করব❞
❝রিকশা লাগবে না? দাঁড়াও, রিকশা ডেকে দিচ্ছি❞
❝না ভাইয়া থাক, আমরা পারব❞
❝কি যে বলো না! আমি থাকতে তোমরা কষ্ট করবা? তাই হয়?❞

ওদের মানা সত্ত্বেও একটা রিকশা ঠিক করে দিলাম। বেপারী টাওয়ার পর্যন্ত ভাড়া ৩০টাকা। আমি জোর করে ২০ টাকা ঠিক করে রিকশাওয়ালার হাতে বিশ টাকা গুঁজে ওদের তুলে দিলাম। যাওয়ার সময় তুতুন ভোঁতা মুখ করে থাকলেও ইসাবেলা মিষ্টি করে হেসে হাত নাড়ালো আমার উদ্দেশ্যে। মনটা ভরে গিয়েছিল!

দিন দুয়েক এর মাঝে ইসাবেলা আর তুতুনের দেখা পেলাম না। দুইদিন পর ওকে কলেজ থেকে আসতে দেখে পথ আটকালাম।
❝এই তেঁতুল, তোমার বোন কোথায়?❞
তুতুন ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে চেয়ে আছে। ওকে রাগাতে হলেই কেবল আমি তেঁতুল ডাকি। তুতুন বিরক্ত হয়ে বলল,
❝বাড়ি চলে গেছে❞
❝বাড়ি কোথায়?❞
❝যেখানে আমার চাচা থাকে, সেখানে❞
❝বাহ! খুব পেকে গেছ দেখি! একদম মেরে পাকমি করা বার করব! ওর ফোন নাম্বার দাও❞
❝আমি জানি না❞
❝প্যাদানী কি জিনিস সেটা জানো?❞

রাগ উঠে যাচ্ছে আমার। এইটুকু পিচ্চির এত সাহস হবে কেন? তুতুন ভয় না পেয়ে বলল,
❝আপনার সমস্যা কি? আপুর নাম্বার আমি সত্যিই জানি না। আপনাকে দিব কিভাবে?❞
❝তাহলে তোমার আম্মুর ফোন থেকে এনে দাও!❞
❝কি করবেন আপুর নাম্বার দিয়ে?❞
❝কি করব সেটা কি তোমাকে বলতে হবে আমার? এইটুকুন পিচ্চি হয়ে এত বেশি কথা বলো কেন? নাম্বার আনতে বলেছি, এনে দিবা। আমি এক ঘন্টা পর ছাদে, থাকব, তখন যেন নাম্বার পাই❞

ঘুরে যেই চলে আসব, তখন তুতুন বলল,
❝কয়জনের সাথে প্রেম করতে হয় আপনার?❞
আমি বেশ চমকে উঠলাম। তুতুন কি করে বুঝল আমার গার্লফ্রেন্ড আছে? ঘুরে বললাম,
❝কি বললে?❞
তুতুন নার্ভাস হয়ে গেছে। এতক্ষণ মাথা উঁচু থাকলেও এখন মাথা নিচু করে কন্ঠস্বর এক স্কেল নামিয়ে বলল,
❝আমি জানি আপনি প্রেম করেন। ছাদে সারাক্ষণ কার সাথে কথা বলেন আমি বুঝি না?❞
❝আচ্ছা? এত বুঝো তুমি? তা কিভাবে এত কিছু বুঝলা?❞
❝আমার ফ্রেন্ডরা যারা প্রেম করে, তারাও এমন কলেজে লুকিয়ে লুকিয়ে ফোন আনে। তারপর লুকিয়ে লুকিয়ে ওরা কথা বলে। আপনার মতো ফোনে…❞
তুতুনের কাছে চলে আসলাম।
❝আমার মতো ফোনে কি?❞
❝কিস দেয়!❞
❝আচ্ছা! তা তুমি দাও না?❞
তুতুন অবাক হয়ে আমার দিকে মুখ তুললো।
❝আমি কি দিব?!❞
❝কেন? কিস? দাও না কাউকে?❞

মুহূর্তে ওর ফর্সা গাল লাল হয়ে উঠল। ওর ঠোঁট কাঁপছে, আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। চোখেও পানি জমছে। ঠিক সেদিনের মত লাগছে যেদিন ওকে কাঁদতে দেখে আরও কাঁদাতে ইচ্ছে করছিল, ওর কান্নার সৌন্দর্য দেখতে ইচ্ছে করছিল। আজ ওর ওষ্ঠ জোড়া স্পর্শ করার লোভ হচ্ছে। তার আগেই তুতুন বলল,
❝আমি আপনার মতো খারাপ না!❞

কথাটা শেষ হওয়া মাত্র ও ওদের বিল্ডিং এর গেটের ভেতর ছোঁ করে ঢুকে গেল। আমি অবাক হয়ে ওর চলে যাওয়ার পথে চেয়ে থাকলাম। আমার কেন যেন তুতুন প্রেম করে না, এটা শুনে খুব ভালো লাগছে। কেন লাগছে? কেন লাগবে? এই পিচ্চিও প্রেম করতেই পারে, আজকাল সবাই করে। কিন্তু তা নিয়ে আমার কেন মাথাব্যথা? আমিই বা কেন ওকে প্রেম করা নিয়ে প্রশ্ন করলাম? বিষয়টা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করতে করতে হাঁটা দিলাম। নাহ, বাচ্চা মানুষ এসবে জড়ায়নি, ভালোই হয়েছে। ছেলেরা কি ভালো নাকি? এই যেমন আমি। আমি কি ভালো ছেলে? আমি তো জানি প্রতিটা ছেলে মেয়েদের নিয়ে কি ভাবে, মেয়েদের কাছ থেকে কি চায়। এই যেমন কণাকে প্রায়ই একান্তে ডাকি, হাত চেপে ধরি, হুট করে চুমু খেয়ে বসি। ও কি জানে তখন আমার ভেতরে কি হয়ে যায়? ওকে একা পেলে আসলে আমি কি করব?

কণাকে আজ ঝোঁকের বশে বলে ফেলেছি যে ওর বাসায় আসতে চাই। আসলে আজকাল ওর আমার উপর খবরদারি, ঘ্যানঘ্যানানি ভালো লাগে না। আমি জানতাম প্রতিবারের মত ও আমায় ফিরিয়ে দেবে, রাজী হবে না। তাই যখন ও রাজী হয়ে বৃহস্পতিবার আসতে বলল, তখন আমি কিংকর্তব্যবিমূড় হয়ে গেলাম। কণা কি ঠিক আছে? ও কেন রাজী হলো? একবার মনে হচ্ছে আমার যাওয়া উচিত। বন্ধুদের কাছে শুনে আর নিজের ফ্যান্টাসি ভেবে একটা সুযোগ নেয়ার লোভ চাপা দিতে পারছি না। অপর দিকে বারবার ভেতর থেকে ধিক্কার পাচ্ছি। আমি তো এমনটা চাই নি! তাহলে ওর দিকে লালসার হাত বাড়াবো? কণা যেমন মেয়ে, আজ বাদে কাল যদি ওর সাথে আমার মতের অমিল হয়, তাহলে ও আমায় ছেড়ে দেবে না। একান্তে সময় কাটিয়ে উল্ট পালট কিছু করার মানে কি ওর সাথে একেবারে নিজেকে বেঁধে ফেলা না? কখনো যদি মুক্তি চাই, মুক্তি মিলবে? কণা যদি কোনোভাবে আমাকে ফাঁসায়।

আমি দোটানায় ভুগছি। কথায় আছে, ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না। আমি এখন ভাবছি। কি করব বৃহস্পতিবারে? যাবো? নাকি যাবো না?

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here