শেষ বিকেলের আদর❤️পর্ব : ৫৩

0
3738

#শেষ বিকেলের আদর❤️
#রিত্তিকা ইসলাম
পর্ব : ৫৩

🌼
-জানি বলেই বলছি অধির।কিছু কথার রেশ ধরে বাড়ি ছেড়ে চলে আসবি?মানছি বড় মা যা করেছে অন্যায় করেছে।কিন্তু তার ভুলের জন্যে তুই কেন বাড়ি ছাড়বি? তোকে ছাড়া ওখানে আমরা ভাল থাকবো সেটা মনে হয় তোর?

অধির কিছু বলার আগেই ফোঁড়ন কাটল আদি।ভ্রু নাচিয়ে বলল,

-বলো বলো।উত্তর দাও এবার।তবে আমার কি মনে হয় জানিস সাহিল? ভাইয়া আসলে প্রাইভেসির জন্যে এখানে এসে থাকছে।একটু আগেই তার নমুনা দেখলি না?

আদির কথায় অপ্রুস্তত হয়ে চোখ নামিয়ে নিল রোশনি।পিয়া দাতে দাত চেপে আদির পিঠে কিল বসালো।আদি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে অধিরের দিকে তাকাল।অধির ভ্রু কুচকে আদির দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে আদিকে উপেক্ষা করে সাহিলের দিকে তাকালো ।বাম হাতে দাড়ি ঘষে বলে উঠল,

-এসব ছাড়।এই বিষয়ে পরে কথা বলা যাবে।বিডিতে কবে এলি?

-রাতে ফিরেছি।রায়হান শেখ নাকি বিজনেস রাইভালস থেকে একেবারে ফ্রেন্ডশিপ করতে চাইছে? সন্ধ্যায় পার্টি থ্রো করেছে।উই আর অল ইনভাইটেড।

-অফিসে থাকতে রায়হান শেখ ফোন করেছিলেন।ইনভাইট যখন করেছে তখন যেতে তো হবেই।তোরা আড্ডা দে আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

-হুম যা।

অধির চলে যেতেই প্রকান্ড জোরে কিল পড়ল আদির পিঠে।নাক মুখ বিষিয়ে পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে রুদ্ধ চোখে তাকাল আদি।মাঝে মাঝে তার ছোট হওয়ার জন্যে আফসোস হয়।প্রচুর আফসোস।কেঁদে কেটে দুনিয়া ভাসিয়ে দেওয়ার মত আফসোস।আজ অধির, সাহিল বড় ভাইয়ের ট্যাগ ঝুলিয়ে যখন তখন তাকে কিল,ঘুষি মেরে বসে।বেচারা তাকে মুখ বুজে সবটা সহ্য করতে হয়।আল্লাহ যদি তাকে এমন কোনো ম্যাজিক্যাল পাওয়ার দিতো,,,যেটাতে চাইলেই যখন তখন অধির এবং সাহিলকে অবাক করে দিয়ে বয়সে সে তাদের থেকে বড় হয়ে যেত!!!তখন সেও “বড়”নামক শব্দটার পুরোপুরি ফায়দা লুটতো।কিন্তু আফসোস!!!এমনটা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়। তাই দিবা স্বপ্ন বাদ দিয়ে দুঃখি দুঃখি মুখ করে তাকালো আদি।তবে তার প্রতি সাহিলের মধ্যে কোনো মায়া লক্ষ করা গেল না।আদির দুঃখ দুঃখ ভাবকে আরো একটু বাড়িয়ে দিতে দ্বিতীয় বারের মত পিঠে চাপড় দিল সাহিল।ভ্রু কুচকে বলে উঠল,

-দিন দিন চরম লেভেলের বেয়াদব হচ্ছিস আদি? বড় ভাইদের সাথে কিভাবে বিহেভ করতে হয় সেটা তোর অবশ্যই শেখা উচিত।

আদি নাক ছিটকালো।বলল,

-ছোট ভাই এর সামনে বউকে টুপ করে চুমু খেয়ে ফেলাটা কোন ভদ্রতার মধ্যে পড়ে একটু বলবি?

-ছিঃ আদি!!!তোর সাথে সাথে তোর ভাষারও যে অধঃপতন হয়েছে বুঝতে পারছিস?বউকে চুমু দেওয়াটা অন্যায় কিছু না।বউকে চুমু দেওয়া যেতেই পারে।তাই বলে তুই বড় ভাইকে নিয়ে এভাবে বলবি?তোর ভাষা গত সমস্যা দূর করার জন্যে তোকে আবারো স্কুলে ভর্তি করানো উচিত।এই বিষয়ে ড্যাডের সাথে কথা বলতেই হবে।

আদির কাধ ঝাঁকিয়ে চোখে সানগ্লাস গুজে রুমের দিকে পা বাড়াল সাহিল।আদি হতভম্ব চোখে কিছুক্ষন চেয়ে থেকে ঠোট গোল করে তাকালো। কিছুটা উচু গলায় বলল,

-ভাষা গত সমস্যা আমার থেকেও তোর বেশি।আমি তো জাস্ট একবার চুমুর কথা বলেছি,,কিন্তু তুই দুই বার বললি? আমার যদি স্কুলে ভর্তি হতে হয় তবে তোকে তো নার্সারিতে ভর্তি করানো উচিত।

সাহিলের কান অবধি কথাগুলো পৌছালো কি না বোঝা গেল না।অনেক আগেই সে চোখের আড়াল হয়েছে।নাতাশা আর পিয়া এতোক্ষন মিটিমিটি হাসছিল তিন ভাই এর কান্ড দেখে।রোশনি তো আগেই প্রস্থান করেছে লজ্জার হাত থেকে বাঁচতে।নাতাশাও পা বাড়ালো রুমের দিকে।যেতে যেতে বলে গেল,

-তোরা তিন ভাইই হলি চরম লেভেলের অসভ্য।কেউ কাউকে ছাড়িয়ে যেতে দিস না।

——–

তিনটা গাড়ি পরপর ছুটে চলেছে পিচঢালা রাস্তা দিয়ে।প্রথম গাড়িতে রোশনি আর অধির।দ্বিতীয়টাতে নাতাশা আর সাহিল।এবং শেষের গাড়িতে পিয়া এবং আদি।আলাদা গাড়ি নেওয়ার একটাই কারন।প্রাইভেসি।তিন জনেরই যখন বউ আছে তখন প্রাইভেসি চাইই চাই।আদি একমনে ড্রাইভ করছিল।পিয়ার দিকে তার নজর নেই।মেয়েটাকে কত করে বলল রোশনি আর নাতাশার মত শাড়ি পড়তে কিন্তু না।বরাবরের মতোই শার্ট আর প্যান্ট পড়েছে।যদিও আদির তাতে ভ্রুক্ষেপ নেই।এই কয়েক দিনে মেয়েটা তার জিবন অর্ধেক জাহান্নাম বানিয়ে দিয়েছে।সোফায় শুয়ে শুয়ে এখন আর তার বিছানায় ঘুম আসে না।কি অদ্ভুদ!!!সারা জিবন কি তবে সোফাতেই কাটিয়ে দিতে হবে?আদি আড় চোখে একবার পিয়াকে দেখে নিয়ে ভ্রু কুচকে গাড়ি চালানোতে মন দিলো।পিয়া তখন একমনে ফোন নিয়ে ব্যস্ত।কয়েক মুহূর্ত বাদে হঠাৎ আদির প্রশ্নে ফোন থেকে দৃষ্টি সরালো পিয়া।ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করল,

-কিছু বললে?

আদি পিয়ার মুখটা একবার দেখে নিয়ে বলে উঠল,

-একটা প্রশ্ন ছিল।

-কি প্রশ্ন?

আদি বেশ আগ্রহ নিয়ে বলল,

-ABC এর মধ্যে B এর ঠান্ডা কেন লাগে?

পিয়া কিছু বুঝতে না পেরে বলে উঠল,

-মানে…?

-বললাম ABC অ্যালফাবেটে B এর ঠান্ডা কেন লাগে?

পিয়া ভ্রু কুচকে তাকালো।সন্দিহান গলায় বলল,

-এটা তোমার প্রশ্ন ছিল? যাই হোক,,,, ঠান্ডা কেন লাগে শুনি?

আদি মুচকি হেসে ফুল কন্ফিডেন্টের সাথে বলল,

-আমি জানতাম তুমি পারবে না।সবার মাথায় তো আর আমার মত বুদ্ধি নেই।আই এম সো প্রাউড অফ মাইসেল্ফ। ইউ নো হোয়াট….

আদির কথা শেষ হওয়ার আগেই বিরক্ত গলায় প্রশ্ন ছুড়ে বসল পিয়া,

-আবার শুরু হয়ে গেল বকবক।তুমি কোন মাসে কম কথা বলো বলবা একটু?

আদি কিছুক্ষন ভেবে নিয়ে বলে উঠল,

-আমার মনে হয় ফেব্রুয়ারি মাসে।

-মানে?সরি….কিভাবে?

-অন্যান্য মাসের তুলনায় ফেব্রুয়ারি মাসের দিন সংখ্যা কমে থাকে না? লজিক দেখেছো?এজন্যই আই এম প্রাউড অফ মাইসেল্ফ।

কথাটা বলেই একগাল হাসল আদি।পিয়া ভ্রু কুচকে কিছুক্ষন তাকিয়ে খেকে বিরক্ত গলায় বলে উঠল,

-হাই আল্লাহ্!!!এটা আমি কার পাল্লায় পড়েছি!!এই অসহ্য ছেলেটাকে যখন স্বামি হিসেবে দিয়েছোই তখন একে সহ্য করার ধৈর্যও দাও আল্লাহ্।

আদি সরু চোখে তাকালো।পিয়ার কথাগুলোকে সম্পূর্ন উপেক্ষা করে বলল,

-আচ্ছা এবার আমার প্রশ্নের উত্তরটা দাও।

-এই ফালতু প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার টাইম আমার নেই।

-পারবে না সেটা বলো।টাইমের দোহাই কেন দিচ্ছো?

পিয়া বিরক্ত হয়ে ঘুরে বসল আদির দিকে।দাতে দাত চেপে হাসার চেষ্টা করে বলল,

-ওকে।আমি মেনে নিচ্ছি আমি উত্তরটা জানি না।শান্তি হয়েছে এবার?

-হুম বোধহয় হয়েছে।আচ্ছা এবার উত্তরটা শুনো,,,,,ABC অ্যালফাবেটে B এর ঠান্ডা লাগে কারন “B”…AC(এসি/এয়ারকন্ডিশন) এর মাঝে থাকে।সেজন্যই B এর সম সময় ঠান্ডা লাগে।উফফ আদি,,,,আবারো লজিক!!!ইউ আর জিনিয়াস!!!

পিয়ার মাথা ধপধপ করছে।মনে হচ্ছে যে কোনো সময় মাথা টাথা ঘুরে যাবে।পিয়া বিরক্তির চরম পর্যায়ে পৌছে বলে উঠল,

-তোমার কাছে সাইনাইট বিষ হবে?যেটা জিব্বার উপর রেখে দিলেই মরে যাবো।তোমার জন্যে এর থেকে বেশি কষ্ট করে মরতে পারবো না।বিলিভ মি আদি….তোমার এসব ফালতু লজিক শুনে শুনে কোনো দিন সত্যি সত্যিই আমি সুইসাইড করে নিবো।তোমার বউ এর পরিচয়ে তোমাদের বাড়িতে আসাটা আমার একদমই উচিত হয় নি।এর জন্যে আমার যথেষ্ট আফসোস হচ্ছে।

আদি এবার সরু চোখে তাকালো।তিক্ষ্ম কন্ঠে বলল,

-এসেছো কেন তবে? তোমার কি মনে হয়…তোমাকে বউ হিসেবে পেয়ে আমি ধন্য হয়ে গেছি?তোমার থেকেও বেশি আফসোস আমার হয়।যবে থেকে বিয়ের খবরটা পাবলিশ হয়েছে তবে থেকে মেয়েরা আমার থেকে দূরে দূরে থাকে।আমাকে আগের মত পাত্তা দেয় না।সব হয়েছে তোমার জন্যে।তোমাকে বিয়ে করাটাই সব থেকে বড় আফসোস।আমার এতো অাফসোস হচ্ছে যে,,,,এখন আমি ফ্রাইজ সসের সাথে না,,, , পারলে আফসোসের সাথে খায়।আর তুমি….

আদিকে বলতে না দিয়ে চোয়াল শক্ত করে বলে উঠল পিয়া,

-আমি কিন্তু রেগে যাচ্ছি আদি।চুপ করবে তুমি?

আদি চাপা রাগ নিয়ে বলল,

-আজব!!!কথায় কথায় এতো রেগে যাওয়ার কি অাছে?দেখো তুমি তোমার এই রাগ কন্ট্রোল করো।নয়ত….

পিয়ার চোখ রাগিয়ে তাকালো।বললো,

-নয়ত?

পিয়ার শক্ত চোয়াল দেখে ভিমরি খেল আদি।অপ্রুস্তত হাসার চেষ্টা করে বলল,

-নয়ত আর কি!!!নয়ত আমি আমার রাগ কন্ট্রোল করে নিবো।

-গুড।সব সময় এমনটাই করবে।এখন আর একটাও বাজে কথা না বলে চুপ চাপ ড্রাইভ করো।

আদি আর কথা বাড়ালো না।বিরবির করতে করতে গাড়ি চালানোতে মন দিল।শেষ মেষ একটা গুন্ডি মেয়ের সাথে সংসার করতে হবে? জিবনটা বেদনা।

_

রোশনি অনেকক্ষণ ধরে লক্ষ করছে অধির বার বার তার দিকে তাকাচ্ছে।রোশনি এতোক্ষন চুপ করে থাকলেও এবার অধিরের দিকে ঘুরে বসল।বিরক্ত হয়ে বলল,

-এই আপনার সমস্যা কি হ্যা? কখন থেকে খেয়াল করছি আপনি বারবার আমার দিকে তাকাচ্ছেন।এক্সিডেন্ট করার প্ল্যান করেছেন নাকি?দেখুন এরকম কোনো ইচ্ছে থাকলে আমাকে নামিয়ে দিন।আমি এই বয়সে মরতে চাই না।আপনার মতি গতি আমার সুবিধার ঠেকছে না।মনোযোগ কোথায় আপনার?

অধির বোকা বোকা চোখে তাকাল।রুদ্ধ গলায় বলল,

-আমি ডিসট্র্যাক হয়ে যাচ্ছি সুইটহার্ট। পাশে এমন সুন্দরী বউ থাকলে মনোযোগ এদিক ওদিক হয়ে যাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।চলো না বাড়ি ফিরে যায়…..!!

শেষের কথাটা বেশ করুন শোনালো রোশনির কাছে।অধিরের দিকে কটমট করে কিছুক্ষন চেয়ে থেকে শক্ত গলায় বলল,

-কেন!!বাড়ি কেন যেতে হবে? আর কথায় কথায় এতো রোমান্টিক হয়ে যাওয়ার মানে কি? সকালে ওদের সামনে বিশ্রী একটা কান্ড ঘটিয়েও আপনার মন ভরে নি? আর একটা বাজে কথা বলবেন তো মাথা ফাটিয়ে দিবো একদম।চুপচাপ গাড়ি চালাবেন।আমার দিকে আর এক বার তাকালে চোখ কানা করে দিবো বলে দিলাম।

রোশনির শাষন মাখা কথায় অসহায় চোখে তাকালো অধির।অধিরকে সম্পূর্ন উপেক্ষা করে জানালার বাইরে দৃষ্টি রাখল রোশনি।এই মানুষটা দিন দিন ভিষনই নির্লজ্জ হয়ে যাচ্ছে।কথা বার্তায় লাগাম নেই,,,এমন কি ছোট ভাই -বউদের সামনেও লজ্জাজনক কাজ করে বসছে।কি বিশ্রী কান্ডটাই না হয়েছিল!!মনে পড়লে এখনো লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে রোশনির।সেই সাথে অধিরকে চলন্ত গাড়ি থেকে ধাক্কা দেওয়ার ইচ্ছেও মাথা চাড়া দিচ্ছে।অসভ্য লোক কোথাকার……।

——

পার্টিতে আসার পর থেকেই সাহিলের পাশে অতি আধুনিক লেভেলের একটা মেয়েকে ঘুরঘুর করতে দেখা যাচ্ছে।সাহিলও কি সুন্দর হেসে হেসে কথা বলে চলেছে মেয়েটার সাথে।কি আশ্চর্য!! ছেলেটা কি ভুলে গেল এখানে তার বউ নামক একটা প্রানীও আছে?নাতাশার ইচ্ছে করছে সাহিলের চুলগুলো টেনে ছিড়ে ফেলতে।বুড়িগঙ্গার স্পেশাল পানিতে ঘন্টাখানিক চুবাতে।এগুলো না হলেও দু চারটে কিল ঘুষি দেওয়া যেতে পারে।তবে জনসম্মুখে সেটা বোধহয় খুব একটা শোভনীয় দেখাবে না।নাতাশা ঠাই দাড়িয়ে ওদের কার্যক্রম লক্ষ করছিল।নাতাশার চাপা রাগটাকে আরো কিছুটা বাড়িয়ে দিয়ে পাচ মিনিটের মাথায় সাহিল এসে দাড়ালো নাতাশার সামনে।সাহিলের হাস্যজ্জল মুখটাকে এক পলক দেখে নিয়ে চট করে প্রশ্ন করল নাতাশা,

-কুতু্ব মিনারটা কে?

সাহিল বোধ বুঝলো না কথাটা।ভ্রু কুচকে বলল,

-কুতুব মিনার??কার কথা বলছো?

দাতে দাত চেপে উত্তর দিল নাতাশা,

-যাকে পেয়ে বউকে ভুলে গেছো তার কথায় বলছি।বুঝো নাই এখনো? আরো ক্লিয়ার করা লাগবে?

-ও তুমি আমিশার কথা বলছো?

-তাহলে কুতুব মিনারের নাম আমিশা!!আমিশা হোক বা আম তাতে আমার কাজ নেই।তুমি কেন ওই মেয়ের সাথে এতো হেসে হেসে কথা বলছিলে?কি সম্পর্ক ওর সাথে? এই তুমি ওর সাথে প্রেম করছো না তো?মাই গড,,,,!!তোমাদের মাঝে অ্যাফেয়ার চলছে?ইউ বোথ আর ইন রিলেশনশিপ?

-কি সব বলছো নাতাশা?তোমার মনে হয় না আমার প্রতি সন্দেহটা আজ কাল একটু বেশিই বেড়ে গেছে তোমার?তোমাকে বলেছিলাম না একটা মেয়ে ব্রীজের উপর থেকে লাফ দিয়ে সুইসাইড করতে চেয়েছিল? এটাই সেই মেয়ে।আর তুমি কি না কি সব বলে চলেছো?

নাতাশা কিছু বলবে তার আগেই ওদের পাশ কাটিয়ে যাচ্ছিলো আমিশা।নাতাশা হাত নাড়িয়ে আমিশাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল,

-হ্যালো আত্মহত্যার দোকান।

আমিশা ভ্রু কুচকে পেছনে ফিরে তাকাতেই হাতের ইশারাই কাছে ডাকলো নাতাশা।নাতাশার এমন ডাকে হতভম্ব চোখে তাকাল সাহিল।ভাগ্যিস কেউ শুনে নি। আমিশা কাছাকাছি এসে দাড়াতেই এক গাল হেসে বাম হাতে চশমা ঠিক করে দাড়ালো নাতাশা।আমিশা একবার সাহিলের দিকে তাকিয়ে নাতাশার দিকে দৃষ্টি ফেরালো।নরম গলায় বলল,

-আমাকে ডাকছিলেন?

-ওয়াও!! তোমার কন্ঠটা তো বেশ সুন্দর।হ্যা তোমাকেই ডাকছিলাম।

আমিশা হাসার চেষ্টা করে বলে উঠল,

-থ্যাংক ইউ বাট আমার নামতো আত্মহত্যার দোকান নয়।

-আসলে কি বলো তো?সাহিলের কাছে তোমার গল্পটা শুনে এই নামটাই হঠাৎ মাথায় এল।

-সাহিল আপনাকে বলেছিল আমার সুইসাইডের কথা?

নাতাশা কিছু বলবে তার আগেই নাতাশার কাধে হাত রেখে বলে উঠল সাহিল,

-এক্সচুয়েলি সি ইজ মাই ওয়াইফ।নাতাশা চৌধুরি।আমার লাইফের সমস্ত ঘটনায় ওকে বলাটা আমার অভ্যাস।তোমার বিষয়টাও ..

-ইটস ওকে।নো প্রবলেম।নামটা আমার পছন্দ হয়েছে।তবে একটা রিকুয়েস্ট…. আমার বাবার সামনে এই নামে ডাকবেন না।বাবা এই বিষয়ে জানেন না।জানলে হয়ত সত্যি সত্যিই ব্রীজ থেকে উনি নিজে আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবেন।

কথাটা বলেই সুন্দর করে হাসল আমিশা।ভদ্রতার খাতিরে নাতাশা সাহিলও মুচকি হাসল।কেউ একজন ডাকতেই ওদের থেকে বিদায় নিয়ে প্রস্থান করল আমিশা।নাতাশা সাহিলের দিকে তাকাতেই দেখল সাহিল ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।নাতাশা সেদিকে পাত্তা না দিয়ে টুপ করেই সাহিলের গালে চুমু দিয়ে বসল।সাহিলের কাশি উঠার মত অবস্থা।সাহিল ভীত চোখে আশে পাশে তাকালো না কেউ দেখে নি।সাহিল স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে নাতাশার দিকে কটমট চোখে তাকালো।তবে নাতাশার মধ্যে কোনো পরিবর্তন হল বলে মনে হল না।

——–

আদি চেয়ারে বসে খুব আরাম করে অরেঞ্জ জুস খাচ্ছিলো।সাধারনত এমন বোরিং পার্টিতে সে আসে না।সাহিল তাকে বগল দাবা করে না আনলে তাকে কখনোই এখানে পাওয়ার কথা না।এখানে তেমন কোনো সুন্দরী সিংগেল মেয়েও চোখে পড়ছে না।বিষয়টা দুঃখের।আদির দুঃখের মাঝেই সামনে এসে হাজির হল পিয়া।আদির ঠিক একটা চেয়ার পরেই রোগা পাতলা একটা ছেলে বসে আছে।ছেলেটার নজর পিয়ার দিকেই। পিয়া স্বাভাবিক ভাবেই আদিকে বলল,

-আদি ওপাশের চেয়ারটায় বসো।আমি বসবো।

আদি গ্লাসে শেষ চুমুক দিয়ে বিরস গলায় বলল,

-কেন? তুমি বসো ওই চেয়ারটাতে।

-আমি ওটাতে বসবো না।তুমি উঠে ওটাতে বসো।

-পারবো না।ওটাতে বসলে বসো নয়ত দাড়িয়ে থাকো।আমি আমার চেয়ার ছাড়ছি না।

-আদি প্লিজ।একটা দিন অন্তত ঝগড়া আর তর্ক করা বন্ধ করো।প্লিজ ওই চেয়ারটাতে গিয়ে বসো।

-বললাম তো পারবো না।আমি এটা বুঝতে পারছি না।ওখানে বসতে কি সমস্যা তোমার?

পিয়া কিছু বলবে তার আগেই ওয়েস্টার্ন ড্রেস আর হাই হিল পায়ে সামনে এসে দাড়ালো এক রমনি।ঠোট বাকিয়ে আদিকে উদ্দেশ্য করে বলল,

-এক্সকিউজ মি,,,,প্লিজ আপনি কাইন্ডলি ওই চেয়ারটাতে গিয়ে বসবেন?

আদির মুখের রঙ বদলালো।যাক এতোক্ষনে একটা মেয়ে পাওয়া গেল।আদি শার্টের কলার টেনে মুচকি হেসে বলে উঠল,

-ইয়া অফকোর্স।সুন্দরী মেয়ের জন্য শুধু চেয়ার কেন,,,পৃথিবী ছাড়তেও আপত্তি নেই।

-হাউ সুইট!!!থ্যাংক ইউ।

আদি চেয়ার ছেড়ে দিতেই মেয়েটা বসে পড়ল।মেয়েটার অগোচরে চুলগুলোকে হাত দিয়ে ঠিক করে নিয়ে প্রশ্ন করল আদি,

-তোমার নামটা এখনো জানা হলো না….।

-আই এম খুশবু।

-নাইস নেইম।মাইসেল্ফ আদিল।আদিল চৌধুরি।

ওদের কথোপকথনে মেজাজ গরম হয়ে যাচ্ছে পিয়ার। এতোক্ষন ধরে সে চেয়ারটা ছাড়তে বললো কিন্তু কানেই নিলো না।অথচ অন্য মেয়ের জন্য ঠিকই ছেড়ে দিল!!জনাব তো এতেও থেমে নেই।দুনিয়া ছাড়তেও নাকি তার আপত্তি নেই।অথচ তার বেলাতেই যত আপত্তি।পিয়ার ইচ্ছে করছে দুটোকেই লাথি দিয়ে পৃথিবীর বাইরে পাঠিয়ে দিতে।ওদের কথোপকথনের মাঝেই কপোট রাগ দেখিয়ে প্রশ্ন করল পিয়া।বলল,

-এতোক্ষন আমি প্লিজ প্লিজ করে অলমোস্ট মরে যাচ্ছিলাম। তবুও চেয়ার ছাড়লে না।অথচ এই মেয়ের এক প্লিজেই চেয়ার ছেড়ে দিলে?আমার প্লিজ কানে ঢুকে নি তোমার?

মেয়েটা ভ্রু কুচকে তাকালো পিয়ার দিকে।আদি বিরস গলায় বলল,

-তোমার প্লিজের স্পেলিং ভুল ছিল তাই কানে ঢোকে নি।এখন তোমার সাথে ঝগড়া করার মুড নেই। যাও এখান থেকে।

আদির কথা শেষ হতেই মেয়েটা বলে উঠল,

-হু ইজ সি?ইওর গার্লফ্রেন্ড অর ওয়াইফ?

আদি ঠোট বাকিয়ে বলল,

-এতো সুন্দর চেহারা আর এমন নেগেটিভ চিন্তা ভাবনা!!!গার্লফ্রেন্ড বা ওয়াইফ কোনোটাই নয়।ইনফ্যাক্ট তেমন ইমপর্টেন্ট কেউ নয়।ইউ জাস্ট ইগনোর হার।

পিয়ার হঠাৎ করেই কান্না পাচ্ছে।অভিমান করতে ইচ্ছে করছে।কথাটা কি আত্মসম্মানে আঘাত করলো? হয়ত…!!পিয়া দাড়ালো না।আদির সাথে তর্কও করলো না।অন্য সময় হলে হয়ত পাল্টা জবাব দিতো। তর্কাতর্কির এই পর্ব হয়তো আরো কিছুটা চলতো।কিন্তু এখন তেমন কিছুই হল না।পিয়া বিষন্ন মন নিয়ে কোনায় এসে দাড়ালো। খারাপ লাগার কারনটা ঠিক ধরতে পারছে না পিয়া।আদির তাকে চেয়ার না দেওয়াতে খারাপ লাগছে নাকি মেয়েটাকে চেয়ার ছেড়ে দেওয়ায় খারাপ লাগছে বুঝে উঠতে পারছে না পিয়া।নাকি তার পরিচয়টা না বলায় কান্না পাচ্ছে? জানা নেই পিয়ার।শুধু টুকু জানে তার কান্না পাচ্ছে।পৃথিবী ভাসিয়ে দেওয়ার মত কান্না পাচ্ছে।তবে সেই ইচ্ছেটা বেশিক্ষন টিকল না।হঠাৎই পেছন থেকে কেউ একজন ডেকে উঠল।পিয়া দ্রুত চোখ মুছে সামলে নিলো নিজেকে।পেছনে ফিরে তাকাতেই দেখল চেয়ারে বসা সেই পাতলা গড়নের ছেলেটা।পিয়া ভ্রু কুচকে তাকাতেই ছেলেটা হেসে বলে উঠল,

-হাই..!আই এম নাইম।

-কি চাই?

-না মানে….সবাই ডান্স করছে আর আপনি এখানে দাড়িয়ে আছেন।ব্যাপারটা অদ্ভুদ দেখাচ্ছে।দেখুন না আমিও পার্টনার পাচ্ছি না।সো ক্যান ইউ ডান্স উইথ মি?

পিয়া না করতে গিয়েও করল না।আদি আর মেয়েটা দিব্যি কোমর ধরে নাচানাচি করছে।তাহলে সে করতে দোষ কোথায়।পিয়া হাসার চেষ্টা করে ছেলেটার হাত ধরে ডান্স ফ্লোরে নিয়ে গেল।পিয়া নিজে থেকেই ছেলেটার হাত নিজের কোমরে রাখল।ছেলেটার খুশি দেখে কে…? যেন না চাইতেই হাতে চাঁদ পেয়ে গেছে।কয়েক সেকেন্ড বাদেই আদির নজর পড়ল পিয়ার উপর।ছেলেটার হাত পিয়ার কোমরে।বেশ কাছাকাছি দাড়িয়ে দুজনে ডান্স করছে।আদির চোখ মুখ মুহূর্তেই শক্ত হয়ে গেল।মেয়েটাকে ছেড়ে পিয়ার দিকে এগিয়ে এসে পিয়ার হাত ধরে টেনে নিয়ে এল কোনায়।পিয়া ঝাড়া মেরে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে রাগ দেখিয়ে বলল,

-প্রবলেম কি তোমার? এভাবে টেনে আনার মানে কি?

আদির ক্ষীপ্ত উত্তর,

-ওর সাথে এতো ক্লোজলি নাচার মানে কি? ওর থেকে দূরে থাকবে।ছেলেটা কি বিশ্রী ভাবে তাকাচ্ছিল তোমার দিকে কোনো আইডিয়া আছে?

পিয়া রুদ্ধ গলায় বলে উঠল,

-তাতে তোমার কি সমস্যা? আমি তো ইমপর্টেন্ট কেউ নই তাহলে কে আমার দিকে কিভাবে তাকালো তাতে তোমার কি? তুমিও তো ওই মেয়ের সাথে ক্লোজলি নাচছিলে.. আমি কিছু বলেছি? বলি নাই।তাহলে তুমি কেন আমাকে বলতে এসেছো?

আদি চোয়াল শক্ত করে জবাব দেয়,

-আমি আর তুমি বিষয়টা এক নয় পিয়া।

-কেন? তুমি যার সাথে নাচছিলে সেও তো একজন মেয়ে।ছেলে নিশ্চয় নয়? তোমরা ছেলে মেয়েতে নাচতে পারলে আমরা কেন পারবো না? আর আমি তোমাকে এতো জবাবদিহিই বা কেন করছি? আমার সামনে থেকে যাও আদি। চলে যাও এখান থেকে।

আদিকে ঠাঁই দাড়িয়ে থাকতে দেখে পিয়া নিজেই চলে এল।পিয়াকে একা দাড়িয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে এল রোশনি।পিয়ার থমথমে মুখটা ভাল করে দেখে নিয়ে প্রশ্ন করল,

-কি হয়েছে? মন খারাপ কেন?

পিয়া খানিক হাসার চেষ্টা করে বলল,

-অযথা মন খারাপ হবে কেন?আসলে ফোনের ব্যাটারি শেষ।তুই তো বাবাকে চিনিস।ফোন দিয়ে যদি দেখে নাম্বার বন্ধ তখন অযথায় চিন্তা করে প্রেসার বাড়াবেন।এখানে কোথাও প্ল্যাগ পয়েন্ট পাওয়া গেলে ফোনটা চার্জ করে নেওয়া যেত।

-তুই বরং বাড়ির ভেতরে গিয়ে দেখ।কোথাও না কোথাও সকেট পেয়েই যাবি।

-কিন্তু…!!

-কোনো কিন্তু না।আঙ্কেল চিন্তা করবেন।আমার ফোনটাও কাছে নেই যে আঙ্কেল আমার নাম্বারে ফোন দিলে কথা বলতে পারবি।তাই বলছি ভেতরে গিয়ে ফোন চার্জ করে নিয়ে আয়।

-আচ্ছা তাহলে ভেতরে গিয়ে দেখি।

-আমি আসবো তোর সাথে?

-না দরকার নেই।অধির ভাইয়া তোকে না দেখলে চিন্তা করবেন।আমি একা পারবো।

পিয়া বাগানের দিক থেকে চলে এসে বাড়ির ভেতরে ডুকলো।দুইতলা বিশিষ্ট ডুপ্লেক্স বাড়ি।বাড়ির ভেতরে কাউকে চোখে পড়ল না পিয়ার।সবাই বাগানের দিকে ব্যস্ত।পিয়া আশে পাশে তাকিয়ে কোনো সকেট না পেয়ে সিড়ি ভেঙে উপরে উঠতে লাগল।বিরবির করে বলল,

-এতো বড় বাড়িতে একটাও ইলেকট্রিক্যাল সকেট নেই?রিডিকিউলাস…..

পিয়া দো তলায় এসেও কোনো সকেট খুজে পেল না।হঠাৎ একটা রুমের দরজা খোলা দেখে এগিয়ে গিয়ে উকি দিলো রুমে।ভেতরে কেউ নেই।পিয়া যাবে কি যাবে না বুঝতে পারছে না।অবশেষে দ্বিধা নিয়েই পা বাড়াল রুমে। বিছানার পাশেই সকেট দেখে কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল।পার্স থেকে চার্জার বের করে ফোন চার্জে দিয়ে ফোন অন করল।রুমটা বেশ গোজগাজ।সুন্দর,পরিপাটি।তবে সেদিকে খুব একটা পাত্তা দিলো না পিয়া।মাথাটা কেমন ভারি ভারি লাগছে।ঘুরে ফিরে আদির বলা সেই একটা কথায় কানে বাজছে…”ইমপর্টেন্ট কেউ নয়”…..সত্যিই কি সে ইমপর্টেন্ট নয়? হবে হয়ত।পিয়া ছোট্ট শ্বাস টেনে নিজেকে সামলালো।এতোটা ইমোশন তার মানায় না।ছোট্ট একটা কথাটাতে কেদে কেটে ভাসিয়ে ফেলা তার প্রকৃতিতে পড়ে না।প্রায় পাচ মিনিটের মাথায় কারো পায়ের শব্দ পেয়ে চোখ তুলে তাকালো পিয়া।সেই রোগা পাতলা ছেলেটা।এখানে কেন এসেছে? পিয়া ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।ছেলেটা কোনো সংকোচ ছাড়ায় পিয়ার পাশে পরিপাটি বিছায় গিয়ে বসল।রুমটাকে দেখে নিয়ে বলল,

-রুমটা সুন্দর তাই না?

পিয়া ভ্রু কুচকে রেখেই বলল,

-হ্যা সুন্দর।কিন্তু তোমার এখানে বসাটা উচিত হয় নি।

ছেলেটা আগের মতোই বলল,

-কেন?এখানে বসলে কি সমস্যা? ওরা যখন আমাদের সকেট ব্যবহার করতে দিয়েছে তখন বিছানাও ব্যবহার করতে দেবে নিশ্চয়…।

ছেলেটা কি মিন করলো?পিয়ার খুব একটা সুবিধার মনে হচ্ছে না ছেলেটাকে।পিয়া যথেষ্ট শান্ত গলায় বলল,

-দেখো আমার মনে হচ্ছে তোমার কোথাও ভুল ধারনা হয়েছে।তোমার এসব কথাবার্তাতে আমি ইন্টারেস্ট নয়।তুমি এখান থেকে যেতে পারো।

ছেলেটা বিশ্রী হেসে বলে উঠল,

-চলে তো যাবোই।তার আগে আমরা কিছুটা সময় একা স্পেন্ড করি।

পিয়া বুঝলো ছেলেটা এখান থেকে যাবে না।আর সেও কোনো ঝামেলা করকে চাই না।পিয়া সিদ্ধান্ত নিল সে নিজেই এখান থেকে চলে যাবে।পিয়া সকেট থেকে চার্জার বের করে মোবাইল সহ পার্সে রেখে উঠে চলে আসতে নিলেই ছেলেটা সামনে এসে দাড়ায়।পিয়া চোখ মুখ শক্ত করে বলে,

-সামনে থেকে সরো।তোমার এসব থার্ডক্লাস কথা গুলো অন্য কাউকে বলো গিয়ে।ইট’স নট মাই কাপ অফ টি।আমি এখন ক্লায়েন্টের বাড়িতে আছি সে জন্য তোমাকে কিছু বলছি না।তবে এটা ভেবো না তোমার বিশ্রী কথা গুলো শুনার পরও আমি চুপ করে থাকবো।আমার রাস্তা থেকে সরো আর আমাকে যেতে দাও।আমি কোনো তামাশা করতে চাইছি না।

-আরে এতো রেগে যাচ্ছো কেন? সিগনাল দিয়ে এখন এতো এ্যাটিটিউড দেখাচ্ছো কেন? নাচের সময় তো নিজেই আমার হাত কোমরে রাখছিলে।আর এখন দেমাগ দেখাচ্ছো?অন্তত একটা সেলফি তো তুলতেই পারি।

কিছু বুঝে ওঠার আগেই ছেলেটা একটা সেলফি চট করে তুলে নিলো।পিয়া হালকা চেঁচিয়ে বলে উঠল,

-ফটো তোলা বন্ধ করো।আমি কি বলছি বুঝতে পারছো না? আমার সামনে থেকে সরো বলছি।

-ওকে ওকে।আমি আর সেলফি তুলছি না।তুমি যেতে পারো।এই একটা ফটোই যথেষ্ট।

পিয়া চোয়াল শক্ত করে তাকিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসতে নিতেই ছেলেটার বিশ্রী কথায় থেমে গেল।

-এমনিতেও এই ছবি আপলোড করলে অনেক রিয়্যাক্ট পাওয়া যাবে।আমাদের কতোটা ন্যাচারাল লাগছে দেখতে!!ছবিটা আমি নো ফিল্টার ক্যাপশনের সাথে পোস্ট করবো।আমাদের প্রথম ঘনিষ্ঠময় মূহুর্ত। ভালো হবে না ক্যাপশনটা?

পিয়া চোখ বুজে শ্বাস নিলো।আদির বলা তখনকার কথা গুলো ভেসে উঠলো চোখের সামনে।আদি বলেছিল ছেলেটা ভালো না।আদির উপর জিদ দেখিয়ে ওর সাথে নাচাটা একদমই উচিত হয় নি।

-দেখ ফটোটা ডিলিট করে দাও।আমার একদমই ভাল লাগছে না এসব তামাশা করতে।ডিলিট করো ছবিটা।

——-

অধিরদের এবার ফেরার পালা।রায়হান শেখের থেকে বিদায় নিয়ে ওরা মেইন গেটের কাছে এসে দাড়াতেই খেয়াল করল আদি এবং পিয়া কেউই নেই।

-আদি পিয়া কাউকেই তো দেখছি না।কোথায় ওরা?

সাহিলের কথার মাঝেই দেখা মিলল আদির।আদি কাছাকাছি এসে দাড়াতেই প্রশ্ন করল অধির,

-বাড়ি ফিরতে হবে। পিয়া কোথায়?

-পিয়া কোথায় সেটা আমিও জানি না।বেশ কিছুক্ষন ধরে দেখছি না।

তখনই রোশনি বলে উঠল,

-পিয়া তো বাড়ির মধ্যে গিয়েছিল মোবাইল চার্জ করতে।এখনো ভেতরেই আছে মনে হয়।

আদি ছোট্ট শ্বাস টেনে বলল,

-তোমরা বেরিয়ে যাও।আমি পিয়াকে নিয়ে আসছি।

-আচ্ছা সাবধানে আসিস।

ওরা চলে যেতেই বাড়ির ভেতরের দিকে পা বাড়ালো আদি।বসার ঘর পর্যন্ত পৌছেও পিয়াকে চোখে পড়ল না।আদি সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতেই পিয়ার কথা কানে এল।কথার আওয়াজগুলোকে অনুসরন করে দরজার কাছাকাছি পৌছাতেই হাতের মুঠো শক্ত হয়ে এল আদির।পিয়া ছেলেটাকে ছবি ডিলিট করতে বলছে আর ছেলেটার হাত থেকে ফোনটা নেওয়ার চেষ্টা করছে।কিন্তু ছেলেটা ফোনটা কিছুতেই দিচ্ছে না।উল্টে পিয়ার শরিরের দিকে বাজে নজরে তাকাচ্ছে।আদি চোখ বুজে শ্বাস নিয়ে রুমের ভেতরে ঢুকলো।কোনো কথা ছাড়াই পিয়ার হাত ধরে টেনে এনে রুমের বাইরে রেখে দরজা ভেতর থেকে লক করে দিল।পিয়া দরজায় আঘাত করতে করতে চিন্তিত গলায় ডাকতে লাগল আদিকে,

-আদি কি করছো? দেখো এটা আমার মামলা।তুমি এর মধ্যে ঢুকতে পারো না।বেরিয়ে এসো রুম থেকে।আদি?? দরজা খোলো।আদি…?

ভেতর থেকে মাইরের শব্দ ছাড়া আর কিছু শোনা যাচ্ছে না।পিয়ার ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে।এটা ক্লায়েন্টের বাড়ি।এখানে মারামারি করাটা এক দমই উচিত হচ্ছে না।পিয়ার কোনো কথাতেই দরজা খুললা না।প্রায় দুমিনিট পরে হাতে পিয়ার পার্স নিয়ে চোখ মুখ শক্ত করে বেরিয়ে এল আদি।পিয়া ভেতরে তাকাতেই দেখল ছেলেটা বিধ্বস্ত অবস্থায় মেঝেতে পড়ে আছে।পিয়া কিছু বলবে তার আগেই পিয়ার ডান হাত শক্ত করে ধরে হাটতে লাগল আদি।পিয়া কিছু বলতে গিয়েও বলল না।আদির চেহারায় বলে দিচ্ছে সে কতোটা রেগে আছে।এই মুহূর্তে মুখ খোলা মানে কানের নিচে দু চারটে চড় থাপ্পর পড়া।এমনিতেও ভুলটা তারই।আদি তাকে নিষেধ করার পরেও ছেলেটার সাথে নাচা তার ভুল ছিল।

——-

চার চাকার কালো গাড়িটা যখন বাড়ির সামনে এসে থামলো ততোক্ষণে ঘুমিয়ে গেছে রোশনি।অধির ছোট্ট শ্বাস টেনে রোশনিকে কোলে তুলে পা বাড়ালো বাড়ির ভেতরের দিকে।রোশনি ঘুমের মাঝেই দুহাতে অধিরের গলা জড়িয়ে বুকে মুখ গুজলো।শার্টের উপরের দুটো বোতাম খোলা থাকায় প্রশস্ত বুকের অনেকখানিই খোলা।রোশনি উদম বুকে কামড় দিতেই ভ্রু কুচকে তাকালো অধির।সিড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে আদুরে গলা বলল,

-আস্তে ম্যাডাম।এটা আমার বুক…লেগ পিস না।আমার বুকের সাথে তোমার এতো শত্রুতা কিসের সেটাই বুঝিনা। যখন তখন কামড়াতে থাকো।

রোশনি ঘুমের ঘোরেই অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠল,

-আপনার বুক খুব টেস্টি অধির।একদম খেয়ে নিতে ইচ্ছে করে।একটু খাই?

অধির বুঝলো রোশনি ঘুমের ঘোরে কথা বলছে।নয়ত জেগে থাকলে কখনোই এসব কথা বলতো না।অধির মুচকি হেসে রোশনিকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে রোশনির দিকে ঝুকে গেল।ফিসফিসিয়ে বলল,

-টেস্টি হলেই কি খেতে হবে?

চোখ বন্ধ রেখেই ঠোট গোল করে হাসল রোশনি।ঘুম জড়ানো গলায় বলল,

-হুম খেতে হবে।আপনি জানেন না…টেস্টি জিনিস খেয়ে নিতে হয়?আপনার কন্ঠটাও খুব টেস্টি।আমি আপনার কন্ঠটাও খেতে চাই।

অধির আবারো ফিসফিসিয়ে বলল,

-তাই!!!তোমার ঠোট জোড়াও তো ভিষন টেস্টি।তাহলে আমিও খেয়ে নিই?

রোশনি হাসলো।ঘুমের মাঝেই অধিরকে টেনে নিয়ে ঠোটে ঠোট বসালো।অধিরও পরম যত্নে আকড়ে ধরল নোশনির কোমল ঠোট।কয়েক সেকেন্ড বাদেই রোশনির আর সাড়া পাওয়া গেল না।অধির মুখ উঠিয়ে দেখল রোশনি ঘুমিয়ে গেছে।অধির করুন চোখে তাকালো।পরমুহূর্তেই হেসে ফেললো।রোশনির কোমল ঠোট জোড়াকে আরো একবার ছুঁয়ে দিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল ফ্রেস হতে।পাচ মিনিট পরে ফিরে এসে রোশনির পাশে গা এলালো অধির।রোশনিকে বুকে টেনে নিয়ে পাড়ি জমালো ঘুমের দেশে।

চলবে…..

[ সম্ভব হলে সন্ধ্যার দিকে আরো একটা পর্ব দিবো।আবার নাও দিতে পারি।অপেক্ষা করবেন না।ধন্যবাদ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here