শেষ বিকেলের আদর❤️পর্ব : ৯

0
3940

#শেষ বিকেলের আদর❤️
#রিত্তিকা ইসলাম
#পর্ব : ৯

🌸
চৌধুরি ম্যানশনে যেন উৎসব চলছে।হৈ হৈ হুল্লোরে মেতে উঠেছে পুরো বাড়ি।বসার রুমে ভিড় জমেছে আজ।সারি সারি চেয়ার পেতে তাতে চোখ বুজে বসে আছে ছোট বড় সবাই।এর অবশ্য একটা কারনও আছে।আর দুই দিন পর যেহেতু এংগেজমেন্ট তাই আজ থেকেই শুরু করে দিয়েছে রুপচর্চা।প্যাডিকিউর থেকে ম্যানিকিউর সব চলছে পুরো দমে।বাদ যায় নি ছেলেরাও।এমন কি আনোয়ারা চৌধুরিও।এই বয়সে কি আর এসব মানায়..? তবু নাতি নাতনিদের জেদের কাছে হার মানতেই হলো।মুখে কিসব লাগিয়ে দিচ্ছে কে জানে।আবার চোখের উপর শশাও কেটেও দিয়েছে।এই রুপচর্চা আইডিয়াটা আদিলের।বাড়িতে এংগেজমেন্ট হবে, পার্টি হবে আর তারা রুপচর্চা করবে না? সবাইকে তো সুন্দর দেখাতে হবে নাকি…? সবাইকে আইডিয়ার কথা বলতেই সবাই সম্মতি জানায়।তবে সাহিলকে মানাতে একটু কষ্ট হয়েছে ওর।কিন্তু অধিরকে বলার সাহসই হয় নি কারো।সবাই মুখে ফেসপ্যাক লাগিয়ে চুপচাপ চেয়ারে গা এলিয়ে বসে আছে।পুরো ড্রয়িংরুম জুড়ে পিনপতন নিরবতা।পিয়া আর রোশনি এদের অবস্থা দেখে মিটিমিটি হেসে নিজেদের কাজে লেগে গেলো।অন্য দিকে অধির নিজের রুমে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে।অধির কোল থেকে ল্যাপটপ সরিয়ে উঠে দাড়ালো।শরিরটা কেমন ম্যাচম্যাচ করছে।এককাপ কফির প্রয়োজন এখন।অধির গায়ে থাকা টিশার্টের হাতা গুটাতে গুটাতে রুমের বাইরে এলো।পুরো বাড়ি এতোটা নিরব কেন লাগছে বুঝতে পারলো না অধির।তার বাড়ির লোকজন এতো শান্ত কবে থেকে হয়ে গেলো..? এখানে তো অলটাইম কোনো না কোনো ড্রামা চলতেই থাকে।তাহলে আজ এতো নিশ্চুপ কেন…? অধির সেদিকে পাত্তা না দিয়ে সিড়ি দিয়ে নিচে নামতে লাগলো।ড্রয়িংরুমের দিকে চোখ যেতেই ভ্রু কুচকে তাকালো অধির।সবাইকে এমন মুখে ফেসপ্যাক লাগিয়ে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে আরো কিছুটা কুচকে গেলো ভ্রু।ওদের দিকে দুকদম এগিয়ে আসতেই চোখ গেলো দাদি আর সাহিলের দিকে।এবার যেন অবাক হলো অধির।এরা দুজনেও যে এদের সাথে যোগ দেবে সেটা ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ফেললো অধির।এদিকে কারো পায়ের আওয়াজ পেয়ে আদি একচোখ থেকে কাটা শশা সরিয়ে তাকালো।অধিরকে সামনে ভ্রু কুচকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে বেক্কল হাসলো।অধির কিছু না বলেই কিচেনের দিকে পা বাড়ালো।আর আদি আবারো আগের ন্যায় চোখে শশা দিয়ে বসে রইলো।অধির রান্না ঘরে এসে দেখে রোশনি দাড়িয়ে আছে।আর একজন শেফকে কি কি রান্না হবে তার মেনু বলে দিচ্ছে।অধিরকে রান্নাঘরে দেখে ভ্রু কুচকালো রোশনি।একপলক তাকিয়ে সামনে থাকা স্টাফকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো….

___বাইরে সবজি রাখা আছে।আপনি ওগুলো নিয়ে আসেন।আর কিছু সবজি ফ্রীজে রাখবেন।আর দাদির জন্যে সবজি দিয়ে নরম খিচুড়ি করবেন।

লোকটা মাথা নেড়ে চলে গেলো সেখান থেকে।রোশনিও চলে যেতে নিলে অধির সামনে এসে দাড়ায়।রোশনি ভ্রু কুচকে তাকাতেই অধির পকেটে দাত ঢুকিয়ে সোজা হয়ে দাড়ায়।রোশনি অধিরকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে…

__কি সমস্যা…? পথ আটকালেন কেন..?

___কোনো প্রশ্ন ছাড়া কফি মেশিনটা নিয়ে আমার রুমে এসো….

অধির কথার প্রেক্ষিতে রোশনি কিছু বলবে তার আগেই অধির চোখ রাঙিয়ে তাকালো রোশনির দিকে।রোশনির আর সাহস হয়ে উঠলো না কিছু বলার।অধির রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে যেতেই রোশনি বিড়বিড় করে বলে উঠলো…

___ব্যাটা খবিশ।আমাকে কি তোর কাজের লোক মনে হয় যে এসব করবো..?নিজের কাজ নিজে করতে পারিস না..? ব্যাটা গোমরামুখো,,,একটু হেসে কথা বললে কি দুনিয়া উল্টে যাবে?অসহ্য….

এরপর কফি মেশিন হাতে নিয়ে চলে গেলো অধিরের রুমে।কয়েক কদম এগিয়ে গিয়ে টেবিলের উপর শব্দ করে কফি মেশিনটা রাখলো।শব্দটা কানে যেতেই অধির ভ্রু কুচকে তাকালো রোশনির দিকে।রোশনি যে যথেষ্ট বিরক্ত সে বিষয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই অধিরের।তবে সেদিকে খুব একটা ভ্রুক্ষেপ করলো না অধির।রোশনি মেশিন রেখে চলে যেতে নিলেই অধিরের কথায় থেমে গেল।

___এক কাপ কফি করে তারপর যাও….

রোশনির মাথাটা এবার ধপ করে জ্বলে উঠলো।এই লোকটা যে আস্ত পাজি সে ব্যাপারে নিশ্চত রোশনি।আর এই ছেলে যে তাতে পার্মানেন্ট চাকর ভেবে নিয়েছে সে ব্যাপারেও কোনো দ্বিধা নেই রোশনির।এই লোক যা বলবে তাই করতে হবে নাকি তাকে..? করবে না। কিছুতেই করবে না।

__এই আপনি কি আমাকে সত্যি সত্যি আপনার নকরানি ভাবতে শুরু করেছেন নাকি…?যদি এমন ভেবে থাকেন তাহলে মাথা থেকে এগুলো ঝেড়ে ফেলেন বুঝলেন।আমি এখানে এংগেজমেন্টের অ্যারেঞ্জমেন্ট করতে এসেছি। আপনার কফি বানাতে বা আপনার কাজ করে দিকে না।সো নিজের কফি নিজে বানিয়ে খান….

রোশনির কথা শুনে মুহূর্তেই চোখ দুটো লাল হয়ে গেলো অধিরের।তার মুখের উপর এতোগুলো কথা বলে দিলো এই মেয়ে? যেখানে অধির চৌধুরির মুখের উপর কথা বলার সাহস কারো নেই সেখানে এই পিচ্চি মেয়ে তার সামনে দাড়িয়ে উচু গলায় কথা বলছে ব্যাপারটা সত্যিই ভয়ানক।এই মেয়ের সাহস দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। প্রথম প্রথম তো মুখ থেকে কথায় বের হতো না আর এখন যে কথার ঝুড়ি নিয়ে বসেছে।এই মেয়ে এখনো অধিরকে ভালমত চেনে নি।চিনলে এতো গুলো কথা বলার সাহস নিশ্চয় এই মেয়ে করতো না।অধির দাতে দাত চেপে রোশনিকে বলে ওঠে….

___তিন মিনিটের মধ্যে যেন আমি কফি পাই।নয়তো আমি কি করতে পারি তোমার ধারনাতেও নেই।ইউ হ্যাভ জাস্ট থ্রী মিনিটস।এন্ড ইউর টাইম স্টার্টস নাও….

কথাটা বলেই অধির বারান্দায় চলে গেলো।আর অধিরের এমন শান্ত থ্রেট এ ভয়ে জমে গেলো রোশনি।লোকটা রেগে গেলে কি ভয়ংকর লাগে দেখতে। বিশেষ করে চোখ দুটো।রোশনি ভয়ে ভয়ে কফি বানাতে শুরু করে।এদিকে অধির বারান্দা থেকে এসে দেখে রোশনি বিড়বিড় করে কিছু একটা বলছে।অধির ভ্রু কুচকে তাকায় ওর দিকে।রোশনি কফি বানিয়ে মগে নিয়ে পিছনে ফিরতেই দেখে অধির ভ্রু কুচকে দাড়িয়ে আছে।চোখ দুটো আগের থেকে শান্ত দেখাচ্ছে এখন।অধির রোশনির দিকে তাকিয়ে আছে।অধিরকে এভাবে তাকাতে দেখে রোশনি বিড়বিড় করতে করতে অধিরের দিকে কফির মগটা এগিয়ে দেয়।অধির কফির মগের দিকে তাকিয়ে আবারো রোশনির দিকে তাকায়।

__আমার রুমে দাড়িয়ে বিড়বিড় করে কথা বলার অনুমতি নেই।

অধিরের কথা শুনে রোশনি চোখ তুলে তাকায়।তারপর আবারো বিড়বিড় করে বলে ওঠে…

___এখন বিড়বিড় করেও কথা বলা যাবে না।অসহ্যকর লোক একটা….

রোশনিকে আবারো,বিড়বিড় করে কিছু বলতে দেখে অধির আরো কিছুটা ভ্রু কুচকে বলে ওঠে…

___আবারও..? আর কি বললে বিড়বিড় করে…?

রোশনি অধিরের কথা শুনে সোজা বলে উঠলো ..

___এক্সচুয়েলি কফিকে জিজ্ঞেস করছিলাম,,,,প্রথম থেকেই ও এতো তেতো নাকি অধির চৌধুরির সাথে থেকে থেকে তেতো হয়ে গেছে…..

রোশনি বিরক্তি মাখা মুখ করে অধিরের হাতে কফি মগ ধরিয়ে হনহনিয়ে চলে গেলো।আর অধির ওর যাওয়ার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে রইলো।

রোশনি নিচে নামতেই দেখলো নাতাশা দাদির সাথে বসে কথা বলছে।রোশনিকে দেখতেই অানোয়ারা চৌধুরি রোশনিকে ইশারাই কাছে ডাকলেন।রোশনিও মুচকি হেসে ওদের দিকে এগিয়ে গেলো।রোশনি ওদের কাছে যেতেই নাতাশা মিষ্টি গলায় বলে উঠলো….

__ও কে গো দাদি..? কি ভিষন মিষ্টি দেখতে।তোমার নাম কি গো গুড়িয়া…..?

নাতাশার এমন মিষ্টি কথায় খানিকটা লজ্জা পেলো রোশনি।নিজেকে সামলে মুচকি হেসে বলে উঠলো…

___জ্বি ম্যাম,,আমার নাম রোশনি..

__তোমার মতোই মিষ্টি তোমার নামটা।কিন্তু আমি তোমায় গুড়িয়া বলেই ডাকবো।আর ম্যাম কি হ্যা…? নাম ধরে ডাকো নয়তো আপু বলে ডাকো..।এই ম্যাম ট্যাম এ আমার পোষায় না।

নাতাশার কথায় ফিক করে হেসে ফেললো রোশনি।মেয়েটা আসলেই ভিষন ভালো আর সেই সাথে মিশুকে।নাতাশে ভিষন পছন্দ হয়েছে রোশনির।

এদিকে কাল ছুটি।তাই আজকেই সব কাজ সেড়ে ফেলতে হবে।আর পরশু দিন এংগেজমেন্ট পার্টি।তাই আজকে কাজের চাপও বেশি।সব কাজ গুছাতে গুছাতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এসেছে।রোশনির এখনো কিছু লিস্ট করতে বাকি।এদিকে কিছুক্ষণ আগে পিয়াকে ওর এক কাজিন এসে নিয়ে গেছে।রোশনির বেশ সমস্যা হয়ে যাচ্ছে একা সব সামলাতে।রোশনি সব কাজ গুছিয়ে দাদির রুমের দিকে হাটতে থাকে।তখনই রোশনির ফোনে কল আসে।রোশনি ফোন রিসিভ করে বলে ওঠে….

___জ্বি রোশনি বলছি।শুনুন,,কালকের মধ্যে মিষ্টি পাঠিয়ে দিবেন চৌধুরি ম্যানশনে।আর মিষ্টির প্যাকেট গুলো যেন পূর্ন থাকে।যেন বক্সের অর্ধেক মিষ্টি দিয়ে আর বাকিটা ফাকা রেখে প্যাকেট বেশি করবেন না।হ্যা হ্যা আপনারা না বড়লোক দেখলেই এমন করেন।প্যাকেটের ওজন বাড়িয়ে টাকা খাওয়ার ধান্দা।আর শুনুন,,,,মিষ্টি সিএনজি করে পাঠালেই হবে।অন্য কোনো গাড়ির দরকার নেই।আরে বললাম না অন্য কোনো গাড়িতে পাঠাতে হবে না।যা বলছি তাই করুন।আর মিষ্টি যদি খারাপ হয় বা ওজনে কম হয় তবে একটা টাকাও দেবো না বলে দিলাম।আচ্ছা এখন রাখছি।

রোশনি আনোয়ারা চৌধুরির থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসে।সিড়ি বেয়ে নিচে নামতে নামতে বিড়বিড় করে বলতে থাকে…

__উফফ,,,কাল ছুটি।তার মানে কাল ওই খাটাসটার মুখ দেখতে হবে না।কাল সারাদিন ভালো কাটবে.।।।

রোশনি আনমনে হেটে আসতে আসতেই দিদামের সাথে ধাক্কা লাগে।রোশনি সামনে তাকিয়ে দেখে দিদাম। দিদামকে দেখে সোজা হয়ে দাড়ায় রোশনি।দিদাম যে এখন কেমন রিয়্যাক্ট করবে কে জানে..? নিশ্চয় দু চারটে খারাপ কথা শুনিয়ে দেবে।রোশনির মনটাই খারাপ হয়ে গেলো।সারাদিন তো ওই খাটাসটা ওকে কথা শোনায় এখন তার হবু বউও কথা শুনাবে।ধ্যাত ভাল লাগে না।রোশনি নিজেকে প্রস্তুত করে নেয় দিদামের তেতো কথা শুনার জন্যে।কিন্তু রোশনিকে অবাক করে দিয়ে দিদাম হেসে দেয়।দিদামের হঠাৎ হাসিতে ভ্রু কুচকে যায় রোশনির।দিদাম এক গাল হেসে রোশনির দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে….

__সাবধানে। এখনিতো পড়ে যেতে।বাড়ি যাচ্ছো…

দিদামের কথায় অবাক হলো রোশনি।না মেয়েটা অতোটা খারাপ না।একটু ন্যাকা তবে খারাপ না।দিদামের কথায় মাথা নাড়ালো রোশনি।দিদাম আবারো বলে উঠলো…

___ও।তোমার নাম কি…?

__রোশনি…

__শুধু রোশনি..? ছার নেইম কি…?

ছার নেইমের কথা শুনে মুখটা কালো হয়ে গেলো রোশনির।সে তো নিজেই জানে না তার সার নেইম কি? মাঝে মাঝেই তাকে এই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়।তখন নিজেকে সবচেয়ে অসহায় আর দুঃখী বলে মনে হয়।পৃথিবীতে বাচতে গেলে কি ছারনেইম এর খুব বেশি প্রয়োজন..? হয়তো হ্যা..।তাই তো তাকে বারবার এই প্রশ্নের মুখোমুখি দাড়াতে হয়।রোশনি নিজেকে সামলে বলে উঠলো..

__শুধু রোশনিই।

রোশনির কথায় বাকা চোখে তাকালো দিদাম।তবে আর কোনো প্রশ্ন করলো না।রোশনিকে সাবধানে যেতে বলে চলে গেলো।রোশনিও হাটা দিলো বাড়ির উদ্দেশ্যে।

পরের দিন পুরো দিনটা কেটে গেলো আয়াশের সাথে দুষ্টুমি করে আর বাগানের কাজে।অনেক দিন ধরে বাগানটা ঠিক মত পরিষ্কার করা হয়ে ওঠেনি।আর সবজি গাছগুলোতেও বেশকিছু সবজি,,,টমেটো,বেগুন,করলা,লাউ ধরেছে।রোশনি সেগুলো তুলে গাছের পুরোনো পাতাগুলো ফেলে আয়াশকে সাথে নিয়ে পুরো বাগান পরিষ্কার করেছে।তবে এতো কিছুর মধ্যেও রোশনির মন ভালো নেই।আজকে রোশনির সাথে জয়ের দেখা করার কথা ছিলো।কিন্তু ছেলেটাআসলোই না।পাক্কা এক ঘন্টা অপেক্ষা করার পর ফোন দিয়ে জানালো অফিস থেকে বেরোতে পারবে না।হঠাৎ মিটিং পড়ে গেছে।রোশনির তখন এতো রাগ লেগেছিলো যে ইচ্ছে করছিলো জয়ের মাথার চুলগুলো টেনেটুনে ছিড়ে ফেলতে।কলার চেপে ধরে বলতে,,,,, আসবি না তো এতো দরে অপেক্ষা করালি কেন? আমার যে এই রোদের মধ্যে বসে অপেক্ষা করতে কষ্ট হয়েছে সেটা কি চোখে পড়লো না..? এক ঘন্টা অপেক্ষা করিয়ে এখন বলছিস আসতে পারবি না।যা তোর প্রপোজাল কোনো দিন একসেপ্ট করবো না।পেন্ডিং এই থেকে যাবি শালা……

রাত প্রায় দশটা বাজে।আয়াশ ঘুমিয়ে পড়েছে।কিন্তু রোশনির ঘুম আসছে না।তখন জয়ের উপর রাগ লাগলেও এখন ভিষন কান্না পাচ্ছে ওর।রোশনি ভাবে আচ্ছা তার কি মন খারাপ..? আর এই মন খারাপের কারনটাও কি ওই বদ ছেলে জয়?? নিজের করা প্রশ্নে সাথে সাথেই মন জবাব দিয়ে উঠলো,,হ্যা জয়ের জন্যেই তার মন খারাপ।ছেলেটা কথা দিয়েও যে কথা রাখলো না তাই মন খারাপ।রোশনির মন খারাপ ভাবটা আবারো বেড়ে গেলো।রোশনি যে কবে জয়কে এতোটা ভালোবেসে ফেললো বুঝতেই পারে নি।রোশনির এই বন্ধ রুমে থাকে দমবন্ধ লাগছে।বাইরের বাতাসে প্রান ভরে নিশ্বাস নিতে মন চাচ্ছে। রোশনি তাকিয়ে দেখলো আয়াশ ঘুমিয়ে আছে।আর চাচিও নিজের রুমের দরজা লাগিয়েছে।তারমানে সকালের আগে আর তিনি রুম থেকে বের হবেন না।রোশনি বিছানা ছেড়ে উঠে গায়ের কুচকে যাওয়া জামাটা টেনেটুনে ঠিক করে বাইরে চলে এলো।খুব সাবধানে মেইন দরজা খুলে রাস্তায় চলে এলো রোশনি।তারপর আনমনে হাটতে লাগলো।কিছুটা যেতেই মনে হলো মন খারাপ ভাবটা কমে এসেছে।রোশনি দুদিকে হাত ছড়িয়ে চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে কয়েকটা নিশ্বাস নিলো।তারপর রোশনি আশেপাশে তাকাতেই চমকে উঠলো।হাটতে হাটতে সে বাড়ি থেকে অনেকটা দুরে চলে এসেছে।এদিকটাই তেমন লোকজনও নেই।সামনে তাকাতেই দেখতে পেলো গাঢ় অন্ধকার।অন্ধকার দেখেই ভয় গেলো রোশনি।অন্ধকারে যে তার ভিষন ভয়।রোশনি তাড়াতাড়ি করে পিছনে ফিরে হাটতে শুরু করলো।কিছুদুর যেতেই দেখতে পেলো রাস্তার পাশে সোডিয়ামের আলোতে একদল ছেলে বসে তাস খেলছে।আর ওদের সবার মুখেই সিগারেট।আর পাশে বোতল টাইপ কিছু রাখা।ওদের দেখেই কলিজা কেপে উঠলো রোশনির।এই বখাটে ছেলে গুলো যদি ওকে কিছু বলে তাহলে সে একা কি করবে? রোশনি আল্লাহকে ডাকতে ডাকতে জোরে জোরে হাটতে থাকে।ওদের কোনো রকম কাটিয়ে চলে যেতে পারলেই বাচে।রোশনি মনে মনে প্রার্থনা করছে ওরা যেন রোশনিকে না দেখে।রোশনি ওদের পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলেই সবাই মিলে রোশনির দিকে তাকায়।সাথে সাথেই থমকে যায় রোশনি।যেটার ভয় পেয়েছিল সেটাই হল।কেনো যে এতো রাতে বাড়ি থেকে বের হলো..? রোশনিকে দাড়িয়ে যেতে দেখে ছেলেগুলো বাকা হেসে উঠে দাড়ায়।রোশনি এবার কাপতে শুরু করে।তাকে কে বাচাবে এখন..?কাল নিশ্চয় খবরের কাগজে তার মৃত্যুর কথা বড় বড় করে ছাপা হবে।কথাটা ভেবেই ঘামতে শুরু করলো রোশনি।ছেলেগুলো বিশ্রী ভাবে হেসে নিজের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে দৌড় লাগালো রোশনি।রোশনি বুঝতে পারছে ছেলেগুলোও তার পিছন পিছন দৌড়াচ্ছে।কিন্তু রোশনি পিছনে ফিরে তাকাচ্ছে না।চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ছে নোনা জল আর নিশ্বাসের সাথে পাল্লা দিয়ে আল্লাহকে ডাকছে।দৌড়াতে দৌড়াতেই হঠাৎ একটা গাড়ি সামনে চলে এলো রোশনির।রোশনি চোখ মুখ খিচে দাড়িয়ে গেল।আর গাড়ির ড্রাইভারও সাথে সাথেই ব্রেক কষলো।রোশনি যখন বুঝতে পারলো সে বেচে আছে তখনই একটা নিশ্বাস ফেলে পিছনে ফিরে তাকালো।ছেলেগুলো তার দিকেই দৌড়ে আসছে।রোশনি আবারো সামনের দিকে দৌড় দিতে নিলেই গাড়ির মালিক গাড়ি থেকে বেরিয়ে রোশনির হাত চেপে আটকালো।রোশনি পিছনে না ফিরেই হাত ছাড়াতে নিলো কিন্তু সেই ব্যাক্তি আরো জোরে চেপে ধরলো রোশনির হাত।রোশনি এবার যেন আরো ভয় পেয়ে গেলো।তবে কি এবার আর সে বাচতে পারবে না..? রোশনি কাপতে কাপতে তার হাত ধরে রাখা ব্যাক্তির দিকে তাকাতেই চমকে গেলো।সেই সাথে বেড়ে গেলো চোখের পানির পরিমান।

চলবে………

[রি-চেইক করা হয়নি। ভুল গুলো ক্ষমার চোখে দেখবেন।ধন্যবাদ…]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here