সংগোপনে’ পর্ব-৪

0
2293

#সংগোপনে
#ধারাবাহিক_পর্ব_৪
#অচিন_পাখি_কলমে_ভাগ্যলক্ষ্মী_দাস

আগের পর্বের পর————-

ঠিক বারোটা পঞ্চাশে বাগডোগরা এয়ারপোর্টে ফ্লাইটটা ল্যান্ড করল। ফ্লাইট বোর্ড করার আগেই চৈতালী দেবীর সঙ্গে কথা বলে নিয়েছে কুহেলি, ওনারা আটটা নাগাদ পৌঁছে গেছেন। কুহেলি কীকরে একা চিনে যাবে সেটা নিয়ে বড্ড চিন্তা করছিলেন, কিন্তু কুহেলি যখন বলল দেবার্ঘ্য ওকে নিতে আসবে, তখন একটু অবাক হয়েছিলেন। কুহেলি ফেসবুকে ওর সঙ্গে দেবার্ঘ্যর আলাপের কথাটা বললে উনি নিশ্চিন্ত হয়ে বলেছিলেন,

দেবাঞ্জলির ভাই, তাহলে তো ভালই হল। যাক তুই তাহলে সাবধানে আসিস, আমি যাই একটু রেস্ট নিয়ে নিই, সারারাতের জার্নিতে কোমরটা ধরে এসেছে।

তুমি চিন্তা করো না মা, আমি ঠিক পৌঁছে যাব, তুমি রেস্ট কর।

দেবার্ঘ্যকে আগেই ফ্লাইটের টাইম মেসেজ করে দিয়েছিল, কিন্তু মুশকিল হল ও দেবার্ঘ্যকে চেনে না, ফেসবুকে কোথাও একটা ছবিও নেই। তবে ওর ফোন নাম্বারটা কুহেলির কাছে আছে, লাগেজ নিয়ে যখন এয়ারপোর্টের লবিতে এল তখন পুরোপুরি একটা বাজে। এদিক ওদিক দেখতে দেখতে এগোচ্ছিল, ফোনটা বের করে দেবার্ঘ্যর নাম্বারটা ডায়াল করতে যাবে এমন সময় একটা ছেলে আচমকা ওর সামনে এসে দাড়াল। কুহেলি এমন চমকে উঠেছিল যে আরেকটু হলে ওর হাত থেকে ফোনটা পড়েই যাচ্ছিল। প্রচন্ড রেগে গিয়ে কুহেলি বলল,

আশ্চর্য্য তো, এইভাবে দুম করে সামনে চলে এলেন কেন? চোখে দেখতে পান না নাকি!!

ছেলেটা একটু হেসে বলল,

দেখতে পাই বলেই তো এলাম।

কুহেলি চোখ কুঁচকে একরাশ বিরক্তি নিয়ে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলল,

দেখুন, সামনে থেকে সরুন, আমার কাছে নষ্ট করার মত ফালতু সময় নেই।

কিন্তু আমি সরে গেলে বাড়ি যাবে কীকরে?

কুহেলি অবাক হয়ে বলল,

দেবার্ঘ্য?

ইয়েস ম্যাম।

কুহেলি একটু হেসে বলল,

এরকম দুম করে সামনে এসে দাড়ানোর কি মানে ছিল?

কিছুই না, জাস্ট এমনি। সব কাজের কি মানে থাকতেই হবে?

সেটা পরে গবেষণা করা যাবে আগে বাড়ি চলুন। বড্ড খিদে পেয়েছে, সকালে কিছু খাওয়া হয় নি।

তুমি সকালে না খেয়েই বেরিয়েছ নাকি?

হুম, টাইম পাইনি।

তাহলে তো আগে কিছু খেতে হবে।

না, না, সোজা বাড়ি নিয়ে চলুন, এই দুপুরবেলা অন্যকিছু খেলে আর লাঞ্চটাই করতে পারব না।

শিওর? দেখ পৌঁছাতে আধাঘন্টা মত লাগবে কিন্তু।

লাগুক, নো প্রবলেম। বাট যাব কিসে?

আমার গাড়িতে।

আপনার পার্সোনাল কার আছে?

না ঠিক পার্সোনাল নয়, ওটা গোটা ফ্যামিলির জন্য, যখন যার লাগে।

কথা বলতে বলতে পার্কিং এরিয়ায় এসে কুহেলির ব্যাগটা গাড়ির ব্যাক সিটে তুলে দিয়ে সামনের দরজাটা খুলে কুহেলিকে বসতে ইশারা করল। কুহেলি উঠে সিটবেল্ট লাগিয়ে নিলে, দেবার্ঘ্য ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট করল। বাগডোগরা এয়ারপোর্ট থেকে গান্ধী নগর যেতে প্রায় আধাঘন্টা মত লাগে কিন্তু দুপুরবেলায় রাস্তা ফাঁকা থাকায় দেবার্ঘ্য কুড়ি মিনিটেই পৌঁছে দিল। একটা বেশ বড় বাড়ির সামনে এসে গাড়িটা থামল, কুহেলি গাড়ি থেকে নেমে চারপাশটা দেখছিল, দেবার্ঘ্য ওর লাগেজটা নামিয়ে এনে বলল,

চল, এই বাড়িটায় তোমাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

কুহেলি দেবার্ঘ্যর পাশে হাটতে হাটতে বলল,

কার বাড়ি এটা?

এটা, মলয় দা দের বাড়ি, জেঠু মানে মলয়দার বাবা মারা যাওয়ার পর ওরা পার্মানেন্টলি কলকাতায় শিফট করে গেছে, এই বাড়িটা জেঠু খুব শখ করে বানিয়েছিলেন তাই এটা বিক্রি করেনি, এইরকম অকেশনে ভাড়া দেয়।

ও।

কুহেলির বাড়িটা বেশ ভালো লাগল, কম পক্ষে পঞ্চাশ জন সহজেই থাকতে পারে, আর ও যতদূর জানে বরযাত্রী হিসেবে পঁচিশ জন আসার কথা। দেবার্ঘ্য এগিয়ে গিয়ে কলিংবেল বাজালে যিনি দরজা খুলে দিলেন তাকে দেখে দেবার্ঘ্য বলল,

নাও বিমল দা, আরেকজন অতিথি নিয়ে এলাম।

বিমল দা নামক ব্যক্তিটি হেসে কুহেলির ব্যাগটা নিয়ে এগিয়ে গেলেন। দেবার্ঘ্য জানাল এই বিমল দা এই বাড়িটার দেখাশোনা করে। কুহেলি বাড়ির ভিতর ঢুকতেই দেখতে পেল ড্রয়িংরুম জুড়ে মহিলা মহলের আসর বসেছে। কুহেলিকে দেখেই চৈতালী দেবী আসর ছেড়ে উঠে এলেন।

এসে গেছিস, আমি তো আরেকটু হলেই ফোন করতাম।

তারপর দেবার্ঘ্যর দিকে তাকিয়ে বললেন,

থ্যাঙ্ক ইউ, কুহুকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য।

কুহু?

হ্যা, ওর ডাক নাম।

দেবার্ঘ্য কুহেলির দিকে তাকিয়ে বলল,

দুটো নামই বেশ সুন্দর, আচ্ছা আমি আসি এখন বাড়িতে অনেক কাজ বাকি।

হুম, থ্যাঙ্কস।

ওয়েলকাম।

দেবার্ঘ্য কুহেলি আর চৈতালী দেবীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল। কুহেলিকে এতদিন পর কাছে পেয়ে শৈলজা দেবী ভিষন খুশি হয়েছেন, কিছুক্ষণ তো জড়িয়ে ধরে আদর করেই কাটিয়ে দিলেন। কুহেলির মামা চিরন্তন অন্য একটা ঘরে ছিল, কুহেলির আওয়াজ পেয়ে এসেই ওর কান মুলে দিয়ে বলল,

বড্ড বেশি বড় হয়ে গেছিস, না রে!! কাজ কাজ আর কাজ। একেবারে কালকে এলেই হত।

আউচ, মামা লাগছে তো। কি করব বল? কাজটাও তো দেখতে হবে।

চিরন্তন ওর কান ছেড়ে দিয়ে বলল,

জানিস তো, তোকে ছাড়া আমার কোনও কাজই কমপ্লিট হয় না।

কুহেলি একটা দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল,

এবার থেকে হবে, মামী আসলে দেখবে আমার কথা আর মনেই থাকবে না।

চিরন্তন আবার ওর কানটা মুলে দিয়ে বলল,

তবে রে, আমার সাথে ইয়ার্কি?

কুহেলি হাতটা ছাড়িয়ে ওর মাসির পিছনে লুকিয়ে হাসতে হাসতে বলল,

মাসী দেখ না, আমি সত্যি কথা বললাম বলে মামা আমাকে মারছে।

মামা ভাগ্নির এই খুনসুটি দেখে সবাই হাসতে লাগল। কুহেলি ওর মাসিকে জড়িয়ে বলল,

ও মাসি, বড্ড খিদে পেয়েছে।

এটা শুনে ওর মাসী চৈতী দেবী রান্নাঘরে গেলেন রান্না কতদূর দেখতে, দেবাঞ্জলিদের বাড়ি থেকেই একটা রান্নার ঠাকুর ঠিক করে দিয়েছে। কুহেলি ওর মায়ের দেখানো রুমটায় গিয়ে স্নান করে নিল, দুপুরে খাওয়াটা বেশ জমিয়ে হল। ঠাকুরের রান্নার হাত দারুন, কুহেলির মেসো আর মামা তো প্রশংসা থামাতেই পারছে না। খাওয়া দাওয়ার পর সবাই মিলে আবার গল্প করতে বসল, কিন্তু কুহেলি ওর মাকে বলে দোতলায় ঘরে চলে এল, একবার রুহির সাথে কথা বলা দরকার। সবটা বুঝিয়ে দিয়ে এসেছে যদিও, তাও মেয়েটা এখনও ঠিক সড় গড় হয়নি। এখানে গরমটা অনেক কম, হালকা করে ফ্যান চালিয়ে খাটে হেলান দিয়ে বসে রুহিকে ফোন করল কুহেলি।

হাই রুহি।

হাই কুহেলি দি। পৌঁছে গেছ তো?

হ্যা, ওদিকে সব ঠিক আছে তো? তোমার কোনও প্রবলেম হচ্ছে না তো?

সব ঠিক আছে, তুমি চিন্তা করো না। জাস্ট এনজয় করো।

হুম, কোনও প্রবলেম হলেই আমাকে ফোন করবে কিন্তু।

অফকোর্স, বাট তুমি এত টেনশন করো না। ওকে আমি রাখছি, স্যার একটা মিটিং ডেকেছেন।

ওকে, তুমি যাও, বাই।

রুহির সাথে কথা বলে হোয়াটসঅ্যাপ টা অন করল। নানা গ্রুপে নানারকম মেসেজ, বসে বসে সেগুলো দেখছিল এরমধ্যে দেবার্ঘ্যের ফোন এল।

হ্যালো।

ঘুমাচ্ছিলে? ডিস্টার্ব করলাম না তো?

না, না, আমি দুপুরে ঘুমাই না, বলুন।

আসলে দি একবার তোমার সাথে দেখা করতে চাইছে, কিন্তু ও তো এখন বিয়ের আগে বাড়ি থেকে বেরোতে পারবে না, তাই বলছিল তুমি যদি একবার আমাদের বাড়িতে আসতে।

হ্যা, নিশ্চয়ই কিন্তু আমি তো আপনাদের বাড়ি চিনি না।

সে তো আমি গিয়ে তোমাকে নিয়ে আসব। তুমি তাহলে বিকেলে পাঁচটা নাগাদ তৈরি হয়ে থেকো, আমি গিয়ে তোমাকে নিয়ে আসব।

ঠিক আছে।

ফোনটা রেখে কুহেলি নিচে নেমে এসে সবার সাথে বসল, বাকি দুপুরটা সবার সাথে গল্প করেই কেটে গেল। বিকেল হয়ে এলে কুহেলি দেবার্ঘ্যের কথাটা চৈতালী দেবীকে বলল, উনি আপত্তি করলেন না। কুহেলি ঝটপট একটা লং ফ্রক পরে রেডি হয়ে নিল, দেবার্ঘ্য পাঁচটার একটু আগেই চলে এল, কুহেলি বেরোনোর আগে ওর মামার কাছে গিয়ে কানেকানে বলল,

মামা, মামীকে কোনও সিক্রেট মেসেজ দিতে হবে নাকি?

চিরন্তন ওর কান টেনে দিয়ে বলল,

কানটা টেনে লম্বা করে দেব, যা এখান থেকে।

কুহেলি হেসে সবাইকে বলে দেবার্ঘ্যর সাথে বেরিয়ে এল। বাড়ির বাইরে এসে দেবার্ঘ্য কুহেলিকে বলল,

সরি, এখন একটু কষ্ট করে হেঁটেই যেতে হবে, গাড়িটা নিয়ে বাবা বেরিয়েছে, আর আমার বাইকের চাবিটা খুঁজে পেলাম না, তবে খুব বেশি দূরে নয়।

এর জন্য সরি বলার কি আছে? আমি মোমের পুতুল নই যে হাটতে পারব না।

কুহেলির কথায় ওরা দুজনেই হেসে উঠল। সকালে একসাথে আসলেও দেবার্ঘ্যকে সেভাবে লক্ষ্য করে দেখেনি কুহেলি, এখন পাশাপাশি হাটতে হাটতে ভাল করে দেখল। হাইট দেখে মনে হয় ছ ফুট নাহলেও তার কাছাকাছি হবে, ছিপছিপে গড়নের চেহারা, ফর্সা মুখের মধ্যে চোখ দুটো যেন বেশি করে নজরে আসে, দেখলেই মনে হয় যেন ঘুম জড়ানো। সব মিলিয়ে অত্যন্ত সুপুরুষ নাহলেও হ্যান্ডসাম। হঠাৎ কুহেলি জিজ্ঞেস করল,

আচ্ছা, এতদিন জিজ্ঞেস করব ভেবেও করা হয়নি, আপনার প্রোফাইলে আপনার একটাও ছবি নেই কেন?

এমনি, তোমার প্রোফাইলেও তো খুব বেশি ছবি নেই তোমার।

হুম, কিন্তু ডিপি টা তো আছে, তাছাড়াও আরো দুএকটা আছে।

দেবার্ঘ্য হেসে বলল,

ভাগ্যিস ছিল, তাই তো চিনতে পারলাম।

কুহেলি লক্ষ্য করল হাসলে দেবার্ঘ্যের বা গালে একটা টোল পড়ে, ফলে হাসিটার সৌন্দর্য্য আরও বেড়ে যায়। কুহেলি আর কিছু বলল না, চুপচাপ হাটতে লাগল। দেবার্ঘ্য মাঝে মাঝেই আড় চোখে কুহেলিকে দেখছিল, প্রথম যেদিন ফেসবুকে ফ্রেন্ড সাজেশনে কুহেলি বসু নামটা দেখেছিল, সেইদিনই একটা কৌতূহল হয়েছিল। কৌতূহল টা যে ঠিক কিসের সেটা নিজেও বোধকরি বুঝতে পারেনি, এমনিতে দেবার্ঘ্য নিজে থেকে কাউকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায় না, কিন্তু ডিপিতে রঙিন ফুলের বাগানের মাঝে দাড়ানো কুহেলিকে দেখে শেষমেশ রিকোয়েস্ট টা পাঠিয়েই দিয়েছিল। তারপর টুকটাক কথার মধ্যে দিয়ে আলাপ, যত দিন গেছে দেবার্ঘ্যর কৌতূহল টা আরও বেড়েছে, তবে এখন ও কৌতূহলের কারন টা জানে, কুহেলিকে জানার কৌতুহল। ওর খুব ইচ্ছে হয় কুহেলির সবটুকু জানতে, কথা বলে দেবার্ঘ্য বুঝেছে কুহেলি ঠিক অন্য মেয়েদের মত নয়, এত অল্প বয়সেই নিজের জীবনে ঠিক কি চায় সেটা ওর কাছে খুব স্পষ্ট। আর একটা জিনিষ যেটা বুঝেছে সেটা হল কুহেলির কাছে সবার আগে ওর কাজ, কোনোকিছুর বিনিময়ে ও নিজের কাজের সাথে কম্প্রোমাইজ করে না। কুহেলির এই বৈশিষ্ট্য গুলো দেবার্ঘ্যকে আরো বেশি করে আকর্ষণ করে, আর কুহেলিকে দেখার পর দেবার্ঘ্যর সবথেকে বেশি যেটা ভাললেগেছে, সেটা হল কুহেলির মিষ্টি হাসিটা। একটা অদ্ভুত কায়দায় শুধু ঠোঁট দিয়ে হাসে, ওর এই নিশব্দ হাসিটা দেবার্ঘ্যর মন ছুয়ে গেছে। ওদের বাড়িটা সত্যিই খুব একটা দূরে নয়, মিনিট দশেকের মধ্যেই পৌঁছে গেল, ছোটখাটো দোতলা বাড়িটা লোকে লোকারণ্য হয়ে রয়েছে, চরম ব্যস্ত সবাই। দেবার্ঘ্য কুহেলিকে দেবাঞ্জলির রুমে পৌছে দিয়ে ওর কাজে চলে গেল। দেবাঞ্জলি কুহেলিকে দেখেই জড়িয়ে ধরল, একে একে বাকিদের সাথেও পরিচয় করিয়ে দিল। সবাইকে বেশ ভালোলাগল কুহেলির, কত সহজে আপন করে নিল ওকে। বিশেষ করে দেবাঞ্জলির মা নিভা দেবী, কুহেলিকে একদম নিজের মেয়ের মত কাছে টেনে নিয়েছেন। আড্ডা দিতে দিতে ওদের টাইমের খেয়াল ছিল না, প্রায় সাড়ে আটটা নাগাদ চৈতালী দেবী ফোন করায় খেয়াল হল। দেবাঞ্জলি দেবার্ঘ্যকে ডেকে কুহেলিকে পৌঁছে দিতে বলল, দেবার্ঘ্য কুহেলিকে নিয়ে আবার হেটেই রওনা হল। সামনেই পূর্ণিমা, চাঁদের আলো আর স্ট্রিট ল্যাম্পের আলো মিলেমিশে একটা অদ্ভুত সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। কুহেলির বেশ লাগছিল এভাবে হাটতে, দেবার্ঘ্য হঠাৎ বলল,

তাহলে কবে ফিরছ যেন?

সাত তারিখ।

আমিও তো, সাত তারিখেই ফিরব, তোমার টিকিট বুক হয়েছে?

হুম, একেবারে বুক করে নিয়েছি।

হুম, আমারও বুক করাই আছে, কিন্তু প্রবলেম একটাই।

কি প্রবলেম?

বৌভাতের পরেরদিন বিকালে ফ্লাইট দমদম থেকে, বাকি সবাই তো এখানে ফিরে আসবে। সকালেই বাস ছেড়ে দেবে, কিন্তু আমি ওই সময়টুকু কোথায় থাকব সেটাই বুঝে উঠতে পারছি না, হোটেলে থাকতে পারতাম কিন্তু পরে করব পরে করব করে আর বুক করা হয়নি, আর কালকে চেক করে দেখলাম কোনও হোটেল খালি নেই, বিয়ের সিজন তো।

কুহেলি হাঁটা থামিয়ে কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল, তারপর বলল,

আপনি এই সামান্য ব্যাপার নিয়ে চিন্তা করছেন?

দেবার্ঘ্য ঠিক বুঝতে পারল না ওর কি বলা উচিত এখন, তাই কিছু না বলে অবাক চোখে কুহেলির দিকে তাকিয়ে থাকল। কুহেলি আবার বলল,

এটা কোনও প্রবলেমই নয়, আরে আমিও তো ওইদিন বিকালের ফ্লাইটেই ফিরব, মামাবাড়ীতে অত ভিড়ের মধ্যে ঠিক মত রিল্যাক্স হয়ে রেডি হতে পারব না, তাই মাকে বলেই রেখেছি আমি বৌভাতের পরেরদিন সকালেই আমাদের বাড়ি চলে যাব, মা আর ঠাম্মু পরে যাবে। আপনিও আমার সঙ্গে আমাদের বাড়িতে চলে যাবেন।

কুহেলির প্রস্তাব শুনে দেবার্ঘ্য অবাক হয়ে গেল, মাত্র কয়েকদিনের পরিচয়ে এইভাবে ওকে নিজের বাড়িতে যেতে বলবে এটা আশা করেনি। কুহেলি বোধহয় ওর মনের ভাবটা বুঝতে পেরেছিল, তাই হেসে বলল,

কালকের পর তো আমরা আত্মীয় হয়ে যাব, আর এক আত্মীয় আরেক আত্মীয়ের বাড়ি যেতেই পারে।

দেবার্ঘ্য হেসে বলল,

হুম, তা যেতেই পারে।

ব্যাস, তাহলে এটাই ফাইনাল রইল, আচ্ছা কটায় ফ্লাইট আপনার?

৫:১০।

আমারও তো, তার মানে সেম ফ্লাইট।

দেবার্ঘ্য হেসে বলল,

তাই তো দেখা যাচ্ছে, যাক ভালোই হল, আড়াই ঘণ্টার জার্নিটা ভালোই কাটবে।

উত্তরে কুহেলিও হেসে বলল,

সেটা কীকরে বলছেন? সিট তো নির্ঘাৎ আলাদাই হবে।

উম, সেটা নাহয় পরে ভাবা যাবে।

কথা বলতে বলতে ওরা দুজনেই কুহেলিরা যেখানে রয়েছে সেই বাড়িটার সামনে পৌঁছে গেল। দেবার্ঘ্য আর ভিতরে ঢুকল না, বাইরে থেকেই গুডনাইট জানিয়ে চলে গেল। কুহেলিও বাড়ির ভিতরে ঢুকে দেখল সবাই মোটামুটি কালকের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত, কুহেলিও হাত লাগাল, কাল ভোর থেকেই সব আচার অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে তাই কেউই বেশি রাত করল না, কাজগুলো গুছিয়ে তাড়াতাড়ি খাওয়া দাওয়া সেরে যার যার ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। পরদিন ভোর বেলা থেকেই শুরু হয়ে গেল নানারকম বিধি নিয়ম, একে একে সব অনুষ্ঠানের পর এল গায়ে হলুদ পর্ব। নিয়ম অনুযায়ী বরের গায়ের হলুদ কনের বাড়িতে পাঠানো হয়ে গেলে শুরু হল হলুদ দিয়ে হোলি খেলা, সে এক দেখার মত ব্যাপার, কে যে কাকে কোন ফাঁকে হলুদ লাগিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে বোঝা যাচ্ছে না। একপ্রস্থ হলুদ খেলার পর সবাই স্নানে গেল, তারপর খাওয়া দাওয়ার পর্ব মিটলে শুরু হল বরযাত্রী যাওয়ার পালা, সবাই পাল্লা দিয়ে সাজতে বসে গেল। লগ্ন যেহেতু পাঁচটা ছেচল্লিশে তাই হাতে খুব বেশি সময় নেই, কুহেলি আর ওর মাসির মেয়ে দিঠি একসাথে রেডি হচ্ছে। দিঠি একটা গোল্ডেন কালারের লেহেঙ্গা পরল, কুহেলির আবার শাড়ির প্রতি একটা আলাদা টান আছে। সুযোগ পেলেই শাড়ি পরে, বেশ ভালো করে গুছিয়ে পরতেও পারে কিন্তু একটাই প্রবলেম শাড়ি পরে হাটতে ওর একটু অসুবিধা হয়, কিন্তু তাতেও ও পিছপা হয়না। আজকেও একটা লাল রঙের নেটের শাড়ি পড়ল, সঙ্গে কনট্রাস্টে কালো রঙের ফ্যান্সি ব্লাউজ, চুলটা খোলাই রাখল, হাতে একটা ব্রেসলেট আর ঘড়ি, কানে বেশ বড় বড় দুটো ম্যাচিং ইয়াররিং পরল, গলায় একটা ছোট্ট লকেট দেওয়া চেন। তার সাথে মানানসই মেক আপ, ফর্সা মুখটায় লাল লিপস্টিক টা যেন বেশি করে দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। এমনিতেই সুন্দরী কুহেলি যেন আজ অসামান্যা সুন্দরী হয়ে উঠেছে। দিঠি তো বলেই ফেলল,

কুহু দি, আজ মনে হচ্ছে বিয়েবাড়িতে যত ছেলে আসবে তারা আর সুস্থ শরীরে বাড়ি ফিরতে পারবে না, সবাই হার্টের প্রবলেম নিয়ে ফিরবে।

কুহেলি একটু হেসে বলল,

এখনও কলেজেও উঠিসনি, আর এখনই এত পেকে গেছিস? দাড়া বলছি মাসিকে।

বা রে, আমি তো যেটা সত্যি সেটাই বললাম।

থাক অনেক সত্যি বলেছিস, তাড়াতাড়ি কর নাহলে দেরী হয়ে যাবে।

ওদের কথার মাঝেই নিচের শোরগোল শুনেই বোঝা যাচ্ছে কনের বাড়ি থেকে বর নিতে এসেছে। কুহেলি আর দিঠি নিচে নেমে এল, বাকিরাও ততক্ষণে রেডি হয়ে গেছে, চিরন্তন কে নিয়ে যাওয়ার জন্য দেবার্ঘ্য আর সঙ্গে আরও একটা ছেলে এসেছে, কুহেলি দেবার্ঘ্যকে দেখে কেমন যেন স্থির হয়ে গেল, ডিপ নেভি ব্লু পাঞ্জাবী আর ঘিয়ে রঙের ধুতিতে যে কেউ ওকেই বর ভেবে ভুল করবে। কুহেলি চেষ্টা করেও চোখ দুটো সরাতে পারছে না, দেবার্ঘ্য কিন্তু কুহেলিকে লক্ষ্য করেনি, লগ্ন প্রায় হয়ে এসেছে তাই এখন চিরন্তন কে নিয়ে যাওয়াটাই প্রধান কাজ। বেশি সময় নস্ট না করে সবাই কোলতুলুনির বিধি শুরু করল, কুহেলির দিদা অনেকদিন আগে মারা গেছেন তাই মায়ের কাজটা শৈলজা দেবী পালন করলেন। চিরন্তন কিন্তু সেই চির প্রচলিত কথাটা আউড়ালো না, খুব সহজ ভাবে বলল,

তোমার জন্য একটা মেয়ে আনতে যাচ্ছি।

কথাটা শুনে উপস্থিত সবাই খুব খুশি হল, সত্যিই এইযুগে দাড়িয়েও অনেকেই ঘরের বউকে দাসী ভাবতে দুবার ভাবেন না। বিধি সম্পূর্ণ হলে দেবার্ঘ্যরা চিরন্তন কে নিয়ে চলে গেল, বাকিদের গাড়িও এসে গেছে। কুহেলি স্থির হয়ে এক জায়গায় দাড়িয়েছিল, হঠাৎ দিঠির ঠেলায় হুশ ফিরল, গাড়িতে উঠে কুহেলি ভাবনার জগতে ডুবে গেল। স্কুল কলেজে অনেকেই কুহেলিকে প্রেম নিবেদন করেছে তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন যথেষ্ট সুপুরুষ ছিল কিন্তু কুহেলির মনে তাদের কেউই কোনও প্রভাব ফেলতে পারেনি, এমনকি ওর বস আলেখ শর্মা যে কিনা গোটা অফিসের মেয়েদের হার্টথ্রব, তাকে দেখেও কোনদিনও ওর মনে কোনও আলাদা অনুভূতির সৃষ্টি হয়নি, তাহলে আজকে দেবার্ঘ্যকে দেখে একটা অন্যরকম অনুভূতি কেন উকি দিচ্ছে? উত্তরটা কুহেলির অজানা। দুরত্ব টা কম হওয়ায় একটু পরেই ওরা দেবাঞ্জলিদের বাড়িতে পৌঁছে গেল, বাড়ির সামনেই একটা খোলা মাঠে বড় করে প্যান্ডেল করে বিয়ের ব্যবস্থা হয়েছে। চারপাশটা আলোয় ঝলমল করছে, বর আগেই এসে গেছে এবার বরযাত্রীদের আপ্যায়নে কনের বাড়ির লোকেরা ব্যস্ত হয়ে পড়ল। এতদূরে বিয়ে বলে খুব কম সংখ্যক বরযাত্রী এসেছে, দিঠি কুহেলির হাত ধরে এগোতে লাগল, এখানে এসে থেকেই কুহেলির চোখ দুটো ওর অজান্তেই যেন কাউকে খুঁজে চলেছে, বিয়ের মণ্ডপের সামনে এসে ওর খোজ সম্পূর্ণ হল। চিরন্তন বিয়েয় বসে গেছে, পুরুত মশাই বিধি শুরু করে দিয়েছেন, একগাল হাসি নিয়ে দেবার্ঘ্য চিরন্তনের পাশেই দাড়িয়ে আছে, ওর বা গালের টোল টা এখান থেকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে কুহেলি। পুরুত মশাই একটু পরেই কনেকে নিয়ে আসতে বললেন, দেবার্ঘ্য চলে গেল দেবাঞ্জলিকে আনতে। একটু পরেই সবাই হৈ হৈ করে দেবাঞ্জলিকে পিড়িতে করে নিয়ে এল, দেবার্ঘ্য আর অন্য একটি ছেলে পিড়িটা ধরে আছে, একে একে সাতপাক ঘোরা, শুভদৃষ্টি, মালাবদলের পর বর কনেকে মুখোমুখি বসিয়ে শুরু হল বিয়ের বাকি অনুষ্ঠান। কুহেলির বেশ ভালোলাগছিল এইসব দেখতে, কিন্তু মাঝে মাঝেই ওর চোখদুটো কেন যে দেবার্ঘ্যর দিকে চলে যাচ্ছিল সেটা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিল না। দিঠি সোজা গিয়ে দেবাঞ্জলির পাশে বসে পড়েছে, বাকিরাও সবাই এখন মণ্ডপের কাছেই রয়েছে, কুহেলি ওখান থেকে সরে এসে কাউন্টার থেকে একটা জুসের গ্লাস হাতে নিয়ে একটু সাইডে সরে এসে দাড়াল। এখন একটু একা থাকা প্রয়োজন, মনের মধ্যে হঠাৎ সৃষ্টি হওয়া অনুভূতি গুলোর কারনটা খুঁজে পাওয়া দরকার। এদিকে দেবার্ঘ্যর আপাতত কোনও কাজ নেই, শিলিগুড়িতে এই জৈষ্ঠ্য মাসে কোলকাতা বা ব্যাঙ্গালোরের মত না হলেও গরমটা একেবারে মন্দ পড়ে না, তার মধ্যে এই ধুতি পাঞ্জাবী। ভিড় থেকে একটু সরে এসে একটা ফ্যানের সামনে দাড়াল একটু হাওয়া খাওয়ার উদ্দেশ্যে, হঠাৎ চোখে পড়ল কুহেলি একপাশে দাড়িয়ে আছে। কুহেলিকে দেখে একমুহুর্তের জন্য যেন দেবার্ঘ্যর হৃদযন্ত্রটা স্পন্দিত হতে ভুলে গেল, উজ্জ্বলা কুহেলির অঙ্গে লাল শাড়িটা যেন অসম্ভব সুন্দর ভাবে ফুটেছে। দেবার্ঘ্য কিছুক্ষণ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল, নিজের অজান্তেই বলে উঠল,

বিউটিফুল।

কুহেলিকে একা দেখে ওর কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল,

এখানে একা একা দাড়িয়ে কি করছ?

কুহেলি আপনমনে নিজের প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজছিল, আচমকা দেবার্ঘ্যর কথায় এমনভাবে চমকে উঠল যে হাতে থাকা গ্লাসটা থেকে খানিকটা জুস চলকে ওর বুকের ওপর পড়ল। পাতলা নেটের শাড়ি আর ফ্যান্সি ব্লাউজের নরম কাপড় মুহুর্তের মধ্যে ভিজে গিয়ে কুহেলির শরীরের নিখুঁত যৌবনকে সুস্পষ্ট করে তুলল, সেদিকে দৃষ্টি যেতেই দেবার্ঘ্যর বুকে যেন এক আদিম উত্তেজনার সঞ্চার হল। কুহেলি অপ্রস্তুত হয়ে উল্টো দিকে ঘুরে দাড়াল, দেবার্ঘ্য বুঝতে পেরে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,

তোমার শাড়িটা তো ভিজে গেল, আমাদের বাড়িতে চল, ওয়াশরুমে গিয়ে একটু ঠিক করে নেবে।

কুহেলি পিছন ফিরেই বলল,

না, না, ঠিক আছে, আমার অসুবিধা হবে না।

এভাবে সবার সামনে এতক্ষণ থাকবে কীকরে? আমার কথা শোনো, আমাদের বাড়িতে চল।

কুহেলি আর কথা না বাড়িয়ে রাজি হয়ে গেল, সত্যিও এইভাবে থাকাটা সম্ভব নয়, তারমধ্যে জুসটা পড়ে কেমন চটচট করছে। দেবার্ঘ্যদের বাড়িটা এখন একদম ফাঁকা, কেউ নেই, সবাই বিয়ের আসরে রয়েছে। দেবার্ঘ্য কুহেলিকে নিয়ে নিজের রুমে এসে একটা টাওয়েল দিয়ে ওয়াশরুম টা দেখিয়ে দিল, কুহেলি ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলে দেবার্ঘ্য খাটের ওপর বসে একটু আগে ঘটা ঘটনাটা চিন্তা করতে লাগল। এই ছাব্বিশ বছরের জীবনে অনেক মেয়ে দেখেছে সে কিন্তু তাদের কাউকে দেখেই এমন অনুভূতি হয়নি যেমনটা একটু আগে কুহেলিকে দেখে হয়েছে, একটা প্রবল উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল মনে যার রেশটা এখনও অনুভব করতে পারছে, কিন্তু এর কারণ কি? কুহেলির মতই দেবার্ঘ্যরও কাছেও কারনটা অজানা। কুহেলি ওয়াশরুমে ঢুকে টাওয়েলটা ভিজিয়ে শাড়ি আর ব্লাউজটা উপর উপর একটু মুছে নিল, তাতে চটচটে ভাবটা কমলেও শাড়ি আর ব্লাউজটা আরও ভিজে গেল। ব্লাউজটা তো যেন একেবারে গায়ের সাথে লেগে গেছে, এভাবে কিছুতেই বাইরে যাওয়া সম্ভব নয়, কুহেলি আঁচলটা ছেড়ে রেখেছিল, এখন সেফটিপিন টা খুলে ভালো করে প্লিট করে খুব সাবধানে ভেজা জায়গাটা যথাসম্ভব ঢেকে পিন করে নিল। প্লিট করার ফলে কুহেলির ফর্সা মেদহীন পেট আর কোমরের কিছুটা অংশ এখন দৃশ্যমান, এতে যেন ওকে আরও বেশি আকর্ষণীয় লাগছে। কুহেলির এমনিই একটা অস্বস্তি হচ্ছিল তারমধ্যে এই অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতিতে পড়ে অস্বস্তিটা যেন বেড়ে গেল। ওর এমনিতেই শাড়ি পরে হাটতে একটু অসুবিধা হয় তারমধ্যে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে তাড়াতাড়ি করে রুম থেকে বেরোনোর জন্য এগোতে গেলেই শাড়িতে পা জড়িয়ে গেল। দেবার্ঘ্য সেটা লক্ষ্য করে একহাত দিয়ে কুহেলির কোমরটা ধরে নিল কিন্তু শেষরক্ষা হল না, কুহেলিকে নিয়েই বিছানার ওপর পড়ে গেল। কুহেলি পড়ে যাওয়ার ভয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে নিল, আর দেবার্ঘ্য….. ওর চোখ দুটো তখন স্থির হয়ে আছে কুহেলির মুখের ওপর, খোলা চুলের কিছুটা অংশ ছুয়ে যাচ্ছে দেবার্ঘ্যের চোখ মুখ, কালো চুলগুলো থেকে ভেসে আসা মিষ্টি একটা গন্ধ যেন নেশা ধরিয়ে দিচ্ছে। পড়ে যাওয়ার সময় কুহেলির শাড়ির আঁচলটা কিছুটা সরে গিয়েছিল, ভেজা ব্লাউজের ফাক দিয়ে সুগভীর বক্ষ বিভাজিকা প্রকট হয়ে উঠল, দেবার্ঘ্যর দৃষ্টি ধীরে ধীরে কুহেলির মুখ থেকে নেমে নিবদ্ধ হল সেইদিকে। বুকের ওপর কুহেলির উদ্ভিন্ন যৌবনের ছোয়া যেন দেবার্ঘ্যর সারা শরীরে আলোড়ন সৃষ্টি করল, কুহেলির কোমর জড়িয়ে থাকা ওর হাতটা কখন যেন ওর অজান্তেই কুহেলির পিঠে উঠে এসেছে। এতক্ষণ কুহেলি চোখ দুটো বন্ধ করেই রেখেছিল, যেন একটা ঘোরের মধ্যে ছিল, হঠাৎ পিঠের উন্মুক্ত অংশে দেবার্ঘ্যের হাতের স্পর্শ পেয়ে শিউরে উঠল। চমকে চোখ খুলে নিজের অবস্থানটা বুঝতে পেরেই এক ঝটকায় উঠে দাড়িয়ে শাড়ির আঁচলটা ঠিক করে নিল, তারপর একটু ইতস্তত করে বলল,

আমাদের যাওয়া উচিত, ওখানে সবাই হয়ত খুঁজছে।

বলে একমুহুর্তও অপেক্ষা না করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল, দেবার্ঘ্যও ততক্ষণে উঠে দাঁড়িয়েছে, এতক্ষণ নিজের অজান্তেই কি করছিল সেটা ভেবেই অদ্ভুত লাগল, সঙ্গে একটা খারাপলাগাও কাজ করতে লাগল। মনে মনে ভাবতে লাগল,

ইশ, কুহেলি কি ভাবছে কে জানে? কিন্তু আমি তো জেনে বুঝে কিছু করিনি, কোথা থেকে কি যে হয়ে গেল আমি তো নিজেই বুঝতে পারলাম না। নাহ, সুযোগ বুঝে একবার ওকে সরি বলে ব্যাপারটা ক্লিয়ার করে নিতে হবে।

এরপর গোটা সময়টা ওরা দুজনেই দূরে দূরে থেকেই কাটিয়ে দিল, কিন্ত আড় চোখে দুজনেই মাঝে মধ্যে দেখে নিয়েছে অন্যজনকে। বিয়ে মিটতে মিটতে সাড়ে সাতটা হয়ে গেল, তারপর নিমন্ত্রিতদের সঙ্গে আলাপ পরিচয় সেরে খাওয়া দাওয়া হতে হতে রাত সাড়ে এগারোটা। বউ নিয়ে যেহেতু আগামীকাল সন্ধ্যের আগেই কলকাতা ফিরতে হবে তাই বাসর জাগার পর্বটা বাতিল করতে হল, ভোর সাড়ে চারটের সময় রওনা হতে হবে তাই এই দুচার ঘণ্টার বিশ্রাম টা সবার খুব প্রয়োজন। চিরন্তনের সঙ্গে চৈতালী দেবী আর চৈতী দেবী রয়ে গেলেন, বাকিরা সবাই ফিরে এল। শাড়িটা ছেড়ে কুহেলি যখন ওয়াশরুম থেকে বেরোল, দিঠি অলরেডি ঘুমিয়ে পড়েছে, কুহেলিও ওর পাশে চুপচাপ শুয়ে পড়ল। শুয়ে শুয়ে আজকের ঘটনা গুলো ভাবছিল, সবকিছু কেমন যেন উল্টো পাল্টা লাগছে, হঠাৎ করে কেন এইভাবে দেবার্ঘ্যর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ল সেটা এখনও বুঝে উঠতে পারছে না। সব কিরকম ঘেঁটে গেছে, কিন্তু কুহেলি সহজে বিচলিত হওয়ার মেয়ে নয়, কিছুক্ষণ চোখটা বন্ধ করে মনটাকে শান্ত করল। নিজের মনে নিজেকে বোঝাল,

রিল্যাক্স, এমন কিছুই হয়নি, এটাকে মনে রাখার কোনও দরকার নেই, সিম্পলি ভুলে যাওয়াটাই বেটার।

মনটা অনেকটা শান্ত হয়ে এল, কিন্তু দেবার্ঘ্যর প্রতি যে একটা আলাদা আকর্ষণ ওর মনে জন্ম নিচ্ছে সেটাকে উপেক্ষা করতে পারল না। তবে এটা নিয়ে খুব বেশি ভাবল না, ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই উঠে পড়তে হবে তাই চোখটা বুজে ঘুমানোর চেষ্টা করল। ভোর হওয়ার আগেই দেবার্ঘ্যদের বাড়িতে বিদায় পর্বের নিয়ম শুরু হয়ে গেল, এই কান্নাকাটির পর্বটা ভালোলাগে না বলেই কুহেলি এখানে থাকেনি। বিদায় পর্ব সেরে দেবাঞ্জলিকে নিয়ে গাড়ি রওনা দিল কূহেলিরা যে বাড়িতে আছে তার উদ্দেশ্যে, ওখান থেকে একসাথে সবাই রওনা হবে কলকাতার উদ্দেশ্যে। কুহেলিরা সবাই তৈরি হয়েই ছিল, চিরন্তনদের গাড়িটা এসে পৌঁছলেই বাকিরাও বাসে উঠে পড়ল, দেবার্ঘ্য এসেছে এই পর্যন্ত, কুহেলি ওর চোখের দিকে তাকিয়েই বুঝতে পারল, অনেকক্ষণ ধরে কেদেছে। দেবাঞ্জলি এখনও কাদছে, শেষ মুহূর্তে এসে দেবার্ঘ্যর হাত ধরে একেবারে কান্নায় ভেঙে পড়ল, বাসে বসে দেবার্ঘ্যর চোখের জলটাও নজরে এল কুহেলির, এই মুহূর্ত গুলো ওর একেবারেই ভালোলাগে না, ওর চোখদুটোও হালকা ভিজে এল। চৈতালী দেবী আর চৈতী দেবী দুজনে মিলে অনেক বুঝিয়ে দেবাঞ্জলিকে শান্ত করলেন, ওদের গাড়িতে চিরন্তন আর দেবাঞ্জলির সাথে শুধু কূহেলির মেসো দীপক বাবু রইলেন। বাকিরা সবাই বাসে উঠে পড়ল, নির্দিষ্ট সময়ে গাড়ি আর বাস শিলিগুড়ি ছেড়ে রওনা দিল কলকাতার উদ্দেশ্যে। দেবার্ঘ্য কান্না ভেজা চোখে তাকিয়ে রইল এগিয়ে যাওয়া গাড়িটার দিকে, সেই ছোট্টবেলার সাথী ওর দিদি আজ একনিমেষে কতটা দূরে চলে গেল। গাড়িটা সামনের বাঁক টা ঘুরে মিলিয়ে যেতেই বাড়ির পথে পা বাড়াল দেবার্ঘ্য।

ক্রমশ_________

© স্বত্ব সংরক্ষিত

কেমন লাগছে এই নতুন ধারাবাহিক? আমাকে কমেন্ট করে জানাবেন কিন্তু। আজকের পর্বটা অনেকটা বড় করে দিয়েছি। আর একটু স্পেশ্যাল করারও চেষ্টা করেছি। কুহেলি আর দেবার্ঘ্যর সাক্ষাৎ টা কেমন লাগল জানাতে ভুলবেন না কিন্তু। আগামীতে কেমন হবে ওদের সম্পর্ক? কি মনে হয়? আপনাদের ভাবনাগুলো আমাকে জানাবেন। দেখি গল্পের মাধ্যমে কতটা একাত্ম হতে পেরেছি আমরা। আপনাদের মূল্যবান মতামতের অপেক্ষায় রইলাম। খুব তাড়াতাড়ি ফিরব আগামী পর্ব নিয়ে, ততদিন পর্যন্ত পড়তে থাকুন ভালো থাকুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here