শেষ বিকেলের আদর❤️পর্ব : ১২

0
4112

#শেষ বিকেলের আদর❤️
#রিত্তিকা ইসলাম
#পর্ব : ১২

🌸
মাত্রই সন্ধ্যা হয়েছে।দিনের ভ্যাপসা গরম ছাপিয়ে চারদিকে তখন হালকা মৃদু বাতাসে গাছের পাতা নড়ছে।আবছা অন্ধকারে ছেয়ে গেছে চারপাশ।সন্ধ্যার এই ঘনিয়ে আসা অন্ধকার চৌধুরি ম্যানশনকে ঢাকতে পারে নি।চৌধুরি ম্যানশন আজ আলোই আলোই ভরপুর।সেই সাথে বাড়ি ভর্তি মানুষের সমারহ।বড় বড় বিজনেসম্যান, রাজনীতিবিদ, মিডিয়ার লোক কেউই বাদ পড়ে নি আজকের এংগেজমেন্ট পার্টিতে।বাদ যাওয়ার কথাও না।চৌধুরি বাড়ির ছেলের এংগেজমেন্ট বলে কথা।এতো এতো মানুষের মাঝেও রোশনির নিজেকে ভিষন একা বলে মনে হচ্ছে।এমন হাই সোসাইটিতে সে কখনোই চলে নি।সে কখনোই এমন হাই সোসাইটি থেকে বিলং করে না।সে অত্যান্ত সাধারন মিডিল ক্লাস ফ্যামিলির মেয়ে।খাঁটি বাংলায় যাকে বলে মধ্য বিত্ত ঘরের মেয়ে।পরোক্ষনেই রোশনির অবচেতন মন প্রশ্ন করে বসলে সে কি সত্যিই মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে..? নাকি নিম্নবিত্ত ঘরের মেয়ে…? নাকি যেখানে নিজের বলতে ঘরই নেই সেখানে মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত বলতে আদৌও কিছু হয়…? মনের করা প্রশ্নে সচেতন মস্তিষ্ক চটজলদি বলে উঠলো,তাদের মত পরিচয়হীন এতিম মেয়েদের কোনো উচ্চবিত্ত,মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত নামক শব্দের ট্যাগ থাকে না।তারা সমাজের কাছে শুধুই অনাথ আর অসহায় হিসেবেই স্বীকৃতি পায়।

আর কিছুক্ষন পরেই এংগেজমেন্ট রিচুয়াল শুরু হবে।এতো এতো নামি দামি মানুষের মাঝে নিজেকে ভিষনই নার্ভাস লাগছে রোশনির।তবুও নিজেকে যথেষ্ট স্ট্রং রেখে সব কিছু সুন্দর মত সামলে চলেছে ও।এটা ওর কাজের জায়গা।এখানে নার্ভাস হলে চলবে না।রোশনি স্টাফদের কাজ বুঝিয়ে পিছনে ফিরতেই দেখে পিয়া দাড়িয়ে আছে।চোখে মুখে বিরক্তিটা স্পষ্ট।এই তো কিছুক্ষন আগেও বেশ হাসি খুশি প্রানোবন্ত দেখাচ্ছিলো।এরই মাঝে আবার কি হল…? রোশনি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলে উঠলো….

___কি হয়েছে..?এমন দেখাচ্ছে কেন তোকে…?

রোশনির কথায় হাত ভাজ করে দাড়ালো পিয়া।চোখ মুখ ফুলিয়ে বলে উঠলো…

__দোস্ত,,,আমি না পাগল হয়ে যাবো এখানে বেশিক্ষণ থাকলে।চোখের সামনে এমন হ্যাংলামো চললে বেশিক্ষণ আর সুস্থ থাকবো বলে মনে হচ্ছে না।আমি আর নিতে পারছি না এসব বুঝলি….?

পিয়ার কথার আগা মাথা কিছুই বুুঝে উঠতে পারলো না রোশনি।এই মেয়েটা বড্ড বেশি কথা বলে।আসল কথাটা না বলে ইনিয়ে বিনিয়ে আরো শখানিক কথা বলে ফেলবে।কিন্তু এতো কথার মাঝে আসল কথাটাই বলবে না।রোশনির এই মুহূ্র্তে ইচ্ছে করছে পিয়ার চুলগুলো টেনে ছিড়ে দিতে।চুল ছাড়া ওকে কেমন দেখাবে ভেবেই মুখটা কুচকে গেলো রোশনির।তার বেস্ট ফ্রেন্ডকে এমন বিদঘুটে অবস্থায় সে কিছুতেই দেখতে পারবে না।রাস্তা দিয়ে যখন হেটে যাবে তখন ওকে দেখে মানুষ স্ট্রোকের মত ভয়ানক জিনিসও ঘটিয়ে ফেলতে পারে।তাদের মধ্যে শুধু সাধারন মানুষই নয় হয়তো অধির চৌধুরির মত দেশের নামি দামি মানুষও থাকতে পারে।তারা যদি হার্ট ফেইল করে মরে টরে যায় তাহলে দেশের অবস্থা যে কতোটা করুন হবে সেটা বেশ স্পষ্ট রোশনির কাছে। আর দেশের সচেতন নাগরিক হিসেবে সে কখনোই এটা হতে দিতে পারে না।তাই চুল ছিড়ে টাকলা বানানোর প্ল্যান বাদ।তবে দু একটা চড় থাপড়া মারা যেতেই পারে।তবে এমন পরিবেশে সেটাও সম্ভব না।তাই এসব চিন্তা বাদ দিয়ে রোশনি জিব্বাহ দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে বলে উঠলো….

___দোস্ত,,,এসব প্যাচাল বাদ দিয়ে ক কি হইছে…?

রোশনির কথায় চোখ মুখ কুচকে সোজা হয়ে দাড়ালো পিয়া।তারপর সব বললো রোশনিকে।সব শুনে ফুস করে নিশ্বাস ছাড়লো রোশনি।পিয়া চোখ মুখ কুচকে যতোটুকু বললো তার অর্থ হল,,,,,পিয়া যখন ওয়েটারদের বলছিলো গেস্টদের সফটড্রিংকস আর জুস দিতে ঠিক তখনই কোথা থেকে আদিল এসে হাজির হয়।তাও সাথে এক মেয়েকে নিয়ে।পিয়ার ভাষ্যমতে মেয়েটা ছিলো আদির গার্লফ্রেন্ড। মেয়েটা নাকি ন্যাকামোর চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌছে গেছে।আদি আর ওর সো কলড গার্লফ্রেন্ড নিশা দুজনে পিয়ার সামনে দাড়িয়ে দাড়িয়ে তাদের বাবু,সোনা,তামা, পিতল টাইপ কথা বার্তা বলে তাকে ইরিটেট করে দিয়েছে।আর তাতেই পিয়ার চোখ মুখের এমন অবস্থা।রোশনি গাল ফুলিয়ে শ্বাস নিয়ে কিছু বলবে তার আগেই একজন এসে বলে গেলো ওদের অানোয়ারা চৌধুরি ডেকেছেন।রোশনি আর পিয়া দেরি না করে ওনার রুমে চলে গেলো।দরজার কাছে দাড়াতেই দেখলো উনি আলমারি থেকে কিছু বের করছেন।রোশনি দরজায় হাত দিয়ে নক করতেই উনি ফিরে তাকালেন।ওদের দুজনকে দেখে হাসি মুখে ভেতরে আসতে বললেন।ওরা ভেতরে আসতেই উনি এগিয়ে এসে দুটো প্যাকেট এগিয়ে দিলো ওদের দিকে।রোশনি কিছু না বুঝে ওনার দিকে তাকাতেই উনি মিষ্টি হেসে বলে উঠলেন…

__এর মধ্যে দুটো ড্রেস আছে।দুজনে তাড়াতাড়ি পড়ে নে।যা দেরি করিস না….

__কিন্তু দাদি,,,এসবের কি দরকার ছিলো..? এভাবেই তো ঠিক ছিলাম…

রোশনির কথা শেষ হতেই উনি বলে উঠলেন….

__কিচ্ছু ঠিক ছিলো না।কোনো কথা না বলে তাড়াতাড়ি পড়ে আয় তো।কেউ ভালোবেসে কিছু দিলে না করতে নেয়।যা…..

পিয়া ঠোট উল্টে বলে উঠলো…..

__দাদি ওসব তো ঠিক আছে।কিন্তু আমি তো এসব পড়ি না…

__পড়িস না তো কি হয়েছে।আজ পড়বি।সব সময় এমন ছেলেদের মত শার্ট পড়ে থাকলে হবে..? যা আজ এটা পড়বি।এখন আর কোনো কথা বলিস না তো।একটু পরেই আংটি পড়ানোর কাজ শুরু কবে।সময় নেই। গেস্ট রুমে গিয়ে তৈরি হয়ে নে।ওখানে সব কিছু রাখা আছে।যা…..

ওনার মুখের উপর আর কিছু বলার সাহস পেলো না দুজন।প্যাকেট হাতে বেরিয়ে এলো রুম থেকে।এরপর গেস্টরুমে এসে চেঞ্জ করে নিলো।ড্রেসিংটেবিলের উপর সাজ গোজের জিনিস রাখা।দুজনে টুকটাক সেজে আয়নায় একবার দেখে নিলো।কালো রঙের লেহেঙ্গাতে মন্দ লাগছে না রোশনিকে।এদিকে পিয়াকেও পিংক কালারের লেহেঙ্গাতে বেশ সুন্দর দেখাচ্ছে।পিঠ পর্যন্ত চুলগুলো ছেড়ে দিয়েছে।তবে রোশনির লম্বা চুলগুলো কাঠি দিয়ে আটকানো।দুজনে রেডি হয়ে নিচে নেমে এলো।নিচে নামতেই দেখলো সাহিল নাতাশাও এসে গেছে।ভিষন সুন্দর দেখাচ্ছে দুজনকে পাশাপাশি। রোশনি মনে মনে দোয়া করলো ওদের জুটিটা যেন আল্লাহ সব সময় সালামাত রাখে।

সাহিল আর নাতাশা আজ ভিষন খুশি।আজ তাদের সম্পর্কের একটা নাম হতে চলেছে।রিং এক্সচেঞ্জ হওয়া মানেই তো অর্ধেক বিয়ে হয়ে যাওয়া।সবাই ওদের দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে আছে।নাতাশার বাবা রিং পড়ানো শুরু করতে বলতেই নাতাশা বলে ওঠে…

__অধির কোথায়…? ওকে দেখছি না তো…?ওকে ছাড়া কিভাবে শুরু করবো…?

সাহিল পাশে দাড়িয়ে থাকা আদিকে চাপা গলায় বলে উঠলো..

__অধির কোথায়…?

__রুমে আছে হয়তো।দাড়া আমি দেখে আসছি….

আদি যেতে নিলেই পাশ থেকে দিদাম ন্যাকামো সুরে বলে উঠলো….

__ওইতো অধির বেবি এসে গেছে…

দিদামের কথায় সবার দৃষ্টি এবার সিড়ি দিকে গেলো।পুরো ব্লাক গেট আপ এ লেডি কিলার লুক নিয়ে সিড়ি দিয়ে নামছে অধির।পা থেকে মাথা পর্যন্ত এ্যাটিটিউডে ভরা।মিডিয়ার লোকজন ছবি আর ভিডিও করতে ব্যস্ত।রোশনি অধিরকে একবার দেখে নিয়েই চোখ নামিয়ে নিলো।পাশ থেকে পিয়া ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো….

__কি লুক দোস্ত…!!! আমি যদি অন্য মেয়েদের মত হতাম তাহলে এখন ক্রাশ খেয়ে পুরো ভাসিয়ে দিতাম।কিন্তু আফসোস… আমার ওসব ক্রাস ট্রাস এ পোষায় না।তবে একটা কথা কিন্তু ঠিক।এই ছেলে বহুত মাইয়ার স্বপ্নের পুরুষ।ওর হাসিটা কত ডেঞ্জারাস দেখেছিস..? আমার যদি বাকি মেয়েদের মত ফিলিংস টিলিংস থাকতো তাহলে এতোক্ষন হার্ট এ্যাটাক করে ফেলতাম বুঝলি..? ভালোই হয়েছে আমি বাকি সবার মত না….ওসব ন্যাকামো আমার দ্বারা সম্ভব নয়।

নিচের দিকে তাকিয়েই পিয়ার কথাগুলো শুনে গেলো রোশনি।ওর কথার প্রেক্ষিতে কি বলা উচিত মাথায় এলো না ওর। তাই চুপ করেই রইলো।তবে একটা জিনিস রোশনি নিজেও মানে,,,সেটা হলো অধির চৌধুরিকে নিয়ে অনেক মেয়েই তার স্বপ্ন সাজায়।এমন শক্ত পার্সোনালিটি সম্পন্ন পুরুষকে কে না চাই তার জিবনসঙ্গী হিসেবে পেতে।অধিরকে নিচে নামতে দেখেই দিদাম ছুটে এসে অধিরকে জড়িয়ে ধরলো।অধির কোনো রকমে দিদামকে ছাড়িয়ে সাহিলের পাশে এসে দাড়ালো।তারপর সাহিল আর নাতাশা তাদের রিং এক্সচেঞ্জ করলো।সাথে সাথেই হাত তালিতে ভরে গেলো নিস্তব্ধ পরিবেশ।

রাত তখন আটটা বাজে হয়তো।সবাই মিউজিকের তালে তালে নাচতে ব্যস্ত।রোশনি আর পিয়া এক কোনায় দাড়িয়ে আছে।এদিকে অধিরের চোখ রোশনিকে খুজে চলেছে।নিচে আসার পর থেকে এখনোও পর্যন্ত ও রোশনিকে দেখে নি।অধিরের সামনে দুজন বিজনেস ক্লায়েন্ট দাড়িয়ে আছে।এমন সময় পিছন থেকে কেউ ডেকে উঠলো অধিরকে।অধির পিছনে ফিরতেই দেখতে পেলো সুন্দর করে মিষ্টি চেহারার একটা ছেলে হাসি মুখে দাড়িয়ে আছে।চোখমুখ দেখে মনে হচ্ছে অনেক প্রত্যাশিত কিছু পেয়ে গেছে।ছেলেটার এমন খুশি হওয়ার মত কোনো করন খুজে পেলো না অধির।ডানহাতে ধরে থাকা ড্রিংকের গ্লাসটা আরো একটু শক্ত করে ধরে গম্ভির গলায় বলে উঠলো…

__ইয়েস…?

সামনে দাড়ানো ছেলেটা আবারো তার সুন্দর হাসি দিয়ে বলে উঠলো…

__হ্যালো স্যার।আই এম জয় আহসান।আপনি আমায় চিনবেন না।তবে আপনাকে আমি খুব ভালো করেই চিনি।আপনার সমস্ত ইন্টারভিউ, ম্যাগাজিন আমি দেখেছি।আপনি আমার আদর্শ স্যার।আপনার সব কিছু আমি ফলো করি।অনেক চেষ্টা করেও আপনার সাথে দেখা করে উঠতে পারি নি।এট লাস্ট আজ আপনার সাথে সামনা সামনি দেখা হলো।বলতে গেলে আই এম বিগ ফ্যান অফ ইউর….

জয়ের কথা শুনেও খুব একটা হেলদোল দেখা গেলো না অধিরের মধ্যে।জয়ের সাথে টুক টাক কথা বলে চলে গেলো অধির।এদিকে অধিরের এমন একরোখা এ্যাটিটিউড আর ড্যাম কেয়ার ভাবের জন্যেই অধিরকে এতো ভালো লাগে জয়ের।জয় মুচকি হেসে সামনে এগুতেই দেখলো রোশনি আর পিয়া এক কোনায় দাড়িয়ে আছে।জয় কিছুটা অবাক হয়েই ওদের দিকে এগিয়ে গেলো।

___তোমরা এখানে….?

কারো কথায় ওরা সামনে তাকালো।সামনে জয়কে দেখে দুজনেই প্রচন্ড অবাক হলো।পিয়া হেসে বলে উঠলো…

__আমরা তো এখানে ওয়েডিং প্ল্যানিং এর জন্য এসেছি।কিন্তু তুমি এখানে কি করছো….?

পিয়ার কথায় রোশনির দিকে তাকালো জয়।

__তোমরা যে সাহিল চৌধুরির এংগেজমেন্ট প্ল্যানিং এর কাজ করছো বলো নি তো..?সে যাই হোক।তোমাদের এখানে দেখে ভিষন ভালো লাগছে।অনেক দিন হলো দেখাও হয় না।

রোশনি সোজা হয়ে দাড়িয়ে বলে উঠলো…

__তুমি এখানে কিভাবে…?

জয় হেসে বলে উঠলো..

__সিহাব স্যারের সাথে এসেছি।উনি অধির স্যারের পরিচিত।সেই হিসেবেই ওনি ইনভাইটেড।আর আমি যেহেতু স্যারের এ্যাসিস্ট্যান্ট সো আমাকেও আসতে হলো।আর এখন মনে হচ্ছে এসে ভালোই হয়েছে।না আসলে এমন সুন্দরি দুটো পরি দেখা মিস হয়ে যেত…।বাই দা ওয়ে পিয়া,,,তোমায় এই সাজে দারুন দেখাচ্ছে…।মাঝে মাঝে তো মেয়েদের মতোও পোশাক পড়তে পারো…

পিয়া জয়কে ধাক্কা দিয়ে জয়ের কানে কানে বলে উঠলো…

__আমার কথা বাদ দাও।তোমার জিনিসের দিকে নজর দাও।নয়ত অন্য কারো নজর এসে পড়বে তোমার প্রপার্টিতে।তখন ছেঁকা খেয়ে ব্যাকা হয়ে অরিজিতের হার্ট ব্রোকেন গান শুনেই বাকি জিবন কাটাতে হবে।

ওদের এমন ফিসফিসানো কথা শুনে রোশনি ভ্রু কুচকে নাক মুখ ফুলিয়ে দাড়িয়ে রইলো।রোশনির এমন মুখ দেখে হাসিতে ফেটে পড়লো জয় আর পিয়া।একপর্যায়ে রোশনিও তাল মেলালো ওদের সাথে।এদিকে দুর থেকে অধির ওদের কার্যকলাপ লক্ষ্য করছে।প্রথমে রোশনিকে এমন সাজে দেখে চোখ ফেরাতে না পারলেও এখন অন্য কারনে ওদের থেকে চোখ ফেরাতে পারছে না।জয়ের সাথে এমন হাসাহাসি করে কথা বলাটা ঠিক ভালো লাগলো না অধিরের কাছে।তবে এটুকু বুঝতে পেরেছে জয় ওদের পরিচিত।অধির ড্রিংকের গ্লাসে চুমুক দিতেই আদি মাইক হাতে এনাউন্স করে উঠলো এখন কাপল ডান্স হবে।সাথে সাথেই সব লাইটস অফ হয়ে রোমান্টিক সফট লাইট জ্বলে উঠলো।দিদাম এসে অধিরকে টেনে নিয়ে গেলো ডান্স ফ্লোরে।এদিকে আদি এসে পিয়া,জয় আর রোশনিকেও জোর করে নিয়ে গেলো।সাউন্ড বক্সে তখন,, আজ জানে কি জিদ না কারো….গানটা বাজছে।এমন রোমান্টিক পরিবেশে এই গানটা বেশটা ভালো মানিয়েছে।সবাই কাপল ডান্সে বিভর।নাচার মাঝে এক সময় ছেলেরা মেয়েদের ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পার্টনার চেঞ্জ করছে।সফট লাইটের আলোয় খুব একটা বোঝা যাচ্ছে না কে কার সাথে দাড়িয়ে নাচছে।রোশনি ঘুরতে ঘুরতে এসে অধিরের কাছে গিয়ে পড়ে।সাথে সাথেই অধির শক্ত হাতে রোশনির কোমর জড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নাচতে থাকে।এদিকে রোশনি বুঝতে পারছে না সে কার সাথে আছে।তবে লোকটার ছোঁয়াতে যে কিছু একটা আছে সেটা খুব করে বুঝতে পারছে ও।অধিরের হাত রোশনির খোলা পেটে পড়তেই এক দফা কেপে উঠলো রোশনি।লোকটার থেকে ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা করেও লাভ বিশেষ হলো না।অধিরের শক্ত পুরুষালী হাতটা আরো শক্ত করে চেপে ধরলো কোমর।রোশনিকে ঘুরিয়ে শক্ত করে মিশিয়ে নিলো নিজের সাথে।রোশনির পিঠ গিয়ে ঠেকলো অধিরের প্রশস্ত বুকের সাথে।রোশনির হাত দুটো সামনের দিকে এসে পেট বরাবর চেপে ধরলো।এই এসিযুক্ত ঠান্ডা পরিবেশেও কুলকুল করে ঘামতে শুরু করলো।লোকটা কে সেটাও বুঝতে পারছে না।আর ও যে চিৎকার করবে সেটাও পারছে না।কারন এমন হাই সোসাইটিতে এই ধরনের ক্লোজ কাপল ডান্স অনেকটাই কমন একটা বিষয়।আর সবচেয়ে বড়কথা হল এটা অধির চৌধুরির বাড়ি।এখন যদি ও চিৎকার করে তাহলে সাথে সাথেই একটা বিশ্রী ব্যাপার ঘটে যাবে।আর এখানে সিনক্রিয়েট তৈরি হলে অধির চৌধুরি ওকে কিছুতেই ছেড়ে কথা বলবে না।

অধির রোশনির চুল থেকে কাঠিটা খুলে ফেলতেই লম্বা ঢেউ খেলানো চুলগুলো ছড়িয়ে পড়লো পিঠের উপর।
অধির রোশনির পিঠ থেকে আলতে হাতে চুলগুলো সরাতে গিয়ে রোশনির খোলা পিঠে হাতের ছোয়া লাগলো।মুহূর্তেই শরির জুড়ে বয়ে গেলো ঠান্ডা হাওয়ার স্রোত। মৃদু বাতাসে যখন কিছু চুল এসে অধিরের চোখে মুখে আচড়ে পড়তে লাগলো তখনই যেন অধিরের পৃথিবী থমকে গেলো।এই মেয়ের মাঝে কি আছে অধির জানে না।তবে কিছু একটা যে আছে সে ব্যাপারে ও নিশ্চিত।আর সেটা সাধারনের মাঝেও অসাধারন কিছু।যা অধির চৌধুরির মত শক্ত মনের মানুষকেও নাড়িয়ে দিতে পারে।অধিরের ঘন ঘন পড়া গরম নিশ্বাস ঘাড়ে পড়তেই থমকে দাড়ালো রোশনি।লোকটার হাত ক্রমেই রোশনির পেটকে গভির ভাবে ছুয়ে চলেছে।এতোক্ষন দাতে দাত চেপে সহ্য করলেও এখন আর সহ্য হচ্ছে না ওরা।কোনো রকম সিনক্রিয়েট ছাড়া ঠান্ডা মাথায় লোকটার থেকে ছাড়া পাবার উপায় ভাবতে লাগলো রোশনি।এক মিনিটের মাথায় উপায় পেয়েও গেলো।পায়ে ওর হিল পড়া।পেন্সিল হিল না হলেও এটা দিয়ে আঘাত করলে বেশ লাগবে লোকটার।যেই ভাবা সেই কাজ।রোশনি ডান পা দিয়ে অধিরের পায়ের উপর জোরে পাড়া দিলো।সাশে সাথে অধির মৃদু আওয়াজ করে উঠলো।লোকটার আওয়াজ শুনে বাকা হাসলো রোশনি।তার আইডিয়া কাজে দিয়েছে ভেবেই ভিষন আনন্দ লাগছে মনে।রোশনি আবারো জোরে পাড়া দিযে অধিরের পায়ে।অধির এবার রোশনিকে পিছন থেকে শক্ত করে চেপে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।দাতে দাত চেপে আস্তে করে বলে ওঠে….

___হোয়াট দা হেল ইজ দিস…? পায়ে পাড়া দিচ্ছো কেন বারবার…?

কন্ঠটা পরিচিত লাগলো রোশনির কাছে।মস্তিষ্কে আরো কিছুটা চাপ দিতেই বুঝতে পারলো এটা অধির।

__আপনি…? তারমানে আপনি ছিলেন এটা…?

__কেন অন্য কারো থাকার কথা ছিল…? এই চিন্তাটা ভুল করে মাথাতেও এনো না…

অধিরের কথায় কপাল কুচকে গেলো রোশনির।লোকটা কিছুটা ক্ষাপাটে সেই সাথে কিছুটা অদ্ভুদ।

__ছাড়ুন আমাকে।যেতে দিন আমায়…

রোশনির কথায় অধির জোরে ওকে ঘুরিয়ে নিজের দিকে ফেরালো।আচমকা এমন হওয়ায় রোশনি অধিরের বুকের কাছটা খামচে ধরলো।অধির মাথাটা নিচ করে রোশনির কানের কাছে মুখ নিয়ে ধির গলায় বলে উঠলো….

__ছেলেটা কে ছিলো…?

__কোন ছেলে…?

__একদম ড্রামা করবা না।তুমি ভাল করেই জানো আর কোন ছেলের কথা বলছি…

___আশ্চর্য…!!! আমি কি করে জানবো আপনি কোন ছেলের কথা বলছেন..?

__জয়…জয়ের কথা বলছি…

রোশনি অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো…

__-জয়কে আপনি চেনেন…? মানে জয়কে আপনি কিভাবে চেনেন…?

অধির দাতে দাত চেপে বলে উঠলো….

__সেটা ইম্পর্টেন্ট নয়।ওই ছেলেটা তোমার কি হয় সেটা বলো….

রোশনি চোখ মুখ কুচকে বললো…

__বন্ধু… বন্ধু হয় ও আমার….

___কেমন বন্ধু…? জাস্ট ফ্রেন্ড নাকি স্পেশাল ফ্রেন্ড…

রোশনি এবার চরম বিরক্ত।লোকটা যে আস্ত একটা খাটাস এতো দিনে সেটা ও বুঝে গেছে।

__মানে কি..? আপনি ওকে নিয়ে কেন পড়লেন..? আর ও আমার জাস্ট ফ্রেন্ড নাকি স্পেশাল ফ্রেন্ড তা জেনে আপনি কি করবেন হ্যা…? ছাড়ুন আমায়… যেতে দিন…

__আমার প্রশ্নের উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত তুমি যেতে পারবে না।

রোশনি নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বলে উঠলো…

__মগের মুলুক নাকি..? জোর করে আটকে রাখবেন নাকি…?

অধির চাপা স্বরে বলে উঠলো….

__মনে করে সেটাই।বলো কে হয় ও তোমার…..?

এদিকে পিয়া আর আদি ডান্স করছে।তবে কেউই কাউকে খেয়াল করে নি।আদির এক হাত পিয়ার কোমরে আর এক হাত পিয়ার হাতে।নাচতে নাচতেই পিয়া আদিকে জয় মনে করে বলে উঠলো….

__জানো জয়…? এখানে একটা সাদা বিলাই আছে।দেখতে সাদা হইলে কি হবে ব্যাটা আস্ত একটা খাটাসদেখতে নিষ্পাপ হইলেও ভেতরে ভেতরে আস্ত বদমাইশ।সারা দিন ম্যাও ম্যাও করে মাথা খারাপ করে দেয়।আর আজ তো ওর চুড়েল গার্লফ্রেন্ড আর ও আমায় ইরিটেট করে ছেড়েছে।আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি আজকের পর থেকে যেন ওই সাদা খবিশটাকে আর দেখতে না হয়।আর অবশ্যই ওই ওই ন্যাকা চুড়েলের সাথেও।দুটোই ডিসগাস্টিং ইয়ার….

পিয়ার কথায় আদি ওকে চিনে ফেলে সরাতে গিয়েও সরায় নি ওর বাকি কথা গুলো শোনার জন্যে।এই বদমাইশ মেয়ে যে তাকে নিয়ে এসব ভাবে সেটা ভাবতেও পারে নি আদি।পিয়া আদিকে একটা গুতা দিয়ে বলে ওঠে….

__আরে ইয়ার কিছু বলছো না কেন…?জয়…?

অন্য দিকে সাহিল আর নাতাশাও মৃদু দুলে দুলে নাচছে।সাহিলের বুকে মাথা রেখে সাহিলের হার্টবিটের আওয়াজ শুনছে।এরই মধ্যে গান বন্ধ হয়ে গেলো।আর সব লাইটসও জ্বলে উঠলো।লাইটস জ্বলতেই অধির রোশনিকে ছেড়ে দাড়ালো।সাহিল আর নাতাশাও দুজন দুজনকে ছেড়ে দুরে দাড়ালো।এদিকে পিয়া পাশে তাকাতেই দেখে জয় আর রিয়া দাড়িয়ে আছে।তারমানে জয় রিয়ার সাথে ছিলো।তাহলে ও কার সাথে আছে..? আর কাকেই বা জয় মনে করে এতোক্ষন আদির গুষ্টি উদ্ধার করেছে..?পিয়া জিব্বাহ দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে উপরের দিকে তাকাতেই চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম হলো।আদি চোখ কটমট করে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।পিয়া একটা বেক্কল হাসি দিয়েই ছিটকে সরে দাড়ালো।এদিকে দিদাম দেখলো সে একটা হ্যাংলা পাতলা ছেলের সামনে দাড়িয়ে আছে।ছেলেটা এখনো তার কোমর জড়িয়ে রেখেছে।দিদাম ভেবেছিল ও হয়তো অধিরের সাথেই নাচছে।তাইতো কত ক্লোজ হয়ে নেচেছে ও।সামনে দাড়ানো ছেলেটাকে দুরে সরিয়ে চোখ মুখ ফুলিয়ে অধিরের পাশে গিয়ে দাড়ালো।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here