শেষ বিকেলের আদর❤️পর্ব : ১৩

0
4667

#শেষ বিকেলের আদর❤️
#রিত্তিকা ইসলাম
#পর্ব : ১৩

🌸
একটা বাজতে মাত্র দুমিনিট বাকি।রোশনি দেয়াল ঘড়িতে চোখ বুলিয়ে দ্রুত আনোয়ারা চৌধুরির রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।খাওয়া দাওয়ার পাট চুকিয়ে বারোটার আগেই সবাই বিদায় নিয়েছে।পিয়াকেও তার কোন এক কাজিন এসে নিয়ে গেছে।পিয়ার বাবা নাকি হঠাৎ প্রেশার ফল করে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।এদিকে সব গুছাতে গিয়ে এতোটা সময় লেগে গেল রোশনির।জয় অবশ্য বলেছিলো সে অপেক্ষা করবে। কাজ শেষ হলে না হয় ওকে নিয়ে একে বারেই যাবে।কিন্তু কাল ওর অফিস থাকায় রোশনিই ওকে ঠেলে ঠুলে পাঠিয়ে দিয়েছে।রোশনি দরজায় নক করতেই আনোয়ারা চৌধুরি রোশনিকে ভেতরে আসতে বললেন।বিছানায় সাহিল বসে আছে।আর তার সামনেই দাদি বসে আছে।সাহিলকে দেখে মৃদু হাসলো রোশনি।বিনিময়ে সাহিলও মুচকি হাসলো।রোশনিকে দেখে দাদি জান বলে উঠলেন….

___কিছু বলবি….? ও ভালো কথা মনে হয়েছে…? ব্যস্ততায় আমি খেয়ালই করি নি।খেয়েছিস তুই….?

__জ্বি দাদি খেয়েছি।দাদি বলছিলাম যে এবার আমার যেতে হবে।আয়াশ একা আছে বাড়িতে।

___তোর চাচি নেই বাড়িতে..? কোথায় গেছেন উনি…?

___না উনিও বাড়িতেই আছে।তবুও….

তখনি অানোয়ারা চৌধুরি বলে উঠলেন….

___তাহলে তো আর কোনো সমস্যায় নেই।উনি যেহেতু আছেন তাহলে আজ তুই থেকেই যা।

রোশনি ব্যস্ত হয়ে বলে উঠলো….

__না দাদি সেটা কি করে হয়…? আর থেকেই বা কি করবো..? আমি চলে যেতে পারবো।আর এমনিও কালতো আবারো আসতে হবে।

__সেজন্যেই তো বলছি।কাল যখন আসতেই হবে তখন আজ রাত টুকু থেকে যা।

রোশনি কিছু বলবে তার আগেই সাহিল বলে উঠলো….

___দাদি ঠিকই বলেছে রোশনি।আজকের রাতটা থেকেই যাও।আর এমনিতেও সব ড্রাইভার গুলোও হয়তো ঘুমিয়ে গেছে। ওদের কি আর ডেকে তোলা ঠিক বলো…? আর আদি…!!! তাকে তাকে ঘুম থেকে তুলতে গেলে এখন রিতিমত ছোট খাটো একটা যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে।আর আমারও ভিষন ক্লান্ত লাগছে।এই অবস্থায় ড্রাইভ করাটা উচিত হবে না। তোমাকে একা যেতে দিতেও পারি না।এখন বলো একটা রাত কি এখানে থাকা যায় না…?

সাহিলের কথায় মৃদু হাসলো রোশনি।না করার মত আর শব্দ খুজে পেলো না।সাহিলের মধ্যে অদ্ভুদ রকমের ভাই ভাই গন্ধ পায় রোশনি।চোখে মুখে সে কি মায়া।এমন একটা মায়া ভরা বড় ভাই যদি ওর থাকতো তবে বেশ হতো।অথবা নাতাশার মত একটা বড় বোন।তখনই আয়াশের কথা মাথায় এলো।পিচ্চি হলে কি হবে বড় ভাইয়ের মতোই আচরন তার।চাচির থেকে কিভাবে বাচায় ওকে।তখন সত্যিই মনে হয় আয়াশ ওর বড় ভাই।

রোশনি গেস্টরুমে এসে দরজা লাগিয়ে বিছানায় গিয়ে বসলো।ব্যাগ থেকে ফোন বের করে আয়াশকে ফোন দিতে গিয়েও দিলো না।ঘুমিয়ে পড়েছে হয়তো।এখন ফোন দেওয়া উচিত হবে না।রোশনি লাইট নিভিয়ে ড্রীম লাইট জ্বালিয়ে শুয়ে পড়লো।সারাদিনের ক্লান্তিতে মুহূর্তেই চোখ জুড়ে নেমে এলো ঘুমের পরীরা।এদিকে অধিরের হঠাৎ করেই ঘুমটা ভেঙে গেল।মিনিট পাঁচেক বিছানায় গড়াগড়ি করেও চোখে ঘুম ধরা দিলো না।দেয়াল ঘড়িতে তখন ঠিক দুইটা বিশ বাজে।অধির বিরক্তি নিয়ে উঠে বসলো।পাশে থাকা সাইড টেবিল থেকে গ্লাস হাতে নিতেই দেখলো ওয়াটার বোটলে পানি নেই।বিরক্তিকে কুচকে গেলো কপাল।সব কিছুতেই কেমন বিরক্ত লাগছে।অধির কুচকানো কপাল নিয়েই রুম থেকে বেরিয়ে এলো।কিচেনে এসে পানি খেয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।রান্নাঘর থেকে বের হয়ে ড্রয়িংরুমে আসতেই দেখলো একটা মেয়ে খোলা চুলে সিড়ি দিয়ে হেটে যাচ্ছে।ড্রয়িংরুম জুড়ে তখন সফট লাইটের আবছা আলো বিরাজ করছে।অধির আরো একটু খেয়াল করতেই বুঝলো মেয়েটা রোশনি।অধির নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে উঠলো তবে কি রোশনি বাড়ি যায় নি…? আর এতো রাতে মেয়েটা এভাবে যাচ্ছেটাই বা কোথায়..? অধির ধীর গলায় রোশনিকে ডেকে উঠলো।কিন্তু রোশনি যেন শুনতেই পেলো না এমন ভাব করে আগের মতোই ধীর পায়ে সিড়ি দিয়ে উপরে উঠতে লাগলো।অধির আবারো কয়েক বার ডাকল ওকে।কিন্তু রোশনি ফিরেও তাকালো না।অধিরের ভ্রু জোড়া এবার কুচকে গেলো।অধির দ্রুত পা ফেলে রোশনির সামনে গিয়ে দাড়ালো।সাথে সাথেই থমকে দাড়ালো রোশনি।অধির ভ্রু জোড়া কুচকে রেখেই প্রশ্ন করলো…

__এই মেয়ে সমস্যা কি তোমার….? কখন থেকে ডাকছি শুনতে পাচ্ছো না…? আর এভাবে কোথায় যাচ্ছো এখন…?

অধিরের কথাতেও খুব একটা হেলদোল দেখা গেল না রোশনির মাঝে।সে আগে মতোই চোখ জোড়া স্থীর করে দাড়িয়ে আছে।রোশনির এমন অদ্ভুদ আচরনে বেশ অবাক হলো অধির।কিছুক্ষন গভির দৃষ্টিতে খেয়াল করতেই বুঝতে পারলো রোশনি ঘুমের ঘোরে আছে।তারমানে মেয়েটা ঘুমের মধ্যে হাটে।অধির একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রোশনিকে কোলে তুলে নিল।রোশনিও ঘুমের ঘোরে অধিরের গলা দুহাতে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রাখলো।মুহূর্তেই অধিরের সব কিছু থমকে গেলো।এই মুহূর্তে কেন জানে না নিজেকে সব থেকে সুখী মানুষ বলে মনে হচ্ছে।ইচ্ছে করছে সময়টাকে এখানেই আটকে দিতে।কিছুক্ষন আগের সেই বিরক্তিকর ভাবটা আর নেই।সব কিছুই এখন ভালো লাগছে। অধির চোখ নামিয়ে একবার রোশনির মুখের দিকে তাকালো।রোশনি তখন ঘুমিয়ে পড়েছে।অধির কিছুক্ষন রোশনির মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে গেস্ট রুমের দিকে পা বাড়ালো।এরপর খুব সাবধানে বিছানায় শুইয়ে দিলো।বিছানার পাশে টুল টেনে বসে তাকিয়ে রইলো রোশনির ঘুমন্ত মুখটার দিকে।এতো কেন ভালো লাগে এই মুখটার দিকে তাকিয়ে থাকতে…? ওর ওই টানা টানা কাজল কালো চোখে যে নিজের ধ্বংস দেখতে পায় অধির।অধির ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়েই আলতো হাতে মুখের উপর পড়ে থাকা ছোট চুলগুলো সরিয়ে দেয়।তখনই রোশনির ঠোট নড়ে ওঠে।ঘুমের মাঝেই মেয়েটা কিছু বলছে।অধির কান খাড়া করতেই শুনতে পায় রোশনি অস্পষ্ট ভাবে বলছে…

__আপনি খুব খারাপ মিষ্টার চৌধুরি।নিজেকে টিজ মার খান মনে করে চলেন।সব সময় শুধু আমায় ঝাড়ি দিয়ে কথা বলেন।আপনি আমার গায়ে হাতও তুলেছেন।আমি আপনাকে পুলিশে দেবো….

রোশনির বলা কথা শুনে ঠোটের কোনে হাসি ফুটলো অধিরের।মেয়েটা যে শুধু ঘুমের ঘোরে হাটে তা না,,ঘুমের মাঝে কথাও বলে।অধির একটু ঝুকে স্লো ভয়েজে বলে ওঠে….

__তোমার খুব লেগেছিল না…? বেশি লেগেছিল….?

রোশনি ঘুমের মাঝেই ঠোট উল্টে হুম বললো।রোশনির এমন মুখ করা দেখে পেট ফেটে হাসি পাচ্ছে অধিরের।কেমন ছোট্ট একটা কিউট বাচ্চার মত লাগছে এই মুহূর্তে। আবার কথার উত্তরও দিচ্ছে।মানুষ যে ঘুমের মাঝেও এসব করতে পারে তা একে না দেখলে বুঝতো না অধির।অধির ডান হাত তুলে রোশনির গালে স্লাইড করতে করতে বলে উঠলো…..

__আচ্ছা সরি।আমি সেদিন তোমার গায়ে হাত তুলতে চায় নি।কিন্তু রাগটাকে কন্ট্রোলই করতে পারি নি।তোমার যদি সেদিন কিছু হয়ে যেত তাহলে কি হতো ভেবেছো…? এতো রাতে একা কেউ বাইরে যায় তিলোককন্যা..? সে জন্যেইতো মেরেছি।রেগে আছো আমার উপর…?

রোশনি ঠোট ফুলিয়ে হুম বললো।অধির দুঃখী দুঃখী মুখ করে বলে উঠলো…

__এখন কি করতে হবে আমায় তোমার রাগ ভাঙানোর জন্যে…?তুমি যা বলবে তাই করবো…।বলো….

রোশনি আর কিছু বললো না।হয়তো পুরোপুরি ঘুমিয়ে গেছে।অধির মুচকি হেসে রোশনির চুলে হাত বুলাতে লাগলো।কিছুক্ষন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতেই যেন কোনো এক ঘোরে চলে গেলো ও।রোশনির থুতনিতে থাকা গাঢ় লালচে তিলটার দিকে নজর যেতেই নেশা লেগে গেলো।আঙুল দিয়ে তিলটাকে গভির ভাবে ছুয়ে দিতে লাগলো।খানিক বাদে অদ্ভুদ এক কান্ড করে ফেললো।মাথাটা ঝুকিয়ে থুতনিতে থাকা তিলটার উপর গভির ভাবে ঠোট ছোঁয়ালো।নিজের কাজে নিজেই স্তব্ধ হয়ে গেলো অধির।কি করলো সে ভেবেই নিজের উপর ঘৃনা তৈরি হল।একটা মেয়ের ঘুমের সুযোগ নিয়ে তাকে স্পর্শ করার মত জঘন্য কাজ করাটা কোনো ভাবেই অধির চৌধুরির সাথে যায় না।অধির চোখ বুজে একটা লম্বা শ্বাস নিলো।রোশনির দিকে না তাকিয়ে সোজা রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।রুমে এসে সিগারেটের প্যাকেট হাতে চলে গেলো বেলকোনিতে।একটার পর একটা সিগারেট ফুকতে লাগলো।বাকি রাত হয়তো নির্ঘুমই কাটবে এবার।

এদিকে সকালে কারো মিষ্টি ডাকে চোখ মেলে তাকালো রোশনি।চোখ খুলতেই দেখলো নাতাশা হাসি হাসি মুখ করে দাড়িয়ে আছে।নাতাশাকে দেখেই তাড়াতাড়ি করে উঠে বসলো ও।কাল অনেক রাত করে ঘুমিয়েছে বলে সকালে ঘুম ভাঙে নি রোশনির।এমনিতেও সকাল করে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস আছে ওর।কিন্তু আজকেইও ঘুম থেকে দেরিতে উঠলো।এরা কি ভাববে কে জানে।রোশনি অসহায় মুখ করে বলে উঠলো….

__দেরি হয়ে গেলো না উঠতে…? আসলে বুঝতেই পারি নি কখন ভোর হয়ে গেছে…? কয়টা বাজে….?

রোশনির কথায় ফিক করে হেসে ফেললো নাতাশা।রোশনিকে ভিষন কিউট লাগে ওর।নাতাশা এক গাল হেসে রোশনির গালে হাত রেখে বলে উঠলো…

__ইটস ওকে গুড়িয়া।আর এমনিতেও বেশি বেলা হয় নি।মাত্র আটটা বাজে।এবার উঠে ফ্রেশ হয়ে নাও জলদি।নাস্তা করতে হবে।তুমি তো দেখি সেই ভারি ড্রেস পড়েই ঘুমিয়েছো।যাও চেঞ্জ করে নাও তাড়াতাড়ি।

রোশি মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললো।নাতাশাও রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।রোশনি নিজের ড্রেস পড়ে ফ্রেস হয়ে বেরিয়ে এলো।ডাইনিং এ আসতেই দেখলো সবাই টেবিলে বসে গেছে।রোশনিকে দেখেই নাতাশা এগিয়ে গিয়ে রোশনিকে চেয়ার টেনে বসালো।আদি মুচকি হেসে রোশনিকে গুড মর্নিং জানালো।রোশনিও হেসে উত্তর দিলো।এরপর সবাই খাওয়ায় মনোযোগ দিলো।রোশনির ঠিক সামনের চেয়ারটাতেই অধির বসেছে।রোশনি খাবার মুখে দিয়ে আড় চোখে একবার অধিরের দিকে তাকালো।অধির একমনে খাবার খেয়ে চলেছে।যেন পৃথিবীতে এটাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ।মনোযোগ দিয়ে না খেলে যে কোনো সময় পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।রোশনি নিজেও খাবারে মনোযোগ দিল।অধির একবারের জন্যেও রোশনির দিকে তাকাচ্ছে না।মেয়েটাকে ইগনোর করতে হবে।কোনো মেয়ের মায়ায় সে জড়াতে চায় না।ভালোবাসা বিয়ে সবকিছু ওর কাছে একটা ডিল মাত্র।এর থেকে বেশি কিছু নয়।অধিরের খাওয়ার মাঝেই সাহিল বলে উঠলো….

___কিরে তোর চোখ এমন লাল দেখাচ্ছে কেন…? রাতে কি ঠিক মত ঘুম হয় নি…?

সাহিলের কথায় সবার দৃষ্টি এখন অধিরের দিকে।তবে এতে অধিরের কোনো হেলদোল নেই।সে এক মনে খেয়েই চলেছে।কোনো রকম খাবার শেষ করে উঠে দাড়িয়ে বলে উঠলো…..

__তেমন কিছু না।কাজের প্রেশার বেশি তাই রাত জেগে কাজ করায় এমন দেখাচ্ছে।আই এম ফাইন।ছোট মা,,,,ছোট পাপ্পা চলে গেছে অফিসে……?

মিসেস রুমা খাবার মুখে দিয়েই বলে উঠলেন…..

__ও তো সেই কখন বেরিয়ে গেছে।আজ নাকি ইম্পর্টেন্ট মিটিং আছে ক্লাইন্টদের সাথে।আমাকে তো বলে গেলো তোকে আর সাহিলকে তাড়াতাড়ি পাঠিয়ে দিতে।

অধির আর কিছু না বলে অফিসে যাওয়ার জন্যে পা বাড়াতেই দিদাম বলে উঠলো….

__অধির বেবি,,,,,ওয়েট আমারও তো যেতে হবে।একটু ওয়েট করো আমি খাবারটা একটু শেষ করে নি….

দিদামের কথায় হাতে থাকা ঘড়িতে চোখ বুলিয়ে গম্ভির গলায় বলে উঠলো….

___আই এম অলরেডি লেইট দিদাম।তুমি সাহিলদের সাথে চলে এসো…..

দিদাম মুখ ছোট করে বলে উঠলো….

__ওকে….

এরপর সাহিল,নাতাশা আর দিদামও খাবার শেষ করে চলে গেলো অফিসে।রিয়াও কলেজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো।যে যার মত খেয়ে উঠে গেলো।আনোয়ারা চৌধুরি রোশনিকে ড্রয়িংরুমে আসতে বলে চলে গেলেন।রোশনিও ওনার পিছুপিছু হাটা দিলো।আনোয়ারা চৌধুরি সোফায় বসতেই আদিল দিয়ে সোফার হাতলের উপর বসে ওনার কাধের উপর হাত রাখলো।মিসেস আনোয়ার চৌধুরি রোশনির হাতে একটা খাম ধরিয়ে দিয়ে বলে উঠলেন…..

__এতে টাকা আছে।পিয়ারটা আমি ওকে পাঠিয়ে দিয়েছি।বাকি টাকাগুলোও আমি জামাল সাহেবের কাছে দিয়ে দিয়েছি।আর ওনাকে এটাও বলে দিয়েছি যে তুই আর পিয়া যতো দিন অধির আর সাহিলের বিয়ে না হচ্ছে ততো দিন আমাদের এখানেই কাজ করবি।তার জন্যে ওনাকে পেমেন্টও করা হবে।

রোশনি আমতা আমতা করে বলে উঠলো…

___কিন্তু দাদি ওনাদের বিয়ের তো এখনো অনেক দেরি।ততো দিন আমরা এখানে কি করবো…?

__সে কিছু একটা করার মত নিশ্চয় পেয়ে যাবি।মেজো নাত বউ বলে গেছে তোদের যেন তাদের বিয়ে অবধি যেতে দেওয়া না হয়।

বেলা বারোটার দিকে বাড়ি ফিরতেই চাচি এসে চোখ মুখ রাঙিয়ে সামনে দাড়ালো।রোশনি জানে সারা রাত বাড়ি না ফেরার। জন্যে তাকে এখন হাজারটা তেতো কথা শুনতে হবে।রোশনি যে সারা রাত বাড়ির বাইরে ছিল এটা নিয়ে ওনার কোনো মাথা ব্যাথা নেই।এই অজুহাতে রোশনিকে কথা শুনাতে পারবে এটাই ওনার মুল উদ্দেশ্য।চাচির কঠিন কঠিন কথা গুলো এখন অনেকটাই সয়ে গেছে রোশনির।কিন্তু বাবা মাকে নিয়ে কথা বললে সেটা সহ্য করতে পারে না ও।আর এই মুহূর্তে নিজের বাবা মাকে নিয়ে কোনো রকম খারাপ কথা শুনতে ইচ্ছে করছে না রোশনির।চাচি কিছু বলার আগেই রোশনি ব্যাগ থেকে পাচ হাজার টাকা বের করে চাচির হাতে ধরিয়ে দিলো।টাকা গুলো পেয়ে আর কিছু বললেন না উনি।টাকা হাতে পেতেই ওনার চোখ মুখ চিকিচিক করে উঠলো।খুব অদ্ভুদ তাইনা..? আজ যদি ওনার জায়গায় রোশনির মা থাকতো তাহলে পুরো ব্যাপারটাই অন্য রকম হতো।সারা রাত মেয়ে বাড়ি না ফেরায় হয়ত কেদে কেটে অস্থির হয়ে যেত।কিন্তু আজ এমন কিছুই ঘটলো না।রোশনি গোপনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুমের দিকে পা বাড়ালো।আয়াশ তখন পড়ার টেবিলে বসে কিছু লিখছে।মুখটা বেশ গম্ভির দেখাচ্ছে।বাবু যে ভিষন রেগে আছে তা বেশ বোঝা যাচ্ছে।রোশনি মুচকি হেসে কাদ থেকে ব্যাগ নামিয়ে আয়াশের পাশে গিয়ে দাড়ালো।আয়াশ আগের মতোই লিখতে ব্যস্ত।রোশনি বাকা চোখে একবার তাকিয়ে বলে উঠলো…..

___কি করছিস নকুল…? আর আজ স্কুলে যাস নি…?

আয়াশ কথার উত্তর দিলো না।একবার ফিরেও দেখলো না।রোশনি মুখ ফুলিয়ে বলে উঠলো…

__কথা বলবি না আমার সাথে…?

আয়াশ ওর দিকে না তাকিয়েই বলে উঠলো…

__স্কুলে যেতে ইচ্ছে করে নি।আর আমি হোমওয়ার্ক করছি।ডিস্টার্ব করো না।

আয়াশের কথায় রোশনি মুচকি হাসলো।চেয়ার থেকে আয়াশকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় নিয়ে বসালো।আয়াশ মুখ ফুলিয়ে নিচের দিকে চেয়ে আছে।রোশনি আয়াশের হাত ধরে নরম স্বরে বলে উঠলো….

___আচ্ছা সরি।কি করবো বল…? কাজ তো করতেই হবে না …? তোর গলার অপারেশন করতে হবে তো নকুল..।

___তাই বলে তুমি রাতেও বাড়ি ফিরবে না..?লাগবে না এতো টাকা,,,দরকার নেই অপারেশনের।আমি এভাবেই ঠিক আছি।কিন্তু তুমি আমার সাথে না থাকলে আমার ভালো লাগে না বাডি।

কথাগুলো বলতে বলতেই ফুপিয়ে কেদে উঠলো আয়াশ।রোশনি আয়াশকে বুকে জড়িয়ে ধরে আস্তে করে বলে উঠলো…..

___কিন্তু আমার যে ভালো লাগে না যখন কেউ তোকে নিয়ে মজা করে।একটু কষ্ট কর সোনা।একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।…..আমি অাছি তো…

আয়াশ তবুও ফুপিয়ে যাচ্ছে।রোশনি এবার মজা করে বলে উঠলো….

__ছিঃ তুই ছেলে হয়ে এমন ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাদছিস..? তোর গার্লফ্রেন্ড শুনলে তো আজই ব্রেকআপ চাইবে রে…।নতুন গার্লফ্রেন্ড জোগাড় করতে কিন্তু অনেক সময় লেগে যাবে।এমনিতেই তোর সামনের একটা দাত পড়ে গেছে।ভাগ্য ভালো যে তাও ব্রেকআপ চাই নি।তবে এবার আর মনে হয় তোর ব্রেকআপটা আটকানো গেলো না।….এমন ছিদকাদুনে বিএফ কেউ রাখে….?

রোশনির কথায় চোখে পানি নিয়ে ফিক করে হেসে ফেললো আয়াশ।আয়াশকে হাসতে দেখে রোশনিও মুচকি হেসে ওর চোখের পানি মুছে দিল।এরপর ব্যাগ থেকে একটা ডেইরি মিল্কের প্যাকেট এগিয়ে দিতেই আয়াশ হেসে দিয়ে রোশনির গালে চুমু একে দিলো।রোশনিও মুচকি হেসে বলে উঠলো…

__আজ কি খাবি বল…? আজ যা খেতে চাইবি তাই রান্না করে খাওয়াবো।আজ সারাদিন মজা করবো….

আয়াশতো একথা শুনে ভিষন খুশি।রোশনির গালে আরো একটা চুমু দিয়ে রোশনির সাথে রান্না ঘরে চলে এলো।রোশনি ফ্রিজ থেকে মাংশ বের করে রেখে সবকি কাটতে শুরু করলো।আর আয়াশ ডেস্কের উপর পা ঝুলিয়ে বসে ডেইরিমিল্ক খেতে লাগলো।

চলবে……

(রি-চেইক করা হয়নি।বানানের ভুলগুলো নিজ দায়িত্বে শুধরে নিবেন।ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here