#সিন্ধুর_নীল (পর্ব-১২)
লেখনীতে–ইনশিয়াহ্ ইসলাম।
১৬.
নিদ্রা এহসানকে দেখেও দেখছেনা এমন ভাব করে আছে। এহসানও নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছে দ্বিধার জন্য। কাল রাতে যা হয়েছে তাতে সে লজ্জিত। শত চেষ্টা করেও পারেনি নিজেকে আটকাতে। নিয়ন্ত্রণ নামক কঠিন বস্তুটি তাকে ছুঁতে পারল না। সে কারণেই বর্তমানে সে অপরাধীর ন্যায় বসে আছে। তবে সব ভেতরেই চলছে। বাহিরে অপ্রকাশিত তার সকল লজ্জা আর অপরাধবোধ। সুন্দর মুখশ্রীতে গম্ভীরতার ছটা ভরপুর। নিদ্রার এহসানকে একেবারে সহ্য হচ্ছেনা। ইচ্ছে করছে প্লেন থেকে ফেলে দিতে। উদ্ভট সব চিন্তা তার মস্তিষ্কে ঘুরপাক খাচ্ছে। নিরবতা ভেঙে এহসান বলল,
“তোমার কী কোনো সমস্যা হচ্ছে?”
বদৌলতে তেঁতে উঠে নিদ্রা বলল,
“সকল সমস্যা সৃষ্টি করে বলছেন সমস্যা হচ্ছে! আপনি আদৌ মানুষ তো?”
এহসান ভ্রু কুঁচকে নেয়। তার জানামতে সে কোনো সমস্যা সৃষ্টি করেনি। হয়তো গতকালের ব্যাপারে সে এমন আচরণ করছে। এতই যখন সমস্যা সমস্যা করছে তখন সে বাধা দেয়নি কেন? পূর্ণ উপভোগ করেছে সে। এখন হয়তো কথাটা বলতে বা শুনতে খারাপ লাগছে তবে তা সত্য। তার কাছে খারাপ লাগলে বা সে রাজি না থাকলে বারণ করেনি কেন? দোষ কী শুধুই এহসানের! কপট রাগ দেখিয়ে এহসান বলল,
“তোমায় কেউ জোর করেনি নিদ্রা। তুমি সব কিছু স্বেচ্ছায় করেছ। আমি তোমায় মোটেও ….” এহসান আর বলল না কিছু। বাজে লাগছে এসব কথাবার্তা।
নিদ্রার ঠোঁটে হাসি চোখে ক্রোধ! এহসানকে সেই ঠোঁট দিয়ে ছুঁড়ে দিল এক বড় প্রশ্ন।
“তবে কি আপনার কাছে শরীরই সব! না মানে সে নিহারীকা হোক বা অন্য কেউ। বউ যে-ই হোক না কেন চাহিদা মেটাতে পারলেই হলো! তাই না?”
এহসান হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে রাগ সংবরণের চেষ্টা করে আর সফলও হয়। সে মৃদু হেসে নিদ্রার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
“জিনিয়াস গার্ল! কি সুন্দর বুঝে গেলে। ঠিকই বলেছ তুমি, আমার কাছে ঐটাই সব। যে কেউ হলেই হলো। তবে তুমি হলে বেশি ভালো হয়। তাই তো আজীবনের জন্য তোমায় নিজের করে নিলাম। প্রতি মুহূর্ত, প্রতি ক্ষণ তুমি আমার কাছে নিজেকে সপে দিতে বাধ্য।”
নিদ্রার কান গরম হয়ে গেল। বুক ধক করে উঠল, নিঃশ্বাস দ্রুত বেগে চলতে লাগল, আঁচলের কোণা খামচে ধরলো। আশ্চর্য! এতো লজ্জা কেন লাগছে? রাগ হচ্ছে না কেন! এখন তো এহসানকে ফেলে দিতে ইচ্ছা করছেনা, তার নিজেরই প্লেন থেকে ঝাপ দিতে ইচ্ছা করছে। গতরাতের অতিব ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত স্মৃতিপটে ভেসে উঠছে। সব কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছে। এই লোকটা তাকে জ্বালিয়ে মারছে!
——————————————–
গাড়িতে ওঠার পরপরই একটা চমক পেল নির্ঝর। অভ্র নাকি ঢাকা ফিরছেনা এখনই। তার নাকি রিফ্রেশমেন্ট প্রয়োজন। তাই এখন তারা কক্সবাজার যাচ্ছে। কথাটা শুনে প্রথমে রাগ দেখালেও পরবর্তীতে মেনে নেয় সে। সত্যি বলতে তার নিজেরও এখন কিছুটা সময় দরকার। একান্ত নিজের! তাছাড়া ছুটিও আছে হাতে। সমস্যা হবে না দুইদিন ঘুরে আসলে। চাকরীতে ঢোকার পর আজ দুই বছরে সে ঘুরতে পারেনি তেমন একটা। এবার যখন সময়, সুযোগ দু’টোই আছে তবে দেরি না করে তা উপভোগ করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
অভ্র জানতো যে নির্ঝর তার কথা শুনবে। তাই তো গতরাতেই বুক করে ফেলেছে হোটেল রুম। রুম একটাই পেয়েছে সেটাই অনেক।
“এই অভ্র! তোর মনে আছে লাস্ট টাইম কক্সবাজারে গিয়ে একটা মেয়ের প্রপোজাল পেয়েছিলাম!”
“থাকবেনা কেন? আলবৎ মনে থাকবে আফটার অল তোর লাভারস্ নিয়ে কথা।”
“আরে ওরা মোটেও আমার লাভার্স না। আমি তো….
“থাক ভাই। আজ আমি কালো বলে কারো ক্রাশ বা লাভ কিছুই হতে পারিনা।”
“কে বলেছে পারিস না! আদাহ্ তো তোর জন্য জীবন দিতে রাজি।”
“তুই পিচ্চিকে টানিস কেন? ও জানে তুই যে ওকে এভাবে পঁচানি খাওয়াস?”
“উহু! জানেনা কিছুই। তবে আমি জানি অনেক কিছু।”
“তেমন কিছুই না। ও ছোট আর বয়সটাও হচ্ছে দূরন্তপনার। এই বয়সে তার অনেক অনুভূতিই হবে তবে সবই যে ধরে বসে থাকতে হবে তা নয়। বোঝার চেষ্টা কর!”
“তুই কর। আমি করতে পারব না।”
“তুই চাস না তাই বুঝিস না।”
“চেয়ে কি লাভ? আমি কি যা চাই তা পাই!”
“না পাবি কীভাবে! তুই তো দেবদাস। দেবদাস পারোকে তো শত সহস্রবার চেয়েও পায়নি।”
“নিদ্রা নামক হরিণী ধরা দেয়নি মোর জালে। এটা কি মোর দোষ নাকি তার!”
“ছন্দ বা কথা কিছুই মিলছেনা। কবি কবি ভাব আনিস না নিজের মধ্যে। তোর জন্য তা বেমানান।”
নির্ঝর তপ্ত শ্বাস ফেলে বাহিরে দৃষ্টি স্থাপন করে। নিদ্রা তার দীর্ঘশ্বাস হয়েই থাকবে হয়তো। নিদ্রার কথা ভাবতে তার নিজেরও অস্বস্তি হয়। নিজেরই ভাইসম বন্ধুর স্ত্রীকে নিয়ে এমন চিন্তা ভাবনা কেবল কাপুরুষরাই করতে পারে। সে তাদের দলের নয়। তবুও! থেকে যায় এমন অনেক না পাওয়া বস্তুর প্রতি একরাশ ইচ্ছা।
১৭.
মৃত্যুঞ্জয় বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলেছে। নিহারীকা দশ মিনিট দশ মিনিট করে বিগত ত্রিশ মিনিট তাকে আপেক্ষা করাচ্ছে। প্রথম দশ মিনিট শান্ত থাকলেও এখন চরম অশান্ত হয়ে উঠেছে। ইচ্ছে করছে একাই সেখানে চলে যাওয়ার। কিন্তু নিহারীকা ছাড়া সে অচল হয়ে পড়বে সেই কঠিন মুহূর্তে। ফরাসি ভাষা এবং সংস্কৃত ভাষা দু’টোতেই নিহারীকা পারদর্শী। মৃত্যুঞ্জয় যদি জানতো যে গোপন দরজা খোলার জন্য এই দুই ভাষার দরকার পড়বে তাহলে সে আরো আগেই তা রপ্ত করে ফেলতো। এখন দশদিনে সে কীভাবে পারবে তা সে নিজেই জানেনা। দশদিনের তিনদিন শেষ। এখন আর সাতদিন বাকি আছে। এই সাতদিনে যে করেই হোক তাকে পৌঁছাতে হবে সেই জায়গায়।
নিহারীকা যখন এলো তখন মৃত্যঞ্জয় নিজের বিরক্তি লুকিয়ে ফেলল। এমন ভাব করল মনে হয় কিছুই হয়নি। নিহারীকা চাইলে আরো দশদিন পরে আসতে পারে তার কোনো সমস্যা হবে না। তবে ভেতরে ভেতরে সে রেগেও আছে। মৃত্যুঞ্জয়ের সবচেয়ে বড় গুণ হলো সে নিজের ভেতরকার ভাব এমন করে মুখের অভিব্যক্তির সাথে বদলে ফেলতে পারে যে অপর মানুষ টেরই পাবেনা তার মনে কি চলছে।
“আপনাকে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করালাম। আমি দুঃখীত।”
“কোনো সমস্যা নেই। আপনি চাইলে আমরা আজ না গিয়ে কাল বা পরশু যেতে পারি।”
নিহারীকা মৃত্যুঞ্জয়ের ঠান্ডা গলার শান্ত মস্তিষ্কে করা সূক্ষ অপমান ধরে ফেলে। ঠোঁট বাঁকিয়ে মৃদু হেসে হাত নাড়িয়ে শুধু বলল,
“চলুন, যাওয়া যাক!”
অবশেষে তারা বেরিয়ে গেল অজানা তবে নির্দিষ্ট এক গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। যাত্রাকালীন সময়ে নিহারীকা জানতে পারে মৃত্যুঞ্জয় জমিদার বংশের ছেলে। নিহারীকা অবাক হয়নি তা শুনে কারণ সে প্রথমেই অবগত ছিল যে এই ছেলে যেন তেন কেউ নয়। এর জমিদার শাহনেওয়াজের সম্পর্কে এতো কিছু জানার কথা নয়। তবুও সে সব জানে আর তাই তো শাহনেওয়াজের সবচেয়ে বড় এবং গোপন রত্ন উদ্ধারে নেমেছে সে।
#চলবে।
(বেশ কিছুদিন যাবৎ আইডিতে ঢুকতে পারিনি। আমার আইডি কেউ হ্যাক করেছিল আমার ধারণা মতে। কারণ আমি কখনোই রাজশাহী যাইনি আর আমার আইডির লোকেশন এসেছিল সেখান থেকে। তৎক্ষণাত পাসওয়ার্ড বদলে আইডি অফ করে দিয়েছিলাম। এখন সব কিছ ঠিক ঠাক পুনরায় ফিরে আসলাম। সবার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।)