শেষ বিকেলের আদর❤️পর্ব : ১৬

0
3929

#শেষ বিকেলের আদর❤️
#রিত্তিকা ইসলাম
পর্ব : ১৬

🌸
গোটা আকাশ সূর্যের তপ্ত রোদে উজ্জল হয়ে আছে।শেষ বিকেলেও রোদের তাপ এতটুকুও কমে নি।শরির ঘেমে নেয়ে বিশ্রী অবস্থা তৈরি হচ্ছে।অফিসের গার্ডেন এরিয়াতে দিদাম সহ আরো পাচ জন ছেলে মেয়ের ফটোশুট হচ্ছে।দিদাম সাদা রঙের লম্বা ডিজাইনার গাউন পড়ে ফুলে মোড়া দোলনায় বসে পোজ দিচ্ছে।অধির কফি মগ হাতে পুল থেকে কিছুটা দুরে দাড়িয়ে সাহিলের সাথে টুকটাক কথা বলছে।নাতাশা দিদামকে নিয়ে ব্যস্ত।এই গরমে মেকআপ নিয়ে বেশ প্যারা খেতে হচ্ছে ওদের।লাঞ্চের দিকে আদিও এসে হাজির হয়েছে।তার নাকি বাড়িতে একা বোর লাগছিল।তাই সোজা এখানে এসে হাজির।তবে এখানে এসে তাকে খুব একটা চোখে পড়ছে না কারো।অফিসের সুন্দর সুন্দর মডেলদের সাথে সে ব্যস্ত।বোরিং নেসটা কাটাতেই তো তার এখানে আসা।তবে এখানে থাকা সব ফি-মেইল মডেলরায় ওর সিনিয়র।সিনিয়রদের সাথে ফ্ল্যাট করা অন্যদের কাছে অস্বস্তিকর হলেও আদির মধ্যে তেমন কোনো ভাবান্তর দেখা যাচ্ঝে না।সে দিব্যি তার কাজ করে যাচ্ছে।রোশনি এতোক্ষন এদিকেই ছিলো
।এভাবে বসে থাকতে ওর ভিষন বোরিং লাগছে।এই মুহূর্তে পিয়াকে ভিষন মিস করছে।মেয়েটার মধ্যে অদ্ভুদ একটা পাওয়ার আছে।মুহূর্তেই যেকোনো খারাপ পরিস্থিতিতেও মানুষকে হাসানোর অদ্ভুদ এক ক্ষমতা আছে।তবে আদির মধ্যে এই পাওয়ারটা দেখতে পায় রোশনি।আদিও নিমিষেই মন ভালো করে দিতে পারে।কিন্তু ছেলেটা মেয়েদের দেখলে তাকে আর খুজে পাওয়া যাবে না।এই যেমন এখন পাওয়া যাচ্ছে না।রোশনি ফোন হাতে নিয়ে বাগানের এক কোনায় এসে দাড়ালো।পিয়ার নাম্বারে ডায়াল করলো।প্রথম বারেই কল রিসিভ করলো পিয়া।ওপাশ থেকে কিছুটা ক্লান্ত গলায় হ্যালো বলে উঠলো পিয়া।পিয়ার বিষন্ন গলা শুনে কপাল কুচকে গেল রোশনির।যে মেয়েটা সব সময় হাসি খুশিতে মেতে থাকে তার গলায় এমন বিষন্নতা মানায় না।রোশনি চট করে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো,

_পিয়া,,,? ঠিক আছিস তুই….?তোর গলা এমন শোনাচ্ছে কেন..? আঙ্কেল কেমন আছে..?

ওপাশ থেকে গোপনে দীর্ঘশ্বাস ফেললো পিয়া।পিয়া বোঝে না রোশনি কিভাবে তার মন খারাপটা বুঝে যায়?এমন বুন্ধু পেতেও ভাগ্য লাগে।সেদিক দিয়ে পিয়া নিজেকে ভাগ্যবতীই মনে করে।তবে মা হীন মেয়ে আদৌও ভাগ্যবতী হয় কিনা তা জানা নেয় পিয়ার।তবে আল্লাহর কাছে পিয়া সব সময় শুকরিয়া আদায় করে।কারন আল্লাহ তার মাকে কেড়ে নিয়ে রোশনির মত বন্ধুকে তার জিবনে পাঠিয়েছে।যে বিনা বাক্যে বুঝে যায় তার মন খারাপ।আজকাল তো মানুষকে ধরে ধরেও যদি বলা হয় আজ আমার মন খারাপ, তবু সে বিশ্বাস করে না।নাটক ভেবে পাশ কেটে চলে যায়।পিয়া দ্রুত নিজেকে সামলে নিলো।রোশনির থেকে অনেক কিছুই ও শিখেছে।তার মধ্যে একটা হলো কখনো কারো সামনে কাদতে নেই।কান্নাটা শুধু এবং শুধুই নিজের।যেটা দেখার অধিরকারও শুধু নিজের।অন্যকে নিজের চোখের পানিয়ে দেখিয়ে কোনো লাভ নেই।বরং যে দেখবে সে মজা নিবে।কি দরকার নিজের কষ্ট অন্যের কাছে প্রকাশ করে তাকে মজা দেওয়ার।পিয়া চোখ বুজে নিজেকে সামলে মৃদু হাসলো।

_বাপরে এতো প্রশ্ন এক সাথে?আমাকে বলার সুযোগটা তো দিবি নাকি?আমিও ঠিক আছি আর বাবাও এখন মোটামোটি সুস্থ্য আছে।

পিয়ায় কথায় খুব একটা স্বস্তি পেলো না রোশনি।রোশনির কেবলই মনে হতে লাগলো এই হাসি দিয়ে পিয়া কিছু লুকাতে চাইছে।

_তুই সত্যিই ঠিক আছিস তো?

_বললাম তো রে বাবা আমি ঠিক আছি।এখন তুই যদি এটা শুনে খুশি না হোস যে আমি ঠিক আছি তাহলে বলবো আমি ঠিক নেই।এবার খুশি তো?

কথাটা বলেই মৃদু হাসলো পিয়া।সন্দিহান গলায় প্রশ্ন ছুড়লো রোশনি,

_আমার কেন বিশ্বাস হচ্ছে না তুই ঠিক আছিস?

_কারন তুই এটা বিশ্বাস করতে চাইছিস না তাই।আচ্ছা আমার কথা বাদ দে।ওখানে কেমন লাগছে…?

_একদমই ভালো লাগছে না।বোর হচ্ছি ভিষন।তোকে মিস করছি খুব।

ওপাশ থেকে আস্তে করে বলে উঠলো পিয়া,,,আমিও,,,….কথাটা বলতেই চোখ থেকে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো।পিয়ার বলা কথাটা বুঝতে না পেরে রোশনি বলে উঠলো,

_কিছু বললি?

_না তো কিছু বলি নাই।

_তুই কি কাদছিস পিয়া? বলনা দোস্ত কি হইছে?

পিয়া নিজেকে সামলে নিলো তাড়াতাড়ি।
_কাল একটু দেখা করতে পারবি রোশনি? বাড়িতে না। অন্য কোথা।যেখানে অপ্রিয় কেউ থাকবে না।শুধু তুই আর আমি।আমার ভিষন কান্না পাচ্ছে রে রোশনি।কিন্তু কাদতেই পারছি না।তোর সামনে কাদতে চায় আমি।তুই বলিস না,,, কান্না শুধু নিজের। অন্য কাউকে দেখাতে নেই।আমি কারো সামনে কাদতে পারছি না দোস্ত।তোর সামনে কাদতে চায় আমি। প্লিজ আমার সাথে দেখা কর।

কথাগুলো বলতে বলতেই ফুঁপিয়ে উঠলো পিয়া।পিয়াকে এমন করে কথা বলতে কখনো দেখেনি রোশনি।কি হয়েছে পিয়ার ভাবতেই কপাল কুচকে গেল রোশনির।

_পিয়া? শান্ত হ তুই।কি হয়েছে বল আমায়?সবটা না বললে কি করে সাহায্য করবো তোকে? প্লিজ কান্না করিস না।তোর কান্না আমার সহ্য হচ্ছে না।তুই কোথায় বল।আমি এক্ষুনি আসছি।কোথায় আছিস তুই?

পিয়া চোখ মুছে নিজেকে সামলে নিলো।ধরে আসা গলা ঝেড়ে বলে উউলো,
_আমি ম্যামোরি ক্যাফে টেরিয়াতে আছি।তোর এখন আসতে হবে না।কাল সময় করে দেখা করিস।

_ক্যাফে টেরিয়া মানে?তুই ওখানে কি করিস?

_আরাফের সাথে এসেছি।

সন্দিহান গলায় প্রশ্ন ছুড়লো রোশনি,

_আরাফের সাথে মানে? এই আরাফের বিষয়টা আমার কাছে ঠিক পরিষ্কার হচ্ছে না।হঠাৎ করে কোথা থেকে তোর এই কাজিন এসে হাজির হল? এর আগে কখনও ওনার কথা বলিস নাই? কিছু দিন ধরে দেখছি এই আরাফ ছেলেটা তোর পিছন পিছন সব জায়গায় এসে হাজির হচ্ছে।সাহিল ভাইয়ার এংগেজমেন্টের দিন,এমন কি তার আগের দিনও তোর এই কাজিন এসে তোকে নিয়ে গেল।এখন ওর সাথে ক্যাফেতেও এসেছিস।ও তোর ঠিক কেমন কাজিন আমায় বলবি?দুই দিন আসতে না আসতেই ওর সাথে ক্যাফে চলে এলি? আর আন্টি? সব থেকে বড় কথা আন্টি তোদের আসতে দিল?আমি বুঝে গেছি এই আরাফের মধ্যেই কোনো ঘাপলা আছে।ওর বিষয়টা প্লিজ আমার কাছে ক্লিয়ার কর।

_ফোনে না।কাল সামনা সামনি তোর সব প্রশ্নের উত্তর দেবো।

_কাল না।তুই আজ সন্ধায় আমাদের বাড়ি চলে আসবি।রাতে আমার কাছে থাকবি আর আমার সব প্রশ্নের উত্তর দিবি।আন্টির সাথে আমি কথা বলে নেবো।

_ওকে।তাহলে রাতে দেখা হচ্ছে।এখন রাখি রে।আরাফ অপেক্ষা করছে।

_আচ্ছা।বাই

_বাই।

রোশনি ফোন কাটতেই চোখ বুজে লম্বাশ্বাস নিলো পিয়া।ওয়াশরুমের আয়নায় চোখ রাখতেই নিজেকে ভিষন অসহায় দেখালো।আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বের দিকে কিছুক্ষন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে চোখে মুখে পানি দিলো পিয়া।টাওয়ালে চোখ মুখ মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করে ওয়ারুম থেকে বেরিয়ে এলো।কর্নারের একটা চেয়ারে গা এলিয়ে বসে আছে আরাফ।সামনে রাখা কফির মগ দুটো আগের মতোই অবহেলায় পড়ে আছে।লেমন কালারের শার্টে খুব একটা মন্দ দেখাচ্ছে না আরাফকে।গায়ের চাপা রঙটার জন্যেই হয়তো আরো বেশি আকর্ষনীয় দেখাচ্ছে ওকে।পিয়ার মস্তিষ্ক বলছে এটাই তোর নিয়তি।একেই মানিয়ে চলতে হবে।যা হচ্ছে হতে দে।নিয়তির লেখা বদলানো যায় না।এই ছেলের সাথেই মানিয়ে নে।সব স্বামি স্ত্রীর মধ্যে যে ভালোবাসা থাকতে হবে এমন তো কোনো মানে নেই।কিছু কিছু সম্পর্ক তো মানিয়ে নেওয়ার মতোও হয়। আরাফের সাথে নাহয় মানিয়ে নেওয়ার সম্পর্কেই আটকে থাকবি।সব সময় নিজের কথা না ভেবে আপন জনদের কথাও তো ভাবতে হবে।কিন্তু মন বলছে মানিয়ে নেওয়াকে সম্পর্ক বলে না। বলে বোঝাপড়া।আর স্বামি স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা না থাকলে সেখানে সুখের দেখা মেলে না।বোঝা পড়া সম্পর্কে সুখের দেখা পাওয়া যায় না।নিয়তিকে হয়ত পালটানো যায় না।তাই বলে সব কিছু নিয়তির উপর ছেড়ে দেওয়াটাও বোকামো।আর পিয়াকে তো এমন টিপিক্যাল মেয়েদের মত ইমোশোনাল হয়ে নিয়তির কাছে হার মেনে নেওয়া মানায় না।পিয়া চুপ করে চেয়ারে বসে পড়লো।শরিরের জড়ানো নিল রঙের শার্টে শরিরের রঙটা আরো বেশি উজ্জল দেখাচ্ছে।পনি টেইল করা চুল,চোখে লেপ্টে যাওয়া কাজল, ঠোটের নুড লিপস্টিকে এই মুহূর্তে বেশ আকর্ষণীয় দেখাচ্ছে পিয়াকে।আরাফ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে পিয়ার দিকে।কিন্তু পিয়ার সেদিকে খেয়াল নেই।সে এক দৃষ্টিতে টেবিলের দিকে তাকিয়ে কিছু ভাবছে।কিছুক্ষন দুজনেই চুপ থেকে মুখ খুললো আরাফ।

_তুমি ঠিক আছো?

আরাফের হঠাৎ কথায় চমকে তাকালো পিয়া।নিজেকে সামলে নিয়ে মৃদু মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললো।এরপর দুজনে কফি শেষ করে ক্যাফে থেকে বেরিয়ে গেলো।এদিকে পিয়ার সাথে কথা বলার পর থেকে শান্তি পাচ্ছে না রোশনি।বার বারই নানা রকম অদ্ভুদ চিন্তা এসে মাথায় ভিড় করছে।পিয়ার সাথে কথা না বলা পর্যন্ত শান্তি নেই।রোশনি ফোনটা ব্যাগে ঢুকিয়ে ওখানে রাখা টেবিলের উপর রেখে দিলো।এরপর আনমনে হাটতে লাগলো এদিক ওদিক।পিয়াকে এমন অন্যমনস্ক দেখে ভ্রু কুচকে তাকালো অধির।অনেকক্ষণ ধরেই অধির খেয়াল করছে রোশনি অন্যমনস্ক হয়ে কিছু ভাবছে।অধির বাকা চোখে ওকেই দেখছিলো এতোক্ষন। অধির না চাওয়া স্বত্বেও অবাধ্য চোখ ওর দিকেই তাকাতে চাইছে।অবাধ্য মন ওর কথায় ভাবতে চাইছে।অধির সব সময় নিজের ইচ্ছে মত চলে।নিজের বানানো নিয়মে চলে।কিন্তু এই মেয়ে তার সব নিয়ম ভেঙে চূড়ে তাকে এলোমেলো করে দেয়।এদিকে পিয়ার চিন্তায় রোশনি এতোটায় মগ্ন হয়ে গেছে যে কখন পুলের একদম ধারে চলে এসেছে বুঝতেই পারে নি।আনমনে একপা পেছাতেই সোজা গিয়ে পুলের পানিতে পড়লো।ঝপাৎ শব্দ শুনতেই সবার দৃষ্টি তখন পুলের দিকে।অধির তখন ফোনে ই-মেইল চেইক করছে।শব্দটা কানে যেতেই শব্দের উৎস ধরে তাকাতেই চোখ গেলো পুলের পানিতে হাবুডুবু খাওয়া রোশনির দিকে।অধির মনে মনে ভাবতে লাগলো মেয়েটা কি সাঁতার জানে না? এভাবে হাবুডু খাচ্ছে কেন? আর পানিতে পড়লোই বা কি করে?অধির পুলের অনেকটা পাশেই ছিল।আদি দৌড়ে এসে অধিরকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,

_আরে ভাইয়া দাড়িয়ে আছো কেন? বাচাও রোশনি দি কে।ডুবে যাচ্ছে তো…

আদির কথায় হুশ এলো অধিরের।রোশনিকে যে বাচাতে হবে এই সামান্য কথাটাও যেন মাথায় আসছে না ।অধিরকে এমন দাড়িয়ে থাকতে দেখে আদি অধিরকে ধাক্কা দিয়ে পানিতে ফেলে দিলো।আকস্মিক ঘটনায় ঘাবড়ে গেলেও নিজেকে সামলে রোশনির দিকে সাঁতরে এগিয়ে গেল অধির।অধিরকে কাছাকাছি পেতেই দু হাতে অধিরকে আকড়ে ধরলো রোশনি।শক্ত করে গলা জড়িয়ে ধরলো দু হাতে।অধিরও রোশনির কোমর জড়িয়ে উচু করে ধরে রাখলো।আদি ফটোগ্রাফারের হাত থেকে ক্যামেরা কেড়ে নিয় ওদের দুজনের ছবি তুলতে থাকলো।অধিরের শরির মৃদু কাপছে।রোশনি তার এতোটা কাছে ভাবতেই সাড়া শরিরে কাটা দিয়ে উঠছে।অধিরের নিজেকে কেমন উন্মাদ উন্মাদ মনে হচ্ছে।অধিরের হাত আলগা হয়ে আসতেই আরো শক্ত করে চেপে ধরলো রোশনি অধিরকে।কাশতে কাশতে বলে ওঠলো,

_প্লিজ আমায় ছেড়ে দিবেন না।আমি পানি ভিষন ভয় পায়।প্লিজ ধরে থাকুন।

রোশনির কথা বলার সময় ওর হালকা মোটা ঠোট অধিরের গলা স্পর্শ করে যাচ্ছিলো।এতে যেন অধিরের পুরো শরির জমে যাচ্ছে।অধির শক্ত করে রোশনিকে নিজের সাথে চেপে ধরলো।যেন ছেড়ে দিলেই কেউ নিয়ে নেবে।সাহিলের কথায় দুজনের হুস এলো।

_অধির ওকে তাড়াতাড়ি পানি থেকে উপরে নিয়ে আয়…

অধির রোশনিকে ওভাবে ধরেই পানি থেকে উপরে নিয়ে এলো।রোশনি এতোটাই ভয় পেয়ে গেছে যে অধিরকে এখনও পর্যন্ত শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে।আর অধিরও রোশনিকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে দাড়িয়ে আছে।চারপাশে যে সবাই হা হয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে সে দিকে যেন ওদের খেয়ালই নেই।এদিকে অধির রোশনিকে এভাবে জড়িয়ে ধরে রাখায় মুখ গোমড়া করে দাড়িয়ে আছে দিদাম।বেশ কিছুক্ষন পর রোশনি নিজেকে সামলে আশেপাশে তাকাতেই দেখে সবাই হা করে তাকিয়ে আছে।রোশনি দ্রুত অধিরকে ছেড়ে দেয়।এতোক্ষন ওর খেয়ালই ছিলো না যে ও অধিরের এতোটা কাছে। রোশনি ছেড়ে দিতেই অধিরও রোশনিকে ছেড়ে দেয়।দুজনেই ভিজে চুপচুপ।অধিরের গায়ের সাদা শার্টটা ভিজে পুরো শরিরটাই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।অধির হাত দিয়ে ভেজা চুলগুলো পেছনে ঠেলে দিতেই চোখ যায় রোশনির ভেজা শরিরের দিকে।রোশনির গায়েও সাদা জামা।পানিতে ভিজে শরিরের প্রত্যেকটা খাঁজ স্পষ্ট ফুটে উঠছে।ফর্সা শরিরের অনেক কিছুই স্পষ্ট।রোশনি ভয়ে রিতিমত কাপছে।ভেজা চুল গলায় আর পিঠে লেপ্টে আছে।পাতলা ওড়নাটা গলার সাথে মিশে আছে।এই অবস্থায় ভিষন আবেদনময়ি লাগছে রোশনিকে।অধির আর এক মুহূর্ত দেরি না করে আবারো রোশনিকে জড়িয়ে নিলো নিজের সাথে।দুহাত দিয়ে বুকের সাথে চেপে ধরে ওকে নিজের মধ্যে লুকানোর চেষ্টা করতে লাগল।হঠাৎ এমন হওয়ায় চমকে গেছে রোশনি।সেই সাথে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে বাকি সবাই।অফিসের ইমপ্লোয়িরা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।সবার মনেই চাপা কৌতুহল।তারা অধিরকে খুব ভালো করে না চিনলেও এটুকু জানে তাদের স্যার মেয়েদের থেকে সবসময় দূরত্ব বজায় রেখে চলে।এমনকি দিদাম যে তার হবু বউ তার থেকেও সব সময় দূরে দূরে থাকে।কিন্তু এই মেয়ের সাথে..!!!সাহিল,নাতাশা ওরাও কিছু বুঝলো না।দিদাম যেন এবার কেদে দেবে এমন মুখ করে দাড়িয়ে আছে।আদি দিদামের এমন মুখ দেখে বাকা হেসে ওর কয়েকটা ছবি তুলে নিলো।সাহিল চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই আদি অধিরদের ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।অধির যে রোশনিকে জড়িয়ে ধরে আছে এতে ওর অবাক লাগছে না।ওর এই মুহূর্তে ছবি তোলাতেই যেন মেইন ফোকাস।ওর এতো অবাক হওয়ার সময় নেই।

রোশনি অধিরের হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্যে নড়তেই অধির আরো শক্ত করে চেপে ধরলো রোশনিকে।রোশনি চোখ তুলে আশেপাশে তাকাতেই দেখলো সবাই ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে।নাতাশা আর সাহিলেরও একই অবস্থা।মিনমিন করে বলে ওঠে রোশনি,

_কি করছেন? ছাড়ুন আমাকে।সবাই তাকিয়ে আছে?

অধিরের এতে কোনো ভ্রুক্ষেপ হলো না।সে আগের মতোই দাড়িয়ে রইলো।অধির আদিকে ডাক দিতেই আদি তাড়াতাড়ি ওদের কাছে এসে দাড়ালো।

_টেবিল থেকে আমার কোর্টটা নিয়ে আয়।ফাস্ট..

_ওকে।

ওদের থেকে কিছুটা দুরে টেবিলের উপর অধিরের কোর্ট রাখা।আদি দ্রুত গিয়ে কোর্টটা নিয়ে এসে অধিরের হাতে দিল।

_কোনো প্রশ্ন ছাড়া এটা পড়ে নেবে।

রোশনি প্রশ্ন করতে গিয়েও অধিরের চোখ দেখে থেমে গেলো।অধির নিজেই হেল্প করলো রোশনিকে ওটা পড়াতে।অধির রোশনির থেকে কিছুটা দুরে দাড়িয়ে নাতাশাকে ডাকতেই নাতাশা এসে রোশনিকে নিয়ে ভেতরে চলে গেলো।অধির দাড়িয়ে থাকা সবকর দিকে তাকিয়ে ধমকে উঠলো,

_হোয়াট..?এভাবে দাড়িয়ে আছো কেন সবাই? যাও,,যে যার কাজে যাও।

অধিরের ধমকানিতে আর কারো দাড়িয়ে থাকার সাহস হলো না।শুধু দিদাম মুখ গোমড়া করে দাড়িয়ে আছে। দিদামের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো অধির,

_তুমি এখনো দাড়িয়ে আছো কেন? নিজের কাজে যেতে বলেছি।

দিদামও চোখ মুখ কুচকে চলে গেলো।সাহিল অধিরের দিকে এগিয়ে এসে বলে উঠলো,

_ভিজে গেছিস একদম।যা গিয়ে চেঞ্জ করে আয়।

অধিরও চেঞ্জ হতে চলে গেলো।আদি ক্যামেরা হাতে সাহিলের পাশে এসে দাড়ালো।সাহিলের কাধের উপর হাত রেখে বলে উঠলো,

_দুজনকে দারুন মানায় তাই না সাহিল?

সাহিল কিছু না বুঝে ভ্রু কুচকে তাকালো।

_আরে অধির ভাইয়া আর রোশনি দির কথা বলছি।ভাইয়ার বিয়েটা ওই ইউনিভার্সের সাথে না হয়ে রোশনি দির সাথে হলেই ভালো হবে।

আদির কথার পিঠে কিছু বললো না সাহিল।এদিকে নাতাশা রোশনিকে একটা রুমে নিয়ে এলো।হাতে একটা এ্যাশ কালারের লম্বা জামা ধরিয়ে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।রোশনিও একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে দরজা বন্ধ করে আয়নার সামনে দাড়ালো।শরিরে অধিরের কোর্ট জড়ানো।কিছুক্ষন আগের কথা মনে উঠলেই লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে রোশনির।এই প্রথম কোনো ছেলের এতোটা কাছে ছিল ও।ছেলেদের নিয়ে ভাবার কখনো সময়ই হয়ে ওঠেনি।বন্ধু বলতেও পিয়াই ছিল একমাত্র।তারপর হঠাৎ করেই একদিন জয়ের সাথে দেখা।তারপর অদ্ভুদভাবেই ওর সাথে বন্ধুত্ব।কিন্তু কখনো ওর হাতটাও ধরা হয়ে ওঠেনি রোশনির।রোশনি একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে গা থেকে কোর্টটা খুলে ফেললো।আয়নায় নিজেকে দেখতেই আপনা আপনি চোখ বড় হয়ে গেল রোশনির।গায়ের সাথে ভেজা সাদা জামাটা একদম লেপ্টে আছে।শরিরের প্রতিটা খাঁজ স্পষ্ট।জামার উপর দিয়েও ফর্সা পেটটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।নিজেকে এভাবে দেখতে নিজেরই লজ্জা লাগছে।এভাবে ও অধিরের সামনে ছিল ভেবেই লজ্জায় কুঁকড়ে উঠলো।অধিরের হঠাৎ করেই আবার জড়িয়ে ধরার কারনটাও স্পষ্ট হলো।অধিরের প্রতি আবারো একটা ভালো ধারনা তৈরি হলো রোশনির।লোকটা নিজেকে যেমন দেখায় আসলে তেমন উনি নন।রোশনি জামাটা হাতে নিয়ে চেঞ্জ করতে চলে গেল।অন্যদিকে অধিরও ভেজা শার্টটা পাল্টে কালো রঙের একটা শার্ট পড়ে নিয়েছে।আধভেজা চুলগুলো কপালে এসে পড়ে আছে নিয়ম মেনে।অধির চেয়ারে গা এলিয়ে বসে আছে।চোখ বন্ধ করতেই রোশনির মুখটা ভেসে উঠছে বারবার।অধির চোখ খুললো না।এভাবে থাকতেই ভালো লাগছে।চোখ বুজে রোশনিকে ফিল করতেই অন্য রকম একটা অনুভূতি হচ্ছে অধিরের।যেই অনুভূতির সাথে পরিচিত নয় অধির।তবুও এভাবেই ভালো লাগছে।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here