সংগোপনে’ পর্ব-২

0
2393

#সংগোপনে
#ধারাবাহিক_পর্ব_২
#অচিন_পাখি_কলমে_ভাগ্যলক্ষ্মী_দাস

আগের পর্বের পর————-

সারা সপ্তাহ খুব একটা ঘুমানোর সময় পায় না কুহেলি, এমনিতে ও খুব একটা ঘুম কাতুরে নয়, কিন্তু ইদানিং সময়ের অভাবে ঘুম টা যেন আগের থেকে অনেকটা কমে গেছে। এই রবিবার গুলোয় একটু বেলা পর্যন্ত ঘুমায়, তাই বলে দশটা এগারোটা পর্যন্ত না, অত ঘুমাতে কুহেলির ভালোলাগে না। আটটা নাগাদ ঘুমটা আপনা থেকেই ভেঙে গেল, চোখটা মেলে বিছানার ওপর উঠে বসে একটা একবার জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকাল, স্বচ্ছ কাচের সার্সি টা ভেদ করে সূর্যের আলো ছড়িয়ে পড়েছে গোটা ঘরটায়। কিচেন থেকে বাসনপত্র নাড়াচাড়ার শব্দ ভেসে আসছে, গীতা রোজ ঠিক পৌনে সাতটায় চলে আসে, সেও জানে কুহেলি এই একটা দিন একটু দেরি করে ওঠে তাই ওকে না ডেকেই সব কাজ সারতে থাকে। কুহেলি উঠে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ল, একেবারে স্নান সেরে বেরোতে সাড়ে আটটা হয়ে গেল। গীতা তখন ঘর মুছছে, ওকে দেখেই একগাল হেসে বলল,

আক্কা, রান্না হয়ে গেছে প্রায়। আমি ঘরটা মুছে সকালের খাবারটা করে দিচ্ছি।

আচ্ছা, এখন থেকে আমরা গীতা আর কুহেলির কথপোকথন টাও বাঙলাতেই পড়ব। হ্যা, তো গীতার কথায় কুহেলি ওর ভেজা চুলটা তোয়ালে দিয়ে মুছতে মুছতে বলল,

সে তো ঠিকই আছে, কিন্তু গীতা দি, আমি তোমাকে দিদি বলি, আর বলব তো বটেই তুমি আমার দিদির মতই। কিন্তু তুমি আমাকে আক্কা কেন বল? আমি তো কত ছোট তোমার থেকে।

গীতা ঘর মুছতে মুছতেই হেসে বলল,

আক্কা না বললে কি বলব? অন্য বাড়ির ওদের তো মেমসাব বলি, তাহলে তোমাকেও তাই বলি।

একদম না, ওইসব মেমসাব টেমসাব বললে কিন্তু আমি কথাই বলব না। নাম ধরে ডাকতে পার না?

গীতা এত্ত বড় একটা জিভ কেটে বলল,

আমি পারব না, আমি আক্কাই বলব।

কেন? নাম ধরে বললে কি হবে?

জানিনা। এইঘরটা মোছা হয়ে গেছে আমি হল টা মুছে তোমার সকালের খাবার বানিয়ে দিচ্ছি।

বলে গীতা ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। কুহেলি মুচকি হেসে বারান্দায় এসে ভিজে তোয়ালে টা স্ট্যান্ডে মেলে দিয়ে একটু রেলিঙে হাত রেখে দাড়াল। বেশ গরম, তেমন বেলা নাহলেও রোদের তেজ যথেষ্ট প্রখর। পাঁচ তলার ব্যালকনি থেকে চারপাশটা দেখতে বেশ ভালইলাগে কুহেলির, এরমধ্যেই রাস্তায় ব্যস্ততার ছোয়া লেগেছে, তাও রবিবার বলে রাস্তাগুলো অন্যদিনের তুলনায় যথেষ্ট ফাঁকা। খুব বেশিক্ষণ দাড়াতে পারল না, রোদের তেজটা বড্ড বেশি। ঘরে এসে দরজাটা বন্ধ করে ফ্যান টা চালিয়ে খাটে বসল, আজকাল একদম গরম সহ্য হয় না, আগে কিন্তু এরকম হত না। হোস্টেলের ফ্যান গুলো তো মাঝে মাঝেই দেহ রাখত, কিন্তু কখনও তেমন অসুবিধা হয়নি, কিন্তু আজকাল বড্ড অসুবিধা হয়, আসলে দিনের বেশিরভাগ সময়ই অফিসে কাটাতে হয়, আর গোটা অফিসটা শীততাপ নিয়ন্ত্রিত। এতেই অভ্যেসটা বিগড়ে গেছে, এমনিতেও এখানে গরমের সময় তাপমাত্রা বেশ চড়া থাকে। এই ফ্ল্যাটটা ভাড়া নেওয়ার পর একমাসের মধ্যেই একটা এসি বসিয়ে নিয়েছিল, তবে শুধু রাতে ঘুমানোর সময় টুকু ছাড়া ও এসি চালায় না। খাটে বসে ফোনটা হাতে নিয়ে ডেটা কানেকশনটা অন করতেই হুড়মুড় করে অনেকগুলো নোটিফিকেশন যেন ঝাঁপিয়ে পড়ল স্ক্রীনের ওপর। সেই পরশু দিন রাতের পর এই এখন ডেটা কানেকশনটা অন করল, তাই এত নোটিফিকেশনের বন্যা। ফেসবুক টা অন করতে যাবে এমন সময় গীতা এসে খেতে ডেকে গেল, কুহেলি ফোনটা রেখে ডাইনিং টেবিলে এসে দেখল একটা প্লেটে সাজানো রয়েছে গরম গরম ফুলকো লুচি আর সাদা আলুর তরকারি। এটা দেখেই মনটা ভাল হয়ে গেল, গীতার দিকে তাকিয়ে বলল,

ওয়াও গীতা দি, লুচি আর আলুর তরকারি!! কত দিন পর বানালে।

বলেই খেতে বসে গেল। সাউথ ইন্ডিয়ান ফুড কোনোদিনই তেমন একটা ভালবাসে না কুহেলি। গীতা কাজে আসার পর ইউ টিউব দেখিয়ে ওকে অল্প অল্প করে কয়েকটা বাঙালি রান্না শিখিয়ে দিয়েছিল, এখন মাঝে মধ্যেই গীতা টুকটাক বাঙালি পদ রান্না করে। কুহেলি মনের সুখে লুচি আলুর তরকারি খেতে লাগল, আগে অনেকবার ও গীতাকে ওর সাথে খেতে বলেছে কিন্তু গীতা খায় না, তাই এখন আর বলে না। গীতা বাকি রান্নাটা সারতে আবার কিচেনে চলে গেল, প্রায় আধাঘন্টা পরে সব কাজ সেরে যখন গীতা চলে গেল তখন সবে সাড়ে নটা বাজে। কুহেলিও বেশ জমিয়ে ব্রেকফাস্ট সেরে ওয়াশিং মেশিন টা চালিয়ে দিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে সোফায় বসল। ফেসবুক টা ওপেন করে নোটিফিকেশনের পৃষ্ঠা টায় চোখ রাখল, স্কুল কলেজের বন্ধুরা ওকে ট্যাগ করেছে তাদের আনন্দময় মুহুর্তের ছবিগুলোয়। সবকটা ছবির দিকে ভালো করে তাকালও না, নিয়ম রক্ষা লাইক দিয়ে এগিয়ে গেল। এত নোটিফিকেশনের ভিড়ে একটা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট নজরে এল, মনে পড়ল পরশু রাতেই একটা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এসেছিল, সেটা আর দেখা হয়নি। এবার দেখল, ‘দেবার্ঘ্য মিত্র’ টু মিউচ্যুয়াল ফ্রেন্ডস শো করছে, প্রোফাইলটা ওপেন করে আগে মিউচ্যুয়াল ফ্রেন্ডসদের লিস্ট টা চেক করল, একজন চিরন্তন ঘোষ আরেকজন দেবাঞ্জলি মিত্র। চিরন্তন কুহেলির একমাত্র মামা আর দেবাঞ্জলি ওর হবু মামী, এই প্রায় ছ মাস ধরে কথা বার্তা চলছিল, সামনের মাসে বিয়ে ঠিক হয়েছে। চারমাস আগে যখন বাড়ি গিয়েছিল তখন কুহেলির মামা ওর সঙ্গে দেবাঞ্জলির পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। দেবাঞ্জলি ওর থেকে বছর পাঁচেকের বড় হবে, আসলে ওর মামা ওর থেকে দশ বছরের বড়, তাই খুব স্বাভাবিক ভাবেই ওর হবু মামীর সাথে বয়সের ফারাকটা অনেকটাই কম। দেবাঞ্জলি খুব মিষ্টি মেয়ে, সরকারি স্কুলের শিক্ষিকা, আলাপ করে বেশ ভালোলেগেছিল কুহেলির, সেই থেকে মাঝে মধ্যে ফেসবুকের মাধ্যমে কথা বার্তা হয়। এদের দুজনকেই মিউচ্যুয়াল ফ্রেন্ড দেখে রিকোয়েস্ট টা অ্যাকসেপ্ট করে নিল কুহেলি। ডিপি টা দেখবে বলে ছবিটায় টাচ করল, কিন্তু সেটা লোড হওয়ার আগে ওয়াশিং মেশিন জানান দিল তার কাজ সম্পন্ন। কুহেলি ফোনটা রেখে উঠে গেল, একে একে জামা কাপড় গুলো একটা বাকেটে নিয়ে ছাদের দিকে এগোল। সব ভিজে কাপড় গুলো মেলে ফিরতে ওর প্রায় পনের মিনিট মত লাগল, ছাদ টা এরমধ্যেই তেতে আগুন হয়ে রয়েছে, তাড়াতাড়ি ঘরে ঢুকে আগে ফ্যানের নিচে বসল। তারপর উঠে গিয়ে ফ্রিজ থেকে একটা ঠান্ডা জলের বোতল নিয়ে খানিকটা জল গলায় ঢালার পর যেন শান্তি হল। সোফায় রাখা ফোনটা টুং টাঙ শব্দে বেজে উঠল, কুহেলি সোফায় বসে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল একটু আগে অ্যাক্সেপট করা ওর নতুন বন্ধুটি মেসেঞ্জারে বার্তা পাঠিয়েছে, চ্যাট বক্সটা ওপেন করল কুহেলি।

“হাই”

কুহেলিও ছোট্ট করে ‘হাই’ লিখে সেন্ড করে দিল। নামের পাশে সবুজ বিন্দুটা উজ্জ্বল হয়ে আছে, মেসেজটা এখনও সিন করেনি, কুহেলি একবার প্রোফাইলটা দেখে নিল। হোমটাউন শিলিগুড়ি, লিভস ইন ব্যাঙ্গালোর, সফট ওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার অ্যাট আই.এন.জি প্রাইভেট লিমিটেড। ডিপি তে একটা ছেলে ক্যামেরা হাতে নিয়ে অস্তগামী সূর্যের ফোটো তুলছে, মুখটা বোঝা যাচ্ছে না, শুধু একটা আবছায়া অবয়ব ফুটে উঠেছে। পেজ টা স্ক্রল করে আরো কিছু টুকটাক ডিটেলস দেখছিল, এরমাঝে আবার মেসেজ এল।

“আমি দেবাঞ্জলির ভাই, দেবার্ঘ্য।“

কুহেলি ইতিমধ্যেই দেবার্ঘ্যর পার্সোনাল ডিটেলসে দেবাঞ্জলির নামের পাশে সিস্টার শব্দটা লক্ষ্য করেছে। ছোট্ট করে টাইপ করল,

“জানি”

মুহূর্তে স্ক্রীনে ভেসে উঠল একটা অবাক অভিব্যক্তির ইমোজি। তার পরেই লেখা ফুটে উঠল,

“দি কি আমার কথা বলেছে?”

“না।“

“ও, তাহলে?”

“আপনার প্রোফাইলে দেখলাম।“

ওপার থেকে একটা স্মাইলি ফুটে উঠল, কিছুক্ষণ কোনও মেসেজ এল না। কুহেলিও হোয়াটসঅ্যাপ অন করে ওর কলেজের গ্রুপটায় চোখ রাখল, দুদিনে একশো ছত্রিশ টা মেসেজ জমেছে। হাতে এখন অনেকটা সময় তাই এক এক করে মেসেজ গুলো পড়তে লাগল, বেশিরভাগই সাধারণ আড্ডা, সবাই এখন কর্মসূত্রে হোক বা বিবাহসুত্রে হোক এদিকে ওদিকে ছড়িয়ে গেছে, এই গ্রুপটাই যেন সবাইকে জুড়ে রেখেছে। মেসেজগুলো পড়ছিল কুহেলি, তারমধ্যে একটা চ্যাট হেড স্ক্রীনের একটা কোনায় ভেসে উঠল, সেই ক্যামেরা হাতে একটা আবছায়া অবয়ব, চ্যাট হেডটা ওপেন করল কুহেলি।

“চিরন্তন দা তো তোমার মামা, তাই না?”

“হুম”

“তোমাকে তুমি বললাম বলে কিছু মনে করলে না তো?”

“না”

কুহেলি খুব সংক্ষেপে উত্তর দিচ্ছিল, ওপার থেকে একটা মেসেজ ফুটে উঠল।

“তুমি কি বিজি?”

“না, কেন?”

“না, আসলে খুব কম কথা বলছ তো, তাই।“

কুহেলি একটু ভেবে লিখল,

“আপনি ব্যাঙ্গালোরে থাকেন দেখলাম, কর্মসূত্রে নিশ্চয়ই?”

“হ্যা, তুমিও তো ব্যাঙ্গালোরেই থাক?”

“হুম”

আবার একটু সময়ের ব্যবধানে মেসেজ এল।

“ওঙ্কার গ্রুপস তো এখন বেশ নামকরা।”

“হ্যা”

“তুমি বিয়েটা অ্যাটেন্ড করবে তো?”

“বলতে পারছিনা, তবে চেষ্টা করছি, আপনি?”

“আমাকে তো যেতেই হবে, আমার একমাত্র দিদির বিয়ে বলে কথা।“

“হুম, ছুটি পেয়ে গেছেন?”

“হ্যা, যেদিন ডেট ফিক্স হল তারপরের দিনই লিভ অ্যাপ্লিকেশন দিয়েছিলাম, এতটা আগে অ্যাপ্লাই করেছিলাম, তাই ছুটি পেতে কোনও প্রবলেম হয়নি। তুমি ছুটি পাওনি?”

“আসলে আমি এখনও আপ্ল্যাই করিনি, কদিন কাজের খুব প্রেসার ছিল, ইভেন কালকে থেকে প্রেসারটা ডবল হবে। তাই আর সুযোগ হয়নি।“

“জানি, প্রাইভেট সেক্টর গুলোতে চাপটা বড্ড বেশি তবে এখনও বাইশ দিন টাইম আছে হাতে, আই হোপ এখন যদি আপল্যাই কর তাহলে পেয়ে যাবে।“

“হুম, দেখি।“

স্ক্রীনে একটা থাম্বস আপ ভেসে উঠল। কুহেলির খুব একটা খারাপ লাগছে না এই দেবার্ঘ্যের সাথে কথা বলতে। কিন্তু অচেনা কারো সাথে একবারেই খুব বেশি আলাপ করা ওর ঠিক পছন্দ নয়। ওদিক থেকে আর কোনও মেসেজ আসার আগেই কুহেলি টাইপ করল,

“ওকে, আবার পরে কথা হবে, আসলে কিছু কাজ রয়েছে। বাই।“

ওদিক থেকে ছোট্ট একটা স্মাইলির সঙ্গে ‘বাই’ লেখা মেসেজ এল। কুহেলি ডেটা কানেকশনটা অফ্ করে ফোনটা পাশে রেখে দিল, রুম থেকে ল্যাপটপ টা নিয়ে এসে সোফায় বেশ গুছিয়ে বসল বাড়িতে ভিডিও কল করবে বলে, প্রত্যেক রবিবার বাড়িতে ভিডিও কল করে কুহেলি। এই দিনটায় চৈতালী দেবীও খুব ইমারজেন্সি কেস নাহলে বাড়িতেই থাকেন, ইচ্ছে করলে মোবাইল থেকেও ভিডিও কল করতে পারত কিন্তু ল্যাপটপ থেকেই করে প্রত্যেকবার, কারনটা আর কিছুই না, ওর মা আর ঠাম্মু কে আরও একটু ভাল করে দেখবে বলে। মোবাইল টা হাতে নিয়ে চৈতালী দেবীর নম্বরটা ডায়াল করল কুহেলি, একটু রিং হওয়ার পরেই চৈতালী দেবী ফোন রিসিভ করলেন।

কুহু, আমি তোকেই ফোন করতে যাচ্ছিলাম।

মা বাকি কথা পরে বোলো আগে ল্যাপটপ টা অন করো।

দাড়া, এক্ষুনি করছি।

কুহেলি লাইনটা ডিসকানেক্ট করে মোবাইলটা পাশে রেখে দিল, ল্যাপটপ টা অন করে মেসেঞ্জারে গিয়ে দেখল চৈতালী দেবীর নামের পাশে সবুজ বিন্দুটা বিদ্যমান। ভিডিও কলের অপশন টা ক্লিক করার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই কলটা রিসিভ হয়ে গেল। স্ক্রীনে ফুটে উঠল চৈতালী দেবী আর শৈলজা দেবীর হাসি মুখ দুটি, এই হাসিমুখ দুটো দেখার জন্য কুহেলি সব করতে পারে। শৈলজা দেবী এই দিনটার জন্য সারা সপ্তাহ অপেক্ষা করে থাকেন, মন ভরে গল্প করেন ওনার কুহুর সাথে। আজকেও তিন প্রজন্ম গল্পে এত মশগুল হয়ে গেল যে কোথা থেকে একটা ঘণ্টা পেরিয়ে গেল তিনজনের কেউই টের পেল না। এরপরেও হয়তো আরও অনেকক্ষণ এই গল্পের আসর চলত কিন্তু কুহেলির ফোনটা হঠাৎ বেজে ওঠায় বাধা পড়ল। কুহেলি একটু বিরক্ত হয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে স্ক্রীনে ফুটে ওঠা নামটা দেখেই অবাক হল, আলেখ শর্মা ফোন করছে। এতদিনের মধ্যে কখনও অফ ডে তে আলেখ ওকে ফোন করেনি, নিশ্চয়ই খুব গুরত্বপূর্ণ কিছু হবে মনে করেই চৈতালী দেবীকে বলে ল্যাপটপ টা অফ্ করে ফোনটা রিসিভ করল।

গুড আফটার নুন স্যার।

গুড আফটার নুন মিস বাসু, আই অ্যাম এক্সট্রিমলি সরি টু ডিস্টার্ব ইউ অ্যাট দিস টাইম।

নো নো স্যার, আপনি বলুন।

অ্যাকচুয়ালি, একটা প্রবলেম হয়েছে, তাই আপনাকে কল করতে বাধ্য হলাম।

কি হয়েছে স্যার?

কুহেলির গলায় চিন্তার সুর। সেটা কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেই আলেখ বলল,

তেমন সিরিয়াস কিছু নয়, রিল্যাক্স। আসলে মিস্টার আগরওয়ালের প্রজেক্টটার ফাইলটা আপনার কাছে আছে আর ওটা আমার একটু দরকার। আমি কালকেই আপনার কাছ থেকে নিয়ে নেব ভেবেছিলাম কিন্তু একদম ভুলে গিয়েছিলাম। সরি ইটস মাই ফল্ট।

ইটস ওকে স্যার, ইউ ডোন্ট নিড টু সে সরি। আপনি কোথায় আছেন বলুন আমি এক্ষুনি আপনাকে ফাইলটা পৌঁছে দিচ্ছি।

আমি বাড়িতে আছি, অঙ্কিত কে পাঠাতাম কিন্তু ওর ফোনটা নট রিচেবল বলছে, আমি নিজেও যেতে পারতাম কিন্তু আর পনের মিনিটের মধ্যে আমার একটা ভিডিও কনফারেন্স আছে, তাই আপনাকে একটু ট্রাবল দিতে বাধ্য হলাম।

এতে ট্রাবলের কিছুই নেই স্যার, আমি বাড়িতে এমনিই বসে ছিলাম। আপনি শুধু অ্যাড্রেস টা দিন, আমি পৌঁছে দিচ্ছি ফাইলটা।

ওহ শিওর, আমি এক্ষুনি টেক্সট করে দিচ্ছি।

ফাইন স্যার।

ফোনটা কেটে দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই কুহেলির ফোনে আলেখের মেসেজ ঢুকল। কুহেলি অ্যাড্রেস টা দেখে নিয়ে একটা ক্যাব বুক করে চট করে রেডি হয়ে নিল। ফাইলটা হাতে নিয়ে একটা ছোট স্লিং ব্যাগ কাধে নিয়ে নিল, শুধু পার্স আর মোবাইলটা নিল তাতে, অন্যকিছুর আপাতত প্রয়োজন নেই। ফ্ল্যাটটা লক করে নিচে পৌঁছানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই ক্যাব চলে এল, কুহেলি উঠে বসলে ক্যাব এগোল তার গন্তব্যের দিকে। জায়গাটা একটু দূরে, প্রায় আধাঘন্টা মত লাগবে যেতে, কুহেলির এই চুপচাপ বসে থাকতে একদম ভালোলাগে না। ফাইলটা খুলে চোখ বুলাতে লাগল, ফাইলটাও মিনিট দশেকের মধ্যেই দেখা হয়ে গেল। এখনও অনেকটা পথ বাকি, কারণে অকারণে মোবাইল নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে ওর একদম ভালোলাগে না। অগত্যা জানালা দিয়ে বাইরের দিকে চোখ রাখল, রবিবার বলে ব্যস্ততা অনেকটা কম, আশে পাশের দোকান পাট ঘরবাড়ি গুলো হু হু করে পিছনে সরে যাচ্ছে। আরও মিনিট পনের পর গাড়িটা ওকে ওর গন্তব্যে নামিয়ে দিল, প্রিপেইড ক্যাব তাই ভাড়া দেওয়ার ব্যাপার নেই। ক্যাব টা কুহেলিকে নামিয়ে দিয়ে চলে গেল, কুহেলি আগে কখনও আলেখের বাড়িতে আসে নি, তবে ও কল্পনা করেছিল বেশ একটা রাজপ্রাসাদের মত বাড়ি হবে। কিন্তু বাড়িটা যথেষ্ট বড় হলেও তেমন রাজকীয় নয়, খুবই সুন্দর ছিমছাম গোছের একটা বাংলো প্যাটার্নের বাড়ি। গেটের পাশের থামে জ্বলজ্বল করছে “ওঙ্কার ভিলা”, গেটে বহাল সিকিউরিটি গার্ড কুহেলিকে দেখে ওর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল,

কাকে চাই ম্যাম?

আমি ওঙ্কার গ্রুপসের এম্প্লয়ী, মিস্টার শর্মা আমাকে ডেকেছেন।

আপনি মিস বাসু?

ইয়েস।

গার্ড ওকে গেট খুলে দিয়ে বলল,

স্যার বলে রেখেছেন আপনি আসবেন, আপনি যান।

কুহেলি একটু হেসে গেটের ভিতরে পা রাখল। সুন্দর সাজানো গোছানো চারিদিকটা, সবুজ লনের বুক চিরে লাল রঙের রাস্তাটা চলে গেছে বাড়ির দিকে। একপাশে সুন্দর ফুলের বাগান দেখতে পেল কুহেলি, নানারকম ফুল ফুটে রয়েছে সেখানে। দেখেই বোঝা যায় নিয়মিত পরিচর্যা করা হয়, ছোট থেকেই কুহেলির ফুল খুব প্রিয়, কিন্তু শুধু গাছেই, ফুল ছেড়া ওর ভিষন অপছন্দ। রঙিন ফুলগুলো দেখে কুহেলির ঠোঁটে একটা মিষ্টি হাসি ফুটে উঠল, বাগানের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে এগিয়ে গেল বাড়ির মূল দরজার দিকে।

ক্রমশ_________

© স্বত্ব সংরক্ষিত

কেমন লাগছে এই নতুন কাহিনী জানাতে ভুলবেন না। আমি আপনাদের কমেন্টের অপেক্ষায় থাকি। আপনাদের সুন্দর সুন্দর কমেন্ট গুলো আমাকে আরও লেখার উৎসাহ দেয়। খুব তাড়াতাড়ি ফিরব আগামী পর্ব নিয়ে। ততদিন পর্যন্ত পড়তে থাকুন ভালো থাকুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here