সিন্ধু ইগল – (১২)

সিন্ধু ইগল – (১২)
ইসরাত জাহান দ্যুতি

৩০
চোখে-মুখে খু্ব গাম্ভীর্যতা ফুটিয়ে তুলে মাধু বলল, ‘তোকে জায়িন বিয়ের প্রপোজাল দিয়েছে। তুই ক্লিয়ার বুঝতে পারছিস না?’

কথাগুলো শুনেও জাদু কেমন অবহেলার সঙ্গে বোনের দিকে এক ঝলক তাকিয়ে আবার ল্যাপটপের স্ক্রিনে চোখ ফেরাল। স্ক্রিনে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ ঠোঁট কামড়ে ধরে চেহারাটা কেমন যেন করে বলে উঠল, ‘হোয়াট আ সিন ম্যান! সো থ্রিলিং! এত্ত রোম্যান্টিক জায়িন মাহতাব?’

অনেকক্ষণ ধরেই জাদু ল্যাপটপ সামনে নিয়ে বসে কিছু করছিল। কিন্তু মাধু সেদিকে খেয়াল না দিয়ে জাদুকে বুঝিয়ে যাচ্ছিল, জায়িনকে নিয়ে যেন সে সত্যিই এবার সিরিয়াস হয়। কিন্তু হঠাৎ জাদুর মুখে এমন কথা শুনে অতি দ্রুত সে স্ক্রিনের সামনে এল। আর দেখতে পেল, শাড়ি পরা দেখতে বেশ সুন্দরী একটি মেয়ে জায়িনের গাড়ির ভেতর এসে বসল। আর তারপরই এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করে মেয়েটি জায়িনের কোলের ওপর উঠে পড়ে জায়িনকে চুমুতে ভরিয়ে তুলতে আরম্ভ করল। খু্ব গভীরেই চলে যাচ্ছে তারা ধীরে ধীরে৷ মাধুর আর দেখার ইচ্ছা হলো না। কিন্তু জাদু যে এই একটা ভিডিয়োই সেই তখন থেকে বারবার দেখে চলেছে, তা মাত্র বুঝতে পারল মাধু। রাগে তার মাথা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অথচ জাদু নির্বিকারভাবে বসে সেই ভিডিয়ো আরও উপভোগ করছে, হাতে সিগারেট নিয়ে। ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে মাধু সারা ঘর পায়চারি করে হঠাৎ জাদুর সামনে এসে দাঁড়াল, তারপর বিনাবাক্যে ল্যাপটপটা বন্ধ করে দিয়ে জাদুর ওপর চেঁচিয়ে উঠে বলল, ‘তোর ফিঙ্গারে জায়িনের দেওয়া রিং। আর ও অন্য মেয়েদের সঙ্গে এখনো ডেট করে বেড়াচ্ছে।’
জাদু হাসতে হাসতে সোফায় হেলে বসল মাথার নিচে দু’হাত ফেলে। নীরবে চেয়ে থাকল বোনের দিকে। তা দেখে মাধুর আরও বেশি রাগ হয়ে গেল। টি-টেবিলে খু্ব জোরে একটা লাথি মেরে বসল ও। জাদু তখন বলে উঠল, ‘রিল্যাক্স অ্যাংগ্রি কুইন! বিয়ের আগে এমন কোনো প্রতিশ্রুতি আমরা কেউ কাউকে দিইনি যে, নিজেদের লাইফে আমরা নিজেদের মতো করে সময় কাটাতে পারব না।’
মাধু এগিয়ে এসে জাদুর দিকে ঝুঁকে পড়ে খিটমিট করে বলল, ‘আমার তো মনেই হচ্ছে না তুই জায়িনকে ভালোবাসিস। বাট আমি জায়িনের চোখে তোর জন্য ভালোবাসা দেখেছি। তাহলে এসব কী? আমি তো মানতে পারছি না।’

মাধুর কথাগুলো শুনে জাদুর বিশ্রী হাসি পেল। আর সে হাসলও খুব। তারপর বলল, ‘জায়িন কিন্তু সেদিন রাতে আমার ঘরে এসে আমার সঙ্গে কথা বলার মাঝে বলেছিল, ও কোনো ভালো মানুষ নয়। সে অতি খারাপ মানুষ। আর আমাকে ভালোওবাসে সে অতি খারাপভাবে। কিন্তু রিংটা সে পরিয়ে দিয়েছিল আমার ঘুমিয়ে থাকা অবস্থাতে। এখন বল, কী করা উচিত আমার?’
-‘আমি কিছুই বলব না। তুই কী চাস তাই বল?’
এবার জাদুর চেহারাটা গম্ভীর হলো৷ কতক্ষণ চুপ থেকে বলে উঠল, ‘জঞ্জাল সাফ করো বোন।’
-‘কিন্তু এ নিয়ে তুই কোনো কৈফিয়ত চাইবি না ওর কাছে?’
জাদু দু’ আঙুলের ফাঁকে ধরা সিগারেটে পরপর কয়েকটা টান দিয়ে তারপর মাথা নেড়ে না জানাল, বলল, ‘আমি চাইলে ওর সব থেকে বড়ো ক্ষতিটা করে দিতে পারি। মেয়েটা কে জানিস?’
মাধু প্রশ্নচোখে তাকিয়ে রইল জাদুর দিকে। জাদু নিজেই উত্তর দিলো, ‘এক সুপেরিয়র অফিসারের ওয়াইফ। রাজিয়া সুলতানা। ভিডিয়োটা সেই অফিসারকে সেন্ড করলেই জায়িনের বিপদ। কিন্তু আমি তো ওর এমন বিপদ চাই না। এসব সিনেমা দেখার ইচ্ছা নেই। আমার তো চায় শুধু জায়িন মাহতাবকে।’

মাধুকে এবার শান্ত দেখাল। তারপর জাদুর পাশে এসে বসল সে। জাদু ওকে রাজিয়া সুলতানার বিষয়সহ আরও দু’টো মেয়ের তথ্য দিলো। রাগে মাধুর মাথা ফেটে যেতে চাইছে যেন এবার। এদের দু’বোনের মাঝে মাধুকেই সবাই অত্যাধিক রাগী বলে থাকে৷ কারণ, মাধুর রাগের কোনো নিয়মনীতি নেই৷ যখন তখন তা মাথা চাড়া দিয়ে বসে। আর জাদুর বেলাতে তা একেবারেই ভিন্ন। কথাবার্তা শেষে আজ দ্বিতীয়বার মাধু বের হলো গভীররাতে। আর সেই ফাঁকে বহুদিন পর জাদু বসল তার নেশাদ্রব্য নিয়ে।

৩১
নতুন বউ নিয়ে শেখ বাড়ি ভালোই মেতে আছে। বাড়িতে আত্মীয় স্বজনের অভাব নেই। জাকির, মাহতাব শেখ, এখনো তারা কর্মজগতে ফিরে যায়নি। বাড়ির চারপাশে পুলিশের গার্ড থাকা সত্ত্বেও মাধু ইদানীং দুই দিন পরপরই এ বাড়িতে যাতায়াত করতে থাকছে। জাদু অবশ্য এ নিয়ে মাধুকে নিষেধ বারণ কিছুই করে না৷ বরং তার ভালোই লাগে, ও বাড়ির মানুষগুলোর সঙ্গে মাধুর এত সহজে মিশতে পারা দেখে। কিন্তু আজ দু’দিন হলো মাধু বাড়িতেই নেই। ওর ভার্সিটি থেকে তিনদিনের জন্য টিচার্স আর ফাইনাল সেমিস্টারের কিছু স্টুডেন্টস মিলে কক্সবাজার, সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে গেছে ঘুরতে। এই দু’দিন যাবৎ জায়িনেরও আসা যাওয়া হয় না ওদের বাংলোতে। সেও হঠাৎ ব্যস্ত হয়ে পড়েছে তার কাজে। তা নিয়ে জাদু মোটেও চিন্তিত নয়৷ এই চিন্তিত না হওয়ার কারণ, দিনের বেলা সে পড়ে পড়ে ঘুমায়। আর রাতের বেলা হয় নেশায় বুদ হয়ে পড়ে থাকে, নয় এমার্জেন্সি ফোনকল পেলে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ে। কিন্তু আজ দিনের বেলা হঠাৎ সে ঘুম থেকে জেগে ফ্রেশ হয়েই চলে আসে জায়িনের বাসায়। তার জানামতে, জায়িন এই মুহূর্তে বাসায় নেই। এমনকি দু’দিন ধরে সে গাজীপুরেই আসেনি৷

জান্নাতি বেগম জাদুকে নতুন বউয়ের কাছে বসিয়ে দিয়ে এ-কাজে ও-কাজে দৌড়াদৌড়ি করে বেড়াচ্ছেন। এই মানুষটিকে জাদু না চাইতেও খুব পছন্দ করে। মনের কোথাও একটা অনুভব করে সে, কিছুটা মায়াও পড়ে গেছে তার জান্নাতি বেগমের প্রতি। কিন্তু তারপরও সে নিরুপায়। তার জীবনে যে মায়ার কোনো স্থান নেই।

প্রায় ঘণ্টাখানিক সময় ধরেই জাদু সারা বাড়িতে ঘুরছে জাকিরের নববধূ এশাকে নিয়ে। এর মাঝে জায়িনের কাছে এ খবরও চলে গেছে, তাদের বাড়িতে এই মুহূর্তে জাদু অবস্থান করছে। খবরটি শোনা মাত্রই জায়িনের ভ্রু কুঁচকে ওঠে। কিন্তু ব্যস্ত থাকার ফলে তা নিয়ে ভাবার সময় পায়নি সে। তার ঠিক আধা ঘণ্টা পরই জায়িনের কাছে একটি প্রাইভেট নাম্বার থেকে কল যায়। তাকে জানায়, তার বাড়িতে কোথাও বোমা ফিট করে রাখা হয়েছে। যদি ক্ষমতা থাকে তো যেন পরিবারকে সে রক্ষা করে নেয়। প্রথমদিকে ব্যাপারটাকে সে ফালতু কল বলে উড়িয়ে দিলেও পরবর্তীতে জাদুর কথা মাথাতে আসলেই তার বুকের ভেতর বাড়ি দিয়ে ওঠে আতঙ্কে। মুহূর্তের মাঝেই বাড়িতে সর্বক্ষণ রাখা পুলিশদের অবগত করে সে। আর বাড়ি থেকে যতদ্রুত সম্ভব যেন সবাইকে বের করে আনা হয়।

সমস্ত কাজ ফেলে জায়িন রেজাকে রেখেই গাজীপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। নিজের অজান্তেই চোখের সামনে ভাসতে থাকে তার পরিবারের পোড়া দেহগুলো। আঁতকে ওঠে সে। অত্যাধিক রাগে একবার জাদুকে কল করে বসে। তারপরই আবার নিজেকে সামলে নেয়। ঘনঘন কয়েকবার শ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টাতে থাকে খুব।

ঢাকার জ্যাম কাটিয়ে গাজীপুর পৌঁছানোটা খুব সহজ নয়। বাড়িতে বারবার কল করতেই থাকে সে। ভাই আর বাবাও তাকে ফোন করতে থাকে, বাড়িতে সত্যিই কোথাও বোমা আছে কিনা এ বিষয়ে সঠিক তথ্য পাওয়ার জন্য। এভাবেই ত্রিশ মিনিট চিন্তা আর ভয়ে পার হয়ে যায়। তারপর হঠাৎ জায়িন গাড়ি থামিয়ে ফেলে। স্থির হয়ে বসে কিছু ভাবতে থাকে সে। যদি সত্যিই তার বাড়িতে বোমা রাখা হয়, তবে তা এতক্ষণে ব্লাস্ট হয়ে যাবার কথা। নিশ্চয়ই এত সময় নেবে না তার সেই শত্রু! তাহলে এভাবে তাকে মিথ্যা বলার অর্থ কী? শুধুই কি ভয় দেখানো? না অন্য কোনো ব্যাপারও আছে? তবে এটুকু সে বুঝতে পারছে, এই মুহূর্তে তার সব থেকে প্রয়োজন বাড়ি থাকা। অন্তত তার চোখ এড়িয়ে কারও ক্ষমতা নেই তার বাড়িতে এমন কিছু করার। এমনকি তার প্রধান শিকারেরও নেই। রেজাকে কল করে কথা বলে সে গাজীপুর চলে এল দুপুরের মধ্যে। এসেই দেখতে পেল, বাড়িতে শুধু তার বাবা-মা, ভাই-ভাবি ছাড়া আর একটি মানুষও নেই৷ আত্মীয়-স্বজন সব ভেগে গেছে। এমন পরিস্থিতিতেও তার এটা দেখে একটু হাসি পেল। তবে খারাপ লাগল, যখন দেখতে পেল প্রতিটা মানুষ আতঙ্ক নিয়ে বসে আছে বসার ঘরে। তার জন্যই এখন তার পরিবারটাকেও প্রতিটা মুহূর্ত প্রাণের ঝুঁকিতে থাকতে হচ্ছে। খুব বেশি সময় দিয়ে ফেলছে সে জাদু আর মাধুকে। এবার তার চূড়ান্ত উদ্দেশ্যটা সফল করার সময় এসে গেছে।

মায়ের কাছে এসে বসতেই জায়িনের নজর আটকাল ট্রে হাতে নিয়ে জাদুকে এগিয়ে আসতে দেখে৷ ট্রেতে করে সবার জন্যই সে ঠান্ডা লেবুর শরবত করে নিয়ে এসেছে। জাদুর চেহারায় সব সময়ের সেই সরল হাসিটা। তবে আজ জায়িন সেই সরল হাসিমুখে মুগ্ধ হবার জন্য চেয়ে নেই। খুঁজতে চেষ্টা করছে, জাদুর হাসির পেছনের কুৎসিত উদ্দেশ্যটাকে।

এবার জায়িনের চেহারা থেকেও একটু আগের দুশ্চিন্তাটা উধাও হয়ে গেল। নিজেকে অতিদ্রুত সামলে নেওয়ার ক্ষমতা জায়িনের থেকে বোধ হয় ভালো আর কারও মাঝে দেখা যায় না। স্মিত হেসে ট্রে থেকে সেই আগে শরবতের গ্লাসটা তুলে নিলো। জাদু একে একে সবাইকে দিয়ে জান্নাতি বেগমের আরেক পাশে এসে বসল। জায়িন তখন বাড়ির সবাইকে উড়ো ফোনকলের ব্যাপারটা বলে বোঝাতে থাকল। সবাইকে চিন্তামুক্ত করতে পারল না সে। তবে আশ্বাস দিলো, সে বেঁচে থাকতে এই পরিবারের কারও ওপরই বিপদ আসতে দেবে না। কথাটা বলেই মুচকি হেসে জাদুর দিকে তাকাল। জাদুও বিনিময়ে মিষ্টি হেসে উঠল। তবে জায়িনের মুখের হাসিটা বেশি সময় স্থায়ী হলো না। রেজা কল করে জানাল, প্রায় ঘণ্টা দুই আগে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ শেখ মুজিব সড়কে গাড়ি বিস্ফোরণে রাজিয়ার মৃত্যু হয়েছে। খবরটাতে জায়িন ব্যথিত না হলেও প্রচণ্ড চমকাল সে। ওপাশ থেকে রেজাই বলতে থাকল, ‘ব্যাটারি ব্লাস্ট করে নাকি গাড়িতে ভয়াবহ আগুন ধরে যায়।’ এরপর আর কিছু শোনার ইচ্ছা হলো না জায়িনের। তার চিন্তিত চেহারা দেখে সবাই একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকল। একে তো তার একটু আগের উড়ো কলটা নিয়ে সবাই এখনো ভয়ে আছে। তার ওপর এই মুহূর্তে এমন একটা খবর জানানো জায়িন ঠিক মনে করল না। সরু চোখে একবার জাদুর দিকে তাকাল। জাদুও তার দিকে চেয়ে আছে প্রশ্নচোখে। তবে রাজিয়ার মৃত্যুর পিছে জাদু বা মাধুকে পুরোপুরি সন্দেহ না করা গেলেও একেবারে ছেড়েও দিতে পারছে না সে। কারণ, এই দুই বোনকে সে একটুও হালকাভাবে নেয়নি।

৩২
পুরোপুরি তিনদিন পর ট্যুর শেষ করে মাধু বাসায় ফিরল রাত এগারোটায়। চাবি দিয়ে ঘরের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকেই তার কপাল কুঁচকে গেল। সারা ঘর ঘুটঘুটে অন্ধকার। জাদুর প্রতি কিছু কিছু সময় তার খুব রাগ আর বিরক্তি কাজ করে। এতবার বলার পরও সারা বাড়ি সে অন্ধকারে ডু্বিয়ে রেখেছে। বাংলোতে প্রবেশের সময়ও সে বাইরে একটা আলো জ্বলতে দেখেনি।

ক্লান্ত শরীরটা নিয়ে সে জাদুর ঘরের দিকেই গেল আগে। দরজাতে পা রাখতেই ল্যাম্পশেডের মৃদু আলোতে দেখতে পেল, জানালার সামনের সোফাটার পায়ার সঙ্গে হেলে বসে আছে জাদু, এক পা মুড়িয়ে আর অন্য পা খাঁড়া করে। খাঁড়া করে রাখা পায়ের ওপর একটা হাত ঝুলিয়ে মাথা নিচু করে আছে৷ সামনের চুলগুলো এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে। মুখটা দেখার উপায় নেই। পাশেই পড়ে আছে মদের বোতল আর একটি গ্লাস। টি-টেবিলের কাচের ওপর পড়ে আছে কোকেন হোয়াইট পাওডার। মাধু বাঁকা হেসে ঘরের মধ্যে পা রাখতেই জাদু মাথা তুলে তাকাল। মাধুকে দেখে হেসে উঠল সেও। আর সেই সাথে হাসল তার রক্তিম চোখজোড়াও। ঠোঁট কামড়ে ঘাড়টা কেমন কাত করে চেয়ে আছে সে। মাধু এসে বসল জাদুর মুখোমুখি। টি-টেবিলের ওপর সারি করে সাজিয়ে রাখা কোকেনটুকু সেও টেনে নিলো নাক দিয়ে। মাথা ক’বার ঝাঁকি মেরে টানটান হয়ে শুয়ে পড়ল ফ্লোরে। জাদু সটান করে রাখা পা’টা নাচাতে নাচাতে মাতাল কণ্ঠে বলল, ‘জায়িনের মায়া ত্যাগ করতে মন চাইছে না বোন। কী করি বল তো?’
মাধু ওপরের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল, ‘প্রেমিক তোমার। আর প্রেমিকের জঞ্জাল সাফ করতে হয় আমার।’
কথাটা শুনে জাদু ঠোঁট কামড়েই হাসতে থাকল। হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে জানালার সামনে এসে দাঁড়াল সে। জায়িনের ঘরের জানালার দিকে চেয়ে বলল, ‘কাল থেকে বাড়িতেই পড়ে আছে। তুই যাবার পর আর আসেনি রে এখানে। তুই আমার জন্য ভীষণ লাকি, বুঝলি? ওকে একটা মেসেজ করে দিই। তুই এসেছিস ফিরে। তাহলে কাল নিশ্চিত ও-ও আসবে।’

কথাগুলো ঠিক হজম হলো না মাধুর। তবে সে জাদুর এই কথাগুলো তেমন গায়েও মাখল না এই মুহূর্তে। নেশারত অবস্থায় জাদু আজ অবধি ভুলভাল কথা ছাড়া মনের কথা কখনোই বলেনি। তার প্রমাণ সে বহুবার পেয়েছে। জাদু বলল, ‘মৃত্যুটা স্বাভাবিক নয়। এটা খুন। তাই ইনভেস্টিগেশন শুরু করেছে পুলিশ। খবরে দেখতে পেলাম। আর ইনভেস্টিগেশন কে করছে জানিস?’
মাধু নিরবে চেয়ে রইল উত্তর শোনার আশায়। জাদু হাসতে হাসতে বলল, ‘আমার হবুবরের আরেক প্রেমিকা।’
-‘সিফাত রহমান?’
জাদু মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল। মাধু উঠে বসে মদের বোতলটা মুখে নিয়ে ঢকঢক করে কয়েকবার চুমুক দিয়ে চোখ-মুখ কুঁচকে গলা আটকে ধরে পড়ে রইল। তা দেখে জাদু এসে পানির বোতল এগিয়ে দিলো ওকে। কিন্তু মাধু নিলো না। ধপাস করে ফ্লোরে আবার শুয়ে পড়ল।

_________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here