#শেষ বিকেলের আদর❤️
#রিত্তিকা ইসলাম
পর্ব : ১৫
🌸
ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড কোম্পানির মস্ত বড় গেটের সামনে দাড়িয়ে আছে রোশনি।সাদা রঙের কুর্তিটা তখন ঘামে ভিজে বিশ্রী এক অবস্থা।বিরক্তি আর চাপা রাগে চোখ দুটোও কিছুটা লাল হয়ে এসেছে।সূর্যের তাপে কপালে জমে থাকা ঘাম গাল বেয়ে গলায় এসে পড়ছে।রোশনি ওড়না উচিয়ে সূর্যের থেকে বাচার সূক্ষ্ম চেষ্টা চালালো।এই পাতলা ওড়নাতে কি আর রোদের হাত থেকে বাচা সম্ভব?তাই বৃথা চেষ্টা বাদ দিয়ে ওড়না দিয়ে কপাল আর গলার ঘাম মুছে নিল রোশনি।গেটে নির্বিকার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকা দারোয়ানকে এই মুহূর্তে আস্ত বিরক্তকর বস্তু মনে হচ্ছে।গোটা দারোয়ানের গুষ্টিকে ধরেই উগান্ডা পাঠানোর চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।দশ দশটা মিনিট ধরে তেল লাগিয়েও ব্যাটা ভেতরে ঢুকতে দিল না।এমন একরুখো খারুস লোককে দারোয়ান হিসেবে রাখার কোনো কারনই খুজে পেল না রোশনি।কথা বলার স্টাইলটাও মাশআল্লাহ সেই।ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি কোম্পানির দারোয়ান হয়ে নিজেকে কি মনে করছে কে জানে..? একটা কোম্পানিরই তো দারোয়ান,,,,। তো তার এত এ্যাটিটিউড কিভাবে হতে পারে..? রোশনি বুঝে গেছে,,,,কোম্পানির দারোয়ানের এমন এ্যাটিটিউড থাকলে কোম্পানির মালিকের তো আকাশ সমান এ্যাটিটিউড থাকা স্বাভাবিক।এই মুহূর্তে আবারো অধির চৌধুরির উপর রাগ লাগছে।নিজের মতোই দারোয়ান রেখেছে ব্যাটা।এদিকে সূর্যের তাপ বেড়েই চলেছে।রোশনি কাধে ঝুলানো ব্যাগটা শক্ত করে ধরে দারোয়ানের দিকে এগিয়ে গেলো।একটু মিনতি টিনতি করে যদি ঢুকতে দেয়।নয়তো আর কিছুক্ষন এই রোদের মধ্যে দাড়িয়ে থাকলে নির্ঘাত ওকে আর এই দুনিয়ায় পাওয়া যাবে না।রোশনি মুখটা যথা সম্ভব মায়া মায়া করে লোকটার দিকে এগিয়ে গেলো।রোশনিকে দেখেই আবারো বিরক্তিতে ভ্রু কুচকালো লোকটা।রোশনির আবার আসাতে যেন সে চরম বিরক্ত।লোকটা বিরক্ত হোক বা বিরক্তিতে ডুবে যাক তাতে রোশনির কি…?এমন অসভ্য মালিকের অসভ্য দারোয়ানদের ডুবে যাওয়ায় উচিত।রোশনি চোখে মুখে মায়া মায়া করুন ভাব এনে নরম গলায় বলে উঠলো….
__প্লিজ আঙ্কেল,,,,ভেতরে যেতে দিন না…।এই রোদের মধ্যে দাড়িয়ে থাকা যায় বলুন..? মাথা টাথা ঘুরে যদি পড়ে টরে যায় তখন এর দ্বায় কে নেবে বলুন..? আপনি নিবেন…? আর আপনার মালিক যদি ব্যাপারটা জেনে আপনার চাকরিটা কেড়ে নেয় তখন কি খুব একটা ভালো হবে ব্যাপারটা..? তাই বলছি এতো ঝামেলা হওয়ার চাইতে যেতে দিন আমায়..?আর আমাকে দেখে কি আপনার টেরোরিস্ট মনে হচ্ছে যে ভেতরে গিয়ে বোম টোম মেরে সব উড়িয়ে দিবো…?
রোশনির মায়া মায়া মুখ দেখে ক্ষনিকের জন্যে লোকটার মায়া লাগলেও শেষের কথাটা শুনে সোজা হয়ে দাড়ালেন।সন্দিহান চোখে কিছুক্ষন রোশনির মুখের দিকে চেয়ে রইলেন।যদিও মুখ দেখে মনে হচ্ছে না সে টেরোরিস্ট তবুও খুব সহজে কাউকে বিশ্বাস করাও যায় না।মুখ দেখে কি আর মানুষ চেনা যায়..? কখনোই না।এই তো তার বিয়ের জন্যে পাত্রী দেখতে গিয়ে মেয়েটাকে দেখেই তার ভিষন মায়া মায়া লেগেছিল।মেয়েটার মুখ দেখে মনে হয়েছিল সহজ সরল মায়াবি একটা মেয়ে।তাই এক মুহূর্ত দেরি না করে সেদিনই বউ করে ঘরে এনেছিল।কিন্তু বিয়ের দুদিন পরই তো সে তার রং পালটেছে।সেই সহজ সরল দেখতে মেয়েটাই তার উপর শাষন চালানো শুরু করলো।বউয়ের ভয়ে সে সিংহ থেকে ভেজা বিড়াল হয়ে গেল।এরপর থেকে সে কখনোই এই মায়াবি চেহারার মেয়েদের বিশ্বাস করে না।মায়াবি চেহারার অধিকারি মেয়েরা সহজেই মানুষকে তাদের বশে করে ফেলতে পারে।তাই এই মুহূর্তে কিছুতেই সে রোশনিকে বিশ্বাস করতে চায় না।আর সে একজন দায়িত্ববান দারোয়ান।পরিচয় ছাড়া কাউকে সে কিছুতেই ভেতরে যেতে দিতে পারে না।লোকটা চোখ মুখ কুচকে বলে উঠলো…
__দেখেন ম্যাডাম,,,,অপরিচিত কাউকে ভেতরে যেতে দেওয়ার অনুমতি আমার কাছে নেই।এখানে প্রবেশ করতে হলে আপনার এই অফিসের কার্ড লাগবে যাতে স্যারের সিগনেচার থাকবে।এখানে যারা কাজ করে তাদের সবার কাছেই আছে।কার্ড ছাড়া কাউকে যেতে দেওযা হবে না। এখন এখান থেকে যান,,,বিরক্ত কইরেন না….
লোকটার কর্কশ গলায় বলা কথা কানে যেতেই চোখ মুখ কুচকে শক্ত চোখে তাকালো রোশনি।এতে লোকটার মধ্যে কোনো ভাবান্তর দেখা গেলো না।রোশনি রাগ নিয়ে গেটের একপাশে এসে দাড়ালো।অধির চৌধুরির মতোই বেয়াদব তার দারোয়ান।রোশনি মনে মনে লোকটাকে ইচ্ছে মত ধুতে লাগলো।এরপর হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো আটটা চল্লিশ বাজে।রোশনি ব্যাগ থেকে ফোন বের করে আবারো অন করার চেষ্টা করলো।কিন্তু আগের মতোই মাঝপথে অফ হয়ে গেলো।দারোয়ানের উপর থেকে রাগ সরে গিয়ে নিজের উপর লাগছে।কাল রাতে জয়ের গান শুনতে শুনতেই যে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিল বুঝতেই পারেনি ও।সকালে যে ফোনটা চার্জে লাগাবে সেটাও মনে নেই।ফোনের ব্যাটারি শেষ হওয়ায় এই কর্কশ লোকটার কর্কশ কথা গুলো শুনতে হলো ওর।দাদি,আদি বা নাতাশা এদের মধ্যে কেউ একজনের কাছে ফোন করতে পারলেই এখানে চাতক পাখির মত অপেক্ষা করতে হতো না।রোশনি ব্যাগ থেকে বোতল বের করে পানি খেয়ে বোতল ব্যাগে রাখতেই চোখ গেলো সাহিলের গাড়ির দিকে।সাহিল আর নাতাশা গাড়িতে করে আসছে।ওদের দুজনকে দেখেই জানে পানি এলো রোশনির।রোশনি দারোয়ানের দিকে কটমট করে তাকিয়ে মনে মনে বলে উঠলো,,,এবার দেখি কি করে তুই আমাকে আটকাস ফাজিল ব্যাটা।
সাহিলদের গাড়ি গেটের কাছাকাছি আসতেই রোশনি দৌড়ে এল।রোশনিকে দেখে সাহিল ওখানেই গাড়ি থামালো।নাতাশা মুচকি হেসে গাড়ির দরজা খুলে রোশনির সামনে গিয়ে দাড়ালো।সাহিল গাড়ির দরজা দিয়ে মুখ বের করে ওদের ভেতরে আসতে বলে গাড়ি স্টার্ট দিতেই দারোয়ান গেট খুলে দিলো।নাতাশা রোশনির দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকালো।
__এই গুড়িয়া,তোমার মুখ এমন লাল দেখাচ্ছে কেন…?এনি প্রবলেম…?
রোশনি দারোয়ানের দিকে কটমট করে তাকিয়ে বলে উঠলো….
__প্রবলেম আমার নয় ওনার।সব দোষ ওনার।উনি আমায় ভেতরে যেতে দেন নি।অনেকক্ষন ধরে রোদে দাড়িয়ে থেকে এই অবস্থা।আপনি ওকে বকে দিন তো আপু…
রোশনির কথায় নাতাশা ভ্রু কুচকে তাকালো দারোয়ানের দিকে।সে যে একটা মস্ত ভুল করে ফেলেছে সে ব্যাপারে মোটামুটি নিশ্চিন্ত সে।মেয়েটা যে ওর মালিকদের পরিচিত সেটাও বুঝে গেছে।মেয়েটা যে বারবার বলেও ছিলো তাকে নাতাশা ম্যাডাম আসতে বলেছে।কিন্তু কথাটা বিশ্বাসই করতে পারে নি। ওই যে,,,, মায়াবি দেখতে মেয়েদের সে আর বিশ্বাস করে না।তবে এই অপরাধে যদি তার চাকরিটা চলে যায় তাহলে তার বউ তাকে শিল পাটায় একবারে পিষে ফেলবে সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।যে করেই হোক চাকরিটা বাচাতেই হবে।লোকটা অসহায় মুখ করে বলে উঠলো……
___সরি ম্যাডাম।আমি বুঝতে পারি নি উনি আপনাদের পরিচিত।আপনি তো জানেন অধির স্যারের আদেশ,,কার্ড ছাড়া কাউকে যেন ঢুকতে না দিই।আই এম সরি ম্যাডাম,,,
___ওকে।কিন্তু পরের বার আর এই ভুলটা যেন না হয়।
__ওকে ম্যাডাম।এমন ভুল আর হবে না।সরি ম্যাডাম…
লোকটার মুখে সরি আর ম্যাডাম শব্দটা শুনে বেশ খুশি খুশি ফিল হচ্ছে রোশনির।ব্যাটা কিছুক্ষন আগেও এ্যাটিটিউড দেখিয়ে কথা বলতে ছিলো আর এখন সব এ্যাটিটিউড ফুসসস।নাতাশা রোশনিকে নিয়ে ভেতরে চলে গেলো।কিছুটা যেতেই চোখে পড়লো পাশাপাশি মাথা তুলে দাড়িয়ে থাকা রাধাচূড়া আর কৃষ্ণচূড়া গাছ।লাল হলুদ ফুলে ছেয়ে আছে গাছ দুটো।বরাবরই ফুলের প্রতি ভিষনভাবে আসক্ত রোশনি।মুগ্ধ হয়ে দেখতে লাগলো ও।এদিকে নাতাশা পাশে রোশনিকে না পেয়ে পিছনে ফিরতেই দেখে রোশনি মুগ্ধ চোখে উপরের দিকে তাকিয়ে আছে।নাতাশা মুচকি হেসে রোশনিকে ডাকতেই রোশনি নাতাশার সাথে ভেতরে চলে যায়।এলিভেটরে ঢুকতেই এলিভেটরের দরজা বন্ধ হয়ে যায়।আর দরজা বন্ধ হতেই রোশনি কিছুটা ঘাবড়ে যায়।রোশনির বেশ কিছু ফোবিয়া আছে।তার মধ্যে ক্লাস্ট্রোফোবিয়া আর নিক্টফোবিয়া সব থেকে বেশি প্রভাব ফেলে রোশনির উপর।রোশনি নাতাশার কাছ ঘেষে দাড়ায়।নাতাশাও বুঝতে পারে রোশনি হয়ত বন্ধ জায়গায় ভয় পায় তাই নাতাশাও রোশনির এক হাত ধরে দাড়িয়ে থাকে।
রোশনি সব কিছু ঘুরে ঘুরে দেখছে।পরিষ্কার ঝকঝকে চারপাশ।বিভিন্ন ডিজাইনের সব ড্রেসের কালেশন চারপাশে।প্রতিটা ড্রেসই ভিষন সুন্দর আর ইউনিক।রোশনি অবাক চোখে সব কিছু দেখতে দেখতেই সামনের দিকে এগোতে থাকে।চারপাশে চোখ বুলাতে গিয়ে সামনে দিয়ে যে কেউ আসছে সেদিকে খেয়ালই করে নি রোশনি।সামনে এগুতেই কারো বুকে খেলো এক ধাক্কা।রোশনি হাত তুলে মাথায় হাত ঘষতে ঘষতে সামনে তাকাতেই থমকে গেল।ভেবেছিল সামনের মানুষটাকে কয়েকটা কঠিন কথা শুনিয়ে ছাড়বে।কিন্তু সামনের মানুষটাকে দেখে সেই সাহসটা আর দ্বিতীয়বার আর মনে এলো না।তাই চুপ করেই দাড়িয়ে রইলো।অধির নিজেও ফোনে কথা বলতে বলতে আসায় সামনে রোশনিকে খেয়াল করে নি।রোশনি দেখে অধির ফোন কেটে সোজা হয়ে দাড়ালো।রোশনি এখানে কি করছে সেটা ভাবতেই ভ্রু কুচকে তাকালো।যে মেয়ের থেকে দুরে থাকার চেষ্টা করছে নিয়তি বার বার তার কাছেই নিয়ে আসছে।অধির পকেটে হাত ঢুকিয়ে সরু চোখে তাকালো।অধিরকে এভাবে তাকাতে দেখে রোশনির নিজের কাছে কেমন অস্বস্তি বোধ হচ্ছে।কিছুক্ষন চুপ থেকে অধির গম্ভির গলায় বলে উঠলো…
___তুমি এখানে কি করছো…? কি জন্যে এসেছো এখানে…?
রোশনি চোখ তুলে আস্তে করে বলে উঠলো…
__নাতাশা আপু আমায় আসতে বলেছিল।
__নাতাশা…? কিন্তু কেন…?
__সেটা তো আমি জানি না।আমাকে আসতে বলেছিল তাই এসেছি….
অধির আর কিছু না বলে সোজা সামনের দিকে হেটে চলে গেলো।রোশনিও কিছুক্ষন অধিরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে দির্ঘশ্বাস ফেলে নাতাশাকে খুজতে চলে গেলো।কিছুক্ষন খোজাখুজি করে পেয়েও গেল।নাতাশা আর সাহিল মিলে নতুন কিছু ড্রেসের ডিজাইন দেখছে।রোশনি এসে নাতাশার পাশে দাড়াতেই সাহিল বলে উঠলো…
___তো কেমন লাগছে আমাদের অফিস…?
রোশনিও মুচকি হেসে মাথা নাড়িয়ে জবাব দিলো।সাহিল আর নাতাশা কাজ করছে আর রোশনি দাড়িয়ে আছে ওদের পাশে।কাজের ফাকে ফাকে তিনজনে টুকটাক গল্পও করছে।তখন প্রায় সাড়ে নয়টার বেশি বাজে।দিদাম হেলতে দুলতে হাই হিল পায়ে এগিয়ে এসে ওদের সামনে দাড়াতেই নাতাশা বলে উঠলো…
___ওহ তো আপনি এসে গেছেন…? সরি ইয়ার,,,,আমরা না টাইম মতো কাজ শুরু করে ফেলেছি।আপনার জন্যে ওয়েট করার দরকার ছিলো তাইনা..? উই আর সো সরি।আমরা আমাদের ভুলটা স্বীকার করছি….
নাতাশার দাতে দাত চেপে বলা কথা শুনে বেক্কল হাসলো দিদাম।দিদামের এমন হাসি দেখে মেজাজটা আরো গরম হয়ে গেল নাতাশার।একেতো দেরি করে এসেছে তারউপর এই বেক্কলমার্কা হাসি…!!! রিডিকিউলাস…..।মেয়েটাকে ঠাটিয়ে একটা চড় মারতে ইচ্ছে করছে নাতাশার।নাতাশা চেয়ার ছেড়ে উঠে দিদামকে টেনে একটা রুমে নিয়ে গেল।যেখানে মডেলদের সাজগোজ করানো হয়।এরপর দিদামকে তৈরি করে ফটোশুটের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হলো।নাতাশা ফিরে এসে দেখে সাহিল কাগজে কিছু ড্রেসের ডিজাইন তৈরি করছে।নাতাশা গিয়ে ধপ করে সাহিলের কোলের উপর গিয়ে বসে পড়লো।সাহিলও দুহাতে নাতাশার কোমর জড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।নাতাশা সাহিলের চুলগুলো নাড়তে নাড়তে বলে উঠলো….
___রোশনি কোথায়…? এখানেই তো ছিল…
___এখানে বসে বোর হচ্ছিলো তাই চারপাশটা দেখতে বেরিয়েছে।আশেপাশেই আছে হয়তো….।আচ্ছা আমার হবু বউ কি আজ আমার সাথে বাইরে লাঞ্চ করতে যাবে…?
খুশিতে নাতাশার চোখমুখ চিক চিক করে উঠলো।একগাল হেসে বলে উঠলো….
___সত্যি…??
সাহিলও মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললো।ঠিক লাঞ্চের সময়ে অফিসের বাইরে গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো সাহিল।মিনিট দুয়েক অপেক্ষা করার পর দেখলো নাতাশা হেটে আসছে।সাহিল মুচকি হেসে একটু জোরেই নাতাশাকে ডেকে উঠলো…
____মিস নাতাশা জামান…?
নাতাশা আশে পাশে তাকিয়ে সাহিলকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো….
____জ্বি আমাকে বলছেন সাহিল স্যার…?
সাহিল মাথা দুলি হ্যা বলতেই গাড়ির দিকে এগিয়ে এলো নাতাশা।সাহিলের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো..
___জ্বি বলুন সাহিল স্যার… কি বলতে চান
সাহিল স্টেয়ারিং এ হাত রেখে বে উঠলো…
___আসলে আমি এখানে আমার হবু বউয়ের জন্যে অপেক্ষা করছি।বাইরে লাঞ্চ করতে যাবো তো তাই…
___আচ্ছা…।তো আপনার হবু বউ জানে এ কথা…?
সাহিলও বেশ কন্ফিডেন্ট নিয়ে বলে উঠলো…
___ইয়াহ অফকোর্স। কারন আমাদের এমনটাই কথা হয়েছিল।
নাতাশা মনে পড়ছে না এমন ভাব করে বলে উঠলো….
___কিন্তু আমার তো এমন কিছু মনে পড়ছে না।
সাহিলও আফসোসের সুর তুলে বলে উঠলো…
___কি আর করা তাহলে..? আমি বরং অফিস স্টাফদের মধ্যে কোনো এক সুন্দরির সাথে চলে যায়….
সাহিলের কথা শেষ হতেই নাতাশা ফট করে বলে উঠলো…
___ও হ্যা হ্যা।আমার মনে পড়ে গেছে।আমাদের তো বাইরেই লাঞ্চ করার কথা ছিল…।
নাতাশা তড়িঘড়ি করে গাড়ির দরজা খুলে সিটে বসে পড়ে।নাতাশার এমন কান্ডে হাসিতে ফেটে পড়ে সাহিল।এরপর গাড়ি স্টার্ট করে চলে যায় রেস্টুরেন্ট।
__________________
রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে গাড়ি পর্যন্ত আসতেই নাতাশার চোখ যায় রাস্তার পাশে দাড়িয়ে থাকা ফুচকাওয়ালার দিকে।সাহিলকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে….
___সাহিল ওই দেখো ফুচকাওয়ালা দাড়িয়ে।
সাহিল ভ্রু কুচকে বলে ওঠে….
___তো…? ওনার কি দাড়িয়ে থাকার কথা ছিলো না…?
___উফফ তুমি না বেশি কথা বলো সব সময়।আমি ফুচকা খাবো…. চলো চলো….
___নাতাশা,,,মাত্র না তুমি এতো এতো খাবার খেয়ে এলে..? এইটুকু পেটে ফুচকা কোথায় রাখবে এখন…?
নাতাশা চোখমুখ কুচকে বলে উঠলো…
___তুমি আমাকে খাবারের খোটা দিচ্ছো..? ছিঃ এই ছিলো তোমার মনে..? বাড়ি ফিরে তোমার নামে দাদির কাছে আমি বিচার দিবো।আর একটা কথা,,,,মেয়েরা সারাদিন ভাত না খেয়েও থাকতে পারবে কিন্তু চোখের সামনে ফুচকা দেখে সেটা না খেয়ে থাকতে পারবে না।এখন কথা না বলে চলো…
নাতাশা সাহিলের হাত ধরে টেনে ফুচকাওয়ালার কাছে নিয়ে গেলো।ফুচকাওয়ালাকে দুই প্লেট ফুচকা দিতে বলতেই সাহিল চোখ মুখ কুচকে বলে উঠলো…
___আমি এসব খাবো না এখন..? আমার পেটে এতো জায়গা নেই।তুমি শুধু তোমার জন্যে অর্ডার করো…
___ও হ্যালো মিষ্টার সাহিল চৌধুরি।আমি আমার জন্যে অর্ডার করেছি।
__মানে কি..? তুমি দুইপ্লেট ফুচকা খাবে..?
__চাইলে তো আরো খেতে পারবো।কিন্তু আপাততো দুই প্লেটের বেশি পেটে ধরবে না।
নাতাার কথায় সরু চোখে তাকালো সাহিল।ফুচকাওয়ালা ফুচকা দিতেই নাতাশা টপাটপ ফুচকা মুখে পুড়তে লাগলো।সাহি শুধু ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।প্লেটের শেষ ফুচকাটা মুখে ঢুকাতেই সাহিল পানির বোতল এগিয়ে দিলো ওর দিকে।ঝালে ওর চোখ মুখ অনেকটা লাল হয়ে গেছে।নাতাশা সাহিলের হাত থেকে পানির বোত কেড়ে নিয়ে ঢকঢক করে পানি খেতে লাগলো।সাহিল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফুচকাওয়ালার বিল দিয়ে নাতাশার দিকে তাকাতেই ভ্রু কুচকে গেলো সাহিলের।নাতাশা চোখ বন্ধ করে নাক দিয়ে কিছুর গন্ধ বোঝার চেষ্টা করছে।সাহিল কিছু বলবে তার আগেই নাতাশা চোখ খুলে বলে উঠলো…
___কিছুর স্মেইল পাচ্ছো…?
সাহিল মাথা নাড়িয়ে না বলতেই নাতাশা বলে উঠলো…
___কোথাও হালিম রান্না হচ্ছে।আশেপাশেই কোথাও।আমি স্মেইল পাচ্ছি….
নাতাশার চোখ মুখ খুশিকে চকচক করছে।সাহিল নাক মুখ কুচকে বলে উঠলো…
__আমি এমন কোনো স্মেইল পাচ্ছি না নাতাশা..
___এই তো আমি পাচ্ছি।তুমি কেন পাচ্ছো না..? চলো খুজে দেখি…
নাতাশা সামনে এগুতে নিলেই সাহিল নাতাশার হাত ধরে আটকায়।নাতাশা চোখ ছোট ছোট করে তাকাতেই সাহিল বলে ওঠে…
__এখন আর কিছু খাবে না তুমি।এসব খেলে পেটে সমস্যা হবে।
__কিন্তু আমি…
নাতাশাকে কথা শেষ করতে না দিয়ে সাহিে বলে ওঠে…
___আচ্ছা আজ নয়।অন্য একদিন খাওয়াবো…এখন চলো…
সাহিল নাতাশাকে এনে গাড়ির দরজা খুলতেই নাতাশা গোমড়া মুখ করে সিটে বসে পড়লো।সাহিলও এসে ড্রাইভিং সিটে বসে পড়লো।স্টেয়ারিং এ হাত রেখে নাতাশার দিকে তাকালো।
__প্লিজ মন কারাপ করো না।আচ্ছা প্রমিস,,,কাল তুমি যা যা খেতে চাইবে সব খাওয়াবো।
নাতাশা মুচকি হেসে বলে উঠলো….
__পাক্কা প্রমিস…
__হুম পাক্কা প্রমিস।
সাহিল গাড়ি স্টার্ট দিতে যাবে তার আগেই নাতাশার চোখ যায় গাড়ির সামনে দিয়ে হেটে যাওয়া দুটো মেয়ের দিকে।গাড়ির গ্লাস সাদা হওয়ায় বাইরে থেকেও স্পষ্ট সাহিলকে দেখতে পাচ্ছে মেয়ে দুটো।সাহিলের দিকে তাকিয়ে ওরা কি যেন বলছে আর মিট মিট করে হাসছে।নাতাশা চোখ মুখ শক্ত করে গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো।গাড়ির ভেতর থেকেই সাহিল বলে উঠলো,,কোথায় যাচ্ছো..?….কিন্তু নাতাশা উত্তর না দিয়েই চলে গেলো।নাতাশা মেয়ে দুটোকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো…
___কি সমস্যা তোমাদের..?দেখে চোখ ভরেছে নাকি বাড়িও নিয়ে যেতে চাও…?
মেয়ে দুটো নাতাশার কথা বুঝতে না পেরে বলে উঠলো…
__এক্সকিউজ মি…
__ও এক্সকিউজ মি।একটা পরপুরুষকে এভাবে দেখতে তোমাদের লজ্জা করে না..? আবার মিটমিট করে হাসাও হচ্ছিলো…?
ওদের মধ্যে একজন বলে ওঠে….
__কি সব ফালতু কথা বলছেন…?
নাতাশা চোখ রাঙিয়ে বলে ওঠে…
___আমি ফালতু কথা বলছি..? আর তোমরা যে আমার স্বামির দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছিলে সেটা খুব ভালো নাহ..?
সাহিল দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে ওদের কাছে চলে আসে।নাতাশাকে এক হাতে জড়িয়ে বলে ওঠে…
__কি হয়েছে..?আর ওরা কারা…?
নাতাশা সাহিলের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে…
___এই অসভ্য মেয়েগুলো তোমায় দেখছিল।চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছিলো একদম।আমি বলতে আসছি দেখে উল্টো আমাকেই ফালতু বলছে।তোরা ফালতু,,,ফাজিল মাইয়া…
___আর ইউ ম্যাড…? এক্সকিউজ মি…কি সব বাজে কথা বলে চলেছেন?
___কি আমাকে পাগল বলা…? দেখাচ্ছি মজা…
নাতাশা ওতের দিকে তেড়ে যেতে গেলেই সাহিল ওকে নিজের সাথে শক্ত করে ধরে আটকায়।মেয়েদুটোকে ইশারায় সরি বলে চলে যেতে বলে।মেয়ে দুটোও অদ্ভুদ চোখে নাতাশার দিকে একবার তাকিয়ে চলে যায়।নাতাশা তবুও ছুটার চেষ্টা করছে।যেন ছাড়া পেলেই ওদের গিয়ে মারবে।সাহিল নাতাশার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে….
__নাতাশা,,,রিলেক্স। সবাই দেখছে..? কি করছো…?
সাহিলের কথায় চোখ মুখ শক্ত করে নাতাশা বলে উঠলো…
__তুমি আমায় আটকালে কেন..? ওই দুটো পেত্নিকে তো আমি মেরেই ফেলতাম।তোমার দিকে তাকিয়ে হাসছিল।যদি নজর লেগে যেতো তো…?
___নজর সরানোর জন্যে তুমি আছো তো….।এবার শান্ত হও প্লিজ।সবাই তাকিয়ে আছে..
সাহিলের কথায় কিছুটা শান্ত হলো নাতাশা।আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো রাস্তার অনেকেই তাকিয়ে আছে।নাতাশা সাহিলের হাত ধরে এনে গাড়িতে বসতে বলে নিজেও বসে পড়লো।গাড়ি স্টার্ট করে সাহিল দুষ্টু হেসে বলে উঠলো…
___ইউ আর সো জেলাস গার্ল নাতাশা…?তোমার মনে যে এতো হিংসা আছে জানাই ছিলো না…
সাহিলের কথায় চোখ রাঙিয়ে তাকালো নাতাশা।
___হ্যা আমি জেলাস।আমার মনে অনেক হিংসা।আর থাকবেই বা না কেন..? আমার ফিয়েন্সিকে অন্য মেয়েরা চোখ দিয়ে গিলে খাবে আর আমি চুপচাপ বসে বসে দেখবো..? কোনো বাঙালি মেয়েই এটা সহ্য করবে না যে তার হবু স্বামিকে অন্য কোনো মেয়ে চেক আউট করে হাসুক।আা তুমি না অাটকালে তো ওদের চুলগুলোই টেনে টুনে ছিড়ে দিতাম।ফাজিল মাইয়ার দল….
নাতাশার কথায় মুচকি হাসলো সাহিল।মেয়েটা যে ওকে ভিষন ভালোবাসে সেটা স্পষ্ট সাহিলের কাছে।দেখতে ম্যাচিউরড লাগলেও মাঝে মাঝে একদম ছোট বাচ্চাদের মত বিহেভ করে।তবে এতো কিছুর মধ্যে ওকে নিয়ে নাতাশার পজেসিভনেস সব থেকে বেশি ভালো লাগে সাহিলের।সাহিল মুগ্ধ চোখে নাতাশার মুখের দিকে তাকায়।নাতাশাকে টেনে ওর মাথা নিজের বুকে লাগিয়ে গাড়ি ড্রাইভ করতে থাকে।আর নাতাশাও সাহিলের সাহিলের বুকের সাথে মিশে ওর হার্টবিট শুনতে থাকে।
চলবে…….