সুইটহার্ট-পর্ব:১০

0
1260

#সুইটহার্ট
#Sohani_Simu
১০.

ছোটফুপ্পিদের গাড়িতে তুলে দিয়ে আমরা বাসার ভেতরে চলে আসলাম।আমার খুব মন খারাপ লাগছে কারন নিতু আপু কাল থেকে আমার সাথে একবারও কথা বলল না।তবে আপু বড় ফুপ্পিকে বলে গেল আপুর এক্সাম শেষ হলেই এখানে এসে থাকবে।এটা শুনে ভাল লাগলো।আমরা সবাই সোফাতে এসে বসলাম।সবাই বলতে আমি,তোসি,দাদি,শিরিন ভাবি,বড় ফুপ্পি আর শ্রাবণ ভাইয়ার দাদু।ফুপ্পা,বাবা আর ভাইয়া অফিস চলে গেছে আর শ্রাবণ ভাইয়া নিজের রুমেই আছেন।বাসা থেকে মেহমান চলে গেলে মনে হয় বাসাটা কেমন খাঁ খাঁ করে।আমরা বাসায় এত গুলো লোক আছি তাও মনে হচ্ছে চারপাশটা কেমন ফাঁকা লাগছে।সবার মধ্যেই একটা অলসতা কাজ করছে,আমার মধ্যে একটু বেশিই অলসতা কাজ করছে তাই আমি সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে বললাম,

“খুব ক্লান্ত লাগছে!”

তৌসি হেসে বলল,”তুই ক্লান্ত?শুনেছো তোমরা?ও নাকি ক্লান্ত।একটা কাজও করেনি আজাইরা বসে থেকে থেকে ক্লান্ত হয়ে গেছে।”

ভাবি বলল,”ও কথা বলে বলে ক্লান্ত হয়ে গেছে।”
দাদু বলল,”শুধু কথা বললে হবে?একটু চা টা কিছু খেতে হবে তো নাকি?”

ফুপ্পি আর ভাবি উঠে চা বানাতে চলে গেল।দাদুও উঠে হাঁটতে হাঁটতে নিজের রুমে চলে গেল।তৌসি আর দাদিও এদিক ওদিক কোথায় যেন চলে গেল।তোসির রুমে আমার ফোন আছে তাই আমিও সোফা থেকে উঠে লাফাতে লাফাতে উপরে চলে আসলাম।উপরে এসে ভাবলাম ফুপ্পিরা চলে গেল তাও শ্রাবণ ভাইয়া বের হলেন না কেন?সকাল দশটা বাজতে চলল উনি কি এখনও ঘুম থেকে উঠেননি?যাই একটু দেখে আসি। সিঁড়ির ডানদিকে তৌসির রুম আর বাম দিকের শেষ রুমটা শ্রাবণ ভাইয়ার।তাই আমি বাম দিকে যেতে লাগলাম। উনার রুমের দরজায় গিয়ে দাঁড়াতেই দেখি উনি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চুল ঠিক করছেন।উনি একটা হালকা বেগুনি শার্ট আর কালো জিন্স প্যান্ট পরে আছেন।হাতে কালো ঘড়িও পরেছেন।চুল ঠিক করে উনি একটা ফাইল হাতে নিলেন।তারমানে উনি এখন বাহিরে যাবেন।আমি রুমের মধ্যে ঢুকে উনার পাশে দাঁড়িয়ে বললাম,

“এত সুন্দর করে সেজেগুজে কোথায় যাচ্ছো?মানে যাচ্ছেন।”

উনি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন,”আমাকে সুন্দর লাগছে তোমার?”

আমি রুমের মধ্যেই হাঁটতে হাঁটতে বললাম,”হুম আপনি তো অনেক সুন্দর,আমার টয়ের মতো ফর্সা আর সিজানের চেয়েও লম্বা কিন্তু রকি আর আপনি সমান সমান হবেন।”

উনি আমার কাছে এসে আমার দুইবাহু শক্ত করে ধরে রাগী কন্ঠে বললেন,”আজ থেকে ওদের সাথে আর কথা বলবি না।ওদের নামও মুখে নিবি না।আর একবার যদি তোর মুখে ওদের কথা শুনি তোর মুখ আর থাকবেনা বলে দিলাম।”

আমিও তেঁতে উঠে বললাম,”এই শোনো এটা আমার মুখ তাই আমার যা বলতে ইচ্ছে করবে আমি তাই বলবো।তুমি একটুও সুন্দর না,সিজানই বেশি সুন্দর আর তোমার থেকে অনেক ভাল।”

উনি রেগে আমাকে থাপ্পড় দেওয়ার জন্য হাত উঠালেন আমি ভয়ে দুই গালে হাত দিয়ে চোখ খিচে বন্ধ করে বললাম,”মারবেন না,মারবেন না আমি তো এমনি বললাম,আপনি সিজানের থেকে বেশি ভাল।”

উনি আমার হাত গাল থেকে সরিয়ে দিয়ে বললেন,”তুই তো কথা শুনার মেয়ে নয়।ভেবেছিলাম দু-একটা থাপ্পড় দিলে ঠিক হয়ে যাবি কিন্তু এখন তো দেখছি থাপ্পড়ে কাজ হচ্ছেনা।আমারও তোকে থাপ্পড় দিতে ভাল লাগেনা।থেরাপি চেন্জ করতে হবে,নো ওরি আমার কাছে অনেক থেরাপি আছে।”

আমি চোখ খুলে দেখি উনি আমার দিকে এগিয়ে আসছেন।আমি ভয়ে ভয়ে পেছাতে লাগলাম কিন্তু পেছনে যাওয়ার আর কোন জায়গা নেই।আমি দেয়ালের সাথে লেগে পালানোর জন্য দরজার দিকে তাকালাম।উনি আমার গালে হাত দিয়ে আমার মুখ উনার দিকে করে দুষ্টু হেসে বললেন,
“ভাল করে বললাম শুনলিনা আমার কথা, এখন দেখ কি করি তোর।আ’ম অল দ্যা থেরাপি ইউ নিড।”

বলেই উনি আমার মুখ চেপে ধরে আমার গলায় নিজের দাঁত বসিয়ে দিলেন।ব্যাথা,ভয় আর আতংকে আমি চাপা আর্তনাদ করতে লাগলাম।দুই হাত দিয়ে উনাকে ঠেলে সরাতে পারছিনা।এদিকে নাক মুখ চেপে ধরায় আরও বেশি অসস্তি হচ্ছে।কিছুক্ষণ পর উনি আমার গলা ছেড়ে দিয়ে রাগী কন্ঠে বললেন,”আর কখনও সিজানের নাম মুখে নিবি?”

আমি হেঁচকি তুলে কাঁদতে কাঁদতে বললাম,”না।”

উনার দিকে তো তাকানো যাচ্ছে না,রাগে উনার মুখ লাল হয়ে আছে।গলাটা খুব জ্বলছে।তিন চারটে কামড় দিয়েছেন উনি আমার গলায়।হাত দিয়ে দেখি রক্ত বের হচ্ছে।রক্ত জিনিসটা আমার কাছে অস্বাভাবিক লাগে,তাজা লাল রঙের রক্ত দেখলে আমার মাথা ঘুরে।শ্রাবণ ভাইয়া আমাকে উনার বেডে বসিয়ে দিয়ে রক্ত মুছে মলম লাগিয়ে দিলেন।আমার চোখ মুছে দিয়ে বললেন,
“আমি না আসা পর্যন্ত কোথাও যাবিনা,কালকের মতো আবার যদি বাসায় যাস তোর পা আমি ভেঙ্গে দিবো।”

আজকে আমি উনাকে খুব ভয় পাচ্ছি।উনার চারটে থাপ্পড় খেয়েও এত ভয় পাইনি।কামড়ের থেকে থাপ্পড় শত গুন ভাল ছিল।এখনও উনি রেগে আছেন দেখে আমি চুপচাপ উঠে দাঁড়ালাম।উনিও দাঁড়িয়ে একটা ফাইল আর ল্যাপটপ হাতে নিয়ে আমার আগেই রুম থেকে বেড়িয়ে গেলেন।আমি মন খারাপ করে তৌসির রুমে গেলাম।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের গলার দিকে তাকাতেই আতকে উঠলাম।রক্ত জমাট বেঁধে আছে আর ব্যাথাও করছে খুব।আমার কান্না পাচ্ছে।ফোন হাতে নিয়ে বেডে শুয়ে ফোন টিপতে লাগলাম।ডাটা অন করেছি অনেকক্ষণ কিন্তু কানেকশন পাচ্ছেনা।শুয়ে শুয়ে বিরক্ত হচ্ছিলাম তাই ভাবলাম হেমার কাছে ফোন দিয়ে শুনি স্কুলে কি হচ্ছে।আমি আজ স্কুলে গেলে এই কামড়টা আর খাওয়া লাগতোনা।ধূর!কেন যে শ্রাবণ ভাইয়ার রুমে গেলাম!

আজব তো!কল লিস্টে কারও নাম্বার নেই কেন?কি হচ্ছে কি এসব!আমি উঠে বসে ফোন খুলে দেখি ফোনের মধ্যে সিম কার্ডটা নেই।আমি রেগে ধপ ধপ করে হেঁটে নিচে আসলাম।তৌসি আর ভাবি বসে গল্প করছিল আমি যেয়ে বললাম,

“আমার সিম কার্ড তুই নিয়েছিস?”

তৌসি বলল,”না তো, আমি কেন নিবো?আমি তোর ফোনে হাতই দেইনি।”

আমি দুই কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রেগে বললাম,”তাহলে কে নিয়েছে?কে হাত দিয়েছে আমার ফোনে?”

তৌসি মনে করার ভান করে বলল,”ভাইয়া নিয়েছে মনে হয়।সকালে আমার রুমে এসেছিল একবার,তুই তখন ঘুমোচ্ছিলি।তোর ফোন নিয়ে গিয়েছিল একটু পর আবার রেখেও গেছে।”

আমি কিছু বলবো তখনই ভাবি ভ্রু কুচকে বলল,”এদিকে আয় তো,দেখি তোর গলায় কি হয়েছে?”

আমি রেগে বললাম,”বাল হয়েছে।”

বলেই আমি এক দৌঁড়ে উপরে চলে আসলাম।সিঁড়ির কাছে থেকে ফুপ্পিকে চিল্লিয়ে বললাম,
“ফুপ্পি???শ্রাবণ ভাইয়া কোথায়?”

ফুপ্পি কিচেন থেকে উঁচু গলায় বলল,”বুয়েটে গেছে,কেন কি হয়েছে?”

আমি রেগে বললাম,”কখন আসবে?”
ফুপ্পি বলল,”জানিনা।”

রাগে আমার শরীর জ্বলে যাচ্ছে।সকাল সকাল আমার সিম কার্ড খুলে নিলেন তারপর আবার আমাকে এত জোড়ে কামড় দিলেন,ছাড়বোনা উনাকে আমি।আমি উনার রুমে যেয়ে বেডের উপর জুতো পরেই উঠে উনার দুটো বালিশ নিয়ে ফুটবল খেললাম।তারপর উনার বালিশ ফ্লোরে ফেলে দিয়ে বালিশে একজগ পানি ঢেলে দিলাম।আলমারি থেকে উনার কিছু জিন্স প্যান্ট নিয়ে ওয়াশরুমে ভিজিয়ে দিলাম।ইচ্ছে করছে সব গুলো জামা ভিজিয়ে দিই কিন্তু আমি ভাল মানুষ তাই শুধু সতেরো টা প্যান্ট ভিজিয়ে ছেড়ে দিলাম।এতগুলো প্যান্ট ধুতে গেলে বুঝবে কত ধানে কত চাল হয়।তারপর ওয়াশরুম থেকে আর পানি এনে বালিশ ডুবিয়ে দিলাম। বেডের উপর কিছুক্ষণ লাফিয়ে রাগ কমিয়ে তৌসির রুমে চলে আসলাম।কিছুক্ষণ শুয়ে থাকতেই আমি ঘুমিয়ে গেলাম।গলার ব্যাথায় ঘুম ভাঙলে তাকিয়ে দেখি তৌসি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রেডি হচ্ছে।
আমি ঘুম ঘুম কন্ঠে ওকে বললাম,”কোথায় যাচ্ছিস?”

তৌসি হিজাবের পিন লাগাতে লাগাতে বলল,”আজকে কোচিং এ দুটো থেকে ক্লাস হবে তাই এত তাড়াতাড়ি যেতে হচ্ছে।তুই উঠ,গোসল দিবিনা?প্রায় দেড়টা বেজে গেছে।”

আমি উঠে বসে বললাম,”শ্রাবণ ভাইয়া এসেছে?”
তৌসি বলল,”না।

অহ আসেনি!বজ্জাতের হাড্ডি এসে দেখ একবার তোর রুমের কি অবস্থা করেছি।মনে মনে শয়তানি হাসি দিয়ে
আমি উঠে তাড়াহুরো করে ওয়াশরুমে ঢুকলাম।শ্রাবণ ভাইয়াকে হাজারও গালি দিয়ে গোসল করে বের হয়ে দেখি তৌসি চলে গেছে।ভেজা চুল গুলো ভাল করে মুছে শুকিয়ে বেলকুনিতে টাওয়েলটা মেলে দিয়ে আমি একটা গান ধরলাম।মনটা খুব ফুরফুরে লাগছে।শ্রাবণ ভাইয়ার উপর জমে থাকা রাগ যখন একদমই গায়েব হয়ে গেল তখনই আমি এক দৌঁড়ে শ্রাবণ ভাইয়ার রুমে গেলাম।উনার বেড আর বালিশের যা অবস্থা করেছি উনি এসে যদি এসব দেখেন কামড় দিয়ে আমার গলার বারোটা বাজিয়ে দিবেন।ভয়ে আমি কি করবো কিছু ভেবে পাচ্ছিনা।নিজের কাজের জন্য নিজের উপরই রাগ হচ্ছে আমার।আমি তাড়াহুরো করে ফ্লোর থেকে বালিশ হাতে তুলে নিলাম তখনই শ্রাবণ ভাইয়া রুমে আসলেন।আমি দুইহাতে দুটো বালিশ নিয়ে উনার দিকে ভীত চোখে তাকালাম।উনি আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললেন,”তুই এখানে কি করছিস?বালিশ নিয়ে কোথায় যাচ্ছিস?হোয়াট দ্যা…বালিশ দিয়ে পানি বের হচ্ছে কেন?”

উনি ভ্রু কুচকে হাতের ল্যাপটপ আর ফাইল সোফার উপর রাখতে গেলেন।আমার তো কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গিয়েছে বালিশ রেখে একটা দৌঁড় দিব তখনই পানিতে পা স্লিপ করে ধরাম করে নিচে পরে গেলাম।ডান হাতের কনুইটা মনে হয় ভেঙ্গেই গেল।শ্রাবণ ভাইয়া পেছন দিকে তাকিয়েই দ্রুত আমার কাছে আসলেন।উনি আমার হাত ধরতেই আমি ব্যাথায় চেঁচিয়ে উঠলাম।উনি রেগে বললেন,
“কোথায় লাগলো,দেখে চলতে পারিসনা?সব সময় এত তিড়িংবিড়িং করে লাফাস কেন?”

আমি হাত ধরে ভ্যা ভ্যা করে কান্না শুরু করে দিলাম।উনি আমাকে তুলে বেডের উপর বসিয়ে দিয়ে বললেন,
“দেখি কোথায় লেগেছে,বল আমাকে?”

তখনই ফুপ্পি আসলো।ফুপ্পিকে দেখে কান্নার সাউন্ড বাড়িয়ে দিলাম।ফুপ্পি চিন্তিত হয়ে আমার কাছে আসতে আসতে বলল,”কি হয়েছে আম্মু?শ্রাবণ?তুই কি আবার ওকে…”

ফুপ্পিকে বলতে না দিয়েই শ্রাবণ ভাইয়া রাগী কন্ঠে বললেন,
“পা স্লিপ করে পরে গেছে।দেখো আমার বালিশের কি অবস্থা করেছে।”

ফুপ্পি আমার পাশে বসতেই আমি ফুপ্পিকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
“ফুপ্পি শ্রাবণ ভাইয়া আমাকে আবার মারবে।”

“কেন মারবে?তুই কি করেছিস আর এখানে এত পানি আসলো কোথায় থেকে?তুই ফেলেছিস পানি?”

আমি কিছু বললাম না।ফুপ্পিকে জড়িয়ে ধরে শ্রাবণ ভাইয়ার দিকে তাকালাম।উনি ভ্রু কুচকে আমার হাতের দিকে তাকিয়ে থেকে উঠে গিয়ে ড্রয়ার থেকে একটা স্প্রে নিয়ে এসে আমার হাতে স্প্রে করে দিলেন।এতক্ষণে একটু আরাম লাগছে।উনি ফ্লোর থেকে সপ সপে ভিজে বালিশ তুলে রেগে ফুপ্পিকে দেখিয়ে বললেন,”দেখেছো কি করেছে এগুলো?”

ফুপ্পিও রেগে বলল,”তাই বলে তুই ওকে মারবি?”
উনি রেগে বললেন,”মারিনি আমি।”

ফুপ্পি আমাকে বলল,”তুই এসব কেন করেছিস?”

আমি সব বলে দিলাম।উনি আমার গলায় কামড় দিয়েছেন আমার সিম কার্ড খুলে নিয়েছেন তাই আমি উনার বালিশ আর প্যান্ট ভিজিয়ে দিয়েছি।সব শুনে ফুপ্পি উনার উপর রেগে গেল।আমার গলা দেখে ফুপ্পি উনাকে অনেক বকলো।উনি তো রাগ করে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলেন।বিকেলে ভাবি আর দাদির সাথে ফুপ্পি আমাকেও বাসায় পাঠিয়ে দিল।

.
স্কুল থেকে বাবার ড্রাইভারের সাথে বাসায় ফিরছি।চারদিন হলো শ্রাবণ ভাইয়ার সাথে দেখা সাক্ষাত নেই।ফুপ্পি বাবাকে বলেছে শ্রাবণ ভাইয়া এখন থেকে আমাকে আর পড়াতে আসবেননা আর স্কুলেও নিয়ে যাবেন না।উনি উনার পড়াশুনা কমপ্লিট করতে লন্ডন ফিরে যাবেন।দুবছর পর ফিরে আসবেন।আমি যে কি শান্তি পেয়েছি কাউকে বলে বুঝানো যাবেনা।শ্রাবণ ভাইয়ার জন্য আমি ফোন ইউজ করতে পারিনা।উনি লন্ডন চলে গেলেই আমি একটা নতুন সিম কার্ড কিনবো ভাবছি।আমার ভাবনার মাঝেই গাড়ি থেমে গেল।আশেপাশে তাকিয়ে দেখি বাসায় চলে এসেছি।বাসার ভেতরে এসে দেখি ড্রয়িং রুমে একটা অপরিচিত ছেলে সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে থেকে ফোন টিপছে।আমাকে দেখেই উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

“জুঁই,কেমন আছো?”

আমি ভ্রু কুচকে ছেলেটার দিকে তাকালাম।লম্বা,উজ্জ্বল শ্যামলা দেখতে,কালো শার্ট আর বাদামি প্যান্ট পরে আছে,চুলগুলো স্পাইক করা,চোখে মুখে তীক্ষ্ণ ভাব।হাতের কব্জিতে বিভিন্ন রকমের ব্রেসলেট দিয়ে রেখেছে।আমার দিকে কেমন অদ্ভূত চোখে তাকিয়ে আছে। ছেলেটাকে আগে কোনদিন দেখেছি কিনা মনে করতে পারছিনা।আমি ভ্রু কুচকে বললাম,”আপনি কে?”

উনি মুচকি হেসে বললেন,”আমি শুভ।চিনো না আমাকে?আপু আমার কথা বলেনি তোমাকে?”

আমি কাঁধ থেকে ব্যাগ নামিয়ে সোফায় রেখে ভাবিকে ডাকলাম,”ভাবস?এই ভাবস?এখানে দেখে যাও তো,এই লোকটা কে?”

একটু পর ভাবি রুম থেকে বেড়িয়ে এসে শুভর সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিল।শুভ ভাবির খালাতো ভাই।ঢাকাতেই থাকে।একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়াশুনা করে।আমি উনার সাথে একটু কথা বলেই নিজের রুমে চলে আসলাম।ছেলেটার তাকানো আমার একদম ভাল লাগছেনা।

বিকেলে শুয়ে থেকে ফোনে গেইমস খেলছিলাম তখনই ভাবির সাথে একটা মেয়ে আমার রুমে আসলো।আমি উঠে বসতেই ভাবি বলল,
“তোর নতুন টিচার।তোমরা কথা বলো আমি আসছি।”

বলেই ভাবি রুম থেকে চলে গেল।আমি মেয়েটার সাথে পরিচিত হলাম।আপুটার নাম ইভানা,ইংলিশে অনার্স করেন উনি।আমাকে দুৃমাস ইংলিশ পড়াবেন।আজকে প্রথম দিন তাই উনি গল্পই বেশি করলেন আর পড়ালেন কম।আমার উনাকে খুব পছন্দ হয়েছে।আপুটা খুব নম্র-ভদ্র আর সুন্দরী।আমি উনাকে ছাড়তেই চাইছিলাম না কিন্তু সন্ধ্যা হয়ে আসছিল দেখে আপু চলে গেলেন।

রাতে পড়ার টেবিলে গাল ধরে বসে আছি আর শ্রাবণ ভাইয়ার কথা ভাবছি।অন্যদিন হলে উনি এখন আমার পাশের চেয়ারে বসে আমাকে পড়া বুঝিয়ে দিতেন কিন্তু এখন থেকে উনি আর আসবেন না।আমি উনাকে খুব মিস করছি।যদিও উনি খুব পঁচা স্টুডেন্ট তাও উনি খুব ভাল করে সাইন্স পড়াতে পারেন।উনার মতো টিচার আমি একটাও পাইনি।ঠোঁট উল্টে বসেছিলাম তখনই ভাবি কার সাথে যেন ফোনে কথা বলতে বলতে আমার কাছে আসলো।আমার দিকে ফোন এগিয়ে দিয়ে বলল,

“নে ধর,কথা বল।”

আমি ফোন হাতে নিয়ে ভাবিকে বললাম,”কার সাথে কথা বলবো?”

ভাবি মুচকি হেসে বলল,”শ্রাবণ।”

আমি মন খারাপ করে কল কেটে ভাবিকে ফোন দিয়ে দিলাম।ভাবিকে বললাম আমি উনার সাথে কথা বলবোনা।একটু পর উনি আবার ফোন দিলেন।ভাবি আমাকে এবার কথা বলার জন্য জোড় করতে লাগলো।আমি তাও উনার সাথে কোন কথা বললাম না।ভাবিকে রুম থেকে বের করে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলাম।আমার কান্না পাচ্ছে।শ্রাবণ ভাইয়ার উপর খুব অভিমান হচ্ছে, কেন হচ্ছে জানিনা।চারদিন আমার সাথে কথা বলেন নি।কিসের এত রাগ উনার!আমি নাহয় উনার বালিশ আর প্যান্ট একটু ভিজিয়ে দিয়েছিলাম তাই বলে উনি আমার সাথে কথা বলবেন না?উনি আমাকে কত কষ্ট দেন তাও আমি উনার সাথে কত কথা বলি আর উনি চারদিন পর আসছেন কথা বলতে।বলবোনা কোন কথা উনার সাথে,হুহ্।

চলবে…………

(দেরি করে দেওয়ার জন্য সরি। আজকের পার্টটা খুবই অগোছালো লাগছে।দিতে ইচ্ছে করছেনা তাও দিলাম।পুরোনো পার্টগুলো পড়ে আমি হতাশ।যেমনটা চেয়েছি তেমনটা লিখা হয়নি।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here